08-07-2019, 09:31 PM
Bandini - 1
কিছুজনের জীবনে সাভাবিক শৈশব কাল হয়ে না. আমি ছিলাম এরকম একজন. জন্মেছিলাম এক মধ্যবিত্য বাঙালি পরিবারে. বাবা ইঞ্জিনিয়ার আর মা ছিল গৃহবধূ. বাবা বদলির চাকরি ছিল, তাই মাঝে মধ্যে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে বদলি হত|
আমরা যে সবসময়ে বাবার সাথে যেতে পারতাম তা নয়ে. মাঝে মধ্যে আমি আর মা ঠাকুমা দাদুর সাথে আমাদের কলকাতার বাড়িতে থাকতাম.যখন আমার বয়েস ১০ ছিল, বাবার পোস্টিং হয়েছিল বেঙ্গল আর বিহারের বর্ডারে একটা গ্রামে|
প্রথমে শুনেছিলাম সেই গ্রামে বাবার কিছুদিনের জন্য পোস্টিং হয়েছে এবং বাবা একদিন ফোন করে জানায়ে তার এই গ্রামে অনেকদিন থাকতে হবে| মাকে আমাকে নিয়ে সেই গ্রামে আসতে বলে| দাদুর আমাদের দুজনের ওরকম এক গ্রামে বাবার সাথে থাকার ব্যাপার নিয়ে মতবিরোধ ছিল কিন্তু বাবা জোর করতে লাগলো আমাদের আসা নিয়ে.আমাদের নিয়ে আসার জন্য বাবা এলো না.দাদু এলো আমাদের নিয়ে. বাবা যদিও স্টেশন এ অপেখ্যা করছিল আমাদের জন্য|
বাবাকে দেখে দাদু বলে বসলো-“কিরে তোর মুখ চোখ এরকম দেখাছে কেন?…শরীর খারাপ নাকি..”
বাবা-“না এখানে …. এত কাজের চাপ”
দাদু-“তোর কিছু একটা হয়েছে..তোকে এরকম উদাসীন দেখাছে..বউ মা মনে হছে…কিছু একটা হয়েছে…”
মা শুধু বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল. বাবা কথা এড়িয়ে বলল-“আচ্ছা..এ হছে..রঘু…আমার ড্রাইভার…রঘু মাল পত্র গুলো তোলো…”
আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম. গ্রামের এবরো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে ঝাকুনি খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত পৌছালাম এক বাংলোর কাছে. এই বাংলো ছিল এখানকার ইঞ্জিনিয়ারদের থাকার জায়েগা. এক একটা বাংলো একে অপরের থেকে বেশ দুরে দুরে ছিল| আমরা ঘরে ঢুকতেই, একজন মধ্য বয়েস্ক ভদ্রমহিলা বেড়িয়ে এলো|
বাবা-“বাবা এ হছে কমলা …. এখানে রান্না , ঘর পরিস্কার করার সব কাজ নিজে সামলায়ে”
দাদু আর চোখে সেই কাজের মাসিটাকে দেখতে লাগলো | ঘরে ঢুকে মা আমাকে স্নান করাতে নিয়ে গেলো এবং আমাকে স্নান করিয়ে মা নিজে স্নান করতে গেলো| আমি সেই সময়ে আমাদের নতুন বাংলো টা ঘুরছিলাম|
হঠাত পাশের ঘর থেকে বাবা আর দাদুর কথোপকথন শুনতে পেলাম.দাদু বাবাকে বলছিল-‘আমার এই জায়গাটা একদম ভালো লাগছে না. এরকম এক অজ পাড়াগায়ে বৌমা’ আর খোকা নিয়ে থাকার কোনো মানে হয়ে না.’
বাবা বলল-“তোমার এত চিন্তা হছে কেন?”
দাদু-“তোর এই রঘু ড্রাইভার টি বার বার কাচ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বৌমাকে দেখছিল”
বাবা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলো এবং বলল-“এখানে গ্রামের লোকগুলো একটু এরকম হয়ে..তুমি চিন্তা করো না. তুমি বিশ্রাম করো. তোমায়ে কাল বেরোতে হবে. আমি বরং মাকে ফোন করে বলে দি সবাই ঠিক থাক এখানে পৌছেছে.”
এরপর পরেরদিন দাদু আমাদের কে বাবার কাছে রেখে চলে গেল, দাদু চলে যাওয়ার পরে মা বাবাকে বলল-“জানো ..বাবা যাওয়ার আগে এক অদভুত কথা বলল”
বাবা-“কি?”
মা-“এই কমলাকে বেশিদিন কাজে রাখতে না…আর কোনো জায়গায়ে যেতে হলে তোমাকে সঙ্গে নিতে”
বাবা বলল-“বাবার কথা নিয়ে চিন্তা করো না.”
মা-“কিন্তু তোমার কিছু একটা হয়েছে.তুমি বাবার কাছে লোকাতে পারো কিন্তু আমার কাছে নয়ে.”
বাবা-“উফ..আমার কিছু হয়েনি…প্রসঙ্গ তা বাদ দাও…আচ্ছা শোনো আমার এক কলিগ কালকে আমাদের নিমন্ত্রণ করেছে ওদের বাড়িতে.”
মা-“কে বোলো তো?”
বাবা-“তুমি চেনো না. সমীর নাম.তোমাকে কোনদিন বলিনি ওদের ব্যাপারে আগে.”
মা-“নিমন্ত্রণ করেছে…কিছু জিনিস নিয়ে যেতে হবে…এখানে তো কিছু চিনি না.”
বাবা-“ওই সব নিয়ে তুমি ভেবো না.”
পরেরদিন আমরা ওদের বাড়িতে গেলাম. আমাদের বাংলো থেকে কিছুটা দুরে ওদের বাংলো ছিল.ভদ্রলোকের নাম সমীর. ওনার স্ত্রীর নাম ছিল শিখা. আমার বয়েসি একটা ছেলে ছিলো নাম সিদ্ধার্থ আর এক মেয়ে ছিল যে খুব ছোটো ছিল|
ওখানে গিয়ে উপস্থিত হতেই বাবা আমাকে সিদ্ধার্থের সাথে অর ঘরে খেলতে যেতে বলল| আমি ছোটবেলা থেকেই একটু লাজুক ছিলাম| সঙ্গে সঙ্গে কারোর সাথে সহজে প্রথম আলাপে কথা বলে পারতাম না| আমার মায়ের থেকে পাওয়া এই স্বভাব. সিধার্থ আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল. ও নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো.
সিধার্থ-“তোমরা কবে এলে অভিক”
বলা হয়েনি আমার নাম অভিক.আমি-“এই তো দুদিন আগে.”
সিদ্ধার্থ-“তুমি কি কলকাতায়ে ফিরে যাবে”
আমি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললাম-“আমাকে এই কলেজ ছাড়িয়ে নিয়ে এসছে”
সিদ্ধার্থ-“তাহলে মনে হয়ে জয়ন্ত কাকু তোমাকে আমার কলেজ ভর্তি করবে.”
জয়ন্ত আমার বাবার নাম| ছেলেটা অনেক চেষ্টা করছিল আমার সাথে গল্প করার এবং ওর কিছু কমিক্স আমাকে দেখালো আর আমার ঠিক’ যেন ভালো লাগছিল না, আমার মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছিল|
আমি বললাম -“চল না…ঘরে যাই…দেখি সবাই কি গল্প করছে.”
সিদ্ধার্থ-“ঠিক আছে…তুমি যাও..আমি আসছি…”
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের মেইন হল ঘরের দিকে হাটতে লাগলাম. শুনতে পেলাম সমীর কাকু গলা-“তা কাকলি …তোমার এখানে এসে কেমন লাগছে”
আমার মায়ের নাম কাকলি| মা মুচকি হেসে বলল-“এই তো কিছুদিন হলো. এখনো তো আপনার বন্ধু কোথাও ঘোরায়নি.”
সমীর-“কোনো কিছু দেখার নেই…এইটা একটা অভিশপ্ত গ্রাম”
মা চোখ কুচকে বলল-“অভিশপ্ত !!!”
শিখা-“উফ…তুমি এগুলো আসার সাথে বলছ কেন.”
সমীর-“হ্যা…সেটা ঠিক….জয়ন্ত কি তোমায়ে বলেনি তোমাকে কেন নিয়ে এসছে এখানে ?”
মা-“আপনি কি বলছেন…আমি বুঝছিনা”
শিখা-“তুমি বন্ধ করবে…এগুলো কি করছো তুমি?”
সমীর-“কেন…তুমি ওকে বুঝিয়েছিলে…নিজে তো এই গ্রামের বেশ্যা মাগী হয়ে গেছ”
মা সমীর কাকুর এই আচরণ দেখে আঁতকে উঠলো| শিখা কাকিমা এবার কেঁদে ফেলে এবং জোরে জোরে বলতে লাগলো-“সেটার জন্য তো আমি দায়ী…”
বাবা আমাকে আর আমার পাশে সিদ্ধার্থ দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল -“সমীর. শিখা এই সব বন্ধ করো..ছেলেগুলো দাড়িয়ে আছে”
এমন সময়ে এক বাচ্চার গলার আওবাজ শুনতে পেলাম, সমীর কাকু -“শিখা..মেয়েটাকে সামলাও…আমি এখানে খাবারের বন্দবস্ত করি.”
মা আর বাবা দুজনেই বেশ অসস্থি বোধ করছিল সেই সময়ে. বাবার মুখে এক অদভুত উদাসীন ছাপ দেখা যাছিল| বাড়িতে পৌছতে মা বাবাকে জেরা করলো -“আমাকে তুমি সব কিছু বোলো…কি হছে এখানে?…আর তুমি লোকাবে না”
বাবা-“তোমাকে এক সময়ে সব কিছু বলতে হত কাকলি…অভিক ঘুমিয়ে পড়ুক…তারপর !!!”
রাতে আমাকে ঘুমাতে পাঠিয়ে বাবা আর মা বাংলো মধ্যিখান ঘরে কথা বলতে শুরু করব| প্রথমে ঘরে গিয়ে আমি চুপ চাপ শুয়ে ছিলাম কিন্তু পরে নিজের কৌতুহল ধরে রাখতে পারলাম না| বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে এবং উকি মেরে শুনতে লাগলাম বাবা মায়ের কথোপকথন|
বাবা ছলছল চোখে মায়ের হাত ধরে বলতে লাগলো-“বিশ্বাস করো কাকলি…আমি তোমাকে এরকম এক পরিস্থিতি ফেলতে চায়েনি.”
মা বেশ ভিতু চোখে বাবাকে বলল-“তোমার কি হয়েছে…আমায়ে খুলে বোলো…তোমাকে কোনদিন এরকম অবস্থায়ে দেখিনি”
বাবা-“এখন বিশ্বাস হছে সমীর দার কথাই শোনা উচিত ছিল, শিখা বৌদির নয়ে, কি মুখে তোমায়ে বলব.”
মা-“আমি তোমার স্ত্রী…তুমি আমাকেও বলতে পারবে না…কি এমন কথা যা আমাকে বলতেও তোমার এই অবস্থ্যা”
বাবা-“আমি যখন প্রথম এই গ্রামে এসেছিলাম, আমি এই সব জানতাম না এই গ্রামের বাপারে.”
মা-“কি?”
বাবা-“এই গ্রামের মেয়ের সংখা কম, প্রত্যেক পাচটি ছেলের বদলে একটি মেয়ে এখানে. এক সময়ে গ্রামের লোকদের কুসংস্কার আর মেয়ে শিশু হত্যার ফলে আজ এই অবস্থ্যা গ্রামের| এখানে আমার প্রথম আলাপ হয়েছিল সমীরের সাথে. তখন আমি জানতাম ওনাকেও ফাসিয়েছে এই গ্রামের লোকেরা|
এখানে আমার কর্ম সুত্রে বন্ধুত্য হয়ে রজত সেথ নামে এখানকার এক লোকাল কনট্রাক্টার| বিশ্বাস করো আমাদের সম্পর্ক শুধু প্রথমে কাজের মধ্যে সীমিত ছিল, কিন্তু কেন জানি না নিজের এক ঘেয়ে কর্ম জীবনএ বিতৃষ্ণায়ে লোকটির সাথে আমার বন্ধুত্য আরো বেড়ে গেলো|আজ ভাবিনি এর মাশুল এভাবে দিতে হবে.”
মা-“কি হয়েছে?..লোকটা কি তোমায়ে ঠকিয়েছে”
বাবা-“আমায়ে ফাসিয়েছে…এবং হয়তো আমি নিজে থেকে ফাঁদে পা দিয়েছিলাম. লোকটি বাজে সঙ্গে পড়েছিলাম আমি.সারাদিন একা থাকতাম আমি. তুমি বুঝছ তো কাকলি.”
মা-“তুমি এখানে কিছু করেছ…”
বাবা-“মিথ্যে কথা বলব না তোমায়ে কাকলি…আমাকে নিয়ে গেছিল লোকটি একটি জায়গায়ে কিন্তু পারিনি এগোতে …চলে এসছিলাম”
মা-“তারপর?”
বাবা-“তোমার ছবি দেখেছিল রজত..খুব প্রশংসা করেছিল..কিন্তু তখনও ভাবিনি এরকম ভাবে আকর্ষণ হবে…রজত আমাকে বাধ্য করেছে তোমাকে নিয়ে আসতে এখানে”
মা-“কেন?..তুমি কি বলছ সোনা আমি বুঝছিনা”
বাবা-“এই গ্রামের এক প্রথা আছে…কোনো বাইরের মহিলা যে এই গ্রামে থাকে …তার নিরাপত্তা দায়িত্য শুধু এই গ্রামের এক পরিবার নিতে পারবে.”
মা-“কি রকম নিরপত্তা?”
বাবা-“গ্রামের লোকের হাত থেকে নিরপত্তা…শিখা বৌদির নিরাপত্তা এই গ্রামের এক পরিবার করে”
মা-“এখানে পুলিশ এরা কি করে?”
বাবা-“সবাই এখানকার পরিবার মেয়েদের বাচাতে ব্যস্ত….শুধু পরিবারের একজন নারী বাকিদের নিরাপদ রাখতে পারে.”
মা-“এরকম অরাজকতা…কিন্তু কেন?”
বাবা-“তোমাকে আমি এর কারণ জানিয়েছি..প্রত্যেক পাঁচ পুরুষের বিনিময়ে এই গ্রামে শুধু একটি মেয়ে…”
মা চোখ কুচকে-“কিভাবে নিরাপদ রাখে?”
বাবা মাথা নিচু করে বলল-“শিখা বৌদির মেয়েটি সমীর দার নয়ে..”
মার চোখ গোল হয়ে গেল চেচিয়ে উঠলো-“কি বলছ তুমি?”
বাবা মাকে জড়িয়ে কাদতে লাগলো. এক অদভুত রকম লাগছিল, কোনো রকম ভাবে কাদতে কাদতে বাবা বলল-“আমায়ে ক্ষমা করো কাকলি”
মা পাথরের মত দাড়িয়ে ছিল-“রজত সেথ তোমায়ে কি করে বাধ্য করলো?”, মা আসতে আসতে জিজ্ঞেস করলো.
বাবা বলল-“আমাকে ফাসিয়েছে…”
মা-“কিভাবে?”
বাবা-“বাদ দাও..কাকলি..আমার ভালো লাগছে না”
মা-“না…আমাকে বোলো তুমি…কি হয়েছে?…আমি সব জানতে চাই”
বাবা-“একদিন রাতে কমলা আমার কাছে এসেছিল রাতে”
মা-“তারপর ?”
বাবা যেন আর বলতে পারছিল না -“আমার ভুল হয়ে গেছে কাকলি…কি যেন একটা হয়েছিল..আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি..কিন্তু ও যা অপবাদ দিয়েছিল..সব মিথ্যে…মনে আছে একদিন তোমাকে অনেকবার ফোন করেছিলাম..সেই রাতে..কি হয়েছিল আমি জানি না…”
মায়ের চোখ ছলছল করে উঠলো-“তুমি কমলার মত একটা মহিলার সাথে…আমাকে তুমি এই ভাবে ধোকা দিলে”
বাবা মাথায়ে হাত দিয়ে বসে পড়ল-“আমাকে ফাসিয়েছে ওরা….তোমার কি এই টুকু বিশ্বাস নেই..এই সব রজত সেথের পরিকল্পনা..ও এই সব করেছে শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য”
মা-“তুমি এই সব করে এখন বলছ এই সবের জন্য আমি দায়ী”
বাবা-“আমি দায়ী সোনা..আমার ওর মতলব বোঝা উচিত ছিল…নিজেকে বাচানোর জন্য সার্থপরের মত তোমাকে এখানে ডেকেছি…তুমি কি বুঝছো না তোমাকে কি বিপদে ফেলেছি আমি….সমীর দা বার বার বারণ করেছিল…কি করব বুঝতে পারছিলাম না…হয়তো শিখা বৌদি কথা শোনা আমার উচিত ছিল না”
মা এবার কথা ঘুরিয়ে বলল-“শিখা বৌদি আর সমীর দার সাথে এরকম হয়েছিল?”
বাবা-“হা….সমীরদার এর চেয়ে ভয়ানক কিছু ঘটেছিল. সমীরদাকে ধরে নিয়ে গেছিল গ্রামের কিছু গুন্ডা এবং শিখা বৌদি বাধ্য করেছিল এক পরিবারের কুল বধু হতে”
মা আতকে উঠলো-“কুল বধু ?”
বাবা-“হা..এটাই নিয়ম…শিখা বৌদির বিয়ে দেয়া হয়েছে. আমি যখন প্রথম এসছিলাম..কেউ জানায়নি এই গ্রামের এই নোংরাম নিয়ে”
মা-“তুমি বলছ রজত সেথ আমায় বিয়ে করবে?..এ কি করে সম্ভব”
বাবা-“এই গ্রামে সব সম্ভব !!!”
মা এবার চেচিয়ে উঠলো-“আমি এই সব পারবো না…আমাকে আর আমার ছেলেকে কলকাতায়ে নিয়ে চল….তুমিও চল আমাদের সাথে”
কমলা মাসি ঘরে আসতেই মা খুব ঘৃণার চোখে কমলার দিকে তাকাতে লাগলো.
কমলা মাসি-“রজত বাবু পাঠিয়েছে বৌদির জন্য.” বলে বাবার হাতে একটা প্যাকেট দিল.
মা আমাকে ডেকে পাশের ঘরে নিয়ে গেলো. মাকে দেখে যেনো মনে হছিলো ভেতরে জ্বলছে. নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, ঘর থেকে বেরিয়ে বলল-“তোকে আজ থেকে এখানে কাজ করতে হবে না…বেড়িয়ে যা এখান থেকে.”
কমলা মাসি হাসতে হাসতে বলল-“বেড়িয়ে গেলে হবে বৌদি..তুমি যখন রজত বাবুর কাছে থাকবে…দাদার খেয়াল আমাকে রাখতে হবে.”
মা-“তোমার মত নোংরা মেয়ের নরকে স্থান হবে না.”
বাবা -“তুমি নিজেকে সামলাও…এর উপর রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেই”
মা চেচিয়ে উঠলো-“ওকে ঘর থেকে বার করো…নাহলে আমি গায়ে আগুন দেব”
কমলা মাসি-“বৌদি ..আমি বেরিয়ে যাচ্ছি…তুমি কিছু করো না…আমরা গরিব মানুষ…রজত বাবু আমার পরিবারের সকল মরদ কে মেরে দেবে বলেছিল যদি আমি এই সব না করি…পারলে আমায়ে ক্ষমা করো.”
কমলা মাসি তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল. মা ঘরে ঢুকে বিছানায়ে শুয়ে কাদতে লাগলো.বাবা ঘরে ঢুকে বলল-“তুই অন্য ঘরে যা…মাকে একটু একা থাকতে দে”
বাবা ঘরে রইলো সেদিন. বিকালে গাড়ি করে আমাদের বাড়ির সামনে হাজির হলো কিছু লোক. একজন কে দেখলাম বেশ সেজে’ গুজে নামতে এবং বাকিরা সবাই ওই লোকটির চারপাশে দাড়িয়ে পড়ল.একজন আবার ছাতা চেপে ধরল সেই লোকটির মাথায়ে. দেখে মনে হছিল সব কোটা বুনো শুওরের মাঝে একটা সদ্য পরিস্কার করা শুয়োর কে রাখা হয়েছে.
লোকটার সঙ্গপঙ্গরা দরজা টোকা মারতেই বাবা দরজা খুলল.লোকটি-“নমস্কার ইঞ্জিনিয়ার বাবু…আজ এতদিন পর অনুমতি দিলেন..আপনার বাড়িতে আসতে”
বাবা-“আমার বাবা ছিল..বুঝতে পারছেন..আপনি আসুন বসুন …”
রজত সেথ-“সে আপনি না বললে বসতাম…আমার রানী কোই..”
বাবা-“ও পাশের ঘরে..এখনি আসছে”
আমি দরজা উকি মারছিলাম, সেটি লোকটি দেখে ফেলল-“আরে এটা আপনার ছেলে…কি সুন্দর দেখতে?”
লোকটি ঘরে ঢুকে একটা সোফায় বসলো-“এসো খোকা…এখানে”
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম.বাবা কি বলবে বুঝতে পারছিল না.আমি জিজ্ঞেস করলাম-“ইনি কে বাবা?”
কিছুজনের জীবনে সাভাবিক শৈশব কাল হয়ে না. আমি ছিলাম এরকম একজন. জন্মেছিলাম এক মধ্যবিত্য বাঙালি পরিবারে. বাবা ইঞ্জিনিয়ার আর মা ছিল গৃহবধূ. বাবা বদলির চাকরি ছিল, তাই মাঝে মধ্যে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে বদলি হত|
আমরা যে সবসময়ে বাবার সাথে যেতে পারতাম তা নয়ে. মাঝে মধ্যে আমি আর মা ঠাকুমা দাদুর সাথে আমাদের কলকাতার বাড়িতে থাকতাম.যখন আমার বয়েস ১০ ছিল, বাবার পোস্টিং হয়েছিল বেঙ্গল আর বিহারের বর্ডারে একটা গ্রামে|
প্রথমে শুনেছিলাম সেই গ্রামে বাবার কিছুদিনের জন্য পোস্টিং হয়েছে এবং বাবা একদিন ফোন করে জানায়ে তার এই গ্রামে অনেকদিন থাকতে হবে| মাকে আমাকে নিয়ে সেই গ্রামে আসতে বলে| দাদুর আমাদের দুজনের ওরকম এক গ্রামে বাবার সাথে থাকার ব্যাপার নিয়ে মতবিরোধ ছিল কিন্তু বাবা জোর করতে লাগলো আমাদের আসা নিয়ে.আমাদের নিয়ে আসার জন্য বাবা এলো না.দাদু এলো আমাদের নিয়ে. বাবা যদিও স্টেশন এ অপেখ্যা করছিল আমাদের জন্য|
বাবাকে দেখে দাদু বলে বসলো-“কিরে তোর মুখ চোখ এরকম দেখাছে কেন?…শরীর খারাপ নাকি..”
বাবা-“না এখানে …. এত কাজের চাপ”
দাদু-“তোর কিছু একটা হয়েছে..তোকে এরকম উদাসীন দেখাছে..বউ মা মনে হছে…কিছু একটা হয়েছে…”
মা শুধু বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল. বাবা কথা এড়িয়ে বলল-“আচ্ছা..এ হছে..রঘু…আমার ড্রাইভার…রঘু মাল পত্র গুলো তোলো…”
আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম. গ্রামের এবরো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে ঝাকুনি খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত পৌছালাম এক বাংলোর কাছে. এই বাংলো ছিল এখানকার ইঞ্জিনিয়ারদের থাকার জায়েগা. এক একটা বাংলো একে অপরের থেকে বেশ দুরে দুরে ছিল| আমরা ঘরে ঢুকতেই, একজন মধ্য বয়েস্ক ভদ্রমহিলা বেড়িয়ে এলো|
বাবা-“বাবা এ হছে কমলা …. এখানে রান্না , ঘর পরিস্কার করার সব কাজ নিজে সামলায়ে”
দাদু আর চোখে সেই কাজের মাসিটাকে দেখতে লাগলো | ঘরে ঢুকে মা আমাকে স্নান করাতে নিয়ে গেলো এবং আমাকে স্নান করিয়ে মা নিজে স্নান করতে গেলো| আমি সেই সময়ে আমাদের নতুন বাংলো টা ঘুরছিলাম|
হঠাত পাশের ঘর থেকে বাবা আর দাদুর কথোপকথন শুনতে পেলাম.দাদু বাবাকে বলছিল-‘আমার এই জায়গাটা একদম ভালো লাগছে না. এরকম এক অজ পাড়াগায়ে বৌমা’ আর খোকা নিয়ে থাকার কোনো মানে হয়ে না.’
বাবা বলল-“তোমার এত চিন্তা হছে কেন?”
দাদু-“তোর এই রঘু ড্রাইভার টি বার বার কাচ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বৌমাকে দেখছিল”
বাবা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলো এবং বলল-“এখানে গ্রামের লোকগুলো একটু এরকম হয়ে..তুমি চিন্তা করো না. তুমি বিশ্রাম করো. তোমায়ে কাল বেরোতে হবে. আমি বরং মাকে ফোন করে বলে দি সবাই ঠিক থাক এখানে পৌছেছে.”
এরপর পরেরদিন দাদু আমাদের কে বাবার কাছে রেখে চলে গেল, দাদু চলে যাওয়ার পরে মা বাবাকে বলল-“জানো ..বাবা যাওয়ার আগে এক অদভুত কথা বলল”
বাবা-“কি?”
মা-“এই কমলাকে বেশিদিন কাজে রাখতে না…আর কোনো জায়গায়ে যেতে হলে তোমাকে সঙ্গে নিতে”
বাবা বলল-“বাবার কথা নিয়ে চিন্তা করো না.”
মা-“কিন্তু তোমার কিছু একটা হয়েছে.তুমি বাবার কাছে লোকাতে পারো কিন্তু আমার কাছে নয়ে.”
বাবা-“উফ..আমার কিছু হয়েনি…প্রসঙ্গ তা বাদ দাও…আচ্ছা শোনো আমার এক কলিগ কালকে আমাদের নিমন্ত্রণ করেছে ওদের বাড়িতে.”
মা-“কে বোলো তো?”
বাবা-“তুমি চেনো না. সমীর নাম.তোমাকে কোনদিন বলিনি ওদের ব্যাপারে আগে.”
মা-“নিমন্ত্রণ করেছে…কিছু জিনিস নিয়ে যেতে হবে…এখানে তো কিছু চিনি না.”
বাবা-“ওই সব নিয়ে তুমি ভেবো না.”
পরেরদিন আমরা ওদের বাড়িতে গেলাম. আমাদের বাংলো থেকে কিছুটা দুরে ওদের বাংলো ছিল.ভদ্রলোকের নাম সমীর. ওনার স্ত্রীর নাম ছিল শিখা. আমার বয়েসি একটা ছেলে ছিলো নাম সিদ্ধার্থ আর এক মেয়ে ছিল যে খুব ছোটো ছিল|
ওখানে গিয়ে উপস্থিত হতেই বাবা আমাকে সিদ্ধার্থের সাথে অর ঘরে খেলতে যেতে বলল| আমি ছোটবেলা থেকেই একটু লাজুক ছিলাম| সঙ্গে সঙ্গে কারোর সাথে সহজে প্রথম আলাপে কথা বলে পারতাম না| আমার মায়ের থেকে পাওয়া এই স্বভাব. সিধার্থ আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল. ও নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো.
সিধার্থ-“তোমরা কবে এলে অভিক”
বলা হয়েনি আমার নাম অভিক.আমি-“এই তো দুদিন আগে.”
সিদ্ধার্থ-“তুমি কি কলকাতায়ে ফিরে যাবে”
আমি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললাম-“আমাকে এই কলেজ ছাড়িয়ে নিয়ে এসছে”
সিদ্ধার্থ-“তাহলে মনে হয়ে জয়ন্ত কাকু তোমাকে আমার কলেজ ভর্তি করবে.”
জয়ন্ত আমার বাবার নাম| ছেলেটা অনেক চেষ্টা করছিল আমার সাথে গল্প করার এবং ওর কিছু কমিক্স আমাকে দেখালো আর আমার ঠিক’ যেন ভালো লাগছিল না, আমার মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছিল|
আমি বললাম -“চল না…ঘরে যাই…দেখি সবাই কি গল্প করছে.”
সিদ্ধার্থ-“ঠিক আছে…তুমি যাও..আমি আসছি…”
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের মেইন হল ঘরের দিকে হাটতে লাগলাম. শুনতে পেলাম সমীর কাকু গলা-“তা কাকলি …তোমার এখানে এসে কেমন লাগছে”
আমার মায়ের নাম কাকলি| মা মুচকি হেসে বলল-“এই তো কিছুদিন হলো. এখনো তো আপনার বন্ধু কোথাও ঘোরায়নি.”
সমীর-“কোনো কিছু দেখার নেই…এইটা একটা অভিশপ্ত গ্রাম”
মা চোখ কুচকে বলল-“অভিশপ্ত !!!”
শিখা-“উফ…তুমি এগুলো আসার সাথে বলছ কেন.”
সমীর-“হ্যা…সেটা ঠিক….জয়ন্ত কি তোমায়ে বলেনি তোমাকে কেন নিয়ে এসছে এখানে ?”
মা-“আপনি কি বলছেন…আমি বুঝছিনা”
শিখা-“তুমি বন্ধ করবে…এগুলো কি করছো তুমি?”
সমীর-“কেন…তুমি ওকে বুঝিয়েছিলে…নিজে তো এই গ্রামের বেশ্যা মাগী হয়ে গেছ”
মা সমীর কাকুর এই আচরণ দেখে আঁতকে উঠলো| শিখা কাকিমা এবার কেঁদে ফেলে এবং জোরে জোরে বলতে লাগলো-“সেটার জন্য তো আমি দায়ী…”
বাবা আমাকে আর আমার পাশে সিদ্ধার্থ দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল -“সমীর. শিখা এই সব বন্ধ করো..ছেলেগুলো দাড়িয়ে আছে”
এমন সময়ে এক বাচ্চার গলার আওবাজ শুনতে পেলাম, সমীর কাকু -“শিখা..মেয়েটাকে সামলাও…আমি এখানে খাবারের বন্দবস্ত করি.”
মা আর বাবা দুজনেই বেশ অসস্থি বোধ করছিল সেই সময়ে. বাবার মুখে এক অদভুত উদাসীন ছাপ দেখা যাছিল| বাড়িতে পৌছতে মা বাবাকে জেরা করলো -“আমাকে তুমি সব কিছু বোলো…কি হছে এখানে?…আর তুমি লোকাবে না”
বাবা-“তোমাকে এক সময়ে সব কিছু বলতে হত কাকলি…অভিক ঘুমিয়ে পড়ুক…তারপর !!!”
রাতে আমাকে ঘুমাতে পাঠিয়ে বাবা আর মা বাংলো মধ্যিখান ঘরে কথা বলতে শুরু করব| প্রথমে ঘরে গিয়ে আমি চুপ চাপ শুয়ে ছিলাম কিন্তু পরে নিজের কৌতুহল ধরে রাখতে পারলাম না| বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে এবং উকি মেরে শুনতে লাগলাম বাবা মায়ের কথোপকথন|
বাবা ছলছল চোখে মায়ের হাত ধরে বলতে লাগলো-“বিশ্বাস করো কাকলি…আমি তোমাকে এরকম এক পরিস্থিতি ফেলতে চায়েনি.”
মা বেশ ভিতু চোখে বাবাকে বলল-“তোমার কি হয়েছে…আমায়ে খুলে বোলো…তোমাকে কোনদিন এরকম অবস্থায়ে দেখিনি”
বাবা-“এখন বিশ্বাস হছে সমীর দার কথাই শোনা উচিত ছিল, শিখা বৌদির নয়ে, কি মুখে তোমায়ে বলব.”
মা-“আমি তোমার স্ত্রী…তুমি আমাকেও বলতে পারবে না…কি এমন কথা যা আমাকে বলতেও তোমার এই অবস্থ্যা”
বাবা-“আমি যখন প্রথম এই গ্রামে এসেছিলাম, আমি এই সব জানতাম না এই গ্রামের বাপারে.”
মা-“কি?”
বাবা-“এই গ্রামের মেয়ের সংখা কম, প্রত্যেক পাচটি ছেলের বদলে একটি মেয়ে এখানে. এক সময়ে গ্রামের লোকদের কুসংস্কার আর মেয়ে শিশু হত্যার ফলে আজ এই অবস্থ্যা গ্রামের| এখানে আমার প্রথম আলাপ হয়েছিল সমীরের সাথে. তখন আমি জানতাম ওনাকেও ফাসিয়েছে এই গ্রামের লোকেরা|
এখানে আমার কর্ম সুত্রে বন্ধুত্য হয়ে রজত সেথ নামে এখানকার এক লোকাল কনট্রাক্টার| বিশ্বাস করো আমাদের সম্পর্ক শুধু প্রথমে কাজের মধ্যে সীমিত ছিল, কিন্তু কেন জানি না নিজের এক ঘেয়ে কর্ম জীবনএ বিতৃষ্ণায়ে লোকটির সাথে আমার বন্ধুত্য আরো বেড়ে গেলো|আজ ভাবিনি এর মাশুল এভাবে দিতে হবে.”
মা-“কি হয়েছে?..লোকটা কি তোমায়ে ঠকিয়েছে”
বাবা-“আমায়ে ফাসিয়েছে…এবং হয়তো আমি নিজে থেকে ফাঁদে পা দিয়েছিলাম. লোকটি বাজে সঙ্গে পড়েছিলাম আমি.সারাদিন একা থাকতাম আমি. তুমি বুঝছ তো কাকলি.”
মা-“তুমি এখানে কিছু করেছ…”
বাবা-“মিথ্যে কথা বলব না তোমায়ে কাকলি…আমাকে নিয়ে গেছিল লোকটি একটি জায়গায়ে কিন্তু পারিনি এগোতে …চলে এসছিলাম”
মা-“তারপর?”
বাবা-“তোমার ছবি দেখেছিল রজত..খুব প্রশংসা করেছিল..কিন্তু তখনও ভাবিনি এরকম ভাবে আকর্ষণ হবে…রজত আমাকে বাধ্য করেছে তোমাকে নিয়ে আসতে এখানে”
মা-“কেন?..তুমি কি বলছ সোনা আমি বুঝছিনা”
বাবা-“এই গ্রামের এক প্রথা আছে…কোনো বাইরের মহিলা যে এই গ্রামে থাকে …তার নিরাপত্তা দায়িত্য শুধু এই গ্রামের এক পরিবার নিতে পারবে.”
মা-“কি রকম নিরপত্তা?”
বাবা-“গ্রামের লোকের হাত থেকে নিরপত্তা…শিখা বৌদির নিরাপত্তা এই গ্রামের এক পরিবার করে”
মা-“এখানে পুলিশ এরা কি করে?”
বাবা-“সবাই এখানকার পরিবার মেয়েদের বাচাতে ব্যস্ত….শুধু পরিবারের একজন নারী বাকিদের নিরাপদ রাখতে পারে.”
মা-“এরকম অরাজকতা…কিন্তু কেন?”
বাবা-“তোমাকে আমি এর কারণ জানিয়েছি..প্রত্যেক পাঁচ পুরুষের বিনিময়ে এই গ্রামে শুধু একটি মেয়ে…”
মা চোখ কুচকে-“কিভাবে নিরাপদ রাখে?”
বাবা মাথা নিচু করে বলল-“শিখা বৌদির মেয়েটি সমীর দার নয়ে..”
মার চোখ গোল হয়ে গেল চেচিয়ে উঠলো-“কি বলছ তুমি?”
বাবা মাকে জড়িয়ে কাদতে লাগলো. এক অদভুত রকম লাগছিল, কোনো রকম ভাবে কাদতে কাদতে বাবা বলল-“আমায়ে ক্ষমা করো কাকলি”
মা পাথরের মত দাড়িয়ে ছিল-“রজত সেথ তোমায়ে কি করে বাধ্য করলো?”, মা আসতে আসতে জিজ্ঞেস করলো.
বাবা বলল-“আমাকে ফাসিয়েছে…”
মা-“কিভাবে?”
বাবা-“বাদ দাও..কাকলি..আমার ভালো লাগছে না”
মা-“না…আমাকে বোলো তুমি…কি হয়েছে?…আমি সব জানতে চাই”
বাবা-“একদিন রাতে কমলা আমার কাছে এসেছিল রাতে”
মা-“তারপর ?”
বাবা যেন আর বলতে পারছিল না -“আমার ভুল হয়ে গেছে কাকলি…কি যেন একটা হয়েছিল..আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি..কিন্তু ও যা অপবাদ দিয়েছিল..সব মিথ্যে…মনে আছে একদিন তোমাকে অনেকবার ফোন করেছিলাম..সেই রাতে..কি হয়েছিল আমি জানি না…”
মায়ের চোখ ছলছল করে উঠলো-“তুমি কমলার মত একটা মহিলার সাথে…আমাকে তুমি এই ভাবে ধোকা দিলে”
বাবা মাথায়ে হাত দিয়ে বসে পড়ল-“আমাকে ফাসিয়েছে ওরা….তোমার কি এই টুকু বিশ্বাস নেই..এই সব রজত সেথের পরিকল্পনা..ও এই সব করেছে শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য”
মা-“তুমি এই সব করে এখন বলছ এই সবের জন্য আমি দায়ী”
বাবা-“আমি দায়ী সোনা..আমার ওর মতলব বোঝা উচিত ছিল…নিজেকে বাচানোর জন্য সার্থপরের মত তোমাকে এখানে ডেকেছি…তুমি কি বুঝছো না তোমাকে কি বিপদে ফেলেছি আমি….সমীর দা বার বার বারণ করেছিল…কি করব বুঝতে পারছিলাম না…হয়তো শিখা বৌদি কথা শোনা আমার উচিত ছিল না”
মা এবার কথা ঘুরিয়ে বলল-“শিখা বৌদি আর সমীর দার সাথে এরকম হয়েছিল?”
বাবা-“হা….সমীরদার এর চেয়ে ভয়ানক কিছু ঘটেছিল. সমীরদাকে ধরে নিয়ে গেছিল গ্রামের কিছু গুন্ডা এবং শিখা বৌদি বাধ্য করেছিল এক পরিবারের কুল বধু হতে”
মা আতকে উঠলো-“কুল বধু ?”
বাবা-“হা..এটাই নিয়ম…শিখা বৌদির বিয়ে দেয়া হয়েছে. আমি যখন প্রথম এসছিলাম..কেউ জানায়নি এই গ্রামের এই নোংরাম নিয়ে”
মা-“তুমি বলছ রজত সেথ আমায় বিয়ে করবে?..এ কি করে সম্ভব”
বাবা-“এই গ্রামে সব সম্ভব !!!”
মা এবার চেচিয়ে উঠলো-“আমি এই সব পারবো না…আমাকে আর আমার ছেলেকে কলকাতায়ে নিয়ে চল….তুমিও চল আমাদের সাথে”
কমলা মাসি ঘরে আসতেই মা খুব ঘৃণার চোখে কমলার দিকে তাকাতে লাগলো.
কমলা মাসি-“রজত বাবু পাঠিয়েছে বৌদির জন্য.” বলে বাবার হাতে একটা প্যাকেট দিল.
মা আমাকে ডেকে পাশের ঘরে নিয়ে গেলো. মাকে দেখে যেনো মনে হছিলো ভেতরে জ্বলছে. নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, ঘর থেকে বেরিয়ে বলল-“তোকে আজ থেকে এখানে কাজ করতে হবে না…বেড়িয়ে যা এখান থেকে.”
কমলা মাসি হাসতে হাসতে বলল-“বেড়িয়ে গেলে হবে বৌদি..তুমি যখন রজত বাবুর কাছে থাকবে…দাদার খেয়াল আমাকে রাখতে হবে.”
মা-“তোমার মত নোংরা মেয়ের নরকে স্থান হবে না.”
বাবা -“তুমি নিজেকে সামলাও…এর উপর রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেই”
মা চেচিয়ে উঠলো-“ওকে ঘর থেকে বার করো…নাহলে আমি গায়ে আগুন দেব”
কমলা মাসি-“বৌদি ..আমি বেরিয়ে যাচ্ছি…তুমি কিছু করো না…আমরা গরিব মানুষ…রজত বাবু আমার পরিবারের সকল মরদ কে মেরে দেবে বলেছিল যদি আমি এই সব না করি…পারলে আমায়ে ক্ষমা করো.”
কমলা মাসি তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল. মা ঘরে ঢুকে বিছানায়ে শুয়ে কাদতে লাগলো.বাবা ঘরে ঢুকে বলল-“তুই অন্য ঘরে যা…মাকে একটু একা থাকতে দে”
বাবা ঘরে রইলো সেদিন. বিকালে গাড়ি করে আমাদের বাড়ির সামনে হাজির হলো কিছু লোক. একজন কে দেখলাম বেশ সেজে’ গুজে নামতে এবং বাকিরা সবাই ওই লোকটির চারপাশে দাড়িয়ে পড়ল.একজন আবার ছাতা চেপে ধরল সেই লোকটির মাথায়ে. দেখে মনে হছিল সব কোটা বুনো শুওরের মাঝে একটা সদ্য পরিস্কার করা শুয়োর কে রাখা হয়েছে.
লোকটার সঙ্গপঙ্গরা দরজা টোকা মারতেই বাবা দরজা খুলল.লোকটি-“নমস্কার ইঞ্জিনিয়ার বাবু…আজ এতদিন পর অনুমতি দিলেন..আপনার বাড়িতে আসতে”
বাবা-“আমার বাবা ছিল..বুঝতে পারছেন..আপনি আসুন বসুন …”
রজত সেথ-“সে আপনি না বললে বসতাম…আমার রানী কোই..”
বাবা-“ও পাশের ঘরে..এখনি আসছে”
আমি দরজা উকি মারছিলাম, সেটি লোকটি দেখে ফেলল-“আরে এটা আপনার ছেলে…কি সুন্দর দেখতে?”
লোকটি ঘরে ঢুকে একটা সোফায় বসলো-“এসো খোকা…এখানে”
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম.বাবা কি বলবে বুঝতে পারছিল না.আমি জিজ্ঞেস করলাম-“ইনি কে বাবা?”