(৪১)
ঘুম ভাঙতেই মন খারাপের নিউজ। আমি এত করে চাই, আমার দুনিয়ায় যেন খারাপ নিউজ কিংবা খারাপ পরিস্থিতি না আসুক। প্রকৃতির উপর আমাদের হাত নাই। জীবনে আমরা যতুই প্লান করি, প্রকৃতি নিজেও কিছু প্লান করে রাখে। আর তার প্লানের কাছে আমাদের প্লান যাস্ট নাথিং।
“শুনছো, ফাউজিয়া আপুর বাসা থেকে সকাল সকাল ফোন এসেছে। জরুরি ডাকছেন উনাকে।”
“কেন? কোনো দু:সংবাদ?”
“বাসাই নাকি কিছুই বলছেনা। জরুরি ডাকছে। আপুরা বের হচ্ছে। তুমি উঠে ফ্রেস হয়ে কাজে বসো। আমি পরিক্ষা দিতে চলে গেলাম।”
এমন জরুরি ডাক কেন আসতে পারে? বিয়ের সংবাদ বাসাই জেনে গেছে??? কিন্তু কিভাবে জানবে? এই পরিবার ছাড়া তো দুনিয়ার কেউ জানেনা। নাকি তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে? মেয়েকে জানানো ছাড়া বিয়ে ঠিক করে নিবে? অবশ্য বাবা মা যখন সন্তানের অযৌক্তিক প্রেমের বিষয়ে জানতে পারে তখন তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। তারা তখন সন্তানের কোনো মতামত জানার চেস্টা করেন না।
“ওরা সকালে খাইসে?”
“না।খাবেনা বলছে। বের হচ্ছে।”
“আচ্ছা তুমি সাবধানে যাও। আমি ওদের সাথে কথা বলছি। আম্মাকে কলেজ পাঠাবো তোমাকে আনতে?”
“না গো থাক। আমি নিজেই চলে আসবো।”
“আচ্ছা ভালোভাবে পরিক্ষা দিও।”
আমি ফ্রেস হয়ে ওদের রুমে গেলাম।দুজনেই ব্যাগ গোছাচ্ছে।
“এই ফাউজি, বাসাই কি হইসে রে?”
“জানিনা রে। সকাল সকাল আব্বু ফোন করেই বলছে, জরুরি দরকার আছে, বাসাই আসো এখনি।”
“কিছুই বললোনা?”
“না। আমার খুউব ভয় করছে রাব্বীল।”
সৈকত মুখ খুললো, “নাকি ফাউজিয়াকে বাড়ি পাঠাবোনা?”
“পাগলের মত কথা বলিস না। বাসা যাক। আগে দেখুক গিয়ে সমস্যাটা কি।অবস্থা বুঝে তখন ব্যবস্থা নিবে।”
ওরা শুধুমাত্র গায়ের পোশাক নিয়ে বের হলো। যাবার সময় শাশুড়ির থেকে দুয়া চেয়ে নিলো ফাউজিয়া। আম্মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে দিলো।
বিদায় মুহুর্তে ফাউজিয়া আম্মাকে জোরিয়ে ধরে কেদে দিলো।
আম্মা তার পিঠ চাপরিয়ে বললেন, “বেটি তুমি কোনো চিন্তা করোনা। বাসাই যদি উল্টাপাল্টা কিছু দেখো, তাহলে তোমার এই মায়ের কাছে চলে আসো। আমার কাছেই থাকবা।”
ওরা চলে গেলো। শাশুড়ি আর আমি গেটে দাঁড়িয়ে শেষ বিদায় জানালাম। শাশুড়ির চোখ ছলছল করছে। এই বুঝি কেদে দিল।
“আম্মা চলেন ভেতরে।”
“ওদের জন্য খুউব খারাপ লাগছে বেটা! আল্লাহ না করুক ওদের কোনো বিপদ হোক।”
“আপনি এতো চিন্তা কইরেন না তো! ওরা দেইখেন সহি-সালামতে আবার ফিরে আসবে। এমনিতেই ওকে বাসাই ডাকসে। চলেন ভেতরে। এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা।”
আমি উনার পিঠ বরাবর একটা হাত পেচিয়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে চললাম। উনি আমার সাপর্ট পেয়ে আমার গায়ে শরির এলিয়ে দিলো। আমি শান্তনামূলক হাতটা উনার পিঠে বুলাতে বুলাতে বাডির ভেতরে চললাম। সময় হয়ে আসছে। আমাকে আবার কাজে বসতে হবে। উনাকে আমার রুমেই এনে বেডে সুইয়ে দিলাম। গায়ের উপর চাদরটা দিয়ে উনার কপালে একটা চুমু দিলাম।
“আম্মা আপনি সুয়ে থাকেন। একটু ঘুমান। আমি মিটিং শেষ করে নিই। তারপর মা বেটা সারাবেলা বসে গল্প করবো।”
উনি স্থির আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কেমন যেন এক চাহনি। মুখে কোনো কথা নেই। কথা বলছেন চাহনিতে। চোখের এই ভাষা কিছুটা হলেও আমার পরিচিত।
মিমের চাহনিতেও দেখেছি–----তবে এতোটা ডিপ না। এতোটা মনোযোগী না। এতোটা আকৃষ্ট না। এই চাহনিকে উপেক্ষা করা কঠিন।
“বেটা তোমার মিটিং এর সময় কি হয়েই গেছে?”
ইশশ, চোখের ভাষা মুখেই প্রকাশ করে দিলেন।
ফোন চেক করলাম। ৬:৫৫।
“জি আম্মা। আপনি একটু ঘুমান। আমি মিটিং শেষ করেই আপনার কাছে চলে আসবো।”
মন, দেহ যেন আটকে গেছে উনার কাছে। আর উঠতে মন চাচ্ছেনা। অগত্যা উঠতে হলো। উপাই নেই। জীবনের কাছে মাঝে মাঝে আবেগ মূল্যহীন।
উনি সুয়ে থাকলেন। আমি উঠলাম। উনি এখনো চেয়ে আছেন। ইশশ, শালা মিটিং না থাকলে কাজকে চুদতাম না। উনার পাশে গিয়ে উনাকে জোরিয়ে ধরে থাকতাম কিছুক্ষণ। এমন চাহনিকে উপেক্ষা করবে যে, সে এক বোকাচোদা, গান্ডু।
মিটিং শুরু হলো। কথা বলছেন মামুন ভাই। বুঝাচ্ছেন গত দিনের কাজের অংশ। বুঝানো হলে আজকের দিনের কাজের নির্দেশনে দিবেন। আমার মন বসছেনা। মন শাশুড়ির কাছে। তাকিয়ে দেখলাম উনি এখনো চেয়ে আছেন আমার দিকে।
উনার “চাহনি” একটা লিখার কথা মনে করিয়ে দিলো। ফেসবুকে পড়েছিলাম।
মধ্যবয়সী নারীর মোহ
—--- “মধ্যবয়সী নারী যেন এক গভীর রাতের চাঁদ, যার নরম আলো মানুষকে অজান্তেই নিজের দিকে টেনে আনে। তার সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো নয়, বরং অনুভূতিতে লুকিয়ে থাকে। সময়, অভিজ্ঞতা এবং নিজের ভেতরের জ্ঞানের সঙ্গে তৈরি হওয়া এই দীপ্তি কোনো ঝলমলে আলো নয়, বরং এমন এক শান্ত আলো, যা মনকে ধীরে ধীরে জড়িয়ে ধরে। তার ভেতরে থাকে এমন এক স্থিরতা, যা উপস্থিত থাকলেও চিৎকার করে না, কিন্তু নিঃশব্দে হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করে।
তার হাসি অতি সরল, কিন্তু তার ভেতরে থাকে অদ্ভুত উষ্ণতা। এটি রৌদ্রের মতো ঝলমল নয়, বরং সেদিনের শেষ আলোয় ভেসে আসা কোমল রঙের মতো, ধীর, শান্ত এবং গভীর। যখন সে হাসে, মনে হয় হৃদয়ের খুব ভেতরে এক কোমল ঢেউ জেগে ওঠে। তার হাসিতে নেই অস্থিরতার ঝলক, বরং আছে পরিণত নারীত্বের নিশ্চয়তা, যা দেখলে মনে হয় জীবন পুরোপুরি বোঝা সম্ভব।
তার চোখ দুটি সবচেয়ে মাদকতাময়। এগুলো শুধু দেখে না, অনুভব করে, বোঝে এবং হৃদয় স্পর্শ করে। যখন সে তাকায়, মনে হয় সময় একটু থেমে যায়। চোখের ভেতরের নরম আগুন মানুষকে ধীরে ধীরে তার দিকে টেনে আনে, অদৃশ্য তৃষ্ণা জাগিয়ে তোলে এবং মনের সব দেয়াল ভেঙে দেয়। তার দৃষ্টিতে থাকে এমন রহস্যময় উষ্ণতা, যা মানুষকে নিঃশব্দে মুগ্ধ করে।
তার চলার ভঙ্গি ধীর এবং পরিমিত। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, কোনো অতিরঞ্জন নেই, শুধু এমন এক সুরেলা ছন্দ, যা ধীরে ধীরে আশেপাশের সবকিছুকে উষ্ণ করে তোলে। শরীরের আকর্ষণ শুধুই বাহ্যিক নয়, বরং তার ভঙ্গি, ভেতরের শক্তি এবং পরিণত আত্মবিশ্বাসে নিহিত। প্রতিটি পদক্ষেপে থাকে নরম শক্তি, যা উপস্থিত মানুষকে অজান্তেই মন দিয়ে তাকাতে বাধ্য করে।
তার নীরবতাও এক ধরনের আবেশময় ভাষা। সে চুপ থাকে, কিন্তু তার নীরবতা শোনায় হৃদয়ের গভীর অনুভব। এই নীরবতার মধ্যেই থাকে কোমল আহ্বান, ধীরে ধীরে মানুষের মন খুলে যায় এবং মুগ্ধতার বেদনায় ভেসে যায়। এটি কোনো হঠাৎ উত্তেজনা নয়, বরং ধীর, গভীর এবং নরম তাপ, যা মনের ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
মধ্যবয়সী নারী জানে সে কী চায় এবং কী চায় না। সে আর কারো ছায়া হয়ে থাকতে চায় না এবং নিজের সত্তাকে কখনো ছোট করে দেখায় না। সে খুঁজে এমন একজন মানুষ, যে তার হাসির রেখায় থাকা গল্প বুঝতে পারে, তার ক্লান্ত দিনের নিঃশ্বাস বোঝে, এবং তাকে মনে করিয়ে দেয় যে তার সৌন্দর্য, তার শক্তি এবং তার অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে আজও জীবন্ত এবং উজ্জ্বল।
তার মোহ কখনো তাড়াহুড়ো করে প্রকাশ পায় না। এটি ধীরে ধীরে মানুষের ভেতরে ঢুকে যায়, মনের সব কোণ উষ্ণ করে, এবং দীর্ঘসময় ধরে অদৃশ্যভাবে হৃদয়ে বাস করে। তার উপস্থিতি এতই গভীর যে এটি শুধু আকর্ষণ নয়, বরং অনুভবের এক নিঃশব্দ জাদু, যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়, মনকে মুগ্ধ করে এবং মানুষকে তার দিকে ফিরতে বাধ্য করে।”------
১০ মিনিটের মাথাই শাশুড়ি উঠে গেলেন। আমি ইশারাই জানতে চাইলাম কোথাই যাচ্ছেন? উনি আমাকে ইশারাই কাজ করতে বললেন। চলে গেলেন।
উনার প্রস্থান ঘড়টা খা খা করছে। মনটাও তো শুন্যতাই ভরে গেলো। আধা ঘন্ঠা মিটিং করে মিউট করলাম। চললাম বাইরে। উনাকে উনার রুমে পেলাম না। রান্না রুমে আছে নাকি?
নাহ। সেখানেও নাই। গেলো কই?
বৈঠক রুমে গেলাম। দেখি ফাউজিয়াদের রুমের বেডে বসে আছেন। নিশ্চুপ। নিস্তব্ধ।
আমাকে দেখে উঠে গেলেন। আমি উনার কাছে গেলাম।
“কি হলো বেটা, মিটিং শেষ?”
আমি উনাকে জরিয়ে ধরলাম।
“আম্মা আপনার মন খারাপ তাই মিটিং রেখেই চলে আসলাম।”
“উনিও আমাকে জরিয়ে ধরলেন।
“বেটা আগে কাজ। কাজটা শেষ করে নাও। আমার এমনিতেই একটু মন খারাপ লাগছে। ঠিক হয়ে যাবে।”
“আম্মা, আপনি জানেন না আপনি মন খারাপ করলে ঐ দুরাকাশে আমার শ্বশুর ও মন খারাপ করবেন। তাহলে কেন আপনি মন খারাপ করেন?”
“বেটা ফাউজিয়ারা চলে যাবার পর সত্যিই কেমন জানি লাগছে।”
“আম্মা, ওরা আবার চলে আসবে। আপনি মন খারাপ করবেন না। আপনি কি চান আমার শ্বশুর খারাপ থাকুক?”
“না বেটা।”
“তাহলে প্লিজ আর মন খারাপ করে থাকবেন না। একটা কাজ করেন তো আম্মা?”
“কি কাজ বেটা?”
“আপনার বিয়ের শাড়িটা এখনো আছে না?”
“আছে। কেন বেটা?”
“এক কাজ করেন। গোসল করে সুন্দর করে মেকাপ করবেন। তারপর আপনাদের ঐ বিয়ের শাড়িটা পরে নতুন বউ সাজবেন। যেমনটা সেজেছিলেন আপনার বিয়ের দিন।”
“হি হি হি। কি বলছো বেটা? এই বুইড়া বয়সে ওইসব শাড়ি কেন পড়বো?”
“আম্মা, আপনি মন খারাপ করে অলরেডি শ্বশুরের মন খারাপ করে দিয়েছেন। আমি চাই আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত আপনার বিয়ের দিন---সেই দিনটার সাজে আজ সাজবেন। ভাববেন আজ আমার শ্বশুর আপনার সামনে আছে। আপনাকে ওই সাজে শ্বশুর দেখলে খুশি হবেন। আর আমিও ভাব্বো আমার পিচ্চি মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। বিয়ের সাজে সেজেছে। আমার পিচ্চি মেয়েটা বড় হয়ে বিয়ের সাজ সাজলে কেমন দেখাই সেটা আমিও দেখতে চাই। আমারো একটা ইচ্ছা পুরণ হবে। আর আপনার ও মন ভালো হবে। ঐদিকে আমার শ্বশুরটাও আপনার আনন্দ দেখে ভালো থাকবেন। বলেন আম্মা, সাজবেন না?”
“বেটা, আমার লজ্জা লাগছে। বিয়ের পর আর কখনোই ঐ শাড়ি পড়িনি।”
“সেই জন্যেই তো বললাম। আজ আপনি বিয়ের দিনের আনন্দে থাকবেন। সেভাবেই সাজবেন। একদম নতুন বউ এর সাজে। আমারো পিচ্চি মেয়েটা বউ সাজলে কেমন লাগে দেখবো। আপনার এই বাবার ইচ্ছাটা পুরণ করবেন না?”
উনি আবারো মুচকি হাসলেন। কিন্তু কিছুই বললেন না।
“কি হলো আম্মা, কিছু তো বলেন।”
“আচ্ছা।”
উনাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলাম বুকে।
“লাভ ইউ আম্মা। আপনি অনেক ভালো আম্মা।”
“আচ্ছা যাও বেটা তুমি কাজে বসো।”
“আচ্ছা যাচ্ছি। একটা চুমু দেন আপনার ছেলেকে তাহলে।”
“আমার পাগল ছেলেটা।” উনি আমার দুই গাল ধরে কপালে একটা চুমু দিলেন।
“বেটা তুমি তাহলে কাজ শেষ হলে খেয়ে নিও।”
“আপনি খাবেন না?”
“আমি সকালে হালকা খেয়েছি। আর খাবোনা।”
বুঝলাম, মনের খুদা বাড়লে পেটের খুদা টা টা বাই বাই।
“আচ্ছা আম্মা। আমার যে কি আনন্দ লাগছে আম্মা, আজ আমি আমার পিচ্চি মেয়েটাকে নতুন বউ এর সাজে দেখতে পাবো। হা হা হা।”
“বেটা আর বইলোনা। আমার লজ্জা লাগছে খুউউব।”
“আচ্ছা বলবোনা। আমি গেলাম তাহলে।”
আমার দুনিয়া
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
*******************************



![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)