13-11-2025, 09:25 PM
ঘরে প্রবেশ করেই রিতমের মা বাবা ওকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। রিতম আসবে এটা তাঁরা ভাবতেই পারে নি। ওনারা প্রথমে মধুমিতার মতো জড়তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলো, তারপর সামলে নিয়ে খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠলেন।
কখন এলি, কবে রওনা দিলি, বলে এলি না কেন, প্লেনে খেয়েছিস কিনা, এখন কি খিদে পেয়েছে, শরীর কেমন– এমন নানান প্রশ্নে রিতমকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললো ওর মা।
এটা দেখে রিতমের বাবা রিতেশ বাবু মৃদু হেসে বলল, কমল, থামো। ছেলেটাকে বসতে দাও। অনেক জার্নি করে এসেছে। জিড়িয়ে নিতে দেও আগে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। ছেলেটা এসে অবধি দাঁড়িয়ে আছে। আয় বাবু, বোস। কমলিনী দেবি রিতমকে হাত ধরে সোফায় বসালো। খুশিতে বিহ্বল অবস্থা ওনার।
মধুমিতা নিঃশব্দে রান্না ঘরে চলে এলো। রিতমকে হঠাৎ দেখে বুকের ভেতর কেপে উঠেছিলো। তখন সবে দিহানের সাথে সময় কাটিয়ে বাড়িতে এসে স্নান করে বেড়িয়েছে। ঠিক সেই সময় রিতমকে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো। সাথে অভিমান আর কষ্টে বুক জ্বলে উঠেছিল। তখন ওর একটা কথাই মনে হচ্ছিলো, রিতম যদি জেনে ফেলে তখন কি করবে ও? সব শেষ হয়ে যাবে। এটা ভেবে ও ভয়ে নীল হয়ে উঠলো। দিহানের সাথে যৌনমিলনের সময় শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আঁচড়ের চিহ্ন পড়েছে। রিতম যদি রাতে ঘনিষ্ঠ হতে চায়, মধুমিতা তাহলে কি করবে, কিভাবে লুকাবে সেগুলো?
রিতমের কি দরকার ছিলো এমন করে আসার? বলে এলেই তো হতো। এলো তো এলো, মধুমিতাকে একেবারে ভয়াভিভুত করে। আগে জানলে কখনো ও দিহানের কাছে যেত না। শেষে রিতমের উপর বিরক্ত হলো।
মধুমিতা অনুভব করলো রিতম আসায় ও তেমন খুশি হতেও পারছে না। কেন পারছে না খুশি হতে? ভাবতে ভাবতে মধুমিতা অস্থির হয়ে উঠলো।
উত্তর আমিই পাঠকদের বলে দিই, তাহলো, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়, রিতম এতো দিন না আসায় অভিমান আর কষ্ট, তারপর পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ার অপরাধবোধ। রিতমকে দেখে এতো গুলো বিষয় একসাথে ওর মাথায় কাজ করছিলো। তাই হয়তো একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছিলো। কিন্তু নিজের এমন আচরণ মেনে নিতেও পারছিলো না মধুমিতা। ওর উচিত ছিলো রিতমকে জড়িয়ে ধরা। এতো দিন তো এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করেছে ও। তা সত্তেও রাগ আর অভিমান উথলে উঠেছিলো তখন।
মধুমিতর চারদিক থেকে বিপদ ঘনিয়ে আসছিলো। ও আর পারে না। আর কত মানসিক অশান্তি ভোগ করবে? কত যাতনা সহ্য করবে? রিতম কি কোনো দিন সুখ দেবে না ওকে?
নিজেকে স্বাভাবিক করে মধুমিতা ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জল বের করে রিতমের জন্য সরবত বানালো। ট্রেতে করে আপেল, কমলালেবু, জলভরা সন্দেশ, রসগোল্লা নিয়ে বসার ঘরে এলো।
কমলিনী দেবি ছেলের সাথে কথা বলছিলো, কত শুকিয়ে গেছিস বাবু। খাওয়া দাওয়ার কষ্ট করেছিস অনেক, নারে? তিনি প্রতিদিন রিতমকে এই প্রশ্ন করতেন, আজকেও করলো।
রিতম হেঁসে বললো, এটাকে শুকিয়ে যাওয়া বলে না, মা। বলো ফিট আছি। খাওয়া দাওয়া তত খারাপ লাগে না। শুধু বাঙালি খাবার গুলো মিস করেছি।
শুকিয়ে যাওয়া বলে না তো কি বলে? তাল পাতার সেপাই হয়ে গেছিস।
ঠিক বলেছেন মা। ট্রেটা সেন্টার টেবিলে রেখে হাসলো মধুমিতা। না, হাসির চেষ্টা করলো বললে ভুল হয় না। কেননা ওর মুখের দিকে তাকালে হাসিটাকে প্রাণবন্ত মনে হয় না। অন্তত রিতমের সেটাই মনে হলো। মধুমিতার মুখের দিকে খেয়াল করছিলো রিতম। কোনো যে একটা সমস্যা আছে, ঠিক ধরে ফেলেছে ও। কিন্তু সেই ভাবনা নিজের মধ্যেই গোপন রাখলো, প্রকাশ করলো না।
মধুমিতা বললো, একেবারে তালপাতার সেপাই। বছরের পর বছর বিদেশ পড়ে থাকবে, এমন হবে না তো কি হবে।
ট্রে ভর্তি খাবার দেখে রিতম বললো, ওরে বাপ, আমি শুধু শরবত খাবো। আগে স্নান করতে হবে। তারপর খাবো।
মধুমিতা শাশুড়ি কে উদ্দেশ্য করে বলল, ওকে বলে দিন মা, একটা খাবারোও যেন অবশিষ্ট না থাকে। নাহলে যেন আবার লন্ডনে ফিরে যায়।
কমলিনী দেবিও পুত্রবধূর সঙ্গে তাল মেলালো, হ্যাঁ বাবু, বৌমা ঠিক কথা বলেছে। সব কিছু খাবি।
রিতম হো হো করে হেসে উঠলো। আমি কি তোমাদের আত্মীয় নাকি? এত খাবার দেওয়ার দরকার কি?
তুমি তো আত্মীয়ই। আপনজনেরা চার-পাঁচ বছর পর বাড়ি ফেরো না। মধুমিতা শান্ত কন্ঠে বললো। রিতমের কাছে এই কথার কোন উত্তর নেই। তাই চুপ করে খেতে লাগল।
মধুমিতা শশুরের দিকে ফিরে বললো, বাবা বাজার থেকে ঘুরে আসুন না একবার। ফ্রিজে কাতলা আর পাবদা মাছ আছে। এখন গিয়ে দেখুন ইলিশ আর চিংড়ি পান কিনা আর মাটন নিয়ে আসুন এক কিলো।আরো কিছু মসলা লাগবে আমি সব লিস্ট করে দিচ্ছি।
হ্যা বৌমা দাও, আমি এখনই যাই।
এত কিছু দরকার নেই বাবা। রিতম বলল। তোমরা যা শুরু করেছো, আমার কেমন যেন লাগছে। একটু থেমে বললো, আজকে আমাকে রেস্ট নিতে দাও। আমি তো আর পালিয়ে যাবো না, থাকবো।
রিতম দেখলো মধুমিতা রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে অগ্নি বর্ষণ করছে, ও বলল, তুমি কোন কথা বলবে না, রিতম। তোমাকে যা করতে বলা হবে তাই করবে, যা খেতে বলা হবে তাই খাবে।
মধুমিতার আচরণ এখন স্বাভাবিক। এটা দেখে খানিকক্ষণ আগে রিতমের মনে তৈরি হওয়া চিন্তা খানিকটা কমলো। ও হেসে বলল, বা, আমি বুঝি তোমার আসামী?
দাগি আসামি।
আবার শব্দ করে হাসলো রিতম। জিজ্ঞেস করল, তা আমার দোষটা কি, ম্যাম?
এই বাড়িতে থাকা তিনটি লোককে মানসিক কষ্ট দিয়েছো তুমি। দিনের পর দিন, চার বছর ধরে। তাদের আপনজনকে তাদের থেকে দূরে রেখেছো।
কমলিনী দেবী খুশি মনে ছেলে আর পুত্রবধূর খুনসুটি দেখছিলেন। রিতেশ বাবু বললেন, এবার আসামিকে হাতের নাগালে পেয়েছো বৌমা, এবার ওকে পাকড়াও করে গারদে পুরো। তারপর তিনি হাসতে হাসতে দরজার পাশ থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলেন।
মধুমিতা রিতমের পাশে বসে থাকা কমলিনী দেবীকে বললো, মা, আপনাকে আজ রান্নায় হাত লাগাতে হবে। সবকিছু আমি একা সামলাতে পারবো না।
ঠিক আছে বৌমা।
এখনই চলুন।
দুটো মিনিট বসি না....।
কমলিনি দেবী কথা শেষ করার আগেই মধুমিতা বলল, না মা, সময় কম। বাবা আসতে আসতে কাটাকুটি করে রাখতে হবে। কাতলা মাছের তো আবার আঁশ ছাড়ানো নেই। বাবা আবার বাজার থেকে আরো মাছ আনবেন, সেগুলোও তো পরিষ্কার করতে হবে। অনেক কাজ মা, এখন না শুরু করলে দেরি হয়ে যাবে। লন্ডন থেকে কলকাতায় আসতে একদিনের মতো সময় লাগে। কালকে থেকে নিশ্চয়ই ও তেমন কিছু খায় নি। রান্না যত দ্রুত করব ও ততো দ্রুত খেতে পারবে। তার জন্য বলছি।
ঠিক বলেছো বৌমা। এটা আমি ভেবে দেখিনি। বলে উঠে পড়লেন তিনি। রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন, আমি ফ্রিজ থেকে মাছ বের করছি। তুমি পাঁচটা মিনিট বাবুর কাছে বস। নাহলে একা হয়ে যাবে।
কমলিনী দেবী চলে গেলে নিরবতা নেমে এলো ঘর জুড়ে। মধুমিতা কথা বলছিলো না, রিতমকে দেখছিলো ও। কালো কোট, সাদা শার্ট, কালো সুট আর ম্যাচিং করা বুট, চুলগুলো একদিকে পরিপাটি করে আচড়ানো, ক্লিন সেভড। মধুমিতা বিয়ের আগে থেকেই রিতমের মুখটা দেখছে। কোন কিছুতেই যেন মলিন হয় না ওই সজিব মুখ। রিতম যেন ঠিক সেই চার বছর আগের রিতমই আছে। একফোটাও পাল্টায়নি। উল্টো ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে ওর মুখের জন্য ঔজ্জ্বল্য আরো বেড়েছে। মধুমিতার চোখে রিতমকে খুব সুদর্শন দেখাচ্ছিল। কেউ বলবে না ওর বয়স ত্রিশ। পঁচিশ বছরের যুবকের মত টগবগ করছিল ওর রূপ।
রিতমের খাওয়া শেষ হয়ে গেছিলো তখন। ইতস্তত করছিল, কি করবে হয়তো ঠিক করতে পারছিলো না। মধুমিতা খেয়াল করলো সেটা, এরজন্য যে একটু আগের ঘটনাটাই দায়ী তাও বুঝলো। ঘরের আবহ স্বাভাবিক করতে মধুমিতাই উদ্যোগি হলো। প্লেট গুলো ট্রেতে উঠিয়ে রাখতে রাখতে কোমল কন্ঠে বলল, স্নান করবে তো?
হ্যাঁ, সেই কালকে সকালে স্নান করে বেরিয়েছি। ধুলাবালিতে খিটখিটে লাগছে এখন। স্নান না করলে শান্তি পাব না।
তাহলে আসো, সব কিছু রেডি করে দিই।
বড় বড় তিনটে লাগেজের সাথে রিতম একটা ছোট ব্যাগও এনেছে। ওটায়য় ওর সব জামাকাপড় আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে।
রিতম সেই ব্যাগটা তুলে নিয়ে মধুমিতার পেছন পেছন নিজেদের ঘরে এলো। এই ঘরটায় রিতম অনেকদিন পরে এলো। সবকিছু গোছানো আর পরিপাটি। ওর মনে হল এর থেকে বুঝি শান্ত আর আরামপ্রদায়ী জায়গা আর কোথাও নেই। ও সুন্দর চাদর বিছানো পরিষ্কার বিছানাটা ওকে খুব টান ছিল। এখনই শুয়ে পড়তে মন চাইছিল। দুদিন জার্নি করার ক্লান্তি যেন এখনই পেয়ে বসলো রিতমকে। ঘুম এসে ভর করলো চোখের পাতায়।
মধুমিতা তোয়ালে এনে দিয়ে বলল, শ্যাম্পু-সাবান সব ওয়াশরুমে আছে। আর জামা প্যান্ট ব্যাগের থেকে বের করে বিছানা রাখছি। তুমি স্নান সেরে নাও।
ঘরে প্রবেশ করার পর থেকেই রিতম মধুমিতার দিকে দেখছিল। মধুমিতার পরা ফিনফিনে নাইটি ওর স্ফিত আর নিটোল শরীরের প্রলোভন লুকিয়ে রাখতে পারছিলো না, পূর্ণ যৌবনা নদীর মতো টলমল করছিল। চার বছর আগের সেই সরু কোমর এখন আরও গভীর বাঁক নিয়েছে, কাঁধের রেখা থেকে কোমরের খাঁজ, তারপর নিতম্বের ঢেউ, সবকিছু মিলিয়ে ও যেন একটা নিখুঁত ভাস্কর্য, শিখরে থাকা যৌবন যাকে আরও মসৃণ, আরও আবেদনময় করে তুলেছে। মধুমিতার শরীর এখন আগের থেকেও পূর্ণ আগের থেকেও আকর্ষণীয়। রূপ যেন ঠিকরে পড়ছে। মধুমিতার মুখের কমনীয়তা অবলোকন করে রিতমের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে যাচ্ছিল। চাঞ্চল্য জাগছিলো মনের ভেতর।
সহসা রিতম এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো। মধুমিতা ভাবতেও পারিনি রিতম এখন এমন কাজ করবে। রিতম দুবাহু দিয়ে মধুমিতার কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে হাওয়ায় তুলে নিলো। হঠাৎ এমন করায় মধুমিতা ভয় পেয়ে গেল, খামচে ধরলো রিতমের চুল, ধরফরিয়ে ওঠে বললো, রিতম কি করছো..... ছাড়ো.... পড়ে যাব...।
রিতম মধুমিতাকে গোল গোল গোরাতে লাগলো। না, নামাবো না। তুমি আমার উপর রাগ করেছো কেন সেটা আগে বল।
আমি রাগ করিনি। আমাকে নামিয়ে দাও।
তাহলে তখন কাঁদলে কেন?
জানিনা, আমার কষ্ট হয়েছিল খুব। হয়তো তাই....।
সত্যি?
হ্যাঁ। নামাও।
কেন কষ্ট হচ্ছিলো?
জানি না, তোমাকে দেখেই কষ্ট হলো।
রিতম মধুমিতাকে নামিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো, বলল, স্যরি মিতা, ফর অল দেজ ইয়ারস। আই ওউন্ট ডু এনিথিং লাইক দ্যাট এগেইন। আই ওউন্ট হার্ট ইয়ু। প্রমিজ।
মধুমিতাও এবার দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো রিতমকে। খুব ভালো লাগছিল ওর। এক মুহূর্তের জন্য সব দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ভুলে গেলো, রিতমের বুকে মাথা রেখে বলল, আমাকে বললে না কেন তুমি আসবে? আমি তো ভেবেছিলাম এবারও বুঝি আসবে না। আমার কত কষ্ট হয়েছে তুমি জানো? কেন আমাকে কষ্ট দিলে, কেন জানালে না? তাহলে এতো কষ্ট পেতাম না।
মধুমিতার সুন্দর সুকুমার মুখটা নিজের দু হাতের মধ্যে নিয়ে রিতম বলল, ভুল হয়ে গেছে আমার। ভেবেছিলাম এরকম সারপ্রাইজ দিলে তুমি খুশি হবে। তাই এমন করেছি, ইচ্ছে করে কষ্ট দিই নি।
বুঝেছি। যেদিন তুমি বললে পূজোর কেনাকাটা করে পাঠিয়ে দেবে, আমি তখনই ভেবেছিলাম তুমি এবার আসবে না। তখন আমি বিট্রেড ফিল করেছি। কিন্তু উইন্টারের সময় বলেছিলে পুজোর সময় আসবে। আমি আশা করে ছিলাম। একটু থেমে আবার বললো,
তোমার উপর এমন রাগ হয়েছিল, কাছে পেলে তোমার মাথাই ফাটিয়ে ফেলতাম।
রিতম মধুমিতার গালে চুমু দিয়ে বলল, আর করবো না, সোনা। তোমার কষ্টের কথা শুনে এখন আমারই খারাপ লাগছে।
একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দুজন। প্রিয় বউকে জড়িয়ে ধরতে পেরে রিতমের ভালো লাগছিল। সব দ্বিধা সব ধোঁয়াশা কেটে গিয়ে শান্ত হয়ে গেলাম ওর মন, বুকের ভেতর এখন একরাশ প্রশান্তি।
মধুমিতা একটু পর ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। মৃদু হেসে বললো, সন্ধ্যা হয়ে আসছে, যাও, স্নান করে এসো। না হলে দেরি হয়ে যাবে।
রিতমও মাথা কাত করে হাসলো। তারপর চলে গেল বাথরুমে।
স্নান করে বেশ ফুরফুরে লাগছিলো রিতমের। এখন হালকা লাগছে নিজেকে। ও বাড়িতে ঢুকেছিলো একরাশ আনন্দ নিয়ে। মধুমিতার প্রথমদিকের ব্যবহার ওর সব আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছিলো। কিন্তু এরপর মধুমিতা যখন নিজেই সব কিছু ঠিক করে নিলো, তখন রিতমের মনে হলো অভিমান বসতই ও এমনটা করেছিলো।
কালো ট্রাউজার আর একটা অপেক্ষাকৃত ঢিলেঢালা সাদা ড্রপশোল্ডাল টিশার্ট পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। এরপর বিছানায় গড়িয়ে নিলো এখানিকটা।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তখন। নীলচে বেগুনি রঙে ছেয়ে গেছে অখিল আকাশ। গোধূলির পান্ডুর আলোকে গ্রাস করে নিচ্ছিলো অন্ধকার বিভাবরী। রাস্তায় পথচারীদের কথা বলার ক্ষীণ শব্দ, রিক্সার বেলের টিং টিং মৃদু ঘন্টার আওয়াজ। গঙ্গার দিক থেকে ভেসে আসছিল শীতল বাতাস, সেই বাতাসে ধূপের গন্ধ। কোন বাড়িতে যেন সন্ধ্যাকালীন পুজো চলছে, সেখান থেকে শাখের শব্দ এসে পৌছোচ্ছিলো রিতমের ঘরে। সেই শাখের অভ্য ধ্বনি শুনে মনে হচ্ছিল, এই শব্দ যেন এই জগতের নয়, সুদূর কোনো পরপারের থেকে ভেসে আসা। রিতম সেদেশকে চেনে না। মন কেমন করে ওঠে এই শব্দ শুনে।
ওর কেন যে এমন হয় মাঝে মাঝে, বোঝে না। এই অনুভূতি আজকের নয়, অনেক দিনের, সেই ছোটবেলার, যখন ও আকাশের দিকে তাকাতো বা বাগবাজারের গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসে থাকতো তখনও এমন হতো। ইংল্যান্ডে কাটানো গেরুয়া সন্ধ্যা গুলোতে বা শীতের সময় তুষারপাত দেখতে দেখতে হুহু করে উঠতো ওর মন। অজানা কোন কারণে মন খারাপ হয়ে যেত।
এর পর পরই ও শুনতে পেত কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে, ওকে ডাকছে। অনেকদিন রিতম সেটা বুঝতে পারেনি।
সেইসময় রিতম হয়তো কিশোর। মাধ্যমিক দেয়নি সেবার তখনও। ও সেবার শীতে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিল বাবা-মা আর ছোট্ট মেহুলের সাথে। একদিন বিকেলে হোটেলের বাইরে রিতম একা একাই হাঁটছিল। মিষ্টি একটা রোদ ছড়িয়ে ছিল রাস্তা জুড়ে। রাস্তার বিপরীত পাশে পাথুরে খাদ এরপর পাইন গাছের বন। সেই বনের পর উন্নত শির হিমালয়ের বিস্তৃত পর্বতমালা, মাথা উঁচু করে একেকটা পর্বত দাঁড়িয়ে আছে। রিতম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল সেই পাহাড়ের দিকে। বিকেলের রোদে তুষারাবৃত পাহাড় গুলো হাঁসের মতো শুভ্র দেখাচ্ছিলো।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরবে এমন সময় সেই ফিসফিস শব্দগুলো শুনতে পেয়েছিলো রিতম। কেউ বা কারা যেন সমস্বরে একসাথে বলছে।
রিতম..... রিতম.....।
যেওনা.....।
আমাদের কাছে থাকো।
আমাদের আপনজন খুব কম।
আমরা তোমায় ভালোবাসি। যেওনা....।
একটানা কথাগুলো বলছিল না। বাক্যগুলো থেমে থেমে আসছিল।
রিতম প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলো, কারণ এত স্পষ্ট কথা বলে ও এর আগে শুনেনি। তারপর যখন বুঝলো ওর প্রিয় পাহারেরা কথা বলছে আর ওর প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করছে তখন রিতম খুব খুশি হয়েছিল।
মাধ্যমিকের পর রিতমরা গোয়ায় বেড়াতে গিয়েছিল সমুদ্র দেখতে। সেখানেও রিতম এই ফিস ফিস করে বলা কথাগুলো শুনতে পেয়েছিলো যখন সাগর পাড়ে হাঁটছিল সন্ধ্যার দিকে। অনন্ত জলধী ডাকছিলো ওকে। রিতমকে এক দন্ড বসতে বলেছিলো তার কাছে। প্রকৃতি পুত্রদের ডাক রিতম কখনো ফেলতে পারে না।
এই সুন্দর শান্ত সন্ধ্যায়, এই নির্জন ঘরে বসে রিতম আজ আবার সেই ফিসফিস শব্দ শুনতে পেল। কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দক্ষিণবাহিনী গঙ্গা আজ রিতমকে ডাকছিল। ধান্দা বাতাসে যেন তারই স্নেহস্পর্শ, কন্ঠে অপার করুণা।
রিতম....।
এসেছো.....?
এতো দিন দূরে থাকতে হয়?
আমাদের কথা মনে পড়েনি তোমার?
তুমি ছাড়া আমাদের কেউ ভালোবাসে না, তুমি জানো না?
এসো.... আমার কাছে এসো....।
রিতম বিছানা থেকে উঠে পড়লো, এই আহ্বান ও অস্বীকার করতে পারে না। ঠিক করলো এই ভর সন্ধ্যায় আর ঘুমোবে না। একবার গঙ্গার ঘাট থেকে ঘুরে আসবে বরং।
মা আর বউ রান্না ঘরে কাজ করছিলো, বাবা এখনো ফেরেনি। এই সুযোগে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো নিঃশব্দে। ওদের বললে ওরা এখন বেড়োতে দেবে না নির্ঘাত।
রিতম আহিরিটোলা ঘাটে এসে বসলো। চ্ছলাৎ চ্ছলাৎ শব্দে বয়ে চলেছে চঞ্চল স্রোতধারা। ছোট ছোট তরঙ্গ ভঙ্গ এসে আঁছড়ে পরছিলো ঘাটের পাকা সোপানে। মাথার উপর একাদশীর চাঁদ, চাঁদের আলো আর বৈদ্যুতিক বাতির আলো নদীর জলে পড়ে ঝলমল করছিলো জল গুলি।
রিতম অনেকক্ষণ এমনিই চুপচাপ বসে থাকলো। ওর পাশে আরো কতো মানুষ, কিন্তু রিতম সব কিছু ভুলে গেলো।
তারপর নদীর পাড় ঘেঁষে বানানো চওড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করলো কিছু সময়। বাড়ি ফিরলো আটটার দিকে।
মা বাবা বসার ঘরে বসে আছে। মধুমিতা রান্না ঘরে। রিতমকে দেখতে পেয়ে তারা নানান প্রশ্ন শুরু করে দিলো। তাদের প্রশ্ন বান এড়িয়ে রিতম রান্নাঘরে চলে এলো।
মধুমিতা উল্টো দিকে ঘুরে রান্না করছিল। তেলে পাবদা মাছ ভাজার একটানা স্রেৎ স্রেৎ শব্দ হচ্ছিলো, বাতাসে গন্ধ। রিতম কোন শব্দ না করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল মধুমিতার দিকে। হালকা করে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে।
মধুমিতা বলল, কি করছো রিতম? বাবা আছেন বসার ঘরে। ছাড়ো আমায়।
মা বাবা দেখবে না। রিতম মধুমিতার কাঁধে থুতুনি রেখে বললো।
কোথায় গিয়েছিলে এতক্ষন?
ঘুরে এলাম নিচের থেকে।
কি দরকার? রেস্ট কর গিয়ে।
না, রেস্ট করতে ভালো লাগছে না।
তাহলে মা-বাবার কাছে গিয়ে বসো।
না। এখানে থাকবো তোমার কাছে। মধুমিতার গালে চুমু দিয়ে বলল রিতম।
মধুমিতা বললো, আমি রান্না করছি, রিতম। দেখতেই তো পাচ্ছো। আমাকে বিরক্ত করো না। ওর কন্ঠে বিতৃষ্ণা। রিতমের মনে হলো ওর সঙ্গ হয়তো মধুমিতা পছন্দ করছিলো না।
থাকি না....। রিতম বায়না করার সুরে বললো।
না করছি তো.... তুমি যাও। শান্ত কন্ঠে বলেছিলো মধুমিতা। কিন্তু এতো দৃঢ় রিতম আর কোনো কথা খুঁজে পেলো না। তুমি থাকলে আমার রান্না করতে সময় দেরি হবে। তোমার নিশ্চয়ই খিদে পেয়ে গেছে।
কথা গুলো রিতমের কাছে স্রেফ অজুহাত মনে হচ্ছিলো।
রিতম প্রথমে যেতে চাইছিল না। মধুমিতা আবার বলল, কি হল দাঁড়িয়ে রইলে যে, যাও।
রিতম ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে। বাসর ঘরে এসে মা-বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো।
এদিকে রিতম বেরিয়ে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মধুমিতা। রিতমের মুখোমুখি হতে সংকোচ হচ্ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিল পরপুরুষের স্পর্শ রয়েছে ওর শরীরে। এগুলো নিয়ে স্বামীর সামনে দাঁড়ানোটা অপমানের।
তাই রিতম যখনি ওকে স্পর্শ করছিল মধুমিতা
শিটিয়ে থাকছিল। কেন জানিনা ঘৃণা হচ্ছিল নিজের উপর। হয়তোবা দুজন পুরুষের ছোঁয়া ওর শরীরে একসাথে একদিনে পড়বে এটা মেনে নিতে পারছিল না। মধুমিতা ঠিক করেছে যে করেই হোক রিতমকে কাছে ঘেষতে দেবে না আজ।
*****
বড়ো আপডেট দেবো মনে করেছিলাম, কিন্তু সেটা করতে পারলাম না।
কিন্তু সমস্যা নেই, লেখা আছে, বাকিটা কালকে রাতে আপলোড করে দেবো।
কখন এলি, কবে রওনা দিলি, বলে এলি না কেন, প্লেনে খেয়েছিস কিনা, এখন কি খিদে পেয়েছে, শরীর কেমন– এমন নানান প্রশ্নে রিতমকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললো ওর মা।
এটা দেখে রিতমের বাবা রিতেশ বাবু মৃদু হেসে বলল, কমল, থামো। ছেলেটাকে বসতে দাও। অনেক জার্নি করে এসেছে। জিড়িয়ে নিতে দেও আগে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। ছেলেটা এসে অবধি দাঁড়িয়ে আছে। আয় বাবু, বোস। কমলিনী দেবি রিতমকে হাত ধরে সোফায় বসালো। খুশিতে বিহ্বল অবস্থা ওনার।
মধুমিতা নিঃশব্দে রান্না ঘরে চলে এলো। রিতমকে হঠাৎ দেখে বুকের ভেতর কেপে উঠেছিলো। তখন সবে দিহানের সাথে সময় কাটিয়ে বাড়িতে এসে স্নান করে বেড়িয়েছে। ঠিক সেই সময় রিতমকে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো। সাথে অভিমান আর কষ্টে বুক জ্বলে উঠেছিল। তখন ওর একটা কথাই মনে হচ্ছিলো, রিতম যদি জেনে ফেলে তখন কি করবে ও? সব শেষ হয়ে যাবে। এটা ভেবে ও ভয়ে নীল হয়ে উঠলো। দিহানের সাথে যৌনমিলনের সময় শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আঁচড়ের চিহ্ন পড়েছে। রিতম যদি রাতে ঘনিষ্ঠ হতে চায়, মধুমিতা তাহলে কি করবে, কিভাবে লুকাবে সেগুলো?
রিতমের কি দরকার ছিলো এমন করে আসার? বলে এলেই তো হতো। এলো তো এলো, মধুমিতাকে একেবারে ভয়াভিভুত করে। আগে জানলে কখনো ও দিহানের কাছে যেত না। শেষে রিতমের উপর বিরক্ত হলো।
মধুমিতা অনুভব করলো রিতম আসায় ও তেমন খুশি হতেও পারছে না। কেন পারছে না খুশি হতে? ভাবতে ভাবতে মধুমিতা অস্থির হয়ে উঠলো।
উত্তর আমিই পাঠকদের বলে দিই, তাহলো, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়, রিতম এতো দিন না আসায় অভিমান আর কষ্ট, তারপর পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ার অপরাধবোধ। রিতমকে দেখে এতো গুলো বিষয় একসাথে ওর মাথায় কাজ করছিলো। তাই হয়তো একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছিলো। কিন্তু নিজের এমন আচরণ মেনে নিতেও পারছিলো না মধুমিতা। ওর উচিত ছিলো রিতমকে জড়িয়ে ধরা। এতো দিন তো এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করেছে ও। তা সত্তেও রাগ আর অভিমান উথলে উঠেছিলো তখন।
মধুমিতর চারদিক থেকে বিপদ ঘনিয়ে আসছিলো। ও আর পারে না। আর কত মানসিক অশান্তি ভোগ করবে? কত যাতনা সহ্য করবে? রিতম কি কোনো দিন সুখ দেবে না ওকে?
নিজেকে স্বাভাবিক করে মধুমিতা ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জল বের করে রিতমের জন্য সরবত বানালো। ট্রেতে করে আপেল, কমলালেবু, জলভরা সন্দেশ, রসগোল্লা নিয়ে বসার ঘরে এলো।
কমলিনী দেবি ছেলের সাথে কথা বলছিলো, কত শুকিয়ে গেছিস বাবু। খাওয়া দাওয়ার কষ্ট করেছিস অনেক, নারে? তিনি প্রতিদিন রিতমকে এই প্রশ্ন করতেন, আজকেও করলো।
রিতম হেঁসে বললো, এটাকে শুকিয়ে যাওয়া বলে না, মা। বলো ফিট আছি। খাওয়া দাওয়া তত খারাপ লাগে না। শুধু বাঙালি খাবার গুলো মিস করেছি।
শুকিয়ে যাওয়া বলে না তো কি বলে? তাল পাতার সেপাই হয়ে গেছিস।
ঠিক বলেছেন মা। ট্রেটা সেন্টার টেবিলে রেখে হাসলো মধুমিতা। না, হাসির চেষ্টা করলো বললে ভুল হয় না। কেননা ওর মুখের দিকে তাকালে হাসিটাকে প্রাণবন্ত মনে হয় না। অন্তত রিতমের সেটাই মনে হলো। মধুমিতার মুখের দিকে খেয়াল করছিলো রিতম। কোনো যে একটা সমস্যা আছে, ঠিক ধরে ফেলেছে ও। কিন্তু সেই ভাবনা নিজের মধ্যেই গোপন রাখলো, প্রকাশ করলো না।
মধুমিতা বললো, একেবারে তালপাতার সেপাই। বছরের পর বছর বিদেশ পড়ে থাকবে, এমন হবে না তো কি হবে।
ট্রে ভর্তি খাবার দেখে রিতম বললো, ওরে বাপ, আমি শুধু শরবত খাবো। আগে স্নান করতে হবে। তারপর খাবো।
মধুমিতা শাশুড়ি কে উদ্দেশ্য করে বলল, ওকে বলে দিন মা, একটা খাবারোও যেন অবশিষ্ট না থাকে। নাহলে যেন আবার লন্ডনে ফিরে যায়।
কমলিনী দেবিও পুত্রবধূর সঙ্গে তাল মেলালো, হ্যাঁ বাবু, বৌমা ঠিক কথা বলেছে। সব কিছু খাবি।
রিতম হো হো করে হেসে উঠলো। আমি কি তোমাদের আত্মীয় নাকি? এত খাবার দেওয়ার দরকার কি?
তুমি তো আত্মীয়ই। আপনজনেরা চার-পাঁচ বছর পর বাড়ি ফেরো না। মধুমিতা শান্ত কন্ঠে বললো। রিতমের কাছে এই কথার কোন উত্তর নেই। তাই চুপ করে খেতে লাগল।
মধুমিতা শশুরের দিকে ফিরে বললো, বাবা বাজার থেকে ঘুরে আসুন না একবার। ফ্রিজে কাতলা আর পাবদা মাছ আছে। এখন গিয়ে দেখুন ইলিশ আর চিংড়ি পান কিনা আর মাটন নিয়ে আসুন এক কিলো।আরো কিছু মসলা লাগবে আমি সব লিস্ট করে দিচ্ছি।
হ্যা বৌমা দাও, আমি এখনই যাই।
এত কিছু দরকার নেই বাবা। রিতম বলল। তোমরা যা শুরু করেছো, আমার কেমন যেন লাগছে। একটু থেমে বললো, আজকে আমাকে রেস্ট নিতে দাও। আমি তো আর পালিয়ে যাবো না, থাকবো।
রিতম দেখলো মধুমিতা রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে অগ্নি বর্ষণ করছে, ও বলল, তুমি কোন কথা বলবে না, রিতম। তোমাকে যা করতে বলা হবে তাই করবে, যা খেতে বলা হবে তাই খাবে।
মধুমিতার আচরণ এখন স্বাভাবিক। এটা দেখে খানিকক্ষণ আগে রিতমের মনে তৈরি হওয়া চিন্তা খানিকটা কমলো। ও হেসে বলল, বা, আমি বুঝি তোমার আসামী?
দাগি আসামি।
আবার শব্দ করে হাসলো রিতম। জিজ্ঞেস করল, তা আমার দোষটা কি, ম্যাম?
এই বাড়িতে থাকা তিনটি লোককে মানসিক কষ্ট দিয়েছো তুমি। দিনের পর দিন, চার বছর ধরে। তাদের আপনজনকে তাদের থেকে দূরে রেখেছো।
কমলিনী দেবী খুশি মনে ছেলে আর পুত্রবধূর খুনসুটি দেখছিলেন। রিতেশ বাবু বললেন, এবার আসামিকে হাতের নাগালে পেয়েছো বৌমা, এবার ওকে পাকড়াও করে গারদে পুরো। তারপর তিনি হাসতে হাসতে দরজার পাশ থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলেন।
মধুমিতা রিতমের পাশে বসে থাকা কমলিনী দেবীকে বললো, মা, আপনাকে আজ রান্নায় হাত লাগাতে হবে। সবকিছু আমি একা সামলাতে পারবো না।
ঠিক আছে বৌমা।
এখনই চলুন।
দুটো মিনিট বসি না....।
কমলিনি দেবী কথা শেষ করার আগেই মধুমিতা বলল, না মা, সময় কম। বাবা আসতে আসতে কাটাকুটি করে রাখতে হবে। কাতলা মাছের তো আবার আঁশ ছাড়ানো নেই। বাবা আবার বাজার থেকে আরো মাছ আনবেন, সেগুলোও তো পরিষ্কার করতে হবে। অনেক কাজ মা, এখন না শুরু করলে দেরি হয়ে যাবে। লন্ডন থেকে কলকাতায় আসতে একদিনের মতো সময় লাগে। কালকে থেকে নিশ্চয়ই ও তেমন কিছু খায় নি। রান্না যত দ্রুত করব ও ততো দ্রুত খেতে পারবে। তার জন্য বলছি।
ঠিক বলেছো বৌমা। এটা আমি ভেবে দেখিনি। বলে উঠে পড়লেন তিনি। রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন, আমি ফ্রিজ থেকে মাছ বের করছি। তুমি পাঁচটা মিনিট বাবুর কাছে বস। নাহলে একা হয়ে যাবে।
কমলিনী দেবী চলে গেলে নিরবতা নেমে এলো ঘর জুড়ে। মধুমিতা কথা বলছিলো না, রিতমকে দেখছিলো ও। কালো কোট, সাদা শার্ট, কালো সুট আর ম্যাচিং করা বুট, চুলগুলো একদিকে পরিপাটি করে আচড়ানো, ক্লিন সেভড। মধুমিতা বিয়ের আগে থেকেই রিতমের মুখটা দেখছে। কোন কিছুতেই যেন মলিন হয় না ওই সজিব মুখ। রিতম যেন ঠিক সেই চার বছর আগের রিতমই আছে। একফোটাও পাল্টায়নি। উল্টো ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে ওর মুখের জন্য ঔজ্জ্বল্য আরো বেড়েছে। মধুমিতার চোখে রিতমকে খুব সুদর্শন দেখাচ্ছিল। কেউ বলবে না ওর বয়স ত্রিশ। পঁচিশ বছরের যুবকের মত টগবগ করছিল ওর রূপ।
রিতমের খাওয়া শেষ হয়ে গেছিলো তখন। ইতস্তত করছিল, কি করবে হয়তো ঠিক করতে পারছিলো না। মধুমিতা খেয়াল করলো সেটা, এরজন্য যে একটু আগের ঘটনাটাই দায়ী তাও বুঝলো। ঘরের আবহ স্বাভাবিক করতে মধুমিতাই উদ্যোগি হলো। প্লেট গুলো ট্রেতে উঠিয়ে রাখতে রাখতে কোমল কন্ঠে বলল, স্নান করবে তো?
হ্যাঁ, সেই কালকে সকালে স্নান করে বেরিয়েছি। ধুলাবালিতে খিটখিটে লাগছে এখন। স্নান না করলে শান্তি পাব না।
তাহলে আসো, সব কিছু রেডি করে দিই।
বড় বড় তিনটে লাগেজের সাথে রিতম একটা ছোট ব্যাগও এনেছে। ওটায়য় ওর সব জামাকাপড় আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে।
রিতম সেই ব্যাগটা তুলে নিয়ে মধুমিতার পেছন পেছন নিজেদের ঘরে এলো। এই ঘরটায় রিতম অনেকদিন পরে এলো। সবকিছু গোছানো আর পরিপাটি। ওর মনে হল এর থেকে বুঝি শান্ত আর আরামপ্রদায়ী জায়গা আর কোথাও নেই। ও সুন্দর চাদর বিছানো পরিষ্কার বিছানাটা ওকে খুব টান ছিল। এখনই শুয়ে পড়তে মন চাইছিল। দুদিন জার্নি করার ক্লান্তি যেন এখনই পেয়ে বসলো রিতমকে। ঘুম এসে ভর করলো চোখের পাতায়।
মধুমিতা তোয়ালে এনে দিয়ে বলল, শ্যাম্পু-সাবান সব ওয়াশরুমে আছে। আর জামা প্যান্ট ব্যাগের থেকে বের করে বিছানা রাখছি। তুমি স্নান সেরে নাও।
ঘরে প্রবেশ করার পর থেকেই রিতম মধুমিতার দিকে দেখছিল। মধুমিতার পরা ফিনফিনে নাইটি ওর স্ফিত আর নিটোল শরীরের প্রলোভন লুকিয়ে রাখতে পারছিলো না, পূর্ণ যৌবনা নদীর মতো টলমল করছিল। চার বছর আগের সেই সরু কোমর এখন আরও গভীর বাঁক নিয়েছে, কাঁধের রেখা থেকে কোমরের খাঁজ, তারপর নিতম্বের ঢেউ, সবকিছু মিলিয়ে ও যেন একটা নিখুঁত ভাস্কর্য, শিখরে থাকা যৌবন যাকে আরও মসৃণ, আরও আবেদনময় করে তুলেছে। মধুমিতার শরীর এখন আগের থেকেও পূর্ণ আগের থেকেও আকর্ষণীয়। রূপ যেন ঠিকরে পড়ছে। মধুমিতার মুখের কমনীয়তা অবলোকন করে রিতমের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে যাচ্ছিল। চাঞ্চল্য জাগছিলো মনের ভেতর।
সহসা রিতম এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো। মধুমিতা ভাবতেও পারিনি রিতম এখন এমন কাজ করবে। রিতম দুবাহু দিয়ে মধুমিতার কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে হাওয়ায় তুলে নিলো। হঠাৎ এমন করায় মধুমিতা ভয় পেয়ে গেল, খামচে ধরলো রিতমের চুল, ধরফরিয়ে ওঠে বললো, রিতম কি করছো..... ছাড়ো.... পড়ে যাব...।
রিতম মধুমিতাকে গোল গোল গোরাতে লাগলো। না, নামাবো না। তুমি আমার উপর রাগ করেছো কেন সেটা আগে বল।
আমি রাগ করিনি। আমাকে নামিয়ে দাও।
তাহলে তখন কাঁদলে কেন?
জানিনা, আমার কষ্ট হয়েছিল খুব। হয়তো তাই....।
সত্যি?
হ্যাঁ। নামাও।
কেন কষ্ট হচ্ছিলো?
জানি না, তোমাকে দেখেই কষ্ট হলো।
রিতম মধুমিতাকে নামিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো, বলল, স্যরি মিতা, ফর অল দেজ ইয়ারস। আই ওউন্ট ডু এনিথিং লাইক দ্যাট এগেইন। আই ওউন্ট হার্ট ইয়ু। প্রমিজ।
মধুমিতাও এবার দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো রিতমকে। খুব ভালো লাগছিল ওর। এক মুহূর্তের জন্য সব দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ভুলে গেলো, রিতমের বুকে মাথা রেখে বলল, আমাকে বললে না কেন তুমি আসবে? আমি তো ভেবেছিলাম এবারও বুঝি আসবে না। আমার কত কষ্ট হয়েছে তুমি জানো? কেন আমাকে কষ্ট দিলে, কেন জানালে না? তাহলে এতো কষ্ট পেতাম না।
মধুমিতার সুন্দর সুকুমার মুখটা নিজের দু হাতের মধ্যে নিয়ে রিতম বলল, ভুল হয়ে গেছে আমার। ভেবেছিলাম এরকম সারপ্রাইজ দিলে তুমি খুশি হবে। তাই এমন করেছি, ইচ্ছে করে কষ্ট দিই নি।
বুঝেছি। যেদিন তুমি বললে পূজোর কেনাকাটা করে পাঠিয়ে দেবে, আমি তখনই ভেবেছিলাম তুমি এবার আসবে না। তখন আমি বিট্রেড ফিল করেছি। কিন্তু উইন্টারের সময় বলেছিলে পুজোর সময় আসবে। আমি আশা করে ছিলাম। একটু থেমে আবার বললো,
তোমার উপর এমন রাগ হয়েছিল, কাছে পেলে তোমার মাথাই ফাটিয়ে ফেলতাম।
রিতম মধুমিতার গালে চুমু দিয়ে বলল, আর করবো না, সোনা। তোমার কষ্টের কথা শুনে এখন আমারই খারাপ লাগছে।
একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দুজন। প্রিয় বউকে জড়িয়ে ধরতে পেরে রিতমের ভালো লাগছিল। সব দ্বিধা সব ধোঁয়াশা কেটে গিয়ে শান্ত হয়ে গেলাম ওর মন, বুকের ভেতর এখন একরাশ প্রশান্তি।
মধুমিতা একটু পর ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। মৃদু হেসে বললো, সন্ধ্যা হয়ে আসছে, যাও, স্নান করে এসো। না হলে দেরি হয়ে যাবে।
রিতমও মাথা কাত করে হাসলো। তারপর চলে গেল বাথরুমে।
স্নান করে বেশ ফুরফুরে লাগছিলো রিতমের। এখন হালকা লাগছে নিজেকে। ও বাড়িতে ঢুকেছিলো একরাশ আনন্দ নিয়ে। মধুমিতার প্রথমদিকের ব্যবহার ওর সব আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছিলো। কিন্তু এরপর মধুমিতা যখন নিজেই সব কিছু ঠিক করে নিলো, তখন রিতমের মনে হলো অভিমান বসতই ও এমনটা করেছিলো।
কালো ট্রাউজার আর একটা অপেক্ষাকৃত ঢিলেঢালা সাদা ড্রপশোল্ডাল টিশার্ট পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। এরপর বিছানায় গড়িয়ে নিলো এখানিকটা।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তখন। নীলচে বেগুনি রঙে ছেয়ে গেছে অখিল আকাশ। গোধূলির পান্ডুর আলোকে গ্রাস করে নিচ্ছিলো অন্ধকার বিভাবরী। রাস্তায় পথচারীদের কথা বলার ক্ষীণ শব্দ, রিক্সার বেলের টিং টিং মৃদু ঘন্টার আওয়াজ। গঙ্গার দিক থেকে ভেসে আসছিল শীতল বাতাস, সেই বাতাসে ধূপের গন্ধ। কোন বাড়িতে যেন সন্ধ্যাকালীন পুজো চলছে, সেখান থেকে শাখের শব্দ এসে পৌছোচ্ছিলো রিতমের ঘরে। সেই শাখের অভ্য ধ্বনি শুনে মনে হচ্ছিল, এই শব্দ যেন এই জগতের নয়, সুদূর কোনো পরপারের থেকে ভেসে আসা। রিতম সেদেশকে চেনে না। মন কেমন করে ওঠে এই শব্দ শুনে।
ওর কেন যে এমন হয় মাঝে মাঝে, বোঝে না। এই অনুভূতি আজকের নয়, অনেক দিনের, সেই ছোটবেলার, যখন ও আকাশের দিকে তাকাতো বা বাগবাজারের গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসে থাকতো তখনও এমন হতো। ইংল্যান্ডে কাটানো গেরুয়া সন্ধ্যা গুলোতে বা শীতের সময় তুষারপাত দেখতে দেখতে হুহু করে উঠতো ওর মন। অজানা কোন কারণে মন খারাপ হয়ে যেত।
এর পর পরই ও শুনতে পেত কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে, ওকে ডাকছে। অনেকদিন রিতম সেটা বুঝতে পারেনি।
সেইসময় রিতম হয়তো কিশোর। মাধ্যমিক দেয়নি সেবার তখনও। ও সেবার শীতে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিল বাবা-মা আর ছোট্ট মেহুলের সাথে। একদিন বিকেলে হোটেলের বাইরে রিতম একা একাই হাঁটছিল। মিষ্টি একটা রোদ ছড়িয়ে ছিল রাস্তা জুড়ে। রাস্তার বিপরীত পাশে পাথুরে খাদ এরপর পাইন গাছের বন। সেই বনের পর উন্নত শির হিমালয়ের বিস্তৃত পর্বতমালা, মাথা উঁচু করে একেকটা পর্বত দাঁড়িয়ে আছে। রিতম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল সেই পাহাড়ের দিকে। বিকেলের রোদে তুষারাবৃত পাহাড় গুলো হাঁসের মতো শুভ্র দেখাচ্ছিলো।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরবে এমন সময় সেই ফিসফিস শব্দগুলো শুনতে পেয়েছিলো রিতম। কেউ বা কারা যেন সমস্বরে একসাথে বলছে।
রিতম..... রিতম.....।
যেওনা.....।
আমাদের কাছে থাকো।
আমাদের আপনজন খুব কম।
আমরা তোমায় ভালোবাসি। যেওনা....।
একটানা কথাগুলো বলছিল না। বাক্যগুলো থেমে থেমে আসছিল।
রিতম প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলো, কারণ এত স্পষ্ট কথা বলে ও এর আগে শুনেনি। তারপর যখন বুঝলো ওর প্রিয় পাহারেরা কথা বলছে আর ওর প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করছে তখন রিতম খুব খুশি হয়েছিল।
মাধ্যমিকের পর রিতমরা গোয়ায় বেড়াতে গিয়েছিল সমুদ্র দেখতে। সেখানেও রিতম এই ফিস ফিস করে বলা কথাগুলো শুনতে পেয়েছিলো যখন সাগর পাড়ে হাঁটছিল সন্ধ্যার দিকে। অনন্ত জলধী ডাকছিলো ওকে। রিতমকে এক দন্ড বসতে বলেছিলো তার কাছে। প্রকৃতি পুত্রদের ডাক রিতম কখনো ফেলতে পারে না।
এই সুন্দর শান্ত সন্ধ্যায়, এই নির্জন ঘরে বসে রিতম আজ আবার সেই ফিসফিস শব্দ শুনতে পেল। কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দক্ষিণবাহিনী গঙ্গা আজ রিতমকে ডাকছিল। ধান্দা বাতাসে যেন তারই স্নেহস্পর্শ, কন্ঠে অপার করুণা।
রিতম....।
এসেছো.....?
এতো দিন দূরে থাকতে হয়?
আমাদের কথা মনে পড়েনি তোমার?
তুমি ছাড়া আমাদের কেউ ভালোবাসে না, তুমি জানো না?
এসো.... আমার কাছে এসো....।
রিতম বিছানা থেকে উঠে পড়লো, এই আহ্বান ও অস্বীকার করতে পারে না। ঠিক করলো এই ভর সন্ধ্যায় আর ঘুমোবে না। একবার গঙ্গার ঘাট থেকে ঘুরে আসবে বরং।
মা আর বউ রান্না ঘরে কাজ করছিলো, বাবা এখনো ফেরেনি। এই সুযোগে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো নিঃশব্দে। ওদের বললে ওরা এখন বেড়োতে দেবে না নির্ঘাত।
রিতম আহিরিটোলা ঘাটে এসে বসলো। চ্ছলাৎ চ্ছলাৎ শব্দে বয়ে চলেছে চঞ্চল স্রোতধারা। ছোট ছোট তরঙ্গ ভঙ্গ এসে আঁছড়ে পরছিলো ঘাটের পাকা সোপানে। মাথার উপর একাদশীর চাঁদ, চাঁদের আলো আর বৈদ্যুতিক বাতির আলো নদীর জলে পড়ে ঝলমল করছিলো জল গুলি।
রিতম অনেকক্ষণ এমনিই চুপচাপ বসে থাকলো। ওর পাশে আরো কতো মানুষ, কিন্তু রিতম সব কিছু ভুলে গেলো।
তারপর নদীর পাড় ঘেঁষে বানানো চওড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করলো কিছু সময়। বাড়ি ফিরলো আটটার দিকে।
মা বাবা বসার ঘরে বসে আছে। মধুমিতা রান্না ঘরে। রিতমকে দেখতে পেয়ে তারা নানান প্রশ্ন শুরু করে দিলো। তাদের প্রশ্ন বান এড়িয়ে রিতম রান্নাঘরে চলে এলো।
মধুমিতা উল্টো দিকে ঘুরে রান্না করছিল। তেলে পাবদা মাছ ভাজার একটানা স্রেৎ স্রেৎ শব্দ হচ্ছিলো, বাতাসে গন্ধ। রিতম কোন শব্দ না করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল মধুমিতার দিকে। হালকা করে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে।
মধুমিতা বলল, কি করছো রিতম? বাবা আছেন বসার ঘরে। ছাড়ো আমায়।
মা বাবা দেখবে না। রিতম মধুমিতার কাঁধে থুতুনি রেখে বললো।
কোথায় গিয়েছিলে এতক্ষন?
ঘুরে এলাম নিচের থেকে।
কি দরকার? রেস্ট কর গিয়ে।
না, রেস্ট করতে ভালো লাগছে না।
তাহলে মা-বাবার কাছে গিয়ে বসো।
না। এখানে থাকবো তোমার কাছে। মধুমিতার গালে চুমু দিয়ে বলল রিতম।
মধুমিতা বললো, আমি রান্না করছি, রিতম। দেখতেই তো পাচ্ছো। আমাকে বিরক্ত করো না। ওর কন্ঠে বিতৃষ্ণা। রিতমের মনে হলো ওর সঙ্গ হয়তো মধুমিতা পছন্দ করছিলো না।
থাকি না....। রিতম বায়না করার সুরে বললো।
না করছি তো.... তুমি যাও। শান্ত কন্ঠে বলেছিলো মধুমিতা। কিন্তু এতো দৃঢ় রিতম আর কোনো কথা খুঁজে পেলো না। তুমি থাকলে আমার রান্না করতে সময় দেরি হবে। তোমার নিশ্চয়ই খিদে পেয়ে গেছে।
কথা গুলো রিতমের কাছে স্রেফ অজুহাত মনে হচ্ছিলো।
রিতম প্রথমে যেতে চাইছিল না। মধুমিতা আবার বলল, কি হল দাঁড়িয়ে রইলে যে, যাও।
রিতম ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে। বাসর ঘরে এসে মা-বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো।
এদিকে রিতম বেরিয়ে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মধুমিতা। রিতমের মুখোমুখি হতে সংকোচ হচ্ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিল পরপুরুষের স্পর্শ রয়েছে ওর শরীরে। এগুলো নিয়ে স্বামীর সামনে দাঁড়ানোটা অপমানের।
তাই রিতম যখনি ওকে স্পর্শ করছিল মধুমিতা
শিটিয়ে থাকছিল। কেন জানিনা ঘৃণা হচ্ছিল নিজের উপর। হয়তোবা দুজন পুরুষের ছোঁয়া ওর শরীরে একসাথে একদিনে পড়বে এটা মেনে নিতে পারছিল না। মধুমিতা ঠিক করেছে যে করেই হোক রিতমকে কাছে ঘেষতে দেবে না আজ।
*****
বড়ো আপডেট দেবো মনে করেছিলাম, কিন্তু সেটা করতে পারলাম না।
কিন্তু সমস্যা নেই, লেখা আছে, বাকিটা কালকে রাতে আপলোড করে দেবো।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)