(৩৫)
“আমি কোচিং এর অফারটা গ্রহন করে নিলাম। আজ হোস্টেল যাবার সময় কোচিং হয়ে গেছিলাম। ভাইয়াকে বললাম, আমি ক্লাশ নিব কাল থেকে।”
“কিন্তু কোচিং এ তো সময় বেশি লাগবে। টিউশন ই করাতিস করালে। তোদের ও তো পড়াশোনা আছে।”
“ঐটা আমি ম্যানেজ করে নিব। তাছারা বিকালে একটা টিউশনি তো আছেই।”
সৈকত একটা কোচিং এ ক্লাশ করাবে বলেছিলো গত মাসে। ওরা পরে সৈকতকে ডাকলেও সে যায়নি। সময় বেশি লাগবে তাই। কিন্তু আজ সে নাকি ক্লাশ করাবে বলে এসেছে।
“এক সাথেই দুই কাজ করবি? সময় কভার করে নিজের চাকরির পড়া পড়তে পারবি তো?
আর তোর ক্লাশের সিডিউল কি দিলো?”
“চেস্টা করতে সমস্যা কি! প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ক্লাশ।”
“সৈমত বেটা, তাহলে এক কাজ করিও,মিমের প্রতিদিন ১২টার দিকে ক্লাশ/পরিক্ষা শেষ হয়। আসবার সময় মিমকে সাথে নিয়ে চলে আসিও তাহলে। আমাকে আলাদা আর যাওয়ার দরকার নাই।”
“আচ্ছা আন্টি সমস্যা নাই। মিমের কলেজের সামনে দিয়েই তো আসতে হয়। আসবার সময় নিয়ে চলে আসবো।”
যাক, একটা কাজ হলো। মিমকে নিয়ে আর চিন্তা থাকলোনা। দুপুরে খেতে খেতে আরো অনেক গল্প হলো। আজ রাত থেকে ওরা পাশের বৈঠক ঘরে থাকবে, যেই ঘরে সালাম চাচা থাকতো।
আজকের রিলাক্সেশন শেষ মুহুর্তে আম্মাকে শিখাই দিলাম, আপনার মেয়েকে বলার দরকার নাই যে আমরা কমপ্লিট রিলাক্সেশন করতে পেরেছি। জিজ্ঞেস করলে বলবেন, লজ্জাই খুউউব একটা এগোতে পারিনি।
শাশুড়ি মুচকি হেসে বলেছিলো, আচ্ছা বেটা তাই বলবো।
দুপুরে খাবার পর নিজের রুমে আসলাম। শাশুড়িও উনার রুমে চলে গেলেন। উনার লম্বা একটা ঘুম দরকার। আজ উনি চারবার অর্গাজম করেছেন। আমার বিশ্বাস, উনি উনার জীবনে এই প্রথম অর্গাজম করলেন। তাও একদিনে চারচারবার। উনি শেষে বেড থেকে উঠলেই পাচ্ছিলেন না। বুকে নিয়ে মিনিট দশেক সুয়ে থাকার পর উঠেছিলেন।
রুমে এসেই আমিও সুয়ে গেলাম। মিম এসেই আমার উপর ঝাপিয়ে পরলো।
“সোনা তোমাদের রিলাক্সেশনের কতদুর? হলো?”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
“বাদ্দাও সোনা। আসতে ধিরে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“তার মানে করতে পারোনি?”
“আমার কি দোস বলো তো। আমি সর্বোচ্চটা চেস্টা করেছি। উনিই লজ্জা পাচ্ছিলেন।”
“তুমি জামাই তো। তাই হয়তো। তোমরা ২ঘন্ঠা ধরে রুমে ছিলা। আমি তো ভাবলাম রিলাক্সেশন চলছে।”
“বসে বসে খালি গল্পই হয়েছে।বাদ্দাও। আসতে ধিরে হয়ে যাবে। এখন একটু ঘুম পারিয়ে দাও সোনা। বিকালে উঠেই আবার কাজে বস্তে হবে।”
“চলো রিলাক্সেশন করতে করতে ঘুমাই।” বলেই মিম মুচকি হাসলো।
“সোনা রাতে করবো। এখন আদর দিয়ে ঘুম পারাই দাও।”
“আচ্ছা।”
**********++********
ঘুম ভাঙ্গলো বিকাল ৫টাই। মিমকে বুক থেকে সরিয়ে পাশে সুইয়ে দিলাম। ঘুমাক। আজ তার রাত জেগে পড়তে হবে। কাল পরিক্ষা আছে।
ফ্রেস হয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে বের হলাম। ছাদে যাবো। ডাইনিং ফাকা। পুরো বাড়ি নিশ্চুপ। শাশুড়ির দরজা ঠেলে উকি দিলাম, এখনো ঘুমে। শান্তির ঘুম। আমি আর ডিস্টার্ব করলাম না।
বের হয়ে বৈঠক ঘরের দিকে তাকালাম। জানালার থাই দিয়ে বুঝা যাচ্ছে ঘরের লাইট অন। দরজার কাছে গিয়ে ডাক দিলাম।
“সৈকত?”
“রাব্বীল? ভেতরে আসো। সৈকত টিউশনিতে গেলো।”
ভেতরে গেলাম। ফাউজিয়া বেডে সুয়ে। ফোন চাপছে। আমাকে দেখে উঠলো।
“আসো বসো।”
আমি গিয়ে বেডের এক কোনে বসলাম।
“কেমন ফিল করছো নতুন বধু?”
ফাউজিয়া মুচকি হাসলো।
“তোমাদের সবাইকে অনেএএক ধ্যনবাদ।আমাদের জন্য এতকিছু করার জন্য।”
“ফাউজি শুনো, তোমরা আমার ক্যাম্পাসের প্রথম এবং শেষ বন্ধু।আর আমি এই সম্পর্কটাকে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও আপন ভাবি। ধন্যবাদ দিচ্ছো কেন? আমি তো সারাজীবন তোমাদের সবাইকে নিয়ে আপন থাকতে চাই।”
“তোমার মত বন্ধু লাখে একটা হয় রাব্বীল।”
ওরা এই উপকারটা পেয়ে সত্যিই গর্বিত হয়ে গেছে। আমাদের কাছে এইটা ছোট্ট এক উপকার মনে হলেও তাদের জন্য বিশাল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে গল্প করছি----তার মুখে চোখে আনন্দ উপচে পড়ছে। একদিনেই মেয়েটার রুপ দিগুন পালটে গেছে।
“আজকের দিকে স্বামিকে কেউ হাত ছাড়া করে? সারাদিন ধুমসে চলবে আদর আর সোহাগ। তা না বেচারা বন্ধুটাকে আজকেই টিউশনিতে পাঠাই দিসো ম্যাডাম। কাজটা ঠিক করোনি”
“সারা রাত পরে আছে সেটার জন্য মি. রাব্বীল।”
দুজনের ঠোটের কোণে হাসি। ইশ বড্ড সুন্দর লাগছে দেখতে।
ইয়ারকি,হাসি মজা তখনি জমে উঠে যখন সামনের জন হয় একই মেনটালিটির। আর এই জন্যেই আমাদের ৪জনের বন্ধুত্ব এত মজবুত।
“থাকো ফাউজি। অনেক মজা হলো। এবার আমাকেও কর্মে বসতে হবে। ছাদে যাবো।”
“এখানেই বসে বসে কাজ করো। সাথে আমার ও গল্প করা হবে। কয়েকবার রুম থেকে বের হলাম। দেখছি তোমরা সবাই ঘুমে।”
“না রে সোনা। নতুন প্রোজেক্টের কাজ। খুউউব চিন্তা করা লাগে। একা মুহুর্ত দরকার। আর তাই তো বউকে ঘরে রেখে ছাদে যাচ্ছি। থাকো। মিম ঘুম থেকে উঠলে তার সাথে আড্ডা দাও।”
আমি উঠে গেলাম। প্রস্থান নিতে যাবো, ঘুরে দাড়ালাম।
“ফাউজি?”
“হ্যা রাব্বীল বলো।”
“একটা বিষয় মনে পড়লো। কিছু মনে না করলে বলি।”
“আরেহ বন্ধুত্বের মাঝে কিছু মনে করার কি আছে? যা বলবে নির্ভয়ে।”
“না, তা না। আমি অভিযোগ করছিনা। কিংবা বিরোধীতাও করছিনা। তবে শতর্ক থাকার জন্যই বলছি। সবার ভেতরে পার্সনাল কিছু থাকে, একান্তই পার্সনাল। আমি মনে করি তা একান্তই পার্সনাল ই রাখা দরকার।”
“কি ব্যাপারে বলছো বলো তো?”
“তোমাদের বিয়ের দিন। আমি আমার কার্ড নিয়ে যেতে ভুলে গেছিলাম। সৈকতকে নিউ মার্কেটে রেখে আবার বাসাই আসি। এসেই দরজা দিয়ে উকি মারতেই তোমাদের দেখি।”
ফাউজিয়া শুনে চোখ নামিয়ে নিলো। লজ্জা পেয়েছে। নাকি ভয়?
“শুনো ফাউজি, আমি তোমাদের বন্ধু। নাহিদ ও বন্ধু। প্রত্যেকের ই জীবনে পার্সনাল কিছু থাকেই। তবে সেটার জন্য নিজেদের শতর্ক থাকতে হয়। নিজেদের কাছে যেটা সুখের মনে হয়, সমাজের কাছে সেটা অন্যায় ও মনে হতে পারে।”
ফাউজিয়া আর তাকাচ্ছেই না। কান্না শুরু করলো নাকি? বলে ভুল করে দিলাম নাকি?? আমি তো তার ভালর জন্যেই বললাম। ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে তার পাশে গেলাম। মাথাই হাত দিলাম।
“এই পাগলি, আমার কথাই রাগ করলে? দেখো আমি তোমার ভালর জন্যেই বললাম। আর আমার উপর বিশ্বাস রাখো, এই কথা দুনিয়ার একটা প্রাণ ও জানবেনা।”
ফাউজিয়া তড়িৎ উঠে আমাকে ঝাপটে ধরলো।
“স্যরি রাব্বীল। আমাকে ক্ষমা করো। আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি নিজেও জানিনা কি থেকে কি হয়ে গেলো।”
লে বারা, সে তো উত্তেজিত হয়ে পরলো। আমি তার পিঠে শান্তনার হাত বোলাতে লাগলাম।
“ফাউজি, পাগলি শুন, আমি কি বলেছি তুমি ভুল করেছো? পাগল কোথাকার। শুনো, প্রতিটি মানুষের নিজস্ব কিছু চাওয়া পাওয়া থাকে, সেখানে দুনিয়ার কারো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। এমনকি তার স্বামি কিংবা বউ।”
“আমি নিজেই আবেগি হয়ে পরেছিলাম কাল। আমার নিজের ই খারাপ লাগছে এখন।”
ফাউজিয়া আমার বুকের মধ্যে মুখ গুজে আছে। আমি এক হাত দিয়ে তার মাথার চুল নারছি। অন্য হাত দিয়ে পিঠে বিচরণ করছে। শান্তনা দিচ্ছি।
“আরেহ কোনো সমস্যা নাই রে পাগলি। আচ্ছা ফাউজি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? অনুমতি দিলে।”
“বলো।”
“ফাউজি, বাসর রাতে সৈকত কি কিছু টের পেয়েছিলো?”
ফাউজিয়া হয়তো ভাবেনি এই প্রশ্ন করবো। বেচারি লজ্জা পেয়ে গেল। আমি হাতটা পেটের কাছে এনে কুতুকুতু দিলাম।
“আরেহ আমার বান্ধবি তো দেখি বাসর কথা শুনে লজ্জাই লাল হয়ে গেলো। হা হা হা।”
ফাউজিয়াও হিহি করে হেসে উঠলো।
“না না। সে কিছুই বুঝেনি।”
আমি ফাউজিয়ার মুখটা আমার বুকের উপর থেকে তুললাম। দুজন চোখাচোখি।
“দেখো ফাউজি, তোমার এই রাব্বীল বন্ধুর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারো। আর হ্যা, এরপর নাহিদ এখানে আসলে তোমার যদি একাকি সময় কাটানো, কিংবা আলাদা কথা বলার ইচ্ছা হয়, তোমার এই বন্ধুকে যাস্ট একটু ইশারা করবা। আমিই ম্যানেজ করে দিব। তবুও এরপর যেন এই অসতর্ক থেকে বোকামি করতে না দেখি। ভেবে দেখেছো, ঐ জায়গায় আমি না থেকে যদি আমার শ্বাশুড়ি থাকতো? সব বিশ্বাস উড়ে যেত।”
“আমার আর জীবনেও এই ভুল হবেনা।”
“আমার লক্ষ্মী বান্ধবি। উম্মমাহ।” ফাউজিয়ার কপালে একটা চুমু দিলাম। ফাউজিয়া চোখ বন্ধ করে নিলো। “থাকো, ছাদে যাই। মিম উঠলে আড্ডা দাও তোমরা।”
সে আমার গালে একটা চুমু দিলো। “এটা আমার পক্ষ থেকে।” মুচকি হেসে বললো “ধন্যবাদ।”
“আবার ধন্যবাদ? বন্ধুকে ধন্যবাদ কে দেই পাগলি। এরপর ধন্যবাদ দিলে পেটে কাতুকুতু দিয়ে শেষ করে দিব।”
“হি হি হি। নেহিইইইইই। আমার অনেক কাতুকুতু। কখনোই না।”
“আচ্ছা ফাউজি থাকো। উপরে যাই।”
বলেই তার বুক থেকে আলগা হলাম। ইশ এতক্ষণ যেন বুকটা ভরে ছিল।
আমার দুনিয়া
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
*******************************



![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)