Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery চল যাই সাজেক ভ্যালি
#4
(২)

খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রাহাতদের বাস শ্যামলী থেকে রাত ১০টায় ছেড়ে গেল। খাগড়াছড়িতে ভোর বেলায় ওদের পৌছতে হবে। সেখানে আর্মি চেক পোস্ট থেকে অনুমতি নিয়ে তারপর রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করতে পারবে। এটাই সাজেকে যাওয়ার নিয়ম। 


বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে স্টেশনে পৌছে গিয়েছিলো সবাই। সুলতানাকে দেখে প্রথম ধাপে রাহাতের বন্ধুরা বিনয়ে বেশ গদগদ হয়ে সালাম বিনিময় করলো। বিশেষত তন্বী বারবার আন্টি আন্টি ডেকে দ্রুত সুলতানার সঙ্গে খাতির জমিয়ে ফেললো। অন্যদিকে রাহাত আঢ় চোখে অন্তর এবং সালমানের চেহারা দেখে ওদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করছিলো। অন্তরকে একটু নার্ভাস লাগলেও সালমান বরাবরের মতই চিল মুডে কথা বলছিলো। 

বাসে অন্তর ইশারায় তন্বীকে নিজের পাশে বসতে বলে। কিন্তু ওকে ফাঁকি দিয়ে সুলতানার পাশে বসে পড়ে তন্বী। ফলে বাধ্য হয়েই অন্তর এবং সালমানকে একসাথে বসতে হয় । রাহাত ওর মায়ের দিকের পেছনের সারিতে আইলের দিকের সিটে বসে। রাহাতের সামনের সিটে তন্বী, তার পাশে জানালার কাছের সিটে ওর মা সুলতানা। তন্বীর অন্য পাশের সারির আইলের দিকের সিটে অন্তর বসেছে, তার পাশে জানালার দিকের সিটে বসেছে সালমান। অর্থাৎ মাঝখানের যাওয়া আসার পথটাই অন্তর ও তন্বীর মাঝে বিভেদ তৈরি করে দিয়েছে। যেন কাছে থেকেও কত দূরে। অন্তরের করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি পেল রাহাতের। 

খাগড়াছড়ি পৌছাতে ভোর হয়ে যাবে। চিটাগং হাইওয়েতে ওঠার পর বাসের ভেতরের সব লাইট বন্ধ করে দিলো যাতে সবাই ঘুমিয়ে নিতে পারে। এমনিতেই শীতকাল। তার উপরে বাসের গতির কারণে বেশ একটা আরামদায়ক ঘুম পেয়ে গেল রাহাতের। 

চলন্ত বাসের ভেতরে যতই ঘুম পাক, আসলে কখনই বাড়র অতো গাঢ় ঘুম হয় না। মাঝরাতে রাহাতের ঘুম ভেঙ্গে যায়। একরকম আধো ঘুম আধো জাগরণ অবস্থায় কম্বলের নীচ থেকে মাথা তুলে চারপাশ দেখার চেষ্টা করলো সে। বাসের উইন্ডশিল্ড ভেদ করে আসা হাইওয়ের বেশ আলো অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কিছুটা অন্ধকার সয়ে আসলে রাহাতের মনে হলো ওর সামনের সারির সিটে হালকা নড়াচড়ার শব্দ টের পাচ্ছে। অন্তরের সিটে তাকিয়ে দেখলো ঐ বেচারা সম্পূর্ণ কম্বল মুড়িয়ে সিটের একদিকে কাত হয়ে আছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হলো কম্বলের নীচে একটু নাড়াচাড়াও দেখা যাচ্ছে। তবে রাহাত এসবকে পাত্তা দিলো না। আবারো ঘুমিয়ে পড়লো সে। একবারে খাগড়াছড়ি চেক পোস্টে পৌছে ঘুম ভাঙ্গলো ওর। ফর্মালিটিস সেরে সকাল ৮টায় চান্দের গাড়িতে করে সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো ওদের দলটি। চান্দের গাড়ির ড্রাইভারের পাশে বসলো রাহাত। পেছনের ছোট্ট জানালা দিয়ে দেখতে পেল ওর মা সুলতানা, তন্বী, অন্তর ও সালমান গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে খুব উল্লাস করছে। কেউ সিটে বসে নেই। সুলতানাও যেন ওদের সমবয়সী হয়ে উঠেছেন।

ওদের চান্দের গাড়ি সাজেকে প্রবেশ করলো বেলা ১২টায়। ব্যাগ পত্তর নিয়ে আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেলে উঠে গেল সবাই। ওদের হোটেলটা পুরোটাই কাঠের তৈরি দোতলা একটি বাড়ি। ওপর তলায় তিনটি এবং নীচ তলায় ২টি রুম ও একটি ডাইনিং। ওপরের তিনটি ও নীচের একটি রুম বুক করা হয়েছে। প্লান ছিলো নীচ তলায় এক রুমে সুলতানা থাকবে। আর উপরের রুমে এক রুমে তন্বী, এক রুমে অন্তর ও অন্য রুমে সালমান ও রাহাত থাকবে। আসলে অন্তর তন্বীর সঙ্গে ডাবল বেডের একটি রুমই নিতে চেয়েছিলো। সুলতানা থাকায় চক্ষু লজ্জায় পড়ে সেটা আর করতে পারেনি। রাহাতকে কানেকানে বলেছিলো তন্বীর ঠিক পাশের রুমটা ওকে দিতে। যাতে সহযে যাতায়াত করতে পারে।

কিন্তু গোল বাঁধালো তন্বী নিজেই। চেক ইন করার পর সে বললো, 'আমি আর আন্টি দোতলায় এক রুমে উঠি। বাকীরা যে যার ইচ্ছেমত রুম নিয়ে নাও।' অন্তর মাথায় হাত দিয়ে বসলো। তবে সুলতানা ঠিকই দোতলায় তন্বীর রুমে উঠে গেল। রাহাত চলে গেল নীচতলায়। দোতলায় বাকী দুই রুমে একটাতে অন্তর, অন্যটাতে সালমান। 

ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো ওদের হোটেলটা একেবারে পাহাড়ের কিনারায়। ব্যালকনিটা পাহাড়ের কিনারার বাইরে ঝুলন্ত। তিন রুমের জন্য কমন ব্যালকনি, অর্থাৎ চাইলে ব্যালকনি দিয়ে হেঁটে অন্য রুমের সামনে যাওয়া যায়। তিন রুমের জন্য তিনটা টয়লেট হলেও শাওয়ার মাত্র দুটো। একটা ছেলেদের একটা মেয়েদের। মাঝে কেবল একটা বাঁশের বেড়ার পার্টিশন দেওয়া। 

হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওরা দুপুরের খাবারের জন্য বেরিয়ে পড়লো। একটা স্থানীয় হোটেলে সাদা ভাতের সঙ্গে দারুন সব মাছ ও সব্জির রেসিপি খেল পেট ভরে। তারপর পাঁড়ায় হাঁটতে বের হলো। সাজেকের রাস্তায় হাঁটাহাটি করাটাও একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা। হাঁটতে হাঁটতে অন্তর ও তন্বী চিরায়ত প্রেমিক প্রেমিকার মতো বাকীদের থেকে দূরে সরে গেল। সুলতানা কিছুক্ষণ একা একা হাঁটলো। এরপর সালমান এগিয়ে গেল তাকে সঙ্গ দিতে। সবার পেছনে বুকে ক্যামেরা ঝুলিয়ে হাঁটতে লাগলো রাহাত। মাঝে মাঝে হাঁটা থামিয়ে দূর দূর পাহাড়ি বনের ছবি তুলতে লাগলো সে। সাজেকের অপরূপ প্রকৃতি ওকে মুগ্ধ করলো। এই মুগ্ধতার আবেশে কতক্ষণ যে ডুবে ছিলো রাহাত জানে না। যখন সম্বিৎ ফিরলো, দেখলো তন্বী-অন্তর বা সুলতানা-সালমান কেউই ওর ধারে কাছে নেই। কোথাও ওদের দেখতে পাচ্ছে না সে। সে কি! ওরা সব গেল কোথায়। বিভ্রান্ত রাহাত সামনে হাঁটতে হাঁটতে হেলিকপ্টার প্যাড পার হয়ে আরো সামনে চলে গেল। ওদিকে কংলাক পাহাড়ের রাস্তা। ওরা এত দ্রুত পাহাড়ে চলে গেল ওকে ফেলে! রাহাত মাথা চুলকাতে লাগলো। মনে হয় না! হয়তো আশাপাশেই আছে। অগত্যা পেছনে ফিরে এলো সে। নিজের মত বাজারের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে ছবি তুলতে লাগলো দৃষ্টিনন্দন কটেজের, পাহাড়ি জনমানুষের। শীতের কুয়াশা চাঁদরের মত ঢেকে রেখেছে চারিদিকের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি বনভূমিকে। একজন ওকে বললো আকাশ পরিষ্কার থাকলে মেঘালয়ের পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়।

ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেল। তখনো কারোর দেখা নেই। রাহাত ভাবলো ওরা হয়তো হোটেলেই ফিরে গেছে। সবাই হয়তো টায়ার্ড। সে নিজেও অনেক টায়ার্ড। হোটেলে ফিরেও কাউকে দেখতে পেলো না সে। সাজেকে কারোর মোবাইল সিম কাজ করে না। নিজের রুমে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেল না।

(চলবে)
[+] 7 users Like শূন্যপুরাণ's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চল যাই সাজেক ভ্যালি - by শূন্যপুরাণ - 12-12-2025, 03:27 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)