04-01-2019, 04:56 PM
৩০।।
‘কখন উঠলে?’ কানের পাশে মৃদু স্বরে অর্নবের গলা পেয়ে চিন্তার জাল ছেঁড়ে পৃথার... জানলা দিয়ে ভোরের আলো তখন সবে ফুটে উঠে উঁকি মারছে ঘরের মধ্যে... বিছানা থেকেই চোখে পড়ে আকাশের গায়ে বেগুনি রঙের ছোঁয়া...
‘উম?... এই তো... খানিক আগেই... চেঞ্জ করে এলাম... প্রথম দুটো দিন বড্ড হয়... বারে বারে চেঞ্জ না করলে ভেসে যায় একেবারে...’ নিজের শরীরটাকে আরো অর্নবের কোলের মধ্যে ঠেলে দিয়ে উত্তর দেয় পৃথা, আড়মোড়া ভাঙে হাত তুলে।
‘কি চিন্তা করছিলে শুয়ে শুয়ে?’ প্রশ্ন করে অর্নব, ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে প্রেয়শীকে।
‘কতওওওও কি...’ মৃদু হেসে উত্তর দেয় পৃথা... না দেখা অর্নবের দিকে ফিরে শোয় সে... হাত তুলে রাখে অর্নবের দাড়িভরা গালের ওপরে... ‘গুড মর্নং সোনা...’ বলে ঠোঁটটা এগিয়ে রাখে অর্নবের দাড়ির আড়ালে থাকা ঠোঁটের ওপরে... হাল্কা করে চুমু খায়।
‘কি ভাবছিলে, কই, বললে না তো?’ পৃথার এলোমেলো চুলের মধ্যে বিলি কাটতে কাটতে ফের জিজ্ঞাসা করে অর্নব।
‘তোমার কথা...’ ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয় সে।
‘আমার কোন কথা? সবই তো শুনেছ প্রণবের কাছ থেকে... কিছুই তো বাকি নেই আর... তাহলে?’ ফের জিজ্ঞাসা করে অর্নব... চুলের থেকে হাত নামিয়ে খেলা করে কানের লতি নিয়ে।
সিরসির করে ওঠে পৃথার শরীরটা কানের লতিতে হাত পড়তে... ঘাঁড় কাত করে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে... ‘ইশশশ... সুড়সুড়ি লাগছে তো...’
কান ছেড়ে পীঠের ওপর হাত রেখে আরো ঘন করে টেনে নেয় পৃথার শরীরটাকে নিজের বুকের মধ্যে অর্নব... লোমশ আদুল বুকের মধ্যে মুখ গোঁজে পৃথা... মুখ ঘষে... আহ... কি নিশ্চন্তের পরশ এখানে... মনে মনে ভাবে সে।
পৃথার চুলের মধ্যে মুখ রেখে ফের প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কই... বলো... কি ভাবছিলে?’
‘তুমি খারাপ ভাববে না?’ জিভ তুলে আলতো করে ঠেকায় মুখের সামনে লোমের আড়ালে থাকা ছোট্ট বুকের বোঁটাটায়...
এ ভাবে বুকের বোঁটায় ভেজা জিভের ছোঁয়া পড়তে অর্নবের শরীরও সিরসিরিয়ে ওঠে, কিন্তু চুপ করে থাকে সে, কিছু বলে না, পৃথার মাথার মধ্যে মুখ গুঁজে প্রশ্রয়ে হাসি হাসে নিঃশ্বব্দে...
পৃথাকে চুপ করে থাকতে দেখে অর্নব বলে, ‘তোমার কি জিজ্ঞাস্য, সেটা জানি আমি... তুমি ভাবছ যে আমাকে ছুঁতে পারছ, অথচ আমি জীবত না মৃত সেটাই এখন তোমার কাছে পরিষ্কার নয়... তাই তো? অনেকদিন ধরেই প্রশ্নটা তোমার মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে... ঠিক কি না?’
অর্নবের কথা শুনে বুকের মধ্যেটা মুচড়ে ওঠে পৃথার... এটাই তার জিজ্ঞাস্য ঠিকই, কিন্তু সেটা জিজ্ঞাসা করে অর্নবকে হারাতেও যে সে চায় না কোন মতেই... তাই তো এত দ্বন্দ তার মনের মাঝে... প্রশ্নটা বার বার উঠে এলেও পরিস্থিতির চাপে হয়তো চাপা পড়ে গিয়েছে... সেও আর চাপ দেয় নি প্রশ্নটাকে নিয়ে... আগে যখন অর্নবকে পায় নি, তখন তার বিচরণ ছিল কল্পনার জগতে, নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছে তার প্রেমিককে... কিন্তু আজ সেই মানুষটার বুকের মধ্যে ঢুকে থাকার সময় কেমন যেন মাঝে মধ্যেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় তার... তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত ভাবতেই কেমন দিশেহারা ঠেকে সব কিছু... কি করে বোঝাবে তার প্রেমাষ্পদকে মনের মধ্যে গড়ে ওঠা অনুভূতিটাকে?
‘আমি তোমার মতই একেবারে জীবত একটা মানুষ, তিতির...’ পৃথার মুখটাকে হাতের আঁজলায় নিজের পানে তুলে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে অর্নব... ‘তুমি যাকে ছুঁয়ে আছো... সে মৃত কোন ব্যক্তি নয়... রক্তমাংসে গড়া একটা মানুষ... কিন্তু আজ আমি কায়াহীন... শরীরটা পড়ে রয়েছে... কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পায় না... কিন্তু তোমার মত কেউ যদি এসে ছোঁয়... আমার স্পর্শ পেতে পারে সে... বুঝতে পারে আমার অস্তিত্ব...’ বলে চুপ করে অর্নব।
‘কি...কিন্ত... কি করে?’ ধরা গলায় প্রশ্ন করে পৃথা... চোখে ভাসে অপরিসীম জিজ্ঞাসা... ‘তবে যে সেদিন প্রণবদা বললো তোমার গাড়ি...’ আর শেষ করতে পারে না সে বাক্যটাকে... গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠে...
‘কি বলেছিল প্রণব... আমার গাড়িটা জ্বলে গিয়েছিল... তাই তো? আমাকে তারপর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি... আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিনের পর থেকে... তাই না?’ নিচু গলায় বলে অর্নব।
ইতিবাচক মাথা নাড়ে পৃথা... প্রণবদার কাছ থেকে কথাটা শোনার পর তার মনের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ভুলতে পারে নি, এখনও...
পৃথার মাথাটাকে ফের নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নব... চিবুকটা তার মাথার চুলে রেখে বলে... ‘হুম... ঠিকই বলেছিল প্রণব... ঠিক সেটাই হয়েছিল... কিন্তু সবটা বলে নি সেদিন, অবস্য ওরও দোষ নেই, আমারই বারণ ছিল, না বলার... তাই সে আর তোমার কাছে খুলে ধরে নি বাকিটা’...
‘কি হয়েছিল?’ নিজের গালটা বুকের ওপরে রেখে প্রশ্ন করে পৃথা... ডান হাতের বেড় থাকে অর্নবের শরীরটাকে জড়িয়ে... আঙুলগুলো খেলা করে বেড়ায় তার প্রেমিকের পীঠের ওপরে।
‘সব ঠিকঠাকই চলছিল সেদিন... বেশ ভালোই যাচ্ছিলাম বর্ধমানের দিকে... মোটামুটি দূর্গাপুর হাইওয়ের রাস্তাও খারাপ নয়, আর আমি গাড়িটা বেশ ভালোই চালাই...’ পৃথার মাথায় চিবুক রেখে বলে চলে অর্নব... ‘তখন বৃষ্টিটা একটু ধরেও এসেছিল... টিপটিপ করে পরছিল... গাড়ির উন্ডস্ক্রিন সেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে উঠলেও, চালাতে কোন অসুবিধাই হচ্ছিল না আমার...’ বলতে বলতে থামে সে... পৃথা চুপ করে এক মনে শুনে চলে অর্নবের কথা... কথার মাঝে কোন ডিস্টার্ব করে না সে...
‘সেদিন তাড়াহুড়োয় বেরুবার সময় বোধহয় টয়লেট করতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই বেশ অনেকক্ষন ধরেই টয়লেট পাচ্ছিল, কিন্তু ওই ফাঁকা হাইওয়েতে কোথায় টয়লেট পাই... ভাবতে ভাবতে হটাৎ মাথায় এলো, এই বৃষ্টির মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টয়লেট করে নিলেই হলো, কে আর কি বলবে? তাই যেমন ভাবা তেমন কাজ, গাড়িটাকে লেন থেকে সরিয়ে এনে দাঁড় করিয়ে দৌড়োই কাছেই থাকা একটা গাছ লক্ষ্য করে... নিশ্চিন্তে হাল্কা হই ওটার আড়ালে... তারপর ফিরেই আসছিলাম... কিন্তু গাড়ির প্রায় কয়’এক গজ বাকি থাকতেই আমার মনে হল যেন পুরো পৃথিবীটাই ঝলসে উঠল... আর সেই সাথে একটা কান ফাটানো আওয়াজ... আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশের অগভীর খালটায়... প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারালাম... আর কিচ্ছু জানি না...’ ফের থামে অর্নব... বুকের মধ্যে থাকা পৃথা অনুভব করে সেদিনের কথা বলতে বলতে উত্তেজনায় তার হৃদপিন্ডটা কি অস্বাভাবিক ভাবে দ্রুত চলছে... যেন বুকের মধ্যে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে... আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে নিজের মুখটাকে চেপে রাখে প্রেমাষ্পদের বুকের মধ্যে সে।
‘যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখি আমি তখনও পড়ে আছি ওই খালটার জলের মধ্যেই... মাথার মধ্যেটায় তখনও যেন ঝিমঝিম করছে আমার... সারা গায়ে হাতে কি অসহ্য যন্ত্রনা... অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম আমি... প্রায় টলতে টলতে ঢাল বেয়ে এগোতে থাকলাম রাস্তার দিকে... গাড়িটা যেখানে দাঁড় করিয়েছিলাম...
কিন্তু একি!... গাড়িটা পুড়ে একেবারে ছারখার হয়ে গিয়েছে... একটা কালো অঙ্গারে পরিণত হয়েছে সেটা... আর সেটাকে ঘিরে শ’খানেক লোকের জটলা... সবাই মিলে কি যেন খুজছে আতিপাতি করে... চতুর্দিকে চিৎকার চ্যাঁচামিচি... ওদের চিৎকারটা যেন আমার মাথার মধ্যে তখন হাতুড়ি পেটার মত দুমদুম করে লাগছে... কোন রকমে দুহাত কানের ওপরে চেপে আরো এগিয়ে গেলাম গাড়িটার কাছটায় টলতে টলতে... কিন্তু যাবো কি, কাউকে ঠেলে এগোতেই পারছি না, এতো ভীড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে... তাও চেষ্টা করলাম সামনের লোকটাকে সরিয়ে এগোবার... কিন্তু লোকটা কি অদ্ভুতভাবে আমাকে সরিয়ে দিল... এমন ভাবে পেছন না ফিরেই হাতের ধাক্কা দিল, যেন আমাকে দেখতেই পেল না সে... আমি ঘুরে আর একদিক দিয়ে গাড়ির কাছে পৌছবার চেষ্টা করলাম... কিন্তু সেখানেও সেই একই ব্যাপার... কেউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না... আমি যে ওদের পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করছি সেটাই যেন কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না... আমি যে আদৌ ওখানে আছি সেটাই যেন কেউ বুঝতে চাইছে না অদ্ভুতভাবে... কি মনে হলো আমার তখন, সামনের যে লোকটার কাঁধের ওপরে হাতটা রেখেছিলাম, সেই হাতের দিকে নজর করলাম... আর যা দেখলাম, তাতে প্রায় হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম আমি... একি! আমার হাত কই... আমি তো সামনের লোকটাকে পুরোটাই দেখতে পাচ্ছি... তার দেহের কোন অংশই তো আমার হাতের আড়ালে চলে যায় নি! তবে!... তাড়াতাড়ি লোকটার কাঁধ থেকে হাতটাকে তুলে নিজের সামনে মেলে ধরলাম... না! নেই তো! কিচ্ছু নেই! সব ফাঁকা! সব... সব ফাঁকা... একেবারে স্বচ্ছ... হাতটার মধ্যে দিয়ে আরপার সব কিছু দেখা যাচ্ছে... কেমন শিউরে উঠলাম একটা অচেনা ভয়ে... ভয় জিনিসটা কোনদিনই আমার মধ্যে ছিল না... কিন্তু সেদিন ভয় কি, তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম যেন... থরথর করে আমার সারা শরীরটা কাঁপছিল... একি দেখছি আমি?... না, না... দেখছি না, দেখছি না... আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না... সব একেবারে ট্রান্সপারেন্ট... স্বচ্ছ... যত দেখছিলাম, তত যেন আরো ভয় চেপে ধরছিল আমাকে... এ আমার কি হলো? অনেক ইতস্তত করে ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে নিজের শরীরটার দিকে তাকালাম আমি... আঁৎকে উঠলাম... আমি নেই!... আমি আছি অথচ আমি নেই... সেদিন যে আমার কি অবস্থা হয়েছিল আজ মুখের কথায় সবটা হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না আমি... তখন নিজেকে সত্যিই মৃত মনে হচ্ছিল আমার... মনে হচ্ছিল যে তবে কি মৃত্যুর পর মানুষের এই অবস্থাই হয়? কিন্তু পরক্ষনেই ভেবেছি, তাই বা কি করে হবে? মরেই যদি যাই, তাহলে আমি লোকগুলোকে ছুঁলাম কি করে?... হ্যা, তাই তো... তাড়াতাড়ি নিজেরই একটা হাত আর একটা হাত দিয়ে চেপে ধরলাম... এই তো... ধরতে পারছি তো আমার হাতটাকে... দুহাত বোলাতে লাগলাম নিজের শরীরের ওপরে... ঠিক যেমন ছিল তেমনই রয়েছে... মুখ, গাল, চোখ, গলা, বুক, কোমর, পা... হাতের মধ্যে স্পর্শ পাচ্ছি ছেঁড়া ছেঁড়া জামা কাপড়গুলোও... সব... সব... তাহলে কেন আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না!... শুধু কি আমিই আমাকে দেখতে পাচ্ছি না? নাকি কেউই দেখতে পাচ্ছে না আমায়? ভয়ে গলা শুকিয়ে উঠল আমার... এক পা দু পা করে পিছিয়ে এলাম আমি ভীড়টার থেকে... যেন ওখানে থাকলে সবাই দেখে ফেলবে আমায়... হাসবে আমার দিকে তাকিয়ে... কিম্বা ভয় পাবে হয়তো আমার একটা বিভৎস মুর্তি দেখে... জামা কাপড় পরা অথচ কায়াহীন মানুষটাকে দেখে... জানি না... ভাবতেও পারছিলাম না কি করবো আমি তখন... হটাৎ মাথায় খেলে গেলো কথাটা... তাড়াতাড়ি করে ফের ঢাল বেয়ে নেমে যেতে লাগলাম ওই খালটার দিকে... নামতে গিয়ে পা হড়কে গেলো আমার... হুমড়ি খেয়ে পড়লাম বৃষ্টি ভেজা কাদা মাটির ওপরে... প্রায় গড়িয়ে, হিঁচড়ে নেমে গেলাম ওপর থেকে একেবারে নীচের দিকে... খালে ধারে গিয়ে... হয়তো ছড়ে কেটে গেলো কত জায়গায়তেই আমার... কিন্তু সেই দিকে তখন কোন হুস নেই... যা খুশি হয় হয়ে যাক... হামা দিয়ে এগিয়ে গেলাম জলটা লক্ষ্য করে... হুমড়ি খেয়ে পড়লাম জলের ঠিক ওপরটায়... নিজেকে দেখবো বলে... কিন্তু না... আমি নেই... জলের ওপরে আমার কোন ছায়া নেই... জলের ওপরে তখন মেঘলা আকাশের প্রতিচ্ছবি... কিন্তু আমার কোন প্রতিচ্ছবির চিহ্ন পর্যন্ত নেই সেই নোংরা খালের জলটার ওপরে... ওই জলের মধ্যেই চিৎ হয়ে শুয়ে রইলাম আমি... নির্নিমেশ তাকিয়ে রইলাম খোলা মেঘলা আকাশটার দিকে... মাথার মধ্যে তখন আর কিচ্ছু নেই... সব শূণ্য... খালি... আমার শরীরের সমস্ত অনুভূতিগুলো যেন লোপ পেয়ে গিয়েছে... মনে হচ্ছিল চতুর্দিকে শুধু মাত্র শশানের নিরাবতা... রাস্তার ধারে আমার গাড়ীটা ঘিরে ধরে এত হইচই... তখন কিছুই আর আমার কানে এসে পৌছাচ্ছে না... খোলা আকাশের নিচে শুয়ে তখন শুধু একজনকেই মনে পড়ছিল বার বার... লিন্ডা... শুধু লিন্ডার মুখটা ভেসে উঠছিল আমার চোখের সামনে।
লিন্ডার কথা মনে আসতেই যেন সমস্ত আড়গল ভেঙে গেলো... উঠে বসে মুখ ঢেকে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলাম আমি... বারে বারে ভগবানের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, কেন ভগবান, কেন? কেন তুমি আমার থেকে লিন্ডাকে কেড়ে নিলে... তা না হলে তো আজ আমাকে এই ইন্ডিয়াতে ফিরেও আসতে হতো না, আর এই দুর্বিশহ অবস্থার মধ্যেও পড়তে হতো না... ইচ্ছা করছিল চিৎকার করে লিন্ডার নাম ধরে ডাকি... কিন্তু সেখানেও তো ভয়... ওরা... ওই ওরা, যারা আমার গাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তারা যদি শুনতে পায়... শুনতে পাবে অথচ দেখতে পাবে না... ছেঁড়া জামা কাপড় পরা শরীরহীন লোকটাকে দেখে... হয়তো ডাইন ভেবে ঢিল ছুড়লো... আমার সেই মুহুর্তের যা অবস্থা, তাতে তাড়াতাড়ি পালাতেও তো পারবো না... নীরবে, নিঃশব্দে কেঁদেছিলাম আমি ওই খালের ধারে বসে, এক নাগাড়ে... সকলের দৃষ্টির আড়ালে...’ বলতে বলতে থামে অর্নব... প্রায় হাঁফাতে থাকে সে যেন সেদিনের সেই বিভৎস কথার পুণরাবৃত্তি করতে করতে।
পৃথা মুখে কিছু না বলে নিরবে অর্নবের বুকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে উঠে বসে, তারপর ধীরে বিছানার থেকে নেমে গিয়ে টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতলটা তুলে নিয়ে ফিরে আসে বিছানায়... এগিয়ে দেয় অর্নবের পানে... অর্নব উঠে বসে পৃথার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে প্রায় পুরো বোতলের জলটাই খেয়ে শেষ করে দেয়... তারপর পৃথার হাতে বোতলটা ফিরিয়ে দিতে দিতে বলে... ‘থ্যাঙ্কস্...’
খালি বোতলটা ফের টেবিলের ওপরে রেখে বিছানায় ফিরে উঠে বসে পৃথা... আন্দাজে হাত বাড়ায় সামনের পানে... হাত রাখে অর্নবের বুকের ওপরে... তারপর ওর শরীরটা ছুঁয়ে থেকে আরো ঘন হয়ে এসে বসে সে... ‘তারপর?’ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে... আজ চায় ও অর্নব সব বলুক, বলে হাল্কা হোক... কারণ সে বুঝতে পারে একটা ভারী পাথর অর্নবের বুকের মধ্যে চেপে বসে রয়েছে, সেটা তাকে না বলা অবধি হাল্কা হতে পারবে না...
খানিক চুপ করে থাকে অর্নব... তারপর ধীর গলায় বলতে শুরু করে... ‘কতক্ষন ওই ভাবে ওই খানে শুয়ে ছিলাম জানি না... কখন দিনের আলো ঢলে গিয়ে রাত নেবে এসেছিলো, তারও খেয়াল করি নি... একটু একটু করে নিজের মধ্যে ফিরে এলাম আমি... উঠে বসলাম মাটির ওপরে... কেউ কোথাও নেই... ফাঁকা প্রান্তরের মধ্যে আমি একা... ছায়াহীন কায়াহীন এক অদ্ভুত জীব... দ্য ইনভিজিবিল ম্যান... সিনেমায় সে চরিত্র কত মজাদার... কত রোমান্টিক... কত সুবিধার হয় তো... কিন্তু বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সে অভিজ্ঞতা যে কি ভয়ঙ্কর... ভাষায় প্রকাশ করা যায় না... আরো খানিক চুপ করেই বসে রইলাম ওখানটায়... ভাবতে লাগলাম, কি করব এবার আমি... গাড়ির মধ্যেই আমার পার্স আর মোবাইলটা ফেলে এসেছিলাম, তাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সমস্ত দিক দিয়ে... সাথে এক কানাকড়িও নেই... কপর্দক শূণ্য যাকে বলে...
কি মনে হতে গায়ে পরা জামা কাপড় গুলো খুলে ছেড়ে রাখলাম... তারপর ফের নিজের দিকে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলাম নিজেকে... নাহ!... কিচ্ছু নেই... সম্পূর্ণ অদৃশ্য একটা মানুষ... চুপ করে বসে ভাবতে লাগলাম, কি করবো এবার...
হটাৎ দেখি একটা নেড়ি কুকুর আমার দিকে এগিয়ে আসছে... প্রথমটায় ও আমাকে খেয়াল করে নি বোধহয়... কিন্তু একটু কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়ায়... নাঁক তুলে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে খানিক... আর তারপরই শুরু করে দেয় চিলচিৎকার... এক নাগাড়ে ঘেউ ঘেউ করে চেঁচাতে থাকে আমাকে লক্ষ্য করে... দূর থেকেই... আমি প্রমাদ গুনলাম... এই ভাবে যদি কুকুরটা চিৎকার করতে থাকে তাহলে বিপদে পড়বো আমি... মাটির থেকে একটা ঢেলা তুলে ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে... একেবারে অব্যর্থ টিপ... গিয়ে লাগলো সজোরে কুকুরটার পায়ে... কেঁউ কেঁউ করে দৌড়ে পালিয়ে গেল ওটা... আমিও আর না বসে থেকে উঠে দাঁড়ালাম... হাঁটা দিলাম কলকাতার দিকে... শুধু যাবার সময় একবার করুন চোখে আমার পরে থাকা পোড়া গাড়িটার দিকে নজর দিলাম।’
পুরানো কথা বলতে বলতে চুপ করে অর্নব, পৃথা তাকে না দেখতে পেলেও উপলব্ধি করে এই মুহুর্তে সেই ভয়ানক স্মৃতিগুলো মনে পড়তে ভিষন ভাবে অস্বস্থির মধ্যে রয়েছে অর্নব... হাত তুলে রাখে তার বুকের ওপরে... মৃদু স্বরে বলে, ‘থাক সোনা... আর বলতে হবে না... আমি বুঝেছি... আর আমার কোন জিজ্ঞাস্য নেই...’
‘না তিতির... আমাকে শেষ করতে দাও... অনেক দিন পর আমার বুকের ভেতরে জমে থাকা না বলতে পারা কথাগুলো বলে আমাকে একটু হাল্কা হতে দাও... ভিষন ভাবে দরকার সেটার...’ উত্তর দেয় অর্নব।
আর বাধা দেয় না পৃথা... অর্নবের কাছে আরো ঘন হয়ে সরে বসে... মাথাটাকে হেলাতে গিয়ে অনুভব করে তার চওড়া বুকের পেশিটাকে... অক্লেশে নিজের মাথা হেলিয়ে রেখে বলে, ‘বেশ... তুমি বলো, আমি শুনবো... তোমার সব কথা শুনবো আমি... তুমি বলো...’
‘ঠিক কোন জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছিল বলতে পারবো না, কিন্তু সেখান থেকে সম্পূর্ণটা পায়ে হেঁটে যখন কলকাতায় পৌছলাম, তখন পরের দিন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে... খিদে, তেষ্টায় ক্লান্ত আমি... একটা কাউকে ফোন করবো, তারও কোন উপায় নেই... সত্যি বলতে আরামে বড় হয়েছি, তাই ওই ভাবে না খেয়ে দেয়ে, এক নাগাড়ে হেঁটে ক্লান্ত বিদ্ধস্থ সম্পূর্ণ ভাবে... কোন রকমে প্রণবের বাড়ি পৌছে দরজায় বেল টিপলাম... আর বেল টিপে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, ওর দোরগোড়াতেই বসে পড়লাম হতদ্যম হয়ে... যখন দেখলাম দরজা খুলে প্রণব আমাকে না দেখতে পেয়ে ফের দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে, ওর নাম ধরে বাধ্য হয়ে ডেকে উঠলাম।
প্রথমটায় ও বিশ্বাসই করতে চাইছিল না... অনেক কষ্টে ওকে সমস্ত ঘটনাটা বুঝিয়ে বললাম... ও আমাকে তাড়াতাড়ি ধরে নিয়ে গেল ওর ফ্ল্যাটের ভেতরে... ওর আর ওর স্ত্রীর একান্ত শুশ্রষায় একটু একটু করে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম... তাও প্রায় ছিলাম ওদের বাড়ি অনেকদিন... শেষে যখন মোটামুটি বেশ ভালো হয়ে উঠেছি, তখন ওকে বলেই আমি আবার ফিরে এলাম আমার এই ফ্ল্যাটে... সেদিন থেকেই আমি এই ভাবেই ভূতের মত রয়েছি... একা... কায়াহীন...
প্রণবকে আমিই বলেছিলাম যে সবাইকে বলতে যে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছি... আসলে আমি চাইনি কারুর সামনে এসে দাঁড়াতে... এই ভাবেই সবার আড়ালে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’ চুপ করে অর্নব... বড় বড় নিঃশ্বাস পড়ে তার... পৃথার ছুয়ে থাকা গালটা ওঠা পরা করে শ্বাস নেবার তালে তাল মিলিয়ে।
‘তাহলে ফ্ল্যাট রেন্টএ কেন দিতে চাইলে তুমি?’ মৃদু স্বরে প্রশ্ন করে পৃথা... মুখটাকে অর্নবের বুকের মধ্যে রেখে।
হাত তুলে পৃথার মাথার ওপরে রাখে অর্নব, ‘ভালো প্রশ্ন করেছ... তা না হলে তোমায় কি করে পেতাম সোনা?’
‘কিন্তু সে তো পরে, আমি তো এসেছি অনেক পরে, তার আগেও তো শুনেছি আরো খান দুয়েক ফ্যামেলি এসেছিল এখানে থাকতে... কিন্তু থাকতে পারে নি... কেন?’ বুকের লোম গুলো আঙুলে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘হুম... আসলে কি জানো... একা থাকতে থাকতে না কেমন হয়ে পড়েছিলাম আমি... যদিও প্রণব, বৌদি, ওরা প্রায় আসতো আমার কাছে, প্রণব তো প্রতিদিন এসে আমায় খাবার দিয়ে যেতো... কিন্তু তাও... কতক্ষন একটা মানুষ চার দেওয়ালের মধ্যে নির্বান্ধ পড়ে থাকতে পারে? তুমিই বলো... তাই প্রণবের সাথে পরামর্শ করেই ঠিক করেছিলাম ফ্ল্যাটটা রেন্টএ দেবো... আমি না হয় রাতের দিকে কোন রকমে সোফার ওপরে ঘুমিয়ে থাকবো... কেউ তো আর দেখতে পাবে না আমায়... আর সকাল বেলা ঠিক ম্যানেজ করে নেবো... সিগারেট খাই না, মদও কতদিন খাই নি তার ঠিক নেই... তার ইচ্ছাও চলে গিয়েছে...’ বলে অর্নব।
‘তারপর...’ গুনগুনায় পৃথা।
‘তারপর আর কি... এলো একটা ফ্যামিলি... আগে থেকেই আমাদের ঠিক করা ছিল এমন কাউকে দেবো ভাড়া যারা সারাদিন ফ্ল্যাটে থাকবে না... তাতে আমিও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। সেই মতই একটা ফ্যামিলি এল... স্বামী আর স্ত্রী... দিন দুয়েক ছিল বেশ... তারপর দেখি, ও বাবা, ওরা আসলে স্বামী স্ত্রীই নয়... এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে মেয়েছেলের কারবার ফাঁদার জন্য... বাইরে থেকে মেয়েরা আসতো, আসতো আরো খদ্দের, আর তাদের চলতো লীলাখেলা, এই ঘরের মধ্যে...’ বলতে থাকে অর্নব।
‘আর তুমি ওদের ওই সব দেখতে?’ ঝট করে অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে তাকায় পৃথা... সরু হয়ে ওঠে চোখ...
‘ওই দেখ... মেয়ের কি হিংসা... তা আমার সামনে যদি কেউ ওই সব করে তা দেখবো না?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব।
‘না... দেখবে না...’ চোয়াল শক্ত করে বলে ওঠে পৃথা, তারপরই হাত দিয়ে দুমদুম করে অর্নবের বুকের ওপরে কিল মারতে থাকে... ‘কেন? কেন দেখছে ওদের ওই সব করতে... ইশ... এমনি বলেছি একটা অসভ্য লোক... ছি ছি... কত মেয়েকে ন্যাংটো দেখেছে... একদম কথা বলবে না আমার সাথে...’ বলে উঠে নেবে যেতে যায় বিছানা ছেড়ে...
অর্নব তাড়াতাড়ি খপ করে পৃথার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়... ‘দূর পাগলী... দেখেছি সেটাও যেমন সত্যি, তেমনি ওদের তো তাড়িয়েও দিয়েছি... তার বেলায়?’
‘সত্যিই তুমি তাড়িয়ে দিয়েছিলে?’ একটু শান্ত হয় পৃথার অভিমান।
‘হ্যা তো... এমন ভূতের ভয় দেখিয়েছি যে বাপ বলে দুই দিনেই পালিয়ে গিয়েছে ফ্ল্যাট ছেড়ে...’ হা হা করে হাসতে হাসতে বলে অর্নব।
পরম ভালোবাসায় দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে পৃথা... ‘আমার সোনাটা তো... তাই...’ চুমু খায় দাড়ি ভরা গালের ওপরে... পরক্ষনেই কি মনে হতে ফের প্রশ্ন করে, ‘তুমি ওই সব মেয়েদের একেবারে ন্যাংটো দেখেছো?’
‘রাগ করবে না?’ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে অর্নব।
‘করবই তো! তাও বলো... বলো না... তুমি ওদের সবাইকে একেবারে ন্যাংটো দেখেছো?’ আদুরে সুর মেখে যায় পৃথার গলার স্বরে।
‘হুম... দেখেছি... সব দেখেছি ওদের...’ উত্তর আসে অর্নবের।
‘ওরা আমার থেকেও ভালো ছিল?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা... ‘আমার যা আছে, তার থেকেও ওদেরটা ভালো ছিল?’
পৃথাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয় অর্নব, নীচু হয়ে ওর গালের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, ‘ইশ... আমার তিতির সব থেকে সুন্দরী... সব থেকে মিষ্টি... আমার তিতিরের যা আছে, তা কারুর নেই... কারুর না...’
‘সত্যিই?’ প্রশ্ন করে পৃথা... গলার স্বরে ভালোবাসা ঝরে পড়ে...
‘হুম... একেবারে সত্যি...’ পৃথার কপালে চুমু খেয়ে বলে অর্নব...
‘আই লাভ ইয়ু সোনা... লাভ ইয়ু...’ হাঁটুতে ভর রেখে উঠে বসে দুহাত দিয়ে অর্নবের গলাটাকে জড়িয়ে ধরে বলে পৃথা... অর্নবের ঘাড়ের ওপরে ঠোট রাখে গুঁজে... নিজের নরম বুকটাকে ঠেলে চেপে ধরে অর্নবের ছাতির ওপরে... একেবারে পিশে দেয় নিজের বুকটাকে সেখানে... ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমায় প্রথম যখন দেখলে... ভালো লেগেছিল?’
‘তোমায় দেখে মহিত হয়ে গিয়েছিলাম... একটা মেয়ে এত সুন্দর, এত নিষ্পাপ, এত প্রাণবন্ত হতে পারে, জানতাম না... লিন্ডাও তোমার মত এত প্রাণবন্ত কিন্তু ছিল না...’ বলে অর্নব, হাত রাখে পৃথার পীঠের ওপরে।
‘সত্যিই বলছো... আমাকে দেখেই তোমার ভালো লেগেছিলো?’ ফের যেন নিজেকেই সংশা দেবার প্রয়াশ করে পৃথা।
‘হ্যা সোনা... প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়... তাই তো সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমাকে...’ আরো ঘন করে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে অর্নব।
হটাৎ করে ভিষন লজ্জা করতে থাকে পৃথার... মুখটাকে আরো ভালো করে অর্নবের ঘাড়ের মধ্যে গুঁজে দিয়ে বলে, ‘ইশশশশ... আমাকেও তো ন্যাংটো দেখেছো!’
‘শুধু কি তাই? নিজে নিজে কত দুষ্টুমী করতে সেটাও তো দেখতাম...’ হাসে অর্নব।
‘ইশশশশ মা... তুমি আমাকে মাস্টার্বেট করতেও দেখতে? ইশশশশ... তুমি একটা ভিষন বাজে লোক...’ গাঢ় গলায় বলে পৃথা... বলে, কিন্তু ওর ভেতরটা যেন ভালোবাসায় ভরে উঠতে থাকে... ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘দেখে তোমার ইচ্ছা করতো না আমায় আদর করার?’
‘করতো তো... ভিষন করতো...’ উত্তর দেয় অর্নব।
‘করো নি কেন? কেন আসো নি আরো আগে আমার কাছে... আদরে আদরে ভাসিয়ে দাও নি কেন আমায়?’ মুখ ঘসে পৃথা অর্নবের ঘাড়ে... দুহাত দিয়ে খামচে ধরে অর্নবের পীঠটাকে...
‘তুমি ভয় পেতে, তখন কাছে এলে, তাই তো দূর থেকেই তোমায় দেখতাম... আর...’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব...
‘আর?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা... ‘আর কি?’
‘আর কিছু না...’ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় অর্নব।
‘আমি জানি...’ ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা...
‘জানো? কি জানো?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে অর্নব।
‘আমাকে মাস্টার্বেট করতে দেখে তুমিও নিজেকে ঠিক রাখতে পারতে না... তুমিও মাস্টার্বেট করতে... ঠিক কি না? বলো?’ পৃথার দুটো চোখ চকচক করে ওঠে দুষ্টুমীতে।
‘ক...কে বললো সেটা?’ এবার অপ্রস্তুত হবার পালা অর্নবের।
‘আমি জানি মশাই... তোমার সামনে একটা মেয়ে মাস্টার্বেট করবে, আর তুমি কি সাধু পুরুষ? দেখেও চুপ করে তাকিয়ে থাকবে? হুম? আমি সব বুঝি... বুঝেছ?’ পৃথার ঠোঁটে দুষ্টুমীর হাসি মেখে থাকে।
‘পাজি মেয়ে... সব বোঝে...’ হাসতে হাসতে পৃথার পীঠের ওপর থেকে হাতটা নামিয়ে ওর নরম পাছার দাবনাদুটোকে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে চটকে দেয় একবার... পরক্ষনেই হাতটাকে সরিয়ে নেয় সেখান থেকে...
‘উমমম... টেপো না... চটকাও না ওখানটায়...’ অর্নবের ঘাড়ের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা।
‘কথায় কথায় অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে... সে খেয়াল আছে... এখন এই সব করলে হবে? এক্ষুনি হয়তো কাজল এসে যাবে... নাও, চলো ওঠো...’ বলে তাড়া দেয় অর্নব।
‘না... আগে ওখানটায় টেপো... চটকে দাও ভালো করে একবার, তারপর ছাড়বো তোমায়...’ নিজেকে অর্নবের কাছে আরো ঘন করে এগিয়ে ধরে বলে পৃথা।
‘কিন্তু...’ ফের ইতস্থত করে অর্নব...
ধৈর্য হারায় পৃথা... ঝট করে অর্নবের গলা ছেড়ে পেছনে নিয়ে গিয়ে অর্নবের হাতদুটোকে ধরে, তারপর নিজের গোল গোল পাছার দাবনার ওপরে চেপে ধরে বলে, ‘এই নাও... তোমার হাতের মধ্যে তুলে দিলাম... এবার টিপে টিপে চটকাও এই দুটোকে... আরো নরম করে দাও চটকে...’
হাতের মধ্যে ধরা নরম তাল দুটোর স্পর্শে নিজের পৌরষে কাঁপন ধরে অর্নবের... আলতো করে চাপ দেয় পাছার নরম দাবনায়... ফের হাত তুলে অর্নবকে শক্ত করে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে পৃথা, ‘এত আলতো করে নয়... আরো জোরে... চেপে ধরো...’
এবার আর বলতে হয় না অর্নবকে... হাতের মধ্যে তুলে দেওয়া পৃথার ওই নরম নিতম্বের তালদুটোকে শক্ত করে খামচে ধরে... চটকে ধরে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে... আর সেই সাথে খুজে নেয় পৃথার ঠোটটাকে... নিজের ঠোট চেপে ধরে সেখানে... চুষতে থাকে পৃথার পাতলা ঠোঁটের ওপরেরটাকে নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে... ‘উমমমম...মমমম...’ অর্নবের মুখের মধ্যে গুনগুনায় পৃথা পরম আবেশে... সে জানে, আজ আর কিছুই হবে না শরীর খারাপের কারনে, তবুও... যতটা আদর পাওয়া যায়, সেটাই নিংড়ে বের করে নিতে চায় অর্নবের থেকে... ভরে নিতে চায় তার শরীরের মধ্যে...
ক্রমশ...
‘কখন উঠলে?’ কানের পাশে মৃদু স্বরে অর্নবের গলা পেয়ে চিন্তার জাল ছেঁড়ে পৃথার... জানলা দিয়ে ভোরের আলো তখন সবে ফুটে উঠে উঁকি মারছে ঘরের মধ্যে... বিছানা থেকেই চোখে পড়ে আকাশের গায়ে বেগুনি রঙের ছোঁয়া...
‘উম?... এই তো... খানিক আগেই... চেঞ্জ করে এলাম... প্রথম দুটো দিন বড্ড হয়... বারে বারে চেঞ্জ না করলে ভেসে যায় একেবারে...’ নিজের শরীরটাকে আরো অর্নবের কোলের মধ্যে ঠেলে দিয়ে উত্তর দেয় পৃথা, আড়মোড়া ভাঙে হাত তুলে।
‘কি চিন্তা করছিলে শুয়ে শুয়ে?’ প্রশ্ন করে অর্নব, ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে প্রেয়শীকে।
‘কতওওওও কি...’ মৃদু হেসে উত্তর দেয় পৃথা... না দেখা অর্নবের দিকে ফিরে শোয় সে... হাত তুলে রাখে অর্নবের দাড়িভরা গালের ওপরে... ‘গুড মর্নং সোনা...’ বলে ঠোঁটটা এগিয়ে রাখে অর্নবের দাড়ির আড়ালে থাকা ঠোঁটের ওপরে... হাল্কা করে চুমু খায়।
‘কি ভাবছিলে, কই, বললে না তো?’ পৃথার এলোমেলো চুলের মধ্যে বিলি কাটতে কাটতে ফের জিজ্ঞাসা করে অর্নব।
‘তোমার কথা...’ ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয় সে।
‘আমার কোন কথা? সবই তো শুনেছ প্রণবের কাছ থেকে... কিছুই তো বাকি নেই আর... তাহলে?’ ফের জিজ্ঞাসা করে অর্নব... চুলের থেকে হাত নামিয়ে খেলা করে কানের লতি নিয়ে।
সিরসির করে ওঠে পৃথার শরীরটা কানের লতিতে হাত পড়তে... ঘাঁড় কাত করে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে... ‘ইশশশ... সুড়সুড়ি লাগছে তো...’
কান ছেড়ে পীঠের ওপর হাত রেখে আরো ঘন করে টেনে নেয় পৃথার শরীরটাকে নিজের বুকের মধ্যে অর্নব... লোমশ আদুল বুকের মধ্যে মুখ গোঁজে পৃথা... মুখ ঘষে... আহ... কি নিশ্চন্তের পরশ এখানে... মনে মনে ভাবে সে।
পৃথার চুলের মধ্যে মুখ রেখে ফের প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কই... বলো... কি ভাবছিলে?’
‘তুমি খারাপ ভাববে না?’ জিভ তুলে আলতো করে ঠেকায় মুখের সামনে লোমের আড়ালে থাকা ছোট্ট বুকের বোঁটাটায়...
এ ভাবে বুকের বোঁটায় ভেজা জিভের ছোঁয়া পড়তে অর্নবের শরীরও সিরসিরিয়ে ওঠে, কিন্তু চুপ করে থাকে সে, কিছু বলে না, পৃথার মাথার মধ্যে মুখ গুঁজে প্রশ্রয়ে হাসি হাসে নিঃশ্বব্দে...
পৃথাকে চুপ করে থাকতে দেখে অর্নব বলে, ‘তোমার কি জিজ্ঞাস্য, সেটা জানি আমি... তুমি ভাবছ যে আমাকে ছুঁতে পারছ, অথচ আমি জীবত না মৃত সেটাই এখন তোমার কাছে পরিষ্কার নয়... তাই তো? অনেকদিন ধরেই প্রশ্নটা তোমার মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে... ঠিক কি না?’
অর্নবের কথা শুনে বুকের মধ্যেটা মুচড়ে ওঠে পৃথার... এটাই তার জিজ্ঞাস্য ঠিকই, কিন্তু সেটা জিজ্ঞাসা করে অর্নবকে হারাতেও যে সে চায় না কোন মতেই... তাই তো এত দ্বন্দ তার মনের মাঝে... প্রশ্নটা বার বার উঠে এলেও পরিস্থিতির চাপে হয়তো চাপা পড়ে গিয়েছে... সেও আর চাপ দেয় নি প্রশ্নটাকে নিয়ে... আগে যখন অর্নবকে পায় নি, তখন তার বিচরণ ছিল কল্পনার জগতে, নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছে তার প্রেমিককে... কিন্তু আজ সেই মানুষটার বুকের মধ্যে ঢুকে থাকার সময় কেমন যেন মাঝে মধ্যেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় তার... তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত ভাবতেই কেমন দিশেহারা ঠেকে সব কিছু... কি করে বোঝাবে তার প্রেমাষ্পদকে মনের মধ্যে গড়ে ওঠা অনুভূতিটাকে?
‘আমি তোমার মতই একেবারে জীবত একটা মানুষ, তিতির...’ পৃথার মুখটাকে হাতের আঁজলায় নিজের পানে তুলে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে অর্নব... ‘তুমি যাকে ছুঁয়ে আছো... সে মৃত কোন ব্যক্তি নয়... রক্তমাংসে গড়া একটা মানুষ... কিন্তু আজ আমি কায়াহীন... শরীরটা পড়ে রয়েছে... কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পায় না... কিন্তু তোমার মত কেউ যদি এসে ছোঁয়... আমার স্পর্শ পেতে পারে সে... বুঝতে পারে আমার অস্তিত্ব...’ বলে চুপ করে অর্নব।
‘কি...কিন্ত... কি করে?’ ধরা গলায় প্রশ্ন করে পৃথা... চোখে ভাসে অপরিসীম জিজ্ঞাসা... ‘তবে যে সেদিন প্রণবদা বললো তোমার গাড়ি...’ আর শেষ করতে পারে না সে বাক্যটাকে... গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠে...
‘কি বলেছিল প্রণব... আমার গাড়িটা জ্বলে গিয়েছিল... তাই তো? আমাকে তারপর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি... আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিনের পর থেকে... তাই না?’ নিচু গলায় বলে অর্নব।
ইতিবাচক মাথা নাড়ে পৃথা... প্রণবদার কাছ থেকে কথাটা শোনার পর তার মনের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ভুলতে পারে নি, এখনও...
পৃথার মাথাটাকে ফের নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নব... চিবুকটা তার মাথার চুলে রেখে বলে... ‘হুম... ঠিকই বলেছিল প্রণব... ঠিক সেটাই হয়েছিল... কিন্তু সবটা বলে নি সেদিন, অবস্য ওরও দোষ নেই, আমারই বারণ ছিল, না বলার... তাই সে আর তোমার কাছে খুলে ধরে নি বাকিটা’...
‘কি হয়েছিল?’ নিজের গালটা বুকের ওপরে রেখে প্রশ্ন করে পৃথা... ডান হাতের বেড় থাকে অর্নবের শরীরটাকে জড়িয়ে... আঙুলগুলো খেলা করে বেড়ায় তার প্রেমিকের পীঠের ওপরে।
‘সব ঠিকঠাকই চলছিল সেদিন... বেশ ভালোই যাচ্ছিলাম বর্ধমানের দিকে... মোটামুটি দূর্গাপুর হাইওয়ের রাস্তাও খারাপ নয়, আর আমি গাড়িটা বেশ ভালোই চালাই...’ পৃথার মাথায় চিবুক রেখে বলে চলে অর্নব... ‘তখন বৃষ্টিটা একটু ধরেও এসেছিল... টিপটিপ করে পরছিল... গাড়ির উন্ডস্ক্রিন সেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে উঠলেও, চালাতে কোন অসুবিধাই হচ্ছিল না আমার...’ বলতে বলতে থামে সে... পৃথা চুপ করে এক মনে শুনে চলে অর্নবের কথা... কথার মাঝে কোন ডিস্টার্ব করে না সে...
‘সেদিন তাড়াহুড়োয় বেরুবার সময় বোধহয় টয়লেট করতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই বেশ অনেকক্ষন ধরেই টয়লেট পাচ্ছিল, কিন্তু ওই ফাঁকা হাইওয়েতে কোথায় টয়লেট পাই... ভাবতে ভাবতে হটাৎ মাথায় এলো, এই বৃষ্টির মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টয়লেট করে নিলেই হলো, কে আর কি বলবে? তাই যেমন ভাবা তেমন কাজ, গাড়িটাকে লেন থেকে সরিয়ে এনে দাঁড় করিয়ে দৌড়োই কাছেই থাকা একটা গাছ লক্ষ্য করে... নিশ্চিন্তে হাল্কা হই ওটার আড়ালে... তারপর ফিরেই আসছিলাম... কিন্তু গাড়ির প্রায় কয়’এক গজ বাকি থাকতেই আমার মনে হল যেন পুরো পৃথিবীটাই ঝলসে উঠল... আর সেই সাথে একটা কান ফাটানো আওয়াজ... আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশের অগভীর খালটায়... প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারালাম... আর কিচ্ছু জানি না...’ ফের থামে অর্নব... বুকের মধ্যে থাকা পৃথা অনুভব করে সেদিনের কথা বলতে বলতে উত্তেজনায় তার হৃদপিন্ডটা কি অস্বাভাবিক ভাবে দ্রুত চলছে... যেন বুকের মধ্যে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে... আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে নিজের মুখটাকে চেপে রাখে প্রেমাষ্পদের বুকের মধ্যে সে।
‘যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখি আমি তখনও পড়ে আছি ওই খালটার জলের মধ্যেই... মাথার মধ্যেটায় তখনও যেন ঝিমঝিম করছে আমার... সারা গায়ে হাতে কি অসহ্য যন্ত্রনা... অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম আমি... প্রায় টলতে টলতে ঢাল বেয়ে এগোতে থাকলাম রাস্তার দিকে... গাড়িটা যেখানে দাঁড় করিয়েছিলাম...
কিন্তু একি!... গাড়িটা পুড়ে একেবারে ছারখার হয়ে গিয়েছে... একটা কালো অঙ্গারে পরিণত হয়েছে সেটা... আর সেটাকে ঘিরে শ’খানেক লোকের জটলা... সবাই মিলে কি যেন খুজছে আতিপাতি করে... চতুর্দিকে চিৎকার চ্যাঁচামিচি... ওদের চিৎকারটা যেন আমার মাথার মধ্যে তখন হাতুড়ি পেটার মত দুমদুম করে লাগছে... কোন রকমে দুহাত কানের ওপরে চেপে আরো এগিয়ে গেলাম গাড়িটার কাছটায় টলতে টলতে... কিন্তু যাবো কি, কাউকে ঠেলে এগোতেই পারছি না, এতো ভীড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে... তাও চেষ্টা করলাম সামনের লোকটাকে সরিয়ে এগোবার... কিন্তু লোকটা কি অদ্ভুতভাবে আমাকে সরিয়ে দিল... এমন ভাবে পেছন না ফিরেই হাতের ধাক্কা দিল, যেন আমাকে দেখতেই পেল না সে... আমি ঘুরে আর একদিক দিয়ে গাড়ির কাছে পৌছবার চেষ্টা করলাম... কিন্তু সেখানেও সেই একই ব্যাপার... কেউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না... আমি যে ওদের পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করছি সেটাই যেন কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না... আমি যে আদৌ ওখানে আছি সেটাই যেন কেউ বুঝতে চাইছে না অদ্ভুতভাবে... কি মনে হলো আমার তখন, সামনের যে লোকটার কাঁধের ওপরে হাতটা রেখেছিলাম, সেই হাতের দিকে নজর করলাম... আর যা দেখলাম, তাতে প্রায় হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম আমি... একি! আমার হাত কই... আমি তো সামনের লোকটাকে পুরোটাই দেখতে পাচ্ছি... তার দেহের কোন অংশই তো আমার হাতের আড়ালে চলে যায় নি! তবে!... তাড়াতাড়ি লোকটার কাঁধ থেকে হাতটাকে তুলে নিজের সামনে মেলে ধরলাম... না! নেই তো! কিচ্ছু নেই! সব ফাঁকা! সব... সব ফাঁকা... একেবারে স্বচ্ছ... হাতটার মধ্যে দিয়ে আরপার সব কিছু দেখা যাচ্ছে... কেমন শিউরে উঠলাম একটা অচেনা ভয়ে... ভয় জিনিসটা কোনদিনই আমার মধ্যে ছিল না... কিন্তু সেদিন ভয় কি, তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম যেন... থরথর করে আমার সারা শরীরটা কাঁপছিল... একি দেখছি আমি?... না, না... দেখছি না, দেখছি না... আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না... সব একেবারে ট্রান্সপারেন্ট... স্বচ্ছ... যত দেখছিলাম, তত যেন আরো ভয় চেপে ধরছিল আমাকে... এ আমার কি হলো? অনেক ইতস্তত করে ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে নিজের শরীরটার দিকে তাকালাম আমি... আঁৎকে উঠলাম... আমি নেই!... আমি আছি অথচ আমি নেই... সেদিন যে আমার কি অবস্থা হয়েছিল আজ মুখের কথায় সবটা হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না আমি... তখন নিজেকে সত্যিই মৃত মনে হচ্ছিল আমার... মনে হচ্ছিল যে তবে কি মৃত্যুর পর মানুষের এই অবস্থাই হয়? কিন্তু পরক্ষনেই ভেবেছি, তাই বা কি করে হবে? মরেই যদি যাই, তাহলে আমি লোকগুলোকে ছুঁলাম কি করে?... হ্যা, তাই তো... তাড়াতাড়ি নিজেরই একটা হাত আর একটা হাত দিয়ে চেপে ধরলাম... এই তো... ধরতে পারছি তো আমার হাতটাকে... দুহাত বোলাতে লাগলাম নিজের শরীরের ওপরে... ঠিক যেমন ছিল তেমনই রয়েছে... মুখ, গাল, চোখ, গলা, বুক, কোমর, পা... হাতের মধ্যে স্পর্শ পাচ্ছি ছেঁড়া ছেঁড়া জামা কাপড়গুলোও... সব... সব... তাহলে কেন আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না!... শুধু কি আমিই আমাকে দেখতে পাচ্ছি না? নাকি কেউই দেখতে পাচ্ছে না আমায়? ভয়ে গলা শুকিয়ে উঠল আমার... এক পা দু পা করে পিছিয়ে এলাম আমি ভীড়টার থেকে... যেন ওখানে থাকলে সবাই দেখে ফেলবে আমায়... হাসবে আমার দিকে তাকিয়ে... কিম্বা ভয় পাবে হয়তো আমার একটা বিভৎস মুর্তি দেখে... জামা কাপড় পরা অথচ কায়াহীন মানুষটাকে দেখে... জানি না... ভাবতেও পারছিলাম না কি করবো আমি তখন... হটাৎ মাথায় খেলে গেলো কথাটা... তাড়াতাড়ি করে ফের ঢাল বেয়ে নেমে যেতে লাগলাম ওই খালটার দিকে... নামতে গিয়ে পা হড়কে গেলো আমার... হুমড়ি খেয়ে পড়লাম বৃষ্টি ভেজা কাদা মাটির ওপরে... প্রায় গড়িয়ে, হিঁচড়ে নেমে গেলাম ওপর থেকে একেবারে নীচের দিকে... খালে ধারে গিয়ে... হয়তো ছড়ে কেটে গেলো কত জায়গায়তেই আমার... কিন্তু সেই দিকে তখন কোন হুস নেই... যা খুশি হয় হয়ে যাক... হামা দিয়ে এগিয়ে গেলাম জলটা লক্ষ্য করে... হুমড়ি খেয়ে পড়লাম জলের ঠিক ওপরটায়... নিজেকে দেখবো বলে... কিন্তু না... আমি নেই... জলের ওপরে আমার কোন ছায়া নেই... জলের ওপরে তখন মেঘলা আকাশের প্রতিচ্ছবি... কিন্তু আমার কোন প্রতিচ্ছবির চিহ্ন পর্যন্ত নেই সেই নোংরা খালের জলটার ওপরে... ওই জলের মধ্যেই চিৎ হয়ে শুয়ে রইলাম আমি... নির্নিমেশ তাকিয়ে রইলাম খোলা মেঘলা আকাশটার দিকে... মাথার মধ্যে তখন আর কিচ্ছু নেই... সব শূণ্য... খালি... আমার শরীরের সমস্ত অনুভূতিগুলো যেন লোপ পেয়ে গিয়েছে... মনে হচ্ছিল চতুর্দিকে শুধু মাত্র শশানের নিরাবতা... রাস্তার ধারে আমার গাড়ীটা ঘিরে ধরে এত হইচই... তখন কিছুই আর আমার কানে এসে পৌছাচ্ছে না... খোলা আকাশের নিচে শুয়ে তখন শুধু একজনকেই মনে পড়ছিল বার বার... লিন্ডা... শুধু লিন্ডার মুখটা ভেসে উঠছিল আমার চোখের সামনে।
লিন্ডার কথা মনে আসতেই যেন সমস্ত আড়গল ভেঙে গেলো... উঠে বসে মুখ ঢেকে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলাম আমি... বারে বারে ভগবানের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, কেন ভগবান, কেন? কেন তুমি আমার থেকে লিন্ডাকে কেড়ে নিলে... তা না হলে তো আজ আমাকে এই ইন্ডিয়াতে ফিরেও আসতে হতো না, আর এই দুর্বিশহ অবস্থার মধ্যেও পড়তে হতো না... ইচ্ছা করছিল চিৎকার করে লিন্ডার নাম ধরে ডাকি... কিন্তু সেখানেও তো ভয়... ওরা... ওই ওরা, যারা আমার গাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তারা যদি শুনতে পায়... শুনতে পাবে অথচ দেখতে পাবে না... ছেঁড়া জামা কাপড় পরা শরীরহীন লোকটাকে দেখে... হয়তো ডাইন ভেবে ঢিল ছুড়লো... আমার সেই মুহুর্তের যা অবস্থা, তাতে তাড়াতাড়ি পালাতেও তো পারবো না... নীরবে, নিঃশব্দে কেঁদেছিলাম আমি ওই খালের ধারে বসে, এক নাগাড়ে... সকলের দৃষ্টির আড়ালে...’ বলতে বলতে থামে অর্নব... প্রায় হাঁফাতে থাকে সে যেন সেদিনের সেই বিভৎস কথার পুণরাবৃত্তি করতে করতে।
পৃথা মুখে কিছু না বলে নিরবে অর্নবের বুকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে উঠে বসে, তারপর ধীরে বিছানার থেকে নেমে গিয়ে টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতলটা তুলে নিয়ে ফিরে আসে বিছানায়... এগিয়ে দেয় অর্নবের পানে... অর্নব উঠে বসে পৃথার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে প্রায় পুরো বোতলের জলটাই খেয়ে শেষ করে দেয়... তারপর পৃথার হাতে বোতলটা ফিরিয়ে দিতে দিতে বলে... ‘থ্যাঙ্কস্...’
খালি বোতলটা ফের টেবিলের ওপরে রেখে বিছানায় ফিরে উঠে বসে পৃথা... আন্দাজে হাত বাড়ায় সামনের পানে... হাত রাখে অর্নবের বুকের ওপরে... তারপর ওর শরীরটা ছুঁয়ে থেকে আরো ঘন হয়ে এসে বসে সে... ‘তারপর?’ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে... আজ চায় ও অর্নব সব বলুক, বলে হাল্কা হোক... কারণ সে বুঝতে পারে একটা ভারী পাথর অর্নবের বুকের মধ্যে চেপে বসে রয়েছে, সেটা তাকে না বলা অবধি হাল্কা হতে পারবে না...
খানিক চুপ করে থাকে অর্নব... তারপর ধীর গলায় বলতে শুরু করে... ‘কতক্ষন ওই ভাবে ওই খানে শুয়ে ছিলাম জানি না... কখন দিনের আলো ঢলে গিয়ে রাত নেবে এসেছিলো, তারও খেয়াল করি নি... একটু একটু করে নিজের মধ্যে ফিরে এলাম আমি... উঠে বসলাম মাটির ওপরে... কেউ কোথাও নেই... ফাঁকা প্রান্তরের মধ্যে আমি একা... ছায়াহীন কায়াহীন এক অদ্ভুত জীব... দ্য ইনভিজিবিল ম্যান... সিনেমায় সে চরিত্র কত মজাদার... কত রোমান্টিক... কত সুবিধার হয় তো... কিন্তু বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সে অভিজ্ঞতা যে কি ভয়ঙ্কর... ভাষায় প্রকাশ করা যায় না... আরো খানিক চুপ করেই বসে রইলাম ওখানটায়... ভাবতে লাগলাম, কি করব এবার আমি... গাড়ির মধ্যেই আমার পার্স আর মোবাইলটা ফেলে এসেছিলাম, তাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সমস্ত দিক দিয়ে... সাথে এক কানাকড়িও নেই... কপর্দক শূণ্য যাকে বলে...
কি মনে হতে গায়ে পরা জামা কাপড় গুলো খুলে ছেড়ে রাখলাম... তারপর ফের নিজের দিকে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলাম নিজেকে... নাহ!... কিচ্ছু নেই... সম্পূর্ণ অদৃশ্য একটা মানুষ... চুপ করে বসে ভাবতে লাগলাম, কি করবো এবার...
হটাৎ দেখি একটা নেড়ি কুকুর আমার দিকে এগিয়ে আসছে... প্রথমটায় ও আমাকে খেয়াল করে নি বোধহয়... কিন্তু একটু কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়ায়... নাঁক তুলে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে খানিক... আর তারপরই শুরু করে দেয় চিলচিৎকার... এক নাগাড়ে ঘেউ ঘেউ করে চেঁচাতে থাকে আমাকে লক্ষ্য করে... দূর থেকেই... আমি প্রমাদ গুনলাম... এই ভাবে যদি কুকুরটা চিৎকার করতে থাকে তাহলে বিপদে পড়বো আমি... মাটির থেকে একটা ঢেলা তুলে ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে... একেবারে অব্যর্থ টিপ... গিয়ে লাগলো সজোরে কুকুরটার পায়ে... কেঁউ কেঁউ করে দৌড়ে পালিয়ে গেল ওটা... আমিও আর না বসে থেকে উঠে দাঁড়ালাম... হাঁটা দিলাম কলকাতার দিকে... শুধু যাবার সময় একবার করুন চোখে আমার পরে থাকা পোড়া গাড়িটার দিকে নজর দিলাম।’
পুরানো কথা বলতে বলতে চুপ করে অর্নব, পৃথা তাকে না দেখতে পেলেও উপলব্ধি করে এই মুহুর্তে সেই ভয়ানক স্মৃতিগুলো মনে পড়তে ভিষন ভাবে অস্বস্থির মধ্যে রয়েছে অর্নব... হাত তুলে রাখে তার বুকের ওপরে... মৃদু স্বরে বলে, ‘থাক সোনা... আর বলতে হবে না... আমি বুঝেছি... আর আমার কোন জিজ্ঞাস্য নেই...’
‘না তিতির... আমাকে শেষ করতে দাও... অনেক দিন পর আমার বুকের ভেতরে জমে থাকা না বলতে পারা কথাগুলো বলে আমাকে একটু হাল্কা হতে দাও... ভিষন ভাবে দরকার সেটার...’ উত্তর দেয় অর্নব।
আর বাধা দেয় না পৃথা... অর্নবের কাছে আরো ঘন হয়ে সরে বসে... মাথাটাকে হেলাতে গিয়ে অনুভব করে তার চওড়া বুকের পেশিটাকে... অক্লেশে নিজের মাথা হেলিয়ে রেখে বলে, ‘বেশ... তুমি বলো, আমি শুনবো... তোমার সব কথা শুনবো আমি... তুমি বলো...’
‘ঠিক কোন জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছিল বলতে পারবো না, কিন্তু সেখান থেকে সম্পূর্ণটা পায়ে হেঁটে যখন কলকাতায় পৌছলাম, তখন পরের দিন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে... খিদে, তেষ্টায় ক্লান্ত আমি... একটা কাউকে ফোন করবো, তারও কোন উপায় নেই... সত্যি বলতে আরামে বড় হয়েছি, তাই ওই ভাবে না খেয়ে দেয়ে, এক নাগাড়ে হেঁটে ক্লান্ত বিদ্ধস্থ সম্পূর্ণ ভাবে... কোন রকমে প্রণবের বাড়ি পৌছে দরজায় বেল টিপলাম... আর বেল টিপে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, ওর দোরগোড়াতেই বসে পড়লাম হতদ্যম হয়ে... যখন দেখলাম দরজা খুলে প্রণব আমাকে না দেখতে পেয়ে ফের দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে, ওর নাম ধরে বাধ্য হয়ে ডেকে উঠলাম।
প্রথমটায় ও বিশ্বাসই করতে চাইছিল না... অনেক কষ্টে ওকে সমস্ত ঘটনাটা বুঝিয়ে বললাম... ও আমাকে তাড়াতাড়ি ধরে নিয়ে গেল ওর ফ্ল্যাটের ভেতরে... ওর আর ওর স্ত্রীর একান্ত শুশ্রষায় একটু একটু করে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম... তাও প্রায় ছিলাম ওদের বাড়ি অনেকদিন... শেষে যখন মোটামুটি বেশ ভালো হয়ে উঠেছি, তখন ওকে বলেই আমি আবার ফিরে এলাম আমার এই ফ্ল্যাটে... সেদিন থেকেই আমি এই ভাবেই ভূতের মত রয়েছি... একা... কায়াহীন...
প্রণবকে আমিই বলেছিলাম যে সবাইকে বলতে যে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছি... আসলে আমি চাইনি কারুর সামনে এসে দাঁড়াতে... এই ভাবেই সবার আড়ালে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’ চুপ করে অর্নব... বড় বড় নিঃশ্বাস পড়ে তার... পৃথার ছুয়ে থাকা গালটা ওঠা পরা করে শ্বাস নেবার তালে তাল মিলিয়ে।
‘তাহলে ফ্ল্যাট রেন্টএ কেন দিতে চাইলে তুমি?’ মৃদু স্বরে প্রশ্ন করে পৃথা... মুখটাকে অর্নবের বুকের মধ্যে রেখে।
হাত তুলে পৃথার মাথার ওপরে রাখে অর্নব, ‘ভালো প্রশ্ন করেছ... তা না হলে তোমায় কি করে পেতাম সোনা?’
‘কিন্তু সে তো পরে, আমি তো এসেছি অনেক পরে, তার আগেও তো শুনেছি আরো খান দুয়েক ফ্যামেলি এসেছিল এখানে থাকতে... কিন্তু থাকতে পারে নি... কেন?’ বুকের লোম গুলো আঙুলে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘হুম... আসলে কি জানো... একা থাকতে থাকতে না কেমন হয়ে পড়েছিলাম আমি... যদিও প্রণব, বৌদি, ওরা প্রায় আসতো আমার কাছে, প্রণব তো প্রতিদিন এসে আমায় খাবার দিয়ে যেতো... কিন্তু তাও... কতক্ষন একটা মানুষ চার দেওয়ালের মধ্যে নির্বান্ধ পড়ে থাকতে পারে? তুমিই বলো... তাই প্রণবের সাথে পরামর্শ করেই ঠিক করেছিলাম ফ্ল্যাটটা রেন্টএ দেবো... আমি না হয় রাতের দিকে কোন রকমে সোফার ওপরে ঘুমিয়ে থাকবো... কেউ তো আর দেখতে পাবে না আমায়... আর সকাল বেলা ঠিক ম্যানেজ করে নেবো... সিগারেট খাই না, মদও কতদিন খাই নি তার ঠিক নেই... তার ইচ্ছাও চলে গিয়েছে...’ বলে অর্নব।
‘তারপর...’ গুনগুনায় পৃথা।
‘তারপর আর কি... এলো একটা ফ্যামিলি... আগে থেকেই আমাদের ঠিক করা ছিল এমন কাউকে দেবো ভাড়া যারা সারাদিন ফ্ল্যাটে থাকবে না... তাতে আমিও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। সেই মতই একটা ফ্যামিলি এল... স্বামী আর স্ত্রী... দিন দুয়েক ছিল বেশ... তারপর দেখি, ও বাবা, ওরা আসলে স্বামী স্ত্রীই নয়... এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে মেয়েছেলের কারবার ফাঁদার জন্য... বাইরে থেকে মেয়েরা আসতো, আসতো আরো খদ্দের, আর তাদের চলতো লীলাখেলা, এই ঘরের মধ্যে...’ বলতে থাকে অর্নব।
‘আর তুমি ওদের ওই সব দেখতে?’ ঝট করে অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে তাকায় পৃথা... সরু হয়ে ওঠে চোখ...
‘ওই দেখ... মেয়ের কি হিংসা... তা আমার সামনে যদি কেউ ওই সব করে তা দেখবো না?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব।
‘না... দেখবে না...’ চোয়াল শক্ত করে বলে ওঠে পৃথা, তারপরই হাত দিয়ে দুমদুম করে অর্নবের বুকের ওপরে কিল মারতে থাকে... ‘কেন? কেন দেখছে ওদের ওই সব করতে... ইশ... এমনি বলেছি একটা অসভ্য লোক... ছি ছি... কত মেয়েকে ন্যাংটো দেখেছে... একদম কথা বলবে না আমার সাথে...’ বলে উঠে নেবে যেতে যায় বিছানা ছেড়ে...
অর্নব তাড়াতাড়ি খপ করে পৃথার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়... ‘দূর পাগলী... দেখেছি সেটাও যেমন সত্যি, তেমনি ওদের তো তাড়িয়েও দিয়েছি... তার বেলায়?’
‘সত্যিই তুমি তাড়িয়ে দিয়েছিলে?’ একটু শান্ত হয় পৃথার অভিমান।
‘হ্যা তো... এমন ভূতের ভয় দেখিয়েছি যে বাপ বলে দুই দিনেই পালিয়ে গিয়েছে ফ্ল্যাট ছেড়ে...’ হা হা করে হাসতে হাসতে বলে অর্নব।
পরম ভালোবাসায় দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে পৃথা... ‘আমার সোনাটা তো... তাই...’ চুমু খায় দাড়ি ভরা গালের ওপরে... পরক্ষনেই কি মনে হতে ফের প্রশ্ন করে, ‘তুমি ওই সব মেয়েদের একেবারে ন্যাংটো দেখেছো?’
‘রাগ করবে না?’ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে অর্নব।
‘করবই তো! তাও বলো... বলো না... তুমি ওদের সবাইকে একেবারে ন্যাংটো দেখেছো?’ আদুরে সুর মেখে যায় পৃথার গলার স্বরে।
‘হুম... দেখেছি... সব দেখেছি ওদের...’ উত্তর আসে অর্নবের।
‘ওরা আমার থেকেও ভালো ছিল?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা... ‘আমার যা আছে, তার থেকেও ওদেরটা ভালো ছিল?’
পৃথাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয় অর্নব, নীচু হয়ে ওর গালের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, ‘ইশ... আমার তিতির সব থেকে সুন্দরী... সব থেকে মিষ্টি... আমার তিতিরের যা আছে, তা কারুর নেই... কারুর না...’
‘সত্যিই?’ প্রশ্ন করে পৃথা... গলার স্বরে ভালোবাসা ঝরে পড়ে...
‘হুম... একেবারে সত্যি...’ পৃথার কপালে চুমু খেয়ে বলে অর্নব...
‘আই লাভ ইয়ু সোনা... লাভ ইয়ু...’ হাঁটুতে ভর রেখে উঠে বসে দুহাত দিয়ে অর্নবের গলাটাকে জড়িয়ে ধরে বলে পৃথা... অর্নবের ঘাড়ের ওপরে ঠোট রাখে গুঁজে... নিজের নরম বুকটাকে ঠেলে চেপে ধরে অর্নবের ছাতির ওপরে... একেবারে পিশে দেয় নিজের বুকটাকে সেখানে... ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমায় প্রথম যখন দেখলে... ভালো লেগেছিল?’
‘তোমায় দেখে মহিত হয়ে গিয়েছিলাম... একটা মেয়ে এত সুন্দর, এত নিষ্পাপ, এত প্রাণবন্ত হতে পারে, জানতাম না... লিন্ডাও তোমার মত এত প্রাণবন্ত কিন্তু ছিল না...’ বলে অর্নব, হাত রাখে পৃথার পীঠের ওপরে।
‘সত্যিই বলছো... আমাকে দেখেই তোমার ভালো লেগেছিলো?’ ফের যেন নিজেকেই সংশা দেবার প্রয়াশ করে পৃথা।
‘হ্যা সোনা... প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়... তাই তো সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমাকে...’ আরো ঘন করে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে অর্নব।
হটাৎ করে ভিষন লজ্জা করতে থাকে পৃথার... মুখটাকে আরো ভালো করে অর্নবের ঘাড়ের মধ্যে গুঁজে দিয়ে বলে, ‘ইশশশশ... আমাকেও তো ন্যাংটো দেখেছো!’
‘শুধু কি তাই? নিজে নিজে কত দুষ্টুমী করতে সেটাও তো দেখতাম...’ হাসে অর্নব।
‘ইশশশশ মা... তুমি আমাকে মাস্টার্বেট করতেও দেখতে? ইশশশশ... তুমি একটা ভিষন বাজে লোক...’ গাঢ় গলায় বলে পৃথা... বলে, কিন্তু ওর ভেতরটা যেন ভালোবাসায় ভরে উঠতে থাকে... ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘দেখে তোমার ইচ্ছা করতো না আমায় আদর করার?’
‘করতো তো... ভিষন করতো...’ উত্তর দেয় অর্নব।
‘করো নি কেন? কেন আসো নি আরো আগে আমার কাছে... আদরে আদরে ভাসিয়ে দাও নি কেন আমায়?’ মুখ ঘসে পৃথা অর্নবের ঘাড়ে... দুহাত দিয়ে খামচে ধরে অর্নবের পীঠটাকে...
‘তুমি ভয় পেতে, তখন কাছে এলে, তাই তো দূর থেকেই তোমায় দেখতাম... আর...’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব...
‘আর?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা... ‘আর কি?’
‘আর কিছু না...’ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় অর্নব।
‘আমি জানি...’ ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা...
‘জানো? কি জানো?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে অর্নব।
‘আমাকে মাস্টার্বেট করতে দেখে তুমিও নিজেকে ঠিক রাখতে পারতে না... তুমিও মাস্টার্বেট করতে... ঠিক কি না? বলো?’ পৃথার দুটো চোখ চকচক করে ওঠে দুষ্টুমীতে।
‘ক...কে বললো সেটা?’ এবার অপ্রস্তুত হবার পালা অর্নবের।
‘আমি জানি মশাই... তোমার সামনে একটা মেয়ে মাস্টার্বেট করবে, আর তুমি কি সাধু পুরুষ? দেখেও চুপ করে তাকিয়ে থাকবে? হুম? আমি সব বুঝি... বুঝেছ?’ পৃথার ঠোঁটে দুষ্টুমীর হাসি মেখে থাকে।
‘পাজি মেয়ে... সব বোঝে...’ হাসতে হাসতে পৃথার পীঠের ওপর থেকে হাতটা নামিয়ে ওর নরম পাছার দাবনাদুটোকে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে চটকে দেয় একবার... পরক্ষনেই হাতটাকে সরিয়ে নেয় সেখান থেকে...
‘উমমম... টেপো না... চটকাও না ওখানটায়...’ অর্নবের ঘাড়ের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা।
‘কথায় কথায় অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে... সে খেয়াল আছে... এখন এই সব করলে হবে? এক্ষুনি হয়তো কাজল এসে যাবে... নাও, চলো ওঠো...’ বলে তাড়া দেয় অর্নব।
‘না... আগে ওখানটায় টেপো... চটকে দাও ভালো করে একবার, তারপর ছাড়বো তোমায়...’ নিজেকে অর্নবের কাছে আরো ঘন করে এগিয়ে ধরে বলে পৃথা।
‘কিন্তু...’ ফের ইতস্থত করে অর্নব...
ধৈর্য হারায় পৃথা... ঝট করে অর্নবের গলা ছেড়ে পেছনে নিয়ে গিয়ে অর্নবের হাতদুটোকে ধরে, তারপর নিজের গোল গোল পাছার দাবনার ওপরে চেপে ধরে বলে, ‘এই নাও... তোমার হাতের মধ্যে তুলে দিলাম... এবার টিপে টিপে চটকাও এই দুটোকে... আরো নরম করে দাও চটকে...’
হাতের মধ্যে ধরা নরম তাল দুটোর স্পর্শে নিজের পৌরষে কাঁপন ধরে অর্নবের... আলতো করে চাপ দেয় পাছার নরম দাবনায়... ফের হাত তুলে অর্নবকে শক্ত করে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে পৃথা, ‘এত আলতো করে নয়... আরো জোরে... চেপে ধরো...’
এবার আর বলতে হয় না অর্নবকে... হাতের মধ্যে তুলে দেওয়া পৃথার ওই নরম নিতম্বের তালদুটোকে শক্ত করে খামচে ধরে... চটকে ধরে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে... আর সেই সাথে খুজে নেয় পৃথার ঠোটটাকে... নিজের ঠোট চেপে ধরে সেখানে... চুষতে থাকে পৃথার পাতলা ঠোঁটের ওপরেরটাকে নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে... ‘উমমমম...মমমম...’ অর্নবের মুখের মধ্যে গুনগুনায় পৃথা পরম আবেশে... সে জানে, আজ আর কিছুই হবে না শরীর খারাপের কারনে, তবুও... যতটা আদর পাওয়া যায়, সেটাই নিংড়ে বের করে নিতে চায় অর্নবের থেকে... ভরে নিতে চায় তার শরীরের মধ্যে...
ক্রমশ...