Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.75 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৯ ()

 
রহিমকে সারারাতের জন্য কার্ডিয়াক কেয়ারে রাখা হবেতাই সন্ধ্যার পর ডাক্তার যখন দ্বিতীয়বার সবাইকে ব্রিফ করলেন, তখন রাজীব সবাইকে বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করল
জয়নাল কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না  রাজীবের অনেক বোঝানো, আশ্বাস আর অনুরোধে অবশেষে বাড়ি যেতে রাজি হয়েছে । রানীকেও ডাক্তার  কিছু ওষুধ দিয়েছে, বলেছে  রাতে একদম নির্বিঘ্ন ঘুম হতে হবেরাজীব চেয়েছিল ওকে আগেই পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু রানী রাজি হচ্ছিল না,  একবার আব্বুকে দেখে যাবে, এই জেদ নিয়ে বসেছিলশেষে রাজীবও ভেবেছিল, একবার দেখা হলে বরং ওর মনটা শান্ত হবে   
সবাই চলে যাওয়ার পর রাজীব একাই থেকে গেলএখন CCU-তে রহিম সারা রাত পর্যবেক্ষণে থাকবে, তাই অন্য কারো কিছু করার নেইশুধু যদি হঠাৎ ডাক পড়ে, সেই ভেবেই রাজীবের থাকা
ও বসে আছে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমেচারপাশ নিস্তব্ধ, একটা টিভি চলছে , মিউট করা ।  মাঝে মাঝে  দূরের করিডোরে নার্সদের পদশব্দ শোনা যায় সুধু 
রাতের খাবারের চিন্তা নেই, কারণ জান্নাত যাওয়ার আগে ওকে জোর করে খাইয়ে রেখে গেছেরাজীবের খাওয়া নিশ্চিত করতে জান্নাত নিজেই থেকে গিয়েছিল, রানীকে পাঠিয়ে দিয়েছিল আয়েশা আর জয়নালের সঙ্গে 
রাজীব যতক্ষণ খাচ্ছিল, জান্নাত ঠিক সামনে বসে ছিলএকদৃষ্টে তাকিয়েখাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে রাজীবের চোখ চলে যাচ্ছিল জান্নাতের দিকে
ওর এমন মমতাভরা দৃষ্টি রাজীবকে অচেনা এক উষ্ণতায় ভরিয়ে তুলছিলকেউ যেন নিঃশব্দে খেয়াল রাখছে তার প্রতিটি গ্রাসে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে
রাজীবের মনে পড়ে না , কোনদিন কেউ , এমন করে ওর খাওয়ার দিকে চোখ থেকেছিলো কিনা? তার পর ভাবে  হয়তো অনেক বছর আগে, মা যখন বেঁচে ছিলো   
তখনই মনে এক অদ্ভুত লোভ জেগে উঠল রাজীবের , ভাবল থাকুক না তাকিয়ে , খাওয়ার সময় সামনে কেউ বসে পরম মমতায় তাকিয়ে আছে , সেটা রাজীবের কাছে ভালোই লাগছিলো ।    রাজীব না চেয়েও বারবার তাকিয়ে ফেলছিল জান্নাতের দিকে
 
রাজীব চাইছিল, ওর এই চেয়ে দেখা যেন জান্নাত টের না পায়কিন্তু প্রতিবারই ধরা পড়ে গেছে যতবার চোখাচোখি হয়েছে । জান্নাত মিষ্টি করে হেসেছে । আর রাজীব চোরের মত মুখ লুকিয়েছে ।  শেষের দিকে রাজীব আর তাকানোর সাহস করেনি । মাথা নিচু করে খেয়ে গেছে , কিন্তু প্রতিটা মুহূর্তে , জান্নাতের সেই মমতা মাখা দৃষ্টি , অনুভব করেছে , নিজের শরীরে, মনে আর হোটেলের অখাদ্য খাবার গুলো সুস্বাদু হয়ে উঠেছে ।

এখন এই নিঃসঙ্গ অয়েটিং রুমে বসে ভাবছে , এই এক জান্নাত  কিন্তু  কত রূপ ! 

কখনো  স্বাধীনচেতা, সমাজের নিয়মভাঙা এক তরুণী, যে নিজের ছন্দে, নিজের নিয়মে বাঁচতে জানে আবার কখনো স্থির, প্রজ্ঞাবান, কঠিন পরিস্থিতিতেও আশ্চর্য দক্ষতায় সামলে নেয় সব 
রাজীবের মনে পড়ে, বেশি দিন আগের কথা নয়,  একবার ও খুব বিশ্রীভাবে জান্নাতের বুকের দিকে তাকিয়ে ফেলেছিল
নিজের উপর প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মেছিলো ভেবেছিল, জান্নাত হয়তো আর ওর মুখ দেখবে না কিন্তু না, জান্নাত কী অদ্ভুত কোমলতায় ওর লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েছিল! এমন আচরণ করেছিল যেন কিছুই ঘটেনি রাজীব যে একজন মানুষ , রক্ত মাংসের মানুষ সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলো । রাজীবের মনে হয় , জান্নাত সুধু সেদিন ওকে লজ্জা থেকেই সুধু বাচায়নি , সেদিন জান্নাত রাজীবকে শুদ্ধ করেছিলো ।   
আবার  এই একই জান্নাত,  হালকা তামাশা আর হাস্যরসে পুরো পরিবেশ বদলে দিতে পারেতখন মনে হয়, ওর ভেতরে কোনো গভীরতা নেই, নিছক এক কিশোরী মাত্র 

আবার সেই সেই জান্নাত যখন রেগে যায়, সামনে দাঁড়ানোই মুশকিল হয়ে পড়ে কেউ সামনে দাড়াতে পারে না ।

আর আজ, সেই একই মুখে মমতার ছায়া,  এমন শান্ত, এমন উষ্ণ,  রাজীবের বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে ওঠে , ভাবে জান্নাতের চোখে আজকে ও যা দেখছে , তা ছিলো মাতৃ মমতার মত অকৃত্রিম মমতা , যে মমতার জন্য রাজীবের মন আজন্ম তৃষ্ণার্ত ।
 
****  
 
 
জয় সরাসরি বাড়ি আসেনি;  ফিরে গিয়েছিল হোটেলে, বাইক নিয়ে আসার জন্যবাইক নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছেজয় জানে, আজ রাতে রানী ওদের বাড়িতেই থাকবে, কিন্তু  অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, এই তথ্য যতটা থ্রিল দিতে পারত, ততটা থ্রিল  অনুভব করছে না  
হাসপাতালেও একই ধরনের অনুভূতি হচ্ছিল, সারাক্ষণ রানী ওর আশেপাশেই ছিল, কিন্তু জয়ের মনে হচ্ছিল রানী যেন ওর ধরা ছোঁয়ার বাইরেরানীর পাশে গিয়ে যে দুটো সান্তনার কথা বলবে, যা একটু সাহস যোগাবে, সেই সাহস জয়ের হয়নিহোটেলে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির অনুতাপ সারাক্ষণ জয়ের মন ও শরীরকে যেন অসার করে রেখেছিল   
 
 বাসায় ফিরে প্রথমে ফ্রেশ হয় জয় , কিছুক্ষন পর খাওয়ার ডাক এলে বলে দেয় ও খাবে না ।  কিছু খাওয়ার মত অবস্থা ওর নেই । সেই যে সকালে নাস্তা করে বের হয়েছিলো এর পর আর খাওয়া হয়নি ।তবুও ক্ষুধা টের পাচ্ছে না ,  ক্ষুধা টা নষ্ট হয় গেছে , জয়ের মনে হচ্ছে ওর গলা দিয়ে খাবার নামবে না , তাই সুধু সুধু চেষ্টা করার মানে হয় না ।   
 
একবার ভাবে রানী কে দেখে আসবে , কিন্তু সেই চিন্তাও বাদ দেয় । ঘরের দরজা লাগিয়ে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরায়।
 
কিছুতেই জয়ের মনে শান্তি আসছে না  , বার বার  হসপিটালের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।  তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলো , এমন কি রাজীবের প্রতি কিছুটা কৃতজ্ঞতা বোধ ও এসেছিলো । কিন্তু এর পর যতই  পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে , জয়ের মন থেকে ঐ স্বস্তি আর কৃতজ্ঞতা বোধ দূর হয়ে সুধুই পরাজয়ের গ্লানি আর অপরাধবোধ রয়ে গেছে ।
 
ফিরতি পথে রানীকে বলা কথাগুলো বার বার একেকটা তির হয়ে ওর বুকে এসে বিঁধেছে । আমার সাথে থাকলে তোর মনে হবে , জীবন অতটা কঠিন নয়” ……… “ তোকে এতোদিন যা যা শেখানো হয়েছে আমি একটা একটা করে সব উপড়ে ফেলবো”  নিজের বলা এই কথাগুলো খুব বেশি ফাঁকা মনে হয় ।
 
সিগারেটের স্বাদ বিস্বাদ লাগে , ছুড়ে ফেলে দেয় বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে । তারপর নিচে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট লাল আগুনের পতন , চরকির মত ঘুরতে ঘুরতে নিচের দিকে যাচ্ছে । পতনের সাথে সাথে কিছু স্ফুলিঙ্গও ছড়িয়ে পরে চারদিকে , তারপর ধিরে ধিরে অন্ধকারে হারিয়ে যায় ।
 
জয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সেই অন্ধকারে
মনে হয়, ভেতরেও যেন ঠিক এমনই কোনো আগুন নিভে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে এক মুহূর্তের জন্য প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় জয় । ভেতরের এই আগুনটাই যে জয়ের প্রান ভোমরা । এটা নিভে গেলে ও বাচবে কি করে ।
 
কিন্তু পরমুহুরতেই জয় নিজেকে সামলে নেয় , জয়কে সাহায্য করে  রানীকে করা  ওর একটা প্রতিজ্ঞা  । জয় রানীর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলো ,   “আমি সুধু তোর কাছেই পরাজয় স্বীকার করবো দুনিয়ার আর কারো কাছে নয়”       
 
 
জয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে , ও জানে এর পর ওর করনীয় কি । নিজের এমন শোচনীয় পরাজয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজের করনীয় সম্পর্কে একদম পরিস্কার ধারনা নিয়ে জয় দ্বিতীয় সিগারেটে আগুন ধরায় । এবার আর স্বাদ  তেঁতো লাগে না । বরং শেষ শীতের ঈষৎ শীতল বাতাসে , সিগারেটের তপ্ত ধোয়া ওর বুকে উষ্ণতার প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় ।   
 
অনেকটা নির্ভার হওয়ার পর রানীকে দেখার জন্য ওর মন ছটফট করতে থাকে । একি ছাঁদের নিচে ওরা দুজন , এই তথ্যটা যেন হঠাত ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । শরীরে মনে অজানা এক শিহরণ ওঠে ।
 
****  
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 3 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 11-11-2025, 03:52 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)