Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted)
#5
।। ২ ।। বিরহপর্ব



আর পাঁচটা বাঙালি বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন অলস ব্যস্ততা থাকে বৌভাতের দিনে, সেদিনটাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। টুকটাক কায়িক শ্রম বাদে আমারও তেমন কাজ নেই, এদিকে মন পড়েছিল উদ্যান-নগরীতে। সকাল থেকেই অভিমানিনীর ফোন আসছে কিছুক্ষণ অন্তর, একা থাকার বিরহের জ্বালায় সে নিজের সমস্ত ক্ষোভ উজাড় করে দিচ্ছে, সাথে বিয়েবাড়িতে অন্য মেয়েদের ঝাড়ি মেরে আমি নাকি সুখেই আছি-জাতীয় অনুযোগ। উৎসুক অতি-কৌতূহলী আত্মীয়দের কান বাঁচিয়ে মানিনীর মানভঞ্জন করতে অনবরত বাথরুমে আশ্রয় নিতে হচ্ছে, নয়তো ছাদে। মা কয়েকবার দেখল ব্যাপারটা। সেরেছে! বেশিক্ষণ এমন চললে চাপ হয়ে যাবে। ফোনাফুনিটা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ না রাখলেই নয়। বিরহিনী রাধা সে কথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল, আরেক বিপত্তি!

"হ্যাঁ এখন আমার সাথে কথা বলতে খুউউউব অসুবিধে হচ্ছে, সে আর জানিনা!"
"ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর সোনা, আর কতবার এভাবে বাথরুমে সেঁধিয়ে থাকব, ডায়েরিয়া তো হয়নি। বাড়িভর্তি লোক..."
"থাক আমায় বোঝাতে হবে না"
"তুই শুধু শুধু রাগ করছিস"
"হ্যাঁ আমি তো শুধু শুধুই রাগ করি"
"আচ্ছা কালই তো ফেরার প্লেন, তারপর যতখুশি গালমন্দ করিস, আদর করিস"
"আহা, খুব শখ! আমার মোটেও তোকে আদর করার ইচ্ছে নেই"
"ঠিক আছে, আমিই নাহয় আদর করব একতরফা"
"কেউ তোর কাছে দয়া চায়নি"
"তোর মনে হচ্ছে দয়া করে আদর করি আমি?"
"নয়তো কি?"
"কতদিন হাতে জোড়া তরমুজ নিইনি, হাতগুলো নিশপিশ করছে"
"অ্যাই, আবার শুরু করলি!"
"সত্যি বলছি, এত তেষ্টা পাচ্ছে... কেমন আছে রে ওদুটো?"
"নিজে এসে দেখে নিস"
"একই রকম আছে, নাকি বিরহ যন্ত্রণায় আরেকটু ফুলে গেছে?"
"উফ্ফ্ জানি না আমি, অসভ্য ছেলে!"
"বটে? অসভ্যতা করার সময় তো মনে হয়না তোর খুব একটা খারাপ লাগে বলে?"
"চুপ কর! এখন তো ওখানে অসভ্যতা করছিস আমায় একা ফেলে গিয়ে"

অভিমানের সময় এদের যুক্তিবোধ কাজ করে না, আবহমান কাল এরকমভাবেই চলে আসছে। নাঃ, সত্যিই তো মেয়েটা এতদিন একা একা রয়েছে, আমার সাথেই অবসর সময়টা থাকে বলে অফিসেও তেমন বন্ধুবান্ধব নেই দু-একজন ছাড়া।

"আচ্ছা আচ্ছা মিষ্টু রাগ করে না। তুই নাহয় স্বাতীর কাছ থেকে ঘুরে আয় আজকের দিনটা, কাল থেকে তো..."
"স্বাতী নেই, ওরা কোদাইকানাল গেছে"
"তাহলে অন্তরাদির..."
"উফ্ফ্ বলছি না! পুরো গ্রুপটাই গেছে, সঞ্জীব ছাড়া"
"ওওওও কি ব্যাপার? তুই যাসনি বলে যায়নি নাকি?"
"ন্যাকামি করিস না"

এইবার মহাশয়াকে বাগে পেয়েছি। সঞ্জীব ওর অফিসের কলিগ, একই ব্যাচে জয়েন করেছে, এবং গোটা অফিস জানে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে বয়ফ্রেণ্ড আছে জানা সত্ত্বেও। আমাকে বহুদিন আগেই বলেছে কথাটা, প্রচ্ছন্ন গর্বটা চাপা দেওয়ার কোনওরকম চেষ্টা না করেই। একটু খ্যাপানো যাক।

"তাহলে ওর সাথেই কোথাও ঘুরে আয়"
"ফের ন্যাকামি... ?"
"কেন সে বেচারা কি দোষ করেছে?"
"তুই ভাল করেই জানিস কেন, আর এও জানিস যে আমি যাব না"
"আচ্ছা সতীরানী, আমার ঘাট হয়েছে"

জানি একথাটায় কাজ হবেই। আমার প্রতি অত্যধিক পজেসিভ বলেই হোক বা স্বভাবগুণে, ও অতি সন্তর্পণে পরপুরুষদের ছোঁয়া এড়িয়ে চলে। আজকের দিনে এটা খুব স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়। এজন্য মাঝেমাঝে সতীরানী বলে খোঁচা দিই, আর ও চিড়বিড়িয়ে ওঠে। এই শব্দটা একদম সহ্য করতে পারে না।

"কি ভেবেছিস, আমি যেতে পারব না ওর সাথে?"
"দুজনেই জানি যে সেটা কোনওদিন হবার নয়"
"তাই নাকি! Fir your kind information, ও আজকেই আমায় লাঞ্চে যেতে বলেছিল"
"এবং তুই যথারীতি যাসনি"
"তুই... কি বলতে চাস?"

মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। এবার ফাঁদে পড়েছ সুন্দরী!

"বলছি ও ডাকবে সেটা তো স্বাভাবিক, তেমনি তুই যে যাবি না সেটাও আমি জানি"
" Execuse me! আমি কি করব না করব আমার পার্সোনাল ব্যাপার"
"Of course"

ফোনের ওপ্রান্ত খানিক নীরব। তারপর দ্বিধাজড়িত প্রশ্ন-

"বাট যাওয়াটা কি ঠিক হবে?"
"কেন?"
"আহ্ ন্যাকামো করিসনা তো। জানিস না কেন?"
"দ্যাখ ও তোর কলিগ, একদিন লাঞ্চে গেলে মহাভারত দারুণ অশুদ্ধ হয়ে যাবে না"
"কিন্তু... অফিসের বাকিরা জানলে?"
"কার এত খেয়ে দেয়ে কাজ আছে বল তো? সবাই জানে যে তুই পাক্কা সতীরানী"
"আবার!"
"আচ্ছা আচ্ছা সরি। এবার রেডি হ, কটা বাজে দ্যাখ"
"দাঁড়া আগে ওকে ফোন করি"
"ওকে ম্যাম। আমি একটু চান করে আসি, তোর কিছু বলার থাকলে text করে দিস"

ফোন রাখার পর একটু স্বস্তি পেলাম। এবারে তৈরী না হলে মা নির্ঘাত চেঁচাবে। আপাতত এদিকটা সামলে নিই তারপরে নাহয় ওকে ফোন করব।

চান করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল। আমার প্রেমিকা অন্য কারোর সাথে লাঞ্চ ডেটে যাচ্ছে। কথাটা ভেবেই কেমন লাগছে, আগে কোনওদিন ওকে অন্য কোনও পুরুষের সাথে দেখিনি বলেই কি? ধুর্ তাই হবে, এ নিয়ে ভাবার কোনও মানে হয়! কিন্তু কথাটা মাথা থেকে তাড়াতেও পারছি না। আচ্ছা ছেলেটার ওর প্রতি ব্যথা আছে সেটা কতটা সিরিয়াস? নাকি শুধু মাত্র ক্রাশ? ওর প্রতি কেউ আকৃষ্ট হলে অবশ্য একেবারেই দোষ দেওয়া যায় না। যাকগে এ নিয়ে ভেবে কি হবে। কিন্তু... একি? এতটা কাঠিন্য... কেন? কেন আবার, এতদিন ওকে কাছে পাইনি, উপবাসী পৌরুষের আর দোষ কি! উফ্ ওর জামবাটির মত স্তনগুলো যে কতদিন চটকাইনি। ওগুলোর কথা ভেবেই জিভে জল চলে এসেছে। এখনও বোধহয় একটু সময় আছে। চান করতে পাঁচ মিনিট বেশি সময় নিলে কেউ কিছু বলবে না।

চান করে বেরিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি, একইসাথে তৃপ্ত আর একটু পরিশ্রান্ত লাগছে। এমন সময় ফোনে টিং টিং। ও বাবা, এতগুলো টেক্সট মেসেজ!

"Called him, going for lunch at his place. "
"What should I wear ? "
"শাড়ি পরাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে কি?"
"কিরে বল?"
"Are you not OK with this honey ? Please tell me. "

মোবাইলটা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে টাইপ করলাম। শুধু শেষটার রিপ্লাই।

"Of course I am darling. "
Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি by Anangapal (Uncompleted) - by manas - 07-01-2019, 12:40 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)