04-07-2019, 11:05 AM
পার্টঃঃ১২
না।
ওঃ।
কেনো।
নীপাতো অনেকক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছে।
ওইতো দাঁড়িয়ে আছে।
দেখো দেখি কান্ড।
আমাকে এক ঘন্টা আগে বললো হাটে যাবে।
আমি হাসলাম।
যা যা তাড়াতাড়ি ঘুরে আয়। সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে এখুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সবাই চলে যাবে। তবে বেশ কয়েকটা নতুন দোকান হয়েছে। দেখে আয়। ভালো লাগবে।
আমি সবার মুখের দিকে একবার তাকালাম।
এরা তোর জন্য বসে আছে। তোর সঙ্গে দুটো কথা বলবে বলে।
আমার সঙ্গে ? কেনো!
সে অনেক কথা, আগে তুই ঘুরে আয়, তারপর বলছি। কৈ হে চন্দ্রেরপো, এই হচ্ছে অনি। দেখে চিন্তে পারছ। আমার তো চোখ গেছে, ওকে ঠিক মতো দেখতেও পাই নি।
হ্যাঁগো বাবাঠাকুর এককেবারে বাপের মতোন গো।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাই কোমন হই হই করে উঠলো।
আমি বললাম ঠিক আছে, আমি যাই।
এসো। আর শোন একটা টর্চ নিয়ে নে, আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়েযাবে। কোথায় হোঁচোট-ফোঁচট খাবি।
আমি হাসলাম, না না লাগবে না।
ও অনিদা কি হলো।
যা যা ওই পাগলী ডাকছে।
আমি বেরিয়ে এলাম। ক্ষেত্রমণির টবার ধার দিয়ে নদী বাঁধে উঠলাম। নীপা কখনো আমার পাশে কখনো আমার থেকে একহাত আগে। বাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় আধঘন্টা হাঁটলে তবে হাটে গিয়ে পৌঁছবো।
যেতে যেতে নীপার সঙ্গে অনেক কথা হলো। নীপা এখন এই গ্রামের খুব পরিচিত একটা মেয়ে। একটা সময় আমাকেও এই গাঁয়ের অনেকে চিনতো। অনেকে যেতে যেতে আমাকে যেমন তির্যক দৃষ্টিতে দেখছে, তেমনি নীপার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলছে। নীপা এই গ্রামের মেয়েদের নিয়ে একটা নাচের দল করেছে। এখানে ওখানে নাচতে যায়। সপ্তাহে তিনদিন করে নাচের মহরা হয়। এখানে এসে প্রথম প্রথম আমার নাম শুনতো, তারপর কাকার কাছ থেকে আমার সব কিছু জেনেছে। আমার বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার বায়োডাটা নিয়েছে। এখন এই গ্রামে আমাকে নিয়ে খুব আলোচনা হয়। প্রত্যেক দিন আমাদের বাইরের দালানে আড্ডা বসে চলে রাত নটা পর্যন্ত তারপর সকলে ফিরে যায়। আমার লেখা নিয়ে আলোচনা হয়। বাক-বিতন্ডা চলে। আরো কত কি।
নীপা কল কল করে কথা বলে চলেছে। আমি খালি হুঁ-হাঁ করে যাচ্ছি। এক সময় নীপা বলে উঠলো, মনিমা ঠিক কথা বলেছে, দেখিস ও সাত চড়ে রা করে না।
আমি বললাম কে মনিমা।
কেনো তোমার কাকীমা।
বুঝলাম ঊষাকাকীমাকে নীপা মনিমা বলে ডাকে।
আমাকে নিয়ে তোমরা অনেক আলোচনা করো তাই না।
হ্যাঁ। তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব। তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়ির ছেলে। সেই ফ্লেভার টুকু তো আমরা পাইই।
সেই জন্য কলকাতায় খেত বসে আমি এত বিষম খাই।
তাই বুঝি। ......এঁ কি বললে। ......বিষম খাও, .....আমাদের জন্য, নীপা আমার হাতে একটা রাম চিমটি দিলো।
আমি উঃ করে উঠলাম। নীপার চোখদুটো কেমন হয়ে গেলো। ও বললো সরি অনিদা।
আমি হাসলাম। ওর আয়ত চোখদুটি ঝিরি ঝিরি বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠলো। সূজ্জিমামা পশ্চিমদিকে একেবারে হেলে পরেছে। এখন তার রং কমলা। দূরে একটা মিহি মিহি আওয়াজ কানে এলো, অনেক লোকে একসঙ্গে কথা বললে মিলে মিশে যেমন একটা শব্দ বের হয় ঠিক তেমনি। বুঝলাম আমরা হাটের খুব কাছাকাছি এসে গেছি।
অনিদা।
উঁ।
আমার ওপর রাগ করলে।
কেনো।
না থাক।
নীপা।
উঁ।
তুমি হাটে রেগুলার আসো ?
হ্যাঁ। কেনো ?
একটা সময় ছিলো, তোমার বয়সি কোন মেয়ে হাটে আসতে পারত না।
তাই।
হ্যাঁ।
সে অনেক দিন আগের কথা। এখন সব বদলে গেছে।
ওর দিকে তকালাম, নীপা খুব স্মার্ট।
দেখছোনা চারিদিকে।
হাসলাম।
একটা বাইক পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গিয়ে কেঁচ করে থেমে দাঁড়ালো।
অনি না।
আমি পেচন ফিরে তাকালাম।
ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম।
পায়ে পায়ে ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে গেলাম।
মুখটা চিনি চিনি কিন্তু ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।
কি নীপা, আমি ঠিক কথা বলছি।
হ্যাঁ।
শালা, ঢেমনা চিন্তে পারছো না।
বলে আমার হাতটা ধরে এমন জোরে করমর্দন করলো আমি কঁকিয়ে উঠলাম।
নীপা বললো, চিন্তে পারছো না! যার কথা আজ দুপুরে খেতে খেতে বলছিলে, এইই সেই বিশেষ ব্যক্তি।
অনাদি!
হ্যাঁরে ঢেমনা, অনাদি।
অনাদি বাইক থেকে নামলো।
পথচলতি অনেকে অনাদির পাশে দাঁড়িয়ে পরেছে। নেতা হলে যা হয়। ফেউরা ভিড় করে থাকে। আমি অনাদিকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। দশবছর আগে দেখা অনাদির সঙ্গে এখনকার অনাদির অনেক পার্থক্য। অনেক সার্প। কেমন আছিস।
ভাল। কদিন থাকবিতো এখন।
হ্যাঁ। তবে পর্শুদিন চলে যাবার কথা।
সেকিরে.....আচ্ছা আচ্ছা তুই এখন হাটে যাচ্ছিস তো।
হ্যাঁ।
নীপা তোরা বাসুর দোকানে থাকিস, আমি এখুনি একটা কাজ সেরে ঘুরে আসছি। চলে যাসনা যেন।
আমরা আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। নীপা আমার পাশে পাশে চলেছে। কখনো মাথাটা মাটির দিকে করে আবার কখনো মাথাটা সামনের দিকে।
তোমাকে দেখে আমার হিংসে হয় জানো অনিদা।
হাসলাম। কেনো ?
তোমার পপুলারিটি।
তাহলে বলো আমি এই গ্রামের একজন সেলিব্রিটি।
সেলিব্রিটি বললে ভুল হবে তার থেকেও যদি বেশি কিছু থাকে, তুমি তাই।
বাড়িয়ে বলছো।
নাগো, সত্যি বলছি। বারান্দায় যাদের দেখলে, তারা প্রত্যেক দিন এসে মশাই-এর কাছে তোমার খোঁজ খবর নেবে। তুমিতো কোনদিন ফোনও করো না, আর চিঠিপত্রও দাও না। মশাই ওদের প্রত্যেকদিন বানিয়ে বানিয়ে তোমার কথা বলে, তারপর কাগজ বার করে তোমার লেখা পরা হয়, তুমি নাকি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। সত্যিতো, গত পাঁচ বছরে আমি একটা চিঠিও লিখি নি। মনাকাকা অফিসের ঠিকানায় কয়েকটা চিঠি লিখেছে। অমিতাভদা আমায় বলেছেন এই মাত্র। তবে নিয়ম করে টাকাটা আসতো, আর আমার খবরা খবর অমিতাভদাই দিতেন। নীপার দিকে অপরাধীর মতো তাকালাম।
সত্যি নীপা একদম সময় পাই না।
একটা ফোন করার সময় পর্যন্ত পাও না।
ফোন যে এখানে আছে তাই জানি না।
তুমি জানোনা!
না। সত্যি বলছি। আর মাবাইলটার কথা বলছো, এই গত মাসে ভাইজ্যাক গেছিলাম ইলেকসন কভার করতে, তখন অমিতাভদা এটা কিনে দিয়েছেন।
ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি সত্যি বলছি। তবে এবার দেখো, এ ভুল আর হবে না।
নীপা হাসলো। ওর হাসিটাই বলে দিচ্ছে ও জিতে গেছে।
আমরা হাটে পৌঁছেগেলাম। নীপা বললো চলো একবার বিউটি স্টেশনার্সে যাব।
সেটা আবার কি।
ওঃ তোমায় বলেছি না তোমার দশ বছর আগের দেখা হাট আর এখনকার হাটের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
ওখানে কি পাওয়া যায়।
ওখানে সাজগোজের জিনিষ পাওয়া যায়।
সেতো মনিহারীর দোকানে পাওয়া যায়।
কনসেপ্ট বদলে গেছে।
হাসলাম। সত্যি লোকজন অনেক কমে এসেছে, তবে আগে সন্ধ্যা হয়ে এলে লম্ফ ছাড়া কোন আলো হাটে দেখা যেতো না। এখন দেখছি বেশ কিছু দোকানে নিওন আলো জলে উঠেছে। আগের থেকে অনেক ঝকঝকে। এখন আর হাট বলে মনে হয় না। বাজার বলাই ঠিক হবে।
এসো ভেতরে এসো।
আমি নীপার পেছন পেছন দোকানের ভেতরে গেলাম। একটা বছর কুড়ির ছেলে জিনিষ দেখাচ্ছে। মেয়েদের ভিড়ই বেশি। এই অজ পাড়াগাঁয়ে, এই ভর সন্ধ্যে বেলা মেয়েদের এত ভিড় দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দুচারজন মেয়ে নীপাকে দেখে এগিয়ে এলো। চোরা চোখে আমাকে দেখে নীচু স্বরে নীপাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। নীপা কিছু কথা বলতেই ওদের চোখের চাহুনি বদলে গেলো। নীপা যেন ডগমগ করছে ওর পা যেন মাটিতে পরতে চাইছে না।
ঋজুদা জিনিষ গুলো এনেছো ?
সব পায় নি।
তা হলে।
এই দিয়ে কাজ চালিয়ে দাও।
এই শুক্রবারের পরের শুক্রবার ফাংসন।
এখনো দশদিন বাকি দেখি যদি কলকাতা যাই আমি এনে দেবো।
উঃ তোমায় নিয়ে আর পরা যাবেনা।
পিঠে দরাম করে একটা ঘুসি পরলো। শালা সন্ধ্যের সময় হাটে এসেছো। যাতে কেউ দেখতে না পায়। তাই না।
বড্ড লেগেছে, তবু বুঝলাম এ পরিচিত কেউ হবে। পেছন ফিরে তাকালাম, ভানু, দিবাকর, চিকনা, পাঁচু, পচা, পলা, সঞ্জু আরো অনেকে। আমার সব কলেজ লাইফের বন্ধু। হেসে ফেললাম, ভনু আমার হাত ধরেতো প্রায় মুচড়ে ভেঙেই ফেলবে এমন অবস্থা।
হাত ছাড়তেই ভানুকে জড়িয়ে ধরলাম। কেমন যেন দেখতে হয়ে গেছে। কম বয়সে বুরোটে মারকা চেহারা। সেই ভানুর তাগড়াই শরীর কোথায়!
কিরে চেহারার এ কি অবস্থা।
আর বলিস কেনো, মাঠে খাটতে খাটতে.....।
আরে দোকানের মধ্যে নয় বইরে চল, যতই হোক ব্যবসার স্থান।
ওকে তুই চিনিস।
না। চিনবো কি করে।
উনামাস্টারের ছেলে। যাকে তুই হামা দিতে দেখেছিস।
ছেলেটি এবার কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। বাবর কাছে আজ সকালে আপনার কথা শুনেছি।
স্যারের সাথে আসার সময় সকালে দেখা হয়েছিলো।
নীপার দিকে তাকালাম। নীপা আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে অহংকারের প্রলেপ। আমি ছেলেটিকে বললাম, এই ভাই নীপা যা যা জিনিষ নেয় দিয়ে দাও। পয়সা নিও না। আমি দেবো।
ঠিক আছে।
এই নীপা শোন আমরা বাসুর দোকানে আছি, তোর সব কেনা কাটা হয়ে গেলে, ওখানে আসবি। অনি ওখানে থাকবে। পাঁচু বললো।
নীপা কোন উত্তর দেবার আগেই আমি ওদের হাতে চালান হয়ে গেলাম।
বাসুর দোকানে এলাম। বাসু আমাদের সঙ্গে ক্লাস টেন পর্যন্ত পরেছিলো। তারপর ওর বাবা বললো আর পরতে হবে না বাপ। মাঠে কাজ করো খাওয়া পরার অভাব হবে না। শুনেছি বাসু পরে বসন্তপুর কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েসন কমপ্লিট করেছিলো। সেই বাসু এখন বেশ জমপেশ করে রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকান করেছে।
আমরা এক দঙ্গল ঢুকতে বাসু এগিয়ে এলো। বুঝলাম আজ ওর বেচা কেনা লাটে। ভানু স্বভাব সিদ্ধ মতো লিডারের পার্ট নিলো। আমি ওদের হাতের পুতুল। বাসু বললো অনি তুই আজ অতিথি কি খাবি বল।
তোর দোকানতো লাটে উঠে যাবে।
দূর সারাদিন অনেক ব্যবসা করেছি। এবার একটু আড্ডা। কতদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা। বললি নাতো কি খাবি।
খাওয়াবি।
অফকোর্স।
পচা বলে উঠলো শালা ইংরেজি ঝারছে রে।
ভানু পচাটাকে সামলাতো। বাসু বললো।
আমি বললাম, একশো গ্রাম ছোলার পাটালি নিয়ে আয়।
বাসু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো, ওর চোখে কে যেন হাজার পাওয়ারের বাল্ব জালিয়ে দিল।
হ্যাঁরে তোর কি আর কিছু চাওয়ার নেই। সেই ছোলার পাটালি।
দশবছর খাই নি।
আজ গ্রামে ঢুকেই চুনোমাছের ভাজা দিয়ে কাকীর কাছে পান্তা খেয়েছি। তোর কাছে ছোলার পাটালি চাইলাম।
ভানু চেঁচিয়ে উঠলো পচা, দেখতো জানা ঘরের বুড়ীর কাছে ছোলার পাটালি আছে কিনা। ওখানে যদি না পাস কামরঘরের অশ্বিনীর কাছে থাকবে।
পচা আর একটা জিনিষ নিয়ে আসিস, একটু ছোলা সেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা, আলুভাজা গুলো দেখে নিস। আমি বললাম।
সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না আমি এই ধরনের কিছু ওদের কাছে চাইতে পারি। আমি যেনো একটা কেউ কেটা হয়ে গেছি। পুরোদস্তুর শহুরে একজন লোক। অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকালাম। একটু পরিবর্তন সকলের মধ্যে হয়েছে। সেটা বয়সের ধর্মে কিন্তু মনের দিক থেকে এখনো আমরা সেই কলেজের বন্ধু। আমি যেনো আবার আমার কলেজ লাইফে ফিরে গেলাম। এরিমধ্যে বাসুকে কানে কানে বললাম, নীপার জন্য তোর দোকানে বেস্ট যে শালোয়ার কামিজটা আছে প্যাক করে রাখ।
অনাদি এলো, আবার একচোট হই হুল্লা হলো, পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ এলো সকলে ভাগ করে খেলাম, শেষে চা।
আমি অনাদি ভানু আর বাসু আলাদা করে কাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। ওরা আমাকে বললো এখানে খুব ভালো একটা নার্সিংহোম হয়েছে। তুই যদি বলিস তাহলে ব্যবস্থা করি। আমি বললাম আমি থাকাকালীন এটা করে যেতে চাই। ওরা আমায় কথা দিলো কাল দুপুরের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দেবে। আমি ওদের বললাম, টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববি না। আমি কাকার চোখের আলোটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। ওরা বললো ঠিক আছে। আর একটা কথা, আমার জমিজমা নিয়ে একটু কথা আছে, কাল তোরা আয় দুপুরের দিকে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে। অনাদি একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। আমি হেসেফেললাম, অনাদির হাতটা চেপে ধরে বললাম, এখনো এটা অভ্যাস করি নি। কালেভদ্রে একটা দুটো খাই। বাসুর চোখ কপালে উঠলো। অনাদি বললো কালেভদ্রে খাস যখন এখন একটা খা। চারিদিক চেয়ে দেখলাম, অনাদিকে বললাম, বড়রা যদি কেউ থাকে। সতীপনা করিস না, আশেপাসে এখন সিনিয়াররা কেউ নেই। সবাই এখন তোর বাড়িতে। ওখানে আড্ডা মারছে।
আমি অনাদির দিকে তাকালাম। ভানু কোথায় গেলোরে।
আর বলিস না। কাল সব বলবো।
অবাক হোলাম।
উনামাস্টারের ছেলের দোকানে কিছু টাকা পাবে, নীপা কিছু জিনিষপত্র কিনেছে।
কাল দিবি।
না না। তুই পচাকে বল একটু দিয়ে আসতে।
অনাদি পচা পচা বলে চেঁচাতেই, পচা এসে হাজির। মানিপার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট বার করে বাসুর দিকে এগিয়ে দিলাম। তোর দামটা নিয়ে বাকিটা পচাকে দে।
দূর শালা। সকাল থেকে পাঁচশো টাকা বিক্রি হয় নি তুই হাজার টাকার নোট দেখাচ্ছিস।
আচ্ছা, তোর দামটা নিয়ে দিবি তো।
না থাক।
তাহলে নেবো না।
বাসু আমার দিকে কটমট করে তাকালো। অনিচ্ছা সত্বে উঠে গেলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট পচার হাতে দিয়ে বললো যা দিয়ে আয়।
আমি পচাকে বললাম, নীপাকে একবার বলে আসিস, এবার উঠবো।
সকলে হো হো করে হেসে উঠলো।
হাসলি যে।
ওই দেখ নীপা দাঁড়িয়ে আছে।
বাইরে দিকে তাকিয়ে দেখলাম নীপা ওর সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে।
না।
ওঃ।
কেনো।
নীপাতো অনেকক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছে।
ওইতো দাঁড়িয়ে আছে।
দেখো দেখি কান্ড।
আমাকে এক ঘন্টা আগে বললো হাটে যাবে।
আমি হাসলাম।
যা যা তাড়াতাড়ি ঘুরে আয়। সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে এখুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সবাই চলে যাবে। তবে বেশ কয়েকটা নতুন দোকান হয়েছে। দেখে আয়। ভালো লাগবে।
আমি সবার মুখের দিকে একবার তাকালাম।
এরা তোর জন্য বসে আছে। তোর সঙ্গে দুটো কথা বলবে বলে।
আমার সঙ্গে ? কেনো!
সে অনেক কথা, আগে তুই ঘুরে আয়, তারপর বলছি। কৈ হে চন্দ্রেরপো, এই হচ্ছে অনি। দেখে চিন্তে পারছ। আমার তো চোখ গেছে, ওকে ঠিক মতো দেখতেও পাই নি।
হ্যাঁগো বাবাঠাকুর এককেবারে বাপের মতোন গো।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাই কোমন হই হই করে উঠলো।
আমি বললাম ঠিক আছে, আমি যাই।
এসো। আর শোন একটা টর্চ নিয়ে নে, আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়েযাবে। কোথায় হোঁচোট-ফোঁচট খাবি।
আমি হাসলাম, না না লাগবে না।
ও অনিদা কি হলো।
যা যা ওই পাগলী ডাকছে।
আমি বেরিয়ে এলাম। ক্ষেত্রমণির টবার ধার দিয়ে নদী বাঁধে উঠলাম। নীপা কখনো আমার পাশে কখনো আমার থেকে একহাত আগে। বাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় আধঘন্টা হাঁটলে তবে হাটে গিয়ে পৌঁছবো।
যেতে যেতে নীপার সঙ্গে অনেক কথা হলো। নীপা এখন এই গ্রামের খুব পরিচিত একটা মেয়ে। একটা সময় আমাকেও এই গাঁয়ের অনেকে চিনতো। অনেকে যেতে যেতে আমাকে যেমন তির্যক দৃষ্টিতে দেখছে, তেমনি নীপার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলছে। নীপা এই গ্রামের মেয়েদের নিয়ে একটা নাচের দল করেছে। এখানে ওখানে নাচতে যায়। সপ্তাহে তিনদিন করে নাচের মহরা হয়। এখানে এসে প্রথম প্রথম আমার নাম শুনতো, তারপর কাকার কাছ থেকে আমার সব কিছু জেনেছে। আমার বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার বায়োডাটা নিয়েছে। এখন এই গ্রামে আমাকে নিয়ে খুব আলোচনা হয়। প্রত্যেক দিন আমাদের বাইরের দালানে আড্ডা বসে চলে রাত নটা পর্যন্ত তারপর সকলে ফিরে যায়। আমার লেখা নিয়ে আলোচনা হয়। বাক-বিতন্ডা চলে। আরো কত কি।
নীপা কল কল করে কথা বলে চলেছে। আমি খালি হুঁ-হাঁ করে যাচ্ছি। এক সময় নীপা বলে উঠলো, মনিমা ঠিক কথা বলেছে, দেখিস ও সাত চড়ে রা করে না।
আমি বললাম কে মনিমা।
কেনো তোমার কাকীমা।
বুঝলাম ঊষাকাকীমাকে নীপা মনিমা বলে ডাকে।
আমাকে নিয়ে তোমরা অনেক আলোচনা করো তাই না।
হ্যাঁ। তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব। তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়ির ছেলে। সেই ফ্লেভার টুকু তো আমরা পাইই।
সেই জন্য কলকাতায় খেত বসে আমি এত বিষম খাই।
তাই বুঝি। ......এঁ কি বললে। ......বিষম খাও, .....আমাদের জন্য, নীপা আমার হাতে একটা রাম চিমটি দিলো।
আমি উঃ করে উঠলাম। নীপার চোখদুটো কেমন হয়ে গেলো। ও বললো সরি অনিদা।
আমি হাসলাম। ওর আয়ত চোখদুটি ঝিরি ঝিরি বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠলো। সূজ্জিমামা পশ্চিমদিকে একেবারে হেলে পরেছে। এখন তার রং কমলা। দূরে একটা মিহি মিহি আওয়াজ কানে এলো, অনেক লোকে একসঙ্গে কথা বললে মিলে মিশে যেমন একটা শব্দ বের হয় ঠিক তেমনি। বুঝলাম আমরা হাটের খুব কাছাকাছি এসে গেছি।
অনিদা।
উঁ।
আমার ওপর রাগ করলে।
কেনো।
না থাক।
নীপা।
উঁ।
তুমি হাটে রেগুলার আসো ?
হ্যাঁ। কেনো ?
একটা সময় ছিলো, তোমার বয়সি কোন মেয়ে হাটে আসতে পারত না।
তাই।
হ্যাঁ।
সে অনেক দিন আগের কথা। এখন সব বদলে গেছে।
ওর দিকে তকালাম, নীপা খুব স্মার্ট।
দেখছোনা চারিদিকে।
হাসলাম।
একটা বাইক পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গিয়ে কেঁচ করে থেমে দাঁড়ালো।
অনি না।
আমি পেচন ফিরে তাকালাম।
ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম।
পায়ে পায়ে ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে গেলাম।
মুখটা চিনি চিনি কিন্তু ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।
কি নীপা, আমি ঠিক কথা বলছি।
হ্যাঁ।
শালা, ঢেমনা চিন্তে পারছো না।
বলে আমার হাতটা ধরে এমন জোরে করমর্দন করলো আমি কঁকিয়ে উঠলাম।
নীপা বললো, চিন্তে পারছো না! যার কথা আজ দুপুরে খেতে খেতে বলছিলে, এইই সেই বিশেষ ব্যক্তি।
অনাদি!
হ্যাঁরে ঢেমনা, অনাদি।
অনাদি বাইক থেকে নামলো।
পথচলতি অনেকে অনাদির পাশে দাঁড়িয়ে পরেছে। নেতা হলে যা হয়। ফেউরা ভিড় করে থাকে। আমি অনাদিকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। দশবছর আগে দেখা অনাদির সঙ্গে এখনকার অনাদির অনেক পার্থক্য। অনেক সার্প। কেমন আছিস।
ভাল। কদিন থাকবিতো এখন।
হ্যাঁ। তবে পর্শুদিন চলে যাবার কথা।
সেকিরে.....আচ্ছা আচ্ছা তুই এখন হাটে যাচ্ছিস তো।
হ্যাঁ।
নীপা তোরা বাসুর দোকানে থাকিস, আমি এখুনি একটা কাজ সেরে ঘুরে আসছি। চলে যাসনা যেন।
আমরা আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। নীপা আমার পাশে পাশে চলেছে। কখনো মাথাটা মাটির দিকে করে আবার কখনো মাথাটা সামনের দিকে।
তোমাকে দেখে আমার হিংসে হয় জানো অনিদা।
হাসলাম। কেনো ?
তোমার পপুলারিটি।
তাহলে বলো আমি এই গ্রামের একজন সেলিব্রিটি।
সেলিব্রিটি বললে ভুল হবে তার থেকেও যদি বেশি কিছু থাকে, তুমি তাই।
বাড়িয়ে বলছো।
নাগো, সত্যি বলছি। বারান্দায় যাদের দেখলে, তারা প্রত্যেক দিন এসে মশাই-এর কাছে তোমার খোঁজ খবর নেবে। তুমিতো কোনদিন ফোনও করো না, আর চিঠিপত্রও দাও না। মশাই ওদের প্রত্যেকদিন বানিয়ে বানিয়ে তোমার কথা বলে, তারপর কাগজ বার করে তোমার লেখা পরা হয়, তুমি নাকি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। সত্যিতো, গত পাঁচ বছরে আমি একটা চিঠিও লিখি নি। মনাকাকা অফিসের ঠিকানায় কয়েকটা চিঠি লিখেছে। অমিতাভদা আমায় বলেছেন এই মাত্র। তবে নিয়ম করে টাকাটা আসতো, আর আমার খবরা খবর অমিতাভদাই দিতেন। নীপার দিকে অপরাধীর মতো তাকালাম।
সত্যি নীপা একদম সময় পাই না।
একটা ফোন করার সময় পর্যন্ত পাও না।
ফোন যে এখানে আছে তাই জানি না।
তুমি জানোনা!
না। সত্যি বলছি। আর মাবাইলটার কথা বলছো, এই গত মাসে ভাইজ্যাক গেছিলাম ইলেকসন কভার করতে, তখন অমিতাভদা এটা কিনে দিয়েছেন।
ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি সত্যি বলছি। তবে এবার দেখো, এ ভুল আর হবে না।
নীপা হাসলো। ওর হাসিটাই বলে দিচ্ছে ও জিতে গেছে।
আমরা হাটে পৌঁছেগেলাম। নীপা বললো চলো একবার বিউটি স্টেশনার্সে যাব।
সেটা আবার কি।
ওঃ তোমায় বলেছি না তোমার দশ বছর আগের দেখা হাট আর এখনকার হাটের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
ওখানে কি পাওয়া যায়।
ওখানে সাজগোজের জিনিষ পাওয়া যায়।
সেতো মনিহারীর দোকানে পাওয়া যায়।
কনসেপ্ট বদলে গেছে।
হাসলাম। সত্যি লোকজন অনেক কমে এসেছে, তবে আগে সন্ধ্যা হয়ে এলে লম্ফ ছাড়া কোন আলো হাটে দেখা যেতো না। এখন দেখছি বেশ কিছু দোকানে নিওন আলো জলে উঠেছে। আগের থেকে অনেক ঝকঝকে। এখন আর হাট বলে মনে হয় না। বাজার বলাই ঠিক হবে।
এসো ভেতরে এসো।
আমি নীপার পেছন পেছন দোকানের ভেতরে গেলাম। একটা বছর কুড়ির ছেলে জিনিষ দেখাচ্ছে। মেয়েদের ভিড়ই বেশি। এই অজ পাড়াগাঁয়ে, এই ভর সন্ধ্যে বেলা মেয়েদের এত ভিড় দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দুচারজন মেয়ে নীপাকে দেখে এগিয়ে এলো। চোরা চোখে আমাকে দেখে নীচু স্বরে নীপাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। নীপা কিছু কথা বলতেই ওদের চোখের চাহুনি বদলে গেলো। নীপা যেন ডগমগ করছে ওর পা যেন মাটিতে পরতে চাইছে না।
ঋজুদা জিনিষ গুলো এনেছো ?
সব পায় নি।
তা হলে।
এই দিয়ে কাজ চালিয়ে দাও।
এই শুক্রবারের পরের শুক্রবার ফাংসন।
এখনো দশদিন বাকি দেখি যদি কলকাতা যাই আমি এনে দেবো।
উঃ তোমায় নিয়ে আর পরা যাবেনা।
পিঠে দরাম করে একটা ঘুসি পরলো। শালা সন্ধ্যের সময় হাটে এসেছো। যাতে কেউ দেখতে না পায়। তাই না।
বড্ড লেগেছে, তবু বুঝলাম এ পরিচিত কেউ হবে। পেছন ফিরে তাকালাম, ভানু, দিবাকর, চিকনা, পাঁচু, পচা, পলা, সঞ্জু আরো অনেকে। আমার সব কলেজ লাইফের বন্ধু। হেসে ফেললাম, ভনু আমার হাত ধরেতো প্রায় মুচড়ে ভেঙেই ফেলবে এমন অবস্থা।
হাত ছাড়তেই ভানুকে জড়িয়ে ধরলাম। কেমন যেন দেখতে হয়ে গেছে। কম বয়সে বুরোটে মারকা চেহারা। সেই ভানুর তাগড়াই শরীর কোথায়!
কিরে চেহারার এ কি অবস্থা।
আর বলিস কেনো, মাঠে খাটতে খাটতে.....।
আরে দোকানের মধ্যে নয় বইরে চল, যতই হোক ব্যবসার স্থান।
ওকে তুই চিনিস।
না। চিনবো কি করে।
উনামাস্টারের ছেলে। যাকে তুই হামা দিতে দেখেছিস।
ছেলেটি এবার কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। বাবর কাছে আজ সকালে আপনার কথা শুনেছি।
স্যারের সাথে আসার সময় সকালে দেখা হয়েছিলো।
নীপার দিকে তাকালাম। নীপা আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে অহংকারের প্রলেপ। আমি ছেলেটিকে বললাম, এই ভাই নীপা যা যা জিনিষ নেয় দিয়ে দাও। পয়সা নিও না। আমি দেবো।
ঠিক আছে।
এই নীপা শোন আমরা বাসুর দোকানে আছি, তোর সব কেনা কাটা হয়ে গেলে, ওখানে আসবি। অনি ওখানে থাকবে। পাঁচু বললো।
নীপা কোন উত্তর দেবার আগেই আমি ওদের হাতে চালান হয়ে গেলাম।
বাসুর দোকানে এলাম। বাসু আমাদের সঙ্গে ক্লাস টেন পর্যন্ত পরেছিলো। তারপর ওর বাবা বললো আর পরতে হবে না বাপ। মাঠে কাজ করো খাওয়া পরার অভাব হবে না। শুনেছি বাসু পরে বসন্তপুর কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েসন কমপ্লিট করেছিলো। সেই বাসু এখন বেশ জমপেশ করে রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকান করেছে।
আমরা এক দঙ্গল ঢুকতে বাসু এগিয়ে এলো। বুঝলাম আজ ওর বেচা কেনা লাটে। ভানু স্বভাব সিদ্ধ মতো লিডারের পার্ট নিলো। আমি ওদের হাতের পুতুল। বাসু বললো অনি তুই আজ অতিথি কি খাবি বল।
তোর দোকানতো লাটে উঠে যাবে।
দূর সারাদিন অনেক ব্যবসা করেছি। এবার একটু আড্ডা। কতদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা। বললি নাতো কি খাবি।
খাওয়াবি।
অফকোর্স।
পচা বলে উঠলো শালা ইংরেজি ঝারছে রে।
ভানু পচাটাকে সামলাতো। বাসু বললো।
আমি বললাম, একশো গ্রাম ছোলার পাটালি নিয়ে আয়।
বাসু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো, ওর চোখে কে যেন হাজার পাওয়ারের বাল্ব জালিয়ে দিল।
হ্যাঁরে তোর কি আর কিছু চাওয়ার নেই। সেই ছোলার পাটালি।
দশবছর খাই নি।
আজ গ্রামে ঢুকেই চুনোমাছের ভাজা দিয়ে কাকীর কাছে পান্তা খেয়েছি। তোর কাছে ছোলার পাটালি চাইলাম।
ভানু চেঁচিয়ে উঠলো পচা, দেখতো জানা ঘরের বুড়ীর কাছে ছোলার পাটালি আছে কিনা। ওখানে যদি না পাস কামরঘরের অশ্বিনীর কাছে থাকবে।
পচা আর একটা জিনিষ নিয়ে আসিস, একটু ছোলা সেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা, আলুভাজা গুলো দেখে নিস। আমি বললাম।
সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না আমি এই ধরনের কিছু ওদের কাছে চাইতে পারি। আমি যেনো একটা কেউ কেটা হয়ে গেছি। পুরোদস্তুর শহুরে একজন লোক। অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকালাম। একটু পরিবর্তন সকলের মধ্যে হয়েছে। সেটা বয়সের ধর্মে কিন্তু মনের দিক থেকে এখনো আমরা সেই কলেজের বন্ধু। আমি যেনো আবার আমার কলেজ লাইফে ফিরে গেলাম। এরিমধ্যে বাসুকে কানে কানে বললাম, নীপার জন্য তোর দোকানে বেস্ট যে শালোয়ার কামিজটা আছে প্যাক করে রাখ।
অনাদি এলো, আবার একচোট হই হুল্লা হলো, পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ এলো সকলে ভাগ করে খেলাম, শেষে চা।
আমি অনাদি ভানু আর বাসু আলাদা করে কাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। ওরা আমাকে বললো এখানে খুব ভালো একটা নার্সিংহোম হয়েছে। তুই যদি বলিস তাহলে ব্যবস্থা করি। আমি বললাম আমি থাকাকালীন এটা করে যেতে চাই। ওরা আমায় কথা দিলো কাল দুপুরের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দেবে। আমি ওদের বললাম, টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববি না। আমি কাকার চোখের আলোটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। ওরা বললো ঠিক আছে। আর একটা কথা, আমার জমিজমা নিয়ে একটু কথা আছে, কাল তোরা আয় দুপুরের দিকে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে। অনাদি একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। আমি হেসেফেললাম, অনাদির হাতটা চেপে ধরে বললাম, এখনো এটা অভ্যাস করি নি। কালেভদ্রে একটা দুটো খাই। বাসুর চোখ কপালে উঠলো। অনাদি বললো কালেভদ্রে খাস যখন এখন একটা খা। চারিদিক চেয়ে দেখলাম, অনাদিকে বললাম, বড়রা যদি কেউ থাকে। সতীপনা করিস না, আশেপাসে এখন সিনিয়াররা কেউ নেই। সবাই এখন তোর বাড়িতে। ওখানে আড্ডা মারছে।
আমি অনাদির দিকে তাকালাম। ভানু কোথায় গেলোরে।
আর বলিস না। কাল সব বলবো।
অবাক হোলাম।
উনামাস্টারের ছেলের দোকানে কিছু টাকা পাবে, নীপা কিছু জিনিষপত্র কিনেছে।
কাল দিবি।
না না। তুই পচাকে বল একটু দিয়ে আসতে।
অনাদি পচা পচা বলে চেঁচাতেই, পচা এসে হাজির। মানিপার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট বার করে বাসুর দিকে এগিয়ে দিলাম। তোর দামটা নিয়ে বাকিটা পচাকে দে।
দূর শালা। সকাল থেকে পাঁচশো টাকা বিক্রি হয় নি তুই হাজার টাকার নোট দেখাচ্ছিস।
আচ্ছা, তোর দামটা নিয়ে দিবি তো।
না থাক।
তাহলে নেবো না।
বাসু আমার দিকে কটমট করে তাকালো। অনিচ্ছা সত্বে উঠে গেলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট পচার হাতে দিয়ে বললো যা দিয়ে আয়।
আমি পচাকে বললাম, নীপাকে একবার বলে আসিস, এবার উঠবো।
সকলে হো হো করে হেসে উঠলো।
হাসলি যে।
ওই দেখ নীপা দাঁড়িয়ে আছে।
বাইরে দিকে তাকিয়ে দেখলাম নীপা ওর সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে।