01-08-2019, 09:15 PM
২য় পর্ব
প্রথম চুমু
আমি বুঝিনা, মানুষ কেনো চটি লিখে, অথবা চটি পড়ে! সেদিন কেয়া আপার থাপ্পর খেয়ে, চটি কেনো, জীবনে যে কোন ধরনের গল্পো লেখার স্বাদই মিটে গিয়েছিলো। সেদিন রাতে কেয়া আপা আরো কেঁদেছিলো। বলেছিলো, অনি, আমার মা বাবা ভাই বোন সবাই আছে। তারপরও তোমাকে একা রেখে এই বাড়ী ছাড়তে ইচ্ছে করতো না। কারন, আমার মনে হতো, তুমি খুব ছোট, বুদ্ধি হয়নি। এমন গল্পো যে লিখতে পারে, তাকে তো আর ছোট, বুদ্ধিহীন বলা যায়না! কেয়া আপা আরো বললো, মা বাবা তো আমার বিয়ে ঠিকই করে রেখেছে! আমি তাহলে বিয়েটা করেই ফেলি, কি বলো? ছেলেও ভালো। গন্জে দোকান আছে, অন্তত না খেয়ে তো আর মরতে হবে না। আমার সেদিন খুবই কান্না পেয়েছিলো। আমি কেয়া আপাকে দীর্ঘ একটা সময় জড়িয়ে ধরে রেখে শুধু চোখের জল ফেলেছি। অথচ, কোন কথা বলিনি। ভালোবাসার ব্যাপারগুলো তখনও আমি বুঝিনা! যেমনি যৌনতার ব্যপারগুলোও বুঝতাম না। আমি বুঝতে পারলাম না, কেয়া আপার প্রতি আমারই বা কেমন ভালোবাসা, অথবা আমার প্রতি কেয়া আপারই বা কেমন ধরনের ভালোবাসা। তারও এক সপ্তাহ পর। আসলে, ছুটির দিন গুলো কখনোই আমার ভালো লাগতোনা। সাধারন দিন গুলোতে কলেজে গেলে অনেক বন্ধু পাই, কথা হয়। কলেজ ছুটির পর খেলার মাঠে গিয়ে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পর দিনের পড়া তৈরী করা। এমনিতেই সময় কেটে যায়। অথচ, ছুটির দিনে করার মতো কিছু থাকতো না। মাঝে মাঝে ক্রিকেট ম্যাচ করার জন্যে মাঠে যেতাম, তবে তখন সেটা সত্যিই কদাচিত ছিলো! বন্ধুদের ইচ্ছে হলেই ডাকতো। বাবা জাহাজ নিয়ে দেশে ফিরলেই মাঝে মাঝে দেখা হতো। তাই, ধরতে গেলে ছুটির দিনে কথা বলার কোন মানুষও ছিলো না। কেয়া আপা বাড়ীতে থাকলেও রান্না বান্না ঘর গোছালী এটা সেটা করে, অবসর সময়ে বারান্দার সিঁড়িতে বসে গল্পের বই কিংবা, এটা সেটা ম্যাগাজিন পড়তো একাকী। খুব ছোট কাল থেকেই পাঠ্য বই ছাড়া অন্য কোন গল্পের বইয়ের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ ছিলোনা। তাই, ছুটির দিনটা কাটতো খুব কষ্টে। তবে, খুব বেশী ভালো না লাগলে, অংক করতাম খুব মনযোগ দিয়ে। তখন সময়টা খুব ভালোই কাটতো। সেদিন ছুটির দিনে সকাল কত হবে? নয়টা? অথবা দশটা? কেয়া আপার সাথেই নাস্তাটা সেরে নেবার পর, নিজের ঘরে বসেই অংক করছিলাম। কেয়া আপা হঠাৎই আমার ঘরে ঢুকে বললো, সুন্দর একটা দিন। কোথাও বেড়াতে গেলে কেমন হয়? আমি বললাম, কোথায় যাবো? কেয়া আপা বললো, শুনেছি, ওইদিকে নাকি একটা নদী আছে, কখনো যাইনি। তুমি কখনো গিয়েছো? আমি বললাম, হ্যা, অনেক আগে একবার গিয়েছিলাম। পিকনিকে! খুব সুন্দর নদী! কেয়া আপা খুব সোহাগী গলায় বললো, আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে? আশ্চয্য, কেয়া আপা আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে হলেও বয়সে বড় বলে, বড় বোন মনে করে আদেশ নির্দেশেরই আশা করতাম সব সময়। অথচ, সে কিনা আমাকে অনুরোধ করছে? আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি নিয়ে যাবো কেনো? যেতে হয়, এক সংগে যাবো! কেয়া আপা কেমন যেনো লজ্জাময় হাসি হেসে বললো, আমাকে সংগে নিয়ে বাইরে যেতে তোমার লজ্জা করবে না তো? আমি অবাক হয়ে বললাম, লজ্জা করবে কেনো? কেয়া আপা এবার দেয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে, অভিমানী আর স্পষ্ট গলাতেই বললো, শত হউক, আমি তো তোমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে। আজ আছি, কাল নেই। তোমার সাথে বাইরে গেলে, লোকে মন্দ বলবে না? আমার তেরো বছরের অভিমানী মনটাও প্রতিবাদ করে বলে উঠলো, কেয়া আপা, আমি কি তোমাকে কখনো কাজের মেয়ে বলেছি? তুমি নদী দেখতে যেতে চাইছো, চলো! কেয়া আপার সরল মনটা হঠাৎই এক মহা আনন্দে ভরে উঠলো। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আনন্দিত চেহারা বোধ হয় আমি সেদিনই দেখেছিলাম। কেয়া আপা খুব আমতা আমতা করে বললো, তাহলে একটু অপেক্ষা করো। আমি এক্ষুণি আসছি। কেয়া আপা মিনিট বিশ পরই আমার ঘরে আবারো ফিরে এলো। এবং ভিন্ন এক গলায় বললো, অনি, আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? আমি কেয়া আপাকে এক নজর দেখে, খুব সাধারন গলাতেই বললাম, কেমন লাগবে? সব সময়ই তো তোমাকে দেখি! কেয়া আপা রাগ করেই বললো, ধ্যাৎ, সব সময় কি আমাকে দেখতে এমন লাগে? আমি বললাম, না মানে, খুব সুন্দর একটা পোষাক পরেছো! বেড়াতে গেলে তো এমন পোষাকই তুমি পরো! কেয়া আপা আবারও রাগ করে বললো, আর কিছু না? আমি আবারও কেয়া আপার আপাদ মস্তক দেখতে থাকলাম। দেখে বললাম, নাহ! তোমাকে দেখতে সব সময় সুন্দর দেখায়, আজ একটু বেশী সুন্দর লাগছে! এর বেশি কিছু না। কেয়া আপা কেমন যেনো অভিমানী গলায় বললো, থাক আর বলতে হবে না। এখন কি বাইরে বেড়াতে যাবো? কেয়া আপাকে নিয়ে বাইরে গিয়ে, কিছুটা দুর যেতেই দেখলাম, একটি ছয় সাত বছরের মেয়ে কাঁদছে, আর চিৎকার করছে, ভাইয়া আমিও যাবো, আমি যাবো! আমি দেখলাম দশ এগারো বছরের একটি কিশোর কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে, সেই মেয়েটিকে ধমকে ধমকে বলছে, তোমাকে বলছি বাসায় যাও! বাসায় যাও! মেয়েটি আবারও কাঁদতে কাঁদতে বললো, না, যাবো না! আমি তোমার সাথে যাবো ভাইয়া! ছেলেটি আবারো ধমকে বললো, আমি খেলা শেষ করে এক্ষুণি আসছি! তুমি বাসায় যাও! আম্মুর সাথে খেলো! যাও! অবশেষে, শিশু মেয়েটি নিজ বাড়ীর দিকেই ফিরতে থাকলো, চোখ কচলাতে কচলাতে, কাঁদতে কাঁদতে। অথচ, কিশোর ছেলেটি কোন রকম পরোয়া না করে, ছুটতে ছুটতে চলে গেলো, নিজ খেলার পথেই। পাশে হাঁটা কেয়া আপা হঠাৎই তার ডান হাতটা, আমার বাম হাত চেপে ধরে বললো, আমাকেও এমন করে ফেলে কখনো চলে যাবে না তো? কেয়া আপার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম, মানে? কেয়া আপা যেমনি হঠাৎই আমার হাতটা চেপে ধরেছিলো, ঠিক তেমনি হঠাৎই মুক্ত করে দিয়ে, বিহঙ্গের মতোই যেনো হাঁটতে থাকলো ছুটতে ছুটতে। আমি তার সাথে হাঁটাতেও পেরে উঠতে পারলাম না। আমি ডাকলাম, কেয়া আপা, এত জোড়ে হাঁটছো কেনো? নদী এখনো অনেক দূর! ক্লান্ত হয়ে যাবে তো! কেয়া আপা হঠাৎই থেমে দাঁড়িয়ে, ঘুরে আমার দিকে এক রহস্যময় চোখে তাঁকিয়ে থাকলো। আমি কাছাকাছি আসতেই বললো, ধীরে হাঁটতে আমার আপত্তি নেই। তবে, আমার একটা শর্ত আছে! আমি অবাক হয়ে বললাম, কি শর্ত? কেয়া আপা দু হাত কোমরে রেখে বললো, বাকীটা পথ যদি আমার হাত ধরে, আমাকে নিয়ে যেতে পারো। আমি খুবই অবাক হলাম! এটা কোন ব্যপার নাকি? আমার নিসংগ জীবনে কেয়া আপাই তো আমার আপনজন! তার হাত ধরে, তাকে নিয়ে বাকীটা পথ হাঁটতে পারবো না, তা কি করে হয়? আমি খুব সহজভাবেই তার হাতটা নিজের হাতে চেপে ধরলাম। তারপর বললাম, চলো! নদীর কিনারায় এসে, কেয়া আপা খুব উচ্ছল প্রাণবন্ত হয়েই নদীর পানিতে ছুটাছুটি করতে থাকলো। দেখাদেখি আমিও খানিকটা করলাম। তারপর, ক্লান্ত হয়েই একটা গাছের গুড়িতে গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলাম। কেয়া আপা যেনো বিরক্তি নিয়েই আরো কিছুটা সময় একা একা নদীর পানিতে ছুটা ছুটি করে, একটা কাশফুলের ডাটা ভেঙ্গে হাতে নিয়ে আমার পাশেই গা ঘেষে বসলো। কেয়া আপা আমার গা ঘেষে বসবে, এ আর তেমন কি? অথচ, আমার গা টা হঠাৎই যেনো, এক ধরনের শিহরনে ভরে উঠলো। অথচ, আমি সেটা কেয়া আপাকে বুঝতে দিলাম না। কেয়া আপা তার ডান হাতের কনুইটা আমার ঘাড়ের উপর রেখে, থুতনিটা ঠিক তার নিজের হাতের কব্জিতে ঠেকালো হঠাৎই। আমার গাল তার গালে ছুই ছুই করছিলো। আমি বুঝলামনা, কেনো যেনো আমার দেহে আরো বেশী শিহরণ জেগে উঠতে থাকলো। সেটাও আমি প্রচন্ড রকমে সহ্য করে নিলাম। কেয়া আপা হঠাৎই রাগ করে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো, চলো, বাড়ী ফিরে যাই! আমি বললাম, এই তো এলাম! একটু বিশ্রাম করি! কেয়া আপা খুব কান্না জড়িত গলায় বললো, নাহ, ভালো লাগছে না। আমি দেখলাম, কেয়া আপার চোখ থেকে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, কেয়া আপা, তোমার চোখে পানি? কেয়া আপা তার ওড়নাটা দিয়ে, চোখের জল মুছে বললো, তোমাকে যতটা রোমান্টিক ভেবেছিলাম, ততটা তুমি নও। আমি অবাক হয়েই বললাম, মানে? আমি কিছু না বুঝার আগেই, কেয়া আপা হঠাৎই তার দু হাত দিয়ে আমার গাল দুটো চেপে ধরে, তার ঠোট দুটো দিয়ে আমার ঠোট দুটো নিজের ঠোটের ভেতর নিয়ে খানিকটা ক্ষণ কি যেনো করলো, নিজেই বুঝতে পারলাম না। তবে মনে হলো, এমন কোন সুখের ক্ষণ এই জীবনে এই বুঝি, এই প্রথম! আমার দেহের সমস্ত শিরা উপশিরাগুলো তখন কি করছিলো, কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে, মনে হতে থাকলো, আমার ঠোটে, জিভে, মুখের ভেতর অপার্থিব এক সুখের নদী এসে ঢেউ খেলতে লাগলো। আর সেই ঢেউটা আমার সমস্ত দেহেই প্রবাহিত হতে থাকলো। খানিকটা পর, কেয়া আপা আমার ঠোট যুগল মুক্ত করে, লজ্জিত গলায় বললো, আমাকে ক্ষমা করে দিও। কেয়া আপার ব্যপারটা কিছুই বুঝলাম না। আমাকে এমন একটা সুখের নদীতে নিয়ে গিয়ে, বাস্তব জীবনের সব কিছু ভুলিয়ে দিয়ে, আবার নিজেই ক্ষমা চাইছে? আমি ফ্যাল ফ্যাল করেই কেয়া আপার মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইলাম বোকার মতো। অথচ দেখলাম, কেয়া আপা এক ধরনের অপারাধী চেহারা করে তাঁকিয়ে আছে মাটির দিকে। আমি আমার অবচেতন মন থেকে হঠাৎই বললাম, কেয়া আপা! আবার! কেয়া আপা ভীরু ভীরু চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে বললো, কি আবার? আমি খুব সহজভাবেই বলে ফেললাম, এই যে, কিছুক্ষণ আগে যা করলে! কেয়া আপা মিষ্টি হাসলো। তারপর তার চোখ দুটো বন্ধ করে, মুখটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে, ঠোট যুগল খানিকটা উঁচু করে ধরলো। আমিও কেমন যেনো অবচেতন মনেই কেয়া আপার চমৎকার ঠোট যুগল নিজের ঠোটের ভেতর পুরে নিলাম। সেভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানিনা। হঠাৎই এক রাখাল বালকের ডাকেই চেতন ফিরে পেলাম। শুনলাম, কে যেনো বললো, এই তোমরা এখানে কি করছো? আমি তখন ভয়ে, কেয়া আপার হাতটা টেনে ধরে, পাগলের মতোই পালাতে থাকলাম বাড়ীর পথে।
প্রথম চুমু
আমি বুঝিনা, মানুষ কেনো চটি লিখে, অথবা চটি পড়ে! সেদিন কেয়া আপার থাপ্পর খেয়ে, চটি কেনো, জীবনে যে কোন ধরনের গল্পো লেখার স্বাদই মিটে গিয়েছিলো। সেদিন রাতে কেয়া আপা আরো কেঁদেছিলো। বলেছিলো, অনি, আমার মা বাবা ভাই বোন সবাই আছে। তারপরও তোমাকে একা রেখে এই বাড়ী ছাড়তে ইচ্ছে করতো না। কারন, আমার মনে হতো, তুমি খুব ছোট, বুদ্ধি হয়নি। এমন গল্পো যে লিখতে পারে, তাকে তো আর ছোট, বুদ্ধিহীন বলা যায়না! কেয়া আপা আরো বললো, মা বাবা তো আমার বিয়ে ঠিকই করে রেখেছে! আমি তাহলে বিয়েটা করেই ফেলি, কি বলো? ছেলেও ভালো। গন্জে দোকান আছে, অন্তত না খেয়ে তো আর মরতে হবে না। আমার সেদিন খুবই কান্না পেয়েছিলো। আমি কেয়া আপাকে দীর্ঘ একটা সময় জড়িয়ে ধরে রেখে শুধু চোখের জল ফেলেছি। অথচ, কোন কথা বলিনি। ভালোবাসার ব্যাপারগুলো তখনও আমি বুঝিনা! যেমনি যৌনতার ব্যপারগুলোও বুঝতাম না। আমি বুঝতে পারলাম না, কেয়া আপার প্রতি আমারই বা কেমন ভালোবাসা, অথবা আমার প্রতি কেয়া আপারই বা কেমন ধরনের ভালোবাসা। তারও এক সপ্তাহ পর। আসলে, ছুটির দিন গুলো কখনোই আমার ভালো লাগতোনা। সাধারন দিন গুলোতে কলেজে গেলে অনেক বন্ধু পাই, কথা হয়। কলেজ ছুটির পর খেলার মাঠে গিয়ে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পর দিনের পড়া তৈরী করা। এমনিতেই সময় কেটে যায়। অথচ, ছুটির দিনে করার মতো কিছু থাকতো না। মাঝে মাঝে ক্রিকেট ম্যাচ করার জন্যে মাঠে যেতাম, তবে তখন সেটা সত্যিই কদাচিত ছিলো! বন্ধুদের ইচ্ছে হলেই ডাকতো। বাবা জাহাজ নিয়ে দেশে ফিরলেই মাঝে মাঝে দেখা হতো। তাই, ধরতে গেলে ছুটির দিনে কথা বলার কোন মানুষও ছিলো না। কেয়া আপা বাড়ীতে থাকলেও রান্না বান্না ঘর গোছালী এটা সেটা করে, অবসর সময়ে বারান্দার সিঁড়িতে বসে গল্পের বই কিংবা, এটা সেটা ম্যাগাজিন পড়তো একাকী। খুব ছোট কাল থেকেই পাঠ্য বই ছাড়া অন্য কোন গল্পের বইয়ের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ ছিলোনা। তাই, ছুটির দিনটা কাটতো খুব কষ্টে। তবে, খুব বেশী ভালো না লাগলে, অংক করতাম খুব মনযোগ দিয়ে। তখন সময়টা খুব ভালোই কাটতো। সেদিন ছুটির দিনে সকাল কত হবে? নয়টা? অথবা দশটা? কেয়া আপার সাথেই নাস্তাটা সেরে নেবার পর, নিজের ঘরে বসেই অংক করছিলাম। কেয়া আপা হঠাৎই আমার ঘরে ঢুকে বললো, সুন্দর একটা দিন। কোথাও বেড়াতে গেলে কেমন হয়? আমি বললাম, কোথায় যাবো? কেয়া আপা বললো, শুনেছি, ওইদিকে নাকি একটা নদী আছে, কখনো যাইনি। তুমি কখনো গিয়েছো? আমি বললাম, হ্যা, অনেক আগে একবার গিয়েছিলাম। পিকনিকে! খুব সুন্দর নদী! কেয়া আপা খুব সোহাগী গলায় বললো, আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে? আশ্চয্য, কেয়া আপা আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে হলেও বয়সে বড় বলে, বড় বোন মনে করে আদেশ নির্দেশেরই আশা করতাম সব সময়। অথচ, সে কিনা আমাকে অনুরোধ করছে? আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি নিয়ে যাবো কেনো? যেতে হয়, এক সংগে যাবো! কেয়া আপা কেমন যেনো লজ্জাময় হাসি হেসে বললো, আমাকে সংগে নিয়ে বাইরে যেতে তোমার লজ্জা করবে না তো? আমি অবাক হয়ে বললাম, লজ্জা করবে কেনো? কেয়া আপা এবার দেয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে, অভিমানী আর স্পষ্ট গলাতেই বললো, শত হউক, আমি তো তোমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে। আজ আছি, কাল নেই। তোমার সাথে বাইরে গেলে, লোকে মন্দ বলবে না? আমার তেরো বছরের অভিমানী মনটাও প্রতিবাদ করে বলে উঠলো, কেয়া আপা, আমি কি তোমাকে কখনো কাজের মেয়ে বলেছি? তুমি নদী দেখতে যেতে চাইছো, চলো! কেয়া আপার সরল মনটা হঠাৎই এক মহা আনন্দে ভরে উঠলো। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আনন্দিত চেহারা বোধ হয় আমি সেদিনই দেখেছিলাম। কেয়া আপা খুব আমতা আমতা করে বললো, তাহলে একটু অপেক্ষা করো। আমি এক্ষুণি আসছি। কেয়া আপা মিনিট বিশ পরই আমার ঘরে আবারো ফিরে এলো। এবং ভিন্ন এক গলায় বললো, অনি, আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? আমি কেয়া আপাকে এক নজর দেখে, খুব সাধারন গলাতেই বললাম, কেমন লাগবে? সব সময়ই তো তোমাকে দেখি! কেয়া আপা রাগ করেই বললো, ধ্যাৎ, সব সময় কি আমাকে দেখতে এমন লাগে? আমি বললাম, না মানে, খুব সুন্দর একটা পোষাক পরেছো! বেড়াতে গেলে তো এমন পোষাকই তুমি পরো! কেয়া আপা আবারও রাগ করে বললো, আর কিছু না? আমি আবারও কেয়া আপার আপাদ মস্তক দেখতে থাকলাম। দেখে বললাম, নাহ! তোমাকে দেখতে সব সময় সুন্দর দেখায়, আজ একটু বেশী সুন্দর লাগছে! এর বেশি কিছু না। কেয়া আপা কেমন যেনো অভিমানী গলায় বললো, থাক আর বলতে হবে না। এখন কি বাইরে বেড়াতে যাবো? কেয়া আপাকে নিয়ে বাইরে গিয়ে, কিছুটা দুর যেতেই দেখলাম, একটি ছয় সাত বছরের মেয়ে কাঁদছে, আর চিৎকার করছে, ভাইয়া আমিও যাবো, আমি যাবো! আমি দেখলাম দশ এগারো বছরের একটি কিশোর কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে, সেই মেয়েটিকে ধমকে ধমকে বলছে, তোমাকে বলছি বাসায় যাও! বাসায় যাও! মেয়েটি আবারও কাঁদতে কাঁদতে বললো, না, যাবো না! আমি তোমার সাথে যাবো ভাইয়া! ছেলেটি আবারো ধমকে বললো, আমি খেলা শেষ করে এক্ষুণি আসছি! তুমি বাসায় যাও! আম্মুর সাথে খেলো! যাও! অবশেষে, শিশু মেয়েটি নিজ বাড়ীর দিকেই ফিরতে থাকলো, চোখ কচলাতে কচলাতে, কাঁদতে কাঁদতে। অথচ, কিশোর ছেলেটি কোন রকম পরোয়া না করে, ছুটতে ছুটতে চলে গেলো, নিজ খেলার পথেই। পাশে হাঁটা কেয়া আপা হঠাৎই তার ডান হাতটা, আমার বাম হাত চেপে ধরে বললো, আমাকেও এমন করে ফেলে কখনো চলে যাবে না তো? কেয়া আপার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম, মানে? কেয়া আপা যেমনি হঠাৎই আমার হাতটা চেপে ধরেছিলো, ঠিক তেমনি হঠাৎই মুক্ত করে দিয়ে, বিহঙ্গের মতোই যেনো হাঁটতে থাকলো ছুটতে ছুটতে। আমি তার সাথে হাঁটাতেও পেরে উঠতে পারলাম না। আমি ডাকলাম, কেয়া আপা, এত জোড়ে হাঁটছো কেনো? নদী এখনো অনেক দূর! ক্লান্ত হয়ে যাবে তো! কেয়া আপা হঠাৎই থেমে দাঁড়িয়ে, ঘুরে আমার দিকে এক রহস্যময় চোখে তাঁকিয়ে থাকলো। আমি কাছাকাছি আসতেই বললো, ধীরে হাঁটতে আমার আপত্তি নেই। তবে, আমার একটা শর্ত আছে! আমি অবাক হয়ে বললাম, কি শর্ত? কেয়া আপা দু হাত কোমরে রেখে বললো, বাকীটা পথ যদি আমার হাত ধরে, আমাকে নিয়ে যেতে পারো। আমি খুবই অবাক হলাম! এটা কোন ব্যপার নাকি? আমার নিসংগ জীবনে কেয়া আপাই তো আমার আপনজন! তার হাত ধরে, তাকে নিয়ে বাকীটা পথ হাঁটতে পারবো না, তা কি করে হয়? আমি খুব সহজভাবেই তার হাতটা নিজের হাতে চেপে ধরলাম। তারপর বললাম, চলো! নদীর কিনারায় এসে, কেয়া আপা খুব উচ্ছল প্রাণবন্ত হয়েই নদীর পানিতে ছুটাছুটি করতে থাকলো। দেখাদেখি আমিও খানিকটা করলাম। তারপর, ক্লান্ত হয়েই একটা গাছের গুড়িতে গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলাম। কেয়া আপা যেনো বিরক্তি নিয়েই আরো কিছুটা সময় একা একা নদীর পানিতে ছুটা ছুটি করে, একটা কাশফুলের ডাটা ভেঙ্গে হাতে নিয়ে আমার পাশেই গা ঘেষে বসলো। কেয়া আপা আমার গা ঘেষে বসবে, এ আর তেমন কি? অথচ, আমার গা টা হঠাৎই যেনো, এক ধরনের শিহরনে ভরে উঠলো। অথচ, আমি সেটা কেয়া আপাকে বুঝতে দিলাম না। কেয়া আপা তার ডান হাতের কনুইটা আমার ঘাড়ের উপর রেখে, থুতনিটা ঠিক তার নিজের হাতের কব্জিতে ঠেকালো হঠাৎই। আমার গাল তার গালে ছুই ছুই করছিলো। আমি বুঝলামনা, কেনো যেনো আমার দেহে আরো বেশী শিহরণ জেগে উঠতে থাকলো। সেটাও আমি প্রচন্ড রকমে সহ্য করে নিলাম। কেয়া আপা হঠাৎই রাগ করে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো, চলো, বাড়ী ফিরে যাই! আমি বললাম, এই তো এলাম! একটু বিশ্রাম করি! কেয়া আপা খুব কান্না জড়িত গলায় বললো, নাহ, ভালো লাগছে না। আমি দেখলাম, কেয়া আপার চোখ থেকে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, কেয়া আপা, তোমার চোখে পানি? কেয়া আপা তার ওড়নাটা দিয়ে, চোখের জল মুছে বললো, তোমাকে যতটা রোমান্টিক ভেবেছিলাম, ততটা তুমি নও। আমি অবাক হয়েই বললাম, মানে? আমি কিছু না বুঝার আগেই, কেয়া আপা হঠাৎই তার দু হাত দিয়ে আমার গাল দুটো চেপে ধরে, তার ঠোট দুটো দিয়ে আমার ঠোট দুটো নিজের ঠোটের ভেতর নিয়ে খানিকটা ক্ষণ কি যেনো করলো, নিজেই বুঝতে পারলাম না। তবে মনে হলো, এমন কোন সুখের ক্ষণ এই জীবনে এই বুঝি, এই প্রথম! আমার দেহের সমস্ত শিরা উপশিরাগুলো তখন কি করছিলো, কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে, মনে হতে থাকলো, আমার ঠোটে, জিভে, মুখের ভেতর অপার্থিব এক সুখের নদী এসে ঢেউ খেলতে লাগলো। আর সেই ঢেউটা আমার সমস্ত দেহেই প্রবাহিত হতে থাকলো। খানিকটা পর, কেয়া আপা আমার ঠোট যুগল মুক্ত করে, লজ্জিত গলায় বললো, আমাকে ক্ষমা করে দিও। কেয়া আপার ব্যপারটা কিছুই বুঝলাম না। আমাকে এমন একটা সুখের নদীতে নিয়ে গিয়ে, বাস্তব জীবনের সব কিছু ভুলিয়ে দিয়ে, আবার নিজেই ক্ষমা চাইছে? আমি ফ্যাল ফ্যাল করেই কেয়া আপার মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইলাম বোকার মতো। অথচ দেখলাম, কেয়া আপা এক ধরনের অপারাধী চেহারা করে তাঁকিয়ে আছে মাটির দিকে। আমি আমার অবচেতন মন থেকে হঠাৎই বললাম, কেয়া আপা! আবার! কেয়া আপা ভীরু ভীরু চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে বললো, কি আবার? আমি খুব সহজভাবেই বলে ফেললাম, এই যে, কিছুক্ষণ আগে যা করলে! কেয়া আপা মিষ্টি হাসলো। তারপর তার চোখ দুটো বন্ধ করে, মুখটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে, ঠোট যুগল খানিকটা উঁচু করে ধরলো। আমিও কেমন যেনো অবচেতন মনেই কেয়া আপার চমৎকার ঠোট যুগল নিজের ঠোটের ভেতর পুরে নিলাম। সেভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানিনা। হঠাৎই এক রাখাল বালকের ডাকেই চেতন ফিরে পেলাম। শুনলাম, কে যেনো বললো, এই তোমরা এখানে কি করছো? আমি তখন ভয়ে, কেয়া আপার হাতটা টেনে ধরে, পাগলের মতোই পালাতে থাকলাম বাড়ীর পথে।