01-01-2019, 04:33 PM
অতি দুঃখেও মানুষের চোখে ঘুম আসে, খিদে পায়। সন্তান হারা মাও এক্সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমের কোলে ঢোলে পরে।
চিন্তাক্লান্ত আমিও ঘুমের কোলে ঢোলে পরলাম। সময় আর অসময় আমার কাছে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। যার জীবনে কোন উদ্দেশ্য নেই তার জীবনের কোন মানেই নেই। উদ্দেশ্যহীন জীবন, জানোয়ারের জীবনের সমান। সদা ব্যাস্ত আমি এখন অকেজো তেলহীন মেশিনে পরিনত হয়েছি।
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আহঃ কি সুন্দর যে ঘুমটা হচ্ছিলো। রাতের অভাবটা যেন পূরণ করে দিলো। সুখি মনের লক্ষন ভালো গুম। আমি কিসে সুখি হোলাম?
মনে মনে চিন্তা করছি, চোরের কাছেও চুরি করার যুক্তি থাকে, খুনির কাছে খুনের। সবারই কৃতকর্মের কিছু না কিছু যুক্তি থাকে। আমার কি আছে? আমি যদি বিচারক হয়ে নিজের বিচার করি তাহলে সেই বিচারের ফল কি হবে?
সত্যি আমি কি এতটাই খারাপ যতটা তুলি ভাবছে। যৌনতার তারতম্য দিয়েই কি মানুষের দিয়েই কি মানুষকে বিচার করা যায়? আচ্ছা অনেক মহিলা আছেন, যারা স্বেচ্ছায় বেশ্যাবৃত্তি বেছে নেই। সেটা কিন্তু অভাবের তারনায় নয়। কিন্তু সে সংসারেও অবহেলা করেনা। স্বামি সন্তান সবারই যত্ন সে করছে। তাদের ভালোও বাসছে। কিন্তু তার সমস্যা এই যে তার কাছে প্রয়োজনের সব কিছু রয়েছে কিন্তু বিলাসিতার কিছু নেই। সেটাই উপার্জন করার জন্যে সে এই পথ বেছে নিয়েছে। তাহলে কি অন্য পথ নেই? তা না। কিন্তু এটা সহজ উপায়।
তাই শরীর শরীরের জায়গায়। মন মনের। শরীর উত্তাল হতেই পারে অন্য শরীরের আকর্ষনে, কিন্তু মন যদি ঠিক থাকে, ভালোবাসা যদি ভঙ্গুর না হয় তাহলে কোন তৃতীয় ব্যাক্তির ক্ষমতা নেই যে মনে জায়গা করে নেবে।
আমার মনে তো তুলি ছাড়া আর কেউ নেই। স্বপ্নেও আমি ভাবিনি যে তুলিই ছাড়া অন্য কারো কথা। বিজয়ার খুব কাছে এসেও আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি। হ্যাঁ সেই সময় তুলির আচরনে আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম, সেটা যদি না হোতো তাহলে বিজয়াও কোনদিনই আমার মনের নাগাল পেতো না।
আমি তো ভালোবেসেছি। মাথা উচু করে ভালোবেসেছি তুলিকে। ওদের সন্মন্ধে কত অপলাপ শুনেছি কিন্তু আমি আমার লক্ষ্য থেকে সরিনি। আমি সেদিন সঠিক বিচার করেছিলাম। তুলিকে অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম। আমার জায়গায় অন্য ছেলে হলে, যে কিনা মা আর মেয়ে দুজনেরই শরীর ভোগ করেছে সে কোনদিনই সেই বাড়ির মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গিনী করতো না। বরঞ্চ তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওদের ভোগ করে যেত। বেশ্যার মত দেখতো ওদের।
কিন্তু তুলি কোন শুনানি না শুনেই রায় দিয়ে দিলো। নাঃ এই মুহুর্তে আমার মনের যা অবস্থা, তাতে বুকের মধ্যে প্রচুর কষ্ট হলেও আমি আর তুলির কাছে ফিরে যাবো না। কারো সহানুভুতি নিয়ে আমি কোনদিন বাচিনি আজও আমি বাঁচবো না। আমি মরে যেতে চাই। হ্যাঁ আমি আত্মহত্যা করবো। কিন্তু আমি এটা চাই না যে কেউ আমার জন্যে সহানুভুতি প্রকাশ করুক।
তবু তুলি যদি শেষবারের জন্যেও আসে, আমি আমার কথাগুলো তুলিকে বলে যেতে চাই।
একটা কাগজ নিয়ে বসলাম।
তুলি,
ইচ্ছে করে প্রিয় লিখলাম না। কারন ওটা খুব আলঙ্কারিক। তুমি যে আমার সবথেকে প্রিয় সেটা আমার অতিবড় শত্রুও মেনে নেবে। আমার তোমাকে যেটা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে সেটা লিখলে তোমার মনে হতে পারে আমি তোমাকে ইমোশানাল করতে চাইছি, বা তোমার বিরক্তি হতে পারে। এমনিতেই তুমি আমাকে রাস্তার ঘেঁয়ো কুকুরের মতন ঘেন্না করো, আর নতুন করে আমি তোমার বিরক্তির কারন হতে চাই না।
আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি তুলি। আমার মত ছেলের উচিৎ ছিলো না কাউকে ভালোবাসা। সেটা আমার প্রথম ভুল।
জীবনে মেয়েদের দিকে মাথা তুলে তাকাইনি আমি। পাড়ার বন্ধুরা সেই সময় দুটো চারটে করে মেয়ের সাথে প্রেম করে নিয়েছে। প্রাক্তন প্রেমিকার সংখ্যা দিয়ে সেই সময় পুরুষত্ব যাহির করা হোতো। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে আমি ছিলাম আরো বিচিত্র এক মানুষ। বন্ধুরা অবাক হয়ে যেত। যে একবার বললে এলাকা কাপানো সুন্দরিরা একদিনের জন্যে হলেও একসাথে সময় কাটাতে চাইবে, সে কেন মেয়েদের ব্যাপারে এত উদাসিন। ওই বয়েসে সবার অভিভাবকের মতন খালি এটা করিস না, ওটা করিস না এসব বলে চলে। চারদিকে অনেক প্রলোভন, মোহ এড়িয়েও আমি একাই ভালো ছিলাম। নিজেকে একা আছি ভাবতেও ভালো লাগতো। মনে হোতো প্রেম করা মানে তো অনেক বড় দায়িত্ব, আমি কেন শুধু শুধু নিজেকে সেই নাগপাশে জড়াবো।
কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। পুজোর টাকা কম পরেছে, কোথা থেকে টাকা আসবে চিন্তা করছি। চিন্তাভাবনা ভাগ করে নিতাম আমার বন্ধু পাপ্পুর সাথে, সে আমাদের ক্লাবরুমে আস্তে দেরি করলো সেদিন, তার বদলে তুমি আমার জীবনে এলে। জানিনা কেন আমি তোমার সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ ফেলে দিতে পারিনি সেদিন। সেটা আমার ভুল হয়েছিলো। নাহলে আজও আমি একাই থাকতাম। কারন আমি জানি, যে সেদিন তোমার সাথে না গেলে, দ্বিতীয় কেউ আমার জীবনে আসতো না। কারন আমি নিজে কাউকে আগ বাড়িয়ে প্রপোজ করতাম না, আর কোন মেয়ের অন্তত এই সাহসটা হোতো না যে আমার মত মাথাগরম ছেলের সামনে এসে কোন অনুরোধ করে। অন্তত যারা আমাকে চিনতো আর জানতো তারা তো এ সাহস কোনোদিনই করতো না।
প্রথম দিন তোমার সাথে যাওয়ার সময়ও আমার মনে হয়নি যে আমি তোমার সাথে আবার হাটবো, একসাথে অনেক দূর পর্যন্ত। কিন্তু সেই ওপরওয়ালা কি যে কলকাঠি নাড়লো সেই জানে। আমার জীবনে তুমি এলে।
এরপর কত ঝড়ঝঞ্ঝাট আমাদের দুজনের জীবনে এলো তুমি আর আমিই তার সাক্ষী। সেই রনি, সেই স্বপন। ভুল বুঝোনা প্লিজ। এদের কথা বলে আমি তোমার ঘায়ে নুন ছরাচ্ছি না। আমি শুধু আমার জীবনের সুদনর স্মৃতিগুলোর যাবর কাটছি। এর পরে তো আর তোমার সাথে কোন কথা হবেনা তাই।
তুলি আমি জানিনা এই চিঠিটা আমাই না থাকলে তোমার কাছেই প্রথম পরবে কিনা। কেউ হাতে পেয়ে পরেও ফেলতে পারে। তাই বিস্তারিত কিছু লিখছি না।
তোমার মার ব্যাপারটাও আমার জীবনের একটা ভুল সেটা না করেও তোমাকে পাওয়া যেত। কিন্তু তাতে লোক জানাজানি হোতো, রক্তপাত হোতো, সন্মানহানি হোতো। সেই বয়েসে আমার কাছে সেতাই সেরা পথ ছিলো, কুপ্রভাব থেকে তোমাকে আর তোমার মাকে দূরে সরিয়ে রাখা। তার জন্যেই আমি দ্বিতীয়বার কারো কাছে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটা কিন্তু মনের ইচ্ছেয় না প্রয়োজনে।
তৃতিয়বার ভুলটা নিজের অজান্তে করেছিলাম। নিজেও বুঝতে পারিনি কেন এরকম হয়েছিলো। যার কথা তুমি জানো না। এখানে একটা কারনেই তার নাম লিখলাম না। হ্যাঁ তোমার কাছে যে লিস্ট আছে তার বাইরেও আমার অনেক অনেক এরকম ঘটনা ঘটেছে, সব তুমি জানো না।
আজকে তোমাকে লিখতে বসে আত্মবিশ্লেষন করছি কেন আমি এরকম হয়ে গেলাম। যে কিনা মাছের গন্ধে বমি করে দিতো সে কাটা বেছে পচা মাছ পর্যন্ত খেতে শুরু করলো।
একটাই কারন আমি খুজে পাই এর পিছনে। সেটা হচ্ছে আমার ভাবুক মন। আমি প্রচন্ড ভাবুক। ওপর থেকে বোঝা যায় না। একটু বড় হওয়ার পরেই আমি আমাদের এই বিশাল বাড়িতে একা একটা ঘরে নিজের মতন করে থাকতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে সেই স্বাধিনতার সুযোগে, ঘরে মদ আর গাজাঁর অবারিত দ্বার হতে থাকলো। সেই নেশায় আস্তে আস্তে আমার শুন্য মন, নারী শরীর, পুরুষ নারীর যৌনসঙ্গম নিয়ে রঙ্গিন চিন্তায় পুর্ন হতে থাকলো। ধীরে ধীরে যা আমাকে রাহুর মত গ্রাস করলো। যার ফল হোলো বিভিন্ন বৈচিত্রময় যৌনতা। ভিসিপির দৌলতে পশ্চিমি যৌনতা আর তার প্রভাব আমার মনে গভীর হতে শুরু করলো। সেটা আমার আরেক ভুল।
স্বাভাবিক যৌনতা আমাকে আকর্ষন করতো না। তুমি নিজেও সেটা জানো। তার কারন একমাত্র এটাই। যার সুদুরপ্রসারি ফলে আজ আমি আর তুমি অনেক দূরে সরে গেছি।
কিন্তু তুলি যে কোনদিনে তুমিই আমার কাছে সেরা নারী। তাও আমি বৈচিত্র খোজার জন্যে, ঘরের রান্না ফেলে বাইরে খেতে যেতাম। সেটাও আমার জীবনের অনেক ভুলগুলোর মধ্যে একটা।
কিন্তু তুলি আজও আমার শরীরের লোমকুপে সিহরন জাগে আমাদের প্রথম দিনের কথা মনে করে।
না না আমার জন্যে তুমি মন খারাপ কোরো না। লিখতে লিখতে এটা লিখে ফেললাম, তোমাকে ইমোশানাল করে দেওয়ার জন্যে। আচ্ছা বলোতো আমি চলে যাওয়ার পরে কি জানতে পারবো তুমি আমার চলে যাওয়াটাকে কিভাবে নিয়েছো? আমি কি দেখতে আসবো যে তুমি কাঁদছো, না তোমার মুখ গোমড়া, না তুমি হাঁপ ছেড়ে বাচলে যে আপদটা গেছে ভেবে। আমি তো দেখতে পাবো না। তাহলে বুঝতেই পারছো যে আমি নিজে ইমোশানাল হয়ে লিখছি কিন্তু তোমাকে আমি দুর্বল করতে চায় না। তুমি যা করেছো একদম ঠিক করেছো।
পিয়ালের জন্যে মন খারাপ লাগছে। কিন্তু উপায় তো নেই যে ওকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করবো। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ তুলি, এত সুন্দর একটা উপহার তুমি আমাকে দিয়েছো বলে। শেষ সময়ে যেন আমি মনে মনে ওর মুখটাই দেখতে পাই। আর দুএক বছরের মধ্যেই ও অনেক বড় হয়ে যাবে। তোমারও কষ্ট কমে যাবে, খাওয়াতে, ঘুম পারাতে। তুমি কিন্তু ওকে বেশী বকাঝকা কোরোনা, ও কিন্তু আমার মতনই ইমোশানাল হবে। দেখোতো একটু বকলেই কেমন গুম মেরে যায়।
আরেকটা অনুরোধ করবো তোমাকে। মেয়েদের জীবনে অনেক বাঁধাবিপত্তি আসে। সঙ্গে কেউ থাকলে সেগুলোর সাথে লড়া যায়। একা মেয়েদের ঝামেলা অনেক বেশী। সবাইই এদের সহজলভ্য ভাবে। তাই তোমাকে অনুরোধ করছি যে যদি তুমি কাউকে বিয়ে করতে পারো তো করে নিয়ো, তোমার জন্যে না হোক পিয়ালের জন্যে দরকার। আর যদি পারো তো এখানেই থেকো। আমার বাবা অনেক বড় মনের মানুষ উনি কিচ্ছুটি ভাববেন না। এসব কিছুই তো তোমার আর পিয়ালের। কেন এগুলো ছেড়ে কষ্ট করে থাকবে? যদি একান্তই না থাকতে চাও তাহলে এসব বিক্রি করে যা পাবে সেটা দিয়ে অনেকদিনই তোমার আর পিয়ালের ভালো মতন কেটে যাবে। বাবা নিশ্চয় বুঝবেন যে তুমি পিয়ালের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেবে।
সব শেষে বলি, মন থেকে আমি কোনদিনই তোমাকে অবজ্ঞা করিনি। যা করেছি সেটা অন্যায় নয় অপরাধ, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র শরীরের তারনায়, বৈচিত্রের তাড়নায়।
ব্যাস এইটুকু বলার ছিলো। জীবনে অনেক ভুলের মধ্যে শুধু এইকটায় মনে পরলো। তাই ভাবলাম কেউ তো জানুক।
বিদায়।
নাঃ আমি আর কাঁদবো না। কাগজটা বালিশের তলায় ভাজ করে রাখলাম। এত তাড়াহুরোর কিছু নেই। আগে কাজের দিদিদের সবাইকে মাইনে টাইনে দিয়ে দি। বাবাতো কোথায় গেছে সেটা জানিনা। কবে ফিরবে তাও জানা নেই। সব কাজ সেরে ফেলে তারপর ঠান্ডা মাথায় বিদায় নেবো। আমি এখন মুক্ত মানুষ। মনটাও হাল্কা লাগছে, নিজের শাস্তি নিজেই বেছে নিয়েছি।
নিচে সুমিতাদি আর সবিতাদি কিছু গুজুর গুজুর করছিলো। মনে হয় আমার আর তুলির ব্যাপারেই। আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।
সুমিতাদি আমার মায়ের বয়েশি আমার মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করতে পেরে জিজ্ঞেস করলো “ছোরদা, দিদি কবে আসবে জানেন?’
‘নাঃ জানিনা’
‘তাহলে তো আমার এইখানে থেকে কোন লাভ নেই, বাবু থাকলে তাও কাজ থাকে, সেও তো মার সাথে আছে, আমি আর থেকে কি করবো, অবশ্য আপনি বললে...।’
‘সেটা তোমার ইচ্ছে, তুমি থাকলে মাসের শেষে মাইনে ঠিক পেয়ে যাবে। আর তুলি তো চলে আসবেই এ বাড়িতে’
‘জানিনা দাদা ছোট মুখে হয়তো বড় কথা হবে, তবুও বলি, একটা মেয়ে এসে দিদিকে কিছু বুঝিয়েছিলো, তারপরই দিদি খুব কান্নাকাটি করে আর বাবুকে নিয়ে চলে যায়।’
‘কে এসেছিলো তুমি চেনো না?’
‘এর আগে আরেকবার দেখেছি। বাবু সদ্যসদ্য হাসপাতাল থেকে এসেছিলো তখন। এই তো পাশের পাড়াতেই নাকি থাকেন গো উনি।’
‘কে বিজয়া!!!’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। উনিই গো। ওই নামেই দিদি ওকে ডাকছিলো।’
এই মুহুর্তে যে কেউই আমার অসংলগ্ন আচরন বুঝতে পারবে। আমি সুমিতাদির কথা চলতে চলতেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলাম। বিজয়া এসেছিলো। তুলির চিঠিতে বিজয়ার কথা বলেছে। বিজয়া কি ভাবে এত কিছু জানতে পারলো। তুলি কি করে ঝুমরির কথা জানতে পারলো। এসব চিন্তা করতে করতে আমি ঘরে এসে ঢুকলাম।
চিন্তাক্লান্ত আমিও ঘুমের কোলে ঢোলে পরলাম। সময় আর অসময় আমার কাছে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। যার জীবনে কোন উদ্দেশ্য নেই তার জীবনের কোন মানেই নেই। উদ্দেশ্যহীন জীবন, জানোয়ারের জীবনের সমান। সদা ব্যাস্ত আমি এখন অকেজো তেলহীন মেশিনে পরিনত হয়েছি।
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আহঃ কি সুন্দর যে ঘুমটা হচ্ছিলো। রাতের অভাবটা যেন পূরণ করে দিলো। সুখি মনের লক্ষন ভালো গুম। আমি কিসে সুখি হোলাম?
মনে মনে চিন্তা করছি, চোরের কাছেও চুরি করার যুক্তি থাকে, খুনির কাছে খুনের। সবারই কৃতকর্মের কিছু না কিছু যুক্তি থাকে। আমার কি আছে? আমি যদি বিচারক হয়ে নিজের বিচার করি তাহলে সেই বিচারের ফল কি হবে?
সত্যি আমি কি এতটাই খারাপ যতটা তুলি ভাবছে। যৌনতার তারতম্য দিয়েই কি মানুষের দিয়েই কি মানুষকে বিচার করা যায়? আচ্ছা অনেক মহিলা আছেন, যারা স্বেচ্ছায় বেশ্যাবৃত্তি বেছে নেই। সেটা কিন্তু অভাবের তারনায় নয়। কিন্তু সে সংসারেও অবহেলা করেনা। স্বামি সন্তান সবারই যত্ন সে করছে। তাদের ভালোও বাসছে। কিন্তু তার সমস্যা এই যে তার কাছে প্রয়োজনের সব কিছু রয়েছে কিন্তু বিলাসিতার কিছু নেই। সেটাই উপার্জন করার জন্যে সে এই পথ বেছে নিয়েছে। তাহলে কি অন্য পথ নেই? তা না। কিন্তু এটা সহজ উপায়।
তাই শরীর শরীরের জায়গায়। মন মনের। শরীর উত্তাল হতেই পারে অন্য শরীরের আকর্ষনে, কিন্তু মন যদি ঠিক থাকে, ভালোবাসা যদি ভঙ্গুর না হয় তাহলে কোন তৃতীয় ব্যাক্তির ক্ষমতা নেই যে মনে জায়গা করে নেবে।
আমার মনে তো তুলি ছাড়া আর কেউ নেই। স্বপ্নেও আমি ভাবিনি যে তুলিই ছাড়া অন্য কারো কথা। বিজয়ার খুব কাছে এসেও আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি। হ্যাঁ সেই সময় তুলির আচরনে আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম, সেটা যদি না হোতো তাহলে বিজয়াও কোনদিনই আমার মনের নাগাল পেতো না।
আমি তো ভালোবেসেছি। মাথা উচু করে ভালোবেসেছি তুলিকে। ওদের সন্মন্ধে কত অপলাপ শুনেছি কিন্তু আমি আমার লক্ষ্য থেকে সরিনি। আমি সেদিন সঠিক বিচার করেছিলাম। তুলিকে অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম। আমার জায়গায় অন্য ছেলে হলে, যে কিনা মা আর মেয়ে দুজনেরই শরীর ভোগ করেছে সে কোনদিনই সেই বাড়ির মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গিনী করতো না। বরঞ্চ তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওদের ভোগ করে যেত। বেশ্যার মত দেখতো ওদের।
কিন্তু তুলি কোন শুনানি না শুনেই রায় দিয়ে দিলো। নাঃ এই মুহুর্তে আমার মনের যা অবস্থা, তাতে বুকের মধ্যে প্রচুর কষ্ট হলেও আমি আর তুলির কাছে ফিরে যাবো না। কারো সহানুভুতি নিয়ে আমি কোনদিন বাচিনি আজও আমি বাঁচবো না। আমি মরে যেতে চাই। হ্যাঁ আমি আত্মহত্যা করবো। কিন্তু আমি এটা চাই না যে কেউ আমার জন্যে সহানুভুতি প্রকাশ করুক।
তবু তুলি যদি শেষবারের জন্যেও আসে, আমি আমার কথাগুলো তুলিকে বলে যেতে চাই।
একটা কাগজ নিয়ে বসলাম।
তুলি,
ইচ্ছে করে প্রিয় লিখলাম না। কারন ওটা খুব আলঙ্কারিক। তুমি যে আমার সবথেকে প্রিয় সেটা আমার অতিবড় শত্রুও মেনে নেবে। আমার তোমাকে যেটা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে সেটা লিখলে তোমার মনে হতে পারে আমি তোমাকে ইমোশানাল করতে চাইছি, বা তোমার বিরক্তি হতে পারে। এমনিতেই তুমি আমাকে রাস্তার ঘেঁয়ো কুকুরের মতন ঘেন্না করো, আর নতুন করে আমি তোমার বিরক্তির কারন হতে চাই না।
আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি তুলি। আমার মত ছেলের উচিৎ ছিলো না কাউকে ভালোবাসা। সেটা আমার প্রথম ভুল।
জীবনে মেয়েদের দিকে মাথা তুলে তাকাইনি আমি। পাড়ার বন্ধুরা সেই সময় দুটো চারটে করে মেয়ের সাথে প্রেম করে নিয়েছে। প্রাক্তন প্রেমিকার সংখ্যা দিয়ে সেই সময় পুরুষত্ব যাহির করা হোতো। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে আমি ছিলাম আরো বিচিত্র এক মানুষ। বন্ধুরা অবাক হয়ে যেত। যে একবার বললে এলাকা কাপানো সুন্দরিরা একদিনের জন্যে হলেও একসাথে সময় কাটাতে চাইবে, সে কেন মেয়েদের ব্যাপারে এত উদাসিন। ওই বয়েসে সবার অভিভাবকের মতন খালি এটা করিস না, ওটা করিস না এসব বলে চলে। চারদিকে অনেক প্রলোভন, মোহ এড়িয়েও আমি একাই ভালো ছিলাম। নিজেকে একা আছি ভাবতেও ভালো লাগতো। মনে হোতো প্রেম করা মানে তো অনেক বড় দায়িত্ব, আমি কেন শুধু শুধু নিজেকে সেই নাগপাশে জড়াবো।
কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। পুজোর টাকা কম পরেছে, কোথা থেকে টাকা আসবে চিন্তা করছি। চিন্তাভাবনা ভাগ করে নিতাম আমার বন্ধু পাপ্পুর সাথে, সে আমাদের ক্লাবরুমে আস্তে দেরি করলো সেদিন, তার বদলে তুমি আমার জীবনে এলে। জানিনা কেন আমি তোমার সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ ফেলে দিতে পারিনি সেদিন। সেটা আমার ভুল হয়েছিলো। নাহলে আজও আমি একাই থাকতাম। কারন আমি জানি, যে সেদিন তোমার সাথে না গেলে, দ্বিতীয় কেউ আমার জীবনে আসতো না। কারন আমি নিজে কাউকে আগ বাড়িয়ে প্রপোজ করতাম না, আর কোন মেয়ের অন্তত এই সাহসটা হোতো না যে আমার মত মাথাগরম ছেলের সামনে এসে কোন অনুরোধ করে। অন্তত যারা আমাকে চিনতো আর জানতো তারা তো এ সাহস কোনোদিনই করতো না।
প্রথম দিন তোমার সাথে যাওয়ার সময়ও আমার মনে হয়নি যে আমি তোমার সাথে আবার হাটবো, একসাথে অনেক দূর পর্যন্ত। কিন্তু সেই ওপরওয়ালা কি যে কলকাঠি নাড়লো সেই জানে। আমার জীবনে তুমি এলে।
এরপর কত ঝড়ঝঞ্ঝাট আমাদের দুজনের জীবনে এলো তুমি আর আমিই তার সাক্ষী। সেই রনি, সেই স্বপন। ভুল বুঝোনা প্লিজ। এদের কথা বলে আমি তোমার ঘায়ে নুন ছরাচ্ছি না। আমি শুধু আমার জীবনের সুদনর স্মৃতিগুলোর যাবর কাটছি। এর পরে তো আর তোমার সাথে কোন কথা হবেনা তাই।
তুলি আমি জানিনা এই চিঠিটা আমাই না থাকলে তোমার কাছেই প্রথম পরবে কিনা। কেউ হাতে পেয়ে পরেও ফেলতে পারে। তাই বিস্তারিত কিছু লিখছি না।
তোমার মার ব্যাপারটাও আমার জীবনের একটা ভুল সেটা না করেও তোমাকে পাওয়া যেত। কিন্তু তাতে লোক জানাজানি হোতো, রক্তপাত হোতো, সন্মানহানি হোতো। সেই বয়েসে আমার কাছে সেতাই সেরা পথ ছিলো, কুপ্রভাব থেকে তোমাকে আর তোমার মাকে দূরে সরিয়ে রাখা। তার জন্যেই আমি দ্বিতীয়বার কারো কাছে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটা কিন্তু মনের ইচ্ছেয় না প্রয়োজনে।
তৃতিয়বার ভুলটা নিজের অজান্তে করেছিলাম। নিজেও বুঝতে পারিনি কেন এরকম হয়েছিলো। যার কথা তুমি জানো না। এখানে একটা কারনেই তার নাম লিখলাম না। হ্যাঁ তোমার কাছে যে লিস্ট আছে তার বাইরেও আমার অনেক অনেক এরকম ঘটনা ঘটেছে, সব তুমি জানো না।
আজকে তোমাকে লিখতে বসে আত্মবিশ্লেষন করছি কেন আমি এরকম হয়ে গেলাম। যে কিনা মাছের গন্ধে বমি করে দিতো সে কাটা বেছে পচা মাছ পর্যন্ত খেতে শুরু করলো।
একটাই কারন আমি খুজে পাই এর পিছনে। সেটা হচ্ছে আমার ভাবুক মন। আমি প্রচন্ড ভাবুক। ওপর থেকে বোঝা যায় না। একটু বড় হওয়ার পরেই আমি আমাদের এই বিশাল বাড়িতে একা একটা ঘরে নিজের মতন করে থাকতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে সেই স্বাধিনতার সুযোগে, ঘরে মদ আর গাজাঁর অবারিত দ্বার হতে থাকলো। সেই নেশায় আস্তে আস্তে আমার শুন্য মন, নারী শরীর, পুরুষ নারীর যৌনসঙ্গম নিয়ে রঙ্গিন চিন্তায় পুর্ন হতে থাকলো। ধীরে ধীরে যা আমাকে রাহুর মত গ্রাস করলো। যার ফল হোলো বিভিন্ন বৈচিত্রময় যৌনতা। ভিসিপির দৌলতে পশ্চিমি যৌনতা আর তার প্রভাব আমার মনে গভীর হতে শুরু করলো। সেটা আমার আরেক ভুল।
স্বাভাবিক যৌনতা আমাকে আকর্ষন করতো না। তুমি নিজেও সেটা জানো। তার কারন একমাত্র এটাই। যার সুদুরপ্রসারি ফলে আজ আমি আর তুমি অনেক দূরে সরে গেছি।
কিন্তু তুলি যে কোনদিনে তুমিই আমার কাছে সেরা নারী। তাও আমি বৈচিত্র খোজার জন্যে, ঘরের রান্না ফেলে বাইরে খেতে যেতাম। সেটাও আমার জীবনের অনেক ভুলগুলোর মধ্যে একটা।
কিন্তু তুলি আজও আমার শরীরের লোমকুপে সিহরন জাগে আমাদের প্রথম দিনের কথা মনে করে।
না না আমার জন্যে তুমি মন খারাপ কোরো না। লিখতে লিখতে এটা লিখে ফেললাম, তোমাকে ইমোশানাল করে দেওয়ার জন্যে। আচ্ছা বলোতো আমি চলে যাওয়ার পরে কি জানতে পারবো তুমি আমার চলে যাওয়াটাকে কিভাবে নিয়েছো? আমি কি দেখতে আসবো যে তুমি কাঁদছো, না তোমার মুখ গোমড়া, না তুমি হাঁপ ছেড়ে বাচলে যে আপদটা গেছে ভেবে। আমি তো দেখতে পাবো না। তাহলে বুঝতেই পারছো যে আমি নিজে ইমোশানাল হয়ে লিখছি কিন্তু তোমাকে আমি দুর্বল করতে চায় না। তুমি যা করেছো একদম ঠিক করেছো।
পিয়ালের জন্যে মন খারাপ লাগছে। কিন্তু উপায় তো নেই যে ওকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করবো। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ তুলি, এত সুন্দর একটা উপহার তুমি আমাকে দিয়েছো বলে। শেষ সময়ে যেন আমি মনে মনে ওর মুখটাই দেখতে পাই। আর দুএক বছরের মধ্যেই ও অনেক বড় হয়ে যাবে। তোমারও কষ্ট কমে যাবে, খাওয়াতে, ঘুম পারাতে। তুমি কিন্তু ওকে বেশী বকাঝকা কোরোনা, ও কিন্তু আমার মতনই ইমোশানাল হবে। দেখোতো একটু বকলেই কেমন গুম মেরে যায়।
আরেকটা অনুরোধ করবো তোমাকে। মেয়েদের জীবনে অনেক বাঁধাবিপত্তি আসে। সঙ্গে কেউ থাকলে সেগুলোর সাথে লড়া যায়। একা মেয়েদের ঝামেলা অনেক বেশী। সবাইই এদের সহজলভ্য ভাবে। তাই তোমাকে অনুরোধ করছি যে যদি তুমি কাউকে বিয়ে করতে পারো তো করে নিয়ো, তোমার জন্যে না হোক পিয়ালের জন্যে দরকার। আর যদি পারো তো এখানেই থেকো। আমার বাবা অনেক বড় মনের মানুষ উনি কিচ্ছুটি ভাববেন না। এসব কিছুই তো তোমার আর পিয়ালের। কেন এগুলো ছেড়ে কষ্ট করে থাকবে? যদি একান্তই না থাকতে চাও তাহলে এসব বিক্রি করে যা পাবে সেটা দিয়ে অনেকদিনই তোমার আর পিয়ালের ভালো মতন কেটে যাবে। বাবা নিশ্চয় বুঝবেন যে তুমি পিয়ালের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেবে।
সব শেষে বলি, মন থেকে আমি কোনদিনই তোমাকে অবজ্ঞা করিনি। যা করেছি সেটা অন্যায় নয় অপরাধ, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র শরীরের তারনায়, বৈচিত্রের তাড়নায়।
ব্যাস এইটুকু বলার ছিলো। জীবনে অনেক ভুলের মধ্যে শুধু এইকটায় মনে পরলো। তাই ভাবলাম কেউ তো জানুক।
বিদায়।
নাঃ আমি আর কাঁদবো না। কাগজটা বালিশের তলায় ভাজ করে রাখলাম। এত তাড়াহুরোর কিছু নেই। আগে কাজের দিদিদের সবাইকে মাইনে টাইনে দিয়ে দি। বাবাতো কোথায় গেছে সেটা জানিনা। কবে ফিরবে তাও জানা নেই। সব কাজ সেরে ফেলে তারপর ঠান্ডা মাথায় বিদায় নেবো। আমি এখন মুক্ত মানুষ। মনটাও হাল্কা লাগছে, নিজের শাস্তি নিজেই বেছে নিয়েছি।
নিচে সুমিতাদি আর সবিতাদি কিছু গুজুর গুজুর করছিলো। মনে হয় আমার আর তুলির ব্যাপারেই। আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।
সুমিতাদি আমার মায়ের বয়েশি আমার মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করতে পেরে জিজ্ঞেস করলো “ছোরদা, দিদি কবে আসবে জানেন?’
‘নাঃ জানিনা’
‘তাহলে তো আমার এইখানে থেকে কোন লাভ নেই, বাবু থাকলে তাও কাজ থাকে, সেও তো মার সাথে আছে, আমি আর থেকে কি করবো, অবশ্য আপনি বললে...।’
‘সেটা তোমার ইচ্ছে, তুমি থাকলে মাসের শেষে মাইনে ঠিক পেয়ে যাবে। আর তুলি তো চলে আসবেই এ বাড়িতে’
‘জানিনা দাদা ছোট মুখে হয়তো বড় কথা হবে, তবুও বলি, একটা মেয়ে এসে দিদিকে কিছু বুঝিয়েছিলো, তারপরই দিদি খুব কান্নাকাটি করে আর বাবুকে নিয়ে চলে যায়।’
‘কে এসেছিলো তুমি চেনো না?’
‘এর আগে আরেকবার দেখেছি। বাবু সদ্যসদ্য হাসপাতাল থেকে এসেছিলো তখন। এই তো পাশের পাড়াতেই নাকি থাকেন গো উনি।’
‘কে বিজয়া!!!’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। উনিই গো। ওই নামেই দিদি ওকে ডাকছিলো।’
এই মুহুর্তে যে কেউই আমার অসংলগ্ন আচরন বুঝতে পারবে। আমি সুমিতাদির কথা চলতে চলতেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলাম। বিজয়া এসেছিলো। তুলির চিঠিতে বিজয়ার কথা বলেছে। বিজয়া কি ভাবে এত কিছু জানতে পারলো। তুলি কি করে ঝুমরির কথা জানতে পারলো। এসব চিন্তা করতে করতে আমি ঘরে এসে ঢুকলাম।