(২৭)
রাত ১০টা বেজে গেলো। এখন পর্যন্ত কারো মুখে এক ফোটা পানি পর্যন্ত যাইনি। শাশুড়ি টাকার শোকে কাতর হয়ে গেছেন। মিম তখন থেকেই মায়ের কাছে। শাশুড়ি মাঝে মাঝেই বলছেন— “সালাম ভাই এমনটা করতে পারলো!!! কত বিশ্বাস করে বাসাই জায়গা দিলাম। বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলো?”
এই পরিবারের মনে বিশ্বাস শব্দটা একেবারেই তুলে নিয়ে চলে গেছে সালাম চাচা। পরতে,সুত্তে, খেতে, সাথে বেতন। আলিশান জীবন যাপন পেয়েছিলেন। এর পরেও একজন মানুষ এমন কাজ কিভাবে করতে পারে? উনার নিজের সন্তান ই তো উনাকে নাকি দেখভাল করেনি। সেখানে আমরা নিজের চেয়েও আপন করে ঘরে তুললাম। প্রতিদানে এই পেলাম! বিশ্বাসঘাতক।
“মিম তুমি যাও খাবার গরম করো। আমি আম্মাকে নিয়ে আসছি।”
মিমকে পাঠিয়ে দিয়ে আম্মার পাশে বেডে বসলাম। পেছন থেকে ডান হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরলাম। মাথাটা ধরে নিজের বুকে রাখলাম।
“আম্মা।”
“......”
“আম্মা?”
“হুম।”
“আম্মা আপনার ছেলে থাকতে আপনি কান্না করছেন? এটা ভাগ্যে ছিলো আম্মা। কি করবেন কেদে বলেন? আম্মা কাল আমার একাউন্ট থেকে টাকা তুলে এনে কাজ শুরু করবো। আপনি প্লিজ কাদবেন না। আমার একাউন্টে যথেস্ট টাকা আছে।”
“তুমি কেন টাকা খরচ করতে যাবা? তোমাকে টাকা উঠাতে হবেনা।”
“আচ্ছা উঠাবোনা। প্লিজ এবার শান্ত হন।”
উনি আনমনা বসেই আছেন। আমার বুকে মাথা। অসাড় বডি। কোনো হেলদেল নাই। বাম হাত দিয়ে থুথনিটা ধরে মুখটা উপরে তুললাম।
“আম্মা আপনার ছেলের দিকে তাকান।”
উনি একবার তাকিয়েই ফুফরে কেদে উঠলেন আবার। বুকে মুখ লুকালেন। শক্ত করে চেপে ধরলাম। শালার আমার এক সমস্যা। মানুষকে শান্তনা কখনো দিতে শিখলাম না। কি বলবো? কিভাবে বললে উনি শান্ত হবেন? এত টাকা এক নিমিশেই যার হারাই যাই, সেকি শান্তনা হবার মত অবস্থায় থাকে? জানিনা।
“আম্মা।”
“......”
“প্লিজ আম্মা কথা বলেন।”
“.....”
“আম্মা আপনি যদি কথা না বলেন বুঝবো এই পরিবারে আমার কোনোই মূল্য নাই। কি এমন হয়েছে টাকা গেছে তো? আমার একাউন্টে এর চেয়েও বেশি সেভিংস আছে। আমি যদি আরেকিটু চেস্টা করে আরেকটা প্রোজেক্ট খুজি এই টাকাটা ইনকাম করতে আমার এক বছর লাগবে মাত্র। আর আপনি এই টাকার চিন্তায় শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন। কথা বলছেন না। হাড়ি ভেঙ্গেছে,কুকুর তো চিনেছেন। এভাবে বসে থাকলে সমাধান হবে? নাকি টাকা ফেরত পাবেন?”
লম্বা ভাষণে কাজ হয় হবে, নয়তো নাই। বাল মানুষকে শান্তনা দেওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ। হ্যা এটা সত্য, আমি যদি আমার ইনকাম থেকে বাসাই টাকা না পাঠাই তবে প্রতি বছর ৯ লাখের উপর আমার একাউন্টে পেমেন্ট জমা হবে। আমার এই প্রোজেক্টে ৩বছর চলছে। বাসাই টাকা দিয়ে, নিজের খরচ চালিয়েও এখনো আমার একাউন্টে উনার হারানোর চেয়েও বেশি আছে। আরেকটা কাজ খুজতে হবে। বাসার কাজে নিজেও কিছু ইনভেস্ট করবো। জানি শাশুড়ি রাজি হবেন না। রাজি করাতে হবে।
“না বেটা, এভাবে বলোনা। টাকা গুলি তোমার শ্বশুরের কস্টের জমানো টাকা ছিলো।”
“তো কি হয়েছে? অন্তত একটা শিক্ষা পেলাম। ইতর শ্রেণীর মানুষ সারাজীবন ইতর ই থাকে। আল্লাহ গরিব মিসকিন কে এজন্যে কখনো ধনি বানান না।”
পকেটের ফোন বেজে উঠলো। ফাউজিয়া ফোন করেছে। আমি আম্মুকে ইশারাই চুপ থাকতে বললাম। এও বললাম---ওরা যেন আজকের ব্যাপার না জানতে পারে।
“হ্যালো ফাউজি বলো।” ফাউজিয়াকে অনার্স থেকেই ফাউজি ডাকি। আমি একা না। ক্লাসের সবাই এই নামেই ডাকে।
“রাব্বীল কি করো? কেমন আছো তোমরা?”
“এইতো আম্মার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি। আমরা সবাই ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো?”
“রাব্বীল, মাথায় খুউউব চিন্তা কাজ করছে। কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছিনা। আমরা যা করতে যাচ্ছি, ঠিক করছি তো?”
“আমার পাগলি মান্ধবির কথা শুন। ভুল ই বা বলছো কেন? নিজেদের ভালোবাসার পুর্নতা করতে যাচ্ছো। বাসাই মানলে তো এমন ভাবে পুর্নতা করতে না। তোমরা প্রাপ্ত বয়সের। দুজনেই শিক্ষিত। চিন্তা করোনা। বাসাই বিয়েটা আটকিয়ে রাখো। এরপর প্রচুর পড়াশোনা করে চাকরি নাও দুজনে। চাকরি হলে বাসাই বিয়ের প্রস্তাব দাও। ব্যস।”
“বাসাই কি আমাদের বিয়ের কথা বলে দিব?”
“না না। এই কাজ কখনোই করবেনা। আগে চাকরি নাও। দেন বাসাই বিয়ের প্রোপোজাল দিবে। ওরা দেখবে মেনে নিবে।”
“কপালে কি যে আছে!”
“অতো চিন্তা করোনা তো। এও নাও আম্মার সাথে কথা বলো।”
আমি আম্মার দিকে ফোন এগিয়ে দিলাম। আম্মা ইশারাই না না করতে থাকলেও জোর করে দিলাম।
“হ্যা বেটি বলো। কেমন আছো?”
“....”
“তোমাদের জন্যই ব্যবস্থা করছিলাম আজ সারাদিন। আমার আরেক মেয়ের বিয়ে বলে কথা। হাতে তো সময় কম।”
“......”
“মায়েদের ধন্যবাদ দিতে নেই বেটি। বাবা মা সন্তানের জন্যই তো করবে।”
“.....”
“দেখবা একদিন তোমার আব্বা আম্মাও মেনে নিবে। সন্তানের সর্বোচ্চটা ভালো চাইতে গিয়ে অনেক বাবা মা সন্তানের সুখের চিন্তা ভুলে যাই। নিজের মত করেই সুখ দেবার চেস্টা করে।”
“......”
“তুমি চিন্তা করোনা বেটি। তোমরা পরশু চলে আসো। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
“....”
“আচ্ছা নাও ভালো থাকো।”
আম্মা আমাকে ফোনটা এগিয়ে দিলো। আমি ফোনটা নিয়েই বললাম, “দেখলেন আম্মা আপনি এক নিমিশেই একজনের চিন্তা দূর করে দিলেন। অথচ নিজে একটা জিনিস নিয়ে পড়ে আছেন।”
“বেটা আমি কোনোমতে বিশ্বাস করতে পাচ্ছিনা ঐ লোকের ভেতর এমন!”
“আম্মা প্লিজ এসব আর না। আপনার ছেলে আছে না? আপনার মত মা থাকতে আমি যেমন ভাবি---দুনিয়ায় আর আমার কিছুই দরকার নাই। তাহলে আপনি কেন এমনটা ভাবতে পাচ্ছেন না? আমি তো আছি। টাকা হাতের ময়লা। আমি এক বছরের মধ্যেই আপনাকে এই টাকা ইনকাম করে দেখাবো।”
“বেটা তুমি ইনকাম করো। তোমাদের ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চা আছে। এখন এসব খরচ করার দরকার নাই।”
“আম্মা, আমাদের পরিবারে আপনিই এখন আমাদের বাচ্চা। আমাদের মেয়ে। আপনি এতো চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু বসে বসে খাবেন। বলেন সংসার নিয়ে এতো ভাববেন না?”
“আচ্ছা বেটা ভাববোনা। যাও দেখো খাবার রেডি হলো কিনা। আমি একটু ওয়াসরুমে যাবো।”
“চলেন আম্মা আমি আপনাকে ওয়াসরুম নিয়ে যাই। এখন থেকে আপনি আমাদের ছোট্ট মেয়ে। আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাই।” বলেই উনাকে কোলে তুলে নিলাম। উনি খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। আমি ওয়াসরুমের দিকে চললাম।
“বেটা রাখো আমায়। পড়ে যাবো।”
“আপনি পড়বেন না। আপনার এই বাবা আপনাকে ফেলবেনা।”
“হি হি হি। বেটা আমার টয়লেটে কাজ আছে। আমাকে নিচে নামাও।”
আমি প্রায় টয়লেটের দরজার কাছে।
“কি কাজ বলেন?”
“না তুমি নামাও।”
“দেখেন, এখন থেকে আপনি আমাদের মেয়ে। বাপ মেয়েকে টয়লেট করাবে। চলেন।”
“নায়ায়ায়ায়া।”
আমি টয়লেটের দরজা ধাক্কা দিয়ে ঠেলে উনাকে নিয়ে ঢুকে গেলাম।
ভেতরে নামিয়ে দিলাম।
“আচ্ছা আম্মা, আপনি করেন আমি গেলাম।” বলেই উনার পেটে হালকা চিমটি কেটে বেরিয়ে গেলাম। পেছন থেকে শুনতে পেলাম –--- “সয়তান ছেলে একটা”।
**********++**********
“আম্মা আজ সত্যিই নিজেকে এই পরিবারের গার্জিয়ান মনে হচ্ছে। যেন সত্যিই আমি এই পরিবারের কর্তা।”
“হ্যা আজ থেকে তুমি আমার বাবা। হি হি হি।”
“আম্মা আপনার পাগলি মেয়ের কথা শুনেন।”
“হ্যা বেটা, কোনো পরিবার যখন ভরসা করার মত কাউকে কাছে পাই তখন সেই পরিবারের আর চিন্তা থাকেনা। তুমি এই পরিবারের কর্তাই।”
“আমারো অনেক ভালো লাগছে আম্মা। আপনাদের কাছের একজন হতে পেরে।” বলে দুজনকে বুকের দুই পাশে শক্ত করে চেপে ধরলাম
মিম আর শাশুড়ি এখন দুজনেই আমার বুকে মাথা দিয়ে সুয়ে আছে। মিম ডান দিকের বুকে। শাশুড়ি বাম দিকের। খেতে বসে আমিই কথা তুলেছিলাম যেন শাশুড়ি আজ আমাদের সাথেই ঘুমাই। আজ থেকে উনি আমাদের সন্তান। পরিবারের আর কোনোই চিন্তা করা লাগবেনা। আজ থেকে আমিই সব করবো।
উনি সুতে রাজি না হলেও মিমের জোরা জোরিতে রাজি হয়। আমি বলি, ওকে তাহলে লাইট বন্ধ করে আমরা ঘুমাবো যেন কাউকে লজ্জা না লাগে। আর আমি এই পরিবারের গার্জিয়ান আজ থেকে। আম্মা আজ থেকে আমাদের মেয়ের মত। খাবেন আর আমাদের সাথে গল্প করবেন।
“তোমার মনটা অনেক ভালো বেটা।”
আমি শাশুড়িকে পেচিয়ে ধরা হাত দিয়ে উনার পেটের কাছে নিলাম। জামাটা আসতে করে তুলে উনার খোলা পেটে হাত রাখলাম। উনি হালকা কেপে উঠলেন। সেম কাজটা মিমের পেটের উপর করলাম। মিম ফিসফিসিয়ে বললো, “এই কি করছো। পাশে আম্মু।”
একটা চাদর দিয়ে ৩জনের শরির ঢাকা। আমার দুই হাত দুই নাভির ধারে। সুরসুরি দিচ্ছে। বুকের দুই পাশে দুই স্বর্গ।
“আম্মা আজ থেকে আমি আপনার “ আব্বু” হই। বেটা বলছেন কেন? হা হা হা।”
আমার জোকসে ৩জনেই হেসে উঠলাম।
“হ্যা আম্মু আজ থেমে তুমি রাব্বীলকে “আব্বু ডাকবা। আর আমাকে “ আম্মু” ডাকবা। হি হি হি।”
“আম্মা একটা কথা বলি?”
“বলো বেটা।”
“আজ থেকে আর কোনোদিন চোখের পানি ফেলবেন না। কথা দেন।”
“আচ্ছা বেটা।”
আমি দুই পাশের দুই পাজামা ভেদ করে দুই হাতের আংগুল গুলি ওদের তল পেটে চালান করে দিলাম। আম্মা অনেক কষ্ট নিজেকে কন্ট্রল করলেও মিম আহহ করে উঠলো।
“আম্মু তোমার জামাই থাকতে তোমার আর চিন্তা করার দরকার নাই।”
শাশুড়ি আর কথা বলছেন না। মনে হয় মুখ চেপে নিজেকে কন্ট্রলের চেস্টা করছেন। আমি আর বেকায়দার ফেলতে চাইলাম না। হাত টেনে নিলাম।
“আম্মা বোধায় ঘুমিয়ে গেছে গো। চলো আমরাও ঘুমাই যাই।”
জানি আমার ঘুম হবেনা আজ। আর ঘুম না হবার ই কথা। জানিনা ওদের ঘুম হবে কিনা।
আচ্ছা আমার ঘুম না হলে ওদের ঘুম হয় কেমনে? তারাও তো মানুষ! রক্ত মাংসের মানুষ। তবে আমার দুই হাতের উপর তাদের ঘুম অনেকটা নির্ভর করবে। আমি চাই হাত দুটো স্থির থাকুক। সবাই ঘুমাক। কিন্তু হাত তা মানবে তো!
আমার দুনিয়া
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
*******************************



![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)