06-08-2019, 07:13 AM
(পর্ব ১৩)
দুর্গা পূজা ক্রমশ এগিয়ে আসছে। রমনগড়ে একটামাত্র দুর্গা পূজা হয়। গ্রামের সকলে স্বতঃফুরতভাবে এই অনুষ্ঠানে গ্রহণ করেন। আনন্দ করেন। আনন্দে মেতে ওঠেন। * '. সবাই এতে যোগদান করেন। এবারে পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর দিনে আবার ঈদ পড়েছে। ফলে চার চার হয়ে গেছে। কলেজ ছুটি হয়ে যাবে। যারা প্রবাসে থাকেন তারা গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন।
পুজো এবারে দেরি করে হচ্ছে। বাতাসে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। এবারে বন্যা হয় নি ভাল করে। প্রত্যেকবার ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এবছর কেন ছাড় পেল তাই নিয়ে গ্রামবাসীরা গবেষণা শুরু করে দিল।
গ্রামের সকলে নতুন জামা কাপড় কিনে পরবে। রমনগড় বর্ধিষ্ণু গ্রাম। ফলে পুজোর সময় পুজোতে আনন্দ করার জন্যে প্রস্তুত থাকেন। সাধ্য মত আনন্দ করেন। বাচ্চাদের নতুন জামা প্যান্ট দেবার সাথে সাথে বড়রাও নতুন পোশাক পরিধান করেন। কেউ এমন থাকে না যে পুরনো জামা কাপড় পরে ঠাকুর দেখতে এলো।
বয়স্ক এবং নবীন সবাই পুজো পরিচালনায় দায়িত্ব নেন। বয়স্করা প্ল্যান করেন এবং নবীনরা তা পালন করেন। পুজোর জন্যে বাজেট তৈরি, কার বাড়িতে কত চাঁদা ধার্য করা হবে সেটা রমনগড়ে সবাইকে নিয়ে মিটিং-এ স্থির হয়। কারর যাতে কোন রকম অসুবিধা না হয় সেটা দেখা হয়। সম্পত্তি এবং রোজগারের ওপর ভিত্তি করে চাঁদার পরিমাণ ঠিক করা হয়। ছেলেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে। দিনগুলো খুব মজায় কাটে ছেলেদের। এই চাঁদা তোলার সুযোগে সব বাড়িতে দল বেঁধে যাওয়া যায়। কেউ কেউ অবশ্য টুকটাক খেতেও দেয়। এই সময় মেয়েদের দেখার, কাছে থেকে দেখার একটা সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। যে কারণে পবন পর্যন্ত বিনা চিন্তায় দিপ্তেন দত্তর বাড়ি ঢুকে যায়। সনকা মনিকাকে দেখতে পারে। সনকাকে শ্লীলতাহানির অপরাধে বিনা পারিশ্রমিকে, বিনা ইচ্ছায় লোকের বাড়ি বাড়ি জামা কাপড় কেঁচে দিতে হচ্ছে। তো সেই পবনও সনকার সামনে যেতে পারছে। দিপ্তেন দত্ত হাড় কিপ্টে। পয়সা থাকলেও খরচ করার মন নেই তার। তাই ওর বাড়ি থেকে কিছু খেতে পাবে আশা করেনি রমনগড়ের ছেলেরা।
সেদিন রবিবার ছিল। তাই দলে ধীমানও ছিল। ওদের চার মূর্তি ছাড়াও দলে অন্য ছেলেরা ছিল। অমিত, সুধাকর, তমাল, তথাগত, মুকুল। বাকিদের সাথে এই সময় কাজ করে ধীমানরা। এমনিতে ওদের সাথে বন্ধুত্ব থাকলেও ওদের চারজন আলাদা। ওদের মধ্যে যা স্বাছন্দ বোধ, পরস্পরের প্রতি ভালবাসা তা অন্যদের মধ্যে এরা পায় না। বাকিরা ওদের থেকে সামান্য বড় বা ছোট। সেটা অবশ্য বড় কথা না। ওদের সাথেও ধীমানরা হাঁ হাঁ হি হি করে।
নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে ছেলেরা দিপ্তেন দত্তর বাড়ি ঢুকল। দিপ্তেন দত্ত বাড়ি ছিলেন না। সনকা, মনিকা, ওদের মা, ঠাকুরমা সকলে এলেন। পবন একটু পিছন পিছন ঢুকছিল। লুকিয়ে সনকা আর মনিকার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিল। সনকা একটা নস্যি রঙের পাড়ওয়ালা সাদা শাড়ি পরেছিল। মনিকা একটা সাধারণ চুড়িদার পরেছিল। বুকে ওড়না ছিল।
আগেই নৃপেন কাকুর বাড়ি চা খেয়েছে। দিপ্তেন কিপ্টের বাড়িতে কিছু আশা করে না।
ধীমান বলল, ‘ঠাকুমা দুগগা পুজার চাঁদা নিতে এসেছি। এই নাও বিল।’
মনিকা বিলটা নিল। দুশো এক টাকা। আরে এতো বহু কম পরিমাণ। জগন্নাথের চাঁদা ১৫১ টাকা হলে দিপ্তেন দত্ত ২০১ টাকা হয় কি করে?
মনিকা মনের ভাব চেপে না রেখে বলল, ‘মাত্র ২০১?’
পবন বলে ফেলল, ‘তাতেই নাকি দিপ্তেন দত্তর অসুবিধা হবে!’
কথা বলেই পবন চুপ মেরে গেল। সনকাদির কথাটা খেয়াল ছিল না। নাহলে এ বাড়িতে চুপ থাকাই ভাল। সত্যি কথা সব সময় বলতে নেই। তার ওপর বেঠিক লোকের মুখে সত্যি কথা একেবারে মানায় না।
সনকার মা বললেন, ‘পবন তুই চুপ কর। তোর মুখের কোন কথা শুনতে চাই না। আর উনি যা ভাল বুঝেছে সেটা করেছে, সবাই মেনে নিল! যত অসুবিধা তোর না?’
শুধু মুধু বকা খেয়ে গেল পবন। এই কলঙ্ক না মিটলে সারা জীবন মাথা নিচু করে থেকে যেতে হবে।
ধীমান বলল, ‘আরে না না কাকিমা। পবন নিজে থেকে কিছু বলবে না। কাকা মিটিং-এ যা বলেছিল তাই হয়ত বলে ফেলেছে। তুমি কিছু মনে নিও না। আমাদের দিয়েদাও, আমরা যাই। এখন অনেকটা বাকি আছে।’
পবন দেখল ধীমান ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে। মাথা একটু তুলে মনিকার দিকে চোখটা বুলিয়ে নিল। দেখল ফিকফিক করে হাসছে। এই হাসিটাই পবনের গা পিত্তি জ্বালিয়ে দেয়। সারা গায়ে অপমানের আগুন ধরে যায়। অসহ্য। গা চিরবির করতে থাকে। আগেও, সনকাদির কেসটার পর, দেখেছে পবন একটু বিপাকে পরলেই ফিকফিক করে হাসতে শুরু করে মনিকা। ইচ্ছা করে গালে ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিই। নিজেকে সামলে নেয়। মাথা নিচু করে।
ধীমানকে সবাই সমীহ করে। সনকার মাও তার ব্যতিক্রম না। পবনের কথা প্রসঙ্গের কথা না বাড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, দাঁড়াও আমি এখুনি আসছি।’
ঘরে ঢুকে গেল। সফিকুল ভাবল ভাগ্য ভাল। দিপ্তেন দত্ত থাকলে ভোগান্তি ছিল। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একেবারে শেষ দিনে চাঁদাটা দিত। শালা একবার তো পুজোর পরে পুজোর চাঁদা দিল। টাকা বের করতে প্রান ফেটে যায়।
মায়ের পিছন পিছন মনিকা উঠে গেল ঘরের মধ্যে। এই বাড়িতে কেউ ইয়ার্কি মারছে না। সবাই একটু চুপচাপ।
সনকা সেটা লক্ষ্য করল। বলল, ‘কি রে সবাই চুপচাপ আছিস যে! সব বাড়িতেই তো এমন থাকিস না!’
তাও কেউ কথা বলছে না। পবন একটা থ্যাতাবাড়ি খেয়েছে, তাতে নিজেরা সজাগ যেন উল্টো পাল্টা কিছু না বলে ফেলে।
ধীমান বলল, ‘আরে না না। তারপর বল তোমার কি খবর সনকাদি?’
সনকা বলল, ‘আমার আর কি খবর থাকবে! চলছে বা চলছে না। তোর কি খবর?’
ধীমান বলল, ‘আরে আমার তো খবর। আগের বছর কলেজ লক্ষ্মী পুজোর পর খুলে গেছিল। এবারে ছেলেরা ঠিক করেছে কালী পুজোর পর সবাই যাবে। জোর করে ছুটি নিয়ে নিয়েছে। আমারও ভাল হল। বাড়তি অনেক কয়টা দিন গ্রামে থাকতে পারব।’
সনকা ধীমানের সাথে কথা বলতে শুরু করল, ‘তুই মামা বাড়ি যাবি না?’
ধীমান বলল, ‘আরে ধুর! ছোটবেলায় জোর করে মা নিয়ে যেত। এখানের মজা অন্য কোথাও পাব নাকি? সবাই হই হই করে কাটাব দিনগুলো।’
সনকার মা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। দুটো একশ টাকার নোট আর আর একটা এক টাকার কয়েন ধীমানের হাতে দিলেন। বললেন, ‘নাও, আমাদের চাঁদা।’
ধীমান বলল, ‘খুব ভাল হয়েছে প্রথমেই দিয়ে দিলেন বলে। অনেকে এত ঘোরায়!’
সনকার মা বুঝলেন কথাগুলো হয়ত ওনার স্বামীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু ধীমানকে কিছু বললেন না।
ধীমান বলল, ‘ঠিক আছে, চলি আমরা।’
সবাই পথের দিকে ফিরতেই পিছন থেকে মনিকা ডাকল, ‘ধীমানদা, সবাই একটু দাঁড়াও।’
সবাই ঘুরে দাঁড়াল। দেখল মনিকা একটা কাচের বাটি করে নারু এনেছে। নারকোল আর তিলের।
ঘুরে দাঁড়ালে মনিকা বলল, ‘আমি নিজে নারু বানিয়েছি। তোমরা একটু করে নাও।’
লাদেন শান্তির জন্যে নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেলে যেমন খবর হবে দিপ্তেন দত্তর বাড়ি থেকে পুজোর চাঁদা একবারে পাবার পর সেই বাড়ি থেকেই নারু খেয়ে বেরবার খবর তেমনি বৈপরিত্যে ভরা থাকবে। সবাই অবাক। শালি করেছে কি! সবাই হকচকিয়ে গিয়ে নীরব হয়ে গেছে। ধীমান সবার থেকে স্মার্ট। তাই ও প্রথম কথা বলল।
মনিকাকে বলল, ‘তুই নিজে বানিয়েছিস? তাহলে তো নিতেই হচ্ছে।’ হাত পাতল ধীমান। মনিকা ওর হাতে দুটো করে নারু দিল। ধীমান একটা মুখে দিল। এমন সুন্দরি যদি নারু বানায় তাহলে সেটা চিনি ছাড়াই মিষ্টি হবে।
ধীমান ভাবে গ্রামের সেরা সুন্দরি ও। তাছাড়া মনিকা নারুতে চিনি দিয়েছিল।
ধীমান বলল, ‘বাহ, দারুন বানিয়েছিস। খুব ভাল হয়েছে খেতে।’
ধীমান জিজ্ঞাসা করল, ‘পুজোর ড্রেস কেনা হয়ে গেছে?’
মনিকা নারু দিতে দিতে বলল, ‘হ্যাঁ। সালোয়ার কামিজ কিনেছি।’
ধীমান জিজ্ঞাসা করল, ‘কি রঙের কিনলি?’ বলেই ধীমান ভাবল ও যাই পরুক না কেন একেবারে পরি লাগবে, আর স্লিভলেস পরলে ডানাকাটা পরি।
মনিকা অমিত, সুধাকরদের দুটো দুটো করে দিতে থাকল। পবনের সামনে গেলে পবনের মুখের দিকে চাইল।
পবনের দিকে চোখ রেখে ধীমানের কথায় মনিকা উত্তর দিল, ‘সেটা পুজোর সময় পরলেই দেখতে পাবে।’
ওর হাতে চারটে তিলের নারু দিল। দিয়েই সেই ফিক করে হাসি। নারু যখন দিচ্ছিল আর কথা বলছিল তখন পবন ওর মুখের দিকে তাকিয়েছিল। মুখের হাসি দেখে মনে হল নারুগুলো ছুড়ে সব ফেলে দেয়। মনিকার চোখের সামনে ফেলতে পারলে মনটা একটু জুড়ত। আবার অপমানের ভয়ে কিছু বলল না। নারুগুলো হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বাল খায় দিপ্তেন দত্তর বাড়ির নারু! জীবন পাল্টে গেছে দিপ্তেন দত্তর মেয়ে পাল্লায় পড়ে। তারপর পারলেই ফিক হাসি মেরে অপমান করবে! এমন নারুর মুখে মুতি।
দুর্গা পূজা ক্রমশ এগিয়ে আসছে। রমনগড়ে একটামাত্র দুর্গা পূজা হয়। গ্রামের সকলে স্বতঃফুরতভাবে এই অনুষ্ঠানে গ্রহণ করেন। আনন্দ করেন। আনন্দে মেতে ওঠেন। * '. সবাই এতে যোগদান করেন। এবারে পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর দিনে আবার ঈদ পড়েছে। ফলে চার চার হয়ে গেছে। কলেজ ছুটি হয়ে যাবে। যারা প্রবাসে থাকেন তারা গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন।
পুজো এবারে দেরি করে হচ্ছে। বাতাসে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। এবারে বন্যা হয় নি ভাল করে। প্রত্যেকবার ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এবছর কেন ছাড় পেল তাই নিয়ে গ্রামবাসীরা গবেষণা শুরু করে দিল।
গ্রামের সকলে নতুন জামা কাপড় কিনে পরবে। রমনগড় বর্ধিষ্ণু গ্রাম। ফলে পুজোর সময় পুজোতে আনন্দ করার জন্যে প্রস্তুত থাকেন। সাধ্য মত আনন্দ করেন। বাচ্চাদের নতুন জামা প্যান্ট দেবার সাথে সাথে বড়রাও নতুন পোশাক পরিধান করেন। কেউ এমন থাকে না যে পুরনো জামা কাপড় পরে ঠাকুর দেখতে এলো।
বয়স্ক এবং নবীন সবাই পুজো পরিচালনায় দায়িত্ব নেন। বয়স্করা প্ল্যান করেন এবং নবীনরা তা পালন করেন। পুজোর জন্যে বাজেট তৈরি, কার বাড়িতে কত চাঁদা ধার্য করা হবে সেটা রমনগড়ে সবাইকে নিয়ে মিটিং-এ স্থির হয়। কারর যাতে কোন রকম অসুবিধা না হয় সেটা দেখা হয়। সম্পত্তি এবং রোজগারের ওপর ভিত্তি করে চাঁদার পরিমাণ ঠিক করা হয়। ছেলেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে। দিনগুলো খুব মজায় কাটে ছেলেদের। এই চাঁদা তোলার সুযোগে সব বাড়িতে দল বেঁধে যাওয়া যায়। কেউ কেউ অবশ্য টুকটাক খেতেও দেয়। এই সময় মেয়েদের দেখার, কাছে থেকে দেখার একটা সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। যে কারণে পবন পর্যন্ত বিনা চিন্তায় দিপ্তেন দত্তর বাড়ি ঢুকে যায়। সনকা মনিকাকে দেখতে পারে। সনকাকে শ্লীলতাহানির অপরাধে বিনা পারিশ্রমিকে, বিনা ইচ্ছায় লোকের বাড়ি বাড়ি জামা কাপড় কেঁচে দিতে হচ্ছে। তো সেই পবনও সনকার সামনে যেতে পারছে। দিপ্তেন দত্ত হাড় কিপ্টে। পয়সা থাকলেও খরচ করার মন নেই তার। তাই ওর বাড়ি থেকে কিছু খেতে পাবে আশা করেনি রমনগড়ের ছেলেরা।
সেদিন রবিবার ছিল। তাই দলে ধীমানও ছিল। ওদের চার মূর্তি ছাড়াও দলে অন্য ছেলেরা ছিল। অমিত, সুধাকর, তমাল, তথাগত, মুকুল। বাকিদের সাথে এই সময় কাজ করে ধীমানরা। এমনিতে ওদের সাথে বন্ধুত্ব থাকলেও ওদের চারজন আলাদা। ওদের মধ্যে যা স্বাছন্দ বোধ, পরস্পরের প্রতি ভালবাসা তা অন্যদের মধ্যে এরা পায় না। বাকিরা ওদের থেকে সামান্য বড় বা ছোট। সেটা অবশ্য বড় কথা না। ওদের সাথেও ধীমানরা হাঁ হাঁ হি হি করে।
নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে ছেলেরা দিপ্তেন দত্তর বাড়ি ঢুকল। দিপ্তেন দত্ত বাড়ি ছিলেন না। সনকা, মনিকা, ওদের মা, ঠাকুরমা সকলে এলেন। পবন একটু পিছন পিছন ঢুকছিল। লুকিয়ে সনকা আর মনিকার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিল। সনকা একটা নস্যি রঙের পাড়ওয়ালা সাদা শাড়ি পরেছিল। মনিকা একটা সাধারণ চুড়িদার পরেছিল। বুকে ওড়না ছিল।
আগেই নৃপেন কাকুর বাড়ি চা খেয়েছে। দিপ্তেন কিপ্টের বাড়িতে কিছু আশা করে না।
ধীমান বলল, ‘ঠাকুমা দুগগা পুজার চাঁদা নিতে এসেছি। এই নাও বিল।’
মনিকা বিলটা নিল। দুশো এক টাকা। আরে এতো বহু কম পরিমাণ। জগন্নাথের চাঁদা ১৫১ টাকা হলে দিপ্তেন দত্ত ২০১ টাকা হয় কি করে?
মনিকা মনের ভাব চেপে না রেখে বলল, ‘মাত্র ২০১?’
পবন বলে ফেলল, ‘তাতেই নাকি দিপ্তেন দত্তর অসুবিধা হবে!’
কথা বলেই পবন চুপ মেরে গেল। সনকাদির কথাটা খেয়াল ছিল না। নাহলে এ বাড়িতে চুপ থাকাই ভাল। সত্যি কথা সব সময় বলতে নেই। তার ওপর বেঠিক লোকের মুখে সত্যি কথা একেবারে মানায় না।
সনকার মা বললেন, ‘পবন তুই চুপ কর। তোর মুখের কোন কথা শুনতে চাই না। আর উনি যা ভাল বুঝেছে সেটা করেছে, সবাই মেনে নিল! যত অসুবিধা তোর না?’
শুধু মুধু বকা খেয়ে গেল পবন। এই কলঙ্ক না মিটলে সারা জীবন মাথা নিচু করে থেকে যেতে হবে।
ধীমান বলল, ‘আরে না না কাকিমা। পবন নিজে থেকে কিছু বলবে না। কাকা মিটিং-এ যা বলেছিল তাই হয়ত বলে ফেলেছে। তুমি কিছু মনে নিও না। আমাদের দিয়েদাও, আমরা যাই। এখন অনেকটা বাকি আছে।’
পবন দেখল ধীমান ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে। মাথা একটু তুলে মনিকার দিকে চোখটা বুলিয়ে নিল। দেখল ফিকফিক করে হাসছে। এই হাসিটাই পবনের গা পিত্তি জ্বালিয়ে দেয়। সারা গায়ে অপমানের আগুন ধরে যায়। অসহ্য। গা চিরবির করতে থাকে। আগেও, সনকাদির কেসটার পর, দেখেছে পবন একটু বিপাকে পরলেই ফিকফিক করে হাসতে শুরু করে মনিকা। ইচ্ছা করে গালে ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিই। নিজেকে সামলে নেয়। মাথা নিচু করে।
ধীমানকে সবাই সমীহ করে। সনকার মাও তার ব্যতিক্রম না। পবনের কথা প্রসঙ্গের কথা না বাড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, দাঁড়াও আমি এখুনি আসছি।’
ঘরে ঢুকে গেল। সফিকুল ভাবল ভাগ্য ভাল। দিপ্তেন দত্ত থাকলে ভোগান্তি ছিল। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একেবারে শেষ দিনে চাঁদাটা দিত। শালা একবার তো পুজোর পরে পুজোর চাঁদা দিল। টাকা বের করতে প্রান ফেটে যায়।
মায়ের পিছন পিছন মনিকা উঠে গেল ঘরের মধ্যে। এই বাড়িতে কেউ ইয়ার্কি মারছে না। সবাই একটু চুপচাপ।
সনকা সেটা লক্ষ্য করল। বলল, ‘কি রে সবাই চুপচাপ আছিস যে! সব বাড়িতেই তো এমন থাকিস না!’
তাও কেউ কথা বলছে না। পবন একটা থ্যাতাবাড়ি খেয়েছে, তাতে নিজেরা সজাগ যেন উল্টো পাল্টা কিছু না বলে ফেলে।
ধীমান বলল, ‘আরে না না। তারপর বল তোমার কি খবর সনকাদি?’
সনকা বলল, ‘আমার আর কি খবর থাকবে! চলছে বা চলছে না। তোর কি খবর?’
ধীমান বলল, ‘আরে আমার তো খবর। আগের বছর কলেজ লক্ষ্মী পুজোর পর খুলে গেছিল। এবারে ছেলেরা ঠিক করেছে কালী পুজোর পর সবাই যাবে। জোর করে ছুটি নিয়ে নিয়েছে। আমারও ভাল হল। বাড়তি অনেক কয়টা দিন গ্রামে থাকতে পারব।’
সনকা ধীমানের সাথে কথা বলতে শুরু করল, ‘তুই মামা বাড়ি যাবি না?’
ধীমান বলল, ‘আরে ধুর! ছোটবেলায় জোর করে মা নিয়ে যেত। এখানের মজা অন্য কোথাও পাব নাকি? সবাই হই হই করে কাটাব দিনগুলো।’
সনকার মা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। দুটো একশ টাকার নোট আর আর একটা এক টাকার কয়েন ধীমানের হাতে দিলেন। বললেন, ‘নাও, আমাদের চাঁদা।’
ধীমান বলল, ‘খুব ভাল হয়েছে প্রথমেই দিয়ে দিলেন বলে। অনেকে এত ঘোরায়!’
সনকার মা বুঝলেন কথাগুলো হয়ত ওনার স্বামীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু ধীমানকে কিছু বললেন না।
ধীমান বলল, ‘ঠিক আছে, চলি আমরা।’
সবাই পথের দিকে ফিরতেই পিছন থেকে মনিকা ডাকল, ‘ধীমানদা, সবাই একটু দাঁড়াও।’
সবাই ঘুরে দাঁড়াল। দেখল মনিকা একটা কাচের বাটি করে নারু এনেছে। নারকোল আর তিলের।
ঘুরে দাঁড়ালে মনিকা বলল, ‘আমি নিজে নারু বানিয়েছি। তোমরা একটু করে নাও।’
লাদেন শান্তির জন্যে নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেলে যেমন খবর হবে দিপ্তেন দত্তর বাড়ি থেকে পুজোর চাঁদা একবারে পাবার পর সেই বাড়ি থেকেই নারু খেয়ে বেরবার খবর তেমনি বৈপরিত্যে ভরা থাকবে। সবাই অবাক। শালি করেছে কি! সবাই হকচকিয়ে গিয়ে নীরব হয়ে গেছে। ধীমান সবার থেকে স্মার্ট। তাই ও প্রথম কথা বলল।
মনিকাকে বলল, ‘তুই নিজে বানিয়েছিস? তাহলে তো নিতেই হচ্ছে।’ হাত পাতল ধীমান। মনিকা ওর হাতে দুটো করে নারু দিল। ধীমান একটা মুখে দিল। এমন সুন্দরি যদি নারু বানায় তাহলে সেটা চিনি ছাড়াই মিষ্টি হবে।
ধীমান ভাবে গ্রামের সেরা সুন্দরি ও। তাছাড়া মনিকা নারুতে চিনি দিয়েছিল।
ধীমান বলল, ‘বাহ, দারুন বানিয়েছিস। খুব ভাল হয়েছে খেতে।’
ধীমান জিজ্ঞাসা করল, ‘পুজোর ড্রেস কেনা হয়ে গেছে?’
মনিকা নারু দিতে দিতে বলল, ‘হ্যাঁ। সালোয়ার কামিজ কিনেছি।’
ধীমান জিজ্ঞাসা করল, ‘কি রঙের কিনলি?’ বলেই ধীমান ভাবল ও যাই পরুক না কেন একেবারে পরি লাগবে, আর স্লিভলেস পরলে ডানাকাটা পরি।
মনিকা অমিত, সুধাকরদের দুটো দুটো করে দিতে থাকল। পবনের সামনে গেলে পবনের মুখের দিকে চাইল।
পবনের দিকে চোখ রেখে ধীমানের কথায় মনিকা উত্তর দিল, ‘সেটা পুজোর সময় পরলেই দেখতে পাবে।’
ওর হাতে চারটে তিলের নারু দিল। দিয়েই সেই ফিক করে হাসি। নারু যখন দিচ্ছিল আর কথা বলছিল তখন পবন ওর মুখের দিকে তাকিয়েছিল। মুখের হাসি দেখে মনে হল নারুগুলো ছুড়ে সব ফেলে দেয়। মনিকার চোখের সামনে ফেলতে পারলে মনটা একটু জুড়ত। আবার অপমানের ভয়ে কিছু বলল না। নারুগুলো হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বাল খায় দিপ্তেন দত্তর বাড়ির নারু! জীবন পাল্টে গেছে দিপ্তেন দত্তর মেয়ে পাল্লায় পড়ে। তারপর পারলেই ফিক হাসি মেরে অপমান করবে! এমন নারুর মুখে মুতি।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.