10-12-2025, 10:00 PM
(This post was last modified: 10-12-2025, 11:43 PM by kingsuk-tomal. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কুন্তলা চট্ করে শিপ্রার দিকে তাকালো। শিপ্রা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। খাওয়া শেষ করে তমাল বললো, আচ্ছা এবার বাড়ির পুরুষদের সাথে একটু পরিচিত হওয়া যাক। কাল থেকে তো মনে হচ্ছে যেন কোনো মহিলা রাজ্যত্বে এসে পড়েছি। বাড়ির পুরুষরা কি এবাড়িতে পর্দানশীন নাকি? সবাই হেসে উঠলো। তারপর কুন্তলা ইশারা করতে টুসি সমরবাবু কে ডেকে নিয়ে এলো।
সমরবাবুর বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন হবে। বেশ মার্জিত চেহারা। ধোপ-দুরস্ত হয়ে নিয়েছেন এই সকালেই। অথবা সবসময় উনি এমন সেজে গুজেই থাকেন। এসে নমস্কার করলেন হাত জোর করে। তমাল একটা চেয়ার দেখিয়ে দিতে সেখানে বসলেন। তমাল শালিনী ছাড়া সবাই কে ঘরে চলে যেতে বললো।
***********
তমাল :- আপনি সমরবাবু এটুকু জানি। কতদিন আছেন এই বাড়িতে?
সমর :- তা অনেক দিন হয়ে গেলো। ইন্দ্র'র বাবার আমল থেকেই ওদের জমিজমা দেখাশুনা করি।
তমাল :- মাইনে কেমন পান? চলে যায় আপনার?
সমর :- হ্যাঁ হ্যাঁ, মাইনে ভালোই পাই। তার ওপর বিয়ে থা করিনি। নিজের বলতে তেমন কেউ নেই। চলে যায় আমার।
তমাল :- আপনাকে দেখে তো বেশ সৌখিন লোক বলেই মনে হচ্ছে। তা শখ টখ মেটে তো পারিশ্রমিকে?
সমর :- এই মিটিয়ে নি আর কি....
তমাল :- অবিবাহিতদের একটু অন্য রকম শখ টখ ও থাকে। আপনার আছে নাকি সেরকম কিছু? চোখ টিপে একটু ফাজিল ইশারা করলো তমাল।
সমর :- ( একটু লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো ) মদের নেশা খুব একটা নেই আমার, তবে অন্যটা... বুঝতেই পারছেন... হেঁ হেঁ...! লাজুক হেসে বললো সমর।
তমাল :- হুমম! বুঝেছি। এই বাড়িতে যে সব ঘটনা ঘটছে, সেটাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সমর :- (সে নড়েচড়ে বসলো, তারপর গলা পরিষ্কার করে বললো ) দেখুন ভগবান বিশ্বাস করলে ভূতও বিশ্বাস করতে হয়। এ বাড়ির ওপর কোনো রুষ্ট আত্মার দৃষ্টি পড়েছে। আমি অনেকবার ইন্দ্রকে বলেছি একজন পুরোহিত ডেকে একটু পুজো অর্চ্চনা করিয়ে নিতে। কিন্তু আজকালকার ছেলেরা কথা কানেই নেয় না। আমি বাপু ভীষন ভয়ে আছি। কখন কি হয়ে যায় কিছুই বলা যায় না। এবাড়ির পাট আমার উঠলো মনে হচ্ছে। রাতে ভালো ঘুম হয় না ভয়ে জানেন?
তমাল :- কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় না খুব ভয়ে বা আতঙ্কে আছেন?
সমর :- মনের ভয় কি সব সময় চেহারায় ফোটে তমাল বাবু? ঈশ্বরই জানেন কি মনের অবস্থা আমার! আমাদের গ্রামে মুখার্জীদের বাড়িতেও একবার এইরকম... কথা শেষ করতে দিলো না তমাল। বললো..
তমাল :- আচ্ছা পাড়ার ছেলেরা মিলে কোনো দুষ্টুমি করছে বলে আপনার মনে হয় না? ধরুন কোনো রাগ বা পুরনো শত্রুতা?
সমর :- না না এই বাড়ির সাথে কোনো শত্রুতা নেই পাড়ার কারো। আমি অনেকদিন ধরে আছি। সেরকম কোনো ঘটনা মনে পড়ছে না।
তমাল :- ঠিক আছে আপনি এখন আসুন। পরে দরকার হলে আবার কথা বলবো।
সমর :- আচ্ছা নমস্কার।
সমরবাবু চলে যেতে তমাল টুসিকে দিয়ে ভূপেনবাবুকে ডেকে পাঠালো।
*************
তমাল :- নমস্কার! বসুন ভূপেন কাকু।
ভূপেন :- নমস্কার বাবু।
তমাল :- আপনি কতদিন আছেন এই বাড়িতে?
ভূপেন :- তা বাবু অনেকদিন হলো। তা ধরুন দেড় কুড়ি বছর তো হবেই। আগে বড় বাবুর জমিতে কাজ করতাম। বাবু নিয়ে এলেন এখানে। সেই থেকে এখানেই আছি।
তমাল :- তার মানে তিরিশ বছর হয়ে গেল। ইন্দ্রনীলের জন্মের আগে থেকেই আছেন এই বাড়ীতে।
ভূপেন :- হ্যাঁ। ছোট দাদাবাবুকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি বলতে পারেন।
তমাল :- আপনার গ্রামের বাড়ীতে কে কে আছেন?
ভূপেন :- আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলে বাবু। মেয়ে দু'টোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলেটাকে মানে ওই রতনকে ছোট দাদাবাবু এখানে নিয়ে এলেন। এখন গ্রামে রতনের মা আর আমার ছোট ছেলে থাকে বাবু।
তমাল :- এখানে যা বেতন পান তাতে সংসার চলে?
ভূপেন :- গরীব মানুষ এর সংসার চলে যায় বাবু। ছোট ছেলেটা কলেজে গেলই না। সে গ্রামে লোকের বাড়ী বাড়ী জন খাটে পনেরো বিশ কাঠা জমিও আছে বাপ দাদার। বৌ সেখানে সব্জী টব্জী ফলায়। আর রতন এখন এখানে কাজ টাজ করে। আপনাদের আশীর্বাদে এখন চলে যায় বাবু।
তমাল :- বাহ ! তাহলে ভালোই চলে যায় আপনাদের। আচ্ছা এই বাড়ীতে কিছুদিন যে উপদ্রব শুরু হয়েছে সেটা আপনার কি বলে মনে হয়?
ভূপেন :- খুব অবাক কান্ড বাবু। শহরের ভিতরে ভূতের উপদ্রব হয় বলে তো শুনিনি। কিন্তু পাহারা দিয়েও কিছু ধরতে পারছিনা। কি যে বলি বাবু, আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা। আমি মুখ্যু মানুষ,তেনাদের মর্জি টর্জি বুঝি না।
তমাল :- পাড়ার ছেলেদের বা কোনো ক্লাবের সাথে এ বাড়ীর কখনো কোনো ঝগড়া হয়েছিলো? জানেন আপনি?
ভূপেন :- সে অনেকদিনের আগের কথা। তা প্রায় দশ বছর হবে। পুজোর চাঁদা নিয়ে একবার ঝামেলা হয়েছিলো। বড়বাবু একটা ছেলেকে চড় মেরেছিলেন। তারপর থানা পুলিশও হয়েছিলো। কিন্তু তারপর সব চুকে বুকে গেছে বাবু। দুই চার পাঁচ বছরের ভিতরে কোনো ঝগড়া তো মনে পড়ে না।
তমাল :- সমরবাবুকে আপনার কেমন মনে হয়?
ভূপেন :- বাবু, উনি শিক্ষিত মানুষ, ম্যানেজার ওনার ব্যাপার স্যাপার আমি বুঝিনা। আর আমার সাথে কথা ও কম হয় বাবু।
তমাল :- আর টুসি?
ভূপেন :- ফাজিল মেয়ে একটা! আমার একটুও পছন্দ না ওকে। রতনটা উঠতি বয়স, ওকে নিয়েই চিন্তা বাবু। এই রকম মেয়েরা অনেক মায়া টায়া, ছলা কলা জানে পুরুষ ধরার।
তমাল :- এই বাড়ীর কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?
ভূপেন :- না বাবু।
তমাল :- ঠিক আছে। রতন ফিরেছে দোকান থেকে?
ভূপেন :- হ্যাঁ বাবু ফিরেছে। ডেকে দেবো?
তমাল :- হ্যাঁ ওকে একটু ডেকে দিন। আপনি আসুন, পরে দরকার পরলে আবার কথা বলবো।
ভূপেন :- আচ্ছা নমস্কার বাবু।
ভূপেন বাবু যাবার একটু পরেই রতন এলো....
***************
তমাল :- এসো রতন, ওখানে বসো।
রতন :- সরি দাদা, আপনি এসেছেন শুনেছি, কিন্তু কাজের চাপের জন্য দেখা করে উঠতে পারিনি। নমস্কার দিদি।
তমাল :- কি কাজ করো তুমি রতন?
রতন :- সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একটা কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ করি দাদা। বলতে পারেন আমি সর্বঘটে কাঁঠালিকলা লেবার। যেসব নতুন বাড়ি তৈরি হয় সেগুলোর দেখাশুনা করি। আবার লেবারদের সাথে কাজও করি। এই যেমন মোজাইক মেশিন চালানো,টাইলস কাটা, ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রীর সাথে জোগাড়ে হওয়া, পাইপ লাইন বসানোতে সাহায্য করা, এই সব।
তমাল :- আর তার পরে? তুমি তো রাত দশটার আগে ফেরো না শুনেছি।
রতন :- বিকালে একটা গ্রিল কারখানায় গ্রিল বানাই দাদা। কাজের খুব চাপ থাকে। তাই ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।
তমাল :- হুমম, তুমি তো অনেক পরিশ্রম করো দেখছি।
রতন :- গরিবের ছেলে দাদা। কিন্তু চিরদিনকি গরিব থাকবো বলুন? বাবা লোকের বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে আমাদের খাইয়েছে পরিয়েছে। দেখি শেষ বয়সে ওনাকে একটু সুখে রাখা যায় কি না। আর এই বয়সে পরিশ্রম করবো না তো কবে করবো দাদা?
তমাল :- ঠিক বলেছো। কতো পাও মাসে?
রতন :- হেঁ হেঁ.. তা দাদা মন্দ হয় না। আর কয়েক বছর শরীর ঠিক থাকলে ভাবছি গ্রাম এর বাড়িটা পাকা করে ফেলবো। খুব কষ্ট হয় দাদা। বর্ষা কালে.....
তমাল :- আচ্ছা রতন, এ বাড়ির ভূত সম্পর্কে তোমার ধারণা কি?
রতন :- ভূত !? কিসের ভূত ? আপনিও বিশ্বাস করেন নাকি এগুলো ভূতের কারবার? কেউ বা কারা শয়তানি করছে দাদা। ঠিক শালাদের একদিন ধরে ফেলবো। তক্কে তক্কে আছি দাদা, যেদিন ধরবো বাঁনচোদদের এমন কালানি... সরি দাদা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে!
তমাল :- ঠিক আছে। তো তোমার মনে হয় বাইরের কেউ করছে?
রতন :- দাদা সত্যি বলবো? ( একটু এগিয়ে এসে গলা নিচু করে বললো ) বাইরেরও হতে পারে। আবার ভিতরেরও হতে পারে।
তমাল :- ভিতরের মানে? কাকে সন্দেহ করো তুমি? সব খুলে বলো আমাকে রতন।
রতন :- কে আবার? ম্যানেজার বাবু। এক নম্বরের মাগীবাজ শালা! ইসসসস্ সরি দাদা আবার মুখ ফসকে....
তমাল :- হা হা হা হা... ঠিক আছে বলে যাও। গুনে রেখো, শেষে সব গুলো সরি একবারে বলে দিও।
রতন :- হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ.. দাদা, ওই ম্যানেজার খারাপ পাড়ায় যায়। আরও কি করে জানেন? মেয়েদের ঘরে রাতে উঁকি মারে বোকাচোদা.. ধ্যাৎ ! আমি অনেক বার দেখেছি রাতে ও বৌদি, কুহেলি দিদিমনি এমন কি টুসির ঘরের জানলায়ও উঁকি মারে লুকিয়ে। আর রোজ রাতে ওর মাল খাওয়া চাই এ চাই!
তমাল :- কিন্তু সমরবাবু যে বললো, তিনি মদ বেশি খান না?
রতন :- মহা চুতিয়া লোক তো? বলেছে বেশি খায় না? পাইন্ট্ পাইন্ট্ খায় দাদা!
তমাল :- বুঝলাম। কিন্তু এর সাথে ভূতের উপদ্রবের কি সম্পর্ক?
রতন :- (মাথা চুলকাতে চুলকাতে) এইটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না দাদা। এসব করে ওর লাভ কি? আরও একটা ব্যাপার আছে দাদা, বলাটা ঠিক হবে কি না ভাবছি।
তমাল :- বলো বলো, কিছু লুকিও না। আমিতো বাইরের লোক, আমার কাছে বলতে আপত্তি কিসের?
রতন :- হুমম, আচ্ছা বলছি। কুহেলিদির অনেক চাহনেওয়ালা আছে পাড়ায়। কুহেলিদি যখন বাইরে যায় বা কলেজে যায় পিছনে পিছনে অনেকেই ফলো করে। আমার বন্ধু বান্ধবদের কাছে খবর পাই দাদা। এই পাড়ার একটা ছেলে আছে বড়লোকের বিগড়ানো পোলা। একবার দিদির সাথে একটু ভাব করার চেষ্টা করেছিলো বাজার এর ভিতরে। দিদি সবার সামনে চড় মারে ওকে। ছেলেটা দেখে নেবে, বদলা নেবে বলে শাসিয়েছিলো।
তমাল :- তাই নাকি? কতদিন আগের কথা?
রতন :- এই ধরুন মাস ছ'য়েক কি আটেক আগে।
তমাল :- আচ্ছা তুমি এখন এসো রতন। টুসিকে একটু ডেকে দাও।
রতন উঠবো উঠবো করেও উঠছে না। একটু উশখুস করছে দেখে তমাল বললো,
তমাল :- কিছু বলবে রতন? বলার থাকলে বলে ফেলো লুকিও না।
রতন :- দাদা ধর্ম সংকটে পড়ে গেছি আমি। এই বাড়ির নুন খাই, এইবাড়ির ক্ষতি হোক চাইনা। আবার যে প্রোমোটারের কাছে কাজ করি তার সঙ্গে বেঈমানী, বিশ্বাসঘাতকতা করতেও মন সায় দেয় না। তাই ভাবছি..
তমাল :- রতন, অন্যায় সব সময় অন্যায়ই। সেটা জেনেও চুপ করে থাকাও অন্যায়।
রতন :- হুমম, আসলে এই বাড়িটা তো দেখেছেন। শহরের ভিতরে এতো বড় জায়গা। লোক মোটে তিনজন। কুহেলিদির বিয়ে হয়ে গেলে দাদা আর বৌদি। অথচ বিশাল দাম জায়গাটার। এখানে কম করে চারটে বিল্ডিং হবে উঁচু উঁচু। তাই আমার ওই মালিক প্রোমোটারের অনেক দিনের নজর বাড়িটার উপর। কিছুদিন আগে ইন্দ্রদা যখন এসেছিলো, আমার মালিক ইন্দ্রদাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো বাড়িটা বিক্রি করার। কিন্তু ইন্দ্রদা রাজি হয়নি। লোকটার সাথে কাজ করি তো? তাই জানি প্রোমোটাররা কোনো জমির পিছনে পড়লে কতো নিচে নামতে পারে। ভূতের ভয় দেখিয়ে তাড়াতে পারলে সস্তায় জমিটা পাওয়া যায়। তাই ভাবছিলাম....
তমাল :- ধন্যবাদ রতন! খুব ভালো করেছো এটা আমাকে বলে। তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো। আচ্ছা রতন তুমি আর আমি মিলে ফাঁদ পেতে বদমাশ গুলোকে ধরতে পারি না? থাকবে আমার সাথে?
চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলো রতন।
রতন :- দাদা আমি আছি আপনার সঙ্গে। যা বলবেন তাই করবো। দরকার হলে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নেবো। খালি একটা অনুরোধ, শুয়োরের বাচ্চা গুলোকে ধরতে পারলে আমাকে একবার ক্যালাতে দেবেন। উফফ্ সারাদিন খাটা খাটনির পর গাঁঢ় চুতিয়া গুলোর জন্য ছাদে রাত জেগে পাহারা দিতে হয় জানেন?
তমাল :- হা হা হা হা.. ঠিক আছে তাই হবে। তাহলে হাত মেলাও। এখন থেকে তুমি, আমি আর এই শালিনী দিদি একটা টিম কেমন? কিন্তু কথাটা কাউকে বোলো না। এখন তুমি টুসি কে ডেকে দিয়ে যাও।
রতন তমালের সাথে হাত মিলিয়ে টুসি কে ডাকতে চলে গেলো। টুসি এলে তমাল তাকে বসতে বললো।
***************
তমাল :- বসো টুসি। তোমার রান্নার হাত খুব ভালো। কোথায় শিখলে?
টুসি :- গরিবের মেয়েদের রান্নার কলেজে গিয়ে রান্না শিখতে হয়না বাবু। এমনিই শিখে যায়।
তমাল :- হুমম, তুমি কতদিন আছো এ বাড়িতে?
টুসি :- বছর তিনেক হলো বাবু।
তমাল :- তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?
টুসি :- বাবা, মা তিনটে ছোট ভাই আর এক বোন
তমাল :- বাবা কি করেন?
টুসি :- রিক্সা চালায় বাবু।
তমাল :- তোমাকে এই বাড়িতে কে এনেছে?
টুসি :- সমরবাবু। ওনার বাড়ি আমাদের গ্রামেই।
তমাল :- তুমি ভূত বিশ্বাস করো?
টুসি :- করি বাবু! আমার খুব ভয় করে!
তমাল :- তাহলে তোমার ধারণা এবাড়ির ঘটনাগুলো ভূতই ঘটাচ্ছে?
টুসি :- সেরকমই মনে হয় বাবু! কিন্তু...
তমাল :- কিন্তু কি টুসি?
টুসি :- শুনেছি ভূত এলে ছম্ ছম্ নূপুরের আওয়াজ হয়! বুক কাঁপানো হাসি শোনা যায়! সেসব তো শুনি না বাবু?
তমাল :- হা হা হা হা.. ভূত সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দেখছি তোমার!
টুসি :- সিনেমাতে তো সেরকমই দেখায় বাবু?
তমাল :- হুমম, বুঝেছি। হা হা হা হা... আচ্ছা কুহেলি দিদিমনির পিছনে পাড়ার এক ছেলে লেগেছিলো। তার সাথে ঝামেল ও হয়েছিলো, জানো কিছু?
টুসি :- হ্যাঁ জানি বাবু। রতন বলেছে।
তমাল :- সমরবাবু কেমন মানুষ?
টুসি :- আমাকে চাকরি দিয়েছেন। দয়ালু মানুষ!
তমাল :- শুনলাম অনেক দোষও তো আছে তাঁর?
টুসি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।
তমাল :- আচ্ছা তুমি এখন যেতে পারো।
টুসি নমস্কার করে চলে গেল। তমাল শালিনীর দিকে ফিরলো। কি বুঝলে শালি? ছোট ডায়েরিতে নোট নিচ্ছিলো শালিনী এতক্ষণ। সেটা বন্ধ করে বললো, কিছুই বুঝলাম না বস্। খুব জটিল ব্যাপার! তমাল বললো, হুমম সত্যিই জটিল কেস। চিন্তা করতে হবে। অনেক ভাবতে হবে।
লাফ দিয়ে উঠলো শালিনী, তাহলে চলুন বস্ ঘরে গিয়ে চিন্তা করবেন! তমাল চোখ পাকালো, এই এখন না! দাঁড়াও আগে থাকার একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা করি।
শালিনীকে নিয়ে দোতলায় উঠে এলো তমাল। কুহেলির ঘরেই পাওয়া গেল ওদের তিনজনকে। উৎসুক হয়ে আছে কি হল শোনার জন্য। ঢুকতেই শিপ্রা বললো, কি রে কাজ হলো কিছু? তমাল হেসে বললো, আরে দাঁড়া, কাজ তো সবে শুরু হলো। তারপর বললো, শোন শিপ্রা ভেবে দেখলাম কেসটা সমাধান করতে হলে আমার এই বাড়িতেই থাকা খুব প্রয়োজন। তুই ড্রাইভারকে দিয়ে আমার আর শালিনীর মালপত্র গুলো পাঠিয়ে দিস।
কথাটা শোনার পরে কুন্তলার মুখে দপ্ করে হাজার ওয়াটের আলো জ্বললো, আর শিপ্রার মুখটা নিমেষে অন্ধকারে ঢেকে গেল। বললো, ঠিক আছে পাঠিয়ে দেবো।
তাহলে আমিও যাই বস্। জিনিস পত্র তো সব ছড়ানো রয়েছে, শিপ্রাদি গুছিয়ে আনতে পারবে? আমি বরং যাই গুছিয়ে নিয়ে আসবো.. বললো শালিনী।
তমাল বললো, হুমম ভালো প্রস্তাব। শালিনী তুমিও বরং যাও, সেটাই ভালো হবে। শালিনী বললো, ওকে বস্। আসার পথে একটু মার্কেটটাও ঘুরে আসবো। কয়েকটা জিনিস কিনতে হবে।
কুন্তলা বললো, বৌদি রান্না হয়ে গেছে একবারে লাঞ্চ করেই যাও। কুহেলিও বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ লাঞ্চ করে যাও শিপ্রাদি। তাই ঠিক হল, লাঞ্চের পর শালিনী শিপ্রার সাথে গিয়ে ওদের মালপত্র নিয়ে আসবে।
তমাল উঠে জানলার কাছে গেল। আরও একবার ভালো করে পরীক্ষা করে বললো, এবার জানালাটা পরিষ্কার করে ফেলতে বলো কুন্তলা। কুন্তলারতনকে ডেকে সেটা বলে দিলো।
ঘন্টা খানেকের ভিতরে রতন জানলাটা পরিষ্কার করে ফেলল সানশেডে উঠে। তারপর তমালের কাছে এসে বললো, তমালদা একটু এদিকে আসবেন? কথা ছিল। তমাল বললো, চলো ছাদে যাওয়া যাক। দু'জন ছাদে উঠে এলো। তমাল একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, বলো, কি বলবে রতন?
সমরবাবুর বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন হবে। বেশ মার্জিত চেহারা। ধোপ-দুরস্ত হয়ে নিয়েছেন এই সকালেই। অথবা সবসময় উনি এমন সেজে গুজেই থাকেন। এসে নমস্কার করলেন হাত জোর করে। তমাল একটা চেয়ার দেখিয়ে দিতে সেখানে বসলেন। তমাল শালিনী ছাড়া সবাই কে ঘরে চলে যেতে বললো।
***********
তমাল :- আপনি সমরবাবু এটুকু জানি। কতদিন আছেন এই বাড়িতে?
সমর :- তা অনেক দিন হয়ে গেলো। ইন্দ্র'র বাবার আমল থেকেই ওদের জমিজমা দেখাশুনা করি।
তমাল :- মাইনে কেমন পান? চলে যায় আপনার?
সমর :- হ্যাঁ হ্যাঁ, মাইনে ভালোই পাই। তার ওপর বিয়ে থা করিনি। নিজের বলতে তেমন কেউ নেই। চলে যায় আমার।
তমাল :- আপনাকে দেখে তো বেশ সৌখিন লোক বলেই মনে হচ্ছে। তা শখ টখ মেটে তো পারিশ্রমিকে?
সমর :- এই মিটিয়ে নি আর কি....
তমাল :- অবিবাহিতদের একটু অন্য রকম শখ টখ ও থাকে। আপনার আছে নাকি সেরকম কিছু? চোখ টিপে একটু ফাজিল ইশারা করলো তমাল।
সমর :- ( একটু লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো ) মদের নেশা খুব একটা নেই আমার, তবে অন্যটা... বুঝতেই পারছেন... হেঁ হেঁ...! লাজুক হেসে বললো সমর।
তমাল :- হুমম! বুঝেছি। এই বাড়িতে যে সব ঘটনা ঘটছে, সেটাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সমর :- (সে নড়েচড়ে বসলো, তারপর গলা পরিষ্কার করে বললো ) দেখুন ভগবান বিশ্বাস করলে ভূতও বিশ্বাস করতে হয়। এ বাড়ির ওপর কোনো রুষ্ট আত্মার দৃষ্টি পড়েছে। আমি অনেকবার ইন্দ্রকে বলেছি একজন পুরোহিত ডেকে একটু পুজো অর্চ্চনা করিয়ে নিতে। কিন্তু আজকালকার ছেলেরা কথা কানেই নেয় না। আমি বাপু ভীষন ভয়ে আছি। কখন কি হয়ে যায় কিছুই বলা যায় না। এবাড়ির পাট আমার উঠলো মনে হচ্ছে। রাতে ভালো ঘুম হয় না ভয়ে জানেন?
তমাল :- কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় না খুব ভয়ে বা আতঙ্কে আছেন?
সমর :- মনের ভয় কি সব সময় চেহারায় ফোটে তমাল বাবু? ঈশ্বরই জানেন কি মনের অবস্থা আমার! আমাদের গ্রামে মুখার্জীদের বাড়িতেও একবার এইরকম... কথা শেষ করতে দিলো না তমাল। বললো..
তমাল :- আচ্ছা পাড়ার ছেলেরা মিলে কোনো দুষ্টুমি করছে বলে আপনার মনে হয় না? ধরুন কোনো রাগ বা পুরনো শত্রুতা?
সমর :- না না এই বাড়ির সাথে কোনো শত্রুতা নেই পাড়ার কারো। আমি অনেকদিন ধরে আছি। সেরকম কোনো ঘটনা মনে পড়ছে না।
তমাল :- ঠিক আছে আপনি এখন আসুন। পরে দরকার হলে আবার কথা বলবো।
সমর :- আচ্ছা নমস্কার।
সমরবাবু চলে যেতে তমাল টুসিকে দিয়ে ভূপেনবাবুকে ডেকে পাঠালো।
*************
তমাল :- নমস্কার! বসুন ভূপেন কাকু।
ভূপেন :- নমস্কার বাবু।
তমাল :- আপনি কতদিন আছেন এই বাড়িতে?
ভূপেন :- তা বাবু অনেকদিন হলো। তা ধরুন দেড় কুড়ি বছর তো হবেই। আগে বড় বাবুর জমিতে কাজ করতাম। বাবু নিয়ে এলেন এখানে। সেই থেকে এখানেই আছি।
তমাল :- তার মানে তিরিশ বছর হয়ে গেল। ইন্দ্রনীলের জন্মের আগে থেকেই আছেন এই বাড়ীতে।
ভূপেন :- হ্যাঁ। ছোট দাদাবাবুকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি বলতে পারেন।
তমাল :- আপনার গ্রামের বাড়ীতে কে কে আছেন?
ভূপেন :- আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলে বাবু। মেয়ে দু'টোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলেটাকে মানে ওই রতনকে ছোট দাদাবাবু এখানে নিয়ে এলেন। এখন গ্রামে রতনের মা আর আমার ছোট ছেলে থাকে বাবু।
তমাল :- এখানে যা বেতন পান তাতে সংসার চলে?
ভূপেন :- গরীব মানুষ এর সংসার চলে যায় বাবু। ছোট ছেলেটা কলেজে গেলই না। সে গ্রামে লোকের বাড়ী বাড়ী জন খাটে পনেরো বিশ কাঠা জমিও আছে বাপ দাদার। বৌ সেখানে সব্জী টব্জী ফলায়। আর রতন এখন এখানে কাজ টাজ করে। আপনাদের আশীর্বাদে এখন চলে যায় বাবু।
তমাল :- বাহ ! তাহলে ভালোই চলে যায় আপনাদের। আচ্ছা এই বাড়ীতে কিছুদিন যে উপদ্রব শুরু হয়েছে সেটা আপনার কি বলে মনে হয়?
ভূপেন :- খুব অবাক কান্ড বাবু। শহরের ভিতরে ভূতের উপদ্রব হয় বলে তো শুনিনি। কিন্তু পাহারা দিয়েও কিছু ধরতে পারছিনা। কি যে বলি বাবু, আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা। আমি মুখ্যু মানুষ,তেনাদের মর্জি টর্জি বুঝি না।
তমাল :- পাড়ার ছেলেদের বা কোনো ক্লাবের সাথে এ বাড়ীর কখনো কোনো ঝগড়া হয়েছিলো? জানেন আপনি?
ভূপেন :- সে অনেকদিনের আগের কথা। তা প্রায় দশ বছর হবে। পুজোর চাঁদা নিয়ে একবার ঝামেলা হয়েছিলো। বড়বাবু একটা ছেলেকে চড় মেরেছিলেন। তারপর থানা পুলিশও হয়েছিলো। কিন্তু তারপর সব চুকে বুকে গেছে বাবু। দুই চার পাঁচ বছরের ভিতরে কোনো ঝগড়া তো মনে পড়ে না।
তমাল :- সমরবাবুকে আপনার কেমন মনে হয়?
ভূপেন :- বাবু, উনি শিক্ষিত মানুষ, ম্যানেজার ওনার ব্যাপার স্যাপার আমি বুঝিনা। আর আমার সাথে কথা ও কম হয় বাবু।
তমাল :- আর টুসি?
ভূপেন :- ফাজিল মেয়ে একটা! আমার একটুও পছন্দ না ওকে। রতনটা উঠতি বয়স, ওকে নিয়েই চিন্তা বাবু। এই রকম মেয়েরা অনেক মায়া টায়া, ছলা কলা জানে পুরুষ ধরার।
তমাল :- এই বাড়ীর কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?
ভূপেন :- না বাবু।
তমাল :- ঠিক আছে। রতন ফিরেছে দোকান থেকে?
ভূপেন :- হ্যাঁ বাবু ফিরেছে। ডেকে দেবো?
তমাল :- হ্যাঁ ওকে একটু ডেকে দিন। আপনি আসুন, পরে দরকার পরলে আবার কথা বলবো।
ভূপেন :- আচ্ছা নমস্কার বাবু।
ভূপেন বাবু যাবার একটু পরেই রতন এলো....
***************
তমাল :- এসো রতন, ওখানে বসো।
রতন :- সরি দাদা, আপনি এসেছেন শুনেছি, কিন্তু কাজের চাপের জন্য দেখা করে উঠতে পারিনি। নমস্কার দিদি।
তমাল :- কি কাজ করো তুমি রতন?
রতন :- সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একটা কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ করি দাদা। বলতে পারেন আমি সর্বঘটে কাঁঠালিকলা লেবার। যেসব নতুন বাড়ি তৈরি হয় সেগুলোর দেখাশুনা করি। আবার লেবারদের সাথে কাজও করি। এই যেমন মোজাইক মেশিন চালানো,টাইলস কাটা, ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রীর সাথে জোগাড়ে হওয়া, পাইপ লাইন বসানোতে সাহায্য করা, এই সব।
তমাল :- আর তার পরে? তুমি তো রাত দশটার আগে ফেরো না শুনেছি।
রতন :- বিকালে একটা গ্রিল কারখানায় গ্রিল বানাই দাদা। কাজের খুব চাপ থাকে। তাই ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।
তমাল :- হুমম, তুমি তো অনেক পরিশ্রম করো দেখছি।
রতন :- গরিবের ছেলে দাদা। কিন্তু চিরদিনকি গরিব থাকবো বলুন? বাবা লোকের বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে আমাদের খাইয়েছে পরিয়েছে। দেখি শেষ বয়সে ওনাকে একটু সুখে রাখা যায় কি না। আর এই বয়সে পরিশ্রম করবো না তো কবে করবো দাদা?
তমাল :- ঠিক বলেছো। কতো পাও মাসে?
রতন :- হেঁ হেঁ.. তা দাদা মন্দ হয় না। আর কয়েক বছর শরীর ঠিক থাকলে ভাবছি গ্রাম এর বাড়িটা পাকা করে ফেলবো। খুব কষ্ট হয় দাদা। বর্ষা কালে.....
তমাল :- আচ্ছা রতন, এ বাড়ির ভূত সম্পর্কে তোমার ধারণা কি?
রতন :- ভূত !? কিসের ভূত ? আপনিও বিশ্বাস করেন নাকি এগুলো ভূতের কারবার? কেউ বা কারা শয়তানি করছে দাদা। ঠিক শালাদের একদিন ধরে ফেলবো। তক্কে তক্কে আছি দাদা, যেদিন ধরবো বাঁনচোদদের এমন কালানি... সরি দাদা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে!
তমাল :- ঠিক আছে। তো তোমার মনে হয় বাইরের কেউ করছে?
রতন :- দাদা সত্যি বলবো? ( একটু এগিয়ে এসে গলা নিচু করে বললো ) বাইরেরও হতে পারে। আবার ভিতরেরও হতে পারে।
তমাল :- ভিতরের মানে? কাকে সন্দেহ করো তুমি? সব খুলে বলো আমাকে রতন।
রতন :- কে আবার? ম্যানেজার বাবু। এক নম্বরের মাগীবাজ শালা! ইসসসস্ সরি দাদা আবার মুখ ফসকে....
তমাল :- হা হা হা হা... ঠিক আছে বলে যাও। গুনে রেখো, শেষে সব গুলো সরি একবারে বলে দিও।
রতন :- হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ.. দাদা, ওই ম্যানেজার খারাপ পাড়ায় যায়। আরও কি করে জানেন? মেয়েদের ঘরে রাতে উঁকি মারে বোকাচোদা.. ধ্যাৎ ! আমি অনেক বার দেখেছি রাতে ও বৌদি, কুহেলি দিদিমনি এমন কি টুসির ঘরের জানলায়ও উঁকি মারে লুকিয়ে। আর রোজ রাতে ওর মাল খাওয়া চাই এ চাই!
তমাল :- কিন্তু সমরবাবু যে বললো, তিনি মদ বেশি খান না?
রতন :- মহা চুতিয়া লোক তো? বলেছে বেশি খায় না? পাইন্ট্ পাইন্ট্ খায় দাদা!
তমাল :- বুঝলাম। কিন্তু এর সাথে ভূতের উপদ্রবের কি সম্পর্ক?
রতন :- (মাথা চুলকাতে চুলকাতে) এইটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না দাদা। এসব করে ওর লাভ কি? আরও একটা ব্যাপার আছে দাদা, বলাটা ঠিক হবে কি না ভাবছি।
তমাল :- বলো বলো, কিছু লুকিও না। আমিতো বাইরের লোক, আমার কাছে বলতে আপত্তি কিসের?
রতন :- হুমম, আচ্ছা বলছি। কুহেলিদির অনেক চাহনেওয়ালা আছে পাড়ায়। কুহেলিদি যখন বাইরে যায় বা কলেজে যায় পিছনে পিছনে অনেকেই ফলো করে। আমার বন্ধু বান্ধবদের কাছে খবর পাই দাদা। এই পাড়ার একটা ছেলে আছে বড়লোকের বিগড়ানো পোলা। একবার দিদির সাথে একটু ভাব করার চেষ্টা করেছিলো বাজার এর ভিতরে। দিদি সবার সামনে চড় মারে ওকে। ছেলেটা দেখে নেবে, বদলা নেবে বলে শাসিয়েছিলো।
তমাল :- তাই নাকি? কতদিন আগের কথা?
রতন :- এই ধরুন মাস ছ'য়েক কি আটেক আগে।
তমাল :- আচ্ছা তুমি এখন এসো রতন। টুসিকে একটু ডেকে দাও।
রতন উঠবো উঠবো করেও উঠছে না। একটু উশখুস করছে দেখে তমাল বললো,
তমাল :- কিছু বলবে রতন? বলার থাকলে বলে ফেলো লুকিও না।
রতন :- দাদা ধর্ম সংকটে পড়ে গেছি আমি। এই বাড়ির নুন খাই, এইবাড়ির ক্ষতি হোক চাইনা। আবার যে প্রোমোটারের কাছে কাজ করি তার সঙ্গে বেঈমানী, বিশ্বাসঘাতকতা করতেও মন সায় দেয় না। তাই ভাবছি..
তমাল :- রতন, অন্যায় সব সময় অন্যায়ই। সেটা জেনেও চুপ করে থাকাও অন্যায়।
রতন :- হুমম, আসলে এই বাড়িটা তো দেখেছেন। শহরের ভিতরে এতো বড় জায়গা। লোক মোটে তিনজন। কুহেলিদির বিয়ে হয়ে গেলে দাদা আর বৌদি। অথচ বিশাল দাম জায়গাটার। এখানে কম করে চারটে বিল্ডিং হবে উঁচু উঁচু। তাই আমার ওই মালিক প্রোমোটারের অনেক দিনের নজর বাড়িটার উপর। কিছুদিন আগে ইন্দ্রদা যখন এসেছিলো, আমার মালিক ইন্দ্রদাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো বাড়িটা বিক্রি করার। কিন্তু ইন্দ্রদা রাজি হয়নি। লোকটার সাথে কাজ করি তো? তাই জানি প্রোমোটাররা কোনো জমির পিছনে পড়লে কতো নিচে নামতে পারে। ভূতের ভয় দেখিয়ে তাড়াতে পারলে সস্তায় জমিটা পাওয়া যায়। তাই ভাবছিলাম....
তমাল :- ধন্যবাদ রতন! খুব ভালো করেছো এটা আমাকে বলে। তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো। আচ্ছা রতন তুমি আর আমি মিলে ফাঁদ পেতে বদমাশ গুলোকে ধরতে পারি না? থাকবে আমার সাথে?
চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলো রতন।
রতন :- দাদা আমি আছি আপনার সঙ্গে। যা বলবেন তাই করবো। দরকার হলে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নেবো। খালি একটা অনুরোধ, শুয়োরের বাচ্চা গুলোকে ধরতে পারলে আমাকে একবার ক্যালাতে দেবেন। উফফ্ সারাদিন খাটা খাটনির পর গাঁঢ় চুতিয়া গুলোর জন্য ছাদে রাত জেগে পাহারা দিতে হয় জানেন?
তমাল :- হা হা হা হা.. ঠিক আছে তাই হবে। তাহলে হাত মেলাও। এখন থেকে তুমি, আমি আর এই শালিনী দিদি একটা টিম কেমন? কিন্তু কথাটা কাউকে বোলো না। এখন তুমি টুসি কে ডেকে দিয়ে যাও।
রতন তমালের সাথে হাত মিলিয়ে টুসি কে ডাকতে চলে গেলো। টুসি এলে তমাল তাকে বসতে বললো।
***************
তমাল :- বসো টুসি। তোমার রান্নার হাত খুব ভালো। কোথায় শিখলে?
টুসি :- গরিবের মেয়েদের রান্নার কলেজে গিয়ে রান্না শিখতে হয়না বাবু। এমনিই শিখে যায়।
তমাল :- হুমম, তুমি কতদিন আছো এ বাড়িতে?
টুসি :- বছর তিনেক হলো বাবু।
তমাল :- তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?
টুসি :- বাবা, মা তিনটে ছোট ভাই আর এক বোন
তমাল :- বাবা কি করেন?
টুসি :- রিক্সা চালায় বাবু।
তমাল :- তোমাকে এই বাড়িতে কে এনেছে?
টুসি :- সমরবাবু। ওনার বাড়ি আমাদের গ্রামেই।
তমাল :- তুমি ভূত বিশ্বাস করো?
টুসি :- করি বাবু! আমার খুব ভয় করে!
তমাল :- তাহলে তোমার ধারণা এবাড়ির ঘটনাগুলো ভূতই ঘটাচ্ছে?
টুসি :- সেরকমই মনে হয় বাবু! কিন্তু...
তমাল :- কিন্তু কি টুসি?
টুসি :- শুনেছি ভূত এলে ছম্ ছম্ নূপুরের আওয়াজ হয়! বুক কাঁপানো হাসি শোনা যায়! সেসব তো শুনি না বাবু?
তমাল :- হা হা হা হা.. ভূত সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দেখছি তোমার!
টুসি :- সিনেমাতে তো সেরকমই দেখায় বাবু?
তমাল :- হুমম, বুঝেছি। হা হা হা হা... আচ্ছা কুহেলি দিদিমনির পিছনে পাড়ার এক ছেলে লেগেছিলো। তার সাথে ঝামেল ও হয়েছিলো, জানো কিছু?
টুসি :- হ্যাঁ জানি বাবু। রতন বলেছে।
তমাল :- সমরবাবু কেমন মানুষ?
টুসি :- আমাকে চাকরি দিয়েছেন। দয়ালু মানুষ!
তমাল :- শুনলাম অনেক দোষও তো আছে তাঁর?
টুসি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।
তমাল :- আচ্ছা তুমি এখন যেতে পারো।
টুসি নমস্কার করে চলে গেল। তমাল শালিনীর দিকে ফিরলো। কি বুঝলে শালি? ছোট ডায়েরিতে নোট নিচ্ছিলো শালিনী এতক্ষণ। সেটা বন্ধ করে বললো, কিছুই বুঝলাম না বস্। খুব জটিল ব্যাপার! তমাল বললো, হুমম সত্যিই জটিল কেস। চিন্তা করতে হবে। অনেক ভাবতে হবে।
লাফ দিয়ে উঠলো শালিনী, তাহলে চলুন বস্ ঘরে গিয়ে চিন্তা করবেন! তমাল চোখ পাকালো, এই এখন না! দাঁড়াও আগে থাকার একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা করি।
শালিনীকে নিয়ে দোতলায় উঠে এলো তমাল। কুহেলির ঘরেই পাওয়া গেল ওদের তিনজনকে। উৎসুক হয়ে আছে কি হল শোনার জন্য। ঢুকতেই শিপ্রা বললো, কি রে কাজ হলো কিছু? তমাল হেসে বললো, আরে দাঁড়া, কাজ তো সবে শুরু হলো। তারপর বললো, শোন শিপ্রা ভেবে দেখলাম কেসটা সমাধান করতে হলে আমার এই বাড়িতেই থাকা খুব প্রয়োজন। তুই ড্রাইভারকে দিয়ে আমার আর শালিনীর মালপত্র গুলো পাঠিয়ে দিস।
কথাটা শোনার পরে কুন্তলার মুখে দপ্ করে হাজার ওয়াটের আলো জ্বললো, আর শিপ্রার মুখটা নিমেষে অন্ধকারে ঢেকে গেল। বললো, ঠিক আছে পাঠিয়ে দেবো।
তাহলে আমিও যাই বস্। জিনিস পত্র তো সব ছড়ানো রয়েছে, শিপ্রাদি গুছিয়ে আনতে পারবে? আমি বরং যাই গুছিয়ে নিয়ে আসবো.. বললো শালিনী।
তমাল বললো, হুমম ভালো প্রস্তাব। শালিনী তুমিও বরং যাও, সেটাই ভালো হবে। শালিনী বললো, ওকে বস্। আসার পথে একটু মার্কেটটাও ঘুরে আসবো। কয়েকটা জিনিস কিনতে হবে।
কুন্তলা বললো, বৌদি রান্না হয়ে গেছে একবারে লাঞ্চ করেই যাও। কুহেলিও বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ লাঞ্চ করে যাও শিপ্রাদি। তাই ঠিক হল, লাঞ্চের পর শালিনী শিপ্রার সাথে গিয়ে ওদের মালপত্র নিয়ে আসবে।
তমাল উঠে জানলার কাছে গেল। আরও একবার ভালো করে পরীক্ষা করে বললো, এবার জানালাটা পরিষ্কার করে ফেলতে বলো কুন্তলা। কুন্তলারতনকে ডেকে সেটা বলে দিলো।
ঘন্টা খানেকের ভিতরে রতন জানলাটা পরিষ্কার করে ফেলল সানশেডে উঠে। তারপর তমালের কাছে এসে বললো, তমালদা একটু এদিকে আসবেন? কথা ছিল। তমাল বললো, চলো ছাদে যাওয়া যাক। দু'জন ছাদে উঠে এলো। তমাল একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, বলো, কি বলবে রতন?

kingsuk25@ জিমেইল ডট কম


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)