(৫৩)
সন্ধ্যা ৬টা বাজছে।থানা থেকে আমি মিম আর শাশুড়ি বের হলাম। দুই কুলাংগারের নামে জিডি করলাম। সেবহান আংকেল ছিলেন সাথে। শ্বশুরের বিশ্বস্ত কলিগ। উনি সব শুনার পর কেসের সমস্ত দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। বলেছেন, ঐ দুই কুলাংগারকে আজীবন জেলের ভাত খাওয়ার দায়িত্ব আমার।
আমার বিশ্বাস তাদের শাস্তি যাবত জীবন কারাদণ্ডই হবে। কারণ Human Trafficking Deterrence and Suppression Act, ২০১২ অনুযায়ী, যৌন শোষণের উদ্দেশ্যে trafficking বা forced prostitution-এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে (বিশেষ করে গুরুতর ক্ষেত্রে)। সেখানে মিমের সাথে ঘটা সব ডকুমেন্ট পুলিশকে দিয়েছি। তারা সব জানার পর কথা দিয়েছে, ২৪ ঘন্ঠার মধ্যে তাদের হাজতে দেখবে।
সেবহান আংকেলের উপর বিশ্বাস আছে। আসামি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জেলে যাবে। বিশ্বাস আছে বলেই শাশুড়ি উনার কাছেই এসেছেন। আমি প্রথমে নাদিমের কথা বলছিলাম---নাদিমের এক ভাই রমনা থানাই থাকেন।
শাশুড়ি তার মেয়ের সবকিছু শোনার পর সেবহান আংকেলের কাছেই আসেন।
দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত শাশুড়ি কোনো কথা বলেন নি। এমন কি সবাই চুপ। সকালে যখন মিম পরিক্ষার নামে বের হলো, তখনি মামুন ভাইকে একটা মেসেজ দিলাম----ভাইয়া, আমার আম্মা অসুস্থ্য। মেডিক্যাল নিয়ে যাচ্ছি। মিটিং এটেন্ড করতে একটু লেট হতে পারে।
মেসেজ দিয়েই শাশুডির রুমে।
“আম্মা জলদি বের হন। একটু বাইরে যেতে হবে। কাজ আছে।”
উনি কৌতুহলবসত জানতে চাইলেও কিছুই বলিনি তখন। দুজনেই বাইকে মিমের রিক্সার পেছন পেছন ছুটেছিলাম।
কলেজের অপজিটে, দুই তলা একটা বাড়ি,মিম সেখানেই রিক্সা থেকে নেমে ঐ বাড়িতেই প্রবেশ করে। আমি দুর থেকে যাস্ট একটা ছবি তুলে বাসাই এসে শাশুড়িকে সব কিছু বলি। ছবি দেখতে চাইলে সেটাও দেখাই।
শাশুড়ি সবকিছু জানার পর বলেন— “মিমের পরিক্ষা দেওয়া লাগবেনা। ওকে বাসাই ফোন করে ডেকে নাও। ওর আর পড়াশোনা দরকার নাই।”
আমি উনাকে শান্তনা দিয়ে জানতে চাই, কি করা উচিত তাই বলেন। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, থানা যাবে। মিম ট্রাপে। ট্রাপ থেকে বাচানো উচিত।
মিমের বাড়ি আসা অবধি অপেক্ষা করি আমরা। দুজনেই পুরো সময় চুপ ছিলাম। আমি একটু কাজে বসার চেস্টা করেছিলাম। মাথায় কিছুই কাজ করেনি। বোধায় প্রোজেক্ট নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে পারবোনা।
১২টা পর মিম আসলো। কোনো কথা ছারাই শাশুড়ির তাকে প্রশ্ন: পরিক্ষার নাম করে প্রতিদিন সকালে কই যাস?
মিমের চেহারা দেখে বিধ্বস্ত লাগছে। আজ মিমকে ওই বাড়িতে দেখেও রেখে আসা ঠিক হয়নি। বোকামিই হয়েছে। এতোদিন জানতাম না আলাদা কথা, এখন তো জানি!
মিম যখন বুঝতে পারে আমি আর আম্মা সব জেনে গেছি তখন কান্নাই ভেঙ্গে পরে। হাইরে কান্না। বাপ মরা কান্না। আমাকে জোরিয়ে ধরে বলে, “আমাকে তোমরা বাচাও। আমি বড় ট্রাপে পড়ে গেছি। আজ ১০দিন থেকে ঐ জানুয়ার ব্লাকমেইল করছে। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে।”
দুপুরের ভাত কেউ খাইনি। তখনি শাশুড়ি সেবহান আংকেলকে ফোন দিয়ে বলেন, “ভাইসাব আমরা বড়ই বিপদে পড়েছি। আপনার কাছে আসছি।”
বাসা থেকে বের হতে যাবো, দেখি ফাউজিয়া আর নাদিম রিক্সাতে। শাশুড়ি তাদের হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বলেন, “মা তোমরা থাকো, আমরা একটু জরুরি কাজে বাইরে যাবো। দুপুরে তোমরা খেয়ে নিও। আমরা চলে আসবো।”
শাশুড়ি সেই যে কথা বলেছেন। আর মুখ খুলেন নি।
থানাই এসে সেবহান আংকেলকে আমিই সব বলি। চ্যাট হিস্ট্রি দেখাই। ছবি দেখাই। ছবি দেখার পর আংকেলের এক্সপ্রেশন ছিলো এমন— “শুয়োরের বাচ্চা দুইটা দুনিয়ার যেখানেই থাকুক, তাদের দুজনকেই শেষ করে ছারবো।”
বাইকে ৩জনেই আসছি বাড়ি। মাঝ পথে শাশুড়ি বললেন, “বেটা একটু বাইকটা থামাও।দোকান থেকে একটু পানি এনে দাও জলদি।”
একেতে না খাওয়া, তার উপর দৌড়ঝাপ, ভমিটিং করে ঘায়েল হয়ে গেলেন। মিম তার মাকে জোরিয়ে ধরে আছে।
আমি বললাম, গাড়িতে উঠেন, আর বেশিক্ষণ লাগবেনা।
শেষমেস বাড়িতে আসি। ফাউজিয়া দরজা খুলে দেই।
শাশুড়িকে মিম তার রুমে নিয়ে যাই। আমি বললাম, আম্মাকে একটু গোসল করিয়ে দাও।
মা বেটি রুমে চলে গেলো। আমি ডাইনিং চেয়ারেই বসে পড়লাম। শরীর আর চলেনা।
পাশে ফাউজি দাঁড়িয়ে। সে সবকিছু দেখে হতভম্ব।
“ফাউজি, একটু পানি দাও তো।”
ফাউজিয়া পানি এনে দিলে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলি।
“রাব্বীল, কি হয়েছে গো?”
“আমার শ্বশুরের এক কলিগ মারা গেছিলো। ঐ দেখতে গেছিলাম।”
“অহ। আমি তো টেনশান করতে করতে শেষ।”
“খেয়েছো তোমরা?”
“হ্যা।”
“নাদিম কই?”
“ওর নাকি কাজ আছে। খেয়েই চলে গেছে।”
হ্যা, এটা সত্য। খেয়েই চলে গেছে। খাওয়া হলে কেউ আর থাকে!
“খাওয়েই পাঠাই দিলে? খাওয়ানোর পর একটু রেস্ট করতে দিতে হয়।”
“বদমাইস। মাথাই শুধু ওইসব ই ঘুরে?”
দুজনের মুখে মুচকি হাসি। হাসির ধরন বলে দিচ্ছে, আজ চরমতম আনন্দ পেয়েছে ফাউজি।
“খাবার সব খাওয়ে দিলে নাকি এই অনাহারের জন্য অল্পকিছু রাখলে?”
“নাহ। রাখিনি। নিজের ঘরে প্রচুর খাবার আছে, তাই খাবেন মিস্টার। খালি খালি সয়তানি।” বলেই ফাউজি আমার মাথায় চট করে একটা দিয়ে রুমে চলে গেলো। পেছন থেকে ডাক দিলাম।
“ফাউজি, শুনো?”
ফাউজিয়া ঘুরে দাড়ালো।
“যাও, আম্মার রুমে গিয়ে দেখো, কি অবস্থা আম্মার এখন। কোনো অসুধ লাগবে কিনা বলো। আমি গোসলে গেলাম।”
“আচ্ছা যাচ্ছি।”
আমার দুনিয়া
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
*******************************



![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)