01-01-2019, 03:41 PM
মায়ের ক্যান্সার আগেই ধরা পরেছিলো। তুমি মাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছিলে। মাঝে মা শব্দটার ওপর আমার বিতৃষ্ণা এসে যায়। কিন্তু পরে ভাবি যে ওর আর কি দোষ। মাতো জীবনে কিছুই পায়নি। বাবা মার উপস্থিতিটাকেই অবজ্ঞা করতো। জীবনে আমি ওদের একসাথে শুতে দেখিনি। তাই তুমি যখন আমাকে জানালে যে মায়ের সাথে রনির সম্পর্ক আছে, আমি বাকরুদ্ধ হলেও মেনে নিয়েছিলাম। হাজার হোক আমাকে তো পেটে ধরেছে। কি করবে, মানুষের শরীর বলেও তো কিছু আছে। আমার বাবাও অদ্ভুত লোক। প্রয়োজনের সবকিছু দেবে কিন্তু বিলাসিতার কিছুই দেবেনা। আমার বা মার যদি একটা লিপ্সটিক দেখে পছন্দ হয় তো সেটার জন্যে বাবা পয়সা দেবে না। বাধ্য হয়ে মা বাইরে কিছু কাজ করতো, একা মহিলা পেলে যা হয়। ধীরে ধীরে এই রনির মত ছেলেদের পাল্লায় পড়তে শুরু করছিলো। আমি তখন অত বুঝতাম না। সবাইকেই দাদা বা কাকু এরকম ভাবতাম। বাবা খুব অশান্তি করতো এই নিয়ে। এর জন্যেই মা একদিন গলায় দরি দিয়ে ঝুলে পরে। আমি ঘরে ঢুকে দেখতে পেয়ে মার পা জড়িয়ে ধরাতে কোনোরকমে বেঁচে যায়। তারপর থেকে বাবাও যেন কেমন হয়ে গেলো। সংসার থেকে মন প্রায় উঠেই গেলো। আমাদের বাড়িতে আনন্দ বলে আর কিছু রইলো না। আমি আর মা তাই বেশিরভাগ সময়ই বাইরে বাইরে থাকতাম, বাইরের জগতটাই আমাদের সবকিছু হয়ে উঠেছিলো।
মায়ের প্রায় সবসময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছিলাম। মায়ের জগত ছিলো আমার জগত।
মাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারতাম না।
মার যখন ক্যন্সার ধরা পরলো আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। রাতের পর রাত ঘুম হোতো না আমার। দুবছর ধরে লড়তে লড়তে বাবাও হাপিয়ে গেলো। মা বারবার করে বাবাকে বলছিলো আর দরকার নেই চিকিৎসার। ওর তো কোন সমস্যা হচ্ছেনা। কিন্তু আমি জানি মাঝে মাঝেই মা রক্তবমি করতো। আমার ভয় লাগতো মাকে না হারিয়ে ফেলি।
“এর সাথে রাজুর কি সম্পর্ক” আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
‘দরকার আছে এগুলো জানার।’
মা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েদিন আগেই একদিন দুপুর বেলা হঠাত করে মার রক্ত বমি শুরু হয় আর পেচ্ছাপ্যাঁর যায়গা দিয়ে অনবরত রক্ত বেরোতে শুরু করে। তুমি তখন ছিলে না। তুমি অফিসে ছিলে। মায়ের পুরো শরীর বেলুনের মত ফুলে যায়। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম তো উনি বললেন অবিলম্বে ভর্তি করাতে। মা রাজী হোলো না। বললো যা হবে এই বাড়িতেই হবে। বাঁচলে এই বাড়িতে মরলেও এই বাড়িতে।
সন্ধ্যেবেলা মাকে রেখে আমি আর বাবা আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম। উনি জানালেন যে এই অবস্থায় অপেরেশান করা রিস্কি। তবুও ঝুকি নিয়ে মায়ের জরায়ু বাদ দিতে রাজী হলেন উনি। কিন্তু কোন গ্যারান্টি দিতে পারছিলেন না যে ভবিষ্যতে এই রোগ ফিরে আসবে না। কিন্তু অপারেশান করতে হলে বেশী দেরি করা যাবেনা আর অনেক টাকার দরকার।
বাবার মুখ শুকিয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম যে বাবার টাকার দরকার। আমি অনেক খুজেছিলাম তোমাকে, কিন্তু তোমার মা বললেন যে তুমি দিল্লী গেছো।
এক বান্ধবির সুত্রে একটা কাজ পেলাম। আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা দরকার ছিলো, ওটা ছোট একটা সফট টয়েস কোম্পানি ছিলো না। ওদের মালকিন খুব ভালো ছিলো। কিন্তু তার ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য ছিলো না। ওই আমাকে আরেকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, যে মডেল কোঅর্ডিনেটরের কাজ করে।
প্রথমদিনেই আমার নেতাজি ইণ্ডোরে কাজ পরে। কি একটা শিল্পসন্মেলন ছিলো মনে পরছেনা। আমি আর দুএকটা মেয়ে অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছিলাম। আরো ৮-১০টা মেয়ে কাজ করছিলো। সব মিলিয়ে দশ বারোজন হবে। ভালো পেমেন্ট ছিলো। দিনে প্রায় ৮০০ টাকা। মনে মনে ভেবেছিলাম এরকম ৫০-৬০ দিন কজা করলেই তো আমার টাকা চলে আসবে। ভাবছিলাম কারো থেকে ধার নিয়ে নেবো আর কাজ করে শোধ দিয়ে দেবো।
সেই শিল্প সন্মেলনে রাজুও এসেছিলো। প্রথমে আমার ওকে দেখে হাসিই পাচ্ছিলো। জোকারের মত চকরাবকরা একটা স্যুট পরে এসেছিলো।
বাকি মেয়েরা বুঝিয়েই দিয়েছিলো যে ওকে কেমন লাগছে কিন্তু আমি ওকে দেখে গম্ভিরই ছিলাম।
কিছুক্ষন পরেই সুতনুকাদিকে (আমাদের কোঅর্ডিনেটর) ওর সাথে গল্প করতে দেখেই আমি বুঝেছিলাম যে ও কোন টোপ দিচ্ছে। সুতনুকাদিরও চোখমুখ চকচক করছে দেখতে পেলাম। আমি মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম যে ওদিক থেকে কোন অফার এলে আমি না করে দেবো।
বিকেলের দিকে সুতনুকাদি এসে আমাকে শুনিয়ে বাকি মেয়েদের বললো “এই তোরা আজ ডিনারে যাবি, একজন আমাদের হোস্ট করবে” আমি যাবোনা শুনেও ও জোর কেন করলো না তাতে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
আমি বুঝেই গেলাম।
সবাই গেলো আমি গেলাম না।
কাজ শেষ হোতো রাত আটটা নাগাদ। আমি ইন্ডোর থেকে হেটে হেটে ধর্মতলা চলে আসতাম বাস ধরার জন্যে।
ওদের মধ্যে একটা মেয়ে ছিলো মৌমিতা, খুব ভালো মেয়ে বাকিগুলো মতন লোভি না। আমার মতনই চাপে পরে কাঁজ করছে। ওর প্রেম করে বিয়ে। কোন সমস্যা ছিলো না ওদের মধ্যে। কিন্তু ওর বর বিছানায় ওকে পছন্দ করতো না। নানা রকম ভাবে ওর যৌন অঙ্গভঙ্গি নিয়ে ওকে ছোট করতো। ভয়ে ও স্বামির কাছে নিজেকে মেলে ধরতো না। এই সূযোগে ওর স্বামি একপ্রকার মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়, যেহেতু ও স্বামিকে যৌনসুখ দিতে অক্ষম তাই ওর স্বামি অন্য মহিলার সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখবে। একদিন ও দেখে যে ওরই বিছানায় ওর স্বামি অন্য এক মহিলার সাথে সেক্স করছে। লজ্জায় অপমানে ও ডিভোর্সের মামলা করে। স্বামিকে পুলিশ জেলে নিয়ে যায়। কিন্তু স্বামির সোর্সের জোর থাকার জন্যে কয়েকদিনের মধ্যেই বেরিয়ে আসে জেল থেকে। তারপর থেকে নানারকম ভাবে মৌকে উত্তক্ত করতে থাকে। মানসিক অত্যাচার চরমে পৌছায়। কিন্তু থানা পুলিশ রাজনৈতিক দাদা, কেউই এগিয়ে আসেনি ওকে সাহায্য করতে।
সেদিন ডিনারে গিয়ে সুতনুকা রাজুর কাছে এই কথাটা বলে। রাজু ওকে আলাদা করে দেখা করতে বলে। ও সাত পাঁচ না ভেবে রাজুর সাথে গিয়ে দেখা করে। ও ভেবেছিলো রাজু ওকে সাহায্য করবে, যেহেতু ও এতবড় শিল্পগ্রুপের প্রধান। কিন্তু ব্যাপারটা উল্টো হয়।
রাজু ওকে আমার ওপর দুর্বলতার কথা বলে, এটাও বলে যে ও জানে যে আমার প্রেমিক আছে। কিন্তু রাজু আমাকে পেতে চায়, তার জন্যে ও যা খুশি তাই করতে পারে। এটা করে দিতে পারলে ও থানা পুলিশ সব বলে ওর বরকে শায়েস্তা করে দেবে। মৌমিতার সামনেই ও লালবাজারে কাকে ফোণ করে কাকু কাকু করে কথা বলে, তারপর মৌমিতাকে বিশ্বাস করানোর জন্যে লোকাল থানার অফিসার ইন চার্জকে ফোন করতে বলে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর বর ওকে ফোন করে এসব না করার জন্যে অনুরোধ করে, আর প্রতিজ্ঞা করে যে আর ওকে উত্তক্ত্য করবে না।
এই জন্যেই হয়তো মৌমিতা ওকে অত পাত্তা দিতে শুরু করে। আর আমার কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করে, “তুই একবার ওর সাথে দেখা করে অন্তত না বলে দে। আমার মনে হয় না ও এতটা খারাপ ছেলে। ও যে প্রোফাইলের ছেলে তাতে তোর আমার মত মেয়ে ও এহাতে নিয়ে ও হাতে বেচে দেবে। দ্যাখ আমি মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে এরকম বলতে পারিনা তবুও বলছি, ও তোর জন্যে পাগল, তোকে পেতে ওর মানুষ খুন করতেও বাঁধবে না। তাই আমার মনে হয় তুই একবার ওর সাথে দেখা করে ওকে না করে দে। তোর মুখ থেকে না শুনলে হয়তো ও বুঝবে যে এরকম করে কোন লাভ হবে না।”
আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো। আমি ভালো বন্ধু হলেও মৌমিতাকে উল্টোপাল্টা বলে দিলাম “তোর সমস্যা কেন সমাধান করেছে তুই বুঝতে পারছিস না? সেটার পিছনেও আমি। তোর আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। কিন্তু তোর এই প্রস্তাব আমি মেনে নিতে পারলাম না। অভি যদি জানতে পারতো ও এরকম কথা বলেছে তাহলে ওকে খুনই করে দিতো, ও ওই রাজুর মত ছকবাজ ছেলে না। সেদিনই আমি টের পেয়েছিলাম যে আবার ওর চুলকানি শুরু হয়েছে যখন সুতনুকাদি এসে ডিনারের কথা বললো। তোদের যদি এতই দরদ হয় তো তোরা গিয়ে শো না ওর সাথে।”
এই কথাটা কানে কানে সুতনুকার কানে পৌছুলো। ও আমাকে হুমকি দিলো এরকম কথাবার্তা বললে কাজ থেকে বসিয়ে দেবে। আমার টাকার দরকার ছিলো, তোমার সাথেও যোগাযোগ করতে পারছিনা সেই সময়। আমি চুপ করে রইলাম, সুতনুকার মুখে কোন উত্তর দিলাম।
সুতনুকা বলে উঠলো, “রাজুবাবু তো তোর ভাগ্য তৈরি করে দিতে চেয়েছে রে। ওদের মডেল করতে চেয়েছে তোকে। কোন মেয়েটা এরকম অফার পায় বলতো? ও বলছিলো যে তোকে চেনে, তুই ওকে চিনতে পারছিস কিনা, তোর সন্মন্ধে কিংবা চিনতে চাইছিস কিনা ও বুঝতে পারছে না। আচ্ছা ওর কি দরকার পরেছে বলতো আমাদের মত মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করার? তোর সাথে ভালো করে পরিচয় করার জন্যেই ও সবাইকে ডিনারে ডেকেছিলো। সেরকম হলে তো তোকে আলাদা করে ডাকতে পারতো। কত মেয়েই তো এরকম যায়। আমরা কি কাউকে ধরে রেখেছি না পাহারা দিচ্ছি। আমাকে এও বলে দিলো তুই গেলে ঠিক আছে না গেলে কোন ব্যাপার না, ও তো বলতেই পারতো যে করে হোক ওকে নিয়ে আসুন একবার।”
আমি বুঝলাম এরা রাজুর দ্বারা প্রভাবিত। ফালতু এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোন লাভ নেই। আমি আর বেশী পাত্তা নি দিয়ে ওর বকবক থামার আগেই ওখান থেকে চলে গেলাম মেইন হলে। তখন হাই টি চলছে। আমাদেরই অনেক বন্ধু হাই-টি কাউন্টারে দাড়িয়ে আছে। আমি একটা কফি নিয়ে একধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। তোমার কথা ভাবছি, কি হোলো, এমন না জানিয়ে কোথায় চলে গেলে তুমি। মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। ঘার ঘোরাতেই দেখি রাজু আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে। দেখেই মাথা গরম হয়ে গেলো। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
‘কি রেগে আছো মনে হয়?’
আমি চুপ করে রইলাম। কোন উত্তর দেওয়ার প্রবৃত্তি আমার ছিলো না।
‘কি হোলো কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না নাকি?’
‘কি করে করবে, যা শুরু করেছেন আপনি, অন্য কেউ হলে তো এতক্ষনে...।”
‘যাক তাহলে তোমার রাগের কারন হলেও হতে পারলাম...।’
‘যেকোন কিছুরই কারন হওয়া দরকার নাকি? আপনি এরকম কেন? এরকম পুরুষ মানুষ মেয়েরা পছন্দ করেনা। যদি সত্যি সে মেয়ে হয়। আজ না হয় কাল কেউ না কেউ তো আপনার স্ত্রী হবে, মেয়েরা কিন্তু দুর্বল পুরুষ পছন্দ করেনা।’
‘আমি দুর্বল তুমি ভাবছো কেন?’
‘নাহলে কি আপনি রীতিমত লোক লাগিয়ে দিয়েছেন আমার পিছনে, এটা জানা স্বতেও যে আমি এনগেজড। এরপর আপনাকে কি বলবো, বলার তো অনেক কিছু আছে কিন্তু আপনাকে বলে আমি আমার মুখ খারাপ করবো কেন?’
‘আমার মা যদি এই এভাবে শাসন করতো তাহলে কি আর আমি এরকম করতাম?’
আমি চুপ করে রইলাম। বুঝলাম এর সাথে মুখ লাগিয়ে আমার খুব লাভ নেই। আমি কফির কাপটা বিরক্তির সাথে ট্র্যাশে ফেলে অন্যদিকে চলে গেলাম।
এতেই শেষ না। পিছু কি আর ও ছারে। ওখেন সবাইই ওকে লক্ষ করছে যে, ইভেন্টের মেয়েদের সাথে ও অস্বাভাবিক ভাবে গুজুর গুজুর করছে।
সেরকমই ভাবে একদিন ডিনারে যাওয়া তো একদিন ড্রপ করে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ও হাজির হতে থাকলো।
ভাবলাম এই যন্ত্রনা সহজে যাবেনা। তুমি ফিরে আসার আগেই এটা তাড়াতে হবে।
ওর প্রস্তাব গ্রহন করলাম। ওর সাথে একটা পাঁচতারা হোটেলের রেস্তোরাঁ তে গিয়ে বসলাম। ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসে দেখি ও অপেক্ষা করছে মেনু কার্ড নিয়ে আমি কি পছন্দ করি সেটা দেখার জন্যে। আমি ইচ্ছে করে ১০-১২ রকমের অর্ডার দিলাম। পাঁচতারা হোটেলে না গেলেও ভালো রেস্তোরাঁর আদবকায়দা আমি জানি, আর জানি লোকে কি ভাবে অর্ডার দেয়।
আমার জন্যে ও সফট ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিচ্ছিলো। আমি ইচ্ছে করে ওর প্রেস্টিজ ঝোলানোর জন্যে রাম খাবো বলে বায়না শুরু করলাম। ওর কাঁচুমাচু মুখ দেখে মনে মনে হাসছি আর বলছি দ্যাখ কেমন লাগে। এরপর তো আরো বাকি আছে।
এরপর ও যতবার আমাকে প্রেম নিবেদনের লাইনে নিয়ে আসতে চাইলো আমি ততই বলতে শুরু করলাম “লাইটটা কি সুন্দর/ ঝাঁরবাতিটা কি বিরাট/চিকেনটা দুর্দান্ত বানিয়েছে যদি রেসিপিটা পাওয়া যেত।”
রামের গ্লাস পরেই রইলো। আমি ছুয়েও দেখলাম না। বুঝতেই পারছি ও খুব বিরক্ত হচ্ছে। সেটাই তো আমি চাইছি।
তবুও এর মধ্যে সুযোগ পেতেই লম্বা লেকচার দিয়ে ও বললো “দ্যাখো আমি জানি তুমি এনগেজড, তবুও আমি নির্লজ্জের মতন তোমার পিছনে ঘুরছি, তার কারন তোমাকে আমার ভালো লেগে গেছে। ছোটবেলা থেকে আমার যা ভালো লেগেছে, সেটা কোন না কোন ভাবে আমার হাতে এসেছে। আমি জানি আজ না হয় কাল তোমাকে আমি পাবোই। কিন্তু আমি চাই তুমি আমাকে নিজের মনে করে আসো, আমি হবু শিল্পপতি সেই ভেবে না। আমি তোমাদের কলেজের ফাংশানে তোমাকে কাছ থেকে দেখেছি। তোমার মধ্যে যেরকম নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে সেটা আমাকে খুব আকর্ষন করে। আমি ঠিক এরকমই মেয়ে চাই নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে, যে সংসার আর বাইরের জগত, দুটোরই ভারসাম্য বজায় রেখে চলবে। তোমার বয়ফ্রেন্ড কি পারবে তোমার মত মেয়ের মধ্যের গুনগুলোকে বের করে আনতে? মনে হয় না। সেখানে তোমার স্থান সাধারন গৃহবধুর, সন্তান ধারনের পাত্র আর স্বামির আত্মিয় পরিজনের সেবা করা। কিন্তু আরেকটা বিশাল সম্ভবনা তোমার মধ্যে রয়েছে সেটার বিকাশ হবে কি করে? চিন্তা করে দ্যাখো মিসেস গুপ্তা হিসেবে তুমি পুজোর উদ্বোধন করছো, নানা রকম এনজিও চালচ্ছো, পেপারে তোমার নাম বেরোচ্ছে। আরো কত সম্ভবনা রয়েছে ভেবে দ্যাখো।’
মনে মনে বললাম “যা আমার শিল্পপতি, কোম্পানি ওঠার নাম হচ্ছে আর তুই শালা এখানে মেয়ে নিয়ে বসে আছিস।”
এতো কিছু করেও যখন হচ্ছেনা তখন এর মন থেকে আমার ভালো ইমেজটাই তুলে দিতে হবে।
সেদিন রাতে মতলব আটলাম।
পরের দিন ও আবার ছুকছুক করছে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোনোর জন্যে। আমি প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই না করে দিলাম। বললাম আমার এক বন্ধু আমাকে নিতে আসবে।
আমার এক কলেজের বান্ধবিকে বলে ওর বয়ফ্রেন্ডকে একদিনের জন্যে ধার নিলাম। ছেলেটা খুব ভালো। বিদেশে চলে গেছে এখন। এসে বিয়ে করবে। দেখতেও মন্দ না। ও এলো আমাকে নিয়ে যেতে। একদম ক্যাজড়া ড্রেসপত্তর করে। আমি ওকে দেখে প্রেমিকা প্রেমিকা হাবভাব করতে শুরু করলাম। আর ওও মোটামুটী চলনসই অভিনয় করতে থাকলো। আবার রাজুর মুখ চুন। ভাবলাম এবার বোধহয় পিছু ছাড়বে।
এত বড় সাহস ওর রাতের বেলা ফোন করে আমার থেকে কৈফিয়ত চাইছে, কে ছিলো ছেলেটা কোথায় গেছিলাম, তুমি জানো কিনা।
আমিও উল্টোপাল্টা বলে দিলাম ওকে, কি জানি আমার বেশ মজায় লাগলো ওর এই আচরনে। আমি ওকে আরো রাগিয়ে দেওয়ার জন্যে বললাম ‘এরকম অনেক বন্ধুই আছে আমার। ওদের সাথে আমি অনেক দুরে দুরেও ঘুরতে যাই। অভিও জানে এসব। ও এত প্রশ্ন করেনা আমাকে, ও আমাকে ভালোবাসে মানে আমার সবকিছুই ভালোবাসে।’
তারপর ওর সেকি নাটক, কেঁদে দিলো ফোনে। আমি লাইন কেটে দিলেও বারবার করে ফোন করতে থাকলো। বাধ্য হয়ে আমাকে বলতে হোলো যে এখন এত কথা বলতে পারছিনা পরে দেখা করে কথা হবে। তাতে ও ফোন বন্ধ করলো।
তোমার ওপরেও রাগ উঠছিলো আমার। কোথায় গিয়ে বসে আছো একবার ফোন পর্যন্ত করার নাম নেই। এই সময় তুমি থাকলে আমার এত হ্যাপাই পোহাতে হোতো না।
পরের দিন ফেয়ার শেষ। বিকেলেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলো। রাজুও বেরিয়ে এলো। ওর গাড়িতে উঠলাম। ও আমাকে ওর বাড়িতে নিয়ে গেলো। আমি যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু ও আমাকে অভয় দিলো যে যেই ভয় আমি পাচ্ছি সেই ভয় নেই। দরকার হলে ফোন করে আমি যেন কাউকে জানিয়ে দি যে আমি কোথায় আছি। ও আমার সাথে একা কথা বলতে চায়, হোটেলের রুম আমার সন্মান নষ্ট করবে, আর কোন রেস্তোরাঁতে বসলে শান্তিতে কথা বলা যাবেনা, এই ছিলো ওর যুক্তি।
আমি মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি কোথায় এসেছি।
এই বাড়িতে আমি আসিনি আগে। নাচের রিহার্সালের জন্যে একবার ওর বাড়িতে গেছিলাম সেটা ছিলো আলিপুরের দিকে। এটা সল্টলেকে।
আলিশান বাংলো। সুইমিং পুল থেকে শুরু করে কি নেই তাতে। বাড়িড় ভিতরে ঢুকলে একদম ছাদ পর্যন্ত চোখ চলে যায়। চারিদিক দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। কম করে আট থেকে দশটা। দু মানুষ উঁচু মার্বেলের লক্ষ্মী আর গনেশের মুর্তি। অসাধারন একটা ফোয়ারা ঘরের ভিতরেই। প্রায় চল্লিশ ফুট লম্বা একটা একোয়ারিয়াম। বিত্ত আর বৈভবের ছরাছরি। চোখ ধাঁধানো ব্যাপার যাকে বলে।
‘এই বাড়িটা আমার আর আমার ফ্যামিলির জন্যে।’
আমি উত্তর দিলাম না।
রাজু বলে চলেছে, ‘আমার মার ইচ্ছে লক্ষ্মী গনেশের মুর্তির থাকবে আমার ঘরে তাই এটা রাজস্থান থেকে শিল্পী আনিয়ে করেছিলাম।’
একটার পর একটা জিনিস দেখাচ্ছে আর সেতার যুক্তি দিচ্ছে।
একুরিয়ামটা দেখিয়ে বলে উঠলো ‘তোমার অভির বাড়ি হয়তো এতবড় না যেখানে আমার প্রিয় মাছগুলো থাকে...।’
মাথাটা গরম হয়ে গেলো, বলে ফেললাম ‘অভি মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মালে হয়তো এর থেকে বড় বাড়ি বানাতো।’
রাজুর চোখে একটা হিংস্রতা ঝলক দিয়ে গেলো ‘কি আছে ওর মধ্যে যা আমি তোমাকে দিতে পারিনা?’
আমি পাত্তা দিলাম না ওর ইগোর সমস্যা ও বুঝুক। আমি বললাম ‘আমার মত মেয়েদের রাস্তার অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখে, মনে মনে স্বপ্ন দেখে প্রেম নিবেদন করার, ঘরনি করার, পিছে পিছে দৌড়ায়। কিন্তু আমিই অভির পিছনে গেছিলাম, ও কিন্তু আমার দিকে ঘুরেও তাকায়নি। এই পৌরুষ কিন্তু সবার থাকেনা।’
রাজু ঘরের এককোনে বিড়াট বারকাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালো। দেখছি দুটো গ্লাসে হুইস্কি ঢালছে।
একটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললো ‘রাম অতি নিম্নস্তরের পানিয়, সে যত দামিই হোক আর যতই পাঁচতারা হোটেলে কিনে খাওয়া হোক, আসল ড্রিঙ্কস কিন্তু স্কচ। সারা পৃথিবীতে নামিদামি লোকেরা কিন্তু স্কচই খায়। অবশ্যই কেনার ক্ষমতা থাকতে হবে। সবাই তো স্কচ কিনতে পারে না, এমন হোলো যে স্ট্যাটাস দেখাতে গিয়ে দুবোতল স্কচ কিনতে গিয়ে মাইনে শেষ।’
আমার মনে হচ্ছে বাঁদরটার মুখে এক সপাটে চর মারি। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে বললাম ‘ওই যে বললাম মানুষ নিজের ভাগ্যে খায়। এটা তুমি এই পরিবারে জন্মেছ বলে বরাই করে বলছো। পৃথিবী অনেক অনেক বড়লোক আছে যাদের সাথে দেখা করতে তোমাকে সাধারন মানুষের মতনই লাইন দিতে হবে। তাই ভালোর শেষ নেই। যা আছে সেটাই কিভাবে ভালো থাকে, তাতে উন্নতি করা যায় সেটাই মানুষের লক্ষ হওয়া উচিৎ।’
এই জন্যে, এই জন্যেই তোমাকে এত ভালো লাগে আমার। অন্য মেয়ে হলে এতক্ষনে একটা সিন ক্রিয়েট করে বসতো।
এবার আমাকে একটা ট্যাক্সি ধরিয়ে দিন। আমি যাবো।
সেকি এই তো এলে মাত্র সাতটা বাজে। কোন কথাই তো হোলো না।
তার মানে কি এই যে কথা শেষ না হলে আমাকে সারারাত এখানে থাকতে হবে?
আরে না না তা কেন। রাত নটা পর্যন্ত তো তুমি থাকতে পারো? এটা তো সুন্দরবন না যে রাত নটায় অন্ধকার হয়ে যাবে। গাড়িঘোড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
তারপর রাত করে গাড়ি থেকে নামতে দেখলে কি বলবে লোকে?
সেটা ভাবলে তুমি এত ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করলে কি করে?
আমি এরকমই।
এরকম কোরোনা। কোনদিন প্রেগনান্ট হয়ে যাবে।
আমি সেরকম মেয়ে না, আর সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা। ভাবার লোক আছে। আপনার যেটা চিন্তা করার দরকার সেটা করুন।
কি চিন্তা করা দরকার শুনি।
কিছু করার না থাকলে কি চিন্তা করবেন সেটাই করুন কিন্তু এভাবে আমার পথ আটকাবেন না অনেক হয়েছে। এবার আমি অভিকে জানাতে বাধ্য হবো।
অভি এলো কেন এর মধ্যে? তুমিই তো বললে যে অভি তোমার সব জানে।
সব মানে কি?
এই যে তোমার বিভিন্ন বন্ধু আছে, যাদের গায়ে হেলান দিয়ে তুমি বাইকে রাইড করো। তাদের সাথে তুমি লং ড্রাইভে যাও।
হ্যাঁ জানেতো। তাতে কি হয়েছে। ওরাও তো অভিকে চেনে। আর তাতে অন্যায় কোথায় একটা মেয়ের কি প্রেমিক ছাড়া পুরুষ বন্ধু থাকতে পারেনা?
তুমি কি এতটা আধুনিক?
সেটা আপনি কি করে জানলেন আমি আধুনিক না বস্তাপচা ধ্যানধারনার মেয়ে?’
অভি কি কিছুই বলেনা?
আমার কেমন যেন গলা শুক্যে গেছিলো আমি একগ্লাস জল চাইলাম।
এটা নাও এতে মুখে গন্ধ হয়না, কেঊ টের পাবেনা বাড়িতে।
না আপনি জল দিন। আমার মনে মনে ভয় ছিলো ওতে কিছু মেশানো আছে হয়তো।
ও আমাকে জলের একটা জাগ এগিয়ে দিলো সাথে একটা গ্লাস।
আমি জল খেয়ে বুঝলাম ওটা জল না আসলে হার্ড ড্রিঙ্কস।
মায়ের প্রায় সবসময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছিলাম। মায়ের জগত ছিলো আমার জগত।
মাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারতাম না।
মার যখন ক্যন্সার ধরা পরলো আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। রাতের পর রাত ঘুম হোতো না আমার। দুবছর ধরে লড়তে লড়তে বাবাও হাপিয়ে গেলো। মা বারবার করে বাবাকে বলছিলো আর দরকার নেই চিকিৎসার। ওর তো কোন সমস্যা হচ্ছেনা। কিন্তু আমি জানি মাঝে মাঝেই মা রক্তবমি করতো। আমার ভয় লাগতো মাকে না হারিয়ে ফেলি।
“এর সাথে রাজুর কি সম্পর্ক” আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
‘দরকার আছে এগুলো জানার।’
মা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েদিন আগেই একদিন দুপুর বেলা হঠাত করে মার রক্ত বমি শুরু হয় আর পেচ্ছাপ্যাঁর যায়গা দিয়ে অনবরত রক্ত বেরোতে শুরু করে। তুমি তখন ছিলে না। তুমি অফিসে ছিলে। মায়ের পুরো শরীর বেলুনের মত ফুলে যায়। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম তো উনি বললেন অবিলম্বে ভর্তি করাতে। মা রাজী হোলো না। বললো যা হবে এই বাড়িতেই হবে। বাঁচলে এই বাড়িতে মরলেও এই বাড়িতে।
সন্ধ্যেবেলা মাকে রেখে আমি আর বাবা আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম। উনি জানালেন যে এই অবস্থায় অপেরেশান করা রিস্কি। তবুও ঝুকি নিয়ে মায়ের জরায়ু বাদ দিতে রাজী হলেন উনি। কিন্তু কোন গ্যারান্টি দিতে পারছিলেন না যে ভবিষ্যতে এই রোগ ফিরে আসবে না। কিন্তু অপারেশান করতে হলে বেশী দেরি করা যাবেনা আর অনেক টাকার দরকার।
বাবার মুখ শুকিয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম যে বাবার টাকার দরকার। আমি অনেক খুজেছিলাম তোমাকে, কিন্তু তোমার মা বললেন যে তুমি দিল্লী গেছো।
এক বান্ধবির সুত্রে একটা কাজ পেলাম। আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা দরকার ছিলো, ওটা ছোট একটা সফট টয়েস কোম্পানি ছিলো না। ওদের মালকিন খুব ভালো ছিলো। কিন্তু তার ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য ছিলো না। ওই আমাকে আরেকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, যে মডেল কোঅর্ডিনেটরের কাজ করে।
প্রথমদিনেই আমার নেতাজি ইণ্ডোরে কাজ পরে। কি একটা শিল্পসন্মেলন ছিলো মনে পরছেনা। আমি আর দুএকটা মেয়ে অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছিলাম। আরো ৮-১০টা মেয়ে কাজ করছিলো। সব মিলিয়ে দশ বারোজন হবে। ভালো পেমেন্ট ছিলো। দিনে প্রায় ৮০০ টাকা। মনে মনে ভেবেছিলাম এরকম ৫০-৬০ দিন কজা করলেই তো আমার টাকা চলে আসবে। ভাবছিলাম কারো থেকে ধার নিয়ে নেবো আর কাজ করে শোধ দিয়ে দেবো।
সেই শিল্প সন্মেলনে রাজুও এসেছিলো। প্রথমে আমার ওকে দেখে হাসিই পাচ্ছিলো। জোকারের মত চকরাবকরা একটা স্যুট পরে এসেছিলো।
বাকি মেয়েরা বুঝিয়েই দিয়েছিলো যে ওকে কেমন লাগছে কিন্তু আমি ওকে দেখে গম্ভিরই ছিলাম।
কিছুক্ষন পরেই সুতনুকাদিকে (আমাদের কোঅর্ডিনেটর) ওর সাথে গল্প করতে দেখেই আমি বুঝেছিলাম যে ও কোন টোপ দিচ্ছে। সুতনুকাদিরও চোখমুখ চকচক করছে দেখতে পেলাম। আমি মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম যে ওদিক থেকে কোন অফার এলে আমি না করে দেবো।
বিকেলের দিকে সুতনুকাদি এসে আমাকে শুনিয়ে বাকি মেয়েদের বললো “এই তোরা আজ ডিনারে যাবি, একজন আমাদের হোস্ট করবে” আমি যাবোনা শুনেও ও জোর কেন করলো না তাতে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
আমি বুঝেই গেলাম।
সবাই গেলো আমি গেলাম না।
কাজ শেষ হোতো রাত আটটা নাগাদ। আমি ইন্ডোর থেকে হেটে হেটে ধর্মতলা চলে আসতাম বাস ধরার জন্যে।
ওদের মধ্যে একটা মেয়ে ছিলো মৌমিতা, খুব ভালো মেয়ে বাকিগুলো মতন লোভি না। আমার মতনই চাপে পরে কাঁজ করছে। ওর প্রেম করে বিয়ে। কোন সমস্যা ছিলো না ওদের মধ্যে। কিন্তু ওর বর বিছানায় ওকে পছন্দ করতো না। নানা রকম ভাবে ওর যৌন অঙ্গভঙ্গি নিয়ে ওকে ছোট করতো। ভয়ে ও স্বামির কাছে নিজেকে মেলে ধরতো না। এই সূযোগে ওর স্বামি একপ্রকার মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়, যেহেতু ও স্বামিকে যৌনসুখ দিতে অক্ষম তাই ওর স্বামি অন্য মহিলার সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখবে। একদিন ও দেখে যে ওরই বিছানায় ওর স্বামি অন্য এক মহিলার সাথে সেক্স করছে। লজ্জায় অপমানে ও ডিভোর্সের মামলা করে। স্বামিকে পুলিশ জেলে নিয়ে যায়। কিন্তু স্বামির সোর্সের জোর থাকার জন্যে কয়েকদিনের মধ্যেই বেরিয়ে আসে জেল থেকে। তারপর থেকে নানারকম ভাবে মৌকে উত্তক্ত করতে থাকে। মানসিক অত্যাচার চরমে পৌছায়। কিন্তু থানা পুলিশ রাজনৈতিক দাদা, কেউই এগিয়ে আসেনি ওকে সাহায্য করতে।
সেদিন ডিনারে গিয়ে সুতনুকা রাজুর কাছে এই কথাটা বলে। রাজু ওকে আলাদা করে দেখা করতে বলে। ও সাত পাঁচ না ভেবে রাজুর সাথে গিয়ে দেখা করে। ও ভেবেছিলো রাজু ওকে সাহায্য করবে, যেহেতু ও এতবড় শিল্পগ্রুপের প্রধান। কিন্তু ব্যাপারটা উল্টো হয়।
রাজু ওকে আমার ওপর দুর্বলতার কথা বলে, এটাও বলে যে ও জানে যে আমার প্রেমিক আছে। কিন্তু রাজু আমাকে পেতে চায়, তার জন্যে ও যা খুশি তাই করতে পারে। এটা করে দিতে পারলে ও থানা পুলিশ সব বলে ওর বরকে শায়েস্তা করে দেবে। মৌমিতার সামনেই ও লালবাজারে কাকে ফোণ করে কাকু কাকু করে কথা বলে, তারপর মৌমিতাকে বিশ্বাস করানোর জন্যে লোকাল থানার অফিসার ইন চার্জকে ফোন করতে বলে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর বর ওকে ফোন করে এসব না করার জন্যে অনুরোধ করে, আর প্রতিজ্ঞা করে যে আর ওকে উত্তক্ত্য করবে না।
এই জন্যেই হয়তো মৌমিতা ওকে অত পাত্তা দিতে শুরু করে। আর আমার কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করে, “তুই একবার ওর সাথে দেখা করে অন্তত না বলে দে। আমার মনে হয় না ও এতটা খারাপ ছেলে। ও যে প্রোফাইলের ছেলে তাতে তোর আমার মত মেয়ে ও এহাতে নিয়ে ও হাতে বেচে দেবে। দ্যাখ আমি মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে এরকম বলতে পারিনা তবুও বলছি, ও তোর জন্যে পাগল, তোকে পেতে ওর মানুষ খুন করতেও বাঁধবে না। তাই আমার মনে হয় তুই একবার ওর সাথে দেখা করে ওকে না করে দে। তোর মুখ থেকে না শুনলে হয়তো ও বুঝবে যে এরকম করে কোন লাভ হবে না।”
আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো। আমি ভালো বন্ধু হলেও মৌমিতাকে উল্টোপাল্টা বলে দিলাম “তোর সমস্যা কেন সমাধান করেছে তুই বুঝতে পারছিস না? সেটার পিছনেও আমি। তোর আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। কিন্তু তোর এই প্রস্তাব আমি মেনে নিতে পারলাম না। অভি যদি জানতে পারতো ও এরকম কথা বলেছে তাহলে ওকে খুনই করে দিতো, ও ওই রাজুর মত ছকবাজ ছেলে না। সেদিনই আমি টের পেয়েছিলাম যে আবার ওর চুলকানি শুরু হয়েছে যখন সুতনুকাদি এসে ডিনারের কথা বললো। তোদের যদি এতই দরদ হয় তো তোরা গিয়ে শো না ওর সাথে।”
এই কথাটা কানে কানে সুতনুকার কানে পৌছুলো। ও আমাকে হুমকি দিলো এরকম কথাবার্তা বললে কাজ থেকে বসিয়ে দেবে। আমার টাকার দরকার ছিলো, তোমার সাথেও যোগাযোগ করতে পারছিনা সেই সময়। আমি চুপ করে রইলাম, সুতনুকার মুখে কোন উত্তর দিলাম।
সুতনুকা বলে উঠলো, “রাজুবাবু তো তোর ভাগ্য তৈরি করে দিতে চেয়েছে রে। ওদের মডেল করতে চেয়েছে তোকে। কোন মেয়েটা এরকম অফার পায় বলতো? ও বলছিলো যে তোকে চেনে, তুই ওকে চিনতে পারছিস কিনা, তোর সন্মন্ধে কিংবা চিনতে চাইছিস কিনা ও বুঝতে পারছে না। আচ্ছা ওর কি দরকার পরেছে বলতো আমাদের মত মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করার? তোর সাথে ভালো করে পরিচয় করার জন্যেই ও সবাইকে ডিনারে ডেকেছিলো। সেরকম হলে তো তোকে আলাদা করে ডাকতে পারতো। কত মেয়েই তো এরকম যায়। আমরা কি কাউকে ধরে রেখেছি না পাহারা দিচ্ছি। আমাকে এও বলে দিলো তুই গেলে ঠিক আছে না গেলে কোন ব্যাপার না, ও তো বলতেই পারতো যে করে হোক ওকে নিয়ে আসুন একবার।”
আমি বুঝলাম এরা রাজুর দ্বারা প্রভাবিত। ফালতু এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোন লাভ নেই। আমি আর বেশী পাত্তা নি দিয়ে ওর বকবক থামার আগেই ওখান থেকে চলে গেলাম মেইন হলে। তখন হাই টি চলছে। আমাদেরই অনেক বন্ধু হাই-টি কাউন্টারে দাড়িয়ে আছে। আমি একটা কফি নিয়ে একধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। তোমার কথা ভাবছি, কি হোলো, এমন না জানিয়ে কোথায় চলে গেলে তুমি। মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। ঘার ঘোরাতেই দেখি রাজু আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে। দেখেই মাথা গরম হয়ে গেলো। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
‘কি রেগে আছো মনে হয়?’
আমি চুপ করে রইলাম। কোন উত্তর দেওয়ার প্রবৃত্তি আমার ছিলো না।
‘কি হোলো কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না নাকি?’
‘কি করে করবে, যা শুরু করেছেন আপনি, অন্য কেউ হলে তো এতক্ষনে...।”
‘যাক তাহলে তোমার রাগের কারন হলেও হতে পারলাম...।’
‘যেকোন কিছুরই কারন হওয়া দরকার নাকি? আপনি এরকম কেন? এরকম পুরুষ মানুষ মেয়েরা পছন্দ করেনা। যদি সত্যি সে মেয়ে হয়। আজ না হয় কাল কেউ না কেউ তো আপনার স্ত্রী হবে, মেয়েরা কিন্তু দুর্বল পুরুষ পছন্দ করেনা।’
‘আমি দুর্বল তুমি ভাবছো কেন?’
‘নাহলে কি আপনি রীতিমত লোক লাগিয়ে দিয়েছেন আমার পিছনে, এটা জানা স্বতেও যে আমি এনগেজড। এরপর আপনাকে কি বলবো, বলার তো অনেক কিছু আছে কিন্তু আপনাকে বলে আমি আমার মুখ খারাপ করবো কেন?’
‘আমার মা যদি এই এভাবে শাসন করতো তাহলে কি আর আমি এরকম করতাম?’
আমি চুপ করে রইলাম। বুঝলাম এর সাথে মুখ লাগিয়ে আমার খুব লাভ নেই। আমি কফির কাপটা বিরক্তির সাথে ট্র্যাশে ফেলে অন্যদিকে চলে গেলাম।
এতেই শেষ না। পিছু কি আর ও ছারে। ওখেন সবাইই ওকে লক্ষ করছে যে, ইভেন্টের মেয়েদের সাথে ও অস্বাভাবিক ভাবে গুজুর গুজুর করছে।
সেরকমই ভাবে একদিন ডিনারে যাওয়া তো একদিন ড্রপ করে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ও হাজির হতে থাকলো।
ভাবলাম এই যন্ত্রনা সহজে যাবেনা। তুমি ফিরে আসার আগেই এটা তাড়াতে হবে।
ওর প্রস্তাব গ্রহন করলাম। ওর সাথে একটা পাঁচতারা হোটেলের রেস্তোরাঁ তে গিয়ে বসলাম। ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসে দেখি ও অপেক্ষা করছে মেনু কার্ড নিয়ে আমি কি পছন্দ করি সেটা দেখার জন্যে। আমি ইচ্ছে করে ১০-১২ রকমের অর্ডার দিলাম। পাঁচতারা হোটেলে না গেলেও ভালো রেস্তোরাঁর আদবকায়দা আমি জানি, আর জানি লোকে কি ভাবে অর্ডার দেয়।
আমার জন্যে ও সফট ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিচ্ছিলো। আমি ইচ্ছে করে ওর প্রেস্টিজ ঝোলানোর জন্যে রাম খাবো বলে বায়না শুরু করলাম। ওর কাঁচুমাচু মুখ দেখে মনে মনে হাসছি আর বলছি দ্যাখ কেমন লাগে। এরপর তো আরো বাকি আছে।
এরপর ও যতবার আমাকে প্রেম নিবেদনের লাইনে নিয়ে আসতে চাইলো আমি ততই বলতে শুরু করলাম “লাইটটা কি সুন্দর/ ঝাঁরবাতিটা কি বিরাট/চিকেনটা দুর্দান্ত বানিয়েছে যদি রেসিপিটা পাওয়া যেত।”
রামের গ্লাস পরেই রইলো। আমি ছুয়েও দেখলাম না। বুঝতেই পারছি ও খুব বিরক্ত হচ্ছে। সেটাই তো আমি চাইছি।
তবুও এর মধ্যে সুযোগ পেতেই লম্বা লেকচার দিয়ে ও বললো “দ্যাখো আমি জানি তুমি এনগেজড, তবুও আমি নির্লজ্জের মতন তোমার পিছনে ঘুরছি, তার কারন তোমাকে আমার ভালো লেগে গেছে। ছোটবেলা থেকে আমার যা ভালো লেগেছে, সেটা কোন না কোন ভাবে আমার হাতে এসেছে। আমি জানি আজ না হয় কাল তোমাকে আমি পাবোই। কিন্তু আমি চাই তুমি আমাকে নিজের মনে করে আসো, আমি হবু শিল্পপতি সেই ভেবে না। আমি তোমাদের কলেজের ফাংশানে তোমাকে কাছ থেকে দেখেছি। তোমার মধ্যে যেরকম নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে সেটা আমাকে খুব আকর্ষন করে। আমি ঠিক এরকমই মেয়ে চাই নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে, যে সংসার আর বাইরের জগত, দুটোরই ভারসাম্য বজায় রেখে চলবে। তোমার বয়ফ্রেন্ড কি পারবে তোমার মত মেয়ের মধ্যের গুনগুলোকে বের করে আনতে? মনে হয় না। সেখানে তোমার স্থান সাধারন গৃহবধুর, সন্তান ধারনের পাত্র আর স্বামির আত্মিয় পরিজনের সেবা করা। কিন্তু আরেকটা বিশাল সম্ভবনা তোমার মধ্যে রয়েছে সেটার বিকাশ হবে কি করে? চিন্তা করে দ্যাখো মিসেস গুপ্তা হিসেবে তুমি পুজোর উদ্বোধন করছো, নানা রকম এনজিও চালচ্ছো, পেপারে তোমার নাম বেরোচ্ছে। আরো কত সম্ভবনা রয়েছে ভেবে দ্যাখো।’
মনে মনে বললাম “যা আমার শিল্পপতি, কোম্পানি ওঠার নাম হচ্ছে আর তুই শালা এখানে মেয়ে নিয়ে বসে আছিস।”
এতো কিছু করেও যখন হচ্ছেনা তখন এর মন থেকে আমার ভালো ইমেজটাই তুলে দিতে হবে।
সেদিন রাতে মতলব আটলাম।
পরের দিন ও আবার ছুকছুক করছে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোনোর জন্যে। আমি প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই না করে দিলাম। বললাম আমার এক বন্ধু আমাকে নিতে আসবে।
আমার এক কলেজের বান্ধবিকে বলে ওর বয়ফ্রেন্ডকে একদিনের জন্যে ধার নিলাম। ছেলেটা খুব ভালো। বিদেশে চলে গেছে এখন। এসে বিয়ে করবে। দেখতেও মন্দ না। ও এলো আমাকে নিয়ে যেতে। একদম ক্যাজড়া ড্রেসপত্তর করে। আমি ওকে দেখে প্রেমিকা প্রেমিকা হাবভাব করতে শুরু করলাম। আর ওও মোটামুটী চলনসই অভিনয় করতে থাকলো। আবার রাজুর মুখ চুন। ভাবলাম এবার বোধহয় পিছু ছাড়বে।
এত বড় সাহস ওর রাতের বেলা ফোন করে আমার থেকে কৈফিয়ত চাইছে, কে ছিলো ছেলেটা কোথায় গেছিলাম, তুমি জানো কিনা।
আমিও উল্টোপাল্টা বলে দিলাম ওকে, কি জানি আমার বেশ মজায় লাগলো ওর এই আচরনে। আমি ওকে আরো রাগিয়ে দেওয়ার জন্যে বললাম ‘এরকম অনেক বন্ধুই আছে আমার। ওদের সাথে আমি অনেক দুরে দুরেও ঘুরতে যাই। অভিও জানে এসব। ও এত প্রশ্ন করেনা আমাকে, ও আমাকে ভালোবাসে মানে আমার সবকিছুই ভালোবাসে।’
তারপর ওর সেকি নাটক, কেঁদে দিলো ফোনে। আমি লাইন কেটে দিলেও বারবার করে ফোন করতে থাকলো। বাধ্য হয়ে আমাকে বলতে হোলো যে এখন এত কথা বলতে পারছিনা পরে দেখা করে কথা হবে। তাতে ও ফোন বন্ধ করলো।
তোমার ওপরেও রাগ উঠছিলো আমার। কোথায় গিয়ে বসে আছো একবার ফোন পর্যন্ত করার নাম নেই। এই সময় তুমি থাকলে আমার এত হ্যাপাই পোহাতে হোতো না।
পরের দিন ফেয়ার শেষ। বিকেলেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলো। রাজুও বেরিয়ে এলো। ওর গাড়িতে উঠলাম। ও আমাকে ওর বাড়িতে নিয়ে গেলো। আমি যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু ও আমাকে অভয় দিলো যে যেই ভয় আমি পাচ্ছি সেই ভয় নেই। দরকার হলে ফোন করে আমি যেন কাউকে জানিয়ে দি যে আমি কোথায় আছি। ও আমার সাথে একা কথা বলতে চায়, হোটেলের রুম আমার সন্মান নষ্ট করবে, আর কোন রেস্তোরাঁতে বসলে শান্তিতে কথা বলা যাবেনা, এই ছিলো ওর যুক্তি।
আমি মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি কোথায় এসেছি।
এই বাড়িতে আমি আসিনি আগে। নাচের রিহার্সালের জন্যে একবার ওর বাড়িতে গেছিলাম সেটা ছিলো আলিপুরের দিকে। এটা সল্টলেকে।
আলিশান বাংলো। সুইমিং পুল থেকে শুরু করে কি নেই তাতে। বাড়িড় ভিতরে ঢুকলে একদম ছাদ পর্যন্ত চোখ চলে যায়। চারিদিক দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। কম করে আট থেকে দশটা। দু মানুষ উঁচু মার্বেলের লক্ষ্মী আর গনেশের মুর্তি। অসাধারন একটা ফোয়ারা ঘরের ভিতরেই। প্রায় চল্লিশ ফুট লম্বা একটা একোয়ারিয়াম। বিত্ত আর বৈভবের ছরাছরি। চোখ ধাঁধানো ব্যাপার যাকে বলে।
‘এই বাড়িটা আমার আর আমার ফ্যামিলির জন্যে।’
আমি উত্তর দিলাম না।
রাজু বলে চলেছে, ‘আমার মার ইচ্ছে লক্ষ্মী গনেশের মুর্তির থাকবে আমার ঘরে তাই এটা রাজস্থান থেকে শিল্পী আনিয়ে করেছিলাম।’
একটার পর একটা জিনিস দেখাচ্ছে আর সেতার যুক্তি দিচ্ছে।
একুরিয়ামটা দেখিয়ে বলে উঠলো ‘তোমার অভির বাড়ি হয়তো এতবড় না যেখানে আমার প্রিয় মাছগুলো থাকে...।’
মাথাটা গরম হয়ে গেলো, বলে ফেললাম ‘অভি মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মালে হয়তো এর থেকে বড় বাড়ি বানাতো।’
রাজুর চোখে একটা হিংস্রতা ঝলক দিয়ে গেলো ‘কি আছে ওর মধ্যে যা আমি তোমাকে দিতে পারিনা?’
আমি পাত্তা দিলাম না ওর ইগোর সমস্যা ও বুঝুক। আমি বললাম ‘আমার মত মেয়েদের রাস্তার অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখে, মনে মনে স্বপ্ন দেখে প্রেম নিবেদন করার, ঘরনি করার, পিছে পিছে দৌড়ায়। কিন্তু আমিই অভির পিছনে গেছিলাম, ও কিন্তু আমার দিকে ঘুরেও তাকায়নি। এই পৌরুষ কিন্তু সবার থাকেনা।’
রাজু ঘরের এককোনে বিড়াট বারকাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালো। দেখছি দুটো গ্লাসে হুইস্কি ঢালছে।
একটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললো ‘রাম অতি নিম্নস্তরের পানিয়, সে যত দামিই হোক আর যতই পাঁচতারা হোটেলে কিনে খাওয়া হোক, আসল ড্রিঙ্কস কিন্তু স্কচ। সারা পৃথিবীতে নামিদামি লোকেরা কিন্তু স্কচই খায়। অবশ্যই কেনার ক্ষমতা থাকতে হবে। সবাই তো স্কচ কিনতে পারে না, এমন হোলো যে স্ট্যাটাস দেখাতে গিয়ে দুবোতল স্কচ কিনতে গিয়ে মাইনে শেষ।’
আমার মনে হচ্ছে বাঁদরটার মুখে এক সপাটে চর মারি। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে বললাম ‘ওই যে বললাম মানুষ নিজের ভাগ্যে খায়। এটা তুমি এই পরিবারে জন্মেছ বলে বরাই করে বলছো। পৃথিবী অনেক অনেক বড়লোক আছে যাদের সাথে দেখা করতে তোমাকে সাধারন মানুষের মতনই লাইন দিতে হবে। তাই ভালোর শেষ নেই। যা আছে সেটাই কিভাবে ভালো থাকে, তাতে উন্নতি করা যায় সেটাই মানুষের লক্ষ হওয়া উচিৎ।’
এই জন্যে, এই জন্যেই তোমাকে এত ভালো লাগে আমার। অন্য মেয়ে হলে এতক্ষনে একটা সিন ক্রিয়েট করে বসতো।
এবার আমাকে একটা ট্যাক্সি ধরিয়ে দিন। আমি যাবো।
সেকি এই তো এলে মাত্র সাতটা বাজে। কোন কথাই তো হোলো না।
তার মানে কি এই যে কথা শেষ না হলে আমাকে সারারাত এখানে থাকতে হবে?
আরে না না তা কেন। রাত নটা পর্যন্ত তো তুমি থাকতে পারো? এটা তো সুন্দরবন না যে রাত নটায় অন্ধকার হয়ে যাবে। গাড়িঘোড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
তারপর রাত করে গাড়ি থেকে নামতে দেখলে কি বলবে লোকে?
সেটা ভাবলে তুমি এত ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করলে কি করে?
আমি এরকমই।
এরকম কোরোনা। কোনদিন প্রেগনান্ট হয়ে যাবে।
আমি সেরকম মেয়ে না, আর সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা। ভাবার লোক আছে। আপনার যেটা চিন্তা করার দরকার সেটা করুন।
কি চিন্তা করা দরকার শুনি।
কিছু করার না থাকলে কি চিন্তা করবেন সেটাই করুন কিন্তু এভাবে আমার পথ আটকাবেন না অনেক হয়েছে। এবার আমি অভিকে জানাতে বাধ্য হবো।
অভি এলো কেন এর মধ্যে? তুমিই তো বললে যে অভি তোমার সব জানে।
সব মানে কি?
এই যে তোমার বিভিন্ন বন্ধু আছে, যাদের গায়ে হেলান দিয়ে তুমি বাইকে রাইড করো। তাদের সাথে তুমি লং ড্রাইভে যাও।
হ্যাঁ জানেতো। তাতে কি হয়েছে। ওরাও তো অভিকে চেনে। আর তাতে অন্যায় কোথায় একটা মেয়ের কি প্রেমিক ছাড়া পুরুষ বন্ধু থাকতে পারেনা?
তুমি কি এতটা আধুনিক?
সেটা আপনি কি করে জানলেন আমি আধুনিক না বস্তাপচা ধ্যানধারনার মেয়ে?’
অভি কি কিছুই বলেনা?
আমার কেমন যেন গলা শুক্যে গেছিলো আমি একগ্লাস জল চাইলাম।
এটা নাও এতে মুখে গন্ধ হয়না, কেঊ টের পাবেনা বাড়িতে।
না আপনি জল দিন। আমার মনে মনে ভয় ছিলো ওতে কিছু মেশানো আছে হয়তো।
ও আমাকে জলের একটা জাগ এগিয়ে দিলো সাথে একটা গ্লাস।
আমি জল খেয়ে বুঝলাম ওটা জল না আসলে হার্ড ড্রিঙ্কস।