09-12-2025, 08:38 PM
(This post was last modified: 09-12-2025, 10:25 PM by hunt_ethan. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রাতের গভীরতা সিলেটের পুরোনো শহরটাকে আরও নিস্তব্ধ করে তুলেছিল। বৃষ্টির পর ভিজে থাকা রাস্তায় নীয়ন আলো মরে যাওয়া জোনাকির মতো ঝিলমিল করছিল। বারান্দায় বসে থাকা ফাহমিদা ফোনে পাওয়া অদ্ভুত বার্তাগুলো মনে করে থেমে গেলেন। সাধারণত তার মন ধর্মীয় স্মরণে শান্ত থাকে, কিন্তু আজ যেন সেই শান্তি কোথাও আটকে গেছে। শহরের বাতাসে এক অদ্ভুত অচেনা ঘ্রাণ, যেন কোনো অদৃশ্য চোখ তাকে লক্ষ করছে। ভেতরে ভেতরে সে জানত—এই রাতের শুরুটা তার জীবনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা নীরবতাকে ভেঙে ফেলবে।
পরদিন সকালে শামিম তাকে বেশ অস্থির দেখল। নাস্তার টেবিলে বসে থাকা ফাহমিদার চোখে যেন অদ্ভুত ভয় আর কৌতূহল একসাথে খেলা করছে।
“মা, ঠিক আছো?” - শামিম জিজ্ঞেস করল।
ফাহমিদা মাথা নাড়লেন। তিনি জানালেন না গত রাতের বার্তার কথা; অন্তরের গভীরে কিছু তাকে চুপ করে থাকতে বলছিল। শামিম কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তার মা এমন নীরব কখনো হয় না। কিন্তু সে আর কিছু বলল না। নিজের ব্যাগ কাঁধে তুলে বেরিয়ে গেল, মায়ের জন্য অদৃশ্য একটা উদ্বেগ পিছনে ফেলে।
দুপুরের দিকে ফাহমিদা বাজারে গেলেন কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। পুরোনো বাজারের রাস্তা সবসময় মতোই ভিড়, ধুলো আর চায়ের দোকানের ধোঁয়া মেশানো কোলাহলে ভরা। কিন্তু ফাহমিদা আজ যেন সবকিছুর মধ্যে একটা অদৃশ্য দূরত্ব অনুভব করছিলেন। তিনি দোকানের কাউন্টারে টাকা দিতে গিয়ে দেখলেন তার ফোনটি হাত থেকে পিছলে মাটিতে পড়ে গেল। ফোনটি তুলতেই সামনে একটি অদ্ভুতভাবে শান্ত ভঙ্গির কণ্ঠ শোনা গেল।
“খেয়াল রাখবেন। আজ রাস্তাগুলো ভিজে।”
ফাহমিদা মাথা তুলতেই দেখতে পেলেন একজন যুবক। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, কিন্তু চোখে অস্বাভাবিক গভীরতা। মুখে দাড়ির হালকা রেখা, পরনে সাদামাটা কালো জামা, আর ভদ্র, নরম গলায় একটি অভ্যস্ত সম্মান।
“ধন্যবাদ,”—ফাহমিদা বললেন, কিন্তু তখনও বুঝতে পারেননি তার সামনে থাকা ছেলেটা নীরবে তাকে কতদিন ধরে লক্ষ করছে।
কয়েক পা এগোনোর পর তিনি পিছনে তাকালেন। যুবকটি দাঁড়িয়ে নেই, কোথাও মিলিয়ে গেছে, ঠিক যেন কোনো ছায়া। তার মধ্যে রহস্যের গন্ধ ছিল, কিন্তু তাতে ভয় না, বরং গভীর, অনুচ্চারিত পরিচিতি। তবে পরিচয় কী, সেটা তখনো তিনি জানতেন না।
সন্ধ্যায় ফয়সালের ফোন এল। তার স্বামী বলল সে হয়তো পরের সপ্তাহে সিলেটে আসবে। কণ্ঠটা বরাবরের মতোই ঠাণ্ডা, দূরত্বে ভরা যেন সম্পর্কের মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই।
ফাহমিদা ফোনটা কানে ধরে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল অতীতের দহন--ফয়সালের বিশ্বাসঘাতকতা, তার নীরব সহ্য, আর নিজের মনের গভীরে জমে থাকা অপূর্ণ ক্ষমা। তিনি স্বামীর অপরাধকে মাফ করেননি, কিন্তু সংসার ভাঙার কথাও ভাবেননি। এই দ্বিধাই তাকে বছরের পর বছর ধরে নিঃশব্দে ক্ষয় করে দিয়েছে।
রাত নামার পর আবার ফোনে বার্তা এল—
“আজ আপনাকে বাজারে দেখলাম। আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।”
ফাহমিদার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। বাজারে তাকে দেখেছিল? অর্থাৎ দুপুরের সেই যুবক? নাকি অন্য কেউ?
তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। কিন্তু বার্তাটি যেন তার চারপাশে ঘন কুয়াশার মতো ছড়িয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে তার বাড়ির গেটের সামনে তিনি হঠাৎ দেখতে পেলে, একটি ছোট কাগজ ভাঁজ করে রেখে গেছে কেউ। খুলতেই লেখা ছিল,
“আপনি নিরাপদ। টেনশনের কোনো কারণ নেই। আমি দূর থেকে খেয়াল রাখি।”
এই প্রথম তিনি সেই হাতের লেখা দেখছেন। অক্ষরগুলো শান্ত, নিয়ন্ত্রিত, অদ্ভুতভাবে পরিচিত। যেন কারো দীর্ঘদিনের নীরব পর্যবেক্ষণের কথা বলে।
সন্ধ্যার নামাজের পর ফাহমিদা বারান্দায় বসেছিলেন। তিনি গভীরভাবে অনুভব করলেন, যুবকটি তাকে শুধু চেনে না; সে অনেকদিন ধরেই জানে তিনি কোথায় যান, কেমন থাকেন, কীভাবে নীরবে বেঁচে থাকেন। অদৃশ্যভাবে তার সমস্ত নির্জনতার সাক্ষী হয়েছে সে।
হঠাৎ নিচের রাস্তায় পাতলা বাতির আলোয় সেই একই যুবককে দেখা গেল।
সে হাঁটছিল ধীরে, মাথা নিচু, যেন নিজেকে লুকাতে চাইছে।
মুহূর্তের জন্য চোখ তুলে বারান্দার দিকে তাকাল, দৃষ্টিটা ছিল স্থির, কিন্তু সম্মানমিশ্রিত।
ঠিক পরেই সে অন্ধকারের মধ্যে মিশে গেল।
ফাহমিদা বুঝলেন,
এটাই রেহান সাদিক।
এটাই তার ছায়া।
যে মানুষটি বাইরে থেকে ভদ্র, নীরব, .; কিন্তু অন্তরে বহন করে এক গাঢ় রহস্যের অন্ধকার।
রাত বাড়তে লাগল। ফাহমিদা তার হাতে ধরা ফোনটি শক্ত করে ধরলেন।
তিনি জানতেন-এই পরিচয় শুধু শুরু।
রেহান তার জীবনে প্রবেশ করছে নিঃশব্দে, ছায়ার মতো।
তার চোখে কোনো পাপিষ্ঠতা নেই, কিন্তু আছে এক অদ্ভুত আকর্ষণ, এক গভীর পর্যবেক্ষণ, আর লুকানো উদ্দেশ্য।
নীয়ন আলো জানালায় কাঁপতে কাঁপতে নেভে।
ফাহমিদার বুকের মাঝের নিস্তব্ধতা আর আগের মতো নেই।
এই শহরের অন্ধকার আর তার নিজের অন্ধকার—দু’টিই যেন ধীরে ধীরে এক হয়ে যাচ্ছে।
এ রাতেই তিনি উপলব্ধি করলেন,
রেহানের সাথে তার পরিচয় কেবল দুর্ঘটনা নয়।
এটি শুরু হয়েছে অনেক আগেই, তিনি না জানলেও।
আর এখন, আর পেছনে ফেরা নেই।
পরদিন সকালে শামিম তাকে বেশ অস্থির দেখল। নাস্তার টেবিলে বসে থাকা ফাহমিদার চোখে যেন অদ্ভুত ভয় আর কৌতূহল একসাথে খেলা করছে।
“মা, ঠিক আছো?” - শামিম জিজ্ঞেস করল।
ফাহমিদা মাথা নাড়লেন। তিনি জানালেন না গত রাতের বার্তার কথা; অন্তরের গভীরে কিছু তাকে চুপ করে থাকতে বলছিল। শামিম কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তার মা এমন নীরব কখনো হয় না। কিন্তু সে আর কিছু বলল না। নিজের ব্যাগ কাঁধে তুলে বেরিয়ে গেল, মায়ের জন্য অদৃশ্য একটা উদ্বেগ পিছনে ফেলে।
দুপুরের দিকে ফাহমিদা বাজারে গেলেন কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। পুরোনো বাজারের রাস্তা সবসময় মতোই ভিড়, ধুলো আর চায়ের দোকানের ধোঁয়া মেশানো কোলাহলে ভরা। কিন্তু ফাহমিদা আজ যেন সবকিছুর মধ্যে একটা অদৃশ্য দূরত্ব অনুভব করছিলেন। তিনি দোকানের কাউন্টারে টাকা দিতে গিয়ে দেখলেন তার ফোনটি হাত থেকে পিছলে মাটিতে পড়ে গেল। ফোনটি তুলতেই সামনে একটি অদ্ভুতভাবে শান্ত ভঙ্গির কণ্ঠ শোনা গেল।
“খেয়াল রাখবেন। আজ রাস্তাগুলো ভিজে।”
ফাহমিদা মাথা তুলতেই দেখতে পেলেন একজন যুবক। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, কিন্তু চোখে অস্বাভাবিক গভীরতা। মুখে দাড়ির হালকা রেখা, পরনে সাদামাটা কালো জামা, আর ভদ্র, নরম গলায় একটি অভ্যস্ত সম্মান।
“ধন্যবাদ,”—ফাহমিদা বললেন, কিন্তু তখনও বুঝতে পারেননি তার সামনে থাকা ছেলেটা নীরবে তাকে কতদিন ধরে লক্ষ করছে।
কয়েক পা এগোনোর পর তিনি পিছনে তাকালেন। যুবকটি দাঁড়িয়ে নেই, কোথাও মিলিয়ে গেছে, ঠিক যেন কোনো ছায়া। তার মধ্যে রহস্যের গন্ধ ছিল, কিন্তু তাতে ভয় না, বরং গভীর, অনুচ্চারিত পরিচিতি। তবে পরিচয় কী, সেটা তখনো তিনি জানতেন না।
সন্ধ্যায় ফয়সালের ফোন এল। তার স্বামী বলল সে হয়তো পরের সপ্তাহে সিলেটে আসবে। কণ্ঠটা বরাবরের মতোই ঠাণ্ডা, দূরত্বে ভরা যেন সম্পর্কের মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই।
ফাহমিদা ফোনটা কানে ধরে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল অতীতের দহন--ফয়সালের বিশ্বাসঘাতকতা, তার নীরব সহ্য, আর নিজের মনের গভীরে জমে থাকা অপূর্ণ ক্ষমা। তিনি স্বামীর অপরাধকে মাফ করেননি, কিন্তু সংসার ভাঙার কথাও ভাবেননি। এই দ্বিধাই তাকে বছরের পর বছর ধরে নিঃশব্দে ক্ষয় করে দিয়েছে।
রাত নামার পর আবার ফোনে বার্তা এল—
“আজ আপনাকে বাজারে দেখলাম। আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।”
ফাহমিদার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। বাজারে তাকে দেখেছিল? অর্থাৎ দুপুরের সেই যুবক? নাকি অন্য কেউ?
তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। কিন্তু বার্তাটি যেন তার চারপাশে ঘন কুয়াশার মতো ছড়িয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে তার বাড়ির গেটের সামনে তিনি হঠাৎ দেখতে পেলে, একটি ছোট কাগজ ভাঁজ করে রেখে গেছে কেউ। খুলতেই লেখা ছিল,
“আপনি নিরাপদ। টেনশনের কোনো কারণ নেই। আমি দূর থেকে খেয়াল রাখি।”
এই প্রথম তিনি সেই হাতের লেখা দেখছেন। অক্ষরগুলো শান্ত, নিয়ন্ত্রিত, অদ্ভুতভাবে পরিচিত। যেন কারো দীর্ঘদিনের নীরব পর্যবেক্ষণের কথা বলে।
সন্ধ্যার নামাজের পর ফাহমিদা বারান্দায় বসেছিলেন। তিনি গভীরভাবে অনুভব করলেন, যুবকটি তাকে শুধু চেনে না; সে অনেকদিন ধরেই জানে তিনি কোথায় যান, কেমন থাকেন, কীভাবে নীরবে বেঁচে থাকেন। অদৃশ্যভাবে তার সমস্ত নির্জনতার সাক্ষী হয়েছে সে।
হঠাৎ নিচের রাস্তায় পাতলা বাতির আলোয় সেই একই যুবককে দেখা গেল।
সে হাঁটছিল ধীরে, মাথা নিচু, যেন নিজেকে লুকাতে চাইছে।
মুহূর্তের জন্য চোখ তুলে বারান্দার দিকে তাকাল, দৃষ্টিটা ছিল স্থির, কিন্তু সম্মানমিশ্রিত।
ঠিক পরেই সে অন্ধকারের মধ্যে মিশে গেল।
ফাহমিদা বুঝলেন,
এটাই রেহান সাদিক।
এটাই তার ছায়া।
যে মানুষটি বাইরে থেকে ভদ্র, নীরব, .; কিন্তু অন্তরে বহন করে এক গাঢ় রহস্যের অন্ধকার।
রাত বাড়তে লাগল। ফাহমিদা তার হাতে ধরা ফোনটি শক্ত করে ধরলেন।
তিনি জানতেন-এই পরিচয় শুধু শুরু।
রেহান তার জীবনে প্রবেশ করছে নিঃশব্দে, ছায়ার মতো।
তার চোখে কোনো পাপিষ্ঠতা নেই, কিন্তু আছে এক অদ্ভুত আকর্ষণ, এক গভীর পর্যবেক্ষণ, আর লুকানো উদ্দেশ্য।
নীয়ন আলো জানালায় কাঁপতে কাঁপতে নেভে।
ফাহমিদার বুকের মাঝের নিস্তব্ধতা আর আগের মতো নেই।
এই শহরের অন্ধকার আর তার নিজের অন্ধকার—দু’টিই যেন ধীরে ধীরে এক হয়ে যাচ্ছে।
এ রাতেই তিনি উপলব্ধি করলেন,
রেহানের সাথে তার পরিচয় কেবল দুর্ঘটনা নয়।
এটি শুরু হয়েছে অনেক আগেই, তিনি না জানলেও।
আর এখন, আর পেছনে ফেরা নেই।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)