13-07-2019, 12:37 PM
পার্টঃঃ১৯
কেবিনের বাইরে এলাম। মিত্রা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। অনাদিরা সব কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। কেমন আছেন স্যার ? এখন ঠিক আছে। যা ভেতরে গিয়ে দেখে আয়। পায়ে পায়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে নার্সিংহোমের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। চিকনাকে বললাম একটা সিগারেট বার কর। চিকনা একটা সিগারেট দিলো। কোন কথা বললো না। অনাদিরা কাকাকে দেখে চলে এলো।
বাসু অনাদি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। মিত্রা আমার পাশেই আছে।
অনাদি।
বল।
আমর একটা উপকার করতে হবে।
কি বল।
আমায় আজ কলকাতা যেতে হবে। একটা জরুরী দরকার আছে।
এই সময়!
হ্যাঁ। মিত্রা খবরটা নিয়ে এসেছে। কিছু করার নেই।
নীপা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে জানি না।
অনাদি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ম্যাডাম অনি কয়েকদিন পরে গেলে হোত না।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁরিয়ে আছে।
অনি আমাদের বল ভরসা। ও থাকলে কোন কঠিন কাজ আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হয় না।
মিত্রা মাথা নীচু করে আছে, ওরা জানে না, মিত্রারও একি অবস্থা।
বাসু বললো, ওতো আজ গিয়ে কাল আবার ফিরে আসছে। আমরা...।
চিকনা আর সঞ্জয় বললো কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার আমরা পালা করে....।
সেটা নিয়ে ভাবছি না। যদি কোন প্রবলেম হয়।
গোরার গাড়িটা রেখে দে। এখানে নিয়ে চলে আসবি। আমি বললাম।
মিত্রা বললো আমার গাড়িটা রেখে যাবো।
অনাদি বলে উঠলো পাগল নাকি, আপনার গাড়ি পাহারা দেওয়ার আবার লোক ঠিক করতে হবে। গাঁইয়া ভূত সব।
ভানু বললো, ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
নীপা বললো, অনাদিদা দাদা যখন বলছে যাক না। আমি তো আছি।
হ্যাঁ, তোকেই তো সব করতে হবে। আমরা সব পাহারাদার।
ওরা সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। অনাদি বললো।
স্যারকে বলেছিস।
বলিনি। বলবো।
স্যার তোকে ছাড়া এই মুহূর্তে কারুর কথা শুনবে না।
সব বুঝলাম কিন্তু আমি না গেলে হবে না।
নীপা বললো, তুমি যাও অনিদা। আমি বলছি। সব সামলে নেবো তুমি দেখবে। নাহলে তোমার নাম করে ভয় দেখাবো, তাতেই কাজ হয়ে যাবে।
সবাই নীপার কথায় হো হো করে হসে ফেললো।
একটু বেলায় অনেকেই এসেছিলেন, এখানকার জেলাসভাধিপত এসপি ডিএম। অমিতাভদার সঙ্গে দেখা করতে। তারাও কাকাকে দেখে গেলেন। আমার সঙ্গেও পরিচয় হলো। কিন্তু আমি যে এখানকার ছেলে তারা এই প্রথম জানলেন।
ভেবেছিলাম কাকা আমাকে কিছু বলবেন। দেখলাম কাকাই আমাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যেতে বললেন। সুরমাসি কাকীমা একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন। কাকা ধমকে উঠলেন। আমিতো ঠিক আছি। ওর কি কোন কাজ কর্ম নেই। খালি এখানে বসে থাকবে। কেউ আর কিছু বললো না।
বেড়তে বেড়তে বিকেল হয়ে গেলো। কাকাকে এবার কাউকে ধরতে হোলো না। কাক নিজে নিজেই এলেন। মনের দিক থেকে কাকাকে অনেক বেশি ফিট মনে হলো। ওদের ছেড়ে দিয়ে আমরা বেরোলাম। আমি মিত্রার গাড়িতে উঠলাম। অমিতাভদারা নিজেদের গাড়িতে।
কলকাতায় পৌঁছলাম সাতটা নাগাদ। দাদার বাড়িতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে মিত্রার রিকোয়েস্টে ওদের বাড়িতে এলাম। মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত কিছুই ভালো লাগছেনা। বার বার কাকার মুখটা মনে পরে যাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে শয়নে স্বপনে কাকার মুখটা একবারও মনে পরে নি। তাহলে হঠাত আজ কেন বার বার মনে পরে যাচ্ছে।
তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। আজও সেই দিনটার কথা মনে পরে যায়। বর্ষার সময় ঠান্ডা লেগে ধূম জ্বর। গ্রামে দখন অমূল্যদাদু ছিলেন একমাত্র ডাক্তার। কাকা অমূল্যদাদুকে কাকা বলে ডাকতেন। আবঝা আবঝা কাকার কথা মুখটা মনে পরে যায়। কাকা দাদুকে বলেছিলেন। ওর বাপগেছে মা গেছে যে কোন স্বর্তে ওকে তোমায় বাঁচিয়ে তুলতে হবে। আমি ওকে কিছুতেই হারাতে চাই না। অমূল্যদাদু আমাদের বাড়িতে পরপর তিনদিন ছিলেন। আমার মাথায় ধারা দেওয়া হয়েছিল জ্বর নামানর জন্য। গ্রাম শুদ্ধ উপচে পরেছিল। সেইকটা দিন। যে যেমন ভাবে পেরেছিল কাকাকে এসে সাহায্য করেছিল। আমি যেন গ্রামের সম্পদ কাকার একলার নয়।
জ্বর সেরে যাবার পর। কাক আমাকে নিয়ে পীরবাবার থানে নিয়ে গেলেন। আমাকে বললেন প্রণাম কর। তোর বাপ এখানে পীরবাবাকে দেখেছিলেন। তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন, বীরকটার শিব মন্দিরে। গ্রামের লোকেরা বলে বুড়োশিবের থান। এর মাটি গায়ে মাখলে নাকি শরীর খারাপ হয় না। কাকা আমাকে মাটি মাখিয়ে মন্দিরের সামনে ঝিলের জলে স্নান করিয়ে পূজা দিলেন। সত্যি বলতে কি তারপর থেকে আমার সেই ভাবে কোন শরীর খারাপ করেনি।
সেই দিন প্রথম কাকার চোখে জ্বল দেখেছিলাম। আমার বাবার নাম ধরে বার বার বলেছিলেন একি গুরুদায়িত্ব তুই আমাকে দিয়ে গেলি। বাবা শিব আমি অনিকে তেমার পায়ে রাখলাম। আজ থেকে ওর বাঁচামরা তোমার ওপর নির্ভর। তুমি যা ভাল বুঝবে করবে। আমার ছোট্ট শরীরটাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাকা হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন।
কিরে এখনো বসে আছিস ? বাথরুমে যাবিনা।
সম্বিত ফিরে পেলাম।
বাথরুমে গেলাম। ফ্রেস হয়ে, দুজনে রাতের খাওয়া খেয়ে নিলাম। মিত্রা আসার সময় বিরিয়ানী কিনেছিল। আমি বারন করলাম। বললো এখন গিয়ে আর করতে ভাল লাগবে না। বরং চল কিনে নিয়ে যাই খেয়ে নেবো। তাই করলাম। বিরিয়ানী আর বাটার চিকেন ফ্রাই। খাওয়ার পর দেখলাম শরীর আর বইছে না। মিত্রার ঘরে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছিলাম। কটা বাজে বারটা হবে। এরি মধ্যে বার কয়েক নীপাকে ফোন করে খবর নিয়েছি। কাকার সঙ্গেও কথা বলেছি। নীপার একটু অভিমান হয়েছে। কি আর করা যাবে। মিত্রা এলো আরও আধঘন্টা পরে। বুঝলি সারাদিন ছিলাম না, একেবারে সব লন্ডভন্ড করে রেখেছিলো। লোক দিয়ে কাজ করানো যে কি ঝকমারি তোকে কি বলবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম। সকালের মিত্রা আর এখনকার মিত্রার মধ্যে আকাশ পাতল পার্থক্য। ফিনফিনে একটা ব্ল্যাক কাপরের নাইট গাউন পরেছে। পরা না পরা দুই সমান। আমি ওর দিকে তাকালাম। ও আমার পাশে এসে বসলো।
কি দেখছিস।
বিবিসি সিএনএন অল্টারনেট করে দেখছি। আমার বিছানা রেডি।
তোর ! কেনো!
কোথায় শোব ?
এখানে, আপত্তি আছে।
ওর দিকে তাকালাম।
ওসব নিয়ে কিছু ভাবিস না।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
তোর সোফাটা বেশ আরামদায়ক। তুই সোফার ওপাশে একটু হেলান দিয়ে বোসতো।
কেনো ?
বোসনা।
মিত্রা সরে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। আমি ওর নরম কোলে মাথা দিয়ে শুলাম।
এই জন্য, বদমাশ।
মাথাটা একটু টেপ, ভীষণ যন্ত্রনা করছে।
পারবনা যা, আমি কি তোর বউ।
তোর সমস্ত দায়িত্ব আমাকে অর্পন করা হয়েছে।
মিত্রা একবার আমার দিকে তাকালো, পারবি আমার ভার বইতে।
দিয়েই দেখ না।
দিয়েতো দিয়েছি, তুই নিচ্ছিস কোথায় ?
নেবো নেবো, এত তাড়াহুড়ো করছিস কেনো।
আমারতো বেলা বয়ে যায়।
না না ধরে রাখার চেষ্টা কর।
একি ধরে রাখা যায়।
যাবে যাবে, সময়ে সব হয়। মিত্রা মাথায় বিলি কাটতে আরম্ভ করল, আমার চোখ বুজে আসছে।
একটা কথা বলবো।
বল।
রাগ করবি না।
না।
সারাদিন খুব স্টেইন গেলো, একটু ড্রিংক করবি।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
আমি তোকে রিকোয়েস্ট করবো। দেখবি উপকার পাবি।
আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম।
আমি জানি তুই এসব পছন্দ করিস না। তবু তোকে বলছি। আর কোনদিন বলব না।
ওর বলার মধ্যে এমন একটা জোর ছিল, আমি না বলতে পারলাম না।
ও হেসে ফললো। মুহূর্তের মধ্যে সব রেডি করে ফেললো।
বেশি দিস না।
মাত্র দু’পেগ।
তুই জানিস, আমি এর বিন্দু বিসর্গ বুঝি না।
ঠিক আছে, অসুবিধে হলে বলবি।
মুহূর্তের মধ্যে ও সব রেডি করে ফেললো, জানিস বুবুন, তুই যে দিন শেষ এসেছিলি, সেইদিন থেকে আমি আর ছুঁইনি।
তাহলে আজ খাচ্ছিস কেনো ?
ইচ্ছে করছে।
ঠিক আছে, আর নয়।
প্রমিস করছি যদি খাই কখনো একমাত্র তোর সঙ্গেই খাবো। একা কোনদিন খাব না।
ও গ্লাসে করে সাজিয়ে দিল, দুজনে গ্লাসে গ্লাস ঠেকিয়ে শিপ করলাম। কেমন যেন একটা লাগল, কোন দিন খইনি। কেমন ওষুধ ওষুধ গন্ধ। কিন্তু বেশ মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার এক পেগ শেষ হতে না হতেই, ওর দু’পেগ খাওয়া হয়ে গেলো।
কিরে এতো তাড়া তাড়ি। আর খাবি না।
আর একপেগ। প্লিজ।
মিত্রা সোফার অপজিট থেকে এসে আমার কাছ ঘেঁসে বসলো। পাখাটা একটু চালাই।
আস্তে করে।
মিত্রা ফিরে এলো। একটু টাল খেলো যেনো। আমি উঠতে যাচ্ছিলাম। ও হাত দেখিয়ে বসতে বললো। এমন ভাবে বসলো যেন আমার কোলে বসে পরবে। দুহাত দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলো।
জানিস বুবুন, আমার হাজবেন্ডটা একটা বাস্টার্ড।
চমকে উঠলাম। আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম। মিত্রার চোখ অন্য কথা বলছে। আমার কোন সেনসেসন এখনো হয় নি।
ও আর একটা মেয়েকে নিয়ে থাকে, আমি ওর কেপ্ট।
থামবি।
মিত্রা হাসছে। ভাবছিস আমি মাতাল। না। ও তোর আমার ব্যাপারে সব জানে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। সেই জন্য তোকে সেদিন অমনি ভাবে সব কথা বলেছে। তোর শেষ হয়ে গেছে। দাঁরা আর একটা পেগ তোকে দিই।
না।
প্লিজ তুই না করিস না। মাত্র একটা। তুই একটা আমি একটা। ব্যাশ।
আমি হার মনলাম। মিত্রার এরিমধ্যে তিনটে পেগ খাওয়া হয়ে গেছে।
ও কি ভাবে, ওর দয়ায় আমি বেঁচে আছি। ওর যা কিছু প্রতিপত্তি দেখছিস সব আমার বাবর জন্য। ওকে বিয়ে করে তোকে ভোলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। তবু মানিয়ে চলার চেষ্টা করলাম। ছয় মাসের মধ্যে সব জানতে পারলাম। বাবাকে সব জানালাম। বাবা বললেন বল মা তুই কি করতে চাস, আমি তোর কথায় না বলবো না। সেই সময় তোকে অনেক খুঁজেছি পাই নি। আমার বাবা-মা খালি আমার কথা ভেব ভেবে মারা গেলেন। এক মাত্র মেয়ের একি হাল। তবু বাবার অনেক পয়সা ছিল তাই বেঁচে গেলাম। তারপর পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে তৈরি করে দিয়েছে। বাবা তোকে খুব ভালবাসতেন। মারা যাবার আগে আমায় বলেছিলেন, অনি যদি তোর কাছে কোনদিন ফিরে আসে ওকে ফিরিয়ে দিস না। বাবা তোকে চিনেছিলেন। মা নয়। মিত্রা থামলো। গ্লাসটা মুখে তুলে নিল। এক নিঃশ্বাসে জলের মতো ঢক ঢক করে বেশ কিছুটা খেলো। তারপর গ্লাসটা টেবিলে ওপর ঠক করে নামিয়ে রাখলো।
এল আর ডিসগা....।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রখলো। কাঁধটা ভিঁজে ভিঁজে ঠেকলো, মিত্রা কাঁদছে। ওর মাথাটা আমার কোলে রাখলাম, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
আমার এখন দু’চার পেগে কিছু হয় না বুঝলি বুবুন। আকন্ঠ খেলে তবে তৃপ্তি পাই।
আমার মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। আমি ওকে ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গেলাম। বালিশটা ওর মাথায় দিয়ে শুইয়ে দিলাম। ওর পাশে বসলাম। এই মুহূর্তে মদ খাওয়ার কোন ফিলিংস আমার মধ্যে নেই। আমি মিত্রার পাশে আধ শোওয়া অবস্থায়। মিত্রা আমার আরো কাছে এগিয়ে এলো। বুকের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বললো, একটু আদর করবি।
ওর চোখ ভাসা ভাসা, আমি ওর কপালে চুমু খেলাম, ও ঠোঁট দেখিয়ে ইশারা করছে।
থাক না আজ।
বিশ্বাস কর বুবুন আমি মাতাল হই নি। তাকে দেখলেই খালি সেক্স করতে ইচ্ছে করে।
এএ নেশাটা তোকে ত্যাগ করতে হবে। মাথায় রাখবি আমিও একটা মানুষ।
জানি। মন মানে না।
মানাতে হবে। তোকে বিজনেস ম্যাগনেট হতে হবে।
ওর জন্য তুই আছিস।
আমি কতোক্ষণ।
তুই আমাকে ছেরে যাবি না। আমার হাত দুটো চেপে ধরলো।
কেনো এসব কথা চিন্তা করছিস।
অনেকদিন পর আমার ভালবাসাকে কাছে পেয়েছি।
আমিতো তোর কাছেই আছি।
আমি জানি। আমি যেমন তুইও ঠিক তেমনি।
কিরকম।
আমাদের মনের মধ্যে একটা যাযাবর লুকিয়ে আছে।
সেটাতো ভাল।
ঠিক।
তার খারাপ দিকও আছে।
শোধরাতে হবে।
তুই পাশে থাকলে হয়তো হয়ে যাবে।
সেতো আমি জানি।
ও আমার ডান হাতটা ধরে বুকে রাখলো। জানিস বিগত আট বছরে ওর সঙ্গে আট মাস ঘর করিনি। এই বাড়িটা এক সময় আমার মামার বাড়ি ছিল। মামাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে রিপেয়ার করে নিয়েছি। বাবার খুব সখ ছিলো। এই রকম একটা বাড়িতে থাকবে।
ছিলেন।
হ্যাঁ, শেষের কয়েকটা দিন।
আর ওই বাড়ি।
জ্যাঠারা নিয়েছে।
নিয়েছে না দিয়ে দিয়েছিস।
ওই হলো।
মিত্রা আমার মাথাটা টেনে নিয়ে জোর করে ওর ঠোঁটে রাখলো, উষ্ণ ঠোঁটের ছোওয়ায় আমার গাছের পাতায় বাতাস লাগলো।
তোর ঠোঁটটা ভীষণ মিষ্টি মনে হয় সর্বক্ষণ তোর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে শুয়ে থাকি।
তোর ঠোঁটটাও কম কিসে।
মিত্রা হাসলো। ছেলেদের ঠোঁট এরকম হয় আমার জানা ছিল না।
জেনে নিলি।
এটা অনেকদিন আগে জানা উচিত ছিল, সেই কলেজ লাইফে।
সেই দিন গুলোর কথা মনে পরলে হাসি পায়। একটা গ্রামের ছেলে শহুরে আধুনিকার পাশে। অনেক দিন ও সুযোগ দিয়েছে আমাকে কিন্তু আমি ওর দেহ স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। মনের মধ্যে একটা দ্বৈত্বতা খেলা করতো সব সময়। না আমি গ্রাম থেকে এসেছি। আমায় কিছু করতে হবে। সবুজ মনে তখন অনেক সোনালি স্বপ্ন।
তুই পাঞ্জাবীটা খোল আমি নাইট গাউনটা খুলে নিই। মিত্রা উঠে বসলো। এখন ওর মধ্যে কোন সঙ্কোচ নেই যেন আমরা স্বামী-স্ত্রী।
পাখাটা বন্ধ করে দে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।
আমি উঠে গিয়ে পাখাটা বন্ধ করে দিলাম। একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ম ম করছে। বিছানায় উঠে এলাম। ওর পাশে শুলাম। মিত্রা আমার বুকে।
মিত্রা চেয়ে আছে আমার দিকে। তোর শরীরটা ভীষণ চার্মিং।
সব মেয়েরাই তাই বলে।
মিত্রা এক ঝটকায় উঠে বসলো। আর কারা কারা বলে। বল।
সে কি মনে আছে, যাদের সান্নিধ্যে আসি তারাই বলে।
নাম কি বল। তাদের ফোন করে আমি বলে দেবো, আমার জিনিষে তারা যেন ভাগ না বসায়।
হাসলাম।
ভাগ বসালে কি হয়েছে। খোয়ে যাবে, না কমে যাবে ?
ওরে শয়তান, গাছেরও খাবে আবার তলারও কুরোবে।
গাছ আর তলা যদি দুই পাওয়া যায় খতি কি।
মিত্রা হঠাত গম্ভীর হয়ে গেলো। ঠিকইতো, আমার কি আছে যা দিয়ে তোকে ধরে রাখবো। যা পাওয়া যায় তাই লাভ।
মিত্রার পুরো শরীরটা আমার শরীরের ওপর। আমার বুকটা ওর বালিশ। আমার ঘাড়ের তলা দিয়ে দুহাতে আমাকে পেঁচিয়ে ধরে আছে।
কিরে ঘুমিয়ে পরলি।
না। তোর বুকের লাব ডুব শব্দ শুনছি।
তোকে এতো দিন খুব মিস করেছি।
মিত্রা মিত্রার মতো কথা বলেযাচ্ছে। আমি ওর কিছু কথার উত্তর দিচ্ছি। বাকিটা দিচ্ছি না। মাঝে মাঝে ও বিরক্ত হচ্ছে। আমি নিশ্চুপ।
কতোক্ষণ দুজনে নিস্তব্ধ হয়ে শুয়েছিলাম জানি না। খালি দুজনে দুজনের নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনেছি। একে অপরের বুকের লাবডুব শব্দ শুনছি। মিত্রার নরম হাত আমার চুলে বিলি কাটছে। মাথার ঝিম ঝিমানি ভাবটা এখন সম্পূর্ণ অদৃশ্য।
কিরে এই ভাবে শুয়ে থাকবি।
আর একটু।
উঠবি না।
না।
কাল অনেক কাজ।
এই মুহূর্তটুকু আর চেষ্টা করলেও পাবো না।
তোর ভালো লাগছে।
হ্যাঁ।
ঘেমে গেছিস।
স্বাভাবিক। আমি কষ্ট করলাম। তুই এনজয় করলি।
শয়তান। মিত্রা আমার নাকটা টিপে দিলো। ওঠ।
কেনো।
ওই যে বললি কাল সকালে অনেক কাজ।
আমি উঠে পরলাম।
সকালে মিত্রার ডাকে ঘুম ভাঙলো। সেই এক চিত্র। মিত্রা ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়েছে। সেই লালপাড় মটকার কাপড়। মাথায় একগাদা সিঁদুর। মা মা। ঘরের নিপাট গৃহিণী। আমি উঠে রেডি হলাম। দুজনে সেই লুচি বাটিচচ্চরি খেয়ে বেরিয়ে পরলাম।
হিমাংশুর অফিসে এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। ও বললো একবার ভালকরে সব দেখে না। ডিডটা ভালকরে পরে নিলাম। ওখান থেকে রেজিষ্ট্রি অফিস। অমিতাভদা মল্লিকদা মিত্রা আমার হয়ে সাক্ষী দিলেন। আরো অনেকে ছিল। খালি মিঃ ব্যানার্জী ছিলেন না। মিত্রাকে ওই মুহূর্তে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে নি। ওখানে একঘন্টার কাজ ছিল। কাজ শেষে হিমাংশুকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললাম, আমাকে একটা আছোলা বাঁশ দিলি। বেশ চলছিল তুই থামিয়ে দিলি। হিমাংশু হেসে বললো, সব ভালো যার শেষ ভালো। তোকে মিত্রার সঙ্গে জুড়ে দিলাম। নাহলে মিত্রার একার পক্ষে কনট্রোল করা সম্ভব হোত না।
ওর দিকে তাকালাম। ও আমার মিত্রার সম্বন্ধে কোন আঁচ করতে পেরেছে কিনা। ওর চোখ সেই কথা বলছে না।
এরপর আমার করনীয় কি আছে।
খাতাপত্র গুলো সাজিয়ে নিই। আর একজন যে ডিরেক্টর আছে, তাকে জানাতে হবে। এখন আমার অনেক কাজ।
তোর কাজ কবে শেষ হবে।
কেবিনের বাইরে এলাম। মিত্রা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। অনাদিরা সব কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। কেমন আছেন স্যার ? এখন ঠিক আছে। যা ভেতরে গিয়ে দেখে আয়। পায়ে পায়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে নার্সিংহোমের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। চিকনাকে বললাম একটা সিগারেট বার কর। চিকনা একটা সিগারেট দিলো। কোন কথা বললো না। অনাদিরা কাকাকে দেখে চলে এলো।
বাসু অনাদি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। মিত্রা আমার পাশেই আছে।
অনাদি।
বল।
আমর একটা উপকার করতে হবে।
কি বল।
আমায় আজ কলকাতা যেতে হবে। একটা জরুরী দরকার আছে।
এই সময়!
হ্যাঁ। মিত্রা খবরটা নিয়ে এসেছে। কিছু করার নেই।
নীপা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে জানি না।
অনাদি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ম্যাডাম অনি কয়েকদিন পরে গেলে হোত না।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁরিয়ে আছে।
অনি আমাদের বল ভরসা। ও থাকলে কোন কঠিন কাজ আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হয় না।
মিত্রা মাথা নীচু করে আছে, ওরা জানে না, মিত্রারও একি অবস্থা।
বাসু বললো, ওতো আজ গিয়ে কাল আবার ফিরে আসছে। আমরা...।
চিকনা আর সঞ্জয় বললো কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার আমরা পালা করে....।
সেটা নিয়ে ভাবছি না। যদি কোন প্রবলেম হয়।
গোরার গাড়িটা রেখে দে। এখানে নিয়ে চলে আসবি। আমি বললাম।
মিত্রা বললো আমার গাড়িটা রেখে যাবো।
অনাদি বলে উঠলো পাগল নাকি, আপনার গাড়ি পাহারা দেওয়ার আবার লোক ঠিক করতে হবে। গাঁইয়া ভূত সব।
ভানু বললো, ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
নীপা বললো, অনাদিদা দাদা যখন বলছে যাক না। আমি তো আছি।
হ্যাঁ, তোকেই তো সব করতে হবে। আমরা সব পাহারাদার।
ওরা সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। অনাদি বললো।
স্যারকে বলেছিস।
বলিনি। বলবো।
স্যার তোকে ছাড়া এই মুহূর্তে কারুর কথা শুনবে না।
সব বুঝলাম কিন্তু আমি না গেলে হবে না।
নীপা বললো, তুমি যাও অনিদা। আমি বলছি। সব সামলে নেবো তুমি দেখবে। নাহলে তোমার নাম করে ভয় দেখাবো, তাতেই কাজ হয়ে যাবে।
সবাই নীপার কথায় হো হো করে হসে ফেললো।
একটু বেলায় অনেকেই এসেছিলেন, এখানকার জেলাসভাধিপত এসপি ডিএম। অমিতাভদার সঙ্গে দেখা করতে। তারাও কাকাকে দেখে গেলেন। আমার সঙ্গেও পরিচয় হলো। কিন্তু আমি যে এখানকার ছেলে তারা এই প্রথম জানলেন।
ভেবেছিলাম কাকা আমাকে কিছু বলবেন। দেখলাম কাকাই আমাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যেতে বললেন। সুরমাসি কাকীমা একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন। কাকা ধমকে উঠলেন। আমিতো ঠিক আছি। ওর কি কোন কাজ কর্ম নেই। খালি এখানে বসে থাকবে। কেউ আর কিছু বললো না।
বেড়তে বেড়তে বিকেল হয়ে গেলো। কাকাকে এবার কাউকে ধরতে হোলো না। কাক নিজে নিজেই এলেন। মনের দিক থেকে কাকাকে অনেক বেশি ফিট মনে হলো। ওদের ছেড়ে দিয়ে আমরা বেরোলাম। আমি মিত্রার গাড়িতে উঠলাম। অমিতাভদারা নিজেদের গাড়িতে।
কলকাতায় পৌঁছলাম সাতটা নাগাদ। দাদার বাড়িতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে মিত্রার রিকোয়েস্টে ওদের বাড়িতে এলাম। মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত কিছুই ভালো লাগছেনা। বার বার কাকার মুখটা মনে পরে যাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে শয়নে স্বপনে কাকার মুখটা একবারও মনে পরে নি। তাহলে হঠাত আজ কেন বার বার মনে পরে যাচ্ছে।
তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। আজও সেই দিনটার কথা মনে পরে যায়। বর্ষার সময় ঠান্ডা লেগে ধূম জ্বর। গ্রামে দখন অমূল্যদাদু ছিলেন একমাত্র ডাক্তার। কাকা অমূল্যদাদুকে কাকা বলে ডাকতেন। আবঝা আবঝা কাকার কথা মুখটা মনে পরে যায়। কাকা দাদুকে বলেছিলেন। ওর বাপগেছে মা গেছে যে কোন স্বর্তে ওকে তোমায় বাঁচিয়ে তুলতে হবে। আমি ওকে কিছুতেই হারাতে চাই না। অমূল্যদাদু আমাদের বাড়িতে পরপর তিনদিন ছিলেন। আমার মাথায় ধারা দেওয়া হয়েছিল জ্বর নামানর জন্য। গ্রাম শুদ্ধ উপচে পরেছিল। সেইকটা দিন। যে যেমন ভাবে পেরেছিল কাকাকে এসে সাহায্য করেছিল। আমি যেন গ্রামের সম্পদ কাকার একলার নয়।
জ্বর সেরে যাবার পর। কাক আমাকে নিয়ে পীরবাবার থানে নিয়ে গেলেন। আমাকে বললেন প্রণাম কর। তোর বাপ এখানে পীরবাবাকে দেখেছিলেন। তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন, বীরকটার শিব মন্দিরে। গ্রামের লোকেরা বলে বুড়োশিবের থান। এর মাটি গায়ে মাখলে নাকি শরীর খারাপ হয় না। কাকা আমাকে মাটি মাখিয়ে মন্দিরের সামনে ঝিলের জলে স্নান করিয়ে পূজা দিলেন। সত্যি বলতে কি তারপর থেকে আমার সেই ভাবে কোন শরীর খারাপ করেনি।
সেই দিন প্রথম কাকার চোখে জ্বল দেখেছিলাম। আমার বাবার নাম ধরে বার বার বলেছিলেন একি গুরুদায়িত্ব তুই আমাকে দিয়ে গেলি। বাবা শিব আমি অনিকে তেমার পায়ে রাখলাম। আজ থেকে ওর বাঁচামরা তোমার ওপর নির্ভর। তুমি যা ভাল বুঝবে করবে। আমার ছোট্ট শরীরটাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাকা হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন।
কিরে এখনো বসে আছিস ? বাথরুমে যাবিনা।
সম্বিত ফিরে পেলাম।
বাথরুমে গেলাম। ফ্রেস হয়ে, দুজনে রাতের খাওয়া খেয়ে নিলাম। মিত্রা আসার সময় বিরিয়ানী কিনেছিল। আমি বারন করলাম। বললো এখন গিয়ে আর করতে ভাল লাগবে না। বরং চল কিনে নিয়ে যাই খেয়ে নেবো। তাই করলাম। বিরিয়ানী আর বাটার চিকেন ফ্রাই। খাওয়ার পর দেখলাম শরীর আর বইছে না। মিত্রার ঘরে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছিলাম। কটা বাজে বারটা হবে। এরি মধ্যে বার কয়েক নীপাকে ফোন করে খবর নিয়েছি। কাকার সঙ্গেও কথা বলেছি। নীপার একটু অভিমান হয়েছে। কি আর করা যাবে। মিত্রা এলো আরও আধঘন্টা পরে। বুঝলি সারাদিন ছিলাম না, একেবারে সব লন্ডভন্ড করে রেখেছিলো। লোক দিয়ে কাজ করানো যে কি ঝকমারি তোকে কি বলবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম। সকালের মিত্রা আর এখনকার মিত্রার মধ্যে আকাশ পাতল পার্থক্য। ফিনফিনে একটা ব্ল্যাক কাপরের নাইট গাউন পরেছে। পরা না পরা দুই সমান। আমি ওর দিকে তাকালাম। ও আমার পাশে এসে বসলো।
কি দেখছিস।
বিবিসি সিএনএন অল্টারনেট করে দেখছি। আমার বিছানা রেডি।
তোর ! কেনো!
কোথায় শোব ?
এখানে, আপত্তি আছে।
ওর দিকে তাকালাম।
ওসব নিয়ে কিছু ভাবিস না।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
তোর সোফাটা বেশ আরামদায়ক। তুই সোফার ওপাশে একটু হেলান দিয়ে বোসতো।
কেনো ?
বোসনা।
মিত্রা সরে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। আমি ওর নরম কোলে মাথা দিয়ে শুলাম।
এই জন্য, বদমাশ।
মাথাটা একটু টেপ, ভীষণ যন্ত্রনা করছে।
পারবনা যা, আমি কি তোর বউ।
তোর সমস্ত দায়িত্ব আমাকে অর্পন করা হয়েছে।
মিত্রা একবার আমার দিকে তাকালো, পারবি আমার ভার বইতে।
দিয়েই দেখ না।
দিয়েতো দিয়েছি, তুই নিচ্ছিস কোথায় ?
নেবো নেবো, এত তাড়াহুড়ো করছিস কেনো।
আমারতো বেলা বয়ে যায়।
না না ধরে রাখার চেষ্টা কর।
একি ধরে রাখা যায়।
যাবে যাবে, সময়ে সব হয়। মিত্রা মাথায় বিলি কাটতে আরম্ভ করল, আমার চোখ বুজে আসছে।
একটা কথা বলবো।
বল।
রাগ করবি না।
না।
সারাদিন খুব স্টেইন গেলো, একটু ড্রিংক করবি।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
আমি তোকে রিকোয়েস্ট করবো। দেখবি উপকার পাবি।
আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম।
আমি জানি তুই এসব পছন্দ করিস না। তবু তোকে বলছি। আর কোনদিন বলব না।
ওর বলার মধ্যে এমন একটা জোর ছিল, আমি না বলতে পারলাম না।
ও হেসে ফললো। মুহূর্তের মধ্যে সব রেডি করে ফেললো।
বেশি দিস না।
মাত্র দু’পেগ।
তুই জানিস, আমি এর বিন্দু বিসর্গ বুঝি না।
ঠিক আছে, অসুবিধে হলে বলবি।
মুহূর্তের মধ্যে ও সব রেডি করে ফেললো, জানিস বুবুন, তুই যে দিন শেষ এসেছিলি, সেইদিন থেকে আমি আর ছুঁইনি।
তাহলে আজ খাচ্ছিস কেনো ?
ইচ্ছে করছে।
ঠিক আছে, আর নয়।
প্রমিস করছি যদি খাই কখনো একমাত্র তোর সঙ্গেই খাবো। একা কোনদিন খাব না।
ও গ্লাসে করে সাজিয়ে দিল, দুজনে গ্লাসে গ্লাস ঠেকিয়ে শিপ করলাম। কেমন যেন একটা লাগল, কোন দিন খইনি। কেমন ওষুধ ওষুধ গন্ধ। কিন্তু বেশ মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার এক পেগ শেষ হতে না হতেই, ওর দু’পেগ খাওয়া হয়ে গেলো।
কিরে এতো তাড়া তাড়ি। আর খাবি না।
আর একপেগ। প্লিজ।
মিত্রা সোফার অপজিট থেকে এসে আমার কাছ ঘেঁসে বসলো। পাখাটা একটু চালাই।
আস্তে করে।
মিত্রা ফিরে এলো। একটু টাল খেলো যেনো। আমি উঠতে যাচ্ছিলাম। ও হাত দেখিয়ে বসতে বললো। এমন ভাবে বসলো যেন আমার কোলে বসে পরবে। দুহাত দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলো।
জানিস বুবুন, আমার হাজবেন্ডটা একটা বাস্টার্ড।
চমকে উঠলাম। আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম। মিত্রার চোখ অন্য কথা বলছে। আমার কোন সেনসেসন এখনো হয় নি।
ও আর একটা মেয়েকে নিয়ে থাকে, আমি ওর কেপ্ট।
থামবি।
মিত্রা হাসছে। ভাবছিস আমি মাতাল। না। ও তোর আমার ব্যাপারে সব জানে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। সেই জন্য তোকে সেদিন অমনি ভাবে সব কথা বলেছে। তোর শেষ হয়ে গেছে। দাঁরা আর একটা পেগ তোকে দিই।
না।
প্লিজ তুই না করিস না। মাত্র একটা। তুই একটা আমি একটা। ব্যাশ।
আমি হার মনলাম। মিত্রার এরিমধ্যে তিনটে পেগ খাওয়া হয়ে গেছে।
ও কি ভাবে, ওর দয়ায় আমি বেঁচে আছি। ওর যা কিছু প্রতিপত্তি দেখছিস সব আমার বাবর জন্য। ওকে বিয়ে করে তোকে ভোলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। তবু মানিয়ে চলার চেষ্টা করলাম। ছয় মাসের মধ্যে সব জানতে পারলাম। বাবাকে সব জানালাম। বাবা বললেন বল মা তুই কি করতে চাস, আমি তোর কথায় না বলবো না। সেই সময় তোকে অনেক খুঁজেছি পাই নি। আমার বাবা-মা খালি আমার কথা ভেব ভেবে মারা গেলেন। এক মাত্র মেয়ের একি হাল। তবু বাবার অনেক পয়সা ছিল তাই বেঁচে গেলাম। তারপর পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে তৈরি করে দিয়েছে। বাবা তোকে খুব ভালবাসতেন। মারা যাবার আগে আমায় বলেছিলেন, অনি যদি তোর কাছে কোনদিন ফিরে আসে ওকে ফিরিয়ে দিস না। বাবা তোকে চিনেছিলেন। মা নয়। মিত্রা থামলো। গ্লাসটা মুখে তুলে নিল। এক নিঃশ্বাসে জলের মতো ঢক ঢক করে বেশ কিছুটা খেলো। তারপর গ্লাসটা টেবিলে ওপর ঠক করে নামিয়ে রাখলো।
এল আর ডিসগা....।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রখলো। কাঁধটা ভিঁজে ভিঁজে ঠেকলো, মিত্রা কাঁদছে। ওর মাথাটা আমার কোলে রাখলাম, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
আমার এখন দু’চার পেগে কিছু হয় না বুঝলি বুবুন। আকন্ঠ খেলে তবে তৃপ্তি পাই।
আমার মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। আমি ওকে ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গেলাম। বালিশটা ওর মাথায় দিয়ে শুইয়ে দিলাম। ওর পাশে বসলাম। এই মুহূর্তে মদ খাওয়ার কোন ফিলিংস আমার মধ্যে নেই। আমি মিত্রার পাশে আধ শোওয়া অবস্থায়। মিত্রা আমার আরো কাছে এগিয়ে এলো। বুকের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বললো, একটু আদর করবি।
ওর চোখ ভাসা ভাসা, আমি ওর কপালে চুমু খেলাম, ও ঠোঁট দেখিয়ে ইশারা করছে।
থাক না আজ।
বিশ্বাস কর বুবুন আমি মাতাল হই নি। তাকে দেখলেই খালি সেক্স করতে ইচ্ছে করে।
এএ নেশাটা তোকে ত্যাগ করতে হবে। মাথায় রাখবি আমিও একটা মানুষ।
জানি। মন মানে না।
মানাতে হবে। তোকে বিজনেস ম্যাগনেট হতে হবে।
ওর জন্য তুই আছিস।
আমি কতোক্ষণ।
তুই আমাকে ছেরে যাবি না। আমার হাত দুটো চেপে ধরলো।
কেনো এসব কথা চিন্তা করছিস।
অনেকদিন পর আমার ভালবাসাকে কাছে পেয়েছি।
আমিতো তোর কাছেই আছি।
আমি জানি। আমি যেমন তুইও ঠিক তেমনি।
কিরকম।
আমাদের মনের মধ্যে একটা যাযাবর লুকিয়ে আছে।
সেটাতো ভাল।
ঠিক।
তার খারাপ দিকও আছে।
শোধরাতে হবে।
তুই পাশে থাকলে হয়তো হয়ে যাবে।
সেতো আমি জানি।
ও আমার ডান হাতটা ধরে বুকে রাখলো। জানিস বিগত আট বছরে ওর সঙ্গে আট মাস ঘর করিনি। এই বাড়িটা এক সময় আমার মামার বাড়ি ছিল। মামাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে রিপেয়ার করে নিয়েছি। বাবার খুব সখ ছিলো। এই রকম একটা বাড়িতে থাকবে।
ছিলেন।
হ্যাঁ, শেষের কয়েকটা দিন।
আর ওই বাড়ি।
জ্যাঠারা নিয়েছে।
নিয়েছে না দিয়ে দিয়েছিস।
ওই হলো।
মিত্রা আমার মাথাটা টেনে নিয়ে জোর করে ওর ঠোঁটে রাখলো, উষ্ণ ঠোঁটের ছোওয়ায় আমার গাছের পাতায় বাতাস লাগলো।
তোর ঠোঁটটা ভীষণ মিষ্টি মনে হয় সর্বক্ষণ তোর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে শুয়ে থাকি।
তোর ঠোঁটটাও কম কিসে।
মিত্রা হাসলো। ছেলেদের ঠোঁট এরকম হয় আমার জানা ছিল না।
জেনে নিলি।
এটা অনেকদিন আগে জানা উচিত ছিল, সেই কলেজ লাইফে।
সেই দিন গুলোর কথা মনে পরলে হাসি পায়। একটা গ্রামের ছেলে শহুরে আধুনিকার পাশে। অনেক দিন ও সুযোগ দিয়েছে আমাকে কিন্তু আমি ওর দেহ স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। মনের মধ্যে একটা দ্বৈত্বতা খেলা করতো সব সময়। না আমি গ্রাম থেকে এসেছি। আমায় কিছু করতে হবে। সবুজ মনে তখন অনেক সোনালি স্বপ্ন।
তুই পাঞ্জাবীটা খোল আমি নাইট গাউনটা খুলে নিই। মিত্রা উঠে বসলো। এখন ওর মধ্যে কোন সঙ্কোচ নেই যেন আমরা স্বামী-স্ত্রী।
পাখাটা বন্ধ করে দে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।
আমি উঠে গিয়ে পাখাটা বন্ধ করে দিলাম। একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ম ম করছে। বিছানায় উঠে এলাম। ওর পাশে শুলাম। মিত্রা আমার বুকে।
মিত্রা চেয়ে আছে আমার দিকে। তোর শরীরটা ভীষণ চার্মিং।
সব মেয়েরাই তাই বলে।
মিত্রা এক ঝটকায় উঠে বসলো। আর কারা কারা বলে। বল।
সে কি মনে আছে, যাদের সান্নিধ্যে আসি তারাই বলে।
নাম কি বল। তাদের ফোন করে আমি বলে দেবো, আমার জিনিষে তারা যেন ভাগ না বসায়।
হাসলাম।
ভাগ বসালে কি হয়েছে। খোয়ে যাবে, না কমে যাবে ?
ওরে শয়তান, গাছেরও খাবে আবার তলারও কুরোবে।
গাছ আর তলা যদি দুই পাওয়া যায় খতি কি।
মিত্রা হঠাত গম্ভীর হয়ে গেলো। ঠিকইতো, আমার কি আছে যা দিয়ে তোকে ধরে রাখবো। যা পাওয়া যায় তাই লাভ।
মিত্রার পুরো শরীরটা আমার শরীরের ওপর। আমার বুকটা ওর বালিশ। আমার ঘাড়ের তলা দিয়ে দুহাতে আমাকে পেঁচিয়ে ধরে আছে।
কিরে ঘুমিয়ে পরলি।
না। তোর বুকের লাব ডুব শব্দ শুনছি।
তোকে এতো দিন খুব মিস করেছি।
মিত্রা মিত্রার মতো কথা বলেযাচ্ছে। আমি ওর কিছু কথার উত্তর দিচ্ছি। বাকিটা দিচ্ছি না। মাঝে মাঝে ও বিরক্ত হচ্ছে। আমি নিশ্চুপ।
কতোক্ষণ দুজনে নিস্তব্ধ হয়ে শুয়েছিলাম জানি না। খালি দুজনে দুজনের নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনেছি। একে অপরের বুকের লাবডুব শব্দ শুনছি। মিত্রার নরম হাত আমার চুলে বিলি কাটছে। মাথার ঝিম ঝিমানি ভাবটা এখন সম্পূর্ণ অদৃশ্য।
কিরে এই ভাবে শুয়ে থাকবি।
আর একটু।
উঠবি না।
না।
কাল অনেক কাজ।
এই মুহূর্তটুকু আর চেষ্টা করলেও পাবো না।
তোর ভালো লাগছে।
হ্যাঁ।
ঘেমে গেছিস।
স্বাভাবিক। আমি কষ্ট করলাম। তুই এনজয় করলি।
শয়তান। মিত্রা আমার নাকটা টিপে দিলো। ওঠ।
কেনো।
ওই যে বললি কাল সকালে অনেক কাজ।
আমি উঠে পরলাম।
সকালে মিত্রার ডাকে ঘুম ভাঙলো। সেই এক চিত্র। মিত্রা ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়েছে। সেই লালপাড় মটকার কাপড়। মাথায় একগাদা সিঁদুর। মা মা। ঘরের নিপাট গৃহিণী। আমি উঠে রেডি হলাম। দুজনে সেই লুচি বাটিচচ্চরি খেয়ে বেরিয়ে পরলাম।
হিমাংশুর অফিসে এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। ও বললো একবার ভালকরে সব দেখে না। ডিডটা ভালকরে পরে নিলাম। ওখান থেকে রেজিষ্ট্রি অফিস। অমিতাভদা মল্লিকদা মিত্রা আমার হয়ে সাক্ষী দিলেন। আরো অনেকে ছিল। খালি মিঃ ব্যানার্জী ছিলেন না। মিত্রাকে ওই মুহূর্তে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে নি। ওখানে একঘন্টার কাজ ছিল। কাজ শেষে হিমাংশুকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললাম, আমাকে একটা আছোলা বাঁশ দিলি। বেশ চলছিল তুই থামিয়ে দিলি। হিমাংশু হেসে বললো, সব ভালো যার শেষ ভালো। তোকে মিত্রার সঙ্গে জুড়ে দিলাম। নাহলে মিত্রার একার পক্ষে কনট্রোল করা সম্ভব হোত না।
ওর দিকে তাকালাম। ও আমার মিত্রার সম্বন্ধে কোন আঁচ করতে পেরেছে কিনা। ওর চোখ সেই কথা বলছে না।
এরপর আমার করনীয় কি আছে।
খাতাপত্র গুলো সাজিয়ে নিই। আর একজন যে ডিরেক্টর আছে, তাকে জানাতে হবে। এখন আমার অনেক কাজ।
তোর কাজ কবে শেষ হবে।