31-07-2019, 11:12 AM
পার্টঃঃ২৩
ওর একটা জেলাস কাজ করে সব সময়। বাসু বললো।
সব সময় খিস্তি দিস না। বয়স হয়েছে তো।
দেখ অনি খিস্তির কি মহিমা কাল বুঝতে পারবি।
হাসলাম। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কাল বাসুকে আমার সঙ্গে একটু ছারবি।
তুই ওকে নিয়ে স্যারের চশমা আনতে যাবি ?
হ্যাঁ।
ও থাকা যা না থাকাও তা। সঞ্জয় বললো।
তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আজকে যে খেল দেখালি তুই।
হাসলাম।
হাসিস না। জানিস গত সপ্তাহে হাঁড়ি পারার একটা মেয়ে ঘাস কাটতে গেছিলো ওখানে। ওকে ভূতে ধরেছিলো। গুনিনকাকার কাল ঘাম ছুটে গেছে ভূত তাড়াতে।
দূর। যত সব আজগুবি। কই আমাকেতো ভূতে ধরলো না।
জানিনা। তোর সঙ্গে তর্ক করে পারব না।
নারে অনি আমিও শুনেছি ব্যাপারটা। বিশ্বাস হয়না তবু বিশ্বাস করি। বাসু বললো।
আমি মিটসেফের কাছে উঠে গেলাম। মানিপার্টস থেকে কুড়ি হাজার টাকা বার করলাম। সঞ্জয় আর বাসুকে ভাগ করে দিয়ে বললাম, ব্যালেন্সটা আমায় বলিস কাল দিয়ে দেবো।
ওরা না গুনেই টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
আমি বললাম, গুনেনে।
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তুই কি কম দিবি।
না। তবু টাকা পয়সার ব্যাপার গুনেনে।
না থাক, বাড়িতে গিয়ে গুনব।
ওরা চলে গেলো।
আমার শ্মশানে যাওয়াটা যে খুব অন্যায় হয়েছে। রাতে খেতে বসে তা বুঝলাম। কাকীমা স্নেহের বকাবকি করলো। সুরমাসি মুখে কিছু না বললেও, ভূতের গুনাগুণ বিচার করলো। নীপা বার কয়েক সুরমাসির দিকে বিরক্তি পূর্ণ ভাবে চাইলো। কাকাও অনেক কথা বললো। বোঝালো। আমি বোবার শত্রু নেই এই ভাবে গোগ্রাসে গিলে চলে এলাম। বসা মানে কথা বাড়বে। সোজা নিজের ঘরে এসে খাটের পাশে গোছানো আমার কাপর গেঞ্জি পরে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম।
আমি ঘুমোই নি। ঘুমোনোর ভান করে পরেছিলাম। নীপা ঘরে এলো। তার কাজ সারছে। আর খালি ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আমি কোন কথা বললাম না। তারপর নীপা দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে চলেগেলো। আমি বুঝলাম আজ বহুত গজব হয়ে গেছে। এ ভুলের সংশোধন আমাকেই করতে হবে। শ্মশান নিয়ে এতো কুসংস্কার এই গ্রামের মানুষের মধ্যে আছে তা কল্পনার অতীত। বেশ মনে পরে একবার কাকার কাছে বেধড়ক মারও খেয়েছিলাম। কি করবো ?
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম নীপা ওর বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে। আমার ভীষণ হাসিও পাচ্ছে। আবার করুণাও হচ্ছে। একটা ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটতে পারে আমার জানা ছিল না। অনাদি যদি ফোনটা না করতো তাহলে কিছুই হতোনা।
আমি দরজাটা আস্তে করে খুলে নীপার পাশে গিয়ে বসলাম। ওর পিঠে হাত রাখলাম। ফোঁপানিটা আরো বেরেগেলো। আমি জোরকরে ওকে বুকে টেনে নিলাম। ও আমার বুকে মুখ ঢাকলো। আমি ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসলাম, তারপর পাঁজা কোলা করে তুলে ঘরে খাটের ওপর শোয়ালাম।
কি ভারিরে বাবা। এইটুকু একটা মেয়ে এতো ভারি হতে পারে আমার জানা ছিল না। যাক ফাঁকতালে কোলে চরা হয়ে গেলো।
আমি কথাটা এমন ভাবে বললাম, নীপা ফিক করে হেসে ফেললো। তরাক করে উঠে বসে আমার বুকে দু’চারটে ঘুসি মারলো।
আমি ওর হাত দুটো ধরে হাসতে হাসতে বললাম, বুকটা ভেঙেগেলে নীপার জন্য যে জায়গাটুকু আছে সেটুকুও চলে যাবে।
যাও আমার দরকার নেই।
জিভ দিয়ে চু চু চু করে বললাম ও কথা বলতে নেই। দেখো অতো সুন্দর মুখটা কেমন ভাতের হাঁড়ির পেছনের মতো লাগছে।
নীপা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। দাঁত বসালো। আমি উঃ করে উঠলাম। নীপা আমার গেঞ্জিটা তুলে দাঁত বসানো জায়গাটায় হাত বোলাচ্ছে।
জুতে মেরে গরু দান।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তুমি ভীষণ স্বার্থপর। নিজেরটা ছাড়া কারুর কথা ভাবো না।
আরি বাবা আমি ভগবান নই। আমিও অন্যায় করতে পারি.....।
তুমি কেনো ওখানে গেছিলে।
ভালোলাগে বলে।
তোমার ভালো লাগার আর কোন জায়গা নেই।
না।
দিনের বেলা মানুষ যেতে ওখানে ভয় পায় আর তুমি রাতে.....।
আচ্ছা বাবা আর হবে না। এবার গেলে তোমরা জানতেও পারবে না।
আমার গা ছুঁয়ে কথা দাও তুমি আর যাবে না। গেলে আমি মিত্রাদিকে বলে দেবো।
শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল।
কি বললে।
না কিছুনা।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তোমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করার পর যদি যাই তাহলে কি হবে।
আমি মরে যাবো।
আর আমি ঢোল বাজিয়ে লোককে বলে বেরাবো নীপা মরিয়া গিয়া প্রমান করিলো সে মরে নাই।
উঃ তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না।
মেঘ কাটলো। নীপাকে বললাম জলের জগটা নিয়ে এসো আকন্ঠ জল খাই।
আমি ওর দিকে তাকালাম। নীপা কোমর দুলিয়ে চলেগেলো মিটসেফের কাছে, জলের জগটা নিয়ে এলো, জল খেলাম, নীপা জলের জগটা নিচে নামিয়ে রেখে আমার পাশে বসলো।
জানো নীপা খুব ছোটবেলার একটা কথা মনে পরে যাচ্ছে।
কি।
তোমার মেঘনাদ পন্ডিতকে মনে পরে।
হ্যাঁ।
আমরা শেষের একবছর পন্ডিতমশাই-এর কাছে পরেছিলাম।
আমাদের খুব মারতো। একদিন সন্ধ্যে বেলা কাকার সঙ্গে দেখা করতে এলো, আমি তখন ঐ বাড়ির বারান্দায় বসে পরছিলাম, খুব জোড় পেচ্ছাপ পেয়েছে, কিন্তু নিচে নামা যাবে না, কাকাতো আছেই তারওপর পন্ডিত মশাই, কি করা যায়, পা টিপি টিপে, বারান্দার কোনায় গেলাম, দেখলাম মেঘনাদ পন্ডিত ঠিক চালের তলায় দাঁড়িয়ে, দিলাম মুতে, চাল থেকে জল গড়িয়ে মেঘনাদ পন্ডিতের গায়ে, মেঘনাদ পন্ডিত হঁ হঁ কের উঠলো দেখলে আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিলে, কাকা অবাক হয়ে বললেন, কে। কে আবার এত গুলো বেড়াল পোষো কেনো বলতো, ওদের খাওয়ার খরচতো আছে।
নীপা হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে, একবার আমার গায়ে ঢলে পরে একবার বিছানায় শুয়ে পরে।
তুমি এতো দুষ্টু ছিলে।
দুষ্টু বললে ভুল হবে, সেই মুহূর্তে আমার কিছু করার ছিল না।
অনিদা তুমি তখন খুব রাগ করেছিলে তাই না।
একদম নয়।
আমি তোমার সমস্ত কথা বাইরে দাঁড়িয়ে শুনেছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তো......।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, যাও এবার শুয়ে পরো।
না আর একটু গল্প করি।
কাল তোমার প্রোগ্রাম আছে, রাত জেগে বেশি গল্প করলে, কালকে চোখের তলায় কালো দাগ পরে যাবে।
ঠিক আছে। গুড নাইট।
গুড নাইট।
পরদিন সকালে নীপা এসে যখন ডাকলো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, আমি হুড় মুড় করে উঠে বসলাম, নীপা মিত্রার দেওয়া সেই লং-স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, গোল গলার গেঞ্জিটা নীপাকে দারুন
কি দেখছো।
তোমাকে । দারুন মানিয়েছে।
মিত্রাদির চয়েস আছে, কি মোলায়েম।
আমি খাটে বসে আছি, নীপার স্নান হয়ে গেছে, মাথায় শেম্পু করেছে, চুলটা কালো মেঘের মতো ফুলে আছে।
মিত্রাদি ফোন করেছিলো।
তোমায়।
হ্যাঁ।
কি বললো।
তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, আর বললো ওকে গুঁতিয়ে তোল, না হলে ওর ঘুম ভাঙবে না।
হাসলাম।
হাসলে যে।
শেষের কথাটা বারিয়ে বললে।
ঠিক আছে, তুমি ফোন করে জেনে নাও।
ঠিক আছে।
ওঠো বিছানাটা গুছিয়ে দিই, তুমি দাঁত মেজে নাও।
ঘুটের ছাই আছে।
কেনো।
অনেক দিন ঘুটের ছাইএ দাঁত মাজিনি।
তুমি সত্যিই গাঁইয়া।
আমি শাঁইয়া কে বলেছে।
কি বললে।
শাঁইয়া। গ্রামের লোকেরা যদি গাঁইয়া হয়, শহরের লোকেরা শাঁইয়া।
সত্যি তোমার মাথা বটে।
হাসলাম।
তুমি কেবলার মতো হেসোনাত।
আমি কেবলা।
তা নয়তো কি।
তোমার সারপ্রাইজের কথা বললে নাতো।
কিকরে জানলে।
কাল রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সমস্ত কথা শুনেছি।
আমি মাথা নীচু করলাম।
দিবাকরদা তোমায় একেবারে সহ্য করতে পারে না।
এটা ওর স্বভাব। সেই ছোট থেকে।
কেনো।
ও কলেজে ফাস্ট হতো আর আমি সেকেন্ড, কিন্তু ফাইন্যালে গিয়ে ওকে বিট করলাম।
মসাই বলেছে, তুমি স্টার পেয়েছিলে। সাতটা বিষয় লেটার। আচ্ছা অনিদা তুমি বাংলায় লেটার পেলে কিকরে।
কিকরে জানবো, হয়তো ভালো লিখেছিলাম।
তোমার পর এই গ্রামে কেউ এখনো পর্যন্ত বাংলায় লেটার পায় নি। উনামাস্টার পদে পদে সবাইকে শোনায়।
স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন।
তোমার মাথাটা আমার ফাঁক করে দেখতে ইচ্ছে করে।
ঠিক আছে একদিন দেখাবো।
আমি বিছানা থেকে উঠে, নীপার কোমরে একটা খোঁচা মারলাম।
আ।
কিহলো।
আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো যাও মুখ ধুয়ে এসো।
আমি বেরিয়ে এলাম।
পুকুর ধারে একটা কচি বাঁশের ডগা নিয়ে দাঁতন বানালাম। বেশ কিছুক্ষণ ভাল করে রগড়ে পুকুরে মুখ ধুয়ে চলে এলাম।
নীপা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির।
চা খেতে খেতে নীপাকে বললাম তুমি কখন বেরোবে।
একটা নাগাদ।
তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সেই বিকেলে দেখা হবে।
আজকে না গিয়ে যদি কালকে যাও।
কেনো।
তাহলে তুমি আমার সঙ্গে যেতে।
তাহলে কি হতো।
আমার বুকটা ফুলে যেতো।
তোমার বুকটাতো এমনি ফোলা ফোলা দেখছি। আর ফুলিয়ো না খারাপ দেখাবে।
নীপা ছুটে এসে আমার মাথাটা ধরে বললে, একেবারে মাথাটা ভেঙে দেবো। খালি মাথায় কু-বুদ্ধি। দাঁড়াও মিত্রাদিকে ফোন করছি।
সকাল বেলা চিকনাদা এসে একবার তোমার খোঁজ করে গেছে। আমাকে বললো এককাপ চা দে, চা খেয়ে চলে গেলো। তুমি আজ না গেলে নয়।
আরে বাবা যেতে আস্তে যতটুকু টাইম লাগে।
ঠিক আছে, যাও।
নীপা মিটসেফের কাছে চলে গেলো, কি যেনো খোঁজা খুঁছি করছে মিটসেফের ওপরে।
আমি ডাকলাম, নীপা।
নীপা ফিরে তাকালো।
আমার মানিপার্সটা নিয়ে এসো।
নীপা আমার মানিপার্সটা হাতে করে নিয়ে এলো। আমি ওখান থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রাখো।
কিহবে।
রাখোনা।
না।
আমি একদিন মেলায় গিয়ে কষ্ট পেয়েছি এটার জন্য, আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
নীপার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
নাও।
নীপা টাকাটা হাতে নিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। তুমি এতো ভাব।
ভাবিনা ফিল করি।
কাঁদেনা। কান্না দুর্বলের প্রতীক। দাঁতে দাঁত চেপে লড়বে সব সময়, কাউকে এক তিলার্ধ জমি বিনাযুদ্ধে ছেড়ে দেবে না।
নীপা আমার দিকে তাকালো, আমার চোখের আগুনে ও পরিশুদ্ধ হলো।
আমি পারবো অনিদা!
নিশ্চই পারবে, আমিতো আছি।
নীচ থেকে কাকার গলা পেলাম, আমার নাম ধরে ডাকছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বারকরে বললাম, কি হয়েছে।
তোর কাকীমা জিজ্ঞাসা করলো কখন বেরোবি।
এইতো স্নান করেই বেরিয়ে যাব।
খাবি না।
না। এসে খাবো।
সেকি হয় নাকি।
ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
নীপা আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে আমায় প্রণাম করলো।
এটা কিসের জন্য।
তোমার সম্মানটা যেন আজ রাখতে পারি।
নিশ্চই পারবে। যাও।
আমি উঠে পড়ে স্নান করে রেডি হলাম, কাকীমা খাওয়ার কথা বললো, আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, তুমি চিন্তা করো না, পারলে একটু মুড়ি আর চা দাও।
সুরমাসি মুড়ি আর চা নিয়ে এলো, আমি সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁগো চিংড়িমাছের টক আছে।
সুরমাসি হাসলো। কেনো।
এসে চিংড়িমাছের টক দিয়ে পান্তা খাবো।
আছে।
বাসু ঠিক সময় এলো। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে এগারোটা বাজে। বাসুকে বললাম, চা খাবি।
বানাতে হবে নাকি।
তাতো বলতে পারবো না। ঠিক আছে সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করি দাঁড়া। সুরমাসিকে ডাকলাম।
সুরমাসি বললো, আছে। নিয়ে আসছি।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বললো, অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলি কেনো।
তোকে আবার কে বললো ?
চিকনা।
নীপা বলছিলো, চিকনা আমায় খোঁজ করতে এসেছিলো। কেনো বলতো।
একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
কিসের জন্য।
কোথায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
তার মানে বায়োডাটা।
হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পরেছে।
ওর কি চাকরির খুব দরকার।
মাঠে খেটে আর কত দিন চালাবে বলতো। অত গুলো পেট। কতই বা ধান হয়।
ঠিক আছে। তোর কাছে গেছিলো নাকি ?
হ্যাঁ। আমি বললাম অনাদির কাছ থেকে লিখে নে। দিল গালাগালি, তোকে আমাকে দুজনকে। তোকে একটু কম আমাকে বেশি।
হাসলাম।
বাসু বললো, চল এবার বেরোন যাক।
আমি বললাম হ্যাঁ চল।
নীপাকে দেখছি না।
বাবাঃ সেতো আজ পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষ।
বাসু হাসলো। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে কাকাকে বলে বেরিয়ে এলাম।
মোরাম রাস্তায় উঠতেই পচার সঙ্গে দেখা। মাঠে কাজ করছে। দেখা হতে, মাঠ থেকে উঠে এলো, বললো, আর ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যাবে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো, নার্সিংহোমে যাচ্ছি কিনা। আমি বললাম, হ্যাঁ।
বেরিয়ে এলাম, আসার সময় বাসুকে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
সর্বনাশ। তুই ম্যাডামকে কোথায় রাখবি।
আমার ঘরে।
ওরে থাকবেতো, না পালিয়ে যাবে।
আমি দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মিশছি। মনে হয়না ওর কোন অসুবিধে হবে। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
কি ?
গাড়িটা রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
সেতো বাজারেই রাখা যাবে আমার দোকানের সামনে।
বাজার পর্যন্ত রাস্তা হয়ে গেছে।
হ্যাঁ।
তাহলেতো কোনো চিন্তা নেই। তুই কি যেখানে থাকতিস সেখানেই আছিস।
হ্যাঁ। তবে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা ঘর করেছি। বাড়িতে সমস্যা। তাই বউ ছেলে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।
বাবা-মা।
বাড়িতেই আছেন। প্রত্যেক দিন সকাল বিকেল যাই।
বাড়িতে বাবা-মা ছাড়া কে আছেন।
মেজভাই ছোটভাই আর ওদের বউ। মেজভাই-এর বউটা শুবিধার নয়।
কি করে।
জমি জমা সব ভাগ হয়ে গেছে। চাষ করছে খাচ্ছে।
তোর কি খালি দোকান।
হ্যাঁ। শ্বশুরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম। আর জমি বেচেছি। তাই দিয়ে দোকান। কিছুটা জমি চিকনা চাষ করে।
ব্যবসা কেমন চলছে।
চলে যায় আর কি। এখানকার পরিস্থিতিতো জানিষ। সব ধারে বিজনেস। মাসে মাসে টাকা।
আমার ব্যালেন্সটা তোর বলার কথা ছিলো।
তোর কাছ থেকে আর কিছু পাবো না।
ওর একটা জেলাস কাজ করে সব সময়। বাসু বললো।
সব সময় খিস্তি দিস না। বয়স হয়েছে তো।
দেখ অনি খিস্তির কি মহিমা কাল বুঝতে পারবি।
হাসলাম। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কাল বাসুকে আমার সঙ্গে একটু ছারবি।
তুই ওকে নিয়ে স্যারের চশমা আনতে যাবি ?
হ্যাঁ।
ও থাকা যা না থাকাও তা। সঞ্জয় বললো।
তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আজকে যে খেল দেখালি তুই।
হাসলাম।
হাসিস না। জানিস গত সপ্তাহে হাঁড়ি পারার একটা মেয়ে ঘাস কাটতে গেছিলো ওখানে। ওকে ভূতে ধরেছিলো। গুনিনকাকার কাল ঘাম ছুটে গেছে ভূত তাড়াতে।
দূর। যত সব আজগুবি। কই আমাকেতো ভূতে ধরলো না।
জানিনা। তোর সঙ্গে তর্ক করে পারব না।
নারে অনি আমিও শুনেছি ব্যাপারটা। বিশ্বাস হয়না তবু বিশ্বাস করি। বাসু বললো।
আমি মিটসেফের কাছে উঠে গেলাম। মানিপার্টস থেকে কুড়ি হাজার টাকা বার করলাম। সঞ্জয় আর বাসুকে ভাগ করে দিয়ে বললাম, ব্যালেন্সটা আমায় বলিস কাল দিয়ে দেবো।
ওরা না গুনেই টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
আমি বললাম, গুনেনে।
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তুই কি কম দিবি।
না। তবু টাকা পয়সার ব্যাপার গুনেনে।
না থাক, বাড়িতে গিয়ে গুনব।
ওরা চলে গেলো।
আমার শ্মশানে যাওয়াটা যে খুব অন্যায় হয়েছে। রাতে খেতে বসে তা বুঝলাম। কাকীমা স্নেহের বকাবকি করলো। সুরমাসি মুখে কিছু না বললেও, ভূতের গুনাগুণ বিচার করলো। নীপা বার কয়েক সুরমাসির দিকে বিরক্তি পূর্ণ ভাবে চাইলো। কাকাও অনেক কথা বললো। বোঝালো। আমি বোবার শত্রু নেই এই ভাবে গোগ্রাসে গিলে চলে এলাম। বসা মানে কথা বাড়বে। সোজা নিজের ঘরে এসে খাটের পাশে গোছানো আমার কাপর গেঞ্জি পরে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম।
আমি ঘুমোই নি। ঘুমোনোর ভান করে পরেছিলাম। নীপা ঘরে এলো। তার কাজ সারছে। আর খালি ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আমি কোন কথা বললাম না। তারপর নীপা দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে চলেগেলো। আমি বুঝলাম আজ বহুত গজব হয়ে গেছে। এ ভুলের সংশোধন আমাকেই করতে হবে। শ্মশান নিয়ে এতো কুসংস্কার এই গ্রামের মানুষের মধ্যে আছে তা কল্পনার অতীত। বেশ মনে পরে একবার কাকার কাছে বেধড়ক মারও খেয়েছিলাম। কি করবো ?
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম নীপা ওর বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে। আমার ভীষণ হাসিও পাচ্ছে। আবার করুণাও হচ্ছে। একটা ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটতে পারে আমার জানা ছিল না। অনাদি যদি ফোনটা না করতো তাহলে কিছুই হতোনা।
আমি দরজাটা আস্তে করে খুলে নীপার পাশে গিয়ে বসলাম। ওর পিঠে হাত রাখলাম। ফোঁপানিটা আরো বেরেগেলো। আমি জোরকরে ওকে বুকে টেনে নিলাম। ও আমার বুকে মুখ ঢাকলো। আমি ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসলাম, তারপর পাঁজা কোলা করে তুলে ঘরে খাটের ওপর শোয়ালাম।
কি ভারিরে বাবা। এইটুকু একটা মেয়ে এতো ভারি হতে পারে আমার জানা ছিল না। যাক ফাঁকতালে কোলে চরা হয়ে গেলো।
আমি কথাটা এমন ভাবে বললাম, নীপা ফিক করে হেসে ফেললো। তরাক করে উঠে বসে আমার বুকে দু’চারটে ঘুসি মারলো।
আমি ওর হাত দুটো ধরে হাসতে হাসতে বললাম, বুকটা ভেঙেগেলে নীপার জন্য যে জায়গাটুকু আছে সেটুকুও চলে যাবে।
যাও আমার দরকার নেই।
জিভ দিয়ে চু চু চু করে বললাম ও কথা বলতে নেই। দেখো অতো সুন্দর মুখটা কেমন ভাতের হাঁড়ির পেছনের মতো লাগছে।
নীপা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। দাঁত বসালো। আমি উঃ করে উঠলাম। নীপা আমার গেঞ্জিটা তুলে দাঁত বসানো জায়গাটায় হাত বোলাচ্ছে।
জুতে মেরে গরু দান।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তুমি ভীষণ স্বার্থপর। নিজেরটা ছাড়া কারুর কথা ভাবো না।
আরি বাবা আমি ভগবান নই। আমিও অন্যায় করতে পারি.....।
তুমি কেনো ওখানে গেছিলে।
ভালোলাগে বলে।
তোমার ভালো লাগার আর কোন জায়গা নেই।
না।
দিনের বেলা মানুষ যেতে ওখানে ভয় পায় আর তুমি রাতে.....।
আচ্ছা বাবা আর হবে না। এবার গেলে তোমরা জানতেও পারবে না।
আমার গা ছুঁয়ে কথা দাও তুমি আর যাবে না। গেলে আমি মিত্রাদিকে বলে দেবো।
শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল।
কি বললে।
না কিছুনা।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তোমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করার পর যদি যাই তাহলে কি হবে।
আমি মরে যাবো।
আর আমি ঢোল বাজিয়ে লোককে বলে বেরাবো নীপা মরিয়া গিয়া প্রমান করিলো সে মরে নাই।
উঃ তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না।
মেঘ কাটলো। নীপাকে বললাম জলের জগটা নিয়ে এসো আকন্ঠ জল খাই।
আমি ওর দিকে তাকালাম। নীপা কোমর দুলিয়ে চলেগেলো মিটসেফের কাছে, জলের জগটা নিয়ে এলো, জল খেলাম, নীপা জলের জগটা নিচে নামিয়ে রেখে আমার পাশে বসলো।
জানো নীপা খুব ছোটবেলার একটা কথা মনে পরে যাচ্ছে।
কি।
তোমার মেঘনাদ পন্ডিতকে মনে পরে।
হ্যাঁ।
আমরা শেষের একবছর পন্ডিতমশাই-এর কাছে পরেছিলাম।
আমাদের খুব মারতো। একদিন সন্ধ্যে বেলা কাকার সঙ্গে দেখা করতে এলো, আমি তখন ঐ বাড়ির বারান্দায় বসে পরছিলাম, খুব জোড় পেচ্ছাপ পেয়েছে, কিন্তু নিচে নামা যাবে না, কাকাতো আছেই তারওপর পন্ডিত মশাই, কি করা যায়, পা টিপি টিপে, বারান্দার কোনায় গেলাম, দেখলাম মেঘনাদ পন্ডিত ঠিক চালের তলায় দাঁড়িয়ে, দিলাম মুতে, চাল থেকে জল গড়িয়ে মেঘনাদ পন্ডিতের গায়ে, মেঘনাদ পন্ডিত হঁ হঁ কের উঠলো দেখলে আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিলে, কাকা অবাক হয়ে বললেন, কে। কে আবার এত গুলো বেড়াল পোষো কেনো বলতো, ওদের খাওয়ার খরচতো আছে।
নীপা হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে, একবার আমার গায়ে ঢলে পরে একবার বিছানায় শুয়ে পরে।
তুমি এতো দুষ্টু ছিলে।
দুষ্টু বললে ভুল হবে, সেই মুহূর্তে আমার কিছু করার ছিল না।
অনিদা তুমি তখন খুব রাগ করেছিলে তাই না।
একদম নয়।
আমি তোমার সমস্ত কথা বাইরে দাঁড়িয়ে শুনেছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তো......।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, যাও এবার শুয়ে পরো।
না আর একটু গল্প করি।
কাল তোমার প্রোগ্রাম আছে, রাত জেগে বেশি গল্প করলে, কালকে চোখের তলায় কালো দাগ পরে যাবে।
ঠিক আছে। গুড নাইট।
গুড নাইট।
পরদিন সকালে নীপা এসে যখন ডাকলো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, আমি হুড় মুড় করে উঠে বসলাম, নীপা মিত্রার দেওয়া সেই লং-স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, গোল গলার গেঞ্জিটা নীপাকে দারুন
কি দেখছো।
তোমাকে । দারুন মানিয়েছে।
মিত্রাদির চয়েস আছে, কি মোলায়েম।
আমি খাটে বসে আছি, নীপার স্নান হয়ে গেছে, মাথায় শেম্পু করেছে, চুলটা কালো মেঘের মতো ফুলে আছে।
মিত্রাদি ফোন করেছিলো।
তোমায়।
হ্যাঁ।
কি বললো।
তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, আর বললো ওকে গুঁতিয়ে তোল, না হলে ওর ঘুম ভাঙবে না।
হাসলাম।
হাসলে যে।
শেষের কথাটা বারিয়ে বললে।
ঠিক আছে, তুমি ফোন করে জেনে নাও।
ঠিক আছে।
ওঠো বিছানাটা গুছিয়ে দিই, তুমি দাঁত মেজে নাও।
ঘুটের ছাই আছে।
কেনো।
অনেক দিন ঘুটের ছাইএ দাঁত মাজিনি।
তুমি সত্যিই গাঁইয়া।
আমি শাঁইয়া কে বলেছে।
কি বললে।
শাঁইয়া। গ্রামের লোকেরা যদি গাঁইয়া হয়, শহরের লোকেরা শাঁইয়া।
সত্যি তোমার মাথা বটে।
হাসলাম।
তুমি কেবলার মতো হেসোনাত।
আমি কেবলা।
তা নয়তো কি।
তোমার সারপ্রাইজের কথা বললে নাতো।
কিকরে জানলে।
কাল রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সমস্ত কথা শুনেছি।
আমি মাথা নীচু করলাম।
দিবাকরদা তোমায় একেবারে সহ্য করতে পারে না।
এটা ওর স্বভাব। সেই ছোট থেকে।
কেনো।
ও কলেজে ফাস্ট হতো আর আমি সেকেন্ড, কিন্তু ফাইন্যালে গিয়ে ওকে বিট করলাম।
মসাই বলেছে, তুমি স্টার পেয়েছিলে। সাতটা বিষয় লেটার। আচ্ছা অনিদা তুমি বাংলায় লেটার পেলে কিকরে।
কিকরে জানবো, হয়তো ভালো লিখেছিলাম।
তোমার পর এই গ্রামে কেউ এখনো পর্যন্ত বাংলায় লেটার পায় নি। উনামাস্টার পদে পদে সবাইকে শোনায়।
স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন।
তোমার মাথাটা আমার ফাঁক করে দেখতে ইচ্ছে করে।
ঠিক আছে একদিন দেখাবো।
আমি বিছানা থেকে উঠে, নীপার কোমরে একটা খোঁচা মারলাম।
আ।
কিহলো।
আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো যাও মুখ ধুয়ে এসো।
আমি বেরিয়ে এলাম।
পুকুর ধারে একটা কচি বাঁশের ডগা নিয়ে দাঁতন বানালাম। বেশ কিছুক্ষণ ভাল করে রগড়ে পুকুরে মুখ ধুয়ে চলে এলাম।
নীপা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির।
চা খেতে খেতে নীপাকে বললাম তুমি কখন বেরোবে।
একটা নাগাদ।
তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সেই বিকেলে দেখা হবে।
আজকে না গিয়ে যদি কালকে যাও।
কেনো।
তাহলে তুমি আমার সঙ্গে যেতে।
তাহলে কি হতো।
আমার বুকটা ফুলে যেতো।
তোমার বুকটাতো এমনি ফোলা ফোলা দেখছি। আর ফুলিয়ো না খারাপ দেখাবে।
নীপা ছুটে এসে আমার মাথাটা ধরে বললে, একেবারে মাথাটা ভেঙে দেবো। খালি মাথায় কু-বুদ্ধি। দাঁড়াও মিত্রাদিকে ফোন করছি।
সকাল বেলা চিকনাদা এসে একবার তোমার খোঁজ করে গেছে। আমাকে বললো এককাপ চা দে, চা খেয়ে চলে গেলো। তুমি আজ না গেলে নয়।
আরে বাবা যেতে আস্তে যতটুকু টাইম লাগে।
ঠিক আছে, যাও।
নীপা মিটসেফের কাছে চলে গেলো, কি যেনো খোঁজা খুঁছি করছে মিটসেফের ওপরে।
আমি ডাকলাম, নীপা।
নীপা ফিরে তাকালো।
আমার মানিপার্সটা নিয়ে এসো।
নীপা আমার মানিপার্সটা হাতে করে নিয়ে এলো। আমি ওখান থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রাখো।
কিহবে।
রাখোনা।
না।
আমি একদিন মেলায় গিয়ে কষ্ট পেয়েছি এটার জন্য, আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
নীপার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
নাও।
নীপা টাকাটা হাতে নিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। তুমি এতো ভাব।
ভাবিনা ফিল করি।
কাঁদেনা। কান্না দুর্বলের প্রতীক। দাঁতে দাঁত চেপে লড়বে সব সময়, কাউকে এক তিলার্ধ জমি বিনাযুদ্ধে ছেড়ে দেবে না।
নীপা আমার দিকে তাকালো, আমার চোখের আগুনে ও পরিশুদ্ধ হলো।
আমি পারবো অনিদা!
নিশ্চই পারবে, আমিতো আছি।
নীচ থেকে কাকার গলা পেলাম, আমার নাম ধরে ডাকছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বারকরে বললাম, কি হয়েছে।
তোর কাকীমা জিজ্ঞাসা করলো কখন বেরোবি।
এইতো স্নান করেই বেরিয়ে যাব।
খাবি না।
না। এসে খাবো।
সেকি হয় নাকি।
ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
নীপা আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে আমায় প্রণাম করলো।
এটা কিসের জন্য।
তোমার সম্মানটা যেন আজ রাখতে পারি।
নিশ্চই পারবে। যাও।
আমি উঠে পড়ে স্নান করে রেডি হলাম, কাকীমা খাওয়ার কথা বললো, আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, তুমি চিন্তা করো না, পারলে একটু মুড়ি আর চা দাও।
সুরমাসি মুড়ি আর চা নিয়ে এলো, আমি সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁগো চিংড়িমাছের টক আছে।
সুরমাসি হাসলো। কেনো।
এসে চিংড়িমাছের টক দিয়ে পান্তা খাবো।
আছে।
বাসু ঠিক সময় এলো। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে এগারোটা বাজে। বাসুকে বললাম, চা খাবি।
বানাতে হবে নাকি।
তাতো বলতে পারবো না। ঠিক আছে সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করি দাঁড়া। সুরমাসিকে ডাকলাম।
সুরমাসি বললো, আছে। নিয়ে আসছি।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বললো, অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলি কেনো।
তোকে আবার কে বললো ?
চিকনা।
নীপা বলছিলো, চিকনা আমায় খোঁজ করতে এসেছিলো। কেনো বলতো।
একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
কিসের জন্য।
কোথায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
তার মানে বায়োডাটা।
হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পরেছে।
ওর কি চাকরির খুব দরকার।
মাঠে খেটে আর কত দিন চালাবে বলতো। অত গুলো পেট। কতই বা ধান হয়।
ঠিক আছে। তোর কাছে গেছিলো নাকি ?
হ্যাঁ। আমি বললাম অনাদির কাছ থেকে লিখে নে। দিল গালাগালি, তোকে আমাকে দুজনকে। তোকে একটু কম আমাকে বেশি।
হাসলাম।
বাসু বললো, চল এবার বেরোন যাক।
আমি বললাম হ্যাঁ চল।
নীপাকে দেখছি না।
বাবাঃ সেতো আজ পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষ।
বাসু হাসলো। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে কাকাকে বলে বেরিয়ে এলাম।
মোরাম রাস্তায় উঠতেই পচার সঙ্গে দেখা। মাঠে কাজ করছে। দেখা হতে, মাঠ থেকে উঠে এলো, বললো, আর ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যাবে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো, নার্সিংহোমে যাচ্ছি কিনা। আমি বললাম, হ্যাঁ।
বেরিয়ে এলাম, আসার সময় বাসুকে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
সর্বনাশ। তুই ম্যাডামকে কোথায় রাখবি।
আমার ঘরে।
ওরে থাকবেতো, না পালিয়ে যাবে।
আমি দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মিশছি। মনে হয়না ওর কোন অসুবিধে হবে। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
কি ?
গাড়িটা রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
সেতো বাজারেই রাখা যাবে আমার দোকানের সামনে।
বাজার পর্যন্ত রাস্তা হয়ে গেছে।
হ্যাঁ।
তাহলেতো কোনো চিন্তা নেই। তুই কি যেখানে থাকতিস সেখানেই আছিস।
হ্যাঁ। তবে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা ঘর করেছি। বাড়িতে সমস্যা। তাই বউ ছেলে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।
বাবা-মা।
বাড়িতেই আছেন। প্রত্যেক দিন সকাল বিকেল যাই।
বাড়িতে বাবা-মা ছাড়া কে আছেন।
মেজভাই ছোটভাই আর ওদের বউ। মেজভাই-এর বউটা শুবিধার নয়।
কি করে।
জমি জমা সব ভাগ হয়ে গেছে। চাষ করছে খাচ্ছে।
তোর কি খালি দোকান।
হ্যাঁ। শ্বশুরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম। আর জমি বেচেছি। তাই দিয়ে দোকান। কিছুটা জমি চিকনা চাষ করে।
ব্যবসা কেমন চলছে।
চলে যায় আর কি। এখানকার পরিস্থিতিতো জানিষ। সব ধারে বিজনেস। মাসে মাসে টাকা।
আমার ব্যালেন্সটা তোর বলার কথা ছিলো।
তোর কাছ থেকে আর কিছু পাবো না।