Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.75 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (ঘ) এর বাকি অংশ......... 



প্রচণ্ড লজ্জা আর রাগের মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে নিচে নামল রানীমনে মনে নিজে, তারপর জান্নাতের, উপর রাগ ঝাড়তে থাকে  আর মাঝে মাঝে জয় ও কিছুটা ভাগ পায় রানীর মতে , ওর মুখ থেকে অমন বেফাস কথা বেরুনোর মুল কারিগর আসলে জয় । ওর ওই টেক্সটটা পাওয়ার পর থেকেই তো সব এলোমেলো হয়ে গেলো নাহলে রানী কি কখনও  এমন বেফাঁস কিছু বলে ফেলত?  

ঠিক তখনই রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে আয়শার আদুরে ডাক আমার মায়ের ঘুম হয়েছে?… আয় মা, এদিকে আয়সকাল থেকে এই রান্নাঘরেই আছি, তোর যে একটু খবর নেবোসেই সুযোগটাই পেলাম না শেষের দিকে রানীর খোঁজ নিতে না পারার আক্ষেপ স্পষ্ট আয়শার কণ্ঠে ।

রানী ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে আয়শার সামনে দাঁড়ায়মাথা নিচু করেকারণ জান্নাতের সেই ভাবিডাকের পর যে লজ্জাটা ওকে ঘিরে ধরেছিল, আয়শার সামনে এসে সেটা আরও দ্বিগুণ হয়ে গেছে কারন জান্নাত ওকে যা ভেবে ভাবি ডেকেছে , সেই হিসেবে সামনে দাঁড়ানো এই নারী ওর শাশুড়ি হয় , মাথা নুচু অবস্থায় ই রানীর ঠোঁটে মৃদু এক হাসি খেলে যায় । ভীষণ লজ্জা হচ্ছে ঠিক , কিন্তু সেই সাথে এই মাতৃ স্থানীয় নারিটিকে আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি আপন মনে হচ্ছে ।
রানীকে এমন মাথা নিচু করে থাকতে দেখে আয়শা ভাবেরানী বোধহয় এখনো আব্বুর ব্যাপারেই চিন্তিত
সান্ত্বনা দিতে নরম গলায় বলেএখনো ভয় পাচ্ছিস? তোর বড় আব্বু সেই  সকালে উঠেই হসপিটালে চলে গেছেডাক্তার বলেছে রহিম ভাইয়ের তেমন সমস্যা নেইগতকাল যেটা হয়েছিল, সেটা বড় কিছু না আয়শা চেষ্টা করে , রহিমের সমস্যা আর বেশি ছোট করে দেখাতে , যতটা না ডাক্তার বলেছে ।
কিন্তু রানী মাথা তোলে নাএবার কারণটা ভিন্ন
আব্বুর নাম শুনতেই বুকের ভেতর হঠাৎ করে কিছু  অনুতাপ জমে ওঠে, নিজেকে কেমন জানি স্বার্থপর মনে হতে থাকে । ভাবে হাসপাতালে ওর বাবা শুয়ে আছে, আর  কীভাবে হা-হা হি-হি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে! সমস্যা যত ছোটই হোকমনটা কেমন করে ওঠে রানীর নিজেকে বড্ড আত্ম কেন্দ্রিক মনে হতে থাকে ।
রানীকে এভাবে চুপচাপ দেখে আয়শা খুন্তি নামিয়ে রেখে কাছে এগিয়ে যায় দুই হাত বাড়িয়ে রানীকে টেনে নেয় বুকে আন্তরিক মমতা মাখা স্বরে বলে , আমরা আছি না? এত্তো ভেঙে পড়িস কেন? আমরা কি তোর আপন নই,  কিরে মা? আমাদের আপন মনে হয় না?  
রানী চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নেয়আয়শার গা থেকে ভেসে আসা রান্নার মশলার  গন্ধে যেন মাথাটা হালকা হয়ে আসে
মনে মনে বলে ছোট আম্মু তোমাদের ,এতোই আপন মনে হয়  তোমাদের মাঝেই তো সব ভুলে যাই নিজের অবস্থান , নিজের পরিচয় সব ভুলে যাই , তাই ভয় হয় গো …… বড্ড ভয় । তোমারা যদি আমাকে আপন করে না নাও……… বে মুখে কিছু বলে নাশুধু আলিঙ্গনের ভেতরে শান্ত হয়ে থাকে   
কিছুক্ষণ পর আয়শা আলতো করে ওকে ছাড়ে হয়তো আরও একটু রাখত, কিন্তু চুলায় বসানো সবজির হাঁড়ি , সেখান থেকে  পোড়ে গন্ধ বেরুতে শুরু করেছে। আয়শা খুন্তি তুলে নিয়ে আবার কাজে লেগে যায়। তবে বার বার চোখ তুলে রানীর দিকে তাকায় মৃদু হেসে। গতকাল রানীর অবস্থা দেখে সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিল আয়শাতাই আজকের এই বাড়তি যত্ন 
যা, রেডি হয়ে নে তুইরান্না শেষ হলে আমি আর তুই হাসপাতালে যাবো আয়শা মমতায় ভরা কণ্ঠে বলে
হাসপাতালের কথা শুনে রানী ,  নিজের ডিপ থট থেকে বেড়িয়ে আসে , একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলে উহু, আমি আগে তোমাকে রান্নায় হেল্প করি তারপর আশেপাশে তাকায়  দেখে,  আয়শা একাই সব সামলাচ্ছেতাই জিজ্ঞাসা করে শান্তির মা কই?”
আয়শা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেআসেনি রেকাজের মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল এখনসময়মতো কেউ আসে না
তারপর হাসতে হাসতেই বলেতাই বলে তোর এখন রান্নায় নামতে হবে নাআমার শরীরে যত দিন শক্তি আছে, আমিই করবআমি একেবারে বুড়ো হয়ে গেলে তখন করিস 
 
কিন্তু রানী কথাটা শোনে নাকোমর বেঁধে কাজে লেগে পড়ে মুল রান্না আয়শা করে, আর রানী ছোটখাটো সাহায্যমশলার কৌটা এগিয়ে দেওয়া, লবণ চেক করা, টুকটাক কাটাকুটি করে দেয়া এসব  ফাঁকে ফাঁকে দুজনের মধ্যে টুকটাক গল্প হয়হালকা হাসি,  আর ঘরোয়া উষ্ণতা ধীরে ধীরে রানীর মন থেকে অনুতাপটাও দূর হয়ে যেতে থাকে কাজে ডুবে যাওয়া আর আয়শার আন্তরিক ব্যাবহার , রানীকে আবার ভুলিয়ে দিতে থাকে , সমস্যা গুলো ।
আধ ঘণ্টা পর ডাইনিং  থেকে ডাক আসে আম্মু, নাস্তা…” জয়ের কণ্ঠ এর সঙ্গে জান্নাতের অস্তিত্ব ও টের পাওয়া যায় , জয়ের সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করছে   
আয়শা হাসিমুখে বলে,  ঐ যে এসেছে সাহাজাদা আর সাহাজাদিযা মাঢেকে রাখা ট্রেটা নিয়ে যাতুইও খেয়ে নিসরান্নাঘরে আর আসিস না, আমার কাজ প্রায় শেষএই দ্যাখ তোর মুখ কেমন লাল হয়ে গেছে আগুণের আঁচে এই বলে আয়শা নিজের আঁচল দিয়ে রানীর মুখ মুছিয়ে দেয় , সত্যিই রানীর চেহারা আগুনের আঁচে একটু লালচে হয়ে উঠেছিলো , তবে ঘাম তেমন হয়নি, আয়শা একটু আহ্লাদ করেই মুছিয়ে দিয়েছে । রান্না করে অভ্যাস থাকলেও, গত চার পাঁচ মাস তেমন একটা রান্না করে না রানী, তাই আগুনের আঁচে বেশিক্ষণ থাকার ফলে মুখ কিছুটা লালচে হয়ে উঠেছে ওর , এটাও তেমন কিছু নয়।  তবুও রানীর কাছে আয়শার এই আদুরে জেসচার টা বেশ ভালো লাগলো ।    
 
রানী হাসিমুখে ট্রেটা হাতে নিয়ে ডাইনিংয়ে আসেজান্নাত আর জয় তখন টেবিলে বসে গল্পে মশগুলখুবই স্বাভাবিক ধাঁচে রানী একে একে নাস্তার থালাগুলো নামাতে থাকে
কিন্তু থালা নামানোর মাঝেই চোখ পড়ে দুজনের মুখে
ওরা ঠোঁট টিপে  হাসি চেপে রাখতে চাইছেযেন একটা গোপন হাস্যকর কিছু চলছে ওদের মাঝে 
রানী ভ্রু কুঁচকে তাকায় দুই ভাই বোনের দিকে  ওর চোখে জিজ্ঞাসা , যেন জানতে চাইছে এতো হাসি কিসের ?
জান্নাতের হাসি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, চোখ টলটল করছে দুষ্টুমিতে
আর জয় বেচারা ,  মুখে যতই সিরিয়াস ভাব আনার চেষ্টা করুকঠোঁটের কাছে হাসিটা বারবার ফেটে বেরিয়ে আসছেকাঁধ পর্যন্ত কাঁপছে ওর , জোর করে হাসি থামাতে গিয়ে ।
রানীর বুঝতে বাকি থাকে না ওরা দুজন কি নিয়ে হাসছে ,  সেই আগের লজ্জাটা আবার ধুম করে ফিরে আসে রানীর  ভেতর
কিন্তু এবার অবশ্য ও লজ্জায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে না বরং আত্মরক্ষার জন্য রাগের আশ্রয় দেয় চোখ রাঙিয়ে বলে ……
হাসছিস কেন দাঁত বের করে? কোনোদিন টেবিলে নাস্তা রাখতে দেখিস নি?”
বাক্যটা জান্নাতের দিকে তাকিয়েই বলা, কিন্তু গরমটা গিয়ে লাগে জয়ের গায়ে জয় তাড়াতাড়ি মুখ নিচু করে পানির গ্লাস তুলে নেয়পানি খাওয়ার চেষ্টা করে হাসি থামিয়ে  
কিন্তু জান্নাত? ও তো থামার পাত্রী নয়
হাসতে হাসতেই বলে রাগ করিস কেন? একটা খুশির ব্যাপার ঘটেছে আর আমি হাসবো না?”
কথাটা বলেই জান্নাতের মুখের হাসি আরও বাড়েযেন রানীর রাগান্বিত প্রতিক্রিয়াই ওর হাসি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে  
 
কি খুশির ব্যাপার ঘটেছে? এখানে কি সার্কাস চলছে নাকি?” রানী মুখটা টান টান করে ঝামটা মেরে বলে
জান্নাত চোখ বড় বড় করে, নাটকীয় ভঙ্গিতে জয়ের দিকে তাকায়
ওরে বাপ রে জয়! আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমার জন্য একটা নরমসরম ভাবি এনেছিসএখন দেখি এ তো পরিষ্কার দেবি চৌধুরানী!”
ভাবিশব্দটা শোনা মাত্র জয় আর নিজের হাসি আটকাতে পারে নাঠোঁট চাপা হাসি এক মুহূর্তে ফেটে বের হয়ে আসে, পানি চোখেও চলে আসে
আর রানী তো রেগে ফেটে পড়ার উপক্রমপা ঠুকতে ঠুকতে চেঁচিয়ে ওঠে,
বড় আম্মু! দেখো তো জান্নাত আর জয় আমার সাথে কি করছে!”
রান্নাঘর থেকে সাথে সাথেই ভেসে আসে আয়শার গলা,
জান্নাতজয়ভালো হবে না কিন্তুদাড়া, আমি আসছি!”
আয়শার সেই গলা শুনেই রানীর মুখে এমন ভাব ফুটে ওঠে, যেন মুহূর্তেই যুদ্ধ জিতে ফেলেছে
 
একটু পরেই আয়শা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে, উনুনের ধোঁয়া আর মশলার গন্ধ গায়ে মেখেএসে টেবিলে বসতেই রানীর মুখে এমন এক ভাবযেন যুদ্ধ জিতে গেছে, এখন জয় আর জান্নাত কে দেখে নেবে
ওদের চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে পারলে এবার  বল  
আয়শার সামনে পড়ে অবশ্য দুজনেই চুপ তাই নাস্তা শান্তিতেই শেষ হলো
নাস্তা শেষে আয়শা বলে, রানী মা, তুই এখানেই গোসল করে নে না? ঐ বাড়িতে যাওয়ার কি দরকার?”
রানী মুখ খুলতে যাচ্ছিলঠিক তখনই জান্নাত বলে ওঠে,
জামাকাপড় কি পরবে? ওর জিরো সাইজে আমার প্লাস সাইজ মনে হবে হ্যাঙ্গারে কাপড় ঝুলছে হি হি?” (যদিও  মোটেও প্লাস সাইজ নয়, তবুও ড্রামা করে বলল)  
হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিসতাহলে এক কাজ করজান্নাত, তুই রানীর সাথে যাওর একা গিয়ে কাজ নেই?” আয়শা গতকালের সিন মনে করে বলল ।
উফ আম্মু! রানী কি বাচ্চা মেয়ে?” জান্নাত বিরক্ত হয়ে বলে আমার কাজ আছে, এখনই বের হতে হবেপারব না আমি
রানীও মাথা নেড়ে বলে, “আমি একাই যেতে পারবো
কিন্তু আয়শা কিছুতেই রাজি নানিজেরও তো গোসল বাকিতাই ও  জান্নাতের পেছনে লেগে থাকে
একবার অনুরোধ করে   কাজ না হলে মৃদু ধমক দেয় হুমকি ও দেয়  তাও জান্নাত নড়ে না 
এই টানাপোড়েনের মাঝেই হঠাৎ জয় বলে ওঠে, আমি নিয়ে যাচ্ছি রানীকে যেন গ্রামবাসীর বিপদে হিরোর আগম হয়েছে , এমন ভাব করে ।
তিন রমণী তখন একসাথে জয়ের দিকে তাকায় তিন মুখে তিন রকমের অভিব্যক্তি
আয়শা প্রথমে চমকে যায়, তারপর মনে মনে ভাবে,
এই ছেলের মুখে তো কোনো ফিল্টারই নেইযা  মুখে আসে  না বুঝে তাই বলে  
জান্নাত তাকায় মাত্র এক সেকেন্ড তার মুখে তাচ্ছিল্য,  যেন বোঝাতে চিয়াছে ……তুই জীবনেও মানুষ হবি না 
রানীর মুখে দুই আবেগ একসাথে  এক চিমটি ভয়, এক চিমটি লজ্জা গালে গারো গোলাপি আভা । সেই সাথে জয় গেলে কি হতে পারে সেটা ভাবে আতঙ্ক ।
আর জয়? চুটুল হাসি দিয়ে তিনজনের মুখই দেখছে, যেন খুব আনন্দ পাচ্ছে 
প্রথমে রানীই বলে ওঠে ,  না না নাআমি একাই যেতে পারবোকাউকে লাগবে না!”কথা শেষ হতেই আড়চোখে জয়ের দিকে বিষাক্ত দৃষ্টি ছুঁড়ে দেয় যেন বলছে , খুব সখ না? দাড়াও দেখাচ্ছি ।
কিন্তু আয়শা তো ছাড়ার পাত্রী না  শেষ পর্যন্ত জান্নাতকেই  নতি স্বীকার করতে হয় , ঠিক আছেযাইকিন্তু সময় দিচ্ছি মাত্র পনেরো মিনিটতারপর আমি বের হবো আমার অনেক কাজ আছে 
রানী একরকম হাঁফ ছাড়ে জয় আবার হাসে বাকি সবার চোখ এড়িয়ে রানীর দিকে একবার তাকায় , চোখে নগ্ন ইংগিত । রানী লজ্জায় চোখ আড়াল করে ।
 
রানী আর জান্নাত ওদের ঘরের চৌকাঠ না পেরুতেই রানীর মোবাইল বেজে ওঠে টুং শব্দে । জয় টেক্সট করেছে , “ আমি এলে কি হতো ? তোকে ভালো করে গোসল করিয়ে দিতাম ( হাসির ইমোজি)”
 
রানী লিখে পাঠায় “ খুব বার বেড়েছে না , আগামী তিনদিন আমাকে কোন টেক্সট করবে না , আজকে বড্ড জালিয়েছো” পাঠানোর সময় রানীর ঠোঁটে একটা হাসি লেগে থাকে , যেন রানীও জানে ও আসলেই এমন চায় না ।
 
তবে জয় ওর কথা অমান্য করতে সময় নেয় মাত্র পনেরো সেকেন্ড , আবার টুং করে শব্দ হয় রানীর মোবাইলে , জয় লিখেছে…… “ তুই জানিস না , বাজার থেকে মৃত্যুদন্ড উঠে যাচ্ছে , আমাকে কেন মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছিস?”  
 
টেক্সট পড়ে রানীর মুখ ঝলমল করে ওঠে , ঠোঁট কামড়ে হাসে , মনে মনে ভাবে , আমার সোনারা বান্দর টা রে …… 

*****  

কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 6 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 21-11-2025, 08:55 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)