11-11-2025, 03:57 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (গ) এর বাকি অংশ.........
জয় কোন উত্তর দেয় না , বেড়িয়ে যাওয়ার আগে আর একবার রানীর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের উপর চোখ বুলিয়ে দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে যায় । নিজের ঘরে যেতে যেতে জয় মনে মনে বলে , আর কিছু দিন , তারপর সুধু এক ছাঁদের নিচে নয় , আমরা একি ঘরে একি বিছানায় থাকবো । সারা জীবন , যত দিন বেঁচে থাকি ।
জয় চলে যাওয়ার পর জান্নাত কফির কাঁপে চুমুক দেয় , প্রচুর চিনি হয়েছে , জান্নাতের মুখ মিস্টির কারনে বিকৃত হয়ে ওঠে । তারপর কফির কাপ রেখে পাসওয়ার্ডের দিকে তাকায় , মুখে বলে “হুম………স্পেসাল পাসওয়ার্ড না”
জান্নিনাতের মাথার পোকা গুলো জেগে ওঠে । নিজের বিরক্তিকর অভ্যাসটার জন্য জান্নাত নিজেকে নিজে গালি দেয় , এই পাসওয়ার্ড ক্রেক না করা পর্যন্ত ওর শান্তি আসবে না । অন্য কাজে মনও দিতে পারবে না ।
কিন্তু ভাগ্য ভালো বলতে হবে , জয় এসব ব্যাপারে খুব প্রেডিক্টেবল , অন্তত জান্নাতের কাছে । আর ঘরে হিন্টস মজুদ থাকায় ক্র্যাক করতে সময় লাগলো না । মাত্র পাঁচ মিনিট , এই পাসওয়ার্ড কিভাবে এলো বুঝে গেলো । “ শালা একটা ক্রিঞ্জ” মুখ সুধু এটাই বলল ।
তারপর আবার লিখতে শুরু করে , জান্নাটের আঙ্গুল ল্যাপ্টপের কি বোর্ডে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে , সেই সাথে জান্নাতের মুখ এক টুকরো হাসি । এই হাসি নিকট ভবিষ্যতে জয়ের সাথে ওর লড়াইয়ের কথা ভেবে। সুধু স্ক্রিপ্ট লেখা , ভিডিও ধারন ও এডিট হতে যতদিন সময় লাগে ।
ভয় একটাই আবরার না আবার ভয় পেয়ে যায় । তখন জান্নাত কে নিজের ই কষ্ট করে স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে । জান্নাত জানে রাজীব ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করে , যদিও রাজীব জয়ের ইনভল্ভমেন্ট না জেনেই বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে । কিন্তু জান্নাত এসব ব্যাপারে রাজীব কেন দুনিয়ার কারো কথাই শোনে না । ভিডিওর বিষয় কি হবে , এ ব্যাপারে জিন্নাতের ডিসিশন ই ফাইনাল । আর কেউ এখানে হাত দেয়ার এখতিয়ার রাখে না ।
****
সিগারেট শেষ করে জয় জান্নাতের দরজার সামনে এসে দাড়ায় , মৃদু টোকা দেয় , ভেতর থেকে আওয়াজ আসে “ দরজা খোলা” । জয় নিঃশব্দে দরজা খোলার চেষ্টা করে , কিন্তু পুরনো দিনের ভারি কাঠের দরজা মৃদু প্রতিবাদ করে নিজের বার্ধক্যের কথা জানান দেয় ।
জান্নাতের ঘরে একটা নরম আলোর লাইট জ্বলছে । সব সময়ের মত অগোছলো , এখানে সেখানে ব্যবহার করা জামা কাপড় পরে আছে, বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে , যেখানে ওদের থাকার কথা নয় । আর সেই অগলাছালো ঘরে , রানীর শান্ত স্নিগ্ধ ঘুমন্ত মুখটা যেন বড্ড বেমানান ঠেকে জয়ের কাছে । বিছানার ঐ অংশটা যেন আলোকিত হয়ে আছে, যেখানটায় রানী শুয়ে আছে । রানীর ঘুমন্ত মুখটা এতোটাই শান্ত মনে হচ্ছে , যেন শত শত ঘুমের পরীরা ওকে ঘিরে রেখেছে । জয় অপলক তাকিয়ে থাকে , নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে রানীর নাকের সুক্ষ ফুলে ওঠা , মাঝে মাঝেই পাপড়ির ভেতরে চোখের মনির দৌড়াদৌড়ি , জয়ের ভাবতে ভালো লাগে রানীর চোখের তারা দুটো হয়তো ওকেই খুজে ফিরছে ।
জয়ের ঠোঁটে নিজের অজান্তেই একটা হাসি ফুটে ওঠে , রানীর ফুলের মত নিষ্পাপ মুখটা দেখে জয়ের মনে পুরনো এক তাড়নার নতুন জন্ম হয় । অনাঘ্রাতা এই ফুল্টিকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার তীব্র আখাঙ্কা বুকে ডঙ্কা বাজাতে থাকে । সেই সাথে একটা ভালো লাগা শরীর মন কে প্রশান্ত করে , এই আশ্বাস দেয় , এই ফুলটির জম্ন ওর জন্যই হয়েছে। যেমন ইভের সৃষ্টি হয়েছিলো এডামের জন্য । এই ফুলের ঘ্রান সুধু ওর মনকেই সুরভিত করবে , এর সৌন্দর্য সুধু ওর চোখের তৃষ্ণা মেটাবে । অপেক্ষা সুধু ফুলটিকে তার নিজের জন্য নির্ধারিত ভাসে সাজিয়ে রাখার । আর সেই ভাস যে জয়ের নিজের হৃদয় , সে ব্যাপারে জয়ের বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই ।
“ হ্যালো , এখানে আমিও আছি, মিস্টার লস্ট ইন থট” জান্নাত ইঙ্গিতপুরন দুষ্টুমির হাসি মিশিয়ে বলে , জয় যে আশপাশ ভুলে গেছে , সেদিকেই জান্নাতের ইংগিত ছিলো ।
জান্নাতের ইচ্ছা পূরণ হলো , রানীর প্রতি জয়ের অখণ্ড মনোযোগে বাধা পরল , জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হাসল , জয়ের স্বভাব বিরুদ্ধ কিছু লজ্জাও সেই হাসিতে মিশে রইলো ।
“ ওহো , লজ্জা পাচ্ছিস মনে হয় , আমার লজ্জাবতী ভাই” জান্নাত আরো একটু দুষ্টুমি করে বলল । তারপর স্বাভাবিক ভাবে বলল “ আয় ভেতরে আয়, দরজায় দাড়িয়ে আছিস কেন “
জয় ঘরে ঢোকে , জান্নাতের দুষ্টুমি ভরা চোখে জয় কে ফলো করছে , কিন্তু জয় সেটা অগ্রাহ্য করে ফাঁকা চেয়ারে বসে পরে । তারপর জিজ্ঞাস করে “ তারপর কি অবস্থা?”
“ কার অবস্থা জানতে চাইছিস , আমার ? না রানীর? রানী ঠিক আছে , মরার মতন ঘুমাচ্ছে , বোমা ফাটলেও উঠবে না , আর……… যদি আমার কথা জিজ্ঞাস করে থাকিস … আমি তোর রানীর যত্ন নিচ্ছি সাথে সাথে একটা স্ক্রিপ্ট এর খসড়া করছি , আজকে রাতেই আবরার কে পাঠাতে হবে”
আবরারের নামটা উচ্চারিত হতেই , জয়ের ভ্রু কুঁচকে যায় । একটু বিরক্তি নিয়েই জানতে চায় , “ কোন আবরার?”
জান্নাত হাসে , হাসতে হাসতেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে “ সেই আবরার”
জয়ের চোয়াল কিছুটা শক্ত হয় , একটা নিঃশ্বাস ফেলে , ওকে দেখে মনে হয় কিছু একটা বলতে চেয়েও সেটা গিলে নিয়েছে । এক মুহূর্ত সময় নেয় তারপর বলে “ তুই কি ঠিক করেই নিয়েছিস , যাদের আমি পছন্দ করি না , বেছে বেছে তাদেরকেই তোর দলে রাখবি” জয়ের বলার টোনে , রাগ বা বিরক্তি না থাকলেও একটা অসন্তোষের রেশ রয়েছে ।
জান্নাত জয়ের অসন্তোষ টের পায় , তবে স্বাভাবিক ভাবে যেমন উত্তর দিতো , আজকে তেমন দেয় না , কিছুটা নরম কিন্তু দৃঢ় ভাবে বলে “ এখানে তুই দলাদলি কোথায় পেলি , আমার কাছে মনে হয়েছে ওদের এক্সপারটিজ আমার দরকার আছে , তাই ওদের কে আমার কাজের সাথে জুড়ে নিয়েছি , তুই এটা বেক্তিগত ভাবে নিচ্ছিস কেন , সেটাই আমি বুঝতে পারছি না”
“ তুই বুঝতে পারবি না , কারন তুই মেয়ে , একটা ছেলেকে আর একটা ছেলেই ভালো করে চেনে, এই আবরারের মোটিভ আমি খুব ভালোকরে জানি”
“ আমি জানি না তুই কি বুঝেছিস , বা জেনেছিস , কিন্তু আমার কাছে আবরার কে ভালই মনে হয়েছে , সহজ সরল ছেলে , আমরা কেউই যখন রানীর পাশে ছিলাম না , তখন কিন্তু এই আবরার ই ওর পাশে ছিলো , আবরারের সাথে থেকে রানীর একাডেমিক পারফর্মেন্স কিন্তু বেশ উন্নতি ই হয়েছিলো” কথাগুলো বেশ দ্রিরতার সাথে বলে জান্নাত , জয়ের স্টেট্মেন্ট কে চেলেঞ্জ করে যেন।
কিন্তু জয়ের মাঝে ফাইটিং স্প্রিট দেখা যায় না , উল্টো ওর চোখে মুখে একটা নিরাশার ছাপ পরে , দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে “ হ্যাঁ বাকি সবাই রানীর জন্য উপকারি বন্ধু , সবাই রানী কে বোঝে , আবরার রানীর পড়াশুনায় হেল্প করে , রাজীব সারাক্ষণ খেয়াল রাখে , তুই বিপদে পাশে থাকিস , আমিই সুধু এক মাত্র ব্যাক্তি যে কিনা রানী কে বুঝি না রানীর জন্য সুধু সমস্যাই তৈরি করি, রানীও আজকে আমাকে এই একি কথা বলেছে , প্রমান এমন হাতেনাতে পেয়ে যাবো ভাবতে পারিনি” কথা গুলো বলে জয় উপরে সিলিঙের দিকে তাকায় , জান্নাতকে নিজের চেহারা যেন দেখতে দিতে চায় না ।
জান্নাত নিজের চেয়ার থেকে একটু ঝুকে সামনের দিকে আসে হাত দিয়ে জয়ের হাটুতে বেশ কয়েকবার ট্যাপ করে । কয়েক মুহূর্ত সেখানেই হাত রাখে , তারপর নরম সরে বলে “ আজকের ঘটনার কথা ভেবে বলছিস?…… আজকের ঘটনার জন্য তোর চেয়ে আমার ভুমিকা বড় , তুই একা কেন চাপ নিচ্ছিস? রানীকে দেখে সাধারন একটা বোকা মেয়ে মনে হলেও ওকে হ্যান্ডেল করা কিন্তু সহজ নয়, এটা তোকে আমি আগেও বলতে চেয়ে ছিলাম , কিন্তু তুই আমাকে ভুল বুঝেছিলি”
“ তোর ব্যাপারটা আর আমার ব্যাপার কি এক হলো” এই বলে জয় জান্নাতের দিকে তাকায় , তারপর রানীর ঘুমন্ত মুখের দিকে , ঐ দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে “ আমার অন্তত বোঝার উচিৎ ছিলো , এখন দেখছি সবাই রানী কে বোঝে সুধু আমিই বুঝি না , তা ছাড়া না বুঝতে পারলেও আমার তখন অমন আচরণ করা ঠিক হয়নি , হ্যাঁ আমি বুঝতে পারিনি যে রানী একটা দুঃসংবাদ শুনে ভয় পেয়েছে , কিন্তু তাতে কি ? কোন পরিস্থিতিতেই কি আমার অমন আচরণ করা ঠিক হয়েছিলো? আমি কি বলেছি জানিস …… তুই জাহান্নমে যা , তারপর একা ছেড়ে দিয়েছি”
জান্নাত অনুধাবন করতে পারে , যে জয়ের ভেতরে কি চলছে , ও নিজেও এই আগুনে পুরেছে আজকে , তাই জান্নাত জয় কে কিছুটা ভার মুক্ত করার চেষ্টা করে , বলে “ জয় , একটা মানুষের সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য আশেপাশে একটা আপন মানুষের বলয় তৈরি করতে হয় , একেক জন আপন মানুষের কাজ ভিন্ন ভিন্ন রোল প্লে করা, কেউ বন্ধু হয়ে পাশে থাকে , কেউ পরিবার হয়ে সাহস যোগায় , কেউ জীবন সঙ্গি হয়ে চলার পথে সঙ্গ দেয় , জয় তোদের সামনে অনেক সময় আছে , ধিরেধিরে তোরা একে অপরের জন্য একজন ভালো জীবন সঙ্গি হয়ে উঠবি বলেই আমার বিশ্বাস , তোদের দুজনের মাঝেই সেই ইচ্ছা আমি দেখছি। কিন্তু তাড়াহুড়ো করিস না , এতে ভালোর চেয়ে মন্দ হবে”
জয় ছোট্ট করে হাসে , কিন্তু সেটা মাত্র এক মুহূর্তের জন্য , তারপর ওর চেহারায় দৃঢ় সংকল্পের ছাপ পরে , জান্নাতের দিকে তাকায় , চোখে আত্মবিশ্বাস “ দেখিস তুই , রানীর পুরোটা জগত জুড়েই সুধু আমি থাকবো , ওর সব দায়িত্ব আমি নেব , কোন কিছুর জন্যই রানীকে অন্য কারো মুখাপেক্ষি হতে হবে না,”
জান্নাত জয়ের দিকে ভাল করে তাকায় , তারপর ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে আনে , জান্নাতের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে , জয়ের সাথে একমত নয় ও , জান্নাত আর কথা বাড়াতে চায় না , নিজের ভাই কে চেনে বলেই জান্নাত এই সিধান্ত নেয় । ও জানে এখন জয় কে কোন কিছু বুঝিয়ে লাভ হবে না । তার চেয়ে ভালো , পরিবেশ হলকা করার সিদ্ধান্ত নেয় , হাসি আর একটি চওড়া করে বলে
“ ওকে ঠিক আছে , কিন্তু আজকে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস?”
“কি?” জয় একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞাস করে ,
“ আজকে আমারা দুই ভাই বোন কিন্তু দারুন টিম ওয়ার্ক করেছি , ইতিহাসে কিন্তু এটা খুব বিরল ঘটনা” জান্নাত হাসতে হাসতে বলে ।
“মানে?” জয় জান্নাতের কথার মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারে না ।
“ মানে আমি রানীকে ভয় পাইয়ে দিয়েছি , আর তুই সেটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিস , কি সুন্দর টিম ওয়ার্ক দেখছিস , আমাদের উচিৎ এই অকেশন সেলিব্রেট করা , লেটস সেলিব্রেট ব্রো…… কফি খাবি?”
জান্নাতের এমন হঠাত টপিক পরিবর্তন করায় , জয় প্রথমে অবাক হলেও , সেটা বেশিক্ষণ স্থাই হয় না , ও নিজেও হেসে ওঠে , বলে “ওকে খাওয়া যায়”
“ তাহলে যা দুই কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আয়” জান্নাত হাস্য উজ্জ্বল মুখে বলে ,
জান্নাতের কথা শুনে জয় যেন আকাশ থেক পরে , বিস্মিত হয়ে বলে “ মানে ? অফার করলি তুই , আর বানাবো আমি!!!”
“ তো? অফার করেছি , এর মানে এই নয় যে আমি বানাবো, তাছাড়া তোর গার্ল ফ্রেন্ডের দেখাশুনা করার মহান দায়িত্ব আমার কাঁধে , এটা ফেলে আমি তো সামান্য কফি বানাতে যেতে পারি না” জান্নাত বেশ সিরিয়াস টোনে বলল
“ আমার কফি খাওয়া লাগবে না , আমি গেলাম” এই বলে জয় উঠতে চায় ,
কিন্তু জান্নাত সাথে সাথেই বাধা দেয় “ উহু উহু এটা চলবে না , কফির নাম যেহেতু উঠেছে , সেহেতু কফি খেতেই হবে , আর তোর সাথে বকর বকর করে আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে , এখন এই স্ক্রিপ্ট শেষ করতে অনেক রাত হবে , এখন যদি কফি না পাই আমার ঘুমে ধরবে , আর ঘুম তারানোর জন্য আমার গান শুনতে হবে , আর গান শুনলে যদি রানী জেগে যায়”
জয় বুঝতে পারে জান্নাত কি করতে চাইছে , ওকে দিয়ে কফি বানিয়ে নিতে চাইছে , কিন্তু জয় ও ছেড়ে দেয়ার পাত্র না “ তুই কি আমাকে ব্যাক্মেইল করছিস ? তুই আমাকে চিনিস না?” হুমকির স্বরে বলে জয় ।
“ নো মাই ডিয়ার ব্রো , এটা ব্ল্যাক মেইল নয় , আমি তোর প্রেমের পরিক্ষা নিতে চাচ্ছি , এক কাপ কফি বানানোর কষ্ট তোর কাছে বড় , না তোর গার্ল ফ্রেন্ডের ঘুম ” জান্নাত জয়ের হুমকি থোরাই কেয়ার করে । এমন ভাব নিয়ে বলে ,
জয় কিছুক্ষন চুপ করে থাকে , এক দৃষ্টিতে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকে । কিন্তু জান্নাত পাত্তা দেয় না , ও নিজেও নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে জয়ের দিকে । জয়ের দৃষ্টিতে নগ্ন হুমকি , যেন বলতে চাইছে , ভেবে দ্যাখ এর পরিনাম কি হবে , আর জান্নাতের নির্লিপ্ত দৃষ্টি বলতে চাইছে , আই ডোন্ট কেয়ার। বেশ কিছুক্ষন চলে এই গেম , তারপর জয় ই প্রথমে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় , বলে
“ ওকে ফাইন , এনে দিচ্ছি কফি”
জান্নাত বিজয়ীর হাসি হাসে ।
মিনিট পাচেক পর জয় এক কাপ কফি নিয়ে ঢোকে , জান্নাতের সামনে রেখে বলে , “ মনে থাকবে আমার”
“ তোর কফি কই?” যেন খুব অবাক হয়েছে , এমন ভাবে বলে জান্নাত
“ আমি কফি খাবো না , তুই খা” এই বলে জয় আবার বেড়িয়ে যেতে নেয় , জান্নাত আবার পেছন থেকে ডাকে ,
“ জয় আর একটা কথা”
“ কি বলবি তারাতারি বল”
“ কিছু টাকার দরকার ছিলো , আমার হাত একদম খালি , বুঝতেই পারছিস , টাকার চিন্তা হলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা , দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমালে আমি আবার নাক ডাকি , রানীর যদি আবার ডিস্টার্ব হয় …… ভাবিস না আমার জন্য বলছি , রানীর কথা ভেবেই……”
“ কত?” জান্নাতের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে জয় ।
“ মাত্র পাঁচ হাজার”
“ আমার কাছে নেই ?” জয় সত্যি করেই বলে , আজকে হোটেলের বিল দেয়ার পর ওর কাছে এতো ক্যাশ নেই ।
কিন্তু জান্নাত নাছোড় বান্দা , সাথে সাথেই অন্য অপশন বের করে ফেলে , বলে “ তোর কার্ড হলেই হবে”
জয় বুঝে ফেলে , জান্নাত কোমর বেধেই নেমেছে , আজকে ওর নিস্তার নেই । ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় , তারপর কিছুক্ষন পর আবার জান্নাতের ঘরে এসে , নিজের কার্ড ছুড়ে দেয় , আর জান্নাতের দিকে একটা জলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, বলে “ ১৮১১৪৯, পাসওয়ার্ড”
পাসওয়ার্ড দেখে জান্নাতের চোখ বড় বড় হয় “ এতো বড় পাসওয়ার্ড , তোর মনে থাকে?”
“ এটা স্পেসাল পাসওয়ার্ড তোর মত গাধা বুঝবে না” এই বলে জয় আর দাড়ায় না , কিছুটা রাগ কিছুটা আশংকা ওকে আর দাড়াতে দেয় না , আরো একটু থাকলে না জানি আর কি কি দাবি করে বসবে জান্নাত , মনে মনে ভাবে জয় । শেষ বারের জন্য একবার রানীকে দেখে বেড়িয়ে যায় । আর তখনি জান্নাত পেছন থেকে ডাকে ।
“ আবার কি হলো ?” এবার জয় সত্যি সত্যি বিরক্ত হয়ে উঠেছে । ওর কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি , এমন কি গলাও একটু চড়ে গেছে ,
“ আর একটা অনুরধ , আজকে রাতে আর আমার ঘরের সামনে আসবি না, আমি দরজা লাগিয়ে দিচ্ছি , এর পর দরজায় টোকা পরলে আমি রানীকে জাগিয়ে দেবো” জান্নাত প্রচ্ছন হুমকির স্বরে বলে ।
জয় কোন উত্তর দেয় না , বেড়িয়ে যাওয়ার আগে আর একবার রানীর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের উপর চোখ বুলিয়ে দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে যায় । নিজের ঘরে যেতে যেতে জয় মনে মনে বলে , আর কিছু দিন , তারপর সুধু এক ছাঁদের নিচে নয় , আমরা একি ঘরে একি বিছানায় থাকবো । সারা জীবন , যত দিন বেঁচে থাকি ।
জয় চলে যাওয়ার পর জান্নাত কফির কাঁপে চুমুক দেয় , প্রচুর চিনি হয়েছে , জান্নাতের মুখ মিস্টির কারনে বিকৃত হয়ে ওঠে । তারপর কফির কাপ রেখে পাসওয়ার্ডের দিকে তাকায় , মুখে বলে “হুম………স্পেসাল পাসওয়ার্ড না”
জান্নিনাতের মাথার পোকা গুলো জেগে ওঠে । নিজের বিরক্তিকর অভ্যাসটার জন্য জান্নাত নিজেকে নিজে গালি দেয় , এই পাসওয়ার্ড ক্রেক না করা পর্যন্ত ওর শান্তি আসবে না । অন্য কাজে মনও দিতে পারবে না ।
কিন্তু ভাগ্য ভালো বলতে হবে , জয় এসব ব্যাপারে খুব প্রেডিক্টেবল , অন্তত জান্নাতের কাছে । আর ঘরে হিন্টস মজুদ থাকায় ক্র্যাক করতে সময় লাগলো না । মাত্র পাঁচ মিনিট , এই পাসওয়ার্ড কিভাবে এলো বুঝে গেলো । “ শালা একটা ক্রিঞ্জ” মুখ সুধু এটাই বলল ।
তারপর আবার লিখতে শুরু করে , জান্নাটের আঙ্গুল ল্যাপ্টপের কি বোর্ডে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে , সেই সাথে জান্নাতের মুখ এক টুকরো হাসি । এই হাসি নিকট ভবিষ্যতে জয়ের সাথে ওর লড়াইয়ের কথা ভেবে। সুধু স্ক্রিপ্ট লেখা , ভিডিও ধারন ও এডিট হতে যতদিন সময় লাগে ।
ভয় একটাই আবরার না আবার ভয় পেয়ে যায় । তখন জান্নাত কে নিজের ই কষ্ট করে স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে । জান্নাত জানে রাজীব ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করে , যদিও রাজীব জয়ের ইনভল্ভমেন্ট না জেনেই বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে । কিন্তু জান্নাত এসব ব্যাপারে রাজীব কেন দুনিয়ার কারো কথাই শোনে না । ভিডিওর বিষয় কি হবে , এ ব্যাপারে জিন্নাতের ডিসিশন ই ফাইনাল । আর কেউ এখানে হাত দেয়ার এখতিয়ার রাখে না ।
****
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)