01-01-2019, 04:33 PM
অভি,
প্রিয় লিখতে গিয়ে আটকালো। যে কোন মাধ্যম দিয়েই হোক, এটাই তোমার সাথে আমার শেষ কথা।
প্রথমেই কিছু প্রয়োজনীয় কথা সেরে নি। আমি জানি তোমার মনে আমাকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে সেগুলোর উত্তর দিচ্ছি।
১। রাজুদের ব্যানারে আমি কি করে এলাম?
হ্যাঁ সেদিন একটা ছোট পত্রিকার এক সাংবাদিক আমাকে আর রাজুকে ওই বাড়িতে একা ঢুকতে দেখেছিলো। মশালা খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আড়ি পেতে থাকে। রাজুর সিকিউরিটি তাকে ধরে ফেলে। বাধ্য হয়ে রাজুকে বলতে হয় যে আমি কনট্রাক্ট সাইন করতে এসেছিলাম। তাই আমাকে ওই বিজ্ঞাপনটা করতে হয়।
২। আমি সারারাত কোথায় ছিলাম?
তোমাকে আমি আমার এক বান্ধবির কথা বলেছিলাম, যে আমার সাথে বিভিন্ন প্রোমোশানের কাজ করতো। ও সেদিন সুইসাইড এটেম্পট করে। কারন ওর বরকে ও নিজের বিছানায় অন্য মেয়ের সাথে শুতে দেখে ফেলেছিলো।
তোমার ভয় নেই আমি সুইসাইড করবো না। তাহলে অনেক আগেই করতে পারতাম। এরকম মানসিক অবস্থা আমার জীবনে ই প্রথম যে তা নয়।
আমিও ভুল করেছি। ভুল আমি একবার করেছি সরি দুবার করেছি। দুটো ভুলই আমি শুধরে নেবো।
তাই আমি পিয়ালকে নিয়ে চললাম।
অভি বহু মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন অনেক ছেলে আছে। বহু ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখে এমনও অনেক মেয়ে আছে। কিন্তু সেগুলোকে যৌবনের ভুল হিসেবে পিছনে ফেলে আসে সবাই, তারপর মনের মানুষকে পেয়ে সেই কুৎসিত স্মৃতিগুলো সবাই ভুলে যায়। কিন্তু তুমি আর আমি অগ্নিসাক্ষি করে বিয়ে করার পরেও অনেক অনেক অনেক এরকম অন্যায় করেছো। অন্যায় নয়, তোমার কথা মত এগুলো অপরাধ। অন্যায়ের ক্ষমা হয়, কিন্তু অপরাধের তো শাস্তি পেতেই হয়। তুমিই তো বলো।
আমি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম তোমার এই নাড়ীশরীর নিয়ে প্রবল বিলাসিতা।
এতক্ষনে কম্পিউটার দেখে নিশ্চয় বুঝে গেছো যে তোমারই সৃষ্টি করা নকল হিতৈষী কেমন তোমার সুনাম করেছে। সব মিথ্যে বলছে তা নয় কিন্তু।
অভি শোন একটা কথা, আমি তোমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম বলে তুমি ভেবে নিয়েছিলে যে আমি বোকাসোকা গোবেচারা, শুচিবাই গ্রস্ত এক মধ্যবিত্ত মানসিকতার গৃহবধু। আর সেই সুযোগে তুমি যা খুশি করে বেরিয়েছো। এমনও দিন গেছে তুমি বাড়ির থেকে আমার হাতে রান্না খেয়ে বেরিয়ে সোজা অন্য মেয়ের কাছে গেছিলে। সেদিন বুঝিনি কিন্তু আজ বুঝতে পারি। তুমি ভেবো না যে এই কাল্পনিক চরিত্রদের (অসিম আর অর্পিতা) কথা শুনেই আমি সব সিদ্ধান্ত নিলাম। ওরা যে কতটা সত্যি বলছে সেটা আমি বুঝে গেছি। আমি ওদের সাথে কথা বলেছি শুধু মাত্র তুমি ওই অর্পিতা নামক মহিলার সাথে কি কি করতে চেয়েছো সেটা দেখার জন্যে। সে বাস্তবে সত্যি আছে কিনা সেটা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে।
সুতরাং তুমি বুঝতেই পারছো, আমাকে তুমি যতটা বোকাহাবা ভাবতে আমি ততটা না। কাউকে অন্ধের মতন বিশ্বাস করা মানেই সে সেই সুযোগ নেবে জানলে আমাকে এতটা বোকা তুমি দেখতে না। ভবিষ্যতেও কেউ দেখবে না। একটা কথা জানবে অভি, যে মেয়ে মাতৃরুপেন সংস্থিথাঃ সেই কিন্তু অসুর দমন করে। মেয়েদের এত তুচ্ছ্য ভেবোনা। ওরা ভালোবাসতেও জানে, ঘেন্না করতেও জানে।
অভি তুমি এতো নোংরা আমি ভাবতে পারিনি। দুঃখ হোতো না যদি আমি কোনোরকম ইঙ্গিত পেতাম। একটা মানুষ ওপরে এইরকম পালিশ করা আর ভিতরে কি করে এত বিকৃত হয়। এরকম সিনেমা বা নাটকে দেখা যায়। পিয়ালের জন্মানোর দিন আমার বিছানায় তুমি কাজের লোক নিয়ে ফুর্তি করেছো। কাকে বাদ দিয়েছো তুমি? বিজয়াদির মাকেও তো ছারোনি। দিল্লিতে কাজ করার নামে গিয়ে সেখানে ফুর্তি করো। প্রচুর পয়সা দিয়ে তুমি বাচ্চা মেয়েদের সাথেও সেক্স করতে ওদের ভাড়া করতে বিভিন্ন যায়গা থেকে।
কিন্তু অভি পুরুষ মানুষের বির্য্যের শুকনো দাগ আমার মায়ের কাপড়ে আর সেই উৎস যে আমার বাবা না সেটা বোঝার মত বয়েস আমার হয়েছিলো তখন, আর যে জর্দার গন্ধ আমি তোমার পুরুষাঙ্গে আমি কখনো পেয়েছি, সেটাও আমার খুব চেনা। কিন্তু নিজের মনের ভুল ভেবেই সেই চিন্তাটাকে আপাতত সরিয়ে দিচ্ছি। কারন ওই যে থুতুটা তো নিচের দিকেই নেমে আসছে। আর যে চলে গেছে তাকে নিয়ে কাটা ছেড়া করেই বা কি পাবো? সেতো এসে আর আমার হয়ে সাক্ষী দেবে না। কিন্তু সামান্য যত্নশীল হলেই এটা হয়তো এড়ানো যেত। এই পৃথিবীতে একটা মেয়েকে এটা ভাবতে হোতো না যে তার একান্ত আপন পুরুষটি তার জন্মদাত্রীরও একান্ত আপন। ছিঃ আমি ভাবতেও পারিনা। তবুও আমি তোমাকে সে দোষে দোষী বলছি না, সে বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই।
অবাক হয়ে যাচ্ছো তাই না? আমি কি করে এত জানলাম সেই ভেবে?
যার কেউ নেই তার ভগবান আছে। ডুবন্ত মানুষের কাছে খড়ের আঁটিও অনেক। আমিও সেরকম কাউকে পেয়েছি যে আমাকে তোমার জীবনের অন্ধকার দিকটা আমার সামনে তুলে ধরেছে। হ্যাঁ তোমারই খুব ভরসার মানুষ ছিলো সে। আজকের দিনে সে তোমার থেকেও বেশী মনুষ্যত্বের ওপর ভরসা রাখে। তোমার পুরুষত্বের এই ব্যাপক প্রসার দেখে সেও বীতশ্রদ্ধ। তার হাত ধরেই তোমার কম্পিউটার থেকে আমি অনেক কিছুই পেয়েছি যেগুলো তোমাকে দোষী প্রমান করার পক্ষে যথেষ্ট।
আমি তোমার মনে কোন দন্ধ রেখে যাবো না। যার কথা বলছি সে হোলো বিজয়াদি। সেও তোমাকে একটা সময় ভরসা করেছিলো। আর সেই তোমাকে তার বাড়িওয়ালির সাথে যৌনসুখ নিতে দেখে।
একটা মেয়ের কতটা কষ্ট বলো তো যখন সে জানতে পারে যাকে সে ভরসা করেছিলো সে তার নিজের মায়ের শরীর ভোগ করেছে।
তুমি মেয়ে হলে বুঝতে এটা। তুমি মেয়ে না তাই বুঝবে না। একটা মেয়ে তার মায়ের সাথে তার স্বপ্নের পুরুষকে ভাগ করতে পারেনা।
তোমাকে আমি কি বলবো অভি। নিজের ওপর নিজের ঘেন্না হচ্ছে।
আমার শরীর, মন প্রান আত্মা সব ঢেলে দিয়েছিলাম তোমাকে। কোথাও কোন কৃপনতা করিনি। তোমার ভালো লাগা বুঝে আমি নিজেকে মেলে ধরতাম তোমার কাছে। কিন্তু আমি জানিনা আমার খামতি কোথায় ছিলো যে তোমার আমাকে ছাড়া অন্য মেয়েমানুষদের ভালো লাগতো।
হয়তো সত্যিই আমাকে বেশ্যা করতে চেয়েছিলে নিজের বিকৃত কামনাগুলো চরিতার্থ করতে। জানিনা তুমি কি পেতে আমাকে অন্য পুরুষের সাথে শুতে দেখে, আমি কিন্তু এর মধ্যে শুভ চিন্তা খুজে পাইনি। হ্যাঁ তোমাকে একা দোষ দেবোনা। কখনো হয়তো আমিও তোমার কথায় সায় দিয়েছি কিন্তু সেটা ক্ষনিকের দুর্বলতার দরুন। সুস্থ মস্তিষ্কে কখনোই আমি সেটা করতে পারতাম না। করলেও সেটা তোমাকে তুষ্ট করার জন্যেই করতাম।
আজ এগুলো আমার কাছে অতীত। আমি সব ভুলে যেতে চাই। তোমার সাথে কাটানো সাত বছর আমি মুছে ফেলতে চাই আমার জীবন থেকে।
আমাকে আর পিয়ালকে খোঁজার চেষ্টা কোরো না দয়া করে। আমরা আমাদের মতন ভালোই থাকবো। এর থেকে খারাপ নিশ্চয় আমাদের আর হতে পারেনা। এসির হাওয়ার থেকেও কিন্তু বিশ্বাসের আবহ অনেক আরামদায়ক। ছলনার বিরিয়ানির থেকেও সততার পান্তা ভাত ভালো।
ভয় নেই তোমার। পিয়াল যাতে তোমাকে মিস না করে সেটা আমি দেখবো। আমরা ভালো থাকবো তুমি চিন্তা কোরোনা। আমাদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেও তোমার লাভ হবেনা।
বাই
তুলি।
চিঠিটা পরে আমার চিন্তা শক্তি গুলিয়ে গেলো। আজকে আমি সর্বহারা।
এই পৃথিবীতে কেউই আমাকে ভরসা করে না।
বিজয়ার মত বন্ধুও আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, আমারই কৃতকর্ম ওর কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়ায়। আমি কেন এরকম হয়ে গেলাম। আমার কৈশরে, বয়সন্ধিতে তো আমি মেয়েদের দিকে ঘুরেও তাকাতাম না। কি আমাকে এরকম তৈরি করলো।
আজ আমার মত দুর্ভাগা আর কেউ হতে পারে না। প্রাসাদে থেকেও নিজেকে কাঙ্গাল মনে হচ্ছে।
বদ্ধ আলমারি থেকে তুলির একটা ওরনা উঁকি মারছে। বন্ধ করার সময় আটকে গেছে। আমি পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলাম। আমিই তো পছন্দ করে দিতাম ওকে। নিজে কোথায় পছন্দ করতে পারতো। আজকে সব ফেলে নিজের পছন্দ মতন জীবন বেছে নিতে চলেছে।
কি করবো আমি। চুপ করে বসে থাকবো, নাকি তুলিকে খুজে বের করবো?
বিছানার গায়ে হাত বুলাচ্ছি। এদিকে তুলি শুতো, ওদিকে পিয়াল। দুহাত দিয়ে দুজনকেই জড়িয়ে ধরতাম মাঝে মাঝে। কত স্বপ্ন ভির করে আসতো আমাদের চোখে।
সেই ভাবেই উপুর হয়ে শুয়ে পরলাম ঠিক যেভাবে দুটোকে জড়িয়ে ধরতাম। আমি আর পুরুষ সিংহ না। আমার চোখের জলে বিছানা ভিজে গেছে। কান্নার আওয়াজ হয়তো সজাগ প্রতিবেশিও শুনতে পাবে। কিন্তু আমি নিজেকে আটকাতে পারছিনা। তুলি আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবেসেছি। সমাজের সাথে লড়ে তোমাকে ছিনিয়ে নিয়েছি। কোন দয়া করিনি। নিজের পছন্দকে স্বিকৃতি দিয়েছি। আমার ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নেই। আজও নেই। যা করেছি সেগুলো শুধু শরীরের খেলা। কিন্তু কোনোদিনই তোমাকে অবজ্ঞা করিনি আমি। তুমি চলে যাও, আমি আটকাবো না। কিন্তু আমাকে একবার সু্যোগ দাও স্বিকারোক্তি। শেষ বারের মতন আমি একবার তোমাকে আর পিয়ালকে ছুয়ে দেখতে চাই। সেটাই অবলম্বন করে আমি বেঁচে থাকবো। মনে করবো, কখনো কোনদিন আমার নিজের বলে কেউ ছিলো। প্লিজ তুলি একবার একবার প্লিজ...।
সারাদিন আমি এ ঘর থেকে ও ঘর ঘুরলাম তুলির গায়ের গন্ধ, পিয়ালের খিলখিল হাসি যেন অন্য ঘর থেকে ভেসে আসছে। সোফায় বসলেই মনে হচ্ছে বলে উঠবে “এই পা তুলে বসো, কাজের লোক ঝাড় দেবে...”
ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা একটা এলবাম। তুলি আর আমি মিলে বানাচ্ছিলাম। পিয়ালের জন্মদিনের উদ্দেশ্যে।
আমাদের পরিবারের নিয়ম মেনে এই প্রথম ওর জন্মদিন করতাম। জাঁকজমক করে।
তুলির আইডিয়া ছিলো সেই আমাদের দেখা হওয়ার দিন থেকে শুরু করে, আমাদের থেকে পিয়ালের সৃষ্টি আর তার সময়ের সাথে এই বয়েস পর্যন্ত আসা সব এই এলবামে থাকবে।
কোলে নিয়ে বসলাম এলবামটা। তুলির সেই শাড়ি পড়া হার জিরজিরে শরীর। কত স্মৃতি যে ভেসে আসছে। চোখ আবার ঝাপসা হয়ে এলো। আমার একটা পাঞ্জাবি পড়া ছবি পুজোর সময়কার। পুজো প্যান্ডেলে বসে আছি আমি তুলি আর বন্ধুরা। জানিনা কে তুলেছিলো, কিন্তু তুলি ঠিক জোগার করেছে। দুজনের বিয়ের ফটো, পিয়ালের একদম জন্মের সময়কার একটা ফটো। তার তলায় লেখা “the best gift we made to each other”
হায়রে ভগবান। মানুষের কেন মন থাকে? পরের জন্মে যেন আর মানুষ হয়ে না জন্মাই। মন থাকলে যে এত কষ্ট হয় জানতাম না।
আচ্ছা আমি যদি এখন মরে যাই তুলি কি আসবে আমাকে দেখতে, নাকি ঘেন্নায় দূর থেকে নাক কুচকাবে, রাস্তায় পরে থাকা কুকুরের পঁচা লাশ দেখে মানুষ যেমন করে।
কি আর বাকি আছে জীবনে। জীবন যেমন আমাকে দিয়েছে, সেরকম নিয়েও নিয়েছে। এবার আমার সব সারা হয়ে গেছে, আমি যেতে পারি। কিন্তু যদি ওরা কোন কষ্টে থাকে।
আচ্ছা দু চারদিন পরে তো গন্ধ বেরোবেই শরীর থেকে, কিংবা কাজের লোকগুলো টের পাবে, একটা চিঠি লিখে যদি তুলি আর পিয়ালের কাছে ক্ষমা চেয়ে নি আর ওদের অনুরোধ করি যে এখানে এসে থাকতে। আমি তো আর থাকছি না। ওদের নিশ্চয় আর আপত্তি থাকবেনা। মৃত মানুষের অনুরোধ কি ফেলে দেবে? পিয়াল নিশ্চয় ভাববে যে বাবা ঘুমিয়ে আছে। তুলি নিশ্চয় ওকে সেটাই বোঝাবে। নাহলে ও আর কি বোঝে জন্মমৃত্যুর। আমার বাবা খুব কষ্ট পাবে। বাবা গো মন খারাপ কোরো না আমি মার কাছে যাবো। মা আমাকে ঠিক ক্ষমা করে দেবে। ছোটবেলা যেমন করে আমার সব দুষ্টুমি মেনে নিতো। আমি ভালো থাকবো বাবা। তুমি শুধু শুধু কষ্ট পেয়োনা। তুমি তো আমাকে বাঘের বাচ্চা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলে। কিন্তু তোমার বাঘ তো ঘাস খায়। সে কি করে থাকবে এই পৃথিবীতে।
তুলি তুমি ঠিক করেছো। আত্মহনন না করে। কেন করবে? আমার মত ঘৃন্ন মানুষের জন্যে? এর থেকে ভালো আমি চলে যাই। আমার মত মানুষের জন্যে এই পৃথিবী না।
প্রিয় লিখতে গিয়ে আটকালো। যে কোন মাধ্যম দিয়েই হোক, এটাই তোমার সাথে আমার শেষ কথা।
প্রথমেই কিছু প্রয়োজনীয় কথা সেরে নি। আমি জানি তোমার মনে আমাকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে সেগুলোর উত্তর দিচ্ছি।
১। রাজুদের ব্যানারে আমি কি করে এলাম?
হ্যাঁ সেদিন একটা ছোট পত্রিকার এক সাংবাদিক আমাকে আর রাজুকে ওই বাড়িতে একা ঢুকতে দেখেছিলো। মশালা খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আড়ি পেতে থাকে। রাজুর সিকিউরিটি তাকে ধরে ফেলে। বাধ্য হয়ে রাজুকে বলতে হয় যে আমি কনট্রাক্ট সাইন করতে এসেছিলাম। তাই আমাকে ওই বিজ্ঞাপনটা করতে হয়।
২। আমি সারারাত কোথায় ছিলাম?
তোমাকে আমি আমার এক বান্ধবির কথা বলেছিলাম, যে আমার সাথে বিভিন্ন প্রোমোশানের কাজ করতো। ও সেদিন সুইসাইড এটেম্পট করে। কারন ওর বরকে ও নিজের বিছানায় অন্য মেয়ের সাথে শুতে দেখে ফেলেছিলো।
তোমার ভয় নেই আমি সুইসাইড করবো না। তাহলে অনেক আগেই করতে পারতাম। এরকম মানসিক অবস্থা আমার জীবনে ই প্রথম যে তা নয়।
আমিও ভুল করেছি। ভুল আমি একবার করেছি সরি দুবার করেছি। দুটো ভুলই আমি শুধরে নেবো।
তাই আমি পিয়ালকে নিয়ে চললাম।
অভি বহু মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন অনেক ছেলে আছে। বহু ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখে এমনও অনেক মেয়ে আছে। কিন্তু সেগুলোকে যৌবনের ভুল হিসেবে পিছনে ফেলে আসে সবাই, তারপর মনের মানুষকে পেয়ে সেই কুৎসিত স্মৃতিগুলো সবাই ভুলে যায়। কিন্তু তুমি আর আমি অগ্নিসাক্ষি করে বিয়ে করার পরেও অনেক অনেক অনেক এরকম অন্যায় করেছো। অন্যায় নয়, তোমার কথা মত এগুলো অপরাধ। অন্যায়ের ক্ষমা হয়, কিন্তু অপরাধের তো শাস্তি পেতেই হয়। তুমিই তো বলো।
আমি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম তোমার এই নাড়ীশরীর নিয়ে প্রবল বিলাসিতা।
এতক্ষনে কম্পিউটার দেখে নিশ্চয় বুঝে গেছো যে তোমারই সৃষ্টি করা নকল হিতৈষী কেমন তোমার সুনাম করেছে। সব মিথ্যে বলছে তা নয় কিন্তু।
অভি শোন একটা কথা, আমি তোমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম বলে তুমি ভেবে নিয়েছিলে যে আমি বোকাসোকা গোবেচারা, শুচিবাই গ্রস্ত এক মধ্যবিত্ত মানসিকতার গৃহবধু। আর সেই সুযোগে তুমি যা খুশি করে বেরিয়েছো। এমনও দিন গেছে তুমি বাড়ির থেকে আমার হাতে রান্না খেয়ে বেরিয়ে সোজা অন্য মেয়ের কাছে গেছিলে। সেদিন বুঝিনি কিন্তু আজ বুঝতে পারি। তুমি ভেবো না যে এই কাল্পনিক চরিত্রদের (অসিম আর অর্পিতা) কথা শুনেই আমি সব সিদ্ধান্ত নিলাম। ওরা যে কতটা সত্যি বলছে সেটা আমি বুঝে গেছি। আমি ওদের সাথে কথা বলেছি শুধু মাত্র তুমি ওই অর্পিতা নামক মহিলার সাথে কি কি করতে চেয়েছো সেটা দেখার জন্যে। সে বাস্তবে সত্যি আছে কিনা সেটা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে।
সুতরাং তুমি বুঝতেই পারছো, আমাকে তুমি যতটা বোকাহাবা ভাবতে আমি ততটা না। কাউকে অন্ধের মতন বিশ্বাস করা মানেই সে সেই সুযোগ নেবে জানলে আমাকে এতটা বোকা তুমি দেখতে না। ভবিষ্যতেও কেউ দেখবে না। একটা কথা জানবে অভি, যে মেয়ে মাতৃরুপেন সংস্থিথাঃ সেই কিন্তু অসুর দমন করে। মেয়েদের এত তুচ্ছ্য ভেবোনা। ওরা ভালোবাসতেও জানে, ঘেন্না করতেও জানে।
অভি তুমি এতো নোংরা আমি ভাবতে পারিনি। দুঃখ হোতো না যদি আমি কোনোরকম ইঙ্গিত পেতাম। একটা মানুষ ওপরে এইরকম পালিশ করা আর ভিতরে কি করে এত বিকৃত হয়। এরকম সিনেমা বা নাটকে দেখা যায়। পিয়ালের জন্মানোর দিন আমার বিছানায় তুমি কাজের লোক নিয়ে ফুর্তি করেছো। কাকে বাদ দিয়েছো তুমি? বিজয়াদির মাকেও তো ছারোনি। দিল্লিতে কাজ করার নামে গিয়ে সেখানে ফুর্তি করো। প্রচুর পয়সা দিয়ে তুমি বাচ্চা মেয়েদের সাথেও সেক্স করতে ওদের ভাড়া করতে বিভিন্ন যায়গা থেকে।
কিন্তু অভি পুরুষ মানুষের বির্য্যের শুকনো দাগ আমার মায়ের কাপড়ে আর সেই উৎস যে আমার বাবা না সেটা বোঝার মত বয়েস আমার হয়েছিলো তখন, আর যে জর্দার গন্ধ আমি তোমার পুরুষাঙ্গে আমি কখনো পেয়েছি, সেটাও আমার খুব চেনা। কিন্তু নিজের মনের ভুল ভেবেই সেই চিন্তাটাকে আপাতত সরিয়ে দিচ্ছি। কারন ওই যে থুতুটা তো নিচের দিকেই নেমে আসছে। আর যে চলে গেছে তাকে নিয়ে কাটা ছেড়া করেই বা কি পাবো? সেতো এসে আর আমার হয়ে সাক্ষী দেবে না। কিন্তু সামান্য যত্নশীল হলেই এটা হয়তো এড়ানো যেত। এই পৃথিবীতে একটা মেয়েকে এটা ভাবতে হোতো না যে তার একান্ত আপন পুরুষটি তার জন্মদাত্রীরও একান্ত আপন। ছিঃ আমি ভাবতেও পারিনা। তবুও আমি তোমাকে সে দোষে দোষী বলছি না, সে বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই।
অবাক হয়ে যাচ্ছো তাই না? আমি কি করে এত জানলাম সেই ভেবে?
যার কেউ নেই তার ভগবান আছে। ডুবন্ত মানুষের কাছে খড়ের আঁটিও অনেক। আমিও সেরকম কাউকে পেয়েছি যে আমাকে তোমার জীবনের অন্ধকার দিকটা আমার সামনে তুলে ধরেছে। হ্যাঁ তোমারই খুব ভরসার মানুষ ছিলো সে। আজকের দিনে সে তোমার থেকেও বেশী মনুষ্যত্বের ওপর ভরসা রাখে। তোমার পুরুষত্বের এই ব্যাপক প্রসার দেখে সেও বীতশ্রদ্ধ। তার হাত ধরেই তোমার কম্পিউটার থেকে আমি অনেক কিছুই পেয়েছি যেগুলো তোমাকে দোষী প্রমান করার পক্ষে যথেষ্ট।
আমি তোমার মনে কোন দন্ধ রেখে যাবো না। যার কথা বলছি সে হোলো বিজয়াদি। সেও তোমাকে একটা সময় ভরসা করেছিলো। আর সেই তোমাকে তার বাড়িওয়ালির সাথে যৌনসুখ নিতে দেখে।
একটা মেয়ের কতটা কষ্ট বলো তো যখন সে জানতে পারে যাকে সে ভরসা করেছিলো সে তার নিজের মায়ের শরীর ভোগ করেছে।
তুমি মেয়ে হলে বুঝতে এটা। তুমি মেয়ে না তাই বুঝবে না। একটা মেয়ে তার মায়ের সাথে তার স্বপ্নের পুরুষকে ভাগ করতে পারেনা।
তোমাকে আমি কি বলবো অভি। নিজের ওপর নিজের ঘেন্না হচ্ছে।
আমার শরীর, মন প্রান আত্মা সব ঢেলে দিয়েছিলাম তোমাকে। কোথাও কোন কৃপনতা করিনি। তোমার ভালো লাগা বুঝে আমি নিজেকে মেলে ধরতাম তোমার কাছে। কিন্তু আমি জানিনা আমার খামতি কোথায় ছিলো যে তোমার আমাকে ছাড়া অন্য মেয়েমানুষদের ভালো লাগতো।
হয়তো সত্যিই আমাকে বেশ্যা করতে চেয়েছিলে নিজের বিকৃত কামনাগুলো চরিতার্থ করতে। জানিনা তুমি কি পেতে আমাকে অন্য পুরুষের সাথে শুতে দেখে, আমি কিন্তু এর মধ্যে শুভ চিন্তা খুজে পাইনি। হ্যাঁ তোমাকে একা দোষ দেবোনা। কখনো হয়তো আমিও তোমার কথায় সায় দিয়েছি কিন্তু সেটা ক্ষনিকের দুর্বলতার দরুন। সুস্থ মস্তিষ্কে কখনোই আমি সেটা করতে পারতাম না। করলেও সেটা তোমাকে তুষ্ট করার জন্যেই করতাম।
আজ এগুলো আমার কাছে অতীত। আমি সব ভুলে যেতে চাই। তোমার সাথে কাটানো সাত বছর আমি মুছে ফেলতে চাই আমার জীবন থেকে।
আমাকে আর পিয়ালকে খোঁজার চেষ্টা কোরো না দয়া করে। আমরা আমাদের মতন ভালোই থাকবো। এর থেকে খারাপ নিশ্চয় আমাদের আর হতে পারেনা। এসির হাওয়ার থেকেও কিন্তু বিশ্বাসের আবহ অনেক আরামদায়ক। ছলনার বিরিয়ানির থেকেও সততার পান্তা ভাত ভালো।
ভয় নেই তোমার। পিয়াল যাতে তোমাকে মিস না করে সেটা আমি দেখবো। আমরা ভালো থাকবো তুমি চিন্তা কোরোনা। আমাদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেও তোমার লাভ হবেনা।
বাই
তুলি।
চিঠিটা পরে আমার চিন্তা শক্তি গুলিয়ে গেলো। আজকে আমি সর্বহারা।
এই পৃথিবীতে কেউই আমাকে ভরসা করে না।
বিজয়ার মত বন্ধুও আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, আমারই কৃতকর্ম ওর কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়ায়। আমি কেন এরকম হয়ে গেলাম। আমার কৈশরে, বয়সন্ধিতে তো আমি মেয়েদের দিকে ঘুরেও তাকাতাম না। কি আমাকে এরকম তৈরি করলো।
আজ আমার মত দুর্ভাগা আর কেউ হতে পারে না। প্রাসাদে থেকেও নিজেকে কাঙ্গাল মনে হচ্ছে।
বদ্ধ আলমারি থেকে তুলির একটা ওরনা উঁকি মারছে। বন্ধ করার সময় আটকে গেছে। আমি পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলাম। আমিই তো পছন্দ করে দিতাম ওকে। নিজে কোথায় পছন্দ করতে পারতো। আজকে সব ফেলে নিজের পছন্দ মতন জীবন বেছে নিতে চলেছে।
কি করবো আমি। চুপ করে বসে থাকবো, নাকি তুলিকে খুজে বের করবো?
বিছানার গায়ে হাত বুলাচ্ছি। এদিকে তুলি শুতো, ওদিকে পিয়াল। দুহাত দিয়ে দুজনকেই জড়িয়ে ধরতাম মাঝে মাঝে। কত স্বপ্ন ভির করে আসতো আমাদের চোখে।
সেই ভাবেই উপুর হয়ে শুয়ে পরলাম ঠিক যেভাবে দুটোকে জড়িয়ে ধরতাম। আমি আর পুরুষ সিংহ না। আমার চোখের জলে বিছানা ভিজে গেছে। কান্নার আওয়াজ হয়তো সজাগ প্রতিবেশিও শুনতে পাবে। কিন্তু আমি নিজেকে আটকাতে পারছিনা। তুলি আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবেসেছি। সমাজের সাথে লড়ে তোমাকে ছিনিয়ে নিয়েছি। কোন দয়া করিনি। নিজের পছন্দকে স্বিকৃতি দিয়েছি। আমার ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নেই। আজও নেই। যা করেছি সেগুলো শুধু শরীরের খেলা। কিন্তু কোনোদিনই তোমাকে অবজ্ঞা করিনি আমি। তুমি চলে যাও, আমি আটকাবো না। কিন্তু আমাকে একবার সু্যোগ দাও স্বিকারোক্তি। শেষ বারের মতন আমি একবার তোমাকে আর পিয়ালকে ছুয়ে দেখতে চাই। সেটাই অবলম্বন করে আমি বেঁচে থাকবো। মনে করবো, কখনো কোনদিন আমার নিজের বলে কেউ ছিলো। প্লিজ তুলি একবার একবার প্লিজ...।
সারাদিন আমি এ ঘর থেকে ও ঘর ঘুরলাম তুলির গায়ের গন্ধ, পিয়ালের খিলখিল হাসি যেন অন্য ঘর থেকে ভেসে আসছে। সোফায় বসলেই মনে হচ্ছে বলে উঠবে “এই পা তুলে বসো, কাজের লোক ঝাড় দেবে...”
ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা একটা এলবাম। তুলি আর আমি মিলে বানাচ্ছিলাম। পিয়ালের জন্মদিনের উদ্দেশ্যে।
আমাদের পরিবারের নিয়ম মেনে এই প্রথম ওর জন্মদিন করতাম। জাঁকজমক করে।
তুলির আইডিয়া ছিলো সেই আমাদের দেখা হওয়ার দিন থেকে শুরু করে, আমাদের থেকে পিয়ালের সৃষ্টি আর তার সময়ের সাথে এই বয়েস পর্যন্ত আসা সব এই এলবামে থাকবে।
কোলে নিয়ে বসলাম এলবামটা। তুলির সেই শাড়ি পড়া হার জিরজিরে শরীর। কত স্মৃতি যে ভেসে আসছে। চোখ আবার ঝাপসা হয়ে এলো। আমার একটা পাঞ্জাবি পড়া ছবি পুজোর সময়কার। পুজো প্যান্ডেলে বসে আছি আমি তুলি আর বন্ধুরা। জানিনা কে তুলেছিলো, কিন্তু তুলি ঠিক জোগার করেছে। দুজনের বিয়ের ফটো, পিয়ালের একদম জন্মের সময়কার একটা ফটো। তার তলায় লেখা “the best gift we made to each other”
হায়রে ভগবান। মানুষের কেন মন থাকে? পরের জন্মে যেন আর মানুষ হয়ে না জন্মাই। মন থাকলে যে এত কষ্ট হয় জানতাম না।
আচ্ছা আমি যদি এখন মরে যাই তুলি কি আসবে আমাকে দেখতে, নাকি ঘেন্নায় দূর থেকে নাক কুচকাবে, রাস্তায় পরে থাকা কুকুরের পঁচা লাশ দেখে মানুষ যেমন করে।
কি আর বাকি আছে জীবনে। জীবন যেমন আমাকে দিয়েছে, সেরকম নিয়েও নিয়েছে। এবার আমার সব সারা হয়ে গেছে, আমি যেতে পারি। কিন্তু যদি ওরা কোন কষ্টে থাকে।
আচ্ছা দু চারদিন পরে তো গন্ধ বেরোবেই শরীর থেকে, কিংবা কাজের লোকগুলো টের পাবে, একটা চিঠি লিখে যদি তুলি আর পিয়ালের কাছে ক্ষমা চেয়ে নি আর ওদের অনুরোধ করি যে এখানে এসে থাকতে। আমি তো আর থাকছি না। ওদের নিশ্চয় আর আপত্তি থাকবেনা। মৃত মানুষের অনুরোধ কি ফেলে দেবে? পিয়াল নিশ্চয় ভাববে যে বাবা ঘুমিয়ে আছে। তুলি নিশ্চয় ওকে সেটাই বোঝাবে। নাহলে ও আর কি বোঝে জন্মমৃত্যুর। আমার বাবা খুব কষ্ট পাবে। বাবা গো মন খারাপ কোরো না আমি মার কাছে যাবো। মা আমাকে ঠিক ক্ষমা করে দেবে। ছোটবেলা যেমন করে আমার সব দুষ্টুমি মেনে নিতো। আমি ভালো থাকবো বাবা। তুমি শুধু শুধু কষ্ট পেয়োনা। তুমি তো আমাকে বাঘের বাচ্চা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলে। কিন্তু তোমার বাঘ তো ঘাস খায়। সে কি করে থাকবে এই পৃথিবীতে।
তুলি তুমি ঠিক করেছো। আত্মহনন না করে। কেন করবে? আমার মত ঘৃন্ন মানুষের জন্যে? এর থেকে ভালো আমি চলে যাই। আমার মত মানুষের জন্যে এই পৃথিবী না।