01-01-2019, 03:31 PM
অফিসে ঢুকে মনটা আনচান করছে। কখন সানির থেকে খবর পাবো। তুলির সাথে কাল রাতে অনেকক্ষন গল্প করেছি। নতুন একটা শপিং মল খুলেছে, ক্যামাক স্ট্রীটে, সেটাতে গেছিলো ঘুরতে। ওখানে নাকি ছেলেদের দারুন দারুন শেরওয়ানি পাওয়া যায়। বৌভাতের দিনে পরার জন্যে ও পছন্দও করে ফেলেছে। এই হোলো মেয়ে। সবসময় স্বপ্নের জগতে রয়েছে। মনে হয় বাড়িতে সানাইও চালিয়ে শোনে এখন থেকেই। জিজ্ঞেস করতে হবে আজকে রাতে।
আড়াইটা নাগাদ বহুপ্রতিক্ষিত ফোনটা এল। হ্যাঁ সানি ফোন করেছে।
এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো, “শোন অন্য একটা অফিস থেকে ফোন করছি, আমার পিছনে গোয়েন্দা লেগেছে। ওরা বুঝে গেছে যে আমি কিছু হাতিয়েছি, পিছে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। আমি এই অফিস থেকে তোমাকে ফ্যাক্স করে দিচ্ছি। পেলে কিনা জানিও। অফিসে ফোন করবে না। রাতে বাড়িতে এসো।’
‘এখান থেকে যে করছো, সেটাতে প্রবলেম হবে না?’
‘এই অফিসে কিছু পরিচিত আছে আমার। আমি মাঝে মাঝেই আসি এখানে, আড্ডা দিতে। তাই ওরা আর এখানে ঢুকে আমি কি করছি সেটা দেখার সাহস পাবেনা। কিন্তু আমার ওপরে বেশ নজর রেখেছে।’
‘ও তুমি সাবধানে থাকবে কিন্তু... আমারই খারাপ লাগছে আমার জন্যে তোমাকে এরকম সমস্যাই পড়তে হোলো।’
‘ধুর ছারোতো, সমস্যা আর কি সরকারি চাকরি আমার, অত সহজে কেউ কিছু করতে পারবে না। চুরি তো আর হাতেনাতে ধরতে পারেনি... যাই হোক তুমি দেখে নাও ঠিকঠাক এসেছে কিনা ফ্যাক্স। আমি ধরছি ...।‘
‘ক পাতা পাঠিয়েছো?’
‘চার পাতা’
‘একটু ধরো... ’
ততক্ষনে বসের হাতে চলে এসেছে ফ্যাক্সটা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘বোঝা যাচ্ছে তো, ও লাইনে আছে...’
বস শশব্যস্ত হয়ে ‘আরে তুমি, হ হ্যাঁ সব ঠিক আছে, পরিষ্কার একদম, এতো মেঘ না চাইতেই জল।’
‘আমি ওকে বলে দি, বেচারা অনেক ঝামেলা পুহিয়ে এটা করেছে।’
‘ওকে জিজ্ঞেস কোরো ওর কি চায়? এনিথিং হি ওয়ান্ট জাস্ট আস্ক থে নেম।’
‘ঠিক আছে, এখন ও লাইন ধরে আছে...।’ প্রায় হেসেই দিয়েছিলাম। সানির ডিমান্ড যদি জানতো...।
সানিকে এসে বললাম ‘সব ঠিক আছে। এখন তুমি দেখো কি করে ঝামেলা মেটাতে পারো।’
‘ও সব নিয়ে ভেবো না, বন্ধুর জন্যে এটুকু করতে পারবো না , তোমার প্রোমোশান হবে বিয়ে করবে, আমি নাচবো...’
শালা এর মধ্যে আবার ও নাচবে কেন রে? কুত্তার ল্যাজ মাইরি। এতবড় উপকার করার পরেও ওর ওপর কেমন রাগ উঠে গেলো।
হেসে ফোনটা রেখে দিলাম।
‘কেসটা দেখেছো’ বস কাগজগুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
‘টেকনিকাল কিছু কি?’
‘হ্যাঁ। প্রাইজের সু্যোগ নেওয়ার জন্যে ওরা বেশী RPM-এর মেশিন দিচ্ছে। মানে, বিয়ারিং, থেকে শুরু করে র মেটেরিয়াল সব কিছুতেই ওরা সস্তা। টেন্ডারে লেখা নেই বলে সুযোগ নিয়ে নিয়েছে।’
‘তাহলে তো ওদের কি ক্যান্সেল করতে পারবেন না।’
‘ক্যান্সেল করার দরকার নেই। এক প্ল্যাটফর্ম থেকে খেলুক না। তারপর দেখি কার কত কারিকুরি। ওরা হয় বুঝে প্রাইজিং করবে, না হয় না বুঝে। দুটোতেই আমাদের জয়। বুঝে করলে কম্পিট করতে পারবে না, না বুঝে আন্ডারকাট করলে লস করবে। আমাদের মেশিন যেহেতু চাইনিজ অরিজিন আমাদের কিন্তু বলে দিয়েছে যে চাইনিজ কোম্পানি চলবেনা। সেটা তো ইতালি থেকে ম্যানেজ করলাম। আর এখানে ওরা খেলবে সেটা আমি সহ্য করে নেবো না। তুমি রিয়াকে বলে তোমার আর আমার টিকিট করাও কালই প্ল্যান্টে গিয়ে কথা বলবো এ ব্যাপারে। দরকার হলে দিল্লী থেকে টেন্ডার ক্যান্সেল করিয়ে দেবো। আজ থেকে এ লাইনে না আমি।’
বসকে বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। গুছানোর আছে অনেক কিছু। জীবনের প্রথম এরকম গুরুত্বপুর্ন কাজ করছি, বেশ উত্তেজিত লাগছে। এটা তো নিজের জীবনের ব্যাপার, দুষমনকে অওকাত দেখানোর চ্যালেঞ্জ।
আবার পায়ে পায়ে তুলিদের বাড়িতে চলে এলাম। আর কয়েকদিন পরে ওদের কলেজ ছুটি পরে যাবে। কলেজে নাকি টিচাররা ওর সাথে কেউ কথা বলে না, হয় তো রাজু বাবুর প্রভাবে, কিংবা ও ফাংশান করবে না বলেছে বলে।
আজকেও তুলির মা দরজা খুলে দিলো। তুলি নেই, সেই বন্ধুদের সাথে ঘুরছে।
‘এরকম রোজ রোজ ঘুরতে যাচ্ছে নাকি?’
‘কি করবো বলো, বারন করলাম বললো দুদিন পরে বিয়ে হয়ে গেলে তো আর ঘুরতে পারবে না, এসব অজুহাত দেয় যখন তখন আর কি বলি। তুমি বসো না, চা খাবে তো?’
সন্দিগ্ধ চোখে তুলির মার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘শুধু চা হলে খাবো, চায়ের সাথে টা আর আজকে নয়।’
হেসে উঠলো তুলির মা “আমারও হবে না, কালকে এমন গুতিয়েছো যে রাতেই প্যাড পড়তে হয়েছে। হি হি শয়তানটা, আমি তো মনে মনে ভাবছি তুমি যদি কালকের মত এসে পরো, আর চেয়ে বসো, তাহলে আজকে কি হবে?’
‘চাইনি তো ব্যাস, কালকের জেরে আমার আজকেও গা হাতপা ব্যাথা রয়েছে।’
‘বসো বসো চা নিয়ে আসছি। যদিও আমার খুব ইচ্ছে করছে, মেয়েদের এই সময় খুব ইচ্ছে করে, বিয়ের পরে তুলিও দেখবে মিউ মিউ কেমন করে এই সময়। কিন্তু না থাক নোংরার মধ্যে ওসব মানে হয় না।’
বসে রয়েছি এমন সময় তুলিদের ফোনটা বেজে উঠলো।
তুলির মা চেচিয়ে আমাকে ধরতে বললো।
‘হ্যালো?’ সুরেলা মহিলা কন্ঠ ভেসে এলো।
‘হ্যাঁ হ্যালো?’
‘আচ্ছা মিঃ চক্রবর্তি’
‘না উনি তো নেই এখন?’
‘আপনি কে বলছেন?’
‘আ আমি উনার ছেলে বলছি’
‘ওঃ স্যার বাড়ির একজন হলেই হবে।’
‘কি ব্যাপার বলুন।’
‘একটা মারকেটিং সারভের ব্যাপারে এই ভেরিফিকেশান কলটা’
‘কিসের মার্কেটিং।’
‘আসলে আপনাদের নাম্বারটা আমাদের ফিল্ড এক্সিকিউটিভরা কালেক্ট করেছে তো সেই ব্যাপারে। আমরা ছেলেদের জন্যে শেভিং এর পুরো রেঞ্জ বের করতে চলেছি, আপনার বাবা ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে তাই ভেরিফিকেশানের জন্যে ফোন করলাম। ভেরফিকাশান সঠিক হলে আমরা আপনাদের ঠিকানায় একটা বিনামুল্যে গিফট প্যাক পাঠাবো এই স্যম্পেল প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে, যেটা একমাস চলে যাবে আপনাদের।’
‘আপনার জিজ্ঞাস্য কি?’
‘শুধু ফর্মে যা লিখেছেন সেটা ভেরিফাই করবো।’
‘কি লেখা আছে তাতো আমি জানিনা।’
‘খুব সিম্পল স্যার। আপনাদের নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, বয়েস, ফোন নাম্বার এসব’
‘ওহ তাহলে আপনি পরে ফোন করুন, বাবা কি যে করে আমি জানিনা, এগুলো বাবাই বলতে পারবেন আমি না’
‘স্যার এগুলো তো আপনি জানবেনই’
‘না আমি জানিনা আসলে উনি আমার শশুর মশাই তাও হবু’
‘ওঃ। ঠিক আছে স্যর। আমি কোন সময়ে উনাকে পাবো, আর যদি আপনার সময় থাকে তো ক্যামাক স্ট্রীটে এসে আমাদের শোরুমে ঘুরে যেতে পারেন। মেল টয়লেট্রিজের পুরো কভারেজ পাবেন।’
‘সেটা ভেবে দেখবো, এমনি কোথায় আপনাদের শো রুম?’
‘স্যর বললেই চিনতে পারবেন নতুন যে শপিং মল হয়েছে ওয়েস্টসাইড সেটার গ্রাউন্ড ফ্লোরে।’
‘আচ্ছা সময় পেলে যাবো’
ফোনটা রাখতে রাখতে হাসি পেয়ে গেলো। তুলির মা চা নিয়ে চলে এসেছে। সব খুলে বললাম, বলতে বলতে তুলির বাবার ফোম মাখা মুখটা মনে চলে এলো। তুলির মা কিন্তু কি বুঝলো কি জানি বেশ গম্ভির হয়ে গেলো।
সানির বাড়িতে আর যাইনি। ওকে ফোন করে ধন্যবাদ দিয়ে পরে কদিন যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলাম। রাতের বেলা তুলির সাথে বেশী কথা বলতে পারলাম না, আজকেও ও নানান জিনিস দেখেছে, ভবিষ্যতের জন্যে। তাতে ঘর সাজানোর জিনিসও আছে।
পরের দিন দুপুরবেলা পৌছে গেলাম প্ল্যান্টে। গেট পাশ করে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় তিনটে বেজে গেলো। প্ল্যান্টের লোক স্বীকার করে নিলো যে আমাদের যুক্তি অকাট্য। এইরকম গুরুত্বপুর্ন মেশিন, এতো বেশী RPM হলে তাতে সবসময় মেরামতির কাজ লেগেই থাকবে। নতুন করে আবার টেকনিকাল আলোচনা করে সব নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পার্টিকে ডেকে আবার আলোচনা হবে আস্বাস দিলো।
ফেরার টিকিট করিনি। তাই বাধ্য হয়ে হোটেলে থেকে গেলাম। কালকে দুপুরের ট্রেন ধরবো ঠিক করলাম। সেই সুজোগে কালকে আবার প্ল্যান্টে যাবো আমরা, সাথে আমাদের লোকাল এজেন্ট। সাইট টা ভালো করে দেখে নিলে পরিবর্তিত দর দিতে সুবিধে হবে।
বিকেলের দিকে হোটেল থেকে বেরিয়ে তুলিদের বাড়িতে ফোন করলাম। এতদুরে চলে এসেছি মনটা খুব খারাপ লাগছে। ওর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পরে আর বাইরে আসিনি।
তুলির মা ফোন ধরলো। টুকটাক কথা বলে তুলিকে দিতে বললাম।
আজকেও তুলি নেই। কি ব্যাপার ও কি রোজই এরকম ঘুরে বেরাচ্ছে?
তুলির মা কোন উত্তর দিতে পারলো না। আমার একটু বিরক্তই লাগলো। ও জানে যে আমি বাইরে এসেছি।। আমার এত মন খারাপ লাগছে আর ওর লাগছে না। রোজ রোজ ঘুরে বেরাতে চায়? অদ্ভুত মেয়ে তো।
রাতে বসের সাথে বসে মাল খেতে খেতে এসব নিয়ে অনেক চিন্তা করছি। বস নিজের মত কাজ করে চলেছে, একটা নোট বই নিয়ে বিভিন্ন জিনিস নোট করে চলেছে। মাঝে মাঝে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। আমি যথাসাধ্য উত্তর দিচ্ছি।
কিছুক্ষন পরে দেখলাম চোখ বুজে নিজের মনে কি যেন বিরবির করছে।
হঠাত করে আমাকে বলে উঠলো, “চলো দিল্লী থেকে ঘুরে আসি।”
‘এখন?’
‘আরে এখন না, আমি বলছি এই ট্রিপেই, আবার কলকাতা যাবো আবার বেরোতে হবে এর থেকে ট্যুর বারিয়ে নিয়ে এখান থেকেই চলে চলো, অফিসে গেলে নানান ঝামেলায় আবার আটকে যাবো, এর থেকে এই কেসটার শেষ পেরেক দিল্লী গিয়ে পুঁতে আসি।’
অগত্যা পরের দিন ফ্লাইট ধরে দিল্লী। ভাগ্যিস আমি এক্সট্রা জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম।
দুদিন দিল্লী থাকলাম। বিভিন্ন লোকের সাথে দেখা করে আমরা এই টেন্ডারের বিভিন্ন খুঁতগুলো তুলে ধরলাম। বেশ কাজ হোলো তাতে। দিল্লী থেকে টেকনিকাল ডিরেক্টার ডাইরেক্ট প্ল্যান্টে ফোন করলেন। প্ল্যাণ্টের লোকও আমাদের সাথে একমত দেখে, আবার আলোচনা শুরু করে নতুন করে টেকনিকাল আলোচনা শুরু করতে বললেন।
দুদিন এত ব্যস্ত ছিলাম যে রাতে ঘুম বাদ দিয়ে সারাক্ষনই কাজ করেছি। এবার ঘরে ফেরার পালা। সন্ধ্যে প্রায় সাতটা, ভাবলাম তুলিকে ফোন করে খবরটা দি। মুশকিল হবে ও যদি বায়না করে বসে দিল্লী থেকে কিছু নিয়ে যাওয়ার জন্যে। হাতে তো একদম সময় নেই। আমরা তো ডাইরেক্ট এয়ারপোর্টে চলে যাবো।
এতক্ষনে নিশ্চয় চলে এসেছে। মাকে ফোন করে খাওয়া দাওয়া বাড়িতেই করবো জানিয়ে দিলাম। তুলিদের বাড়ীতে ফোন করে বেশ মাথা গরমই হয়ে গেলো। আজকেও তুলি নেই। আমি বিরক্ত ভাবেই তুলির মাকে বললাম যে উনি কেন বলেননি আমি বার বার করে বাইরে থেকে ফোন করছি। এসটিডি তে কিরকম বিল ওঠে কি করে বুঝবে এরা। আমতা আমতা করে সে আমাকে বললো ফিরে এসে তুলির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে।
রাগে গা রি রি করছে। এরকম কি করে করে? সারাক্ষনই কি বাইরে থাকতে হয়। মা ঠিক হোলো তো মেয়ে বিগড়ে যায়। এরা সত্যি অদ্ভুত। কপালে কি আছে কে জানে। এসব চিন্তায় এয়ারবাসের যাত্রাটাই আর এঞ্জয় করতে পারলাম না।
কতক্ষনে তুলির সাথে কথা বলবো এসব নিয়ে তাই ভাবছি। কতক্ষনে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকবো।
খেয়ে দেয়ে উঠতে উঠতে প্রায় বারোটা বেজে গেলো। একটা সিগেরেট ধরিয়ে নিয়ে বসলাম, ফোনটা কোলে টেনে নিয়ে তুলিদের বাড়িতে ফোন লাগালাম।
আবার তুলির মা। কাকিমা তুলিকে দিন।
-তুমি ফিরে এসেছো? কেমন হোলো ট্যুর?
-ভালো এইতো খেয়েদেয়ে উঠলাম, তুলি কোথায়?
-কি খেলে এতরাতে, কে রান্না করলো? তোমার মা তো অসুস্থ।
-সে তো রান্নার লোক আছে দুবেলার।
-ও। ভালো।
- তুলিকে দিন না প্লিজ।
-তুলি। তুলি তুলি। বলে তোতলাতে শুরু করলো।
-কি হোলো?
-তুলি তো নেই?
-মানে? কোথায় গেছে ও?
- ওর বান্ধবির বিয়ে সেখানে।
-আমাকে বলেনি তো কোন বান্ধবির বিয়ে আছে? আর এই সময় তো বিয়ে হয়না। এটা তো মল মাস।
-আসলে আমি ঠিক জানিনা, সত্যি বলছি। আমাকে ফোন করে জানালো যে ফিরতে অনেক দেরি হবে চিন্তা না করতে।
-বাহঃ মেয়ে ফোন করে বলে দিলো চিন্তা না করতে তো আপনারাও চুপ করে বসে থাকুন। ভালোই চলছে। কোথায় আছে কি করছে কিছু জানেন না অথচ মেয়ে রাত বারোটা বাজে এখনো বাড়ি ফেরেনি।
-আসলে অভি আমি জানি তুমি রেগে যাবে কিন্তু তুলি তোমাকে বলতে বারন করেছে। ও আমার কথা একদম শুনছেনা। আমি ওকে বারন করেছিলাম অনেক কিন্তু আমাকে এমন এমন কথা বলছে ও আমি চুপ করে গেলাম।
- কি হয়েছে খুলে বলুন তো, এমনি তে মাথা গরম হয়ে আছে। তারপর হেয়ালি করে কিছুই খোলসা করে বলছেন না।
-তুলি একটা কাজ করছে।
-কিসের কাজ রাত বারোটা পর্যন্ত? ও কি জানেনা যে রনি এখনো জেলে, অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে...।
-এসব তুমি ওকে বোলো। আমি বলে বলে ক্লান্ত। আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি এরকম করলে তুই অভির পারমিশান নিয়ে কাজ কর, আমি কোন দায়িত্ব নিতে পারবোনা। আমাকে মুখ করে উঠেছে, বলেছে যে এখনো তোমার সাথে ওর বিয়ে হয়নি। যখন হবে তখন থেকে তোমার পারমিশান নেবে। আর জানিনা কোথা থেকে জেনেছে না বুজেছে, আমাকে এমন দুএকটা কথা বলে দিলো যে আমি চুপ করে গেলাম। সত্যি বলছি ওর মুখে মুখে আমি আর কথা বলতে চাইনা।
মনে মনে বুঝতে পারছি যে আমিই এর জন্যে দায়ি। আমিই তুলিকে রনি আর তুলির মার(মাসি) মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলেছি। কিন্তু ও যে এইভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে সেটার আমি স্বপ্নেও টের পাইনি।
-বিয়ের আগে যখন আমার কথা শুনবেই না তো আমার সাথে বিয়ে করারই বা কি দরকার আমি কি ওর পায়ে ধরেছি, না ও পৃথিবিতে শেষ মেয়ে।
-মাথা গরম কোরো না। আমি ওকে সেই ছোটবেলা থেকে চিনি। ওকে নিশ্চয় কেউ উস্কানি দিচ্ছে। ওই একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে এখন। সারাক্ষন গুটখা খায় মেয়েটা। শুনেছি মদ সিগেরেট কোন ব্যাপার না। ওই তুলিকে কাজের জন্যে নিয়ে গেছিলো।
-কি নাম মেয়েটার?
-পাপিয়া।
-ঠিক আছে। আপনি ওকে বলবেন যখনই আসুক আমাকে ফোন করতে।
- আমি বলবো কিন্তু ও করবে কিনা জানিনা।
আড়াইটা নাগাদ বহুপ্রতিক্ষিত ফোনটা এল। হ্যাঁ সানি ফোন করেছে।
এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো, “শোন অন্য একটা অফিস থেকে ফোন করছি, আমার পিছনে গোয়েন্দা লেগেছে। ওরা বুঝে গেছে যে আমি কিছু হাতিয়েছি, পিছে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। আমি এই অফিস থেকে তোমাকে ফ্যাক্স করে দিচ্ছি। পেলে কিনা জানিও। অফিসে ফোন করবে না। রাতে বাড়িতে এসো।’
‘এখান থেকে যে করছো, সেটাতে প্রবলেম হবে না?’
‘এই অফিসে কিছু পরিচিত আছে আমার। আমি মাঝে মাঝেই আসি এখানে, আড্ডা দিতে। তাই ওরা আর এখানে ঢুকে আমি কি করছি সেটা দেখার সাহস পাবেনা। কিন্তু আমার ওপরে বেশ নজর রেখেছে।’
‘ও তুমি সাবধানে থাকবে কিন্তু... আমারই খারাপ লাগছে আমার জন্যে তোমাকে এরকম সমস্যাই পড়তে হোলো।’
‘ধুর ছারোতো, সমস্যা আর কি সরকারি চাকরি আমার, অত সহজে কেউ কিছু করতে পারবে না। চুরি তো আর হাতেনাতে ধরতে পারেনি... যাই হোক তুমি দেখে নাও ঠিকঠাক এসেছে কিনা ফ্যাক্স। আমি ধরছি ...।‘
‘ক পাতা পাঠিয়েছো?’
‘চার পাতা’
‘একটু ধরো... ’
ততক্ষনে বসের হাতে চলে এসেছে ফ্যাক্সটা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘বোঝা যাচ্ছে তো, ও লাইনে আছে...’
বস শশব্যস্ত হয়ে ‘আরে তুমি, হ হ্যাঁ সব ঠিক আছে, পরিষ্কার একদম, এতো মেঘ না চাইতেই জল।’
‘আমি ওকে বলে দি, বেচারা অনেক ঝামেলা পুহিয়ে এটা করেছে।’
‘ওকে জিজ্ঞেস কোরো ওর কি চায়? এনিথিং হি ওয়ান্ট জাস্ট আস্ক থে নেম।’
‘ঠিক আছে, এখন ও লাইন ধরে আছে...।’ প্রায় হেসেই দিয়েছিলাম। সানির ডিমান্ড যদি জানতো...।
সানিকে এসে বললাম ‘সব ঠিক আছে। এখন তুমি দেখো কি করে ঝামেলা মেটাতে পারো।’
‘ও সব নিয়ে ভেবো না, বন্ধুর জন্যে এটুকু করতে পারবো না , তোমার প্রোমোশান হবে বিয়ে করবে, আমি নাচবো...’
শালা এর মধ্যে আবার ও নাচবে কেন রে? কুত্তার ল্যাজ মাইরি। এতবড় উপকার করার পরেও ওর ওপর কেমন রাগ উঠে গেলো।
হেসে ফোনটা রেখে দিলাম।
‘কেসটা দেখেছো’ বস কাগজগুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
‘টেকনিকাল কিছু কি?’
‘হ্যাঁ। প্রাইজের সু্যোগ নেওয়ার জন্যে ওরা বেশী RPM-এর মেশিন দিচ্ছে। মানে, বিয়ারিং, থেকে শুরু করে র মেটেরিয়াল সব কিছুতেই ওরা সস্তা। টেন্ডারে লেখা নেই বলে সুযোগ নিয়ে নিয়েছে।’
‘তাহলে তো ওদের কি ক্যান্সেল করতে পারবেন না।’
‘ক্যান্সেল করার দরকার নেই। এক প্ল্যাটফর্ম থেকে খেলুক না। তারপর দেখি কার কত কারিকুরি। ওরা হয় বুঝে প্রাইজিং করবে, না হয় না বুঝে। দুটোতেই আমাদের জয়। বুঝে করলে কম্পিট করতে পারবে না, না বুঝে আন্ডারকাট করলে লস করবে। আমাদের মেশিন যেহেতু চাইনিজ অরিজিন আমাদের কিন্তু বলে দিয়েছে যে চাইনিজ কোম্পানি চলবেনা। সেটা তো ইতালি থেকে ম্যানেজ করলাম। আর এখানে ওরা খেলবে সেটা আমি সহ্য করে নেবো না। তুমি রিয়াকে বলে তোমার আর আমার টিকিট করাও কালই প্ল্যান্টে গিয়ে কথা বলবো এ ব্যাপারে। দরকার হলে দিল্লী থেকে টেন্ডার ক্যান্সেল করিয়ে দেবো। আজ থেকে এ লাইনে না আমি।’
বসকে বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। গুছানোর আছে অনেক কিছু। জীবনের প্রথম এরকম গুরুত্বপুর্ন কাজ করছি, বেশ উত্তেজিত লাগছে। এটা তো নিজের জীবনের ব্যাপার, দুষমনকে অওকাত দেখানোর চ্যালেঞ্জ।
আবার পায়ে পায়ে তুলিদের বাড়িতে চলে এলাম। আর কয়েকদিন পরে ওদের কলেজ ছুটি পরে যাবে। কলেজে নাকি টিচাররা ওর সাথে কেউ কথা বলে না, হয় তো রাজু বাবুর প্রভাবে, কিংবা ও ফাংশান করবে না বলেছে বলে।
আজকেও তুলির মা দরজা খুলে দিলো। তুলি নেই, সেই বন্ধুদের সাথে ঘুরছে।
‘এরকম রোজ রোজ ঘুরতে যাচ্ছে নাকি?’
‘কি করবো বলো, বারন করলাম বললো দুদিন পরে বিয়ে হয়ে গেলে তো আর ঘুরতে পারবে না, এসব অজুহাত দেয় যখন তখন আর কি বলি। তুমি বসো না, চা খাবে তো?’
সন্দিগ্ধ চোখে তুলির মার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘শুধু চা হলে খাবো, চায়ের সাথে টা আর আজকে নয়।’
হেসে উঠলো তুলির মা “আমারও হবে না, কালকে এমন গুতিয়েছো যে রাতেই প্যাড পড়তে হয়েছে। হি হি শয়তানটা, আমি তো মনে মনে ভাবছি তুমি যদি কালকের মত এসে পরো, আর চেয়ে বসো, তাহলে আজকে কি হবে?’
‘চাইনি তো ব্যাস, কালকের জেরে আমার আজকেও গা হাতপা ব্যাথা রয়েছে।’
‘বসো বসো চা নিয়ে আসছি। যদিও আমার খুব ইচ্ছে করছে, মেয়েদের এই সময় খুব ইচ্ছে করে, বিয়ের পরে তুলিও দেখবে মিউ মিউ কেমন করে এই সময়। কিন্তু না থাক নোংরার মধ্যে ওসব মানে হয় না।’
বসে রয়েছি এমন সময় তুলিদের ফোনটা বেজে উঠলো।
তুলির মা চেচিয়ে আমাকে ধরতে বললো।
‘হ্যালো?’ সুরেলা মহিলা কন্ঠ ভেসে এলো।
‘হ্যাঁ হ্যালো?’
‘আচ্ছা মিঃ চক্রবর্তি’
‘না উনি তো নেই এখন?’
‘আপনি কে বলছেন?’
‘আ আমি উনার ছেলে বলছি’
‘ওঃ স্যার বাড়ির একজন হলেই হবে।’
‘কি ব্যাপার বলুন।’
‘একটা মারকেটিং সারভের ব্যাপারে এই ভেরিফিকেশান কলটা’
‘কিসের মার্কেটিং।’
‘আসলে আপনাদের নাম্বারটা আমাদের ফিল্ড এক্সিকিউটিভরা কালেক্ট করেছে তো সেই ব্যাপারে। আমরা ছেলেদের জন্যে শেভিং এর পুরো রেঞ্জ বের করতে চলেছি, আপনার বাবা ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে তাই ভেরিফিকেশানের জন্যে ফোন করলাম। ভেরফিকাশান সঠিক হলে আমরা আপনাদের ঠিকানায় একটা বিনামুল্যে গিফট প্যাক পাঠাবো এই স্যম্পেল প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে, যেটা একমাস চলে যাবে আপনাদের।’
‘আপনার জিজ্ঞাস্য কি?’
‘শুধু ফর্মে যা লিখেছেন সেটা ভেরিফাই করবো।’
‘কি লেখা আছে তাতো আমি জানিনা।’
‘খুব সিম্পল স্যার। আপনাদের নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, বয়েস, ফোন নাম্বার এসব’
‘ওহ তাহলে আপনি পরে ফোন করুন, বাবা কি যে করে আমি জানিনা, এগুলো বাবাই বলতে পারবেন আমি না’
‘স্যার এগুলো তো আপনি জানবেনই’
‘না আমি জানিনা আসলে উনি আমার শশুর মশাই তাও হবু’
‘ওঃ। ঠিক আছে স্যর। আমি কোন সময়ে উনাকে পাবো, আর যদি আপনার সময় থাকে তো ক্যামাক স্ট্রীটে এসে আমাদের শোরুমে ঘুরে যেতে পারেন। মেল টয়লেট্রিজের পুরো কভারেজ পাবেন।’
‘সেটা ভেবে দেখবো, এমনি কোথায় আপনাদের শো রুম?’
‘স্যর বললেই চিনতে পারবেন নতুন যে শপিং মল হয়েছে ওয়েস্টসাইড সেটার গ্রাউন্ড ফ্লোরে।’
‘আচ্ছা সময় পেলে যাবো’
ফোনটা রাখতে রাখতে হাসি পেয়ে গেলো। তুলির মা চা নিয়ে চলে এসেছে। সব খুলে বললাম, বলতে বলতে তুলির বাবার ফোম মাখা মুখটা মনে চলে এলো। তুলির মা কিন্তু কি বুঝলো কি জানি বেশ গম্ভির হয়ে গেলো।
সানির বাড়িতে আর যাইনি। ওকে ফোন করে ধন্যবাদ দিয়ে পরে কদিন যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলাম। রাতের বেলা তুলির সাথে বেশী কথা বলতে পারলাম না, আজকেও ও নানান জিনিস দেখেছে, ভবিষ্যতের জন্যে। তাতে ঘর সাজানোর জিনিসও আছে।
পরের দিন দুপুরবেলা পৌছে গেলাম প্ল্যান্টে। গেট পাশ করে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় তিনটে বেজে গেলো। প্ল্যান্টের লোক স্বীকার করে নিলো যে আমাদের যুক্তি অকাট্য। এইরকম গুরুত্বপুর্ন মেশিন, এতো বেশী RPM হলে তাতে সবসময় মেরামতির কাজ লেগেই থাকবে। নতুন করে আবার টেকনিকাল আলোচনা করে সব নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পার্টিকে ডেকে আবার আলোচনা হবে আস্বাস দিলো।
ফেরার টিকিট করিনি। তাই বাধ্য হয়ে হোটেলে থেকে গেলাম। কালকে দুপুরের ট্রেন ধরবো ঠিক করলাম। সেই সুজোগে কালকে আবার প্ল্যান্টে যাবো আমরা, সাথে আমাদের লোকাল এজেন্ট। সাইট টা ভালো করে দেখে নিলে পরিবর্তিত দর দিতে সুবিধে হবে।
বিকেলের দিকে হোটেল থেকে বেরিয়ে তুলিদের বাড়িতে ফোন করলাম। এতদুরে চলে এসেছি মনটা খুব খারাপ লাগছে। ওর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পরে আর বাইরে আসিনি।
তুলির মা ফোন ধরলো। টুকটাক কথা বলে তুলিকে দিতে বললাম।
আজকেও তুলি নেই। কি ব্যাপার ও কি রোজই এরকম ঘুরে বেরাচ্ছে?
তুলির মা কোন উত্তর দিতে পারলো না। আমার একটু বিরক্তই লাগলো। ও জানে যে আমি বাইরে এসেছি।। আমার এত মন খারাপ লাগছে আর ওর লাগছে না। রোজ রোজ ঘুরে বেরাতে চায়? অদ্ভুত মেয়ে তো।
রাতে বসের সাথে বসে মাল খেতে খেতে এসব নিয়ে অনেক চিন্তা করছি। বস নিজের মত কাজ করে চলেছে, একটা নোট বই নিয়ে বিভিন্ন জিনিস নোট করে চলেছে। মাঝে মাঝে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। আমি যথাসাধ্য উত্তর দিচ্ছি।
কিছুক্ষন পরে দেখলাম চোখ বুজে নিজের মনে কি যেন বিরবির করছে।
হঠাত করে আমাকে বলে উঠলো, “চলো দিল্লী থেকে ঘুরে আসি।”
‘এখন?’
‘আরে এখন না, আমি বলছি এই ট্রিপেই, আবার কলকাতা যাবো আবার বেরোতে হবে এর থেকে ট্যুর বারিয়ে নিয়ে এখান থেকেই চলে চলো, অফিসে গেলে নানান ঝামেলায় আবার আটকে যাবো, এর থেকে এই কেসটার শেষ পেরেক দিল্লী গিয়ে পুঁতে আসি।’
অগত্যা পরের দিন ফ্লাইট ধরে দিল্লী। ভাগ্যিস আমি এক্সট্রা জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম।
দুদিন দিল্লী থাকলাম। বিভিন্ন লোকের সাথে দেখা করে আমরা এই টেন্ডারের বিভিন্ন খুঁতগুলো তুলে ধরলাম। বেশ কাজ হোলো তাতে। দিল্লী থেকে টেকনিকাল ডিরেক্টার ডাইরেক্ট প্ল্যান্টে ফোন করলেন। প্ল্যাণ্টের লোকও আমাদের সাথে একমত দেখে, আবার আলোচনা শুরু করে নতুন করে টেকনিকাল আলোচনা শুরু করতে বললেন।
দুদিন এত ব্যস্ত ছিলাম যে রাতে ঘুম বাদ দিয়ে সারাক্ষনই কাজ করেছি। এবার ঘরে ফেরার পালা। সন্ধ্যে প্রায় সাতটা, ভাবলাম তুলিকে ফোন করে খবরটা দি। মুশকিল হবে ও যদি বায়না করে বসে দিল্লী থেকে কিছু নিয়ে যাওয়ার জন্যে। হাতে তো একদম সময় নেই। আমরা তো ডাইরেক্ট এয়ারপোর্টে চলে যাবো।
এতক্ষনে নিশ্চয় চলে এসেছে। মাকে ফোন করে খাওয়া দাওয়া বাড়িতেই করবো জানিয়ে দিলাম। তুলিদের বাড়ীতে ফোন করে বেশ মাথা গরমই হয়ে গেলো। আজকেও তুলি নেই। আমি বিরক্ত ভাবেই তুলির মাকে বললাম যে উনি কেন বলেননি আমি বার বার করে বাইরে থেকে ফোন করছি। এসটিডি তে কিরকম বিল ওঠে কি করে বুঝবে এরা। আমতা আমতা করে সে আমাকে বললো ফিরে এসে তুলির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে।
রাগে গা রি রি করছে। এরকম কি করে করে? সারাক্ষনই কি বাইরে থাকতে হয়। মা ঠিক হোলো তো মেয়ে বিগড়ে যায়। এরা সত্যি অদ্ভুত। কপালে কি আছে কে জানে। এসব চিন্তায় এয়ারবাসের যাত্রাটাই আর এঞ্জয় করতে পারলাম না।
কতক্ষনে তুলির সাথে কথা বলবো এসব নিয়ে তাই ভাবছি। কতক্ষনে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকবো।
খেয়ে দেয়ে উঠতে উঠতে প্রায় বারোটা বেজে গেলো। একটা সিগেরেট ধরিয়ে নিয়ে বসলাম, ফোনটা কোলে টেনে নিয়ে তুলিদের বাড়িতে ফোন লাগালাম।
আবার তুলির মা। কাকিমা তুলিকে দিন।
-তুমি ফিরে এসেছো? কেমন হোলো ট্যুর?
-ভালো এইতো খেয়েদেয়ে উঠলাম, তুলি কোথায়?
-কি খেলে এতরাতে, কে রান্না করলো? তোমার মা তো অসুস্থ।
-সে তো রান্নার লোক আছে দুবেলার।
-ও। ভালো।
- তুলিকে দিন না প্লিজ।
-তুলি। তুলি তুলি। বলে তোতলাতে শুরু করলো।
-কি হোলো?
-তুলি তো নেই?
-মানে? কোথায় গেছে ও?
- ওর বান্ধবির বিয়ে সেখানে।
-আমাকে বলেনি তো কোন বান্ধবির বিয়ে আছে? আর এই সময় তো বিয়ে হয়না। এটা তো মল মাস।
-আসলে আমি ঠিক জানিনা, সত্যি বলছি। আমাকে ফোন করে জানালো যে ফিরতে অনেক দেরি হবে চিন্তা না করতে।
-বাহঃ মেয়ে ফোন করে বলে দিলো চিন্তা না করতে তো আপনারাও চুপ করে বসে থাকুন। ভালোই চলছে। কোথায় আছে কি করছে কিছু জানেন না অথচ মেয়ে রাত বারোটা বাজে এখনো বাড়ি ফেরেনি।
-আসলে অভি আমি জানি তুমি রেগে যাবে কিন্তু তুলি তোমাকে বলতে বারন করেছে। ও আমার কথা একদম শুনছেনা। আমি ওকে বারন করেছিলাম অনেক কিন্তু আমাকে এমন এমন কথা বলছে ও আমি চুপ করে গেলাম।
- কি হয়েছে খুলে বলুন তো, এমনি তে মাথা গরম হয়ে আছে। তারপর হেয়ালি করে কিছুই খোলসা করে বলছেন না।
-তুলি একটা কাজ করছে।
-কিসের কাজ রাত বারোটা পর্যন্ত? ও কি জানেনা যে রনি এখনো জেলে, অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে...।
-এসব তুমি ওকে বোলো। আমি বলে বলে ক্লান্ত। আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি এরকম করলে তুই অভির পারমিশান নিয়ে কাজ কর, আমি কোন দায়িত্ব নিতে পারবোনা। আমাকে মুখ করে উঠেছে, বলেছে যে এখনো তোমার সাথে ওর বিয়ে হয়নি। যখন হবে তখন থেকে তোমার পারমিশান নেবে। আর জানিনা কোথা থেকে জেনেছে না বুজেছে, আমাকে এমন দুএকটা কথা বলে দিলো যে আমি চুপ করে গেলাম। সত্যি বলছি ওর মুখে মুখে আমি আর কথা বলতে চাইনা।
মনে মনে বুঝতে পারছি যে আমিই এর জন্যে দায়ি। আমিই তুলিকে রনি আর তুলির মার(মাসি) মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলেছি। কিন্তু ও যে এইভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে সেটার আমি স্বপ্নেও টের পাইনি।
-বিয়ের আগে যখন আমার কথা শুনবেই না তো আমার সাথে বিয়ে করারই বা কি দরকার আমি কি ওর পায়ে ধরেছি, না ও পৃথিবিতে শেষ মেয়ে।
-মাথা গরম কোরো না। আমি ওকে সেই ছোটবেলা থেকে চিনি। ওকে নিশ্চয় কেউ উস্কানি দিচ্ছে। ওই একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে এখন। সারাক্ষন গুটখা খায় মেয়েটা। শুনেছি মদ সিগেরেট কোন ব্যাপার না। ওই তুলিকে কাজের জন্যে নিয়ে গেছিলো।
-কি নাম মেয়েটার?
-পাপিয়া।
-ঠিক আছে। আপনি ওকে বলবেন যখনই আসুক আমাকে ফোন করতে।
- আমি বলবো কিন্তু ও করবে কিনা জানিনা।