13-07-2019, 12:36 PM
পার্টঃঃ ১৮
হ্যাঁ।
করলে কখন।
মিত্রা আর ছোট করেছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা নীপার হাত ধরেছে শক্ত করে।
তুই বিশ্বাস কর....।
ঠিক আছে আমি ওদের একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি। তোমরা ওপরে যাও।
আচ্ছা।
দাদা গেলেন কোথায়।
ওইতো রিসেপসনে বসে আছে। মিত্রা বললো।
ওদের ডেকে নিয়ে যাও।
মল্লিকদা দাদা রিসেপসনে বসে আছেন। দাদা কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। আমি কাছে যেতে বললো, একটু ধর, হ্যাঁ বল।
কি খাবে।
একটু চা বিস্কুট।
বড়মা খাবার নিয়ে এসেছেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ কালকে ওরা কিসব করছিল। তুই খাবি না।
গ্রামের ছেলে গুলো এসেছে, ওদের একটু দেখে আসি। তুমি ওপরে যাও ওরা গেছে।
যা তাহলে।
একটু মিষ্টি পাঠিয়ে দিই।
সুগার ফ্রি।
মনে হয় পাব না। তবু দেখছি।
দাদা আবার ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন।
আমারে জিজ্ঞাসা করলি না। মল্লিকদা বললেন।
তোমারটা আমি জানি।
ঠিক আছে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম।
অনাদি সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম, তিনটে গাড়ি। তার মধ্যে একটি গাড়ি আবার সরকারী তকমা মারা। মানে এখানে এসে ফোন টোন করা হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই চিকনা এগিয়ে এলো। গুরু তোমার পায়ের ধুলো একটু দাও।
অন্যান্য যে ছেলেগুলো এসেছিল, ওরা মুখের দিকে তাকায়। ওরা সব শুনে ফেলেছে, আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটা সিগারেট খাওয়ানা।
চিকনা ছুটে চলে গেলো। অনাদি কাছে এলো। বাসু আমার ছায়া সঙ্গী। পচা সঞ্জয় আমার কাছ ঘেঁসে দাঁরিয়ে মিটি মিটি চোখে আমায় দেখছে।
ভানু কোথায়রে ? আমি বললাম।
অনাদি বললো আশে পাশে আছে কোথাও। চিকনা একটা প্যাকেট নিয়ে এসেছে।
এক প্যাকেট। সঞ্জয় বললো।
এই শুরু করলি। আমি বললাম।
আচ্ছা আচ্ছা পরে হবে।
হ্যাঁ ঠেকে গিয়ে।
ঠিক আছে।
একটা সিগারেট নিয়ে চিকনার হাতে প্যাকেটটা দিলাম। সঞ্জয় বললো, দে একটা।
না।
কেনো।
গুরুর প্রসাদ। এখন নয় ফেরার সময়। এখন বিড়ি খা।
অনাদিকে বললাম, তুই বাইরেটা সামাল দে। আমি ভেতরটা সামাল দিই। আর শোন দাদা আর মল্লিকদার জন্য কিছু সুগার ফ্রি মিষ্টির ব্যবস্থা কর।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, সুগার ফ্রি ? পাবো তো।
বাসু বললো, স্টেশনের ধারে মা লক্ষীতে পাবি।
ফান্ড আছেতো। অনাদি মাথা নাড়লো, শেষ হলে চেয়ে নিস।
আচ্ছা।
অনাদি চিকনাকে সঙ্গে নিতে চাইলো। চিকনা বললো আমি গুরুর পাশে আছি। তুই সঞ্জয়কে নিয়ে যা।
ঠিক আছে।
চিকনাকে বললাম, চল একটু চা খাই।
আমি চিকনা পাঁচু পচা বাসু সবাই এসে সামনের দোকানটায় বসলাম। বেশ চকচকে দোকানটা একটা নার্সিংহোমকে কেন্দ্রকরে জায়গাটা বেশ জমজমাট। চিকনা চায়ের কথা বললো, ভদ্রলোক বললেন, একটু অপেক্ষা করুন। বানিয়ে দিচ্ছি।
বাসু বলল, হ্যাঁরে অনি ওই ভদ্রমহিলা কাগজের মালিক!
হ্যাঁ। আর অমিতাভদাকে দেখলি, উনি এডিটর।
সত্যি কথা বলতে কি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
না হওয়ারি কথা। ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে, দেখন দারি নেই।
একেবারে খাঁটি কথা বলেছিস। কোটি কোটি টাকার মালিক......।
কোটি টাকা নয়, ঠিক এই মুহূর্তে ওর এ্যাসেটের ভ্যালু হাজার কোটি টাকা।
কি বলছিস।
ঠিক বলছি।
কি সাধারণ।
সবাই আমার কথা শুনছে আর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।
অনাদি আর সঞ্জয় এলো। পাশে বসলো।
অনাদি বললো। এটা।
দিয়ে আয়।
অনাদি সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।
তুই যা গুরু। ওখানে সব......।
অনাদি বেরিয়ে গেলো।
দুটো করে মিষ্টি বলনা। সকলে খাই। আমার মুখ থেকে কথা সরলো না, তার আগেই চিকনা অর্ডার দিলো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, নার্সিংহোমের গেট পেরিয়ে অনাদির সঙ্গে নীপা আর মিত্রা আসছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসুও আমার দেখা দেখি উঠে দাঁড়ালো। অনাদি হাত দেখালো, বুঝলাম বিশেষ কিছু নয়। ওরা ভেতরে এলো।
কিহলো ?
মিত্রাদি বললো তোমার কাছে আসবে। নীপা বললো।
এসো।
আমার পাশ থেকে বাসু উঠে গেলো। মিত্রা আমার পাশে এসে বসলো। আর একপাশে নীপা বসলো। টেবিলের অপরজিটে বাসু অনাদি সঞ্জয়, চিকনা একটা চেয়ার টেনে এনে বসলো।
আর একটা টেবিলে ওরা সবাই বসলো।
খেয়েছো।
নীপ বললো, ছোটমা জোড় করে লুচি আলুরদম খাইয়েছে।
মিত্রাদি।
মিত্রাদিও খেয়েছে।
মিষ্টি খাবি।
নিয়ে আয়। চিকনাকে ইশারা করতে ও বলে দিলো।
সকলের টেবিলে মিষ্টি আসলো। বাসু অনাদি মিত্রাকে একাপেয় অনেক কথা বলার চেষ্টা করলো। মিত্রা কিছু উত্তর দিলো। বাকিটা আমায় দেখিয়ে দিলো। মিত্রা নীপার দিকে তাকিয়ে বললো, নীপা আমার ব্যাগটা দাওতো। নীপা মিত্রার ব্যাগটা দিল, ব্যাগ খুলে মিত্রা মোবাইল বার করলো।
এইনে তোর মোবাইল।
আমি হাতে নিলাম। দেখলাম সঞ্জয়ের চোখ জুল জুল করছে।
এত দাম দিয়ে কিনলি কেন।
তুই মোবাইল আনতে বলেছিস, দামের কথা কিছু বলিস নিতো।
তাবলে.....।
মিত্রা মাথা নীচু করে মিষ্টি ভেঙে খাচ্ছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার মোবাইল নেই। আমার চোখ মুখ দেখে চিকনা বললো, মোবাইল তো।
হ্যাঁ।
আমার পকেটে।
তোর পকেটে মানে।
তুই যখন কেবিনে গেলি তখন আমার হাতে দিলি। তারপর অনেকবার ফোন বেজেছে ধরিনি। শেষবারেরটা ধরলাম। হিমাংশু না কে ফোন করেছিল। পরে ফোন করুন বলে কেটে দিয়েছি। তারপর দেখলাম অনবরতো ফোন আসছে। বন্ধ করে পকেটে রেখে দিয়েছি।
সঞ্জয় চেঁচিয়ে উঠলো গা.....বাসু ওর মুখটা চেপে ধরলো। সরি বলে সঞ্জয় হেসে ফেললো। মিত্রা নীপা মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
তোলা থাকলো। চিকনা বললো। এই অপমান আমি সইব না, মনে রাখিস।
হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমি তাকালাম। ওরা থেম গেলো।
সঞ্জয়কে বললাম ওই মোবাইল থেকে কার্ডটা এই মোবাইলে ভরে দে। পকেট থেকে আর একটা সিম বার করে বললাম, এই সিমটা এতে ভরে দিয়ে নীপাকে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চার্জ দিয়ে নিয়ে এসেছিস।
হ্যাঁ।
চা খাবি।
মিত্রা হাসলো।
হাসলাম।
হাসছিস কেনো।
এমনি।
চিকনার দিকে তাকাতে, দুটো এক্সট্রা বলা হয়ে গেলো।
দাদা মল্লিকদা কি করছেন।
দাদা এখানের সকলকে ফোন করে ফেলেছেন। সব চলে এলো বলে।
মানে।
মানে আরকি তুই জিজ্ঞাসা করবি।
আমি।
হ্যাঁ।
তুই সম্পাদক, আর আমি জিজ্ঞাসা করবো।
মিত্রা আস্তে করে আমার থাইতে চিমটি কাটলো। থেমে গেলাম। কানের কাছে মুখটা নামিয়ে এনে বললো, নীপা আছে, তুই একটু বাইরে চল। কথা আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার চোখের ইশারা বুঝতে পারলো।
চা খাওয়া হতে সঞ্জয়ের কাছ থেকে মোবাইলটা নিলাম।
সঞ্জয় গদ গদ হয়ে বললো, গুরু অনেকদিনের সখ ছিল একটু ঘাঁটবো, ঘাঁটা হয়ে গেলো।
কি।
ব্ল্যাক বেরি।
ও।
তুই এক কাজ কর নীপাকে একটু এই মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমটা শিখিয়ে দে। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। নীপাকে ইশারায় বললাম তুমি বোশো।
মিত্রাকে নিয়ে বাইরে এলাম। মিত্রার গাড়ির কাছে গেলাম। ইসমাইল ছিলো গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আমি মিত্রা গাড়ির ভেতরে বসলাম। সবাই দেখছে। দেখুক এখন আমার আর কিছু যায় আসে না।
ইসমাইল বললো কোথায় যাবেন স্যার।
কোথাও না। তুমি খেয়েছো।
হ্যাঁ স্যার। ওই বাবু খাইয়েছেন জোর করে।
আচ্ছা। তুমি একটু চা খেয়ে এসো।
আচ্ছা স্যার। ইসমাইল আমার ইশারা বুঝতে পারলো।
ইসমাইল চলে গেলো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে আজ খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।
তাই। যাক তুই সুন্দর বলেছিস, আমার কপালটা সত্যি ভালো।
আমি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছি।
তাকাস না, হিমাংশু কাল ডেট ঠিক করেছে।
কি বলছিস!
আমি ওকে অনেক বার বারন করেছিলাম ও শোনে নি।
আমি চুপচাপ।
কিসব প্রবলেম আছে বললো তুই ওর সঙ্গে একবার কথা বলে নে।
তুইতো সব দেখতে পাচ্ছিস।
তোকে এই মুহূর্তে নিয় যেতে মন চাইছে না, কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মাথা নীচু করে আছে।
তুই বরং সই সাবুদ করে কাল চলে আয়।
হিমাংশুকে ফোন করলাম, প্রথমেই ও কাকার কথা জিজ্ঞাসা করলো, ওকে সব বললাম।
তুই কালকে কয়েকঘন্টার জন্য চলে আয়।
ঠিক আছে। ফোন রেখে দিলাম।
মিত্রাকে বললাম, দাদাকে সব কথা বলেছিস।
দাদা সব জানে।
মিঃ ব্যানার্জী।
ও বলেছে তুই যা করবি তাই হবে।
তোরা সব আমার ঘারে ঠেলে দিচ্ছিস কেনো, নিজেরা কিছু কর।
তুই বইতে পারিস তাই।
কথা বারালাম না। বললাম, ঠিক আছে। যাবো।
বাসু জানলায় টোকা দিলো, বললো ভেতরে ডাকছে, অপারেশন হয়ে গেছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে নার্সিংহোমের ভেতরে এলাম।
এখনো কেবিনে দেয় নি। সবাই নিচে চলে এসেছে, মিঃ শ্রীধরণ আমাকে ডাকলেন, বললেন, সব ঠিক আছে, আমি যা করার করে দিয়েছি। তবে কাকাকে চশমা নিতে হবে। দীর্ঘদিন ক্যাটারাক থাকার ফলে, চোখটা একটু কমজোরি হয়ে গেছে। ওনিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বাহাত্তর ঘন্টা পরে ওরা পাওয়ার এবং চশমা দেবে।
আমি বললাম, ভয়ের কিছু নেই। উনি বললেন একেবারে নয়, তবে বয়স হয়েছে, এটাতো আপনাকে মানতে হবে, আমি ওনার কথায় সম্মতি দিলাম, আর একটা কথা এই কদিন স্নান করা জল দেওয়া চলবে না, আর দুপুরের দিকে উনি ছেড়ে দেবেন।
কেবিনে এলাম, কাকাকে স্বাভাবিক দেখলাম, ছোটমা কাকাকে বললেন এই যে অনি এসেছে।
আমি কাকার কাছে গেলাম। কাকার চোখ ব্যান্ডেজ করা আছে। কালো চশমা লাগানো। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন। হাতদুটো থর থর করে কাঁপছে, ঠোঁটটা নড়ে উঠলো। কোন কথা বলতে পারলেন না। নিজের খুব খারাপ লাগছিলো, কিন্তু শক্ত হলাম। এই সময় ভেঙে পরলে চলবে না। আমার একপাশে নীপা আর একপাশে মিত্রা। কাকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বললাম, এরা তোমায় বিকেলে ছেরে দেবে।
মল্লিকদা পাশে এসে দাঁরিয়েছেন, কি হে শক্তিমান, লুজ হয়্যা যাইতেছ মনে হইতাছে।
হাসলাম।
ব্যাশ বুইঝা ফেলাইছি, বড়মা আমার হাতদুটো ধরে বললেন, দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বড়মার দিকে তাকালাম। আমার ভাগ্যটা সত্যি খুব ভালো। না হলে এদের মতো এতো বড়ো বড়ো লোকজন আমার পাশে থাকবে কেনো। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে।
হ্যাঁ।
করলে কখন।
মিত্রা আর ছোট করেছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা নীপার হাত ধরেছে শক্ত করে।
তুই বিশ্বাস কর....।
ঠিক আছে আমি ওদের একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি। তোমরা ওপরে যাও।
আচ্ছা।
দাদা গেলেন কোথায়।
ওইতো রিসেপসনে বসে আছে। মিত্রা বললো।
ওদের ডেকে নিয়ে যাও।
মল্লিকদা দাদা রিসেপসনে বসে আছেন। দাদা কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। আমি কাছে যেতে বললো, একটু ধর, হ্যাঁ বল।
কি খাবে।
একটু চা বিস্কুট।
বড়মা খাবার নিয়ে এসেছেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ কালকে ওরা কিসব করছিল। তুই খাবি না।
গ্রামের ছেলে গুলো এসেছে, ওদের একটু দেখে আসি। তুমি ওপরে যাও ওরা গেছে।
যা তাহলে।
একটু মিষ্টি পাঠিয়ে দিই।
সুগার ফ্রি।
মনে হয় পাব না। তবু দেখছি।
দাদা আবার ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন।
আমারে জিজ্ঞাসা করলি না। মল্লিকদা বললেন।
তোমারটা আমি জানি।
ঠিক আছে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম।
অনাদি সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম, তিনটে গাড়ি। তার মধ্যে একটি গাড়ি আবার সরকারী তকমা মারা। মানে এখানে এসে ফোন টোন করা হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই চিকনা এগিয়ে এলো। গুরু তোমার পায়ের ধুলো একটু দাও।
অন্যান্য যে ছেলেগুলো এসেছিল, ওরা মুখের দিকে তাকায়। ওরা সব শুনে ফেলেছে, আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটা সিগারেট খাওয়ানা।
চিকনা ছুটে চলে গেলো। অনাদি কাছে এলো। বাসু আমার ছায়া সঙ্গী। পচা সঞ্জয় আমার কাছ ঘেঁসে দাঁরিয়ে মিটি মিটি চোখে আমায় দেখছে।
ভানু কোথায়রে ? আমি বললাম।
অনাদি বললো আশে পাশে আছে কোথাও। চিকনা একটা প্যাকেট নিয়ে এসেছে।
এক প্যাকেট। সঞ্জয় বললো।
এই শুরু করলি। আমি বললাম।
আচ্ছা আচ্ছা পরে হবে।
হ্যাঁ ঠেকে গিয়ে।
ঠিক আছে।
একটা সিগারেট নিয়ে চিকনার হাতে প্যাকেটটা দিলাম। সঞ্জয় বললো, দে একটা।
না।
কেনো।
গুরুর প্রসাদ। এখন নয় ফেরার সময়। এখন বিড়ি খা।
অনাদিকে বললাম, তুই বাইরেটা সামাল দে। আমি ভেতরটা সামাল দিই। আর শোন দাদা আর মল্লিকদার জন্য কিছু সুগার ফ্রি মিষ্টির ব্যবস্থা কর।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, সুগার ফ্রি ? পাবো তো।
বাসু বললো, স্টেশনের ধারে মা লক্ষীতে পাবি।
ফান্ড আছেতো। অনাদি মাথা নাড়লো, শেষ হলে চেয়ে নিস।
আচ্ছা।
অনাদি চিকনাকে সঙ্গে নিতে চাইলো। চিকনা বললো আমি গুরুর পাশে আছি। তুই সঞ্জয়কে নিয়ে যা।
ঠিক আছে।
চিকনাকে বললাম, চল একটু চা খাই।
আমি চিকনা পাঁচু পচা বাসু সবাই এসে সামনের দোকানটায় বসলাম। বেশ চকচকে দোকানটা একটা নার্সিংহোমকে কেন্দ্রকরে জায়গাটা বেশ জমজমাট। চিকনা চায়ের কথা বললো, ভদ্রলোক বললেন, একটু অপেক্ষা করুন। বানিয়ে দিচ্ছি।
বাসু বলল, হ্যাঁরে অনি ওই ভদ্রমহিলা কাগজের মালিক!
হ্যাঁ। আর অমিতাভদাকে দেখলি, উনি এডিটর।
সত্যি কথা বলতে কি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
না হওয়ারি কথা। ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে, দেখন দারি নেই।
একেবারে খাঁটি কথা বলেছিস। কোটি কোটি টাকার মালিক......।
কোটি টাকা নয়, ঠিক এই মুহূর্তে ওর এ্যাসেটের ভ্যালু হাজার কোটি টাকা।
কি বলছিস।
ঠিক বলছি।
কি সাধারণ।
সবাই আমার কথা শুনছে আর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।
অনাদি আর সঞ্জয় এলো। পাশে বসলো।
অনাদি বললো। এটা।
দিয়ে আয়।
অনাদি সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।
তুই যা গুরু। ওখানে সব......।
অনাদি বেরিয়ে গেলো।
দুটো করে মিষ্টি বলনা। সকলে খাই। আমার মুখ থেকে কথা সরলো না, তার আগেই চিকনা অর্ডার দিলো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, নার্সিংহোমের গেট পেরিয়ে অনাদির সঙ্গে নীপা আর মিত্রা আসছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসুও আমার দেখা দেখি উঠে দাঁড়ালো। অনাদি হাত দেখালো, বুঝলাম বিশেষ কিছু নয়। ওরা ভেতরে এলো।
কিহলো ?
মিত্রাদি বললো তোমার কাছে আসবে। নীপা বললো।
এসো।
আমার পাশ থেকে বাসু উঠে গেলো। মিত্রা আমার পাশে এসে বসলো। আর একপাশে নীপা বসলো। টেবিলের অপরজিটে বাসু অনাদি সঞ্জয়, চিকনা একটা চেয়ার টেনে এনে বসলো।
আর একটা টেবিলে ওরা সবাই বসলো।
খেয়েছো।
নীপ বললো, ছোটমা জোড় করে লুচি আলুরদম খাইয়েছে।
মিত্রাদি।
মিত্রাদিও খেয়েছে।
মিষ্টি খাবি।
নিয়ে আয়। চিকনাকে ইশারা করতে ও বলে দিলো।
সকলের টেবিলে মিষ্টি আসলো। বাসু অনাদি মিত্রাকে একাপেয় অনেক কথা বলার চেষ্টা করলো। মিত্রা কিছু উত্তর দিলো। বাকিটা আমায় দেখিয়ে দিলো। মিত্রা নীপার দিকে তাকিয়ে বললো, নীপা আমার ব্যাগটা দাওতো। নীপা মিত্রার ব্যাগটা দিল, ব্যাগ খুলে মিত্রা মোবাইল বার করলো।
এইনে তোর মোবাইল।
আমি হাতে নিলাম। দেখলাম সঞ্জয়ের চোখ জুল জুল করছে।
এত দাম দিয়ে কিনলি কেন।
তুই মোবাইল আনতে বলেছিস, দামের কথা কিছু বলিস নিতো।
তাবলে.....।
মিত্রা মাথা নীচু করে মিষ্টি ভেঙে খাচ্ছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার মোবাইল নেই। আমার চোখ মুখ দেখে চিকনা বললো, মোবাইল তো।
হ্যাঁ।
আমার পকেটে।
তোর পকেটে মানে।
তুই যখন কেবিনে গেলি তখন আমার হাতে দিলি। তারপর অনেকবার ফোন বেজেছে ধরিনি। শেষবারেরটা ধরলাম। হিমাংশু না কে ফোন করেছিল। পরে ফোন করুন বলে কেটে দিয়েছি। তারপর দেখলাম অনবরতো ফোন আসছে। বন্ধ করে পকেটে রেখে দিয়েছি।
সঞ্জয় চেঁচিয়ে উঠলো গা.....বাসু ওর মুখটা চেপে ধরলো। সরি বলে সঞ্জয় হেসে ফেললো। মিত্রা নীপা মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
তোলা থাকলো। চিকনা বললো। এই অপমান আমি সইব না, মনে রাখিস।
হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমি তাকালাম। ওরা থেম গেলো।
সঞ্জয়কে বললাম ওই মোবাইল থেকে কার্ডটা এই মোবাইলে ভরে দে। পকেট থেকে আর একটা সিম বার করে বললাম, এই সিমটা এতে ভরে দিয়ে নীপাকে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চার্জ দিয়ে নিয়ে এসেছিস।
হ্যাঁ।
চা খাবি।
মিত্রা হাসলো।
হাসলাম।
হাসছিস কেনো।
এমনি।
চিকনার দিকে তাকাতে, দুটো এক্সট্রা বলা হয়ে গেলো।
দাদা মল্লিকদা কি করছেন।
দাদা এখানের সকলকে ফোন করে ফেলেছেন। সব চলে এলো বলে।
মানে।
মানে আরকি তুই জিজ্ঞাসা করবি।
আমি।
হ্যাঁ।
তুই সম্পাদক, আর আমি জিজ্ঞাসা করবো।
মিত্রা আস্তে করে আমার থাইতে চিমটি কাটলো। থেমে গেলাম। কানের কাছে মুখটা নামিয়ে এনে বললো, নীপা আছে, তুই একটু বাইরে চল। কথা আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার চোখের ইশারা বুঝতে পারলো।
চা খাওয়া হতে সঞ্জয়ের কাছ থেকে মোবাইলটা নিলাম।
সঞ্জয় গদ গদ হয়ে বললো, গুরু অনেকদিনের সখ ছিল একটু ঘাঁটবো, ঘাঁটা হয়ে গেলো।
কি।
ব্ল্যাক বেরি।
ও।
তুই এক কাজ কর নীপাকে একটু এই মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমটা শিখিয়ে দে। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। নীপাকে ইশারায় বললাম তুমি বোশো।
মিত্রাকে নিয়ে বাইরে এলাম। মিত্রার গাড়ির কাছে গেলাম। ইসমাইল ছিলো গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আমি মিত্রা গাড়ির ভেতরে বসলাম। সবাই দেখছে। দেখুক এখন আমার আর কিছু যায় আসে না।
ইসমাইল বললো কোথায় যাবেন স্যার।
কোথাও না। তুমি খেয়েছো।
হ্যাঁ স্যার। ওই বাবু খাইয়েছেন জোর করে।
আচ্ছা। তুমি একটু চা খেয়ে এসো।
আচ্ছা স্যার। ইসমাইল আমার ইশারা বুঝতে পারলো।
ইসমাইল চলে গেলো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে আজ খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।
তাই। যাক তুই সুন্দর বলেছিস, আমার কপালটা সত্যি ভালো।
আমি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছি।
তাকাস না, হিমাংশু কাল ডেট ঠিক করেছে।
কি বলছিস!
আমি ওকে অনেক বার বারন করেছিলাম ও শোনে নি।
আমি চুপচাপ।
কিসব প্রবলেম আছে বললো তুই ওর সঙ্গে একবার কথা বলে নে।
তুইতো সব দেখতে পাচ্ছিস।
তোকে এই মুহূর্তে নিয় যেতে মন চাইছে না, কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মাথা নীচু করে আছে।
তুই বরং সই সাবুদ করে কাল চলে আয়।
হিমাংশুকে ফোন করলাম, প্রথমেই ও কাকার কথা জিজ্ঞাসা করলো, ওকে সব বললাম।
তুই কালকে কয়েকঘন্টার জন্য চলে আয়।
ঠিক আছে। ফোন রেখে দিলাম।
মিত্রাকে বললাম, দাদাকে সব কথা বলেছিস।
দাদা সব জানে।
মিঃ ব্যানার্জী।
ও বলেছে তুই যা করবি তাই হবে।
তোরা সব আমার ঘারে ঠেলে দিচ্ছিস কেনো, নিজেরা কিছু কর।
তুই বইতে পারিস তাই।
কথা বারালাম না। বললাম, ঠিক আছে। যাবো।
বাসু জানলায় টোকা দিলো, বললো ভেতরে ডাকছে, অপারেশন হয়ে গেছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে নার্সিংহোমের ভেতরে এলাম।
এখনো কেবিনে দেয় নি। সবাই নিচে চলে এসেছে, মিঃ শ্রীধরণ আমাকে ডাকলেন, বললেন, সব ঠিক আছে, আমি যা করার করে দিয়েছি। তবে কাকাকে চশমা নিতে হবে। দীর্ঘদিন ক্যাটারাক থাকার ফলে, চোখটা একটু কমজোরি হয়ে গেছে। ওনিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বাহাত্তর ঘন্টা পরে ওরা পাওয়ার এবং চশমা দেবে।
আমি বললাম, ভয়ের কিছু নেই। উনি বললেন একেবারে নয়, তবে বয়স হয়েছে, এটাতো আপনাকে মানতে হবে, আমি ওনার কথায় সম্মতি দিলাম, আর একটা কথা এই কদিন স্নান করা জল দেওয়া চলবে না, আর দুপুরের দিকে উনি ছেড়ে দেবেন।
কেবিনে এলাম, কাকাকে স্বাভাবিক দেখলাম, ছোটমা কাকাকে বললেন এই যে অনি এসেছে।
আমি কাকার কাছে গেলাম। কাকার চোখ ব্যান্ডেজ করা আছে। কালো চশমা লাগানো। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন। হাতদুটো থর থর করে কাঁপছে, ঠোঁটটা নড়ে উঠলো। কোন কথা বলতে পারলেন না। নিজের খুব খারাপ লাগছিলো, কিন্তু শক্ত হলাম। এই সময় ভেঙে পরলে চলবে না। আমার একপাশে নীপা আর একপাশে মিত্রা। কাকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বললাম, এরা তোমায় বিকেলে ছেরে দেবে।
মল্লিকদা পাশে এসে দাঁরিয়েছেন, কি হে শক্তিমান, লুজ হয়্যা যাইতেছ মনে হইতাছে।
হাসলাম।
ব্যাশ বুইঝা ফেলাইছি, বড়মা আমার হাতদুটো ধরে বললেন, দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বড়মার দিকে তাকালাম। আমার ভাগ্যটা সত্যি খুব ভালো। না হলে এদের মতো এতো বড়ো বড়ো লোকজন আমার পাশে থাকবে কেনো। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে।