11-07-2019, 05:21 PM
সতী-২৫(১)
সজীবের মাথায় কিছু ঢুকছেনা। ঝুমা রায় বিপদে আছে। তার বিপদের কারণ তার বাবা। সে কি করতে পারে এ জন্যে? ঝুমার সাথে তার বাপীর যৌনতা সে উপভোগ করতে চেয়েছিলো। ঝুমা এই উৎসাহকে প্রেম ভেবেছিলো। তবু ঝুমার জন্য তার ভিতরে কোথায় যেনো একটা মায়া জন্মেছে। এটা প্রেম না অন্যকিছু সেটা জানা নেই সজীবের। সে নাসিরকে অনেকটা জোর করেই গাড়িতে তুলে নিলো। সুরেশকে বলল-তুমি ফার্মগেটের দিকে যাও। নাসির বেশ তুন নেশায় আছে। সজীবের নেশা চাঙ্গে উঠেছে। নেশার পর সময় কাটাতে হয় ফুর্ত্তি করে। কিন্তু ঝুমা রায় প্রসঙ্গটা তার নেশাকে চাঙ্গে তুলে দিয়েছে। নাসির বারবার গাড়িতেই সিগারেট ধরাতে চাইছে। সজীব এলাউ করছে না। গন্ধটা থেকে যাবে তাই। নাসির একবারও তাকে কি নিয়ে টেনশান করছে সে জানতে চায় নি। নাসির অমনই। তাকে যদি এখন সজীব বলে বন্ধু আমার জন্য তোমারে একটা খুন করতে হবে পারবা? নাসির হাসতে হাসতে সেটা করতে রাজী হয়ে যাবে। খুন করার কোন প্রসঙ্গ কখনো আসেনি। কিন্তু এরকম কিছু ঘটনা আছে যে সজীব দেখেছে নাসির তার বিষয়ে জড়াতে আগুপিছু ভাবে না। ফার্মগেট পৌঁছাতে সময় লাগলো না। গাড়িটাকে কোথাও পার্ক করার জন্য বলে নাসিরকে নিয়ে নেমে পরল সজীব গাড়ি থেকে। নাসির জানতেও চাইছেনা তারা কোথায় যেতে চাইছে। জোহরের আজান শুনে সজীব বুঝলো দুপুর হয়ে গেছে। নাসির নানা কথা জুড়ে দিয়েছে। ইয়াবার গুন এটা। কথা বলতেই থাকবে নাসির এখন। ক্লান্ত হবে না। একটা রিক্সা নিলো সজীব। যদিও রিক্সাঅলাকে বলতে পারলো না সে কোথায় যাবে। কেবল বলেছে গলির ভিত্রে যামু, যাইবা? রিক্সাঅলা রাজী হয়ে গেছে। একটা বাঁকে এসে সজীবের মনে হল এটাই সেটা যেটাতে ঝুমা রায়কে অনুসরন করে সে এসেছিলো। কিছুই পরিচিত লাগছেনা সজীবের। তবু একটা রাস্তা সিমেন্টের ঢালাই শেষ হয়েছে তারপর পুরোনো ভাঙ্গাচুড়া পিচ ঢালাই শুরু হয়েছে এটাকে তার পরিচিত মনে হল। কিন্তু তারপর তার সব গুলিয়ে গেলো। সবগুলোই এক মনে হল তার। অনেকটা আচমকা সে লন্ড্রির দোকানটা দেখতে পেলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই চিতকার দিয়ে বলল-মামা রাহো আর যাইতে হইবো না। সজীব ঠিক রাস্তাতেই এসেছে। নাসির এবারে জানতে চাইলো-বস এইহানে কেন আইছো। ডাইল খাইবা নিকি? সজীব নাসিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। বলল এইটা কি ডাইলের স্পট নাকি? নাসির শয়তানের হাসি দিলো। বলল-বস তুমি অনেক ঘাগু জিনিস। একেবারে একদমে ডাইলের স্পটে আয়া কোইতাসো এইটা ডাইলের স্পট নিকি। হুনো ওই জিনিসটা আমার খারাপ লাগে না। মুখে স্বাদটা থাকে অনেকক্ষণ।সজীব রিক্সাঅলাকে ভাড়া দিচ্ছিলো। দেখলো নাসির সোজা গিয়ে ঝুমার মেসোর লন্ড্রি দোকানের সামনে চলে গেছে। মেসোর সাথে কথাও বলল সে। সজীব বুঝতে পারলো না বিষয়টা। নাসির টুক করে ঝুমার মেসোর লন্ড্রির পাশ দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাওয়া একটা সরু গলিতে ঢুকে গেলো। অবশ্য আবার গলির মুখে এসে সে মাথা বের করে সজীবকে উদ্দেশ্য করে বলল-বন্ধু তুমি খারাও আমি আইতাছি। ফুল খাইবা না হাফ খাইবা? ঝুমার মেসো অবশ্য সেসব নিয়ে মোটেও কৌতুহল দেখালো না। সজীব অনেকটা বিভ্রান্তের মত বলল-তোমার খুশী। নাসির চলে গেলো গলির ভিতরে। সজীব এসে দাঁড়ালো ঝুমার মেসোর কাছে। ভদ্রলোক তাকে চিনে ফেললেন কাছে যেতেই। হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন-কি অইছে? মায় কি রাজী হোয়া গেছে নিহি? * মাইয়া বিয়া করতে আয়া পরছেন এহানে? সজীব হাসতে পারলো না। সে লন্ড্রির টেবিলে কনুই ঠেক দিয়ে ফিসফিস করে বলল-আঙ্কেল ঝুমা অনেক বিপদে আছে জানেন? মেসো চোখ বড় বড় করে ফেলল। কেঠায় কই ছে আপনেরে? কি অইছে ঝুমার? কাইলতো দেখলাম তারে সব ঠিকঠাক। আইজ অবশ্য বাইর অয় নাইক্কা ঘর থেইকা। কোচিং এ যাইতে দেহি নাই। সজীব বলল-আঙ্কেল ঝুমার বাবা কি ওকে কোন ভিন্ন পুরুষের কাছে বেচে দিতে পারে? ভদ্রলোক চশমাটা খুলে হাতে নিলেন। তারপর পরনের শার্টের হাতা দিয়ে সেটা মুছতে মুছতে বললেন-হের বাপে যে কোন কিছু করতে পারে। তাতে আপনের সমস্যা কি? সজীব গলা আরো নামিয়ে বলল-আঙ্কেল আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আপনারও কি সমস্যা নেই? চশমাটা চোখে দিতে দিতে ভদ্রলোক বললেন-হের বাপে একটা অমানুষ। হেয় যে কোন কিছুই করতে পারে। বৌডারে আধামরা কইরা রাখছে। আমরা কিছু করতে পারি নাইক্কা। কিন্তু আপনে এতোকিছু জানলেন কেমনে। আপনে কি পুলিশের লোক নিহি? আপনের লগেরডায় তো ডাইল খাইতে আইছে। মুন্নার বন্ধু আপনের লগেরডায়। মুন্নারে বেবাকতে চিনে এহানে। ঝুমারে কি হের বাপে হাচাই বেচা দিছে নিহি! তয় বেচার পাবলিক না হেয়। নিজের কাছে রাইখা ভাড়া খাটাইতে পারে। ভদ্রলোক কথা শুরু করে দম ফেলছেন না। জাহানারা খালার মতন মনে হল লোকটার নেচার। এতো সহজে এসব বলছেন কি করে সজীবের মাথায় আসছে না। ঝুমার মা আধমরা মানে কি সেটাও তার মাথায় ঢুকছে না। সে হুট করেই মেসোর হাত ধরে বলল-জানতে চাইবেন না আমি কি করে জানলাম। আপনার মেয়ের নাম কি তমা? সেও নিরাপদে নাই। আপনি প্লিজ ওকে আজ ঘর থেকে বেরুতে দেবেন না। খায়ের নামের লোকটার সাথে ঝুমার বাবা তমাকে নিয়ে কন্ট্রাক্ট করছে। আমি বেশী কিছু বলতে পারবো না আঙ্কেল। প্লিজ কিছু করুন। ঝুমাকে সেভ করুন। তমাকে সেভ করুন। ভদ্রলোক এবারে নার্ভাস হয়ে গেলেন। হোই মিয়া আপনে আমার মাইয়ার নাম জানলেন কেমনে? হে তো এইখানে থাকে না। হে থাকে লুকাস মোড়ে। সজীব বলল যেইখানেই থাকুক প্লিজ ওকে আজ ঘর থেকে একা ছাড়বেন না। আর প্রতিদিন নিজের কাষ্টডিতে রাখবেন। ভদ্রলোক ঘেমে গেলেন রীতিমতো। নিচের ড্রয়ারে রাখা ফোনটা বের করে ফোন করলেন। সজীব ছটফট করতে লাগলো। নাসির এ সময় চলে এলে তার পক্ষে মেসোর সাথে কথা বলা সম্ভব হবে না। শুনতে পেলো মেসো বলছেন-তমা তুমি কোনহানে? আইজ কোনখানে যাইবা মা? ওপাশ থেকে কি বক্তব্য এলো সজীব শুনতে পেলো না। কিন্তু ওপাশের বক্তব্য শোনার পর মেসো উত্তেজিত হয়ে গেছেন। তোমারে যেইটা জিগাই হেইটার উত্তর দেও। তুমি কোই যাইবা আইজকা বিকালে? মেসো গজগজ করে আরো কিছুক্ষন চেচামেচি করলেন। তারপর ফোন বন্ধ কেটে দিলেন। কিছু বুঝবার পারলাম না। হে তো কইতাছে বিকালে হের বান্ধবীর জন্মদিন আছে। ফোন কেটে দিয়ে সজীবকে বলল মেসো। সজীব ফিসফিস করে বলল-মেসো প্লিজ আপনি ওকে বাইরে এলাউ করবেন না। ঝুমার বাবা খায়ের নামের একজন সেজে তার সাথে ফেসবুকে সম্পর্ক করেছে। বাজে সম্পর্ক। আজ খায়ের কোন এক সময় আপনার মেয়ের সাথে কোথাও দেখা করবে। আমি ঠিক জানিনা কোথায় দেখা করবে এরা। তবে যেটুকু জেনেছি তার মানে হল আপনার মেয়েকে ওরা দুজনে নষ্ট করার টার্গেট নিয়েছে৷ একবার এ লাইনে ঢুকলে আর ফেরার পথ নেই। মেসো আতঙ্কিত হয়ে বললেন-কন কি এইসব। আমার মাইয়া এহনো ছোড। হে বুইড়া বুইড়া বেডাগো লগে যাইবো কেন? আইচ্ছা আপনে আর কি জানেন কনতো দেহি? আপনে কি জানেন ঝুমার মা আছে? হের নাম জানেন আপনে? সজীব মেসোর চোখের দিকে শান্ত ভাবে তাকালো। তারপর ফিসফিস করে বলল শেফালি রায়। ঝুমার অনেক বিপদ। আপনার মেয়ে তমারও বিপদ। ঝুমার মায়েরও অনেক বিপদ। সজীব দেখলো ভারি চশমার উপর দিয়ে মেসোর চোখগুলো ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে।
মেসো খপ করে সজীবের হাত ধরে ফেলল-ভাই আপনে কি ফেরেস্তা নিহি! শেফালির নাম এই অঞ্চলের কেউ জানে না। আপনে থাহেন কোই? পুরান ঢাকার মানুষ নিহি আপনে? সজীব আবারো শান্ত গলায় বলল-মেসো আমি থাকি মিরপুরে। বর্ন এন্ড ব্রটআপ মগবাজারে। পুরান ঢাকায় আমি গিয়েছি অনেকবার৷ তবে সেই সূত্রে আমি ঝুমার মায়ের নাম জানি না। ঝুমাও আমাকে তার মায়ের নাম বলে নি কখনো। আমি কোত্থেকে কি জেনেছি এটা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না প্লিজ। মেসো আয়রন করার টেবিলের এক কিনারে চলে গেলেন সজীবের হাত ছেড়ে। তারপর একটা কাঠ তুলে সেখান থেকে বেড়িয়ে দোকানের বাইরে এলেন। সজীবকে ধরে বললেন-আপনে ভিত্রে আহেন। অনেকটা টেনেই সজীবকে তিনি দোকানের ভিতরে নিয়ে গেলেন। তারপর জোর করে একটা খারা লম্বা টুলের উপর তাকে বসিয়ে দিলেন। স্পষ্ট কন্ঠে বললেন-আপনে এহানে ডাইল খাইতে আইছেন না আমার লগে এইসব কইতে আইছেন? সজীব বলল-জ্বী আমি এসেছি ঝুমাকে হেল্প করতে। ঝুমার খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। ওর বাপ মেয়েকে শরীরের ব্যবসায় জড়াচ্ছে। দু একদিনের মধ্যে ঝুমাকে তিনি কোন প্রভাবশালী ক্ষমতাধর মন্ত্রীর কাছে তুলে দেবেন। তারপর থেকে ঝুমার জীবনটা ওর মা শেফালির জীবনের মতন দুর্বিসহ করে তুলবেন। সেই সাথে আপনার মেয়ে তমাকেও তিনি টার্গেট করেছেন। এখানে ফেন্সিডিল বেচার স্পট আছে সেটা আমি জানতাম না। আমার বন্ধু নাসির জানত। আমি আপনাকে যা বলেছি সে সেসব কিছু জানে না। তবে আমি ওকে এনেছি এসবের সাথে জড়াতে। আমি নিজে কোথাও মাস্তানি করতে পারি না। ও সেসব পারে। ওর কানেকশন আছে। মেসো বললেন-হুমম হেরে আমি চিনি। বেয়াদব কিসিমের। মুন্নার লগে ভাল খাতির আছে হের। মুন্নারে এহানে সবাই ডরায়। সজীব বলল আমি কি মুন্নারে ঝুমার বাপের বিরূদ্ধে কাজে লাগাতে পারবো? মেসো বললেন-নাহ্। ঝুমার বাপের হাত অনেক লম্বা। সিনক্রিয়েট করা ছাড়া মুন্না আপনার জন্য কিছু করতে পারবে না৷ আর আমার মাইয়ার বিষয়টা আমি দেখবো। শুয়োরের বাচ্চারে খুন করে ফেলবো আমি। ঝুলন একটা চামার। তার অনেক কিছুর স্বাক্ষ্যী আমি। যাউগ্গা আপনে এইসবে জড়ায়া লাভ নাই। ঝুমারে আমি অনেক আগেই সাবধান করছি। নানা ইঙ্গিত দিছি। হে শুনে নাই। মেসোর এই বাক্যটা শেষ হতে না হতেই নাসির উদয় হল গলির মুখ থেকে। সে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে খোঁজা শুরু করেছে সজীবকে। সজীব ফিসফিস করে বলল-মেসো তাহলে তারে কিছু বলার দরকার নাই। কিন্তু আমি ঝুমার জন্য কিছু করব। আপনার সাহায্য চাইবো। করবেন না? মেসো তার কথার উত্তর দিলো না, ঘাড় বের করে সামনে এগিয়ে-হোই মিয়া এদিকে আহেন আপনের বন্ধু এইহানে-বলে চিৎকার দিলো নাসিরের উদ্দেশ্যে। নাসির সেদিকে ফিরেই বন্ধুকে লন্ড্রি দোকানের ভিতরে দেখে অবাক হল। তার প্যান্টের ভিতর হাত ঢুকানো দেখে সজীবের বুঝতে অসুবিধা হল না যে পকেটে করে ফেন্সি নিয়া আসছে নাসীর। মেসো ফিসফিস করে বললেন-সমস্যা নাই তারে ভিতরে ডাক দেন। চা খাইবেন? দিতে কমু? সজীব বলল চা দোকানে খেয়ে নেবো আঙ্কেল। লোকটা-ধুর মিয়া বাইরে মানুষরে দেহায়া খাইবেন নিহি এইসব? ভিত্রে বোয়া খান বলে মেসো নাসিরের জন্য টেবিলের কাঠ উঁচিয়ে ধরলেন। নাসির বেকুবের মত তাকিয়ে থেকে ভিতরে ঢুকে পরল দোকানের। সজীবকে জিজ্ঞেস করল-আঙ্কেলরে চিনো কেমনে? তুমি তো এইদিকে কখনো আড্ডা দিতে আসো নাই। সজীব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল-ইনি আমার পরিচিত অন্যভাবে। মেসো বললেন-তাড়াতাড়ি কাম সারেন। আর এইহান থেইকা কাইটা পরেন। নাসির পকেট থেকে বোতল বের করে করররররত করে মুখটা খুলে ঢকঢক করে হাফ মেরে দিয়ে তাকালো সজীবের দিকে। সজীব হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিয়ে বলল-মেসো মাফ করবেন। ভদ্রলোক ম্লান হাসি দিয়ে বলল-এইগুলা না খাওয়াই ভালো। সজীব একদমে জিনিসটা শেষ করতেই মেসো তার কাছ থেকে বোতলটা নিয়ে টেবিলের নিচে রেখে দিলো। ফস করে সিগারেট ধরিয়ে ফেলল নাসির। সেটার দিকে ইঙ্গিত করে সজীব মেসোকে বলল-সরি আঙ্কেল। মেসো হাসতে হাসতে বললেন-আপনে মিয়া অরিজিনাল মাল। ভাল লাগছে আপনেরে। অসুবিধা নাই আপনেও ধরান। সজীব একটু শাসানির গলায় নাসিরকে বলল-আঙ্কেলের সামনে সিগারেট না ধরালে হত না বন্ধু! নাসির কাঠ তুলে দোকান থেকে বেরুতে বেরুতে বলল-সরি আঙ্কেল। খায়া লগে লগে সিগারেটে টান দিতে না পারলে সুখ লাগে না। সজীবও নাসিরকে অনুসরন করে বেড়িয়ে পরছিলো৷ মেসো তার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে নাসিরের উদ্দেশ্যে বললেন-আপনে আউগান, হের লগে দুইডা কথা কমু। দুই মিনিট লাগবে। নাসির দুজনের দিকেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনে হাঁটা দিলো সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে৷নাসির দৃষ্টির আড়াল হতেই মেসো একটা আলমিরা থেকে একটা বেনসনের প্যাকেট বের করে সেটা সজীবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-আপনে ভালা মানুষ। ধরেন একটা ফাটান। সজীব সত্যি সত্যি একটা সিগারেট নিয়ে ধরালো। মেসো ফিসফিস করে বললেন-ঝুমারে বিয়া করবেন আপনে? সজীব উত্তরে বলল-দরকার না হলে করব না। তবে তাকে বাঁচাতে যদি দরকার হয় তো বিয়ে করব। মেসো সজীবের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। তার চোখ টলমল করছে। তিনি বললেন-আপনে তো '.। * বিয়া করবেন কেমনে? সজীব বলল-আমি '. না আঙ্কেল আমি মানুষ। মেসো হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরলেন বুকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন-আপনে পারবেন। আপনে সৎ মানুষ। আমি আপনারে সব রকমের হেল্প করব। কিন্তু মনে রাইখেন ঝুলনের পারিবারিক ব্যবসা এককালে অন্যকিছু থাকলেও তারা তিনপুরুষ ধরে মেয়েমানুষের ব্যবসা করে আসছে। আমার বৌটারে দুনিয়া থেকে নাই করে দিছে। আমি কিছুই করতে পারি নাই। নিজের আপনা বোইনডারে দিয়্ পুরান ঢাকায় শরীরের ব্যবসা করায়। মেয়েমানুষ মানেই তাদের কাছে টাকা কামানোর বিষয়বস্তু। সজীব নিজেকে শান্ত রেখে তার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর বলল-আঙ্কেল আপনি তমার দিকে নজর রাইখেন। ভিক্টিম জানে না সে কার টার্গেট। এটা তাকে বুঝিয়ে দেন খোলাসা করে। তারপর সে নিজেই নিজেকে হেল্প করতে পারবে। মনে রাখবেন গায়ের জোড়ে নয় জিততে হবে মাথা দিয়ে। মেসো নিজেও একটা সিগারেট ধরাতেই নাসির উদয় হল আবার। এবারে মেসো বললেন-বন্ধুরে সাথে নিয়া আসছেন এক কাপ চা না খেলে আমার অমঙ্গল হবে। নাসিরকে ভিতরে ঢোকার অনুরোধ করেই তিনি পিছনের দেয়ালে আলমিরা ধাক্কে সেটাকে কাত করে ফেললেন। দরজাটাকেই আলমিরা বানিয়ে নিয়েছেন মেসো। নাসির আর সজীব দেখলো লোকটা ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। নাসির হাসতে হাসতে বলল-বুঝলা বন্ধু বুইড়াগো লগে বন্ধুত্ব রাখলে একটা মজা আছে। তারা বেশ খায় খাতির করে। কিন্তু হের লগে তোমার পরিচয় হইলো কেমনে? সজীব বলল-তুমি বুঝবানা বন্ধু। আইচ্ছা বন্ধু তুমি তো অনেক মাগি লাগাইছো। কখনো কি তোমার কোন মাগীরে বিয়া করতে ইচ্ছা হয় নাই? নাসির হেসে দিলো। তারপর লজ্জার ভঙ্গিতে বলল-তোমারে হাচা কই বন্ধু আমার অগো খুব ভালা লাগে। কোন ছিনালি করে না। টেকা পাওনের আগেই পা ফাঁক কইরা দেয়। সোহাগও করে দুই একটা৷ চুষতে কইলে চুইশা দেয়। ভদ্র ঘরের ছেমড়িরা কি চুইশা দিবো? নানান নক্তা করবো। আমার তো মনে কয় মাঝে মইদ্যে মাগীর লগেই সংসার করতে! সজীব হেসে দিলো। তারপর বলল-তোমারে যদি এমন একটা মেয়ে দেই যে ভদ্র জীবন যাপনের সাথে বাধ্য হয়েছিলো মাগিগিরি করতে তুমি কি তারে বিয়া করবা? নাসির বলল-বন্ধু তুমি আমারে গরম কইরা দিতাছো। দেড়হাজার টেকা দিয়া ডাইল কিনছি। পকেট খালি। এহন মাগির ফুটায় দিতে হইলে টেকা ধার করা লাগবো। সজীব নিজেকে সিরিয়াস রেখে বলল-আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি বন্ধু। আমার কোন একদিন তেমন একটা মেয়েরে বিয়ে করার দরকার হতে পারে। নাসির হো হো করে হেসে দিয়ে বলল-কি যে কও না বন্ধু। তুমি কেন সেইরকম মাইয়া বিয়া করবা? নাবিলার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তুমি কি ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগতেছো বন্ধু? কখনো নাসির নাবিলার কথা বলত না সজীবকে সরাসরি। আজ বলে দিলো। ইয়াবা ফেন্সির গুন নাকি হঠাৎ চাকরী ছেড়ে দিয়ে বিপাকে বলে নাসির এমনটা বলল সেটা সজীব জানে না। সে চোয়াল শক্ত করে বলল-বন্ধু নাবিলা সুখে নাই জানোতো! তোমরা তার বিয়েটা ভাল দাও নি। ছেলেটা সন্দেহপ্রবন। নাসিরের চোখে মুখে অন্ধকার নেমে এলো হুট করেই। কথা আরো এগুতো। কিন্তু মেসো একটা ফ্লাক্স আর পলিথিনে করে তিনটা কাপ নিয়ে হাজির হলেন। তিনি কাপগুলো টেবিলে বিছিয়ে ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিলেন। বেশ জমপেশ চা। পুরান ঢাকার হোটেলের চায়ের মত। দুজনকে চা নিতে ইশারা করে তিনি বললেন-মেয়েটারে তার চাচার কাছে রাখছি। আমি একলা থাকি। সারাজীবন সম্পদের পিছনে ঘুরে খুব ক্লান্ত। এখন সবকিছু নিজেই করি। সজীব বলল-সেকি আঙ্কেল! কেন আমাদের জন্য এতো কষ্ট করতে গেলেন। মেসো বললেন-কষ্ট না ভাই, আমি নিজেই কিছু সময় পরপর চা খাই। নাসির হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেছে। চা সত্যি খুব টেস্টি। ফেন্সির পর যেমন চা ঠিক তেমনটা না হলেও এর স্বাদটা একেবারে তরতাজা লাগছে। নাসির সজীব দুজনে দ্রুত চা শেষ করে নিলো। নাসির ফস করে আবারো সিগারেট ধরালো। এবারে মেসো বললেন-আমারে দিবেন না সিগারেট একলাই খাইবেন? নাসির হেসে দিয়ে সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলো মেসোকে। সজীব মেসো দুজনেই সিগারেট নিয়ে ধরালো। নাসিরই বলল-বন্ধু চলো বের হই এইখান থিকা। মুন্নার চোখে পরলে সারাদিন এইখানে কাটাইতে হবে। আসলে নাসির নাবিলার প্রসঙ্গ তুলে কিছুটা বিব্রত। বন্ধু তার বোনের প্রতি দুর্বল সেটা জানলেও বন্ধু কখনো এ নিয়ে আলোচনা করে নি। সজীব মেসোর থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। নাসির সত্যি গম্ভীর হয়ে গেছে নাবিলার প্রসঙ্গের পর। সজীবও নিজেকে সহজ করতে পারছে না। তার যদিও নাবিলার চাইতে বড় প্রসঙ্গ আছে তবু আপাতত নাবিলা প্রসঙ্গে সেও কিছুটা বিব্রত।
দুজনেই নির্বাক হেঁটে চলেছে। রিক্সা নেয়ার কথা ভুলেই গেছে দুজনে। ফার্মেগেটের কাছাকাছি আসতে দুজনের মধ্যে কোন কথা হল না। একটা রিক্সা অলা চাকা লাগিয়ে দিলো সজীবের পায়ে। সজীব শুধু বলল-হোই মিয়া চোখে দেখো না। ব্যাস্ নাসির গিয়ে অনেকটা ঝাপিয়ে পরে রিক্সাঅলাকে চড় থাপ্পড় মারা শুরু করল। খানকির পোলা তামাশা চোদাস? মানুষ মনে হয় না আমাগো। অকথ্য গালিগালাজ করে নাসির লোকটার চেহারাই পাল্টে দিলো নিমিষে। সজীব কোনমতে তাকে ছাড়িয়ে নিলো। সে জানে নাসির তাকে খুব পছন্দ করে। তার বিপদে সে ঝাঁপিয়ে পরবে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এখনকার ঘটনাটা সে ঘটিয়েছে নাবিলার পসঙ্গে আপসেট থেকে। সজীবের উপর রাগ নয়, রাগ পরিস্থিতির উপর। সেটাও জানে সজীব। বন্ধুকে নিয়ে গাড়িতে উঠার পর সজীব জানতে চাইলো-বস কোই যাইবা? নাসির বলল-আমার কোন প্ল্যান নাই। সজীব অনেকটা ফিসফিস করে ড্রাইভারের কান বাঁচিয়ে বলল-হোটেলে যাইবা বন্ধু? নাসির মুখটাকে উদ্ভাসিত করে বলল-তুমি যাইবা? সজীব মুচকি হেসে বলল-না, তুমি যাইতে চাইলে ফান্ডিং করতে পারি আমি। নাসির বদলে গেলো রাতারাতি। গম্ভীর মুখটা উদ্ভাসিত করে সে বলল-আইজ সারাদিন তোমার লগে থাকমু যদি তোমার কোন কাম না থাহে। তুমি কৈ থাকবা আসি হোটেলে ঢুকলে? সজীব বলল-আমি আপাতত আবার মগবাজার ডেরায় কাটাই। তুমি ফিরে আসলে আবার তোমারে নিয়া ঘুরবো। নাসির বলল-আরো খাইবা নিহি বস? উত্তর করল-সন্ধার পর একটা টিউশনিতে যাওয়ার কথা। ততক্ষন ঘোরের মধ্যে থাকলে মন্দ হবে না। অবশ্য টিউশনিতে নাও যেতে পারি। সব টিউশনি ছেড়ে দেবো ভাবছি। নাসির সম্ভবত উপদেশ দিতে মুখ খুলতে চেয়েছিলো। সজীব ড্রাইভারের দিকে ইশারা করে ওকে চেপে যেতে বলল। গাড়ি ততক্ষণে মগবাজার মোড়ে চলে এসেছে। সজীব পকেট থেকে একটা এক হাজার টাকা নোট বের করে নাসিরকে দিতেই নাসির দুই কান বিস্তৃত হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলল-তুমি যাইলে খারাপ হইতো না বন্ধু। এইটা দিয়েই দুইজনের হবে। সজীব মুখ গম্ভীর করে বলল-সুরেশ এই স্যারেরে এখানে নামিয়ে রেলগেট যাবো আমি। ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই নাসির নেমে পরল। চিৎকার দিয়ে বলল-আমি ধরো বড়জোড় ঘন্টাখানেকের মধ্যে চলে আসবো। তুমি কিন্তু যায়ো না ওইখান থেইকা। সজীব ‘ওকে’ বলে সুরেশকে নির্দেশ দিলো গাড়ি চালানো শুরু করতে। আপাতত তমাকে সেফ করতে পেরেছে সজীব। এটাই তার অনেক বড় পাওনা। কিন্তু ঝুমার বিষয়ে সে কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ঝুমার সাথে একবার কথা বলা দরকার তার খুব। ঝুমার কাছে কোন ফোন নেই এখন। মেসোকে বিষয়টা বলা উচিৎ ছিলো। মেসো তার সাথে যোগাযোগ করতে পারলে অন্তত যেনো বলে দেয় সজীব আছে ঝুমার সাথে-এটাও বলা হয় নি। মাল খেলে মাথা থেকে সব আউট হয়ে যায়।
সজীবের মাথায় কিছু ঢুকছেনা। ঝুমা রায় বিপদে আছে। তার বিপদের কারণ তার বাবা। সে কি করতে পারে এ জন্যে? ঝুমার সাথে তার বাপীর যৌনতা সে উপভোগ করতে চেয়েছিলো। ঝুমা এই উৎসাহকে প্রেম ভেবেছিলো। তবু ঝুমার জন্য তার ভিতরে কোথায় যেনো একটা মায়া জন্মেছে। এটা প্রেম না অন্যকিছু সেটা জানা নেই সজীবের। সে নাসিরকে অনেকটা জোর করেই গাড়িতে তুলে নিলো। সুরেশকে বলল-তুমি ফার্মগেটের দিকে যাও। নাসির বেশ তুন নেশায় আছে। সজীবের নেশা চাঙ্গে উঠেছে। নেশার পর সময় কাটাতে হয় ফুর্ত্তি করে। কিন্তু ঝুমা রায় প্রসঙ্গটা তার নেশাকে চাঙ্গে তুলে দিয়েছে। নাসির বারবার গাড়িতেই সিগারেট ধরাতে চাইছে। সজীব এলাউ করছে না। গন্ধটা থেকে যাবে তাই। নাসির একবারও তাকে কি নিয়ে টেনশান করছে সে জানতে চায় নি। নাসির অমনই। তাকে যদি এখন সজীব বলে বন্ধু আমার জন্য তোমারে একটা খুন করতে হবে পারবা? নাসির হাসতে হাসতে সেটা করতে রাজী হয়ে যাবে। খুন করার কোন প্রসঙ্গ কখনো আসেনি। কিন্তু এরকম কিছু ঘটনা আছে যে সজীব দেখেছে নাসির তার বিষয়ে জড়াতে আগুপিছু ভাবে না। ফার্মগেট পৌঁছাতে সময় লাগলো না। গাড়িটাকে কোথাও পার্ক করার জন্য বলে নাসিরকে নিয়ে নেমে পরল সজীব গাড়ি থেকে। নাসির জানতেও চাইছেনা তারা কোথায় যেতে চাইছে। জোহরের আজান শুনে সজীব বুঝলো দুপুর হয়ে গেছে। নাসির নানা কথা জুড়ে দিয়েছে। ইয়াবার গুন এটা। কথা বলতেই থাকবে নাসির এখন। ক্লান্ত হবে না। একটা রিক্সা নিলো সজীব। যদিও রিক্সাঅলাকে বলতে পারলো না সে কোথায় যাবে। কেবল বলেছে গলির ভিত্রে যামু, যাইবা? রিক্সাঅলা রাজী হয়ে গেছে। একটা বাঁকে এসে সজীবের মনে হল এটাই সেটা যেটাতে ঝুমা রায়কে অনুসরন করে সে এসেছিলো। কিছুই পরিচিত লাগছেনা সজীবের। তবু একটা রাস্তা সিমেন্টের ঢালাই শেষ হয়েছে তারপর পুরোনো ভাঙ্গাচুড়া পিচ ঢালাই শুরু হয়েছে এটাকে তার পরিচিত মনে হল। কিন্তু তারপর তার সব গুলিয়ে গেলো। সবগুলোই এক মনে হল তার। অনেকটা আচমকা সে লন্ড্রির দোকানটা দেখতে পেলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই চিতকার দিয়ে বলল-মামা রাহো আর যাইতে হইবো না। সজীব ঠিক রাস্তাতেই এসেছে। নাসির এবারে জানতে চাইলো-বস এইহানে কেন আইছো। ডাইল খাইবা নিকি? সজীব নাসিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। বলল এইটা কি ডাইলের স্পট নাকি? নাসির শয়তানের হাসি দিলো। বলল-বস তুমি অনেক ঘাগু জিনিস। একেবারে একদমে ডাইলের স্পটে আয়া কোইতাসো এইটা ডাইলের স্পট নিকি। হুনো ওই জিনিসটা আমার খারাপ লাগে না। মুখে স্বাদটা থাকে অনেকক্ষণ।সজীব রিক্সাঅলাকে ভাড়া দিচ্ছিলো। দেখলো নাসির সোজা গিয়ে ঝুমার মেসোর লন্ড্রি দোকানের সামনে চলে গেছে। মেসোর সাথে কথাও বলল সে। সজীব বুঝতে পারলো না বিষয়টা। নাসির টুক করে ঝুমার মেসোর লন্ড্রির পাশ দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাওয়া একটা সরু গলিতে ঢুকে গেলো। অবশ্য আবার গলির মুখে এসে সে মাথা বের করে সজীবকে উদ্দেশ্য করে বলল-বন্ধু তুমি খারাও আমি আইতাছি। ফুল খাইবা না হাফ খাইবা? ঝুমার মেসো অবশ্য সেসব নিয়ে মোটেও কৌতুহল দেখালো না। সজীব অনেকটা বিভ্রান্তের মত বলল-তোমার খুশী। নাসির চলে গেলো গলির ভিতরে। সজীব এসে দাঁড়ালো ঝুমার মেসোর কাছে। ভদ্রলোক তাকে চিনে ফেললেন কাছে যেতেই। হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন-কি অইছে? মায় কি রাজী হোয়া গেছে নিহি? * মাইয়া বিয়া করতে আয়া পরছেন এহানে? সজীব হাসতে পারলো না। সে লন্ড্রির টেবিলে কনুই ঠেক দিয়ে ফিসফিস করে বলল-আঙ্কেল ঝুমা অনেক বিপদে আছে জানেন? মেসো চোখ বড় বড় করে ফেলল। কেঠায় কই ছে আপনেরে? কি অইছে ঝুমার? কাইলতো দেখলাম তারে সব ঠিকঠাক। আইজ অবশ্য বাইর অয় নাইক্কা ঘর থেইকা। কোচিং এ যাইতে দেহি নাই। সজীব বলল-আঙ্কেল ঝুমার বাবা কি ওকে কোন ভিন্ন পুরুষের কাছে বেচে দিতে পারে? ভদ্রলোক চশমাটা খুলে হাতে নিলেন। তারপর পরনের শার্টের হাতা দিয়ে সেটা মুছতে মুছতে বললেন-হের বাপে যে কোন কিছু করতে পারে। তাতে আপনের সমস্যা কি? সজীব গলা আরো নামিয়ে বলল-আঙ্কেল আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আপনারও কি সমস্যা নেই? চশমাটা চোখে দিতে দিতে ভদ্রলোক বললেন-হের বাপে একটা অমানুষ। হেয় যে কোন কিছুই করতে পারে। বৌডারে আধামরা কইরা রাখছে। আমরা কিছু করতে পারি নাইক্কা। কিন্তু আপনে এতোকিছু জানলেন কেমনে। আপনে কি পুলিশের লোক নিহি? আপনের লগেরডায় তো ডাইল খাইতে আইছে। মুন্নার বন্ধু আপনের লগেরডায়। মুন্নারে বেবাকতে চিনে এহানে। ঝুমারে কি হের বাপে হাচাই বেচা দিছে নিহি! তয় বেচার পাবলিক না হেয়। নিজের কাছে রাইখা ভাড়া খাটাইতে পারে। ভদ্রলোক কথা শুরু করে দম ফেলছেন না। জাহানারা খালার মতন মনে হল লোকটার নেচার। এতো সহজে এসব বলছেন কি করে সজীবের মাথায় আসছে না। ঝুমার মা আধমরা মানে কি সেটাও তার মাথায় ঢুকছে না। সে হুট করেই মেসোর হাত ধরে বলল-জানতে চাইবেন না আমি কি করে জানলাম। আপনার মেয়ের নাম কি তমা? সেও নিরাপদে নাই। আপনি প্লিজ ওকে আজ ঘর থেকে বেরুতে দেবেন না। খায়ের নামের লোকটার সাথে ঝুমার বাবা তমাকে নিয়ে কন্ট্রাক্ট করছে। আমি বেশী কিছু বলতে পারবো না আঙ্কেল। প্লিজ কিছু করুন। ঝুমাকে সেভ করুন। তমাকে সেভ করুন। ভদ্রলোক এবারে নার্ভাস হয়ে গেলেন। হোই মিয়া আপনে আমার মাইয়ার নাম জানলেন কেমনে? হে তো এইখানে থাকে না। হে থাকে লুকাস মোড়ে। সজীব বলল যেইখানেই থাকুক প্লিজ ওকে আজ ঘর থেকে একা ছাড়বেন না। আর প্রতিদিন নিজের কাষ্টডিতে রাখবেন। ভদ্রলোক ঘেমে গেলেন রীতিমতো। নিচের ড্রয়ারে রাখা ফোনটা বের করে ফোন করলেন। সজীব ছটফট করতে লাগলো। নাসির এ সময় চলে এলে তার পক্ষে মেসোর সাথে কথা বলা সম্ভব হবে না। শুনতে পেলো মেসো বলছেন-তমা তুমি কোনহানে? আইজ কোনখানে যাইবা মা? ওপাশ থেকে কি বক্তব্য এলো সজীব শুনতে পেলো না। কিন্তু ওপাশের বক্তব্য শোনার পর মেসো উত্তেজিত হয়ে গেছেন। তোমারে যেইটা জিগাই হেইটার উত্তর দেও। তুমি কোই যাইবা আইজকা বিকালে? মেসো গজগজ করে আরো কিছুক্ষন চেচামেচি করলেন। তারপর ফোন বন্ধ কেটে দিলেন। কিছু বুঝবার পারলাম না। হে তো কইতাছে বিকালে হের বান্ধবীর জন্মদিন আছে। ফোন কেটে দিয়ে সজীবকে বলল মেসো। সজীব ফিসফিস করে বলল-মেসো প্লিজ আপনি ওকে বাইরে এলাউ করবেন না। ঝুমার বাবা খায়ের নামের একজন সেজে তার সাথে ফেসবুকে সম্পর্ক করেছে। বাজে সম্পর্ক। আজ খায়ের কোন এক সময় আপনার মেয়ের সাথে কোথাও দেখা করবে। আমি ঠিক জানিনা কোথায় দেখা করবে এরা। তবে যেটুকু জেনেছি তার মানে হল আপনার মেয়েকে ওরা দুজনে নষ্ট করার টার্গেট নিয়েছে৷ একবার এ লাইনে ঢুকলে আর ফেরার পথ নেই। মেসো আতঙ্কিত হয়ে বললেন-কন কি এইসব। আমার মাইয়া এহনো ছোড। হে বুইড়া বুইড়া বেডাগো লগে যাইবো কেন? আইচ্ছা আপনে আর কি জানেন কনতো দেহি? আপনে কি জানেন ঝুমার মা আছে? হের নাম জানেন আপনে? সজীব মেসোর চোখের দিকে শান্ত ভাবে তাকালো। তারপর ফিসফিস করে বলল শেফালি রায়। ঝুমার অনেক বিপদ। আপনার মেয়ে তমারও বিপদ। ঝুমার মায়েরও অনেক বিপদ। সজীব দেখলো ভারি চশমার উপর দিয়ে মেসোর চোখগুলো ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে।
মেসো খপ করে সজীবের হাত ধরে ফেলল-ভাই আপনে কি ফেরেস্তা নিহি! শেফালির নাম এই অঞ্চলের কেউ জানে না। আপনে থাহেন কোই? পুরান ঢাকার মানুষ নিহি আপনে? সজীব আবারো শান্ত গলায় বলল-মেসো আমি থাকি মিরপুরে। বর্ন এন্ড ব্রটআপ মগবাজারে। পুরান ঢাকায় আমি গিয়েছি অনেকবার৷ তবে সেই সূত্রে আমি ঝুমার মায়ের নাম জানি না। ঝুমাও আমাকে তার মায়ের নাম বলে নি কখনো। আমি কোত্থেকে কি জেনেছি এটা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না প্লিজ। মেসো আয়রন করার টেবিলের এক কিনারে চলে গেলেন সজীবের হাত ছেড়ে। তারপর একটা কাঠ তুলে সেখান থেকে বেড়িয়ে দোকানের বাইরে এলেন। সজীবকে ধরে বললেন-আপনে ভিত্রে আহেন। অনেকটা টেনেই সজীবকে তিনি দোকানের ভিতরে নিয়ে গেলেন। তারপর জোর করে একটা খারা লম্বা টুলের উপর তাকে বসিয়ে দিলেন। স্পষ্ট কন্ঠে বললেন-আপনে এহানে ডাইল খাইতে আইছেন না আমার লগে এইসব কইতে আইছেন? সজীব বলল-জ্বী আমি এসেছি ঝুমাকে হেল্প করতে। ঝুমার খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। ওর বাপ মেয়েকে শরীরের ব্যবসায় জড়াচ্ছে। দু একদিনের মধ্যে ঝুমাকে তিনি কোন প্রভাবশালী ক্ষমতাধর মন্ত্রীর কাছে তুলে দেবেন। তারপর থেকে ঝুমার জীবনটা ওর মা শেফালির জীবনের মতন দুর্বিসহ করে তুলবেন। সেই সাথে আপনার মেয়ে তমাকেও তিনি টার্গেট করেছেন। এখানে ফেন্সিডিল বেচার স্পট আছে সেটা আমি জানতাম না। আমার বন্ধু নাসির জানত। আমি আপনাকে যা বলেছি সে সেসব কিছু জানে না। তবে আমি ওকে এনেছি এসবের সাথে জড়াতে। আমি নিজে কোথাও মাস্তানি করতে পারি না। ও সেসব পারে। ওর কানেকশন আছে। মেসো বললেন-হুমম হেরে আমি চিনি। বেয়াদব কিসিমের। মুন্নার লগে ভাল খাতির আছে হের। মুন্নারে এহানে সবাই ডরায়। সজীব বলল আমি কি মুন্নারে ঝুমার বাপের বিরূদ্ধে কাজে লাগাতে পারবো? মেসো বললেন-নাহ্। ঝুমার বাপের হাত অনেক লম্বা। সিনক্রিয়েট করা ছাড়া মুন্না আপনার জন্য কিছু করতে পারবে না৷ আর আমার মাইয়ার বিষয়টা আমি দেখবো। শুয়োরের বাচ্চারে খুন করে ফেলবো আমি। ঝুলন একটা চামার। তার অনেক কিছুর স্বাক্ষ্যী আমি। যাউগ্গা আপনে এইসবে জড়ায়া লাভ নাই। ঝুমারে আমি অনেক আগেই সাবধান করছি। নানা ইঙ্গিত দিছি। হে শুনে নাই। মেসোর এই বাক্যটা শেষ হতে না হতেই নাসির উদয় হল গলির মুখ থেকে। সে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে খোঁজা শুরু করেছে সজীবকে। সজীব ফিসফিস করে বলল-মেসো তাহলে তারে কিছু বলার দরকার নাই। কিন্তু আমি ঝুমার জন্য কিছু করব। আপনার সাহায্য চাইবো। করবেন না? মেসো তার কথার উত্তর দিলো না, ঘাড় বের করে সামনে এগিয়ে-হোই মিয়া এদিকে আহেন আপনের বন্ধু এইহানে-বলে চিৎকার দিলো নাসিরের উদ্দেশ্যে। নাসির সেদিকে ফিরেই বন্ধুকে লন্ড্রি দোকানের ভিতরে দেখে অবাক হল। তার প্যান্টের ভিতর হাত ঢুকানো দেখে সজীবের বুঝতে অসুবিধা হল না যে পকেটে করে ফেন্সি নিয়া আসছে নাসীর। মেসো ফিসফিস করে বললেন-সমস্যা নাই তারে ভিতরে ডাক দেন। চা খাইবেন? দিতে কমু? সজীব বলল চা দোকানে খেয়ে নেবো আঙ্কেল। লোকটা-ধুর মিয়া বাইরে মানুষরে দেহায়া খাইবেন নিহি এইসব? ভিত্রে বোয়া খান বলে মেসো নাসিরের জন্য টেবিলের কাঠ উঁচিয়ে ধরলেন। নাসির বেকুবের মত তাকিয়ে থেকে ভিতরে ঢুকে পরল দোকানের। সজীবকে জিজ্ঞেস করল-আঙ্কেলরে চিনো কেমনে? তুমি তো এইদিকে কখনো আড্ডা দিতে আসো নাই। সজীব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল-ইনি আমার পরিচিত অন্যভাবে। মেসো বললেন-তাড়াতাড়ি কাম সারেন। আর এইহান থেইকা কাইটা পরেন। নাসির পকেট থেকে বোতল বের করে করররররত করে মুখটা খুলে ঢকঢক করে হাফ মেরে দিয়ে তাকালো সজীবের দিকে। সজীব হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিয়ে বলল-মেসো মাফ করবেন। ভদ্রলোক ম্লান হাসি দিয়ে বলল-এইগুলা না খাওয়াই ভালো। সজীব একদমে জিনিসটা শেষ করতেই মেসো তার কাছ থেকে বোতলটা নিয়ে টেবিলের নিচে রেখে দিলো। ফস করে সিগারেট ধরিয়ে ফেলল নাসির। সেটার দিকে ইঙ্গিত করে সজীব মেসোকে বলল-সরি আঙ্কেল। মেসো হাসতে হাসতে বললেন-আপনে মিয়া অরিজিনাল মাল। ভাল লাগছে আপনেরে। অসুবিধা নাই আপনেও ধরান। সজীব একটু শাসানির গলায় নাসিরকে বলল-আঙ্কেলের সামনে সিগারেট না ধরালে হত না বন্ধু! নাসির কাঠ তুলে দোকান থেকে বেরুতে বেরুতে বলল-সরি আঙ্কেল। খায়া লগে লগে সিগারেটে টান দিতে না পারলে সুখ লাগে না। সজীবও নাসিরকে অনুসরন করে বেড়িয়ে পরছিলো৷ মেসো তার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে নাসিরের উদ্দেশ্যে বললেন-আপনে আউগান, হের লগে দুইডা কথা কমু। দুই মিনিট লাগবে। নাসির দুজনের দিকেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনে হাঁটা দিলো সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে৷নাসির দৃষ্টির আড়াল হতেই মেসো একটা আলমিরা থেকে একটা বেনসনের প্যাকেট বের করে সেটা সজীবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-আপনে ভালা মানুষ। ধরেন একটা ফাটান। সজীব সত্যি সত্যি একটা সিগারেট নিয়ে ধরালো। মেসো ফিসফিস করে বললেন-ঝুমারে বিয়া করবেন আপনে? সজীব উত্তরে বলল-দরকার না হলে করব না। তবে তাকে বাঁচাতে যদি দরকার হয় তো বিয়ে করব। মেসো সজীবের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। তার চোখ টলমল করছে। তিনি বললেন-আপনে তো '.। * বিয়া করবেন কেমনে? সজীব বলল-আমি '. না আঙ্কেল আমি মানুষ। মেসো হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরলেন বুকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন-আপনে পারবেন। আপনে সৎ মানুষ। আমি আপনারে সব রকমের হেল্প করব। কিন্তু মনে রাইখেন ঝুলনের পারিবারিক ব্যবসা এককালে অন্যকিছু থাকলেও তারা তিনপুরুষ ধরে মেয়েমানুষের ব্যবসা করে আসছে। আমার বৌটারে দুনিয়া থেকে নাই করে দিছে। আমি কিছুই করতে পারি নাই। নিজের আপনা বোইনডারে দিয়্ পুরান ঢাকায় শরীরের ব্যবসা করায়। মেয়েমানুষ মানেই তাদের কাছে টাকা কামানোর বিষয়বস্তু। সজীব নিজেকে শান্ত রেখে তার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর বলল-আঙ্কেল আপনি তমার দিকে নজর রাইখেন। ভিক্টিম জানে না সে কার টার্গেট। এটা তাকে বুঝিয়ে দেন খোলাসা করে। তারপর সে নিজেই নিজেকে হেল্প করতে পারবে। মনে রাখবেন গায়ের জোড়ে নয় জিততে হবে মাথা দিয়ে। মেসো নিজেও একটা সিগারেট ধরাতেই নাসির উদয় হল আবার। এবারে মেসো বললেন-বন্ধুরে সাথে নিয়া আসছেন এক কাপ চা না খেলে আমার অমঙ্গল হবে। নাসিরকে ভিতরে ঢোকার অনুরোধ করেই তিনি পিছনের দেয়ালে আলমিরা ধাক্কে সেটাকে কাত করে ফেললেন। দরজাটাকেই আলমিরা বানিয়ে নিয়েছেন মেসো। নাসির আর সজীব দেখলো লোকটা ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। নাসির হাসতে হাসতে বলল-বুঝলা বন্ধু বুইড়াগো লগে বন্ধুত্ব রাখলে একটা মজা আছে। তারা বেশ খায় খাতির করে। কিন্তু হের লগে তোমার পরিচয় হইলো কেমনে? সজীব বলল-তুমি বুঝবানা বন্ধু। আইচ্ছা বন্ধু তুমি তো অনেক মাগি লাগাইছো। কখনো কি তোমার কোন মাগীরে বিয়া করতে ইচ্ছা হয় নাই? নাসির হেসে দিলো। তারপর লজ্জার ভঙ্গিতে বলল-তোমারে হাচা কই বন্ধু আমার অগো খুব ভালা লাগে। কোন ছিনালি করে না। টেকা পাওনের আগেই পা ফাঁক কইরা দেয়। সোহাগও করে দুই একটা৷ চুষতে কইলে চুইশা দেয়। ভদ্র ঘরের ছেমড়িরা কি চুইশা দিবো? নানান নক্তা করবো। আমার তো মনে কয় মাঝে মইদ্যে মাগীর লগেই সংসার করতে! সজীব হেসে দিলো। তারপর বলল-তোমারে যদি এমন একটা মেয়ে দেই যে ভদ্র জীবন যাপনের সাথে বাধ্য হয়েছিলো মাগিগিরি করতে তুমি কি তারে বিয়া করবা? নাসির বলল-বন্ধু তুমি আমারে গরম কইরা দিতাছো। দেড়হাজার টেকা দিয়া ডাইল কিনছি। পকেট খালি। এহন মাগির ফুটায় দিতে হইলে টেকা ধার করা লাগবো। সজীব নিজেকে সিরিয়াস রেখে বলল-আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি বন্ধু। আমার কোন একদিন তেমন একটা মেয়েরে বিয়ে করার দরকার হতে পারে। নাসির হো হো করে হেসে দিয়ে বলল-কি যে কও না বন্ধু। তুমি কেন সেইরকম মাইয়া বিয়া করবা? নাবিলার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তুমি কি ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগতেছো বন্ধু? কখনো নাসির নাবিলার কথা বলত না সজীবকে সরাসরি। আজ বলে দিলো। ইয়াবা ফেন্সির গুন নাকি হঠাৎ চাকরী ছেড়ে দিয়ে বিপাকে বলে নাসির এমনটা বলল সেটা সজীব জানে না। সে চোয়াল শক্ত করে বলল-বন্ধু নাবিলা সুখে নাই জানোতো! তোমরা তার বিয়েটা ভাল দাও নি। ছেলেটা সন্দেহপ্রবন। নাসিরের চোখে মুখে অন্ধকার নেমে এলো হুট করেই। কথা আরো এগুতো। কিন্তু মেসো একটা ফ্লাক্স আর পলিথিনে করে তিনটা কাপ নিয়ে হাজির হলেন। তিনি কাপগুলো টেবিলে বিছিয়ে ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিলেন। বেশ জমপেশ চা। পুরান ঢাকার হোটেলের চায়ের মত। দুজনকে চা নিতে ইশারা করে তিনি বললেন-মেয়েটারে তার চাচার কাছে রাখছি। আমি একলা থাকি। সারাজীবন সম্পদের পিছনে ঘুরে খুব ক্লান্ত। এখন সবকিছু নিজেই করি। সজীব বলল-সেকি আঙ্কেল! কেন আমাদের জন্য এতো কষ্ট করতে গেলেন। মেসো বললেন-কষ্ট না ভাই, আমি নিজেই কিছু সময় পরপর চা খাই। নাসির হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেছে। চা সত্যি খুব টেস্টি। ফেন্সির পর যেমন চা ঠিক তেমনটা না হলেও এর স্বাদটা একেবারে তরতাজা লাগছে। নাসির সজীব দুজনে দ্রুত চা শেষ করে নিলো। নাসির ফস করে আবারো সিগারেট ধরালো। এবারে মেসো বললেন-আমারে দিবেন না সিগারেট একলাই খাইবেন? নাসির হেসে দিয়ে সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলো মেসোকে। সজীব মেসো দুজনেই সিগারেট নিয়ে ধরালো। নাসিরই বলল-বন্ধু চলো বের হই এইখান থিকা। মুন্নার চোখে পরলে সারাদিন এইখানে কাটাইতে হবে। আসলে নাসির নাবিলার প্রসঙ্গ তুলে কিছুটা বিব্রত। বন্ধু তার বোনের প্রতি দুর্বল সেটা জানলেও বন্ধু কখনো এ নিয়ে আলোচনা করে নি। সজীব মেসোর থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। নাসির সত্যি গম্ভীর হয়ে গেছে নাবিলার প্রসঙ্গের পর। সজীবও নিজেকে সহজ করতে পারছে না। তার যদিও নাবিলার চাইতে বড় প্রসঙ্গ আছে তবু আপাতত নাবিলা প্রসঙ্গে সেও কিছুটা বিব্রত।
দুজনেই নির্বাক হেঁটে চলেছে। রিক্সা নেয়ার কথা ভুলেই গেছে দুজনে। ফার্মেগেটের কাছাকাছি আসতে দুজনের মধ্যে কোন কথা হল না। একটা রিক্সা অলা চাকা লাগিয়ে দিলো সজীবের পায়ে। সজীব শুধু বলল-হোই মিয়া চোখে দেখো না। ব্যাস্ নাসির গিয়ে অনেকটা ঝাপিয়ে পরে রিক্সাঅলাকে চড় থাপ্পড় মারা শুরু করল। খানকির পোলা তামাশা চোদাস? মানুষ মনে হয় না আমাগো। অকথ্য গালিগালাজ করে নাসির লোকটার চেহারাই পাল্টে দিলো নিমিষে। সজীব কোনমতে তাকে ছাড়িয়ে নিলো। সে জানে নাসির তাকে খুব পছন্দ করে। তার বিপদে সে ঝাঁপিয়ে পরবে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এখনকার ঘটনাটা সে ঘটিয়েছে নাবিলার পসঙ্গে আপসেট থেকে। সজীবের উপর রাগ নয়, রাগ পরিস্থিতির উপর। সেটাও জানে সজীব। বন্ধুকে নিয়ে গাড়িতে উঠার পর সজীব জানতে চাইলো-বস কোই যাইবা? নাসির বলল-আমার কোন প্ল্যান নাই। সজীব অনেকটা ফিসফিস করে ড্রাইভারের কান বাঁচিয়ে বলল-হোটেলে যাইবা বন্ধু? নাসির মুখটাকে উদ্ভাসিত করে বলল-তুমি যাইবা? সজীব মুচকি হেসে বলল-না, তুমি যাইতে চাইলে ফান্ডিং করতে পারি আমি। নাসির বদলে গেলো রাতারাতি। গম্ভীর মুখটা উদ্ভাসিত করে সে বলল-আইজ সারাদিন তোমার লগে থাকমু যদি তোমার কোন কাম না থাহে। তুমি কৈ থাকবা আসি হোটেলে ঢুকলে? সজীব বলল-আমি আপাতত আবার মগবাজার ডেরায় কাটাই। তুমি ফিরে আসলে আবার তোমারে নিয়া ঘুরবো। নাসির বলল-আরো খাইবা নিহি বস? উত্তর করল-সন্ধার পর একটা টিউশনিতে যাওয়ার কথা। ততক্ষন ঘোরের মধ্যে থাকলে মন্দ হবে না। অবশ্য টিউশনিতে নাও যেতে পারি। সব টিউশনি ছেড়ে দেবো ভাবছি। নাসির সম্ভবত উপদেশ দিতে মুখ খুলতে চেয়েছিলো। সজীব ড্রাইভারের দিকে ইশারা করে ওকে চেপে যেতে বলল। গাড়ি ততক্ষণে মগবাজার মোড়ে চলে এসেছে। সজীব পকেট থেকে একটা এক হাজার টাকা নোট বের করে নাসিরকে দিতেই নাসির দুই কান বিস্তৃত হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলল-তুমি যাইলে খারাপ হইতো না বন্ধু। এইটা দিয়েই দুইজনের হবে। সজীব মুখ গম্ভীর করে বলল-সুরেশ এই স্যারেরে এখানে নামিয়ে রেলগেট যাবো আমি। ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই নাসির নেমে পরল। চিৎকার দিয়ে বলল-আমি ধরো বড়জোড় ঘন্টাখানেকের মধ্যে চলে আসবো। তুমি কিন্তু যায়ো না ওইখান থেইকা। সজীব ‘ওকে’ বলে সুরেশকে নির্দেশ দিলো গাড়ি চালানো শুরু করতে। আপাতত তমাকে সেফ করতে পেরেছে সজীব। এটাই তার অনেক বড় পাওনা। কিন্তু ঝুমার বিষয়ে সে কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ঝুমার সাথে একবার কথা বলা দরকার তার খুব। ঝুমার কাছে কোন ফোন নেই এখন। মেসোকে বিষয়টা বলা উচিৎ ছিলো। মেসো তার সাথে যোগাযোগ করতে পারলে অন্তত যেনো বলে দেয় সজীব আছে ঝুমার সাথে-এটাও বলা হয় নি। মাল খেলে মাথা থেকে সব আউট হয়ে যায়।
শিশু বলৎকারের মূল কারণ আমি আপনি আমরা। আসুন প্রতিরোধ করি।