Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 2.73 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
আমার নানা বাড়ি: মা যখন সবার থেকে আলোকবর্ষ দূরে।
#15
পর্ব ২
-----
নানু বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল আটটা বেজে গেছে। বাড়িতে চাকর বাকরের দৌড়ো-দৌড়ি শুরু হয়ে গেছে। রান্না ঘরে নাস্তা বানানোর টুং-টাং আওয়াজ আর ঘরের মহিলাদের গলা পাওয়া যাচ্ছে।  মা তো এই সময়ে রান্না ঘরেই থাকার কথা। এক দৌড়ে রান্না ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মা বলে ডাক দিলাম। নানা বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে রান্নার কাজ করে যিনি-মৌসুমী আপু ফিরে তাকালেন। 
  • -আরে জীবন, কখন আসছো? একটা খবর দিয়ে আসবে না? প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম মা কোথায়?-খালাম্মা তো দশটা এগারটার আগে ঘুম থেকে উঠেন না। তুমি হাত মুখ ধুঁয়ে নাস্তা করো, এর মধ্যে উঠে যাবে।
কিছুটা অবাক হলাম। যে মাকে ছেলেবেলা থেকে দেখি আসছি ভোর ৬ টার সময় ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নিজ হাতে নাস্তা রেডি করতে, সেই মা এখন দশটা - এগারটায় ঘুম থেকে উঠে?? 
  • -মায়ের কি শরীর খারাপ নাকি? উত্তরে না বলে মুচকি হাসলো সুমি আপু। -আরে প্রথম প্রথম এরকম একটু দেরীই হয়, গতরের উপর দিয়ে তো কম ধকল যায় না।পাশ থেকে বলে উঠল আলেয়া নানী (আলেয়া নানীও বাসার একজন কাজের লোক)। নানী কি বলতে চাইছে বুঝতে বাকি রইল না।  আহ, নানি মুখে কিছু আটকায় না। সুমি আপু কপট রাগ দেখালো। 
আমার মধ্যে একরাশ অভিমান জমা হল। যাক, মায়ের নতুন সংসার ভালই চলছে। এজন্য গত দুই বছরে খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করে নি। 

একটু পর একজন কাজের লোক এসে বাহিরের ঘরে নাস্তা দিয়ে গেল। রুটি, সবজি-ভাজি, ডাল। একটা রুটি শেষ করে আরেকটা রুটি মুখে দিবে, এমন সময় মায়ের ঘরে দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। উঠে দৌড় দিতে যাব এমন সময় শোভন হাত ধরল, খাওয়া শেষ করে উঠ। এমন সময় জাহিদ একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরে, লুঙ্গী ঠিক করতে করতে রুমে ঢুকল। বাহ, গত দুই বছরে আরো তাগড়াই হয়েছে। দেখলে আর আমাদের মত টিএনেজার মনে হয় না, একদম ব্যাটা মানুষ হয়ে গেছে। 
  • -এই আবুল, গোসলের পানি দে তো।-কিরে কেমন আছোস? (যদিও জাহিদ আমার থেকে বয়সে বছর দুয়েকের বড়, কিন্ত একেতো আমাদের বাসার কাজের লোক, তার উপর ছোটবেলার খেলার সাথী, তাও ওকে সবসময় তুই করেই বলতাম। যদিও জাহিদ আমাকে তুমি করে বলত। শত হলেও মনিব স্থানীয় লোককে তুই বলার সাহস গ্রামের লোকেদের থাকে না।)
জাহিদ চমকে উঠে মুখ গম্ভীর করে বললো, "তোমরা?" আমি বললাম, "আম্মুকে সারপ্রাইজ দিতে কিছু না বলেই চলে আসলাম।" জাহিদ শুধু বললো, "ও"। ওর মুখ থেকে মনে হচ্ছে আমরা আসাতে খুবই বিরক্ত হয়েছে। এমন সময় বাড়ির বৃদ্ধ কাজের লোক পরান একটা সাবান আর গামছা নিয়ে জাহিদকে এগিয়ে দিল। 
  • -সাব, বাথরুমে গোসলের পানি দেওয়া আছে। -আপনি কেন? আবুল কোথায়? -আবুল তো ওই ভোরে উঠেই মেকানিকের কাছে গেছে। এত দূরের রাস্তা যাবেন, গাড়িটা একবার চেক করিয়ে আনতে গেছে। -সে যাবে ফ্রি টাইমে।এখন এত কাজ। আপনি কি আর বয়সে সারাদিন আমার সাথে দৌড়াতে পারবেন?-পারবো সাব। সেই পনেরো বছর বয়স থেকে এই বাড়িতে কাজ করি।মাথায় কত বস্তা বস্তা ধান তুলছি, এখন তো ঝার পোছ ছাড়া কিছু করাই হয় না। বসে থাকতে থাকতে শরীরে জং ধরে গেছে। -হয়েছে থাক। এই বয়সে এত ছোটাছুটি করে আবার একবারে বিছানায় পরে যাইয়েন না। 
জাহিদকে আবার কবে থেকে বাড়ির চাকর বাকর এত খাতির করা শুরু করল। আর ওর বা এত ছোটাছুটির কি আছে? ওর কাজই তো মা এই বাড়িতে এলে মায়ের ফাই ফরমাশ খাঁটা। এছাড়া তো সারাবছর বসেই থাকে। হঠাৎ করে মাথা খারাপ চিন্তাটা চলে আসলো। তবে কি মা......... ছি ছি!  এ কি ভাবছি আমি। জাহিদ মাকে ফুফু ডাকে, এই হাঁটুর বয়সী ছেলেকে। ওর যখন ছয় বছর বয়স তখন মাকে বাসার কাছে সাহায্য করার জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।তবে জাহিদ বয়:সন্ধি থেকেই ছিল লুইচ্চা স্বভাবের। আমি যখন ক্লাশ সিক্সে  (জাহিদের বয়স তখন চৌদ্দ ) তখন আশেপাশের বাড়ির একাধিক উঠতি মেয়ের সাথে অনৈতিক সর্ম্পক  করে বেশ ভাল বদনাম কামিয়ে ফেলে। শেষে বদনামের ভয়ে নানাবাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তবে মা যখন এই বাড়ি আসত, ওই সব ফাইফরমায়েস খেঁটে দিত।  ছয় থেকে চৌদ্দ,  বাবা-মার রাগী স্বভাবের জন্য এই আট বছরে কম লাথি-গুঁতা খায় নি। বাড়িতে আমাদের সবার জন্য কাঁচের প্লেট-গ্লাস থাকলেও, ওর জন্য ছিল টিনের থালা আর পানির পাত্র। একদিন বাজার নিয়ে এসে তাড়াহুড়ো করে আম্মুর গ্লাসে পানি খেয়ে ফেলায় কি গাল-মন্দটাই না খেয়েছে। মা ওকে নিজের গ্লাসটাই ব্যবহার করতে দিত না, আর ওকে নাকি বিয়ে করে নিজের শরীরটাই ব্যবহার করতে দিবে। যাহ! কিসব ভাবছি আমি। তবে মা যে আবার বিয়ে করেছে এটা তো নিশ্চিত। কে মায়ের হাজবেন্ড? 
একটু ইতস্তত করে শোভনকে জিজ্ঞেস করলাম, মা কাকে বিয়ে করেছে জানিস? শোভন রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, "এখনো বুঝিস নি?" এখনো ও বুঝি নি মানে? জাহিদ? না না, এ হতে পারে না। ছোট বেলায় আমি জাহিদকে আমার খেলনা ধর‍তে দিতাম না, সেই জাহিদ এখন আমার মাকে নিয়ে খেলে? না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে জাহিদ যদি না হয় আর কে? মা বিয়ে করে থাকলে শ্বশুর বাড়িতে না থাকে এই বাড়িতে কি করে? আমার আকাশ ভেঙ্গে  কান্না পাচ্ছে। 
  • -বেশি ভনিতা না করে বলত।
শোভন হো হো করর হেসে উঠল। আরে এত অধৈর্য হচ্ছিস কেন? আমার তো এক্সাইটেড লাগছে। আমার প্রাণপ্রিয় খালা এখন নতুন বউ, লাজুক মুখে নিজের হাসবেন্ডকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। আমার ইচ্ছা করছে এক ঘুষি মেরে শোভনের নাক ফাটিয়ে দিতে। শালা আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে, ও ইয়ার্কি করছে। আর কিসের নতুন বউ, বিয়ে তো নাকি সেই এক বছর আগে করেছে। শোভন আমার কাঁধে হাত রেখে বলল। রাগ করিস না। তোর মা সুখে আছে, এইটা কি যথেষ্ট না। তোর মা কি তোর সুখের জন্য কম কষ্ট করেছে? তোর বাবা কি তোর মাকে কম অত্যাচার করেছে? রাজবাড়ির রাজকন্যা, অথচ তোর বাবাকে ভালবেশে ওনাদের টিনের ঘরে বাইশ বছর সংসার করেছে? বিনিমতে তোর বাবা কি দিয়েছে? জীবনে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেছে? কথায় কথায় মা-বাবা তুলে গাল-মন্দ। আমি চুপ করে রইলাম। বাবা মার মধ্যে প্রচুর ঝগড়া হত ঠিক, কিন্তু উনি মাকে ভালও বাসত। সকাল থেকে রাত অবধি হাঁড়-ভাঙ্গা পরিশ্রম করত, তবুও মায়ের বাবার বাড়ির কাছে কিছু চেয়ে মাকে ছোট করত না। যাক গে, এসব কথা শোভনকে বলে লাভ নাই। চুপ করে থাকতে দেখে শোভন আবার বলতে শুরু করল, "তুই তোর মায়ের সংসারে কোন ঝামেলা করিস না, এতে অশান্তি বাড়বে।" আমি ক্ষীণস্বরে বললাম, "হুম।"
[+] 10 users Like nontu's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার নানা বাড়ি: মা যখন সবার থেকে আলোকবর্ষ দূরে। - by nontu - 06-12-2025, 09:31 AM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)