।১।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে কাঁধে একটা সনদ জুটেছিল বটে, কিন্তু কপালে জোটেনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি। বেশ কিছুদিন জুতোর শুকতলা ক্ষয় করে ঢাকার অলিগলি থেকে বহুতল ভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে দৌড়াদৌড়ি করলাম। মন-মতো একটা চাকরি তো দূরের কথা, এই ইট-পাথরের জঞ্জালে খেয়ে-পরে ব্যাচেলর জীবনটা টিকিয়ে রাখার মতো একটা অবলম্বনও ম্যানেজ করতে পারলাম না। আমার রেজাল্ট অবশ্য আকাশছোঁয়া কিছু ছিল না যে, লুফে নেওয়ার জন্য কর্পোরেট দুনিয়া হাঁ করে বসে থাকবে; আর এই শহরে আমার কোনো মামা-চাচা বা আত্মীয়ের জোরও নেই, যার ছায়ায় একটু আশ্রয় পাব। চাকরি যে একদমই পাইনি, তা নয়। যা পেয়েছি, তাতে আমার সম্মানে বা প্রয়োজনে পোষায় না। টিউশনির ক্ষয়ে আসা অল্প ক'টা টাকা দিয়ে মাসকাবারি খরচের লাগাম টানা যাচ্ছিল না কিছুতেই। শেষে যখন একজনের ‘ম্যানেজার’ হওয়ার চাকরিটা গ্রহণ করলাম, তখন আত্মসম্মানের চেয়ে পেটের খিদেটাই বোধহয় বেশি জরুরি ছিল।
মানুষ হয় কোম্পানির ম্যানেজার, আর আমি হয়েছি এক ব্যক্তির ম্যানেজার। ‘ম্যানেজার’ আসলে একটা কেতাবি নাম, সাজানো মোড়ক। এর ভেতরের আসল জিনিসটা হলো ফাই-ফরমাশ খাটার কাজ, একজন ব্যক্তিগত সহকারীর চেয়েও বেশি কিছু। অবশ্য আমি যার ম্যানেজার, তিনি একদম সাধারণ কেউ নন। এক সময়ের রুপালি পর্দার ঝড় তোলা নায়িকা। এখন সেই জনপ্রিয়তা আর নেই। বয়সের নদীর স্রোতে রূপ-যৌবন যেমন ভাটার দিকে, খ্যাতির আকাশেও তেমনই মেঘ জমেছে। আমার ম্যাডামের নাম, অপু বিশ্বাস। গেলো মাসেই ৩৬তম জন্মদিন পালন করেছেন।
আগের মতো এখন আর সিনেমার জন্য ফোন আসে না। সপ্তাহ ঘুরতেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্রে তার নামটা আর জ্বলজ্বল করে না। কাজ বলতে এখন শুধু, মাঝেমধ্যে কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সেজে ফিতা কেটে উদ্বোধন করা, আর তারপর মঞ্চের এক কোণায় চুপচাপ বসে থাকা। মাঝেমধ্যে টেলিভিশনের ‘রান্নাঘর’ বা ‘আজকের সন্ধ্যা’ টাইপ অনুষ্ঠানে সেলিব্রেটি গেস্ট হিসেবে ডাক পড়ে। এছাড়া আর বলার মতো কোনো কাজ নেই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে মেদ জমেছে, কমেছে সেই যৌবনের জলুস, যা একসময় লক্ষ কোটি পুরুষের হৃদয়ে কাঁপন ধরাত।
ম্যাডামের আলিশান ফ্ল্যাটে মানুষ বলতে শুধু উনি আর উনার ছেলে আব্রাম। অপু ম্যাডামের স্বামী, চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে তার দাম্পত্যের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাসায় আর স্থায়ী বাসিন্দা বলতে এক কাজের লোক আর একজন ড্রাইভার। ড্রাইভারও ঠিক সার্বক্ষণিক নয়। ম্যাডামের প্রয়োজন হলে ফোন দেন, সে গাড়ি নিয়ে হাজির হয়। বাকি সময় গাড়িটা একটা রেন্ট-এ-কার সার্ভিসে দেওয়া থাকে। এই টুকরো তথ্যটাই ম্যাডামের বর্তমান আর্থিক অবস্থার একটা ধূসর কিন্তু স্পষ্ট ছবি এঁকে দেয়। কাজ কম, আর ছেলে আব্রাহামকে কাজের মেয়েই প্রায় সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করে বলে অপু ম্যাডাম সারাদিন ঘরে শুয়ে-বসেই সময় কাটান।
আমার কাজের মধ্যে পড়ে কালেভদ্রে আসা অনুষ্ঠানের শিডিউল ঠিক রাখা, আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলা, আর ম্যাডামের সঙ্গে এখানে-সেখানে যাওয়া। কাজ না থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে অপু ম্যাডামের ফ্ল্যাটেই কাটাতে হয়। এই উদ্দেশ্যহীন বসে থাকাটাই হয়তো আমাকে তার জীবনের ভেতরের ছবিটা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। মাত্র কিছুদিন কাজ করেই আমি বুঝতে পারলাম, সোশ্যাল মিডিয়া আর পত্রিকার পাতায় অপু ম্যাম নিজেকে যতটা সুখী, স্বাবলম্বী আর প্রাণবন্ত দেখানোর চেষ্টা করেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। সেই হাসিখুশি চেহারার আড়ালে বাস করে একেবারে একা, হতাশ আর দুঃখী একজন মানুষ। তার বিশাল ফ্ল্যাটটাকে আমার একটা পোড়োবাড়ির মতো মনে হয়, যেখানে অতীতের কিছু আসবাব আর স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
আমার চাকরির সবচেয়ে কঠিন আর অন্ধকার দিকটা শুরু হয় রাতের বেলা। মাঝেমধ্যে অপু ম্যাম সেজেগুজে তৈরি হন। দামি পারফিউমের গন্ধে ফ্ল্যাটের থমথমে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আমি তাকে নিয়ে যাই শহরের নামীদামী সব হোটেলে। প্রথম প্রথম ম্যাডাম বলতেন, ‘এই প্রোগ্রাম’, ‘ওঁই ডিনার পার্টি’। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমার কাছে বিষয়টা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। আমি বুঝি, টাকার জন্য তাকে বড়লোক ক্লায়েন্টের সঙ্গে রাত কাটাতে যেতে হয়। এই ‘প্রোগ্রামগুলো’ আসলে তার টিকে থাকার লড়াইয়ের এক নির্মম বাস্তবতা।
রাতের এই তথাকথিত ‘প্রোগ্রামগুলো’তে আমিই অপু ম্যামকে ড্রাইভ করে নিয়ে যাই। ম্যাডাম চায় না,তার রেগুলার ড্রাইভার এসব ব্যাপারে জানুক। গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা দুজনই চুপ করে থাকি। রেডিওর মৃদু আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ থাকে না। বাইরের নিয়ন আলোর ঝলকানি গাড়ির কাঁচ গলে তার মুখের ওপর এসে পড়ে, মিলিয়ে যায়। সেই আলো-আঁধারিতে আমি তার চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা দেখতে পাই। সেখানে না থাকে কোনো আনন্দ, না থাকে কোনো উত্তেজনা। আমার হাত থাকে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ। কিন্তু আমার সমস্ত মনোযোগ পড়ে থাকে পেছনের সিটে বসা এই একা মানুষটার দিকে।
ভোররাতের দিকে আমি তাকে হোটেল থেকে তুলে আনি। অনেক দিন এমনও হয় যে, অপু ম্যাম সম্পূর্ণ মাতাল থাকেন। আমাকে উনাকে ধরে নিয়ে সিটে বসাতে হয়। আমি তার ম্যানেজার। তার ফাই-ফরমাশ খাটি, তার শিডিউল দেখি। কিন্তু আমার আসল কাজটা হয়ত এটাই—অপু ম্যাডামের এই দ্বৈত জীবনের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকা। আমি তার আলো ঝলমলে অতীতের ছায়া আর অন্ধকার বর্তমানের মধ্যে সেতু তৈরি করে দিই। এই চাকরির টাকাটা আমার খুব দরকার। কিন্তু প্রতি রাতে যখন আমি তাকে হোটেলের গেটে নামিয়ে দিয়ে আসি, আমার মনে হয়, আমি শুধু একজন কর্মচারী নই। আমি যেন তার এই পতনের একজন অংশীদার, তার এই নীরব কান্নার একজন শ্রোতা।
আমার বয়স ২৬, অপু ম্যাম আমার থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়। আমাদের দেশে এই বয়সের নারী সাধারনত ‘আন্টি’ হয়ে যান। আমি নিরেট ভদ্র ছেলে। প্রথম প্রথম এই রাতের সফরগুলোতে তার জন্য আমার কেবল করুণাই হতো। কিন্তু এই নৈকট্য, এই নীরবতা, আর তার এই অসহায় সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে আমার ভেতরে এক অদ্ভুত পরিবর্তন আসতে শুরু করল। এই রাতের সফরগুলো আস্তে আস্তে ‘আন্টির’ বয়সী এই একসময়ের নায়িকার প্রতি আমার মনে প্রেম জাগিয়ে তুলল। কিছুদিনের মধ্যেই আমি টের পেলাম, সেই প্রেম কেবল সহানুভূতি নয়, তা মোড় নিচ্ছে এক তীব্র শারীরিক আকর্ষণের দিকে।
চাকরির মাত্র মাস ছয়েকের মাথাতেই আমি খেয়াল করলাম, অপু ম্যাম আমার স্বপ্নের নায়িকায় পরিণত হয়েছেন। দিনের বেলায় তার ক্লান্ত, বিষণ্ণ মুখ দেখে আমার মায়া হয়। কিন্তু রাতে যখন তিনি সাজেন, তার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে, তার চোখের চাহনিতে আমি এক অন্য নারীকে খুঁজে পাই। আমার শয়নে, স্বপনে তার শরীর, তার কণ্ঠস্বর ভেসে বেড়ায়। তার চোখ, মুখ, তার পারফিউমের গন্ধ আমার জন্য এক অবাধ্য আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
ভোররাতের দিকে আমি তাকে হোটেল থেকে তুলে আনি। অনেক দিন এমনও হয় যে, অপু ম্যাম সম্পূর্ণ মাতাল থাকেন। আমাকে তাকে ধরে নিয়ে গাড়িতে আমার ড্রাইভিং সিটের পাশে বসাতে হয়। তার শরীরের ভার যখন আমার কাঁধে এসে পড়ে, তার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা যখন আমার ঘাড়ে লাগে, তখন আমার ভেতরটা তোলপাড় করে ওঠে। একদিকে তার এই অবস্থার জন্য আমার তীব্র কষ্ট হয়, অন্যদিকে এই নৈকট্য আমার ভেতর এক নিষিদ্ধ শিহরণ জাগিয়ে তোলে।
অনেক সময় মাতাল অপু ম্যামকে সিটে বসানোর সময় আমি ইচ্ছে করে তাঁর স্তন হাত রাখি কিংবা দীর্ঘ সময় পিঠে হাত বুলাই। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি ভাল ছেলে। বাসায় ফিরে যখন মনে পরে অপু ম্যামের মাতাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমি এসব করেছি, তখন প্রচন্ড অনুতাপ হয়। কিন্তু আমি নিজেকে আটকাতে পারি না। আমার বিবেক নিষেধ করে কিন্তু ওঁই অবস্থায় আমার মাথায় মাল উঠে যায়।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে কাঁধে একটা সনদ জুটেছিল বটে, কিন্তু কপালে জোটেনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি। বেশ কিছুদিন জুতোর শুকতলা ক্ষয় করে ঢাকার অলিগলি থেকে বহুতল ভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে দৌড়াদৌড়ি করলাম। মন-মতো একটা চাকরি তো দূরের কথা, এই ইট-পাথরের জঞ্জালে খেয়ে-পরে ব্যাচেলর জীবনটা টিকিয়ে রাখার মতো একটা অবলম্বনও ম্যানেজ করতে পারলাম না। আমার রেজাল্ট অবশ্য আকাশছোঁয়া কিছু ছিল না যে, লুফে নেওয়ার জন্য কর্পোরেট দুনিয়া হাঁ করে বসে থাকবে; আর এই শহরে আমার কোনো মামা-চাচা বা আত্মীয়ের জোরও নেই, যার ছায়ায় একটু আশ্রয় পাব। চাকরি যে একদমই পাইনি, তা নয়। যা পেয়েছি, তাতে আমার সম্মানে বা প্রয়োজনে পোষায় না। টিউশনির ক্ষয়ে আসা অল্প ক'টা টাকা দিয়ে মাসকাবারি খরচের লাগাম টানা যাচ্ছিল না কিছুতেই। শেষে যখন একজনের ‘ম্যানেজার’ হওয়ার চাকরিটা গ্রহণ করলাম, তখন আত্মসম্মানের চেয়ে পেটের খিদেটাই বোধহয় বেশি জরুরি ছিল।
মানুষ হয় কোম্পানির ম্যানেজার, আর আমি হয়েছি এক ব্যক্তির ম্যানেজার। ‘ম্যানেজার’ আসলে একটা কেতাবি নাম, সাজানো মোড়ক। এর ভেতরের আসল জিনিসটা হলো ফাই-ফরমাশ খাটার কাজ, একজন ব্যক্তিগত সহকারীর চেয়েও বেশি কিছু। অবশ্য আমি যার ম্যানেজার, তিনি একদম সাধারণ কেউ নন। এক সময়ের রুপালি পর্দার ঝড় তোলা নায়িকা। এখন সেই জনপ্রিয়তা আর নেই। বয়সের নদীর স্রোতে রূপ-যৌবন যেমন ভাটার দিকে, খ্যাতির আকাশেও তেমনই মেঘ জমেছে। আমার ম্যাডামের নাম, অপু বিশ্বাস। গেলো মাসেই ৩৬তম জন্মদিন পালন করেছেন।
আগের মতো এখন আর সিনেমার জন্য ফোন আসে না। সপ্তাহ ঘুরতেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্রে তার নামটা আর জ্বলজ্বল করে না। কাজ বলতে এখন শুধু, মাঝেমধ্যে কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সেজে ফিতা কেটে উদ্বোধন করা, আর তারপর মঞ্চের এক কোণায় চুপচাপ বসে থাকা। মাঝেমধ্যে টেলিভিশনের ‘রান্নাঘর’ বা ‘আজকের সন্ধ্যা’ টাইপ অনুষ্ঠানে সেলিব্রেটি গেস্ট হিসেবে ডাক পড়ে। এছাড়া আর বলার মতো কোনো কাজ নেই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে মেদ জমেছে, কমেছে সেই যৌবনের জলুস, যা একসময় লক্ষ কোটি পুরুষের হৃদয়ে কাঁপন ধরাত।
ম্যাডামের আলিশান ফ্ল্যাটে মানুষ বলতে শুধু উনি আর উনার ছেলে আব্রাম। অপু ম্যাডামের স্বামী, চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে তার দাম্পত্যের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাসায় আর স্থায়ী বাসিন্দা বলতে এক কাজের লোক আর একজন ড্রাইভার। ড্রাইভারও ঠিক সার্বক্ষণিক নয়। ম্যাডামের প্রয়োজন হলে ফোন দেন, সে গাড়ি নিয়ে হাজির হয়। বাকি সময় গাড়িটা একটা রেন্ট-এ-কার সার্ভিসে দেওয়া থাকে। এই টুকরো তথ্যটাই ম্যাডামের বর্তমান আর্থিক অবস্থার একটা ধূসর কিন্তু স্পষ্ট ছবি এঁকে দেয়। কাজ কম, আর ছেলে আব্রাহামকে কাজের মেয়েই প্রায় সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করে বলে অপু ম্যাডাম সারাদিন ঘরে শুয়ে-বসেই সময় কাটান।
আমার কাজের মধ্যে পড়ে কালেভদ্রে আসা অনুষ্ঠানের শিডিউল ঠিক রাখা, আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলা, আর ম্যাডামের সঙ্গে এখানে-সেখানে যাওয়া। কাজ না থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে অপু ম্যাডামের ফ্ল্যাটেই কাটাতে হয়। এই উদ্দেশ্যহীন বসে থাকাটাই হয়তো আমাকে তার জীবনের ভেতরের ছবিটা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। মাত্র কিছুদিন কাজ করেই আমি বুঝতে পারলাম, সোশ্যাল মিডিয়া আর পত্রিকার পাতায় অপু ম্যাম নিজেকে যতটা সুখী, স্বাবলম্বী আর প্রাণবন্ত দেখানোর চেষ্টা করেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। সেই হাসিখুশি চেহারার আড়ালে বাস করে একেবারে একা, হতাশ আর দুঃখী একজন মানুষ। তার বিশাল ফ্ল্যাটটাকে আমার একটা পোড়োবাড়ির মতো মনে হয়, যেখানে অতীতের কিছু আসবাব আর স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
আমার চাকরির সবচেয়ে কঠিন আর অন্ধকার দিকটা শুরু হয় রাতের বেলা। মাঝেমধ্যে অপু ম্যাম সেজেগুজে তৈরি হন। দামি পারফিউমের গন্ধে ফ্ল্যাটের থমথমে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আমি তাকে নিয়ে যাই শহরের নামীদামী সব হোটেলে। প্রথম প্রথম ম্যাডাম বলতেন, ‘এই প্রোগ্রাম’, ‘ওঁই ডিনার পার্টি’। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমার কাছে বিষয়টা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। আমি বুঝি, টাকার জন্য তাকে বড়লোক ক্লায়েন্টের সঙ্গে রাত কাটাতে যেতে হয়। এই ‘প্রোগ্রামগুলো’ আসলে তার টিকে থাকার লড়াইয়ের এক নির্মম বাস্তবতা।
রাতের এই তথাকথিত ‘প্রোগ্রামগুলো’তে আমিই অপু ম্যামকে ড্রাইভ করে নিয়ে যাই। ম্যাডাম চায় না,তার রেগুলার ড্রাইভার এসব ব্যাপারে জানুক। গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা দুজনই চুপ করে থাকি। রেডিওর মৃদু আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ থাকে না। বাইরের নিয়ন আলোর ঝলকানি গাড়ির কাঁচ গলে তার মুখের ওপর এসে পড়ে, মিলিয়ে যায়। সেই আলো-আঁধারিতে আমি তার চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা দেখতে পাই। সেখানে না থাকে কোনো আনন্দ, না থাকে কোনো উত্তেজনা। আমার হাত থাকে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ। কিন্তু আমার সমস্ত মনোযোগ পড়ে থাকে পেছনের সিটে বসা এই একা মানুষটার দিকে।
ভোররাতের দিকে আমি তাকে হোটেল থেকে তুলে আনি। অনেক দিন এমনও হয় যে, অপু ম্যাম সম্পূর্ণ মাতাল থাকেন। আমাকে উনাকে ধরে নিয়ে সিটে বসাতে হয়। আমি তার ম্যানেজার। তার ফাই-ফরমাশ খাটি, তার শিডিউল দেখি। কিন্তু আমার আসল কাজটা হয়ত এটাই—অপু ম্যাডামের এই দ্বৈত জীবনের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকা। আমি তার আলো ঝলমলে অতীতের ছায়া আর অন্ধকার বর্তমানের মধ্যে সেতু তৈরি করে দিই। এই চাকরির টাকাটা আমার খুব দরকার। কিন্তু প্রতি রাতে যখন আমি তাকে হোটেলের গেটে নামিয়ে দিয়ে আসি, আমার মনে হয়, আমি শুধু একজন কর্মচারী নই। আমি যেন তার এই পতনের একজন অংশীদার, তার এই নীরব কান্নার একজন শ্রোতা।
আমার বয়স ২৬, অপু ম্যাম আমার থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়। আমাদের দেশে এই বয়সের নারী সাধারনত ‘আন্টি’ হয়ে যান। আমি নিরেট ভদ্র ছেলে। প্রথম প্রথম এই রাতের সফরগুলোতে তার জন্য আমার কেবল করুণাই হতো। কিন্তু এই নৈকট্য, এই নীরবতা, আর তার এই অসহায় সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে আমার ভেতরে এক অদ্ভুত পরিবর্তন আসতে শুরু করল। এই রাতের সফরগুলো আস্তে আস্তে ‘আন্টির’ বয়সী এই একসময়ের নায়িকার প্রতি আমার মনে প্রেম জাগিয়ে তুলল। কিছুদিনের মধ্যেই আমি টের পেলাম, সেই প্রেম কেবল সহানুভূতি নয়, তা মোড় নিচ্ছে এক তীব্র শারীরিক আকর্ষণের দিকে।
চাকরির মাত্র মাস ছয়েকের মাথাতেই আমি খেয়াল করলাম, অপু ম্যাম আমার স্বপ্নের নায়িকায় পরিণত হয়েছেন। দিনের বেলায় তার ক্লান্ত, বিষণ্ণ মুখ দেখে আমার মায়া হয়। কিন্তু রাতে যখন তিনি সাজেন, তার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে, তার চোখের চাহনিতে আমি এক অন্য নারীকে খুঁজে পাই। আমার শয়নে, স্বপনে তার শরীর, তার কণ্ঠস্বর ভেসে বেড়ায়। তার চোখ, মুখ, তার পারফিউমের গন্ধ আমার জন্য এক অবাধ্য আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
ভোররাতের দিকে আমি তাকে হোটেল থেকে তুলে আনি। অনেক দিন এমনও হয় যে, অপু ম্যাম সম্পূর্ণ মাতাল থাকেন। আমাকে তাকে ধরে নিয়ে গাড়িতে আমার ড্রাইভিং সিটের পাশে বসাতে হয়। তার শরীরের ভার যখন আমার কাঁধে এসে পড়ে, তার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা যখন আমার ঘাড়ে লাগে, তখন আমার ভেতরটা তোলপাড় করে ওঠে। একদিকে তার এই অবস্থার জন্য আমার তীব্র কষ্ট হয়, অন্যদিকে এই নৈকট্য আমার ভেতর এক নিষিদ্ধ শিহরণ জাগিয়ে তোলে।
অনেক সময় মাতাল অপু ম্যামকে সিটে বসানোর সময় আমি ইচ্ছে করে তাঁর স্তন হাত রাখি কিংবা দীর্ঘ সময় পিঠে হাত বুলাই। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি ভাল ছেলে। বাসায় ফিরে যখন মনে পরে অপু ম্যামের মাতাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমি এসব করেছি, তখন প্রচন্ড অনুতাপ হয়। কিন্তু আমি নিজেকে আটকাতে পারি না। আমার বিবেক নিষেধ করে কিন্তু ওঁই অবস্থায় আমার মাথায় মাল উঠে যায়।
কিছুদিন পরে আমার মনে হল, অপু ম্যাডাম আমার কীর্তিকলাপ সব বুঝে কিন্তু তাও কিছু বলে না। হয়ত উপভোগ করে, অথবা আমাকে হাতেনাতে ধরে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার রিস্ক নিতে চায় না। কারণ, আমার মত সৎ এবং সিক্রেট কিপার ম্যানেজার পাওয়ার সুযোগ নেই।
~ চলবে


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)