11-07-2019, 11:40 AM
পার্টঃঃ১৫
হ্যাঁ।
জীবনে প্রথম নিজের হাতে কেনা। বলতে পারবো না।
কলকাতায় তোকে সাংবাদিক বলে কেউ চেনে।
আমি চুপ থাকলাম।
অনাদি একটা সিগারেট বার করল। দিবাকরকে একটা দিল। আমিও একটা সিগারেট ধরালাম।
তুই শালা বললি সিগারেট খাস না। যেভাবে খাচ্ছিস এতো পাক্কা সিগারেট খোরের মতো টান।
আমার বসের নকল করা।
ওরা হাসলো।
শোন অনি সব ব্যাবস্থা করেছি। মাইক্রোসারজারি হবে। খরচ একটু বেশি। তবে কয়েকঘন্টার ব্যাপার কাকাকে নার্সিংহোমে ঘন্টা পাঁচেক থাকতে হবে। তারপর ছেড়ে দেবে।
খুব ভালো।
কিন্তু ভাই রগঢ়াটা অনেক বেশি।
কতো ?
পঁয়ত্রিশ চাইছে।
এখানে এটা ঠিক আছে, কলকাতা হলে হাজার পঁচিশের মধ্যে হয়ে যেতো।
তুই এর রেট জানিস।
হ্যাঁ।
অমিতাভদার করিয়েছি।
এই নার্সিংহোমটা এখানে খুব নাম করেছে। ইকুইপমেন্টও বেশ ভালো।
কোথায় ? স্টেশনের পাশে বম্বেরোডের ধারে।
তাহলে তো একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।
সে হয়ে যাবে।
নীপা মুড়ির বাটি নিয়ে ঢুকলো, তুমিতো এক পেট গিললে আবার হবে নাকি।
না। তবে একটু চা হলে ভালো হয়।
হবে। অনাদিদা চা কি এখুনি আনব না পরে।
তোর আনতে আনতে মুড়ি টেনে দেবো, চাষার ছেলে।
আমি হাসলাম।
তোকে খুব শাসন করছে না।
সে আর বলতে, আমি তো খুব ভয় পেতে শুরু করেছি।
তুই জানিস না, এ তল্লাটের দিদিমনি বলে কথা।
অনাদিদা ভাল হচ্ছেনা বলে দিচ্ছি।
তুই খালি সাপ্লাই লাইনটা ভাল রাখ। তাহলে তোর কোন গুনের কথা অনিকে বলব না।
নীপা বেরিয়ে গেলো, দিবাকর বললো দাঁড়া একটু আসি। বলে বেরিয়ে গেলো। অনাদি হাসলো।
মুড়ি খেতে খেতে অনাদি বললো, তুই রাজি হলে আজই বুক করতে হবে।
কত লাগবে।
পাঁচ লাগবে।
পাঁচ কি হাজার না পাঁচশো।
হাজার হাজার।
চল তাহলে দিয়ে আসি।
অনি আছিস নাকি।
বাসুর গলা মনে হলো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম কে বলতো।
আবার কে বাসু হারামজাদা।
ওকেতো দুপুরে আসতে বললাম।
শালার এই কদিন ব্যবসা লাটে। অনাদি বললো।
অনাদি বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেলো। এসো সেগোরা এসো, একটু মেরে দিয়ে যাও।
বুঝলাম বাসু একলা না। আরো অনেকে এসেছে। সিঁড়িতে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ আমার ঘর ভরে গেলো। কালকে যারা দলে ছিলো না, তারাও এসে হাজির। সকলেই আমাকে দেখে খিস্তির বন্য বইয়ে দিলো। সঞ্জীব চিকনা পলা।
অনাদি বললো সঞ্জীব এখন বর বেওসায়ী।
সঞ্জীব অনাদিকে তেরে খিস্তি দিলো, হারামী বাঁধে মাটি ফেলা নিয়ে কত কামিয়েছিস বল। বুঝলি অনি খালি বন্যা হলেই হয়, অনাদির কামাই শুরু।
আমি বললাম থাম থাম।
কেনো থামবো বল অনি, যখনি দেখা হবে তখনি আমাকে এই ভাবে ঠেস দিয়ে কথা বলবে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোর এখনো মাথাটা...।
নীপা ঢুকলো। সবাইকে দেখে ও চোখ দুটো এমন করলো.....আমি আর চা করতে পারব না।
চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এই কথা চল দেখিয়ে দে চায়ের জায়গাটা, তারপর বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
হ্যাঁ চলো না, মনিমা আছে দেখতে পাবে।
ওরে বাবা, তাহলে আমি নেই, ভানু তুই যা।
স্যার বসে আছেন।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, নীপা যাও একটু কষ্ট কর আমার জন্য......।
তোমার জন্য করতে আমার একটুও অসুবিধা নেই। এদের জন্য পারব না।
দেবী দেবী কেন তুমি ক্রোধান্বিত আমাদের ওপর, আমরা তো তোমায় আবাহন করিতেছি....।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম পলার কথায়।
নীপা কট কট করে পলার দিকে তাকালো। আমাদের ড্রেস মেটেরিয়াল রেডি।
রেডি মেডাম যখন যাবেন পেয়ে যাবেন।
নীপা চলে গেল। অনাদি বলল দাঁড়া অনির একটা ব্যাপার নিয়ে আমি আর দিবাকর সকালে ব্লুপ্রিন্ট নার্সিংহোমে গেছিলাম, এই আসছি। সবাই চুপ করে গেলো। অনাদি সমস্ত ব্যাপারটা বললো।
স্যারের এরকম অবস্থা আমরা কেউ জানি না। বাসু বললো।
তোরা খোঁজ খবর রাখিস নি।
আমাদের হাটের কানা সামন্তকে দেখিয়েছিলো না। চিকনা বললো।
ছাড় ওসব কথা।
কাজের কথায় আসি। পর্শু যদি অপারেশনের ব্যবস্থা করি তোদের পাবো তো।
এটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয়, নেতা হয়েছিস না ঘর মোছার নেতা। চিকনা বলল।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। ভানু গাড়ির ব্যাপারটা।
চল যাচ্ছিতো, গোড়ার সঙ্গে কথা বলে চলে আসবো।
কখন বেরোবি। চিকনা বললো।
তাহলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে বেরিয়ে যাই চল।
ঠিক হলো আমরা ছজন যাব, বাসুর একটা বাইক অনাদির একটা বাইক আর চিকনার একটা বাইক। সঞ্জীব ভানু আর আমি। দিবাকর বললো আমি যাবো না বিকেলে কাজ আছে।
ঘন্টা আছে। চিকনা বললো।
এই আবার শুরু করলি।
কেনো একদিন না গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধি হয়ে যাবে।
তোকে ভাবতে হবে না।
তুই ওটাকে নিয়ে গেছিলি কেনো, বাসুকে নিয়ে যেতে পারিস নি।
বাসুর একটা কাজ ছিল।
আমাকে ডাকতে পারিস নি।
ঠিক আছে ঠিক আছে। ওর কাজ থেকতে পারে না।
চিকনা চুপ করে গেলো।
হাতের কাজ শেষ করে নে, পর্শুদিন ওখানে সবাইকে যেতে হবে। সারাদিন লেগে যাবে।
সবাই মেনে নিল অনাদির কথা। নীপা চা নিয়ে এলো, হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো কত কি হলো। সবার মধ্যমনি নীপা। আমাদের আড্ডায় কিছুক্ষণ অংশগ্রহণ করলো। চিকনা ধমকে বললো বড়দের আড্ডয় ছোটদের থাকতে নেই।
আমি এখন এ্যাডাল্ট।
নীপা এমন ভাবে কথা বললো সবাই হেসে উঠলো।
সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁরে তোর দোকানে টিভি আছে।
আনাদি বললো আছে মানে কি চাই বল।
দেখলি ব্যবসার কথা হলেই কেমন টোকে।
উঃ সব কথা গায়ে মাখিস কেনো। আমি বললাম।
এই হল কাল। বাসু বললো।
তোর কথা ভাঙিয়ে কত কাজ বাগায় জানিস ও। অনাদি বললো।
সেতো ভালো। তুই করিস না।
হ্যাঁরে ছুঁচ্চা আমি করি, তুই করিস না।
সঞ্জীব হেসে বললো করি তবে কম। একটা কথা কি জানিস অনি তোকে সবাই বেশ ধ্বসে।
কি রকম।
সেদিন ভানুর একটা ব্যাপারে বিডিওর কাছে গেছিলাম, শালা কিছুতেই করবে না, যেই বললাম ঠিক আছে আমার বন্ধুরে তাহলে একবার ফোন করতে হবে।
শালা তোর নাম শুনেই বলে কিনা আপনি একটু ঘুরে আসুন আপনার কাজ হয়ে যাবে। সত্যি বলছি অনি কাজটা হয়ে গেলো। তুই শালা এখন মিনিস্টার বনে গেছিস।
সবাই হো হো করে হাসলো। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট পরে আছে। চিকনা একটা আমাকে দিয়ে বললো, এটা কাউন্টার হবে। ভানু বললো আমি ফার্স্ট, চিকনা বললো, ইঁট পাতো। আমি হেসে ফেললাম।
বাসুকে আলাদা করে বললাম, নীপা তোর দোকানে আজ যাবে কিছু জামা কাপড় কিনতে তুইতো থাকবি না, তাহলে কি হবে ?
বাসু খিস্তি করে বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না।
সঞ্জীবকে বললাম, তোর দোকানের সবচেয়ে ভাল টিভি যদি থাকে আজ একটু লাগিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। সঞ্জীব আমার দিকে তাকলো, চুয়াড়।
আমি মুচকি হাসলাম।
সবাই চলে গেলো। ঠিক হলো এখান থেকে বারোটার সময় বেরোব ওরা বাইক নিয়ে যে যার চলে আসবে। আমি ওবাড়িতে গিয়ে কাকার সঙ্গে সব আলোচনা করলাম। নীপা কাকীমা সুরমাসিও ছিল। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। আমি কাকাকে বললাম তুমি অনুমতি দাও আমি এখানে থাকতে থাকতে সব কাজ সেরে যেতে চাই।
কাকা কেঁদে ফেললেন। চশমা লাগিয়েও আমি আবঝা দেখি বুঝলি অনি। যার চোখ নেই পৃথিবী তার কাছে অন্ধকার। তোর লেখা আমি পরতে পারি না। নীপা পরে পরে শোনায় ঘরে একটা টিভি আনতে পারলাম না। মেয়াটা সারাদিন কি করে বলতো, সন্ধ্যায় চিকনাদের বাড়িতে যায় একটু টিভি দেখার জন্য।
আমি গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, পান্তা খেয়ে বেরোব।
সেকিরে মেয়েটা তোর জন্য সেই সাত সকাল থেকে রান্না করলো।
নীপার দিকে তাকালাম, ওর মুখটা কেমন থমথমে।
ঠিক আছে, আমি স্নান সেরে আসি ওরা এসে পরবে এখুনি।
আমি ওবাড়ি হয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলাম। স্নান সেরে ঘরে এসে দেখি নীপা দাঁড়িয়ে আছে খাটের কাছে। কি যেন করছে। আমাকে দেখেই মুখটা গম্ভীর করে নিল। আমি বললাম কি হলো আবার।
কি হয় নি তাই বলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
তুমি যে এরি মধ্যে এতো সব প্ল্যান ভেঁজেছো আমাকে জানিয়েছো।
সময় পেলাম কোথায়।
কেনো কাল থেকে সময় পাও নি।
হাসলাম।
আমি কি তোমার কেউ নই।
কে বলেছে তুমি কেউ নও।
তাহলে।
আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
আমায় একটা জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জি এগিয়ে দিল।
আমি বললাম এটা নয় পাজামা পাঞ্জাবী দাও। এগুলো কলকাতার জন্য।
না।
কেনো।
এটা পরলে তোমাকে দারুন স্মার্ট লাগে।
হাসলাম। দাও।
জাঙ্গিয়াটা পরতে গিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও হাসছে।
তুমি যাও।
ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে কথাই বলব না।
সে কি!
নীপা বেরিয়ে গেলো। আমি জামা পেন্ট গলিয়ে নিলাম।
আসবো।
এসো।
নীপা ভেতরে এলো। ওর চোখ মুখ বলছে কিছু বলবে আমায়। উসখুস করছে অনেকক্ষণ থেকে।
অনিদা তোমায় একটা কথা বলবো।
বলো।
কালকে আমি খুব বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছি।
না। তুমি কোনো অন্যায় করো নি।
একথা বলছো কেনো।
তুমি করো নি। তোমার বয়সটা করেছে।
তুমি আমাকে খুব খারাপ মেয়ে ভাবলে।
একবারেই না।
কিজানি তখন কিযে হলো।
দেখো নীপা ওটা বয়সের ধর্ম। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তোমায় গ্রহণ করতো।
নীপা আমার কাছে এসে মুখ নীচু করে দাঁড়ালো। আমাকে ক্ষমা করে দাও অনিদা।
আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম। নীপা মাথ নীচু করে আছে। আমি ওর চিবুকটাধরে মুখটা তুললাম। চোখের পাতা দুটো চিক চিক করছে। আমি ওর চোখের পাতায় আঙুল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম।
জানোনা অনিদা মেসো মনিমা গ্রামের সকলের কাছে তোমার কথা শুনে শুনে খালি ভাবতাম তুমি আমার আর কারুর নয়। আমায় যদি তোমার জন্য আবাহমান কাল বসে থাকতে হয় বসে থাকবো। কিন্তু তুমি আমার।
আমি তো তোমার। একথা ভুল নয়। এই তো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
নীপা আমার দিকে চোখ মেলে তাকালো। ওর ডাগর চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
একদিন তোমার ভুল ভাঙবে নীপা। তখন দেখবে আমি যা করেছি ঠিক করেছি।
নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুমি কখনো আমাদের ছেড়ে যাবে না।
কেনো যাবো!
নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলো। আমার ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক করে বোজালাম। নীপা আমাকে ছারলো।
আমি মিটসেফের কাছে গিয়ে আয়না চিরুনিটা নিয়ে চুলটা কোনোপ্রকারে আঁচড়ালাম। নীপা আমায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে।
কি দেখছো।
তোমাকে যত দেখছি হিংসে হচ্ছে।
কেনো।
আজ যারা এই বাড়িতে এসেছিল জানো তারা কেউ এই কয় বছরে আসে নি। একমাত্র চিকনাদা ছাড়া।
জানি। ওরা তা স্বীকার করেছে।
তাও ওদের সঙ্গে তুমি রিলেসন রাখবে।
পৃথিবীতে একটা পিঁপরের কিছু না কিছু অবদান আছে।
রাখো তোমার তত্ব কথা।
এবার দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীপা আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে উঠলো। তুমি কিছুদিন আগে আসনি কেন অনিদা। তাহলে আমাদের এই অবস্থা হতো না।
ঠিক আছে ঠিক আছে। আমিতো এসে গেছি। এবার দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীপার কান্না থামে না।
আমি ভীষণ অপ্রস্তুতে পরে গেলাম। নীপা কাঁদুক, কিছুক্ষণ কাঁদলে ও বরং হাল্কা হবে। নীপার চোখের জলে আমার বুক ভিঁজেছে। আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম। এবার চলো।
ওরা ঠিক সময়ে চলে এসেছে। আমি ওদের সঙ্গে বেরিয়ে পরলাম। আমি বাসুর বাইকে বসেছি। যেতে যেতে টুকরো টুকরো অনেক কথা হলো। এও জানলাম বাসুর দোকানে কাকার প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা ধার আছে। বাসুকে বললাম এখানে এসবিআই-এর এটিএম আছেরে। ও বললো আছে। আমি বললাম তুই প্রথমে ওখানে আমাকে একবার দাঁড় করাবি। তারপর নার্সিংহোমে যাব। ও বললো ঠিক আছে।
এটিএম থেকে একবারে টাকা তুলতে দিল না। পাঁচবারে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুললাম। নিয়ে এসেছিলাম দশ হাজার টাকা। বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে। কি আর করা যাবে। নার্সিংহোমে পৌঁছলাম প্রায় দেড়টা নাগাদ। ওখানে সব কাজ মিটতে মিটতে প্রায় সাড়ে তিনটে বাজলো।
অনাদির সঙ্গে বেশ চেনা পরিচয় আছে দেখলাম। আমার কোন পরিচয় এখানে দিলাম না। ওদেরও বারন করে দিয়েছিলাম। নার্সিংহোমে পঁচিশ হাজার টাকা জমা দিলাম। এরপর ভানু গাড়ির ব্যবস্থা করলো। দুখানা টাটা সুমো, ওখানে টাকা মেটালাম। মোবাইলের টাওয়ারটা দেখলাম বেশ ভালো। অমিতাভদাকে ফোন করে সব জানালাম। অমিতাভদা বড়মাকে দিলেন। আমি বড়মার সঙ্গে কথা বললাম।
বড়মার এক কথা আমি যাব, তুই না করিস না। বহুবার বারন করলাম, শুনল না, বাধ্য হয়ে ঠিকানা পত্র সব দিলাম। এরপর মিত্রাকে ফোন করলাম, মিত্রাকে সব জানালাম, ওকেও বললাম, এসে কি করবি, শুধু শুধু এতদূরে আসবি, আবার ফিরতে হবে তো।
কিছুতেই আমার কথা শুনল না, বাধ্য হয়ে বললাম, বড়মারা আসবে, তুই বড়মার সঙ্গে চলে আয়। আর যখন আসবি আমার একটা উপকার কর।
বল কি করবো, তুই আমার জন্য একটা মোবাইল কিনে আনিস, এই মোবাইলটা কাকার কাছে রেখে যাবো। আমি এখান থেকে একটা সিম কার্ড নিয়ে নিচ্ছি। আসার সময় মোবাইলটা ফুল চার্জ দিয়ে নিয়ে আসবি।
এতোক্ষণ খেয়াল করিনি বাসু আমার পাশে দাঁড়িয়ে, ও অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিল। ওর চোখে বিস্ময়।
হ্যাঁরে অনি, বড়মা কে !
ওকে সব বললাম, শুনে তো ওর মাথা খারাপ।
জিজ্ঞাসা করলো, মিত্রা ?
বললাম সব কথা। হাসতে হাসতে বললো, তুই শালা তোর মালকিনকে তুই তুই করে বলছিস।
কি করব বল, ভাগ্যচক্রে ওর সঙ্গে আমি এক সাথে পড়াশুনো করেছি।
উরি শালা তুই তো বড়গাছে মই বেঁধেছিস।
আমি বললাম নারে, ও বিবাহিত ওর স্বামী এশিয়ার রিনাউন্ড একজন ডাক্তার।
শুনে ওরা থ। কথাটা ভানু অনাদি সঞ্জীবের কাছে পৌঁছতে বেশিক্ষণ সময় লাগল না। ওরা তো এই মারে সেই মারে।
অনাদি বললো তুই শালা কিরে, নীলকন্ঠ।
আমি হাসলাম।
সঞ্জীবকে বললাম, তুই তো ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা করছিস আমায় একটা সিম জোগাড় করে দে না।
কেনো।
দরকার আছে।
তোরতো আছে।
কাকাকে দিয়ে যাব।
সেট।
ওইতো আনতে বলে দিলাম। কাল এসে যাবে।
তোরটা কি ?
এন নাইনটি ফাইভ ।
আরি বাবা এই তল্লাটে কারুর নেই। চল আমার বস মগার দোকানে।
সেটা আবার কে ?
আমার মহাজন। আমি কলকাতা যাই না, ওর কাছ থেকেই মালপত্র নিয়ে যাই।
কলকাতা থকে মাল নিয়ে এসে ব্যবসা করতে পারিস। আমি ঠেক গুলো সব চিনিয়ে দেবো। দেখবি দুটো পয়সার মুখ দেখতে পারবি।
বুঝলি অনি ক্যাপিটেল চাই।
সেতো মহাজন দেবে।
কি বলছিস তুই।
হ্যাঁ। তোকে মাল পাঠাবে তুই যদি ঠিক ঠিক বিক্রি করে পয়সা দিস, আর কোন অসুবিধা নেই। ধান্দা ভালো।
ঠিক আছে তোর কাজ মিটুক বসে কথা বলা যাবে।
ওর বস মগার দোকানে এলাম। সঞ্জীব প্রথমেই ট্রাম্প কার্ড খেললো।
মগাদা এই সেই বিখ্যাত অনি।
উনি চেয়ার ছেড় উঠে দাঁড়ালেন। জোড় হাত করে নমস্কার করলেন।
বসুন বসুন আপনার লেখাতো কাগজে পরি, তাছাড়া সঞ্জীবের মুখ থেকে আপনার অনেক কথা শুনেছি। ভদ্রলোক একেবারে গদ গদ।
সঞ্জীব বললো একটা সিম চাই অনির, আমাদের এখানে যার টাওয়ার সবচেয়ে ভালো সেটা দাও।
কার নামে হবে।
হ্যাঁ।
জীবনে প্রথম নিজের হাতে কেনা। বলতে পারবো না।
কলকাতায় তোকে সাংবাদিক বলে কেউ চেনে।
আমি চুপ থাকলাম।
অনাদি একটা সিগারেট বার করল। দিবাকরকে একটা দিল। আমিও একটা সিগারেট ধরালাম।
তুই শালা বললি সিগারেট খাস না। যেভাবে খাচ্ছিস এতো পাক্কা সিগারেট খোরের মতো টান।
আমার বসের নকল করা।
ওরা হাসলো।
শোন অনি সব ব্যাবস্থা করেছি। মাইক্রোসারজারি হবে। খরচ একটু বেশি। তবে কয়েকঘন্টার ব্যাপার কাকাকে নার্সিংহোমে ঘন্টা পাঁচেক থাকতে হবে। তারপর ছেড়ে দেবে।
খুব ভালো।
কিন্তু ভাই রগঢ়াটা অনেক বেশি।
কতো ?
পঁয়ত্রিশ চাইছে।
এখানে এটা ঠিক আছে, কলকাতা হলে হাজার পঁচিশের মধ্যে হয়ে যেতো।
তুই এর রেট জানিস।
হ্যাঁ।
অমিতাভদার করিয়েছি।
এই নার্সিংহোমটা এখানে খুব নাম করেছে। ইকুইপমেন্টও বেশ ভালো।
কোথায় ? স্টেশনের পাশে বম্বেরোডের ধারে।
তাহলে তো একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।
সে হয়ে যাবে।
নীপা মুড়ির বাটি নিয়ে ঢুকলো, তুমিতো এক পেট গিললে আবার হবে নাকি।
না। তবে একটু চা হলে ভালো হয়।
হবে। অনাদিদা চা কি এখুনি আনব না পরে।
তোর আনতে আনতে মুড়ি টেনে দেবো, চাষার ছেলে।
আমি হাসলাম।
তোকে খুব শাসন করছে না।
সে আর বলতে, আমি তো খুব ভয় পেতে শুরু করেছি।
তুই জানিস না, এ তল্লাটের দিদিমনি বলে কথা।
অনাদিদা ভাল হচ্ছেনা বলে দিচ্ছি।
তুই খালি সাপ্লাই লাইনটা ভাল রাখ। তাহলে তোর কোন গুনের কথা অনিকে বলব না।
নীপা বেরিয়ে গেলো, দিবাকর বললো দাঁড়া একটু আসি। বলে বেরিয়ে গেলো। অনাদি হাসলো।
মুড়ি খেতে খেতে অনাদি বললো, তুই রাজি হলে আজই বুক করতে হবে।
কত লাগবে।
পাঁচ লাগবে।
পাঁচ কি হাজার না পাঁচশো।
হাজার হাজার।
চল তাহলে দিয়ে আসি।
অনি আছিস নাকি।
বাসুর গলা মনে হলো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম কে বলতো।
আবার কে বাসু হারামজাদা।
ওকেতো দুপুরে আসতে বললাম।
শালার এই কদিন ব্যবসা লাটে। অনাদি বললো।
অনাদি বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেলো। এসো সেগোরা এসো, একটু মেরে দিয়ে যাও।
বুঝলাম বাসু একলা না। আরো অনেকে এসেছে। সিঁড়িতে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ আমার ঘর ভরে গেলো। কালকে যারা দলে ছিলো না, তারাও এসে হাজির। সকলেই আমাকে দেখে খিস্তির বন্য বইয়ে দিলো। সঞ্জীব চিকনা পলা।
অনাদি বললো সঞ্জীব এখন বর বেওসায়ী।
সঞ্জীব অনাদিকে তেরে খিস্তি দিলো, হারামী বাঁধে মাটি ফেলা নিয়ে কত কামিয়েছিস বল। বুঝলি অনি খালি বন্যা হলেই হয়, অনাদির কামাই শুরু।
আমি বললাম থাম থাম।
কেনো থামবো বল অনি, যখনি দেখা হবে তখনি আমাকে এই ভাবে ঠেস দিয়ে কথা বলবে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোর এখনো মাথাটা...।
নীপা ঢুকলো। সবাইকে দেখে ও চোখ দুটো এমন করলো.....আমি আর চা করতে পারব না।
চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এই কথা চল দেখিয়ে দে চায়ের জায়গাটা, তারপর বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
হ্যাঁ চলো না, মনিমা আছে দেখতে পাবে।
ওরে বাবা, তাহলে আমি নেই, ভানু তুই যা।
স্যার বসে আছেন।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, নীপা যাও একটু কষ্ট কর আমার জন্য......।
তোমার জন্য করতে আমার একটুও অসুবিধা নেই। এদের জন্য পারব না।
দেবী দেবী কেন তুমি ক্রোধান্বিত আমাদের ওপর, আমরা তো তোমায় আবাহন করিতেছি....।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম পলার কথায়।
নীপা কট কট করে পলার দিকে তাকালো। আমাদের ড্রেস মেটেরিয়াল রেডি।
রেডি মেডাম যখন যাবেন পেয়ে যাবেন।
নীপা চলে গেল। অনাদি বলল দাঁড়া অনির একটা ব্যাপার নিয়ে আমি আর দিবাকর সকালে ব্লুপ্রিন্ট নার্সিংহোমে গেছিলাম, এই আসছি। সবাই চুপ করে গেলো। অনাদি সমস্ত ব্যাপারটা বললো।
স্যারের এরকম অবস্থা আমরা কেউ জানি না। বাসু বললো।
তোরা খোঁজ খবর রাখিস নি।
আমাদের হাটের কানা সামন্তকে দেখিয়েছিলো না। চিকনা বললো।
ছাড় ওসব কথা।
কাজের কথায় আসি। পর্শু যদি অপারেশনের ব্যবস্থা করি তোদের পাবো তো।
এটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয়, নেতা হয়েছিস না ঘর মোছার নেতা। চিকনা বলল।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। ভানু গাড়ির ব্যাপারটা।
চল যাচ্ছিতো, গোড়ার সঙ্গে কথা বলে চলে আসবো।
কখন বেরোবি। চিকনা বললো।
তাহলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে বেরিয়ে যাই চল।
ঠিক হলো আমরা ছজন যাব, বাসুর একটা বাইক অনাদির একটা বাইক আর চিকনার একটা বাইক। সঞ্জীব ভানু আর আমি। দিবাকর বললো আমি যাবো না বিকেলে কাজ আছে।
ঘন্টা আছে। চিকনা বললো।
এই আবার শুরু করলি।
কেনো একদিন না গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধি হয়ে যাবে।
তোকে ভাবতে হবে না।
তুই ওটাকে নিয়ে গেছিলি কেনো, বাসুকে নিয়ে যেতে পারিস নি।
বাসুর একটা কাজ ছিল।
আমাকে ডাকতে পারিস নি।
ঠিক আছে ঠিক আছে। ওর কাজ থেকতে পারে না।
চিকনা চুপ করে গেলো।
হাতের কাজ শেষ করে নে, পর্শুদিন ওখানে সবাইকে যেতে হবে। সারাদিন লেগে যাবে।
সবাই মেনে নিল অনাদির কথা। নীপা চা নিয়ে এলো, হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো কত কি হলো। সবার মধ্যমনি নীপা। আমাদের আড্ডায় কিছুক্ষণ অংশগ্রহণ করলো। চিকনা ধমকে বললো বড়দের আড্ডয় ছোটদের থাকতে নেই।
আমি এখন এ্যাডাল্ট।
নীপা এমন ভাবে কথা বললো সবাই হেসে উঠলো।
সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁরে তোর দোকানে টিভি আছে।
আনাদি বললো আছে মানে কি চাই বল।
দেখলি ব্যবসার কথা হলেই কেমন টোকে।
উঃ সব কথা গায়ে মাখিস কেনো। আমি বললাম।
এই হল কাল। বাসু বললো।
তোর কথা ভাঙিয়ে কত কাজ বাগায় জানিস ও। অনাদি বললো।
সেতো ভালো। তুই করিস না।
হ্যাঁরে ছুঁচ্চা আমি করি, তুই করিস না।
সঞ্জীব হেসে বললো করি তবে কম। একটা কথা কি জানিস অনি তোকে সবাই বেশ ধ্বসে।
কি রকম।
সেদিন ভানুর একটা ব্যাপারে বিডিওর কাছে গেছিলাম, শালা কিছুতেই করবে না, যেই বললাম ঠিক আছে আমার বন্ধুরে তাহলে একবার ফোন করতে হবে।
শালা তোর নাম শুনেই বলে কিনা আপনি একটু ঘুরে আসুন আপনার কাজ হয়ে যাবে। সত্যি বলছি অনি কাজটা হয়ে গেলো। তুই শালা এখন মিনিস্টার বনে গেছিস।
সবাই হো হো করে হাসলো। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট পরে আছে। চিকনা একটা আমাকে দিয়ে বললো, এটা কাউন্টার হবে। ভানু বললো আমি ফার্স্ট, চিকনা বললো, ইঁট পাতো। আমি হেসে ফেললাম।
বাসুকে আলাদা করে বললাম, নীপা তোর দোকানে আজ যাবে কিছু জামা কাপড় কিনতে তুইতো থাকবি না, তাহলে কি হবে ?
বাসু খিস্তি করে বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না।
সঞ্জীবকে বললাম, তোর দোকানের সবচেয়ে ভাল টিভি যদি থাকে আজ একটু লাগিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। সঞ্জীব আমার দিকে তাকলো, চুয়াড়।
আমি মুচকি হাসলাম।
সবাই চলে গেলো। ঠিক হলো এখান থেকে বারোটার সময় বেরোব ওরা বাইক নিয়ে যে যার চলে আসবে। আমি ওবাড়িতে গিয়ে কাকার সঙ্গে সব আলোচনা করলাম। নীপা কাকীমা সুরমাসিও ছিল। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। আমি কাকাকে বললাম তুমি অনুমতি দাও আমি এখানে থাকতে থাকতে সব কাজ সেরে যেতে চাই।
কাকা কেঁদে ফেললেন। চশমা লাগিয়েও আমি আবঝা দেখি বুঝলি অনি। যার চোখ নেই পৃথিবী তার কাছে অন্ধকার। তোর লেখা আমি পরতে পারি না। নীপা পরে পরে শোনায় ঘরে একটা টিভি আনতে পারলাম না। মেয়াটা সারাদিন কি করে বলতো, সন্ধ্যায় চিকনাদের বাড়িতে যায় একটু টিভি দেখার জন্য।
আমি গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, পান্তা খেয়ে বেরোব।
সেকিরে মেয়েটা তোর জন্য সেই সাত সকাল থেকে রান্না করলো।
নীপার দিকে তাকালাম, ওর মুখটা কেমন থমথমে।
ঠিক আছে, আমি স্নান সেরে আসি ওরা এসে পরবে এখুনি।
আমি ওবাড়ি হয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলাম। স্নান সেরে ঘরে এসে দেখি নীপা দাঁড়িয়ে আছে খাটের কাছে। কি যেন করছে। আমাকে দেখেই মুখটা গম্ভীর করে নিল। আমি বললাম কি হলো আবার।
কি হয় নি তাই বলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
তুমি যে এরি মধ্যে এতো সব প্ল্যান ভেঁজেছো আমাকে জানিয়েছো।
সময় পেলাম কোথায়।
কেনো কাল থেকে সময় পাও নি।
হাসলাম।
আমি কি তোমার কেউ নই।
কে বলেছে তুমি কেউ নও।
তাহলে।
আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
আমায় একটা জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জি এগিয়ে দিল।
আমি বললাম এটা নয় পাজামা পাঞ্জাবী দাও। এগুলো কলকাতার জন্য।
না।
কেনো।
এটা পরলে তোমাকে দারুন স্মার্ট লাগে।
হাসলাম। দাও।
জাঙ্গিয়াটা পরতে গিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও হাসছে।
তুমি যাও।
ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে কথাই বলব না।
সে কি!
নীপা বেরিয়ে গেলো। আমি জামা পেন্ট গলিয়ে নিলাম।
আসবো।
এসো।
নীপা ভেতরে এলো। ওর চোখ মুখ বলছে কিছু বলবে আমায়। উসখুস করছে অনেকক্ষণ থেকে।
অনিদা তোমায় একটা কথা বলবো।
বলো।
কালকে আমি খুব বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছি।
না। তুমি কোনো অন্যায় করো নি।
একথা বলছো কেনো।
তুমি করো নি। তোমার বয়সটা করেছে।
তুমি আমাকে খুব খারাপ মেয়ে ভাবলে।
একবারেই না।
কিজানি তখন কিযে হলো।
দেখো নীপা ওটা বয়সের ধর্ম। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তোমায় গ্রহণ করতো।
নীপা আমার কাছে এসে মুখ নীচু করে দাঁড়ালো। আমাকে ক্ষমা করে দাও অনিদা।
আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম। নীপা মাথ নীচু করে আছে। আমি ওর চিবুকটাধরে মুখটা তুললাম। চোখের পাতা দুটো চিক চিক করছে। আমি ওর চোখের পাতায় আঙুল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম।
জানোনা অনিদা মেসো মনিমা গ্রামের সকলের কাছে তোমার কথা শুনে শুনে খালি ভাবতাম তুমি আমার আর কারুর নয়। আমায় যদি তোমার জন্য আবাহমান কাল বসে থাকতে হয় বসে থাকবো। কিন্তু তুমি আমার।
আমি তো তোমার। একথা ভুল নয়। এই তো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
নীপা আমার দিকে চোখ মেলে তাকালো। ওর ডাগর চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
একদিন তোমার ভুল ভাঙবে নীপা। তখন দেখবে আমি যা করেছি ঠিক করেছি।
নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুমি কখনো আমাদের ছেড়ে যাবে না।
কেনো যাবো!
নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলো। আমার ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক করে বোজালাম। নীপা আমাকে ছারলো।
আমি মিটসেফের কাছে গিয়ে আয়না চিরুনিটা নিয়ে চুলটা কোনোপ্রকারে আঁচড়ালাম। নীপা আমায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে।
কি দেখছো।
তোমাকে যত দেখছি হিংসে হচ্ছে।
কেনো।
আজ যারা এই বাড়িতে এসেছিল জানো তারা কেউ এই কয় বছরে আসে নি। একমাত্র চিকনাদা ছাড়া।
জানি। ওরা তা স্বীকার করেছে।
তাও ওদের সঙ্গে তুমি রিলেসন রাখবে।
পৃথিবীতে একটা পিঁপরের কিছু না কিছু অবদান আছে।
রাখো তোমার তত্ব কথা।
এবার দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীপা আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে উঠলো। তুমি কিছুদিন আগে আসনি কেন অনিদা। তাহলে আমাদের এই অবস্থা হতো না।
ঠিক আছে ঠিক আছে। আমিতো এসে গেছি। এবার দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীপার কান্না থামে না।
আমি ভীষণ অপ্রস্তুতে পরে গেলাম। নীপা কাঁদুক, কিছুক্ষণ কাঁদলে ও বরং হাল্কা হবে। নীপার চোখের জলে আমার বুক ভিঁজেছে। আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম। এবার চলো।
ওরা ঠিক সময়ে চলে এসেছে। আমি ওদের সঙ্গে বেরিয়ে পরলাম। আমি বাসুর বাইকে বসেছি। যেতে যেতে টুকরো টুকরো অনেক কথা হলো। এও জানলাম বাসুর দোকানে কাকার প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা ধার আছে। বাসুকে বললাম এখানে এসবিআই-এর এটিএম আছেরে। ও বললো আছে। আমি বললাম তুই প্রথমে ওখানে আমাকে একবার দাঁড় করাবি। তারপর নার্সিংহোমে যাব। ও বললো ঠিক আছে।
এটিএম থেকে একবারে টাকা তুলতে দিল না। পাঁচবারে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুললাম। নিয়ে এসেছিলাম দশ হাজার টাকা। বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে। কি আর করা যাবে। নার্সিংহোমে পৌঁছলাম প্রায় দেড়টা নাগাদ। ওখানে সব কাজ মিটতে মিটতে প্রায় সাড়ে তিনটে বাজলো।
অনাদির সঙ্গে বেশ চেনা পরিচয় আছে দেখলাম। আমার কোন পরিচয় এখানে দিলাম না। ওদেরও বারন করে দিয়েছিলাম। নার্সিংহোমে পঁচিশ হাজার টাকা জমা দিলাম। এরপর ভানু গাড়ির ব্যবস্থা করলো। দুখানা টাটা সুমো, ওখানে টাকা মেটালাম। মোবাইলের টাওয়ারটা দেখলাম বেশ ভালো। অমিতাভদাকে ফোন করে সব জানালাম। অমিতাভদা বড়মাকে দিলেন। আমি বড়মার সঙ্গে কথা বললাম।
বড়মার এক কথা আমি যাব, তুই না করিস না। বহুবার বারন করলাম, শুনল না, বাধ্য হয়ে ঠিকানা পত্র সব দিলাম। এরপর মিত্রাকে ফোন করলাম, মিত্রাকে সব জানালাম, ওকেও বললাম, এসে কি করবি, শুধু শুধু এতদূরে আসবি, আবার ফিরতে হবে তো।
কিছুতেই আমার কথা শুনল না, বাধ্য হয়ে বললাম, বড়মারা আসবে, তুই বড়মার সঙ্গে চলে আয়। আর যখন আসবি আমার একটা উপকার কর।
বল কি করবো, তুই আমার জন্য একটা মোবাইল কিনে আনিস, এই মোবাইলটা কাকার কাছে রেখে যাবো। আমি এখান থেকে একটা সিম কার্ড নিয়ে নিচ্ছি। আসার সময় মোবাইলটা ফুল চার্জ দিয়ে নিয়ে আসবি।
এতোক্ষণ খেয়াল করিনি বাসু আমার পাশে দাঁড়িয়ে, ও অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিল। ওর চোখে বিস্ময়।
হ্যাঁরে অনি, বড়মা কে !
ওকে সব বললাম, শুনে তো ওর মাথা খারাপ।
জিজ্ঞাসা করলো, মিত্রা ?
বললাম সব কথা। হাসতে হাসতে বললো, তুই শালা তোর মালকিনকে তুই তুই করে বলছিস।
কি করব বল, ভাগ্যচক্রে ওর সঙ্গে আমি এক সাথে পড়াশুনো করেছি।
উরি শালা তুই তো বড়গাছে মই বেঁধেছিস।
আমি বললাম নারে, ও বিবাহিত ওর স্বামী এশিয়ার রিনাউন্ড একজন ডাক্তার।
শুনে ওরা থ। কথাটা ভানু অনাদি সঞ্জীবের কাছে পৌঁছতে বেশিক্ষণ সময় লাগল না। ওরা তো এই মারে সেই মারে।
অনাদি বললো তুই শালা কিরে, নীলকন্ঠ।
আমি হাসলাম।
সঞ্জীবকে বললাম, তুই তো ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা করছিস আমায় একটা সিম জোগাড় করে দে না।
কেনো।
দরকার আছে।
তোরতো আছে।
কাকাকে দিয়ে যাব।
সেট।
ওইতো আনতে বলে দিলাম। কাল এসে যাবে।
তোরটা কি ?
এন নাইনটি ফাইভ ।
আরি বাবা এই তল্লাটে কারুর নেই। চল আমার বস মগার দোকানে।
সেটা আবার কে ?
আমার মহাজন। আমি কলকাতা যাই না, ওর কাছ থেকেই মালপত্র নিয়ে যাই।
কলকাতা থকে মাল নিয়ে এসে ব্যবসা করতে পারিস। আমি ঠেক গুলো সব চিনিয়ে দেবো। দেখবি দুটো পয়সার মুখ দেখতে পারবি।
বুঝলি অনি ক্যাপিটেল চাই।
সেতো মহাজন দেবে।
কি বলছিস তুই।
হ্যাঁ। তোকে মাল পাঠাবে তুই যদি ঠিক ঠিক বিক্রি করে পয়সা দিস, আর কোন অসুবিধা নেই। ধান্দা ভালো।
ঠিক আছে তোর কাজ মিটুক বসে কথা বলা যাবে।
ওর বস মগার দোকানে এলাম। সঞ্জীব প্রথমেই ট্রাম্প কার্ড খেললো।
মগাদা এই সেই বিখ্যাত অনি।
উনি চেয়ার ছেড় উঠে দাঁড়ালেন। জোড় হাত করে নমস্কার করলেন।
বসুন বসুন আপনার লেখাতো কাগজে পরি, তাছাড়া সঞ্জীবের মুখ থেকে আপনার অনেক কথা শুনেছি। ভদ্রলোক একেবারে গদ গদ।
সঞ্জীব বললো একটা সিম চাই অনির, আমাদের এখানে যার টাওয়ার সবচেয়ে ভালো সেটা দাও।
কার নামে হবে।