Thread Rating:
  • 3 Vote(s) - 1.67 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller মানিকজোড় - তমালের গোয়েন্দা গল্প
#14
কুন্তলা বললো, সে কি? তোমার কাজ শেষ হয়ে গেছে? 

তমাল মৃদু হেসে বললো, আর কিছুক্ষণের ভিতরে হয়ে যাবে। কুন্তলা বললো, কাজ শেষ হলেও বুঝি থাকা যায় না? আমরা কি যত্ন আত্তি করতে পারিনি যে এভাবে চলে যাচ্ছো? 
তমাল বললো, ছি ছি এ কি বলছো কুন্তলা? শালিনীকে জিগ্যেস করো কলকাতায়  কতগুলো জরুরি কাজ ফেলে এসেছিলাম। সেগুলো তো আর ফেলে রাখা যায় না? 
শালিনী বললো, হ্যাঁ কুন্তলাদি। খুব জরুরি কিছু কাজ আছে ওখানে। 
কুন্তলা বললো, বেশ তাহলে আটকাবো না। তবে কথা দাও কাজের চাপ কমলে শালিনীকে নিয়ে আবার আসবে? 
তমাল বললো, আসবো। কথা দিলাম।
ভূপেন বাবুকে বলে তমাল নীচের হল ঘরটায় আরও বেশ কয়েকটা চেয়ার আনিয়ে রাখলো। তমাল,শালিনী, কুন্তলা, কুহেলি, টুসি আর ভূপেন বাবু সবাই হল ঘরে হাজির। কিছুক্ষণের ভিতরে শিপ্রাও এসে পড়লো। তমাল কিছু বলছে না দেখে সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না।
একটু পরেই ঢুকলো সমরবাবু। তমাল বললো, আসুন আপনাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম। রতন আর ইন্সপেক্টর বোস কোথায়?
 সমরবাবু বললো, আসছে ওরা। 
তমাল বললো, আপনি ওই চেয়ারটায় বসুন। 
তখনই বাইরে পুলিশের জিপের আওয়াজ পাওয়া গেল। রতনকে নিয়ে ঢুকলেন ইন্সপেক্টর বোস। 
তমাল বললো, গুড মর্নিং মিঃ বোস। আসুন বসুন। 
এমন সময় চিৎকার করে উঠলো রতন। এ কি ধরনের অসভ্যতা তমালদা? আমি তো বলেই ছিলাম যে আমি গ্রামে চলে যাবো। তাহলে পুলিশ ধরলো কেন আমাকে? 
তমাল বললো, আস্তে রতন আস্তে! তুমি চলে যাবে বলেছিলে, কিন্তু মাঝরাতে চুপি চুপি চলে যাবে, এমন তো কথা ছিল না? আর তোমার ভালোর জন্যেই তোমাকে পুলিশ ধরেছে। এত রাতে একটা অসুস্থ মানুষের রাস্তায় বেরোনো কি ঠিক? বলো? 
রতন গোঁয়ারের এর মতো মুখ গুঁজে নাক দিয়ে ঘোঁৎ করে একটা আওয়াজ করে চুপ করে গেল। তমাল বললো, সবাই এসে গেছে  এবার শুরু করি?
বলতে শুরু করলো তমাল- 
শিপ্ৰার ই-মেল পেয়ে এখানে আসি আমি। কিছু অ্যাডভেঞ্চারাস কান্ডকারখানা হচ্ছে এ বাড়িতে। সাধারণ দৃষ্টিতে যে কেউ ভাববে এটা ভূতুড়ে ব্যাপার। কিন্তু একটু ভাবলেই বোঝা যায় ভূতের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। বারবার তাকে শোনা যায় বা দেখা যায় একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। এর কারণ কি? 
প্রথমই খট্‌কা লাগে সন্ধে বেলা লনের টিউব লাইট গুলো জ্বলে না। ইলেক্ট্রিশিয়ান বলছে ভোল্টেজ ড্রপ। হ্যাঁ মানছি ভোল্টেজ ড্রপ করলে টিউব নাও জ্বলতে পারে। তবে একটা বাড়ির একটাই মেইন লাইনের ভোল্টেজ ড্রপ হবে অথচ মেইন বিল্ডিংয়ের টিউব জ্বলবে, কিন্তু জ্বলবে না শুধু সেই সব জায়গার টিউব লাইট, যেখানে ভূত এর আনাগোনা হয়, এটা কেমন কথা? 
এর অর্থ হল ভূত চায় না টিউব লাইটের জোরালো আলোর নিচে আসতে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম কেউ বা কারা চাইছে বাড়ির লোকদের আতঙ্কিত করে বাড়ি ছাড়া করতে, যাতে বিশেষ কোনো কার্যসিদ্ধি করা যায়। পরে এ বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করার পর বুঝলাম ভূতের লক্ষ্য হল কুহেলির ঘরটা।
একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো তমাল- 
কিন্তু শুধু কুহেলির ঘরটা কেন? কি আছে সে ঘরে? কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। এবার আসি কয়েকটা আপাত অপ্রাসঙ্গিক কথায়। বাড়ির বেশ কয়েকজনের বিচিত্র ব্যবহার আমাকে অবাক করেছিলো। তার ভিতরে একজন হলেন সমরবাবু। উনি ভূতের ভয়ে এ বাড়ি ছেড়ে পালাবার মতলব করছেন, অথচ রাত দুপুরে একা একা ঘুরে ঘুরে বাড়ির মেয়েদের জানালায় উঁকি মারেন। 
সমরবাবু, আপনার উপর ভরসা করে ইন্দ্রনীল তার স্ত্রী এবং বোন কে রেখে বাইরে চাকরি করতে গেছে। আপনার কাছে এই ব্যবহার আশাই করা যায় না। আর আপনার এ বাড়ি ছেড়ে পালাবার মতলবটা আর কেউ না জানলেও আমি জেনে গেছি। সেটা ভূত নয়, সেটা আপনার রক্ষিতা। 
যাক্‌ সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর আপনার মেয়েদের ঘরে লুকিয়ে উঁকি মারার নিন্দনীয় কাজটার কথা জানার পরে আপনাকে আর এই বাড়িতে রাখা সমীচীন কি না সেটা ইন্দ্রনীল আর কুন্তলা ঠিক করবে। সমরবাবু মুখ নিচু করে চুপ করে বসে রইলো। 
তমাল বলে চললো -
তবে আপনার ওই বিকৃত মনস্ক কাজের জন্য লনের টিউব লাইট না জ্বলাটা বেশ খাপে খাপে মিলে যায়, এরকম ধারণাই আমার প্রথমে হয়েছিল।
আমি ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিস থেকে জেনে এসেছি এই অঞ্চলে কোনো ভোল্টেজ প্রবলেম নেই। তাহলে টিউব জ্বলে না কেন? আবিষ্কার করলাম কাল সন্ধ্যায়। স্টোররুমের ভিতর থেকে লনের কানেকশন গেছে সেখানে কেউ একজন একটা ছোট্ট কারসাজি করে রেখেছিলো। বাগানের আর লনের আলাদা লাইনে একটা প্লাগপয়েন্ট বসিয়েছে। একটা তার দিয়ে ডিরেক্ট করা একটা প্লাগ যা পয়েন্টে গুঁজে দিলেই টিউব জ্বলে খুলে নিলে কানেকশন কেটে যায়। কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। স্যুইচ বোর্ডের অন্যান্য প্লাগপয়েন্টের ভিড়ে মিলেমিশে আছে বিশেষ পয়েন্টটা।
 কাল সন্ধ্যায় আমি ওটা জুড়ে দিয়েছিলাম, তাই কাল ভূত টিউব অফ করতে পারেনি। আর টিউব অফ না করতে পেরে বুঝে গেছে যে এই বাড়িতে তার আর থাকাটা নিরাপদ নয়, পালানোই ভালো। কিন্তু কে এই কারসাজি করতে পারে? যে করেছে তার ইলেক্ট্রিসিটি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
এবারে আসি ভূতের আর একটা প্রিয় জিনিসে। রক্ত! রক্ত এমন একটা জিনিস যা সাধারণ মানুষের মনকে দুর্বল করে দেয়। মনের উপর প্রভাব ফেলতে রক্তের জুড়ি নেই। বেশিরভাগ মানুষ অল্প রক্ত দেখলেই ঘাবড়ে যায়, হতবুদ্ধি হয়ে পরে। কাউকে আতঙ্কিত করতে রক্ত হলো একটা দারুণ উপাদান। ভূত সেটা জানে। আর প্রচুর রক্তও ব্যবহার করেছে সে এই কাজে। 
প্রথম দিন এসেই আমি রক্তটা অ্যানালাইসিস করতে পাঠিয়েছিলাম। মানুষের নয়, প্রত্যেক বার মুরগির রক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এত মুরগির রক্ত জোগাড় করার একটাই উপায়। কারো মুরগির মাংসের দোকান থাকা অথবা মুরগির দোকানের মালিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকা। সেটাও কার আছে পরে জেনেছি খোঁজ করে।
এবারে আসি ভূতের সবচাইতে মোক্ষম অস্ত্রটার কথায়। সেই ভয়ংকর আগুন উগড়ানো মুখ। সেটার ব্যাপারে পরে বলছি। এই বাড়িতে আসার পরে সবাই আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে ঘটনাগুলো আসলেই কোনো অতৃপ্ত আত্মার কাজ। একমাত্র রতনই সেটা মানেনি। সে সম্পূর্ণ যুক্তি সম্মত কথা বলেছে বার বার। এবং সেই একমাত্র আমার তদন্তে লাগতে পারে এমন সূত্র দিয়েছিলো। পরে আমি চেক করে দেখেছি সব গুলো সূত্রই। 
মোট কথা এই কেসটায় এতগুলো সম্ভাবনা ছিলো যে আমি পাজলড্‌ হয়ে গেছিলাম। কিছুতেই ঠিক দিকে যেতে পারছিলাম না।
ঠিক তখনি ঘটনাটা ঘটলো। লনের পিছন দিকের গয়নার দোকানে চুরি হলো। তিরিশ লাখ টাকার গয়না আর জেম স্টোন চুরি গেলো। মুহূর্তের মধ্যে আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। একটা একটা করে সব গুলো প্রশ্নের উত্তর মিলে যেতে লাগলো। গয়নার দোকানটা ঠিক কুহেলির ঘরের উল্টো দিকে। চোর যদি চুরি করতে চায় সে মধ্য রাতের পরের সময়টাই বেছে নেবে এটাই স্বাভাবিক। রাত দুটো থেকে তিনটের  ভিতরে, যখন পুলিশ বা পাহারাদাররা টহল দিতে দিতে একটু ক্লান্ত হয়ে পরে। 
কিন্তু কুহেলি রোজ রাত তিনটে চারটে পর্যন্ত কম্পিউটারে চ্যাটিং করে, আর ঘরের লাইট জ্বেলে রাখে। চোরের কাছে এটা একটা মাথা ব্যথার কারণ। সেই জন্যই সে কুহেলি কে ভয় দেখাতে শুরু করলো। কখনো ছাদে ঠক্‌ ঠক্‌ করে, কখনো জানালায় ঠক্‌ ঠক্‌ করে, কখনো শুকোতে দেওয়া কামিযে রক্ত লাগিয়ে, কখনো বেসিনের ট্যাপ লাইনে রক্ত ভরে। অথবা সেই বিভৎস আগুনে মুখ দেখিয়ে। যাতে কুহেলি ভয় পেয় জানালা বন্ধ রাখে অথবা অন্য কোনো ঘরে চলে যায়। তাহলে চোর যখন কু-কীর্তিটা করতে যাবে বা করবে বা করে ফিরবে, তখন কেউ দেখে ফেলার চান্স থাকবে না।
চোরের উদ্দেশ্য প্রায় সফল হতেই যাচ্ছিলো, কিন্তু গণ্ডগোল হয়ে গেলো যখন আমাকে এ বাড়িতে ডেকে আনা হলো। কয়েকজন মেয়েকে ভূতের ভয় পাওয়ানো সোজা কিন্তু একজন পুরুষ, সে যদি আবার গোয়েন্দা হয়, কাজটা সহজ হয় না। তবুও চোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলো। কায়দাটা একটু বদলে নিলো শুধু। ভয় দেখানোর সঙ্গে কনফিউজ করতে শুরু করলো। যাতে চুরিটা করে সরে পড়া পর্যন্ত আমাকে কনফিউজড করে রাখা যায়। তাহলে প্রশ্ন হলো চোর কে বা কারা? তারা কি বাইরের কেউ? নাকি এ বাড়িরই কেউ?
রাস্তার একটা দোকানে চুরি হবে, আর পাশের একটা বাড়িতে ভয় দেখাতে হবে। এই অবস্থায় বাইরের কারো পক্ষে বাড়ির ভিতরে ঢুকে এতো কাণ্ড ঘটানো সম্ভবই না। যদি না চোর বাড়িরই কেউ হয়। 
চোর যে এ বাড়িরই কেউ সেটা বুঝলাম চুরিটা হওয়ার পরেই। তার আগে রতনের দেওয়া সূত্রগুলোই মাথায় ঘুরছিলো। প্রথম যে জিনিসটা আমাকে কনফিউজড করেছিলো তা হলো কনডম। জানালায় যে রাতে ভূত রক্ত মাখিয়ে দিলো তার পরদিন রতন জানালা পরিষ্কার করতে গিয়ে কুহেলির জানালার নিচে কনডম পেলো। আমাকে সেটা দেখালো। আমার সন্দেহ হলো কুহেলির কোনো গোপন প্রেমিক আছে। সে রাতে আসে কুহেলির ঘরে। আর তারা দু'জনে মিলে কোনো ষড়যন্ত্র করছে হয়তো। হতে পারে সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার। এই রকম প্রচুর ঘটে। তদন্তে কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু ভুলটা ভাঙলো কনডমটা পরীক্ষা করার পর। সরি কুহেলি, তোমাকে সন্দেহ করার জন্য। 
কুহেলির মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তার পরেই ফুটে উঠলো রাগ। আগুন ঝরা চোখে সে তাকালো রতনের দিকে। 
তমাল বলে চললো- 
কনডমটা পরীক্ষা করে দেখলাম তার ভিতরে আর টিপেও রক্ত লেগে আছে। যদি কনডমটা আগে থেকেই কার্নিশে পড়ে থাকতো আর রক্ত তার উপর এসে পড়তো তাহলে কনডমের একদম ভিতর পর্যন্ত রক্ত ঢুকতো না। আরও একটা ব্যাপার, কনডমটা ছিলো ফাটা। কুহেলি আর তার কাল্পনিক গোপন প্রমিকের ব্যবহার করা কনডম হলে ফাটা হবার চান্স প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। তাহলে এর একটাই মানে দাঁড়ায়, কনডমে রক্ত ভরে সেটা জানালায় ছুঁড়ে মারা হয়েছিলো।
কিন্তু এই বাড়িতে কনডম কে কে ইউজ করে? নাকি কনডমটা কিনে আনা হয়েছিলো? যদি কিনে আনা হতো, আমার কাজ সহজ হয়ে যেতো। কিন্তু যখন খোঁজ করে দেখলাম যে একমাত্র কুহেলি ছাড়া সবার ঘরেই কনডম আছে আবার কনফিউজড হয়ে গেলাম। কুন্তলা বিবাহিত তার ঘরে থাকতেই পারে। এ ছাড়াও সমরবাবুর ঘরে আছে তার গোপন অভিসারে যাবার জন্য। রতন আর টুসির কাছেও আছে, তারাও ব্যবহার করে নিয়মিত, তাই না? দু'জনই চকিতে মুখ তুলে তমালের দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে নিলো। তমাল বললো, লুকিয়ে লাভ নেই। তোমাদের গোপন অভিসার  আমি স্বচক্ষে দেখেছি।
রতন আরও কয়েকটা সূত্র দিয়েছিলো। যেমন তার প্রোমোটার মালিকের এই বাড়ির উপর লোভ আছে। সে ইন্দ্রনীলকে বাড়ি বিক্রির অফারও দিয়েছিলো। ইন্দ্র রাজি হয়নি। আমি প্রোমোটারের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেন যে তিনি অফার দিয়েছিলেন আর ইন্দ্রও না করেননি। ভেবে দেখবে বলেছে। সে ক্ষেত্রে তার ভয় দেখানোর কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।
তার দেওয়া পরের সূত্রটা ছিলো, একটা ছেলেকে কুহেলি চড় মেরেছিলো। তার বাবাও প্রমোটার। সে বদলা নেবার জন্য প্লাম্বার দিয়ে পাইপে রক্ত ঢোকাতে পারে বা ভয়ও দেখাতে পারে। সেখানেও আমি খবর নিয়েছি। সেই ছেলে এখন বিদেশে থাকে। পড়াশুনা করতে চলে গেছে বাইরে। সুতরাং এটাও টিকলো না। 
 আস্তে আস্তে আমার সন্দেহ রতনের উপর বাড়তে লাগলো। রতন একটা কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে লেবারের কাজ করে। নিজেই বলেছে যে সে সর্বঘটে কাঁঠালি কলা অর্থাৎ সব কাজই জানে। ইলেক্ট্রিকের কাজ জানে, প্লাম্বিংয়ের কাজ করে দিতে পারে, ইনফ্যাক্ট কিভাবে ট্যাপ থেকে রক্ত পড়ার পর আবার নর্মাল জল চলে আসতে পারে, যুক্তি দিয়ে সে-ই দেখিয়েছিলো। বিল্ডিং তৈরির কাজ করে বলে সে অনায়াসেই সানশেড বা কার্নিশে উঠতে পারে। 
 রতনের আর একটা সুবিধা হলো সে একটা গ্রিল কারখানায় কাজ করে। গয়নার দোকানে চুরির পর যখন সে আমাকে বললো, যে ওই দোকানের গ্রিল তারাই লাগিয়েছিলো আমার কাছে সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। যে গ্রিল লাগিয়েছে সে গ্রিলের উইকপয়েন্ট গুলো জানে। কিংবা ইচ্ছে করেই দুর্বল করে রাখতে পারে, যাতে দরকার এর সময় সহজেই কাটা যায়। আমার সন্দেহ একদম ফোকাসড্‌ হলো রতনের উপর। আমি তাকে আর চোখের আড়াল করলাম না। আর আমার সব সন্দেহের অবসান ঘটলো কাল রাতে রতনকে পায়খানা করতে যেতে দেখে। তখনই একশ ভাগ নিশ্চিত হলাম রতনই ভূত এবং সে-ই চোর! 
কোন ফাঁকে কুন্তলা উঠে গিয়ে চা করে এনেছে। সবাই চায়ের কাপ তুলে নিলো। চুমুক দিতে দিতে তমাল বললো, আমি অনেক ক্রিমিনাল দেখেছি, কিন্তু রতন তুমি অসাধারণ! তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না। সব ক্রিমিনালই চায় গোয়েন্দার নজর অন্য দিকে ঘোরাতে বা নিজে এসব এর বাইরে আছে সেটা প্রমাণ করতে। কিন্তু তুমি প্রথম থেকেই একদম নির্ভেজাল সত্যিটাকেই হাইলাইট করে চলেছিলে। এতোটাই যুক্তি ছিলো তোমার কথায় যে আমিও এক সময় ভাবতে শুরু করেছিলাম যে জলের মতো পরিষ্কার যখন তখন এগুলো হবে না। 
কিন্তু সব ক্রিমিনালেরই একটা মোক্ষম দোষ থাকে। তোমারও সেটা আছে আর একটু বেশি মাত্রায় আছে। তুমি নিজেকে মাত্রাততিরিক্ত বুদ্ধিমান ভাবো। তুমি যদি একটু কম চালাকি করতে হয়তো কাজটা করে আপাতত সরে পড়তে পারতে। পরে তোমাকে ঠিকই আমি খুঁজে বের করে আনতাম, সে তুমি যে চুলোতেই থাকতে না কেন। যাক সেটা পরের কথা। কিন্তু তুমি মারাত্মক একটা ভুল করলে আমাকে বোকা ভেবে। রতন, ক্রিমিনালরা যতো চালাকই হোক, গোয়েন্দার কাজ তার চালাকির ওপর চালাকি করা। ভুল তুমি অনেক গুলোই করে ফেলেছো। 
প্রথম ভুল কনডম দেখিয়ে কুহেলির দিকে সন্দেহ ঘোরাতে চেষ্টা করে। দ্বিতীয় ভুলটা করেছো সেদিন রাতে সদ্য গলা কাটা মুরগীর বুকে ছুরি গেঁথে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মেরে। আরে ছুরিটাযে গ্রিল কারখানায় তৈরি সেটা দেখলেই বোঝা যায়। একটা ছুরি দোকান থেকেই তো কিনে নিতে পারতে?

তার পরের ভুল নিজে ভূত দেখার গল্প বানিয়ে পর্দায় আগুন লাগিয়ে করেছো। ভেবে দেখো কতো বড় বোকামি করেছো। তুমি বলেছিলে তুমি জানালার কাঁচ এর ভিতর দিয়ে সেই ভৌতিক মুখটা দেখেছিলে। তার মানে হলো পর্দা সাইডে সরানো ছিলো। তারপর বললে, সেই মুখ এগিয়ে এসে আগুনের হলকা ছুঁড়ে কাঁচ গলিয়ে দেয় আর তাতেই আগুন লাগে। কিন্তু যেখানে কাঁচটা গলেছে পর্দা সেখান থেকে অনেক দূরে ছিলো। আগুন লাগা সম্ভব নয়। আর আমি পরীক্ষা করে দেখেছি কাঁচ গলানোর জন্য অক্সি-এসিটিলিন টর্চটা ভিতর থেকে জ্বালা হয়েছিলো। ফুটোটার ভিতর দিকেই কালি পড়েছিলো, বাইরের দিকে নয়। 

আগুনটা তুমিই লাগিয়েছিলে। কিন্তু কেন লাগিয়েছিলে? আমাদের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে কিছু একটা করতে। কিন্তু তুমি আমাদের সামনেই ছিলে। অর্থাৎ তোমার একজন সহকারী আছে। কিন্তু কে সেই সহকারী? প্রসঙ্গেও সময় মতো আসছি।
যখনই বুঝলাম এই বাড়ির কেউ চুরিটার সঙ্গে যুক্ত তখনই চিন্তা এলো কিভাবে এই বাড়ি থেকে দোকানে পৌঁছানো আর ফেরা সম্ভব? কারণ পাঁচিলটা ভীষণ উঁচু। আর বাইরে থেকে ঘুরে দোকানে যেতে গেলে বড় রাস্তা দিয়ে ঘুরে যেতে হবে। সেটা খুবই রিস্কি। বিশেষ করে চুরিটা যখন আশি লাখ টাকার। আমি পাঁচিলটা পরীক্ষা করে দেখলাম যে অনেক জায়গায় প্লাস্টার খুলে গেছে। দোকানটার ঠিক পিছনে পাঁচিলের ইঁটের খাঁজে খাঁজে আমি ছোট ছোট গোল গর্ত দেখতে পেলাম। আর রতনদের স্নানঘরে ঢুকে পেলাম ৮ ইঞ্চি করে কাটা লোহার রড। তখনই বুঝে গেলাম কিভাবে পাঁচিল ডিঙানো সম্ভব। ওই গর্তগুলোতে রডগুলো গুঁজে গুঁজে সহজেই সিঁড়ি বানিয়ে ফেলা যায় আবার কাজ সেরে ওগুলো খুলে নিয়ে চিহ্ন মুছেও ফেলা যায়। এমনিতেই ভূতের ভয়ে লনের ওই অংশে কেউ বিশেষ যায় না। ভূত বাবাজির ওই একই জায়গায় উদয় হবার এটাও একটা কারণ। জায়গাটার বদনাম ঘটিয়ে জনসাধারণকে জায়গাটা থেকে দূরে রাখা। যাতে গর্তগুলো কারো চোখে না পড়ে।
এবার আসি সেই বিভৎস আগুন ওগড়ানো ভৌতিক মুখটার কথায়। ওটাই আমাকে সব চাইতে বেশি ভুগিয়েছে। আবার রতনের প্রশংসা না করে পারছি না। যেদিন রতনের হাত ভাঙলো সেদিন আমি আর শালিনী আবার ওই জায়গায় যাই ঘটনার অনেক পরে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাই সূত্র। কি পেয়েছিলাম জানেন? গলে যাওয়া লোহার টুকরো। গ্যাস-কাটার বা oxy-acetylene টর্চ দিয়ে লোহা কাটলে যেমন গলে যাওয়া টুকরো ঝরে পড়ে ঠিক তেমনই। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাই রহস্যটা। 
রতন গ্রিল কারখানা থেকে একটা মোটা লোহার পাত কেটে মুখোস বানিয়ে এনেছিলো। যার চোখ দু'টোতে সম্ভবত সাইকেলের পিছনে যেমন লাল রিফ্লেক্টর লাগানো থাকে তেমনই কিছু লাগানো, সাইজে একটু বড়। আর মুখের কাছে গর্ত করা। একটা পোর্টেবল oxy-acetylene টর্চ ওই মুখের কাছে জ্বেলে দেওয়া হতো। মুখের গর্তটা দিয়ে লক্ লক্ করে আগুনের শিখা বেরিয়ে আসতো। আর তার আলোতে চোখে লাগানো রিফ্লেক্টর জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠে মুখোশটা কে বিভৎস করে তুলতো। 
কিন্তু বেশিক্ষণ এক নাগাড়ে oxy-acetylene টর্চ জ্বালানোর ফলে মুখের গর্তের কাছে লোহা গলে গলে পড়তো একটু একটু করে। সেই টুকরো গুলোই পেয়ে যাই আমি আর শালিনী। নিজের অনুমান সত্যি কিনা জানতে আমি আবার রতনের গ্রিল কারখানায় যাই। যখন শুনলাম যে কিছুদিন আগে তাদের একটা পোর্টেবল টর্চ চুরি হয়েছে তখনই দুই আর দুই চার হয়ে যায়। 
আরও একটা খবর দিলেন কারখানার মালিক। রতন দিন পনেরো আগেই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। তাই তার কাজ সেরে আসতে আসতে রাত দশটা বাজার গল্পটা মিথ্যে।
তাহলে সন্ধ্যার পর রতন থাকতো কোথায়? আর সে যদি লুকিয়েই থাকবে তাহলে ভূতুড়ে কান্ডগুলো ঘটাতো কে? এর সহজ যুক্তি হল রতনের একজন বা একাধিক সহকারী আছে। কে হতে পারে সে? সমরবাবু? ভূপেন বাবু? টুসি? বাড়ির কেউ? নাকি বাইরের কেউ? 
সবার উপর নজর রাখলাম। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে বুঝলাম সহকারী নয় সহকারিণী। সে আর কেউ নয়, টুসি! রতন যখন সবার সামনে উপস্থিত থাকতো ভূত সেজে অভিনয় করত টুসি। এতে রতনের উপর সন্দেহ জন্মাতো না। ফ্যামিলি গ্যাদারিংয়েও টুসিকে দরকার পড়তো না। চা, স্ন্যাকস দিয়েই তার কাজ শেষ। সবাই ভাবতো সে রান্নাঘরে ব্যস্ত। আবার টুসি ভূতের ভয় পাবার এমন নাটক করত যে, সে ভূত সেজে এসব করতে পারে কেউ কল্পনাও পারেনি।
তাহলে রতন রাত দশটা পর্যন্ত থাকতো কোথায়? সে সন্ধ্যে বেলাটা স্টোর রুমেই লুকিয়ে থাকতো। সম্ভবত তাতে টিউব লাইট নেভাতে সুবিধা হত। এছাড়া টুসির ঘরে থাকাও সম্ভব। টুসি যখন তার সহকারিণী তখন আদর আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি হতো না। চা জলখাবার ঠিক সময় পৌঁছে যেতো। অন্য সময়টা আরাম করে শুয়ে বসে কাটানোতেও কোনো বাধা ছিলো না রতনের। 
টুসির ঘরটা স্টোর রুমের লাগোয়া। রতন আর টুসির মধ্যে যে শারীরিক সম্পর্ক ছিলো,সেটা আমি দেখেছি, মানসিক সম্পর্ক কতোটা আছে জানিনা। মেয়ে বলে টুসির ঘরে বিশেষ কেউ ঢোকে না। সুতরাং ওই ঘরটা রতনের কাছে অনেকটা শ্বশুরবাড়ির মতোই নিরাপদ ছিলো। 
শিপ্রা প্রশ্ন করলো, আচ্ছা তমাল, রতন তো এই শহরে নতুন। সে এতো বড় চুরির প্ল্যান করলো কিভাবে?
তমাল বললো, প্ল্যানটা আগে থেকে করেনি রতন। সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে পুরোমাত্রায়। ইন্দ্র রতনকে শহরে নিয়ে এলেও সে ভালো কোনো কাজ যোগাড় করতে পারলো না। ওদিকে সে আবার উচ্চাকাঙ্খী। সহজে বড়লোক হবার শখ তার প্রবল। কিছুদিন ইন্সট্রাকশন সাইটে এটা সেটা কাজ করলো। কিন্তু রতনের কাজের হাত ভালোই। মোটামুটি সব কাজই পারে। সেখানেই আলাপ হয় গ্রিলের কাজ করতে আসা গ্রিল কারখানার মালিকের সাথে। রতনের কাজ দেখে পার্টটাইম একটা কাজ দেয় রতনকে সে। খুব জলদি সেই কাজও দক্ষতার সাথে শিখে নেয় রতন। এসব খবর আমি পাই সেই মালিকের কাছেই।
এভাবেই চলছিলো। তখনই তার সামনে একটা চমৎকার সুযোগ এসে গেলো। কুহেলিদের বাড়ির পাঁচিলের ঠিক পিছনেই খুললো সরকার জুয়েলার্স। নতুন দোকান তৈরি করলো তারা। ভাগ্যক্রমে সেই দোকানের গ্রিলের কাজের বরাত পেলো রতনের মালিক। রতনকে পাঠালো কাজটা করতে।
সেখানেই সম্ভবত রতন খেয়াল করলো যে দোকানের সিকিউরিটি সিস্টেমে গলদ আছে। পাশেই একটা ব্যাংক আছে। সেখানে কড়া পাহাড়া থাকে। তাই হয়তো দোকানের মালিক নিজেদের পাহারার ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগী ছিলো না। যাই হোক, চুরির প্ল্যানটা তখনি মাথায় আসে রতনের। কাজ করতে করতে ছকে ফেলে সে পুরো পরিকল্পনাটা। ইচ্ছা করেই গ্রিল দুর্বল করে রাখে যাতে সময় মতো সহজেই কেটে কাজ হাসিল করতে পারে। কুন্তলাদের বাড়িতে ঢোকা বের হবার ব্যবস্থাও করে ফেলে পাইপ কেটে। মালপত্র লুকিয়ে রাখারও দারুণ একটা জায়গা রয়েছে এ বাড়িতে। পাঁচিলের পাশের পুরানো কলঘরটা।
সব দিক খতিয়ে দেখতে গিয়ে সে লক্ষ্য করলো কুহেলি প্রায় সারারাত জেগে থাকে। ঘরে লাইট জ্বলে এবং জানালাও খোলা থাকে। ওই জানালা দিয়ে সোজাসুজি দোকানটা দেখা যায়। হয়তো রাতে খেয়াল করবে না কুহেলি, কিন্তু এতো বড় অংকের চুরিতে রতন কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। সে ভূতের নাটক সাজালো। যাতে চুরির দিন পর্যন্ত অন্তত কুহেলি জানালা খোলার সাহস না করে।
কিন্তু ভূতের নাটকে একটা সমস্যা আছে। টাইমিং। সে জানতো ভূতের উপদ্রব শুরু হওয়া মাত্র বাড়ির জোয়ান ছেলে হিসাবে পাহারা দেবার ভার তার উপরেই পড়বে। তখন ভূত দেখাবে কে? সুতরাং তার একজন সহকারী দরকার। বাইরের কাউকে নিতে সে রাজি নয়। এর কারণ একে সে শহরে নতুন। কারো উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস করার মতো পরিচিতি তার ছিলো না। উপরন্তু লোভী রতন চুরির ভাগও কাউকে দিতে নারাজ। সবার কথাই নিশ্চয়ই ভেবে দেখেছিলো সে। ভূপেন বাবু তার বাবা ঠিকই, কিন্তু তিনি অত্যন্ত সৎ এবং এই বাড়ির প্রতি শতভাগ বিশ্বস্ত। তিনি কোনোভাবেই এই কাজে রতনকে সাহায্য করবেন না। সমরবাবুর চারিত্রিক দোষ থাকলেও চোরের সহযোগী হবার মতো মানুষ নন। তাছাড়া তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।
Tiger

                kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মানিকজোড় - তমালের গোয়েন্দা গল্প - by kingsuk-tomal - 10-12-2025, 10:23 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)