12-07-2019, 10:27 PM
পার্টঃঃ১৭
তুমি সব জানো।
হ্যাঁ, জানতে হয়েছে।
আজ টিভি দেখে মশাইয়ের চোখে জল চলে এসেছিল। আমার খুব খারাপ লাগছিল। আবার ভীষণ আনন্দ লাগছিলো।
কেনো ?
এপাড়ায় সকলের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছি।
কি রকম।
আমাদের টিভিটা সবচেয়ে দামী এবং বরো।
আমি ওকে এই টিভিটাই দিতে বলেছিলাম।
কত দাম নিলো।
তুমি জেনে কি করবে।
বলোনা।
না।
মা সকাল বেলা কাপরগুলো দেখে কেঁদে ফলেছিলো। মনিমা বললেন কাঁদছিস কেনো। অন্য কেউ দেয় নি, অনি দিয়েছে। ওতো আমাদের ছেলে পেটে ধরিনি এই যা।
ঠিক বলেছেন কাকীমা।
নীপা আমার দিকে ডাগর চোখে তাকিয়ে।
কাকীমা আমার মার থেকেও বড়। মা জন্মদিয়েছিলেন। মনিকাকা-কাকীমা আমায় জীবন দিয়েছেন। আমিতাভদা-বড়মা আমায় কর্ম দিয়েছেন।
অনিদা তোমায় একটা জিনিষ দেখাবো। দেখবে।
মাথা নাড়লাম।
আমি ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। নীপার কোন বিকার নেই। ও একটা প্যাকেট থেকে একটা পেন্টি আর ব্রেসিয়ার বার করলো। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ব্রসিয়ারটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। প্লাসটিকের।
এটা কি প্লাসটিকের।
সত্যি অনিদা তুমি কি বলোতো।
হেসেফেললাম।
এগুলোকে ট্রান্সপারেন্ট ব্রা বলে।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
জানো অনিদা আমার কোন ভালো ব্রেসিয়ার নেই। এতদিন ইজের পরতাম। কোথাও প্রোগ্রাম থাকলে। শেলির কাছ থেকে পেন্টি চেয়ে পরতাম। আজ তোমার পয়সায় কিনেছি। নীপা সহজভাবে কথা বলে যাচ্ছে।
আমি নীপাকে দেখছি। ওর না পাওয়া বেদনাগুলো একদিন আমারও ছিল, কিন্তু আমি সেই বেদনা আমার বুকের মধ্যে গলা টিপে মেরে ফেলেছি। কাকার কাছে হাত পেতে কোন জিনিষ চাইতে পারি নি। যদিও আমার কোন কিছুর অভাব ছিল না। তবু কোথায় যেন আমি বড় একা ছিলাম। নীপার তবু বলার মতো একটা অনিদা আছে।
তোমায় অনেক বিরক্ত করলাম। নাও শুয়ে পরো কাল সকালে আবার উঠতে হবে। গুডনাইট। নীপা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চলেগেল ভেতর বারান্দায়।
আমি একা একা অনেকক্ষণ বোবার মতো শুয়ে থাকলাম। বার বার নীপার মুখটা ভসে আসছে ও সেজেছে। আমাকে ওর মনের না পাওয়া বেদনার কথা বলেছে। এর মধ্যে দিয়ে ও কি বার্তা পৌঁছে দিতে চায় আমাকে। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে কিলবিল করছে। কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না।
সবাই ঠিক ঠাক সময়ে এসেছে। খালি দিবাকর আসেনি। আমরা সকলে বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি নীপা চা দিয়ে গেছে, চিকনা বললো, হ্যাঁরে অনাদি দিবাকর কোথায়।
অনাদি বললো আমি কি জানি, কালকে সকলের সামনেইতো কথা হলো।
হারামী।
আমি চিকনার দিকে তাকলাম। কালকে ও আমাকে বলেগেছে আসতে পারবে না।
সরি, তুই বল অনি, আজকে ওর গাদন দেবার দরকার পরলো।
ওকি তোর কথা বুঝতে পারবে। সঞ্জীব বললো।
তাওতো ঠিক। ভানুর দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁরে গোরা এসেছে।
কাল রাত থেকে এখানে এসে বসে আছে।
আরও কয়েকট নতুন ছেলে এসেছে। আমি চিনতে পারলাম না, চিকনাকে বললাম ওরা কারা।
অনাদির কালেকসন।
আমি কথা বারালাম না। অনাদিকে বললাম বাড়িতে কারা থাকবে।
তোকে চিন্তা করতে হবে না।
ঠিক আছে।
গাড়িটা মোরাম রাস্তায় আছে। অনাদি বললো তিনটে বাইকে করে কাকীমা সুরমাসি কাকাকে পাঠিয়ে দিই তারপর আমরা যাবো।
তাই কর।
কয়েকজন হেঁটে চলে গেলো। আমি অনাদি, চিকনা, সঞ্জীব, বাসু বেঞ্চে বসে আছি। ওরা সবাইকে একে একে নিয়ে গেলো। নীপাকে বললাম, মোবাইলটা একটু দাও। নীপা মোবাইলটা দিয়ে গেলো। চিকনা বললো, কিরে তুই রেডি হলি না। নীপা বললো এখুনি হয়ে যাবে। নীপা ভেতরে চলে গেলো, আমি সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, সিমটা খুলে এই সিমটা লাগা।
এ্যাকটিভেট হয়ে গেছে।
হ্যাঁ।
দেখছিস এই হচ্ছে সঞ্জীব।
চিকনা খিস্তি দিলো।
বুঝলি অনি এদের কাছ থেকে কোন দিন ভাল কাজ করে ভাল কথা শুনবি না, খালি খিস্তি খিস্তি। সঞ্জীব বললো।
আমি হাসলাম।
হায় হায় কত মিসকল।
কার।
তোর।
দেখি দে।
দেখলাম অনেক মিশ কল তার মধ্যে বড়মা মিত্রারও আছে। বুঝলাম ওরা বেরিয়ে পরেছে।
তোদের বাইক গুলো কে চালাবে।
কেনো।
ভাবছিলাম ওই ছেলে গুলো যদি বাইক গুলো নিয়ে যেতো তাহলে আমরা একটা গাড়িতে সবাই যেতাম।
বাসু আমার মনের কথা বুঝতে পারলো। ও অনাদিকে বললো বাইকে করে ওদের চলে যেতে বল। ভানুকে কাকার গাড়িতে বসতে বল। নীপা কি ওই গাড়িতে যাবে।
না। আমাদের সঙ্গে যাবে। আমি বললাম।
ঠিক আছে। চিকনা তোর বাইকটা।
পোঁদ পাকাটাকে দিস না, বিজনকে দে ।
বাসু বললো ঠিক আছে।
অনাদি বাসুর কথা মতো সব ব্যবস্থা করলো। নীপা আজ নতুন শালোয়ার পরেছে। বেশ সুন্দর দেখতে। চিকনের কাজের ওপর। বাসু যে এত সুন্দর শালোয়ার রাখতে পারে আমার জানা ছিল না। নীপাকে মানিয়েছেও বেশ। বাসন্তী কালারের ওপর বেদনা রংয়ের শুতো দিয়ে কাজ করা।
বহুত মাঞ্জা দিয়েছিস। চিকনা বললো।
নীপা চিকনার দিকে একবার তাকালো।
না দিদিভাই, অন্যায় হয়েছে, আর হবে না।
হ্যাঁরে সঞ্জু চিকনাটা সবার পেছনে লাগে...।
হারামী।
তোর বাপ ঘরামী।
ওঃ তোরা কি এখনো সেই ফাইভের ছেলের মতো।
কি করি বল অনি সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি আর এই টুকু.....।
নীপার দরজায় তালা দেওয়া শেষ হলো। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি রেডি। অনাদি বললো চল। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, তোর লোক কোথায়।
তোকে বলেছি না, ঠিক সময় চলে আসবে।
আমরা পায়ে পায়ে মোরাম রাস্তার কাছে চলে এলাম। অনাদি একটু আগে আগে হাঁটছে আমার পাশে নীপা বাসু পেছনে চিকনা সঞ্জীব। চিকনা সঞ্জীব খুনসুটি করেই চলেছে। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, হরিহর আত্মা একদিন দেখা না হলে দুজনে পাগল হয়ে যাবে। ওরা আমাদের অক্সিজেন।
হাসলাম।
গাড়ির ওখান থেকে একটু হই হই আওয়াজ পাচ্ছি। বাসু বললো স্যারের গলা। খেপেছে। পা চালিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে এলাম।
ওইতো অনি এসেছে। অনাদি বললো।
এসেছে। কাকা আমার আসায় আশ্বস্ত হলেন।
কিহলো।
স্যার তখন থেকে খালি অনি অনি করছে।
আমি কাকাকে বললাম কি হয়েছে।
না কিছু হয় নি। তুই আসলি না এরা কি এসব পারবে।
খুব পারবে। ওরাও তোমার ছাত্র। আমারই মতো।
ফ্যাল ফ্যাল করে কাকা আমার দিকে তাকালো।
ঠিক আছে তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি নীপাকে নিয়ে পেছনের গাড়িতে বসছি ভানু পাঁচু তোমার গাড়িতে বসছে।
ঠিক আছে।
গাড়ি ছারলো। আমি নীপা পেছনে, মাঝে বাসু সঞ্জীব অনাদি। সামনে চিকনা পচা।
কিরে অনি তোর কি টেনসন হচ্ছে। অনাদি বললো।
কেনো।
চুপচাপ।
না।
নীপা ফিক করে হাসলো।
কিরে নীপা হাসলি কেনো। চিকনা বললো।
বীরপুরুষ।
কে।
কে আবার।
কেন কি হয়েছে।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। চোখ পাকাচ্ছে। কাল সারারাত বারান্দায় পায়চারি করেছে। আর সিগারেট খেয়েছে।
হ্যাঁ। টেনসনতো একটু থাকবেই। অনাদি বললো।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম অমিতাভদার ফোন।
হ্যাঁ বলো। কোথায় তোমরা।
আমরা পৌঁছেগেছি।
তার মানে।
গাঢ়ল কোথাকার একটা কান্ডজ্ঞান নেই। কটা বাজে দেখেছিস ঘড়িতে।
ঘড়ি নেই।
সেই জন্য। ধর কথা বল। বড়মার গলা।
কাল সারারাত ঘুমোও নি নাকি।
খুব ভাল ঘুমিয়েছি।
তাহলে এত সকালে পৌঁছলে কি করে।
অনাদি বাসু নীপা আমার দিকে তাকিয়ে।
আমরা কাল রাতে এসেছি।
তার মানে।
হ্যাঁ। তুই আয় সব বলবো।
ঠিক আছে।
আচ্ছা পাগলদের নিয়ে আমি পরেছি।
কিহলো।
দাদারা কাল রাত থেকে এসে আছেন, বোঝ।
অনাদি আমার দিকে তাকালো, কাল রাতে। থাকলো কোথায় ?
ওনার থাকার জায়গার অভাব।
ঠিক বলেছিস।
আমি মানিপার্স থেক অনাদির হাতে চারটে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললাম এটা রাখ। প্রয়োজনে চেয়ে নিবি। পৌনে সাতটা নাগাদ পৌঁছলাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ কোথাও নেই। দাদারা তারমানে আসেন নি। বড়মা কি করে বললো চলে এসেছে। অনাদির চেলুয়া গুলো আমাদের বেশ কিছুক্ষণ আগেই পৌঁছে গেছে। অনাদি নেমে আগে চলে গেলো। রিসেপসনিস্ট কাউন্টারে গিয়ে বলতেই, ভদ্রমহিলা কাউন্টার ছেরে ছুটে ভেতরে চলে গেলেন।
নার্সিংহোমের ক্যামপাসটা বেশ বড়। কালকে তাড়াহুড়োর চোটে কিছু দেখা হয় নি। পেছনের দিকে স্টাফ কোয়ার্টার আছে। এই রকম অজ জায়গায় সাজানো গোছানো একটা আধুনিক নার্সিংহোম থাকতে পারে আগে কখনো ভাবি নি। তবে এই যা হাইরোডের একেবারে গায়ে। কমিউনিকেসন খুব সুন্দর। অনাদি কাল যেতে যেতে বলেছিল, এই নার্সিংহোমটা এখন এই এলাকার হাসপাতাল। নীপা আর চিকনা কাকাকে ধরে ধরে ভেতরে আনলো। সোফায় বসালো। অনাদি বললো ভদ্রমহিলা গেলেন কোথায় বলতো।
কিছুক্ষণ পরে দেখলাম, ভদ্রমহিলা একজন স্যুট টাই পরা ভদ্রলোকের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। ভদ্রলোক এসে আমার নাম ধরে খোঁজ করলেন। আমি এগিয়ে গেলাম। আমার হাত ধরে বেশ কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে ইংরাজীতে আমাকে জানালেন, উনি এখানকার ম্যানেজার, নাম মিঃ মুরলী শ্রীধরণ।
আমি আমার নাম আবার বললাম, বুঝলাম উনি সাউথ ইন্ডিয়ান। বাংলার বও জানেন না। কিন্তু কালকে এই ভদ্রলোক ছিলেন কোথায় ?
উনি আমাকে জানালেন, উনি আমাকে বিলক্ষণ চেনেন, তবে নামে, আমার লেখার উনি ভীষণ ভক্ত।
কিছু বললাম না, আমি লিখি বাংলায়, ও বেটা পরে কিকরে ? সন্দেহ ঠেকলো, মুখে কোন বহিঃপ্রকাশ করলাম না। হেঁসে হেঁসে আমিও তার প্রতি উত্তর দিলাম ইংরাজীতে।
আমার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর, কিছুক্ষণ ওনার সঙ্গে কাকার ব্যাপার নিয়ে কথা বললাম। কাকার ব্যাপারটা উনি পঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আমার কাছে জানলেন। মনে হল ওনাকে ঠিক সেটিসফায়েড করতে পারলাম না। বললাম আপনি কাকার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
উনি মাথা দুলিয়ে বললেন, ওটাই ঠিক, যা কথা হচ্ছে সব ইংরাজীতে, নীপা আর বাসু আমার দুপাশে, তার পাশে অনাদি আর চিকনা। ওরা আমার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
কাকার সামনে গিয়ে কাকাকে দেখলেন, ইংরাজীতে দুচারটে কথা জিজ্ঞাসা করলেন, আমি দোভাষীর কাজ করলাম। তারপর রিসেপসন কাউন্টারে গিয়ে রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে কি যেন বললেন, উনি একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এলেন। কাকাকে চেয়ারে বসিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওনার কেবিন নম্বর এস-৬।
অনিকে বললাম, এরা টাকার কথা কিছু বললো নাতো। কালকে বলেছিলো, ব্যালেন্স টাকাটা ভর্তি হওয়ার আগে দিয়ে দিতে হবে। ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। অনাদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি হলো।
দাঁড়া হজম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
হাসলাম।
তুই শালা পেঁয়াজ।
কি করে বুঝলি।
খালি খোসা ছাড়িয়ে যেতে হবে, আসল মালটা অনেক ভেতরে।
নীপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আমার একটা হাত চেপে ধরে আছে।
ছার ওসব কথা। কলকে এই ভদ্রলোক ছিলেন কোথায় ?
সেতো আমিও বুঝতে পারছি না।
মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোনও একটা খেলা চালু হয়েছে।
বাসু আমার দিকে তাকালো, তুই ভাল বুঝতে পারবি আমাদের থেকে।
চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো, ছেলেগুলো এসেছে অদ্দূর থেকে ওদের কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কর।
ওই দায়িত্বে পচা আছে, তোকে ভাবতে হবে না। আমি তোর কাছ ছারা হচ্ছি না।
সঞ্জীব কোথায়।
বাইরে আছে।
চল একবার গিয়ে কেবিনটা দেখে আসি।
রিসেপসনিস্ট কাউন্টারের ভদ্রমহিলাকে গিয়ে বললাম, উনি বললেন একটু দাঁড়ান আমরা কিছ পরীক্ষা কর নিই আগে তারপর।
অগত্যা কাকীমা সুরমাসির পাশে এসে সোফায় বসলাম। কাকীমার চোখ দুটো ছল ছল করছে। আমার হত দুটো ধরে বললেন, অনি।
আমি বললাম কাঁদছ কেনো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নীপা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছ। কিছুক্ষণ পর সেই ভদ্রমহিলা এসে বললেন এবার যেতে পারেন।
পায়ে পায়ে ভেতরে গেলাম। করিডোরের সামনের ঘরটাই এস-৬ কেবিন। কালকে কেবিনের পয়সা আমার কাছ থেকে নেয়নি তো! যাক এখন এই নিয়ে ভাবতে চাইলাম না। কাকা বিছানার ওপর হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত তোলা।
কাকীমা কাকার পাশে গিয়ে বসলেন।
কাকা বললেন, আমার চোখে ওষুধ দিয়ে গেলো, কি সব পরীক্ষা করলো, ইঞ্জেকসন দিয়ে গেলো, বললো ৯.৩০ অপারেশন। কাকীমা আমার হাত দুটো মুঠো করে ধরলেন, ও অনি....কাকীমার চোখে জল।
কাঁদছ কেনো। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবে কাকা এবার চশমা ছাড়াই দেখতে পাবে। এখানে কাঁদতে নেই, লোকে কি ভাববে।
অনাদি বললো, অনেক দিন আগে এই রুমটায় ঢুকেছিলাম, মানসদাকে দেখতে, এটা ভিআইপিদের রুম।
আমি ঘরের চারিদিকে একবার চোখ বোলালাম, ঘরের ডেকরেশন তাই বলে। কিন্তু অমিতাভদারা গেলেন কোথায়! বললেন কাল রাত থেকে এসে বসে আছেন। ঘরটা এসি, বেশ ঠান্ডা লাগছে, কাকা কেমন গুটি-সুটি মেরে গেছেন। রুম সার্ভিস বেলটা বাজালাম, সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স এসে হাজির।
ইংরাজীতেই তাকে বললাম, এসিটা একটু বন্ধ করে দিতে।
মেয়েটি বললো, কমিয়ে দিচ্ছি স্যার, বন্ধ করা যাবে না।
ঠিক আছে। মেয়েটি এসির টেম্পারেচার বারিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
পাঁচু ছুটতে ছুটতে ঘরে এলো, অনি অনি চল চল পঙ্খীরাজ গাড়ি করে কারা যেন এসেছে। তোকে খোঁজা খুঁজি করছে। বুঝলাম সাহেবরা এসেছেন, কাল চলে এসেছে! তাহলে এতো দেরি! নীপা আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে। চিকনাকে দেখতে পেলাম না। অনাদি এবং বাসু সঙ্গে আছে।
কাকাকে বললাম, দাঁড়াও আমি আসছি।
কাকা বললেন যাও।
আমি ঘরের বাইরে এলাম, দেখলাম শ্রীধরণ ওদের সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। সামনে মল্লিকদা, সবার পেছনে মিত্রা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কপালে ডগ ডগ করছে সিঁদুর। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। একটা সাদা চিকনের সালোয়ার পরেছে। মনে হচ্ছে কোন বুটিক থেকে আনানো। সচর আচর এগুলো চোখে পরে না। ওকে আজ সৌম্য শান্ত দেখাচ্ছে। সেজেছে কিন্তু সেই সাজার মধ্যে মনহারিনী ব্যাপার আছে।
আয়া পরসি। মল্লিকদা বললেন।
নীচু হয়ে প্রণাম করলাম। আমার দেখা দেখি, সকলে প্রণাম করলো।
অনি লাইফে প্রেথম প্রেণাম পেলাম তোর কাছ থেকে।
প্রেথম না প্রেথ্থম। বাঙাল ভাষাটাও সঠিক ভাবে বলতে পারো না।
সবাই হেসে উঠলো।
দিলিতো গ্যামাকসিন মেরে।
আমার আশেপাশের সবাই হেসে ফেললো।
আমি সবার সঙ্গে একে একে পরিচয় করিয়ে দিলাম। মিত্রা নীপাকে কাছে টেনে নিল। ছোটমার দিকে তাকিয়ে নীপার গালে হাত দিয়ে বললো কি মিষ্টি দেখতে। বড়মা আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, কিরে এরি মধ্যে মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে। আমি বললাম এই শুরু করলে আবার। এই জন্য আসতে বারন করেছিলাম। ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলবো না। ছোটমা চোখে মুখে কথা বলছে। নীপার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললো এখানে এসেও সখী জুটিয়ে নিয়েছো।
হাসলাম।
ভেতরে গেলাম। কাকা কাকীমা সুরমাসির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওরা সকলে সকলের কুশল বিনিময় করলো। মিত্রা সবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। ওরা প্রণাম কেউ নিতে চায় নি। মিত্রাও ছাড়ে নি। শেষে অমিতাভদা বললেন, অনি যেমন আপনাদের ছেলে ও তেমনি আপনাদের একটা মেয়ে। ও যখন প্রণাম করতে চাইছে ওকে করতে দিন।
আমি বললাম এবার চলো। এখানে বেশি ভিড় করে লাভ নেই। নার্সিংহোমের অন্যান্য পেসেন্ট পার্টিরা আজ যেন কেমন অচ্ছুত। সবার কনসেনট্রেসন যেন আমাদের দিকে। করিডোরে বেরিয়ে এলাম। মিঃ শ্রীধরণ আমায় ছুটতে ছুটতে এসে বললেন, স্যার আপনার একটা ফোন আছে।
আমার!
হ্যাঁ স্যার। মিঃ ব্যানার্জী করেছেন।
মিঃ ব্যানার্জী!
শ্রীধরণের সঙ্গে মিত্রার চোখাচুখি হলো। আমি লক্ষ্য করলাম।
ফোনটা এসে ধরলাম।
হ্যালো।
অনি।
হ্যাঁ।
তুমি খুব রাগ করে আছো মনে হচ্ছে।
কেনো।
সরি আজ আমি তোমার পাশে থাকতে পারলাম না।
তাতে কি হয়েছে।
আরে না না....।
আপনাকে কে খবর দিলো ?
মিত্রা কাল আমায় সব বলেছে।
এই ফোন নম্বর পেলেন কোথায় ?
হাসলেন, এটা আমার নার্সিংহোম।
তাই নাকি ! বাবা তাহলেতো....।
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি ওদের সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি। তোমায় একটুও টেনসন করতে হবে না।
না না আমি টেনসন করছি না।
কলকাতা থেকে মিঃ শ্রীধরণকে পাঠিয়েছি, উনি কাকাবাবুর অপারেশন করবেন। তোমার কাছে আমি অনেক ঋণী। এটুকু ঋণ আমায় শোধ করতে দাও। মিঃ ব্যানার্জীর গলাটা ভারী হয়ে এলো।
এ আপনি কি বলছেন!
সাক্ষাতে সমস্ত কথা বলবো।
ঠিক আছে।
একেবারে রাগ করবে না।
আচ্ছা।
ফোন রাখলাম।
মিত্রা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মুখের দিকে তাকালাম। চোখদুটো হাসি হাসি। আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম।
অনাদিকে বললাম, দাদাদের জন্য একটু খাবার ব্যবস্থা কর।
আনাদি আমার দিকে তাকালো। আমি কেবিনে গেলাম, কাকাকে নিয়ে যাবার তোড়জোড় চলছে। পোষাক পরানো হয়ে গেছে। কাকা আমাকে ডাকলেন, সোফায় সবাই লম্বা হয়ে বসে আছে। আমি কাকার কাছে গেলাম, কাকা আমার হাত দুটো চেপে ধরলেন।
অনি এতোদিন শিক্ষকতা করেছি, তোদেরও পরিয়েছি, রক্তের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় সম্পর্ক। আজ অনুভব করছি। তারথেকেও বড় সম্পর্ক আছে। তুই তা প্রমান করলি। কাকা আমাকে বুকে জরিয়ে ধরলেন। কাকাকে সান্তনা দেবার ভাষা আমার নেই। চারিদিকে চোখ ঘোরালাম। থম থমে পরিবেশ। কাকীমা সুরমাসি নীপা কাঁদছে। মিত্রার একটা হাত নীপার কাঁধে।
ট্রলি এসে গেছে, ওরা কাকাকে নিয়ে যাবে।
আমি বললাম, এবার তোমরা সবাই বাইরে গিয়ে বসো। ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলো। নার্সকে কাছে ডেকে আস্তে করে বললাম, কাকা ইংরাজী ভাল বোঝেন, কিন্তু ফ্লুএন্টলি বলতে পারেন না, আপনারা একটু সাহায্য করবেন। নার্স মাথা দোলালো।
ওরা কাকাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চলে গেলো।
আমি কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, চলো কিছু খেয়ে নিই।
মিত্রা বললো, চলো ওপোরে একটা রুম ঠিক করা আছে, ওখানে গিয়ে বসি।
তোরা যা আমি একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি।
ও অনি, আমরা খাবার নিয়ে এসেছি। বড়মা বললেন।
বড়মার দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে, কাল রাতে করেছি।
তোমরা কি রাতে ঘুমোও টুমোও নি।
তুমি সব জানো।
হ্যাঁ, জানতে হয়েছে।
আজ টিভি দেখে মশাইয়ের চোখে জল চলে এসেছিল। আমার খুব খারাপ লাগছিল। আবার ভীষণ আনন্দ লাগছিলো।
কেনো ?
এপাড়ায় সকলের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছি।
কি রকম।
আমাদের টিভিটা সবচেয়ে দামী এবং বরো।
আমি ওকে এই টিভিটাই দিতে বলেছিলাম।
কত দাম নিলো।
তুমি জেনে কি করবে।
বলোনা।
না।
মা সকাল বেলা কাপরগুলো দেখে কেঁদে ফলেছিলো। মনিমা বললেন কাঁদছিস কেনো। অন্য কেউ দেয় নি, অনি দিয়েছে। ওতো আমাদের ছেলে পেটে ধরিনি এই যা।
ঠিক বলেছেন কাকীমা।
নীপা আমার দিকে ডাগর চোখে তাকিয়ে।
কাকীমা আমার মার থেকেও বড়। মা জন্মদিয়েছিলেন। মনিকাকা-কাকীমা আমায় জীবন দিয়েছেন। আমিতাভদা-বড়মা আমায় কর্ম দিয়েছেন।
অনিদা তোমায় একটা জিনিষ দেখাবো। দেখবে।
মাথা নাড়লাম।
আমি ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। নীপার কোন বিকার নেই। ও একটা প্যাকেট থেকে একটা পেন্টি আর ব্রেসিয়ার বার করলো। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ব্রসিয়ারটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। প্লাসটিকের।
এটা কি প্লাসটিকের।
সত্যি অনিদা তুমি কি বলোতো।
হেসেফেললাম।
এগুলোকে ট্রান্সপারেন্ট ব্রা বলে।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
জানো অনিদা আমার কোন ভালো ব্রেসিয়ার নেই। এতদিন ইজের পরতাম। কোথাও প্রোগ্রাম থাকলে। শেলির কাছ থেকে পেন্টি চেয়ে পরতাম। আজ তোমার পয়সায় কিনেছি। নীপা সহজভাবে কথা বলে যাচ্ছে।
আমি নীপাকে দেখছি। ওর না পাওয়া বেদনাগুলো একদিন আমারও ছিল, কিন্তু আমি সেই বেদনা আমার বুকের মধ্যে গলা টিপে মেরে ফেলেছি। কাকার কাছে হাত পেতে কোন জিনিষ চাইতে পারি নি। যদিও আমার কোন কিছুর অভাব ছিল না। তবু কোথায় যেন আমি বড় একা ছিলাম। নীপার তবু বলার মতো একটা অনিদা আছে।
তোমায় অনেক বিরক্ত করলাম। নাও শুয়ে পরো কাল সকালে আবার উঠতে হবে। গুডনাইট। নীপা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চলেগেল ভেতর বারান্দায়।
আমি একা একা অনেকক্ষণ বোবার মতো শুয়ে থাকলাম। বার বার নীপার মুখটা ভসে আসছে ও সেজেছে। আমাকে ওর মনের না পাওয়া বেদনার কথা বলেছে। এর মধ্যে দিয়ে ও কি বার্তা পৌঁছে দিতে চায় আমাকে। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে কিলবিল করছে। কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না।
সবাই ঠিক ঠাক সময়ে এসেছে। খালি দিবাকর আসেনি। আমরা সকলে বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি নীপা চা দিয়ে গেছে, চিকনা বললো, হ্যাঁরে অনাদি দিবাকর কোথায়।
অনাদি বললো আমি কি জানি, কালকে সকলের সামনেইতো কথা হলো।
হারামী।
আমি চিকনার দিকে তাকলাম। কালকে ও আমাকে বলেগেছে আসতে পারবে না।
সরি, তুই বল অনি, আজকে ওর গাদন দেবার দরকার পরলো।
ওকি তোর কথা বুঝতে পারবে। সঞ্জীব বললো।
তাওতো ঠিক। ভানুর দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁরে গোরা এসেছে।
কাল রাত থেকে এখানে এসে বসে আছে।
আরও কয়েকট নতুন ছেলে এসেছে। আমি চিনতে পারলাম না, চিকনাকে বললাম ওরা কারা।
অনাদির কালেকসন।
আমি কথা বারালাম না। অনাদিকে বললাম বাড়িতে কারা থাকবে।
তোকে চিন্তা করতে হবে না।
ঠিক আছে।
গাড়িটা মোরাম রাস্তায় আছে। অনাদি বললো তিনটে বাইকে করে কাকীমা সুরমাসি কাকাকে পাঠিয়ে দিই তারপর আমরা যাবো।
তাই কর।
কয়েকজন হেঁটে চলে গেলো। আমি অনাদি, চিকনা, সঞ্জীব, বাসু বেঞ্চে বসে আছি। ওরা সবাইকে একে একে নিয়ে গেলো। নীপাকে বললাম, মোবাইলটা একটু দাও। নীপা মোবাইলটা দিয়ে গেলো। চিকনা বললো, কিরে তুই রেডি হলি না। নীপা বললো এখুনি হয়ে যাবে। নীপা ভেতরে চলে গেলো, আমি সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, সিমটা খুলে এই সিমটা লাগা।
এ্যাকটিভেট হয়ে গেছে।
হ্যাঁ।
দেখছিস এই হচ্ছে সঞ্জীব।
চিকনা খিস্তি দিলো।
বুঝলি অনি এদের কাছ থেকে কোন দিন ভাল কাজ করে ভাল কথা শুনবি না, খালি খিস্তি খিস্তি। সঞ্জীব বললো।
আমি হাসলাম।
হায় হায় কত মিসকল।
কার।
তোর।
দেখি দে।
দেখলাম অনেক মিশ কল তার মধ্যে বড়মা মিত্রারও আছে। বুঝলাম ওরা বেরিয়ে পরেছে।
তোদের বাইক গুলো কে চালাবে।
কেনো।
ভাবছিলাম ওই ছেলে গুলো যদি বাইক গুলো নিয়ে যেতো তাহলে আমরা একটা গাড়িতে সবাই যেতাম।
বাসু আমার মনের কথা বুঝতে পারলো। ও অনাদিকে বললো বাইকে করে ওদের চলে যেতে বল। ভানুকে কাকার গাড়িতে বসতে বল। নীপা কি ওই গাড়িতে যাবে।
না। আমাদের সঙ্গে যাবে। আমি বললাম।
ঠিক আছে। চিকনা তোর বাইকটা।
পোঁদ পাকাটাকে দিস না, বিজনকে দে ।
বাসু বললো ঠিক আছে।
অনাদি বাসুর কথা মতো সব ব্যবস্থা করলো। নীপা আজ নতুন শালোয়ার পরেছে। বেশ সুন্দর দেখতে। চিকনের কাজের ওপর। বাসু যে এত সুন্দর শালোয়ার রাখতে পারে আমার জানা ছিল না। নীপাকে মানিয়েছেও বেশ। বাসন্তী কালারের ওপর বেদনা রংয়ের শুতো দিয়ে কাজ করা।
বহুত মাঞ্জা দিয়েছিস। চিকনা বললো।
নীপা চিকনার দিকে একবার তাকালো।
না দিদিভাই, অন্যায় হয়েছে, আর হবে না।
হ্যাঁরে সঞ্জু চিকনাটা সবার পেছনে লাগে...।
হারামী।
তোর বাপ ঘরামী।
ওঃ তোরা কি এখনো সেই ফাইভের ছেলের মতো।
কি করি বল অনি সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি আর এই টুকু.....।
নীপার দরজায় তালা দেওয়া শেষ হলো। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি রেডি। অনাদি বললো চল। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, তোর লোক কোথায়।
তোকে বলেছি না, ঠিক সময় চলে আসবে।
আমরা পায়ে পায়ে মোরাম রাস্তার কাছে চলে এলাম। অনাদি একটু আগে আগে হাঁটছে আমার পাশে নীপা বাসু পেছনে চিকনা সঞ্জীব। চিকনা সঞ্জীব খুনসুটি করেই চলেছে। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, হরিহর আত্মা একদিন দেখা না হলে দুজনে পাগল হয়ে যাবে। ওরা আমাদের অক্সিজেন।
হাসলাম।
গাড়ির ওখান থেকে একটু হই হই আওয়াজ পাচ্ছি। বাসু বললো স্যারের গলা। খেপেছে। পা চালিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে এলাম।
ওইতো অনি এসেছে। অনাদি বললো।
এসেছে। কাকা আমার আসায় আশ্বস্ত হলেন।
কিহলো।
স্যার তখন থেকে খালি অনি অনি করছে।
আমি কাকাকে বললাম কি হয়েছে।
না কিছু হয় নি। তুই আসলি না এরা কি এসব পারবে।
খুব পারবে। ওরাও তোমার ছাত্র। আমারই মতো।
ফ্যাল ফ্যাল করে কাকা আমার দিকে তাকালো।
ঠিক আছে তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি নীপাকে নিয়ে পেছনের গাড়িতে বসছি ভানু পাঁচু তোমার গাড়িতে বসছে।
ঠিক আছে।
গাড়ি ছারলো। আমি নীপা পেছনে, মাঝে বাসু সঞ্জীব অনাদি। সামনে চিকনা পচা।
কিরে অনি তোর কি টেনসন হচ্ছে। অনাদি বললো।
কেনো।
চুপচাপ।
না।
নীপা ফিক করে হাসলো।
কিরে নীপা হাসলি কেনো। চিকনা বললো।
বীরপুরুষ।
কে।
কে আবার।
কেন কি হয়েছে।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। চোখ পাকাচ্ছে। কাল সারারাত বারান্দায় পায়চারি করেছে। আর সিগারেট খেয়েছে।
হ্যাঁ। টেনসনতো একটু থাকবেই। অনাদি বললো।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম অমিতাভদার ফোন।
হ্যাঁ বলো। কোথায় তোমরা।
আমরা পৌঁছেগেছি।
তার মানে।
গাঢ়ল কোথাকার একটা কান্ডজ্ঞান নেই। কটা বাজে দেখেছিস ঘড়িতে।
ঘড়ি নেই।
সেই জন্য। ধর কথা বল। বড়মার গলা।
কাল সারারাত ঘুমোও নি নাকি।
খুব ভাল ঘুমিয়েছি।
তাহলে এত সকালে পৌঁছলে কি করে।
অনাদি বাসু নীপা আমার দিকে তাকিয়ে।
আমরা কাল রাতে এসেছি।
তার মানে।
হ্যাঁ। তুই আয় সব বলবো।
ঠিক আছে।
আচ্ছা পাগলদের নিয়ে আমি পরেছি।
কিহলো।
দাদারা কাল রাত থেকে এসে আছেন, বোঝ।
অনাদি আমার দিকে তাকালো, কাল রাতে। থাকলো কোথায় ?
ওনার থাকার জায়গার অভাব।
ঠিক বলেছিস।
আমি মানিপার্স থেক অনাদির হাতে চারটে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললাম এটা রাখ। প্রয়োজনে চেয়ে নিবি। পৌনে সাতটা নাগাদ পৌঁছলাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ কোথাও নেই। দাদারা তারমানে আসেন নি। বড়মা কি করে বললো চলে এসেছে। অনাদির চেলুয়া গুলো আমাদের বেশ কিছুক্ষণ আগেই পৌঁছে গেছে। অনাদি নেমে আগে চলে গেলো। রিসেপসনিস্ট কাউন্টারে গিয়ে বলতেই, ভদ্রমহিলা কাউন্টার ছেরে ছুটে ভেতরে চলে গেলেন।
নার্সিংহোমের ক্যামপাসটা বেশ বড়। কালকে তাড়াহুড়োর চোটে কিছু দেখা হয় নি। পেছনের দিকে স্টাফ কোয়ার্টার আছে। এই রকম অজ জায়গায় সাজানো গোছানো একটা আধুনিক নার্সিংহোম থাকতে পারে আগে কখনো ভাবি নি। তবে এই যা হাইরোডের একেবারে গায়ে। কমিউনিকেসন খুব সুন্দর। অনাদি কাল যেতে যেতে বলেছিল, এই নার্সিংহোমটা এখন এই এলাকার হাসপাতাল। নীপা আর চিকনা কাকাকে ধরে ধরে ভেতরে আনলো। সোফায় বসালো। অনাদি বললো ভদ্রমহিলা গেলেন কোথায় বলতো।
কিছুক্ষণ পরে দেখলাম, ভদ্রমহিলা একজন স্যুট টাই পরা ভদ্রলোকের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। ভদ্রলোক এসে আমার নাম ধরে খোঁজ করলেন। আমি এগিয়ে গেলাম। আমার হাত ধরে বেশ কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে ইংরাজীতে আমাকে জানালেন, উনি এখানকার ম্যানেজার, নাম মিঃ মুরলী শ্রীধরণ।
আমি আমার নাম আবার বললাম, বুঝলাম উনি সাউথ ইন্ডিয়ান। বাংলার বও জানেন না। কিন্তু কালকে এই ভদ্রলোক ছিলেন কোথায় ?
উনি আমাকে জানালেন, উনি আমাকে বিলক্ষণ চেনেন, তবে নামে, আমার লেখার উনি ভীষণ ভক্ত।
কিছু বললাম না, আমি লিখি বাংলায়, ও বেটা পরে কিকরে ? সন্দেহ ঠেকলো, মুখে কোন বহিঃপ্রকাশ করলাম না। হেঁসে হেঁসে আমিও তার প্রতি উত্তর দিলাম ইংরাজীতে।
আমার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর, কিছুক্ষণ ওনার সঙ্গে কাকার ব্যাপার নিয়ে কথা বললাম। কাকার ব্যাপারটা উনি পঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আমার কাছে জানলেন। মনে হল ওনাকে ঠিক সেটিসফায়েড করতে পারলাম না। বললাম আপনি কাকার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
উনি মাথা দুলিয়ে বললেন, ওটাই ঠিক, যা কথা হচ্ছে সব ইংরাজীতে, নীপা আর বাসু আমার দুপাশে, তার পাশে অনাদি আর চিকনা। ওরা আমার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
কাকার সামনে গিয়ে কাকাকে দেখলেন, ইংরাজীতে দুচারটে কথা জিজ্ঞাসা করলেন, আমি দোভাষীর কাজ করলাম। তারপর রিসেপসন কাউন্টারে গিয়ে রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে কি যেন বললেন, উনি একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এলেন। কাকাকে চেয়ারে বসিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওনার কেবিন নম্বর এস-৬।
অনিকে বললাম, এরা টাকার কথা কিছু বললো নাতো। কালকে বলেছিলো, ব্যালেন্স টাকাটা ভর্তি হওয়ার আগে দিয়ে দিতে হবে। ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। অনাদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি হলো।
দাঁড়া হজম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
হাসলাম।
তুই শালা পেঁয়াজ।
কি করে বুঝলি।
খালি খোসা ছাড়িয়ে যেতে হবে, আসল মালটা অনেক ভেতরে।
নীপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আমার একটা হাত চেপে ধরে আছে।
ছার ওসব কথা। কলকে এই ভদ্রলোক ছিলেন কোথায় ?
সেতো আমিও বুঝতে পারছি না।
মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোনও একটা খেলা চালু হয়েছে।
বাসু আমার দিকে তাকালো, তুই ভাল বুঝতে পারবি আমাদের থেকে।
চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো, ছেলেগুলো এসেছে অদ্দূর থেকে ওদের কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কর।
ওই দায়িত্বে পচা আছে, তোকে ভাবতে হবে না। আমি তোর কাছ ছারা হচ্ছি না।
সঞ্জীব কোথায়।
বাইরে আছে।
চল একবার গিয়ে কেবিনটা দেখে আসি।
রিসেপসনিস্ট কাউন্টারের ভদ্রমহিলাকে গিয়ে বললাম, উনি বললেন একটু দাঁড়ান আমরা কিছ পরীক্ষা কর নিই আগে তারপর।
অগত্যা কাকীমা সুরমাসির পাশে এসে সোফায় বসলাম। কাকীমার চোখ দুটো ছল ছল করছে। আমার হত দুটো ধরে বললেন, অনি।
আমি বললাম কাঁদছ কেনো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নীপা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছ। কিছুক্ষণ পর সেই ভদ্রমহিলা এসে বললেন এবার যেতে পারেন।
পায়ে পায়ে ভেতরে গেলাম। করিডোরের সামনের ঘরটাই এস-৬ কেবিন। কালকে কেবিনের পয়সা আমার কাছ থেকে নেয়নি তো! যাক এখন এই নিয়ে ভাবতে চাইলাম না। কাকা বিছানার ওপর হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত তোলা।
কাকীমা কাকার পাশে গিয়ে বসলেন।
কাকা বললেন, আমার চোখে ওষুধ দিয়ে গেলো, কি সব পরীক্ষা করলো, ইঞ্জেকসন দিয়ে গেলো, বললো ৯.৩০ অপারেশন। কাকীমা আমার হাত দুটো মুঠো করে ধরলেন, ও অনি....কাকীমার চোখে জল।
কাঁদছ কেনো। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবে কাকা এবার চশমা ছাড়াই দেখতে পাবে। এখানে কাঁদতে নেই, লোকে কি ভাববে।
অনাদি বললো, অনেক দিন আগে এই রুমটায় ঢুকেছিলাম, মানসদাকে দেখতে, এটা ভিআইপিদের রুম।
আমি ঘরের চারিদিকে একবার চোখ বোলালাম, ঘরের ডেকরেশন তাই বলে। কিন্তু অমিতাভদারা গেলেন কোথায়! বললেন কাল রাত থেকে এসে বসে আছেন। ঘরটা এসি, বেশ ঠান্ডা লাগছে, কাকা কেমন গুটি-সুটি মেরে গেছেন। রুম সার্ভিস বেলটা বাজালাম, সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স এসে হাজির।
ইংরাজীতেই তাকে বললাম, এসিটা একটু বন্ধ করে দিতে।
মেয়েটি বললো, কমিয়ে দিচ্ছি স্যার, বন্ধ করা যাবে না।
ঠিক আছে। মেয়েটি এসির টেম্পারেচার বারিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
পাঁচু ছুটতে ছুটতে ঘরে এলো, অনি অনি চল চল পঙ্খীরাজ গাড়ি করে কারা যেন এসেছে। তোকে খোঁজা খুঁজি করছে। বুঝলাম সাহেবরা এসেছেন, কাল চলে এসেছে! তাহলে এতো দেরি! নীপা আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে। চিকনাকে দেখতে পেলাম না। অনাদি এবং বাসু সঙ্গে আছে।
কাকাকে বললাম, দাঁড়াও আমি আসছি।
কাকা বললেন যাও।
আমি ঘরের বাইরে এলাম, দেখলাম শ্রীধরণ ওদের সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। সামনে মল্লিকদা, সবার পেছনে মিত্রা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কপালে ডগ ডগ করছে সিঁদুর। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। একটা সাদা চিকনের সালোয়ার পরেছে। মনে হচ্ছে কোন বুটিক থেকে আনানো। সচর আচর এগুলো চোখে পরে না। ওকে আজ সৌম্য শান্ত দেখাচ্ছে। সেজেছে কিন্তু সেই সাজার মধ্যে মনহারিনী ব্যাপার আছে।
আয়া পরসি। মল্লিকদা বললেন।
নীচু হয়ে প্রণাম করলাম। আমার দেখা দেখি, সকলে প্রণাম করলো।
অনি লাইফে প্রেথম প্রেণাম পেলাম তোর কাছ থেকে।
প্রেথম না প্রেথ্থম। বাঙাল ভাষাটাও সঠিক ভাবে বলতে পারো না।
সবাই হেসে উঠলো।
দিলিতো গ্যামাকসিন মেরে।
আমার আশেপাশের সবাই হেসে ফেললো।
আমি সবার সঙ্গে একে একে পরিচয় করিয়ে দিলাম। মিত্রা নীপাকে কাছে টেনে নিল। ছোটমার দিকে তাকিয়ে নীপার গালে হাত দিয়ে বললো কি মিষ্টি দেখতে। বড়মা আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, কিরে এরি মধ্যে মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে। আমি বললাম এই শুরু করলে আবার। এই জন্য আসতে বারন করেছিলাম। ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলবো না। ছোটমা চোখে মুখে কথা বলছে। নীপার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললো এখানে এসেও সখী জুটিয়ে নিয়েছো।
হাসলাম।
ভেতরে গেলাম। কাকা কাকীমা সুরমাসির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওরা সকলে সকলের কুশল বিনিময় করলো। মিত্রা সবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। ওরা প্রণাম কেউ নিতে চায় নি। মিত্রাও ছাড়ে নি। শেষে অমিতাভদা বললেন, অনি যেমন আপনাদের ছেলে ও তেমনি আপনাদের একটা মেয়ে। ও যখন প্রণাম করতে চাইছে ওকে করতে দিন।
আমি বললাম এবার চলো। এখানে বেশি ভিড় করে লাভ নেই। নার্সিংহোমের অন্যান্য পেসেন্ট পার্টিরা আজ যেন কেমন অচ্ছুত। সবার কনসেনট্রেসন যেন আমাদের দিকে। করিডোরে বেরিয়ে এলাম। মিঃ শ্রীধরণ আমায় ছুটতে ছুটতে এসে বললেন, স্যার আপনার একটা ফোন আছে।
আমার!
হ্যাঁ স্যার। মিঃ ব্যানার্জী করেছেন।
মিঃ ব্যানার্জী!
শ্রীধরণের সঙ্গে মিত্রার চোখাচুখি হলো। আমি লক্ষ্য করলাম।
ফোনটা এসে ধরলাম।
হ্যালো।
অনি।
হ্যাঁ।
তুমি খুব রাগ করে আছো মনে হচ্ছে।
কেনো।
সরি আজ আমি তোমার পাশে থাকতে পারলাম না।
তাতে কি হয়েছে।
আরে না না....।
আপনাকে কে খবর দিলো ?
মিত্রা কাল আমায় সব বলেছে।
এই ফোন নম্বর পেলেন কোথায় ?
হাসলেন, এটা আমার নার্সিংহোম।
তাই নাকি ! বাবা তাহলেতো....।
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি ওদের সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি। তোমায় একটুও টেনসন করতে হবে না।
না না আমি টেনসন করছি না।
কলকাতা থেকে মিঃ শ্রীধরণকে পাঠিয়েছি, উনি কাকাবাবুর অপারেশন করবেন। তোমার কাছে আমি অনেক ঋণী। এটুকু ঋণ আমায় শোধ করতে দাও। মিঃ ব্যানার্জীর গলাটা ভারী হয়ে এলো।
এ আপনি কি বলছেন!
সাক্ষাতে সমস্ত কথা বলবো।
ঠিক আছে।
একেবারে রাগ করবে না।
আচ্ছা।
ফোন রাখলাম।
মিত্রা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মুখের দিকে তাকালাম। চোখদুটো হাসি হাসি। আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম।
অনাদিকে বললাম, দাদাদের জন্য একটু খাবার ব্যবস্থা কর।
আনাদি আমার দিকে তাকালো। আমি কেবিনে গেলাম, কাকাকে নিয়ে যাবার তোড়জোড় চলছে। পোষাক পরানো হয়ে গেছে। কাকা আমাকে ডাকলেন, সোফায় সবাই লম্বা হয়ে বসে আছে। আমি কাকার কাছে গেলাম, কাকা আমার হাত দুটো চেপে ধরলেন।
অনি এতোদিন শিক্ষকতা করেছি, তোদেরও পরিয়েছি, রক্তের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় সম্পর্ক। আজ অনুভব করছি। তারথেকেও বড় সম্পর্ক আছে। তুই তা প্রমান করলি। কাকা আমাকে বুকে জরিয়ে ধরলেন। কাকাকে সান্তনা দেবার ভাষা আমার নেই। চারিদিকে চোখ ঘোরালাম। থম থমে পরিবেশ। কাকীমা সুরমাসি নীপা কাঁদছে। মিত্রার একটা হাত নীপার কাঁধে।
ট্রলি এসে গেছে, ওরা কাকাকে নিয়ে যাবে।
আমি বললাম, এবার তোমরা সবাই বাইরে গিয়ে বসো। ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলো। নার্সকে কাছে ডেকে আস্তে করে বললাম, কাকা ইংরাজী ভাল বোঝেন, কিন্তু ফ্লুএন্টলি বলতে পারেন না, আপনারা একটু সাহায্য করবেন। নার্স মাথা দোলালো।
ওরা কাকাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চলে গেলো।
আমি কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, চলো কিছু খেয়ে নিই।
মিত্রা বললো, চলো ওপোরে একটা রুম ঠিক করা আছে, ওখানে গিয়ে বসি।
তোরা যা আমি একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি।
ও অনি, আমরা খাবার নিয়ে এসেছি। বড়মা বললেন।
বড়মার দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে, কাল রাতে করেছি।
তোমরা কি রাতে ঘুমোও টুমোও নি।