02-08-2019, 09:49 PM
বাসর
কেয়া আপা বাড়ীতে ফিরেছে, সিলভীর মুখেই শুনেছিলাম। কিন্তু, তার সত্যতা যাচাই করার জন্যে ভয়ে তার ঘরে চুপি দিয়ে একবার জানতেও সাহস হলো না। কেয়া আপা বাড়ীতে থাকলে যে বাড়ীটা ছন্দের রিনি ঝিনিতে ভরপুর থাকে, সে বাড়ীটা তখন সন্ধ্যা হয়ে যেতেও নিস্তব্ধতায় ভরপুর ছিলো! সন্ধ্যার দিকে আমার প্রস্রাবের বেগটা প্রবলই হলো। এই বেগটা দীর্ঘক্ষণ ধরেই ছিলো। ইচ্ছে করেই চেপে রেখেছিলাম কেয়া আপার মুখোমুখি হয়ে যাবার ভয়ে। শেষ পর্যন্ত বাথরুমে গেলাম আমি, সেই ফাঁকে কিছুটা হলেও অনুমান করা যাবে সত্যিই কেয়া আপা বাড়ীতে কিনা? নাকি, সিলভী আমাকে ফাঁকিই দিয়েছে। বাথরুম থেকে বেড়োতেই দেখলাম, কেয়া আপা টেবিলে খাবার সাজানোতেই ব্যস্ত। আমি মাথা নীচু করেই নিজ ঘরের দিকেই এগুচ্ছিলাম। কেয়া আপা বললো, খাবার দেয়া হয়েছে। কারো ইচ্ছে হলে খেতে পারে। কেয়া আপার এই ধরনের কথায়, সে যে কঠিনভাবেই রেগে আছে, তাতো নিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুধা লাগে নাকি কারো? আমি নিজের ঘরে যেতে যেতেই বললাম, এখন ক্ষুধা নেই। এমন একটা বয়সে এক দুপুর এক রাত না খেলে ক্ষতি কি? রাতের খাবারটাও খেলাম না আমি। ক্ষুধার জ্বালায় খুব ভোরেই ঘুম ভাঙলো আমার। আমি বিছানা ছেড়ে পা টিপে টপেই রান্না ঘরে গেলাম। উদ্দেশ্য, বিস্কিট টিস্কিট হলেও কোথাও আছে কিনা খোঁজে দেখা। আমি সব গুলো পটই খোলে খোলে দেখতে থাকলাম। হঠাৎই পেছন থেকে কেয়া আপার গলা শুনতে পেলাম, এখানে বিস্কিট আছে। কেউ খেতে চাইলে, খেতে পারে। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম ঠিকই। এক ধরনের অপরাধ বোধের কারনে কেয়া আপার চোখের দিকে তাঁকাতে পারলাম না। কেয়া আপার হাত থেকে বিস্কিটের প্যাকেটটা তুলে নিয়ে নিজের ঘরেই ফিরে এলাম কোন কথাবার্তা না বলে। সকাল আটটার দিকে, খাবার ঘর থেকে কেয়া আপার গলা আবারও শুনতে পেলাম। কেয়া আপা উঁচু গলাতেই বলছে, নাস্তা দেয়া হয়েছে। কেউ নাস্তা করে, কলেজে যেতে চাইলে যেতে পারে। আমি নাস্তার টেবিলে গেলাম ঠিকই, অথচ সব সময় আমার সামনা সামনি বসে যে কেয়া আপা নাস্তা করে, তাকে দেখলাম বাইরে গিয়ে বারান্দার সিঁড়িতে বসতে। আমি নাস্তাটা সেরে, গোসলটা করে, কলেজ ব্যাগটা নিয়ে আপাততঃ কলেজেই রওনা হলাম। কলেজে গিয়ে শুরু হলো সিলভী আর আমার মাঝে চিরকুট চালাচালি। কৌতুহলী সিলভী আমার বেঞ্চিতে চিরকুট ছুড়ে ফেলে জানতে চাইলো, কেয়া কিছু বলেছে? আমি জানালাম, না, তবে থমথমে একটা অবস্থা! কেয়া আপা সরাসরি আমার সাথে কথা বলছে না। ইন্ডাইরেক্ট কথাবার্তা চলছে! সিলভী জানালো, তুমি কোন দুঃশ্চিন্তা করবানা। আমি সব ম্যানেজ করবো। আমাদের প্রেমের ব্যাপারটা সব খুলে বলবো। প্রেম করলে এমন লুকুচুরী সেক্স সবাই করে, আমি বুঝিয়ে বলবো। সিলভীকে আমি কি উত্তর জানাবো বুঝতে পারলাম না। সিলভী তো আর জানেনা যে, আমার প্রথম প্রেমটা আসলে কেয়া আপার সাথেই। প্রথম যৌনতার হাতেখরি কেয়া আপার হাতেই। এবং এখনো প্রতি রাতে একই বিছানায় দুজনে স্বামী স্ত্রীর মতোই সহবাস করি। কিন্তু, এসব তাকে কি করেই বা বলি? আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। কলেজ ছুটির পরও সরাসরি বাড়ীতে না ফিরে, খেলার মাঠে চলে গেলাম আমি। বাড়ী ফিরলাম সন্ধ্যার পর। অনেকটা উদ্বিগ্নতা নিয়েই বাড়ীর ভেতর ঢুকেছিলাম। অথচ, অবাক হয়েই দেখলাম, কেয়া আপা চমৎকার একটা শাড়ী পরে আছে। মেয়েরা সাধারনত বিয়ের সময় এ ধরনের শাড়ী পরে। আমি না দেখার ভান করেই নিজ ঘরে ঢুকতে উদ্যত হচ্ছিলাম। কেয়া আপা খুব প্রানবন্ত গলাতেই ডাকলো, অনি, শাড়ীটাতে আমাকে কেমন লাগছে, দেখলে না তো! আমি কেয়া আপাকে এড়িয়ে যেতে পারলাম না। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়েই কেয়া আপার চোখের দিকে তাঁকালাম। চোখে চোখ পরতেই কেয়া আপা মিষ্টি হাসলো। কেয়া আপার দিকে ভালো করে তাঁকাতেই লক্ষ্য করলাম, কেয়া আপা শুধু শাড়ীই পরেনি, অনেক সাজ গোঁজও করেছে। এত্ত চমৎকার লাগছিলো কেয়া আপাকে যে, আমি আবেগ আপ্লুত হয়েই বলে ফেললাম, তোমাকে ঠিক নুতন বউয়ের মতোই লাগছে। কেয়া আপাও মিষ্টি হেসে বললো, তোমার পছন্দ হয়েছে? আমি বললাম, খুউব! কেয়া আপা বললো, তোমার জন্যে সাধারন পান্জাবীই কিনেছি। শিরওয়ানী পরে তো আর আমাকে নিয়ে বাইরে যেতে চাইবেনা, তাই? আমি বললাম, মানে? কেয়া আপা সহজভাবেই বললো, সত্যি সত্যিই তো আর আমাদের বিয়ে কখনো হবে না! তাই, মিছি মিছিই বিয়ে বিয়ে খেলতে চাইছি। আমি বুঝলাম না, কেয়া আপা কি বুঝাতে চাইছে। আমি চুপচাপই থাকলাম। কেয়া আপা আবারও বললো, রান্না বান্না কিছুই করিনি। ভাবছি বাইরে কোন ভালো রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খাবো। এই শাড়ীতে আমার সাথে যেতে লজ্জা লাগবেনা তো? আমি কোন কথা বলতে পারলাম না। সোফাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে, বসে হু হু করে কাঁদতে থাকলাম। কেয়া আপা আমার পাশেই গা ঘেষে বসলো। তারপর, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে খুব শান্ত গলাতেই বললো, সিলভী আমাকে সব খুলে বলেছে। আমিও মেনে নিয়েছি তোমাদের সম্পর্কটা। আসলে, এটাই উচিৎ! তোমরা মোটেও ভুল করোনি। আমি মিছি মিছি কিছু স্বপ্ন দেখেছি। আমি কেয়া আপাকে জড়িয়ে ধরে আবারো কাঁদতে থাকলাম। বললাম, কেয়া আপা, তুমি অনেক কষ্ট থেকে এমন কথা বলছো। কেয়া আপা হাসতে হাসতেই বললো, দূর বোকা, কষ্ট হবে কেনো? যেটা অবাস্তব, সেটা ভেবে কি কেউ কষ্ট পায়? আর কাঁদবে না তো! তৈরী হয়ে নাও। ওখানে টেবিলের উপর তোমার পাঞ্জাবীটা আছে। ইচ্ছে হলেই পরে নিও। সারাদিন সত্যিই কিছু খাইনি। তাই ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। আমি পাঞ্জাবীটা পরে নিয়ে, কেয়া আপার হাত ধরেই ঘর থেকে বেড়োলাম। বড় রাস্তায় গিয়ে বললাম, কোথায় খেতে যাবো? কেয়া আপা বললো, শহরের সবচেয়ে দামি রেস্টুরেন্টে। খরচের কথা ভাববেনা। আমার জমানো অনেক টাকা আছে! রেস্টুরেন্টে খেতে খেতেই বললো কেয়া আপা, জানো অনি, বাবা মা আসলে অনেক আগেই আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো। তুমি ছোট বলে, তোমার দেখাশুনা করার মতো কেউ নেই ভেবেই এতদিন রাজী ছিলাম না। তুমি তো এখন বড় হয়েছো। সব কিছু বুঝো! এখন যদি মা বাবার পছন্দের লোকটার সাথে বিয়ে করি, তাহলে আপত্তি করবে না তো? কেয়া আপার কথা শুনে, আমার মুখে আর খাবার রোচলো না। কেয়া আপা বললো, খাবার খেতে খেতেই আমার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো। আমি খাবার মুখে দিয়েই বললাম, ঠিক আছে বলো। কেয়া আপা বললো, আসলে আজকে আমি খুব ছুটাছুটির মাঝেই ছিলাম। নিজ বাড়ীতে গেলাম। বাবা মাকে আমার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে বললাম। এই সব শাড়ী পাঞ্জাবী কেনাকাটাও করলাম। বর পক্ষ আসলে অনেক আগেই আমাকে ঘরে তুলে নিতে চেয়েছিলো। আমি রাজী থাকাতে, তারাও আর দেরী করতে রাজী নয়। ঠিক করেছে আগামী শুক্রবারই আমার বিয়ে! আমি আৎকে উঠেই কথা বলতে চাইলাম। অথচ, কেয়া আপা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, জানি, তুমি আবেগ আপ্লুত হয়ে অনেক কথাই বলবে। কিন্তু আমার কথা শেষ হয়নি। আমি বললাম, ঠিক আছে, বলো। কেয়া আপা বললো, আসলে, বিয়েটা আমার জন্যে খুবই জরুরী। আমি বললাম, কিন্তু কেনো? আমার ভুলের জন্যে তো তুমি আমাকে শাস্তিও দিতে পারতে! সেসব না করে, বিয়ের জন্যে এত ছুটাছুটি করতে গেলে কেনো? কেয়া আপা সহজভাবেই বললো, কারন আমি মা হতে চলেছি! পারবে তুমি এখুনিই আমাকে বিয়ে করতে? সামাজিক মর্যাদা দিতে? আমি চোখ কপালে তুলেই বললাম, মানে? কেয়া আপা বললো, আসলে, আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। গতকাল ডাক্তারের কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম। তাই তাড়াহুড়া করেই বাড়ী ফিরে এসেছিলাম তোমাকে ব্যাপারটা জানাতে। ভালোই হলো, সিলভীকে তোমার পাশে দেখে। নইলে, এত সহজে হয়তো এই কথা তোমাকে বলতে পারতাম না। মা হবার ব্যাপার স্যাপারগুলো, গতকাল সিলভীও আমাকে বলেছিলো। তাই সে সতর্কতামূলক কিছু ব্যাবস্থাও নিয়েছিলো। কেয়া আপার সাথে সে ব্যাপারে কোন রকম ব্যবস্থা নেবার কথা ভাববার অবকাশও পাইনি। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। কেয়া আপা মিষ্টি হেসেই বললো, মন খারাপ করো নাতো! আজকের রাতটা আমি আনন্দে আনন্দে কাটাতে চাই। মেয়েদের বিয়ে জীবনে একবারই হওয়া উচিৎ! আমি ভাবছি, আজই আমার সত্যিকারের বিয়ে! আগামী শুক্রবার যেটা হবে, সেটা লোক দেখানো। আমি কেয়া আপাকে নিয়ে বাড়ীতে ফিরলাম রাত দশটার দিকে। যে বাড়ীর দরজার লকটা আমাকে কিংবা কেয়া আপারই খোলার কথা ছিলো, অথচ খুলতে গিয়ে অনুভব করলাম দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ! আমার গলা শুকিয়ে উঠলো তৎক্ষনাত। তাহলে কি বাবা ফিরে এসেছে? আমাদের এমন পোষাকে দেখলে ভাববে কি? অথচ, কেয়া আপা খুব সহজভাবেই মুচকি হেসে কলিং বেলটা টিপলো। আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। তাহলে কি কেয়া আপা চালাকী করে, আমার বাবাকে আগে থেকেই সব জানিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু, জানিয়ে রাখলেও, মাত্র একটা দিনের ব্যবধানে কোন দেশের নোঙর ঘাট থেকে এত তাড়তাড়ি ছুটে এলো? নাকি কাকতালীয়ভাবে দেশে এসে বাবার জাহাজ নোঙর করার পরই কোন খবর পেয়েছে! দরজাটা খোলে যে দাঁড়ালো তাকে দেখে সত্যিই অবাক হলাম। সিলভী! বাড়ীতে নুতন বউ এলে যা করতে হয়, তেমনি এক প্রস্তুতিই সে নিয়ে রেখেছে। ব্যাপার কি কিছুই বুঝলাম না। সিলভী বধু বরণের মতোই কেয়া আপাকে নিয়ে আমার ঘরে এগিয়ে চললো। আমিও পেছন পেছন গেলাম। আমার নিজ ঘরে চুপি দিয়ে আরও অবাক হলাম। আমার ঘরটা তো দেখছি একটা বাসর ঘর! সেভাবে ঘরটাও যেমনি সাজানো আছে, আমার খাটটাও ফুলশয্যাতেই সাজানো। আমি অবাক গলাতেই বললাম, সিলভী, এসব কি? সিলভীও সহজভাবে বললো, তোমরা নিজেরা নিজেরা বিয়ে করেছো, আমাকে নিমন্ত্রনও করলে না। তাই বলে, তোমাদের বাসর ঘরটাও সাজাবো না তা কি করে হয়? আমি অবাক হয়েই বললাম, না মানে, কেয়া আপা শখ করেছিলো! সিলভী আমার কথা শেষ না হতেই বললো, আমিও শখ করেছি! তবে আমি কিন্তু তোমাদের বাসরঘর থেকে এক পাও নরছিনা। কিভাবে তোমরা বাসর রাতটা কাটাও, সব নিজ চোখেই দেখবো। আমি কেয়া আপাকে লক্ষ্য করেই বললাম, এসবের মানে কি? কেয়া আপা বললো, মানে খুব সহজ! আমি আমার মত করেই সব কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ঝামেলা বাঁধিয়েছে এই পাজী মেয়ে! বলে কিনা তোমাকে সারপ্রাইজ দেবে! আমার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেলো। কেয়া আপার সাথে আমার একটা গোপন সম্পর্ক আছে, তা আমি কিছুতেই সিলভীকে জানাতে চাইছিলাম না। অথচ, আমার অগোচরে এত কিছু ঘটে যাবে, সব কিছু জানাজানি হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। তাই, সিলভীর সাথে যে প্রেমটা করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটার আশা ত্যাগ করেই সিলভীকে বললাম, ধন্যবাদ। ভালো থেকো। অনেক রাত হয়েছে, বাড়ী যাবে না? সিলভী খিল খিল করে হাসতে হাসতেই বললো, তোমাদের বাসর রাত দেখার জন্যে এতক্ষণ ধরে একাকী অপেক্ষা করে আছি, আর তুমি বলছো চলে যেতে! তোমরা কে কি করো, এখানে মেঝেতে বসে বসে চুপচাপ সব দেখবো! কোন রকম আপত্তি করা চলবে না! আমি হাত জোড় করেই সিলভীকে বললাম, স্যরি সিলভী, কেয়া আপার সাথে আমার গোপন সম্পর্কের কথাটা তোমাকে আগেই জানানো উচিৎ ছিলো। আমাকে ক্ষমা করে দিও। সিলভী দুষ্টুমীর গলাতেই বললো, ক্ষমা করবো তখনই, যখন গোপনে কেয়ার সাথে যা যা করতে, সব আমাকে আজ রাতে দেখাও। আমি বললাম, এটা কি করে সম্ভব? এসব তো গোপনে করার ব্যাপার? সিলভী বললো, তা আমিও বুঝি! কিন্তু, উপায় নেই। কেয়া যখন আমার ইজ্জত দেখেই ফেলেছে! তখন কেয়ার ইজ্জত আমি দেখতে দোষ কি? কি বলো, কেয়া? কেয়া আপা বললো, আমি কি ইচ্ছে করে দেখেছি নাকি? সিলভী বললো, না, তা দেখোনি। তবে, অত কথা আমি বুঝিনা! আমি স্বজ্ঞানে, স্বইচ্ছাতেই দেখবো।