07-11-2025, 05:25 PM
।। সমাপ্তি পর্ব।।
সন্ধ্যার মুখে নদীর পাড়ে বসে ছিলো সুধা আর সুধাময় পাশাপাশি। আজ মায়ের বিসর্জন। আবার লেখা আর নুটু নতুন জীবন শুরু করলো, তাই আজ সুধার মন বেশ প্রফুল্ল। সূর্য্য অস্ত চলে গেছে। জায়গাটা একেবারে ফাঁকা, এখানে নদীর পাড় ভাঙা। খাড়া পাড়ে বসে নদীর ঘুর্নী জলের দিকে তাকিয়ে সুধাময় বলে, " জানো বৈষ্ণবী ওই যে ঘুর্ণি দেখছো, ওখানে অতি বড়ো সাঁতার জানা মানুষও ডুবে যাবে। "
সুধা হেসে বলে, " তাহলে চল দুজনে একসাথে ডুবি। "
বিষণ্ণ হাসে সুধাময়, জানো আমি জীবনে দুটো উদেশ্য পুরোণের জন্যই বেঁচে আছি...... আর সেই দুটো উদ্দেশ্যই আমার সব থেকে দুজন ভালোবাসার মানুষের জন্য। "
সুধা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, " তাই? তা কি কি উদ্দেশ্য সেগুলো শুনি? "
স্থির চোখে সুধার দিকে তাকায় সুধাময়, " প্রথম, আমার একমাত্র ভালোবাসাকে পাওয়া, যেটা সফল করতে আমার এখানে আসা..... তোমাকে পেয়ে আমার সেই উদ্দেশ্য সফল, তুমি ছাড়া কাউকে আমার প্রেমিকা ভাবিতে পারি নি গো বৈষ্ণবী। "
সুধা সুধাময়ের হাত জড়িয়ে ধরে, " এতো ভালোবাসো আমায়? "
" হ্যাঁ গো..... এখনো বোঝো নি? "
" কোনদিন তোমায় ছেড়ে যাবো না গো.....একবার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছি..... আর না। " সুধাময়ের কাঁধে মাথা রাখে সুধা।
" আর আমার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য শুনবে না? "
মুখ তুলে তাকায় সুধা, " হ্যাঁ তাই তো, কি সেটা? "
" জানো আমার মাকে আমি খুব ভালোবাসতাম, আমার মা ছিলো চিররুগ্ন। আমার বাবার সাথে তার শারিরিক সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছিলো, কিন্তু বাবা তবুও মাকে ভালোবাসতেন, খেয়াল রাখতেন...... নিজের চারিপাশে অনেক মহিলা থাকা সত্বেও বাবা কোন বতাভিচারে জড়াতেন না, কিন্তু লক্ষীপিসি এসে বাবাকে এতো ভালোবাসলো যে বাবা তাকে ফেরাতে পারলেন না, কিন্তু তবুও বাবা মাকে তার স্থান থেকে বঞ্চিত করেন নি, লক্ষীপিসি বাবাকে চিনতেন, তিনিও কোনদিন কোন অধিকার দাবী করেন নি...... সমান্তরাল ভাবে বাবা দুজনকে নিয়ে থাকতেন তবে মাকে লক্ষীপিসির ব্যাপারে বাবা বা আমরা কেউ কখনো জানাইনি...... জানতাম কোন নারী তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না, বাবাকে আমরা দোষ দিই নি কোনদিন, কারণ বাবা স্বভাবে ব্যাভিচারী ছিলেন না, লক্ষীপিসির তীব্র ভালোবাসা বাবাকে সমর্পন করত বাধ্য করেছিলো......এতো সুন্দরী মহিলা থাকতেও বাবা তো আর কাউকে কখনো খারাপ নজরে দেখে নি, বা কারো সাথে সম্পর্কে জড়ায় নি..... আসলে ভালোবাসাটাই বাবা চেয়েছিলো যেটা রুগ্ন অসুস্থ মা দিতে পারতো না.... প্রথম দিকে খারাপ লাগলেও পরে বাবার এই আচরন আমি মেনে নি। সারাজীবন বিনাশর্তে বাবাকে ভালোবেসে যাওয়া লক্ষীপিসির উপরেও আমার কোন ক্ষোভ থাকে না …...........আমি বা বাবা কেউ মায়ের মৃত্যু চাইতাম না বলেঈ লক্ষীপিসির প্রসঙ্গ মায়ের কাছে গোপন থাকতো। "
এই পর্যন্ত শুনেই সুধা চুপ করে যায়। সুধাময়ের মুখটা অচেনা লাগে। স্থির চোখে সে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে একফোঁটাও জল নেই। যেনো জ্বলছে সেই চোখ। জমানো রাগ, ঘৃণা, সব সেই চোখে ধরা পড়ছে...... হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে সুধার। ও কোনমতে বলে, " চলো, এবার ফেরা যাক...... "
সুধাময় নিরুত্তর। সুধা আবার বলে, " চলো, এরপর অন্ধকার গয়ে যাবে...... "
ঘুরে সুধার দিকে তাকায় সুধাময়, ওর চোখে বীভৎস রাগ ঝরে পড়ছে, একটা হাত বাড়িয়ে সাঁড়াসির মত সুধার গলা চেপে ধরে ও, " কেনো..... কেনো আমার আমকে মারলে? কি ক্ষতি করেছিলো আমার বাবা তোমার? তোমার কথাতেই মা আত্মহত্যা করে...... মায়ের মৃতদেহ ছুঁয়ে সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, একদিন তার খুনীকে আমি সাজা দেবোই..... "
সুধার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সুধাময়ের হাতের মাঝে ও ছটফট করে ওঠে। কোনমতে বলে, " সুধাময়...... আমি এতোসব জানতাম না, তোমার মা র সাথে অন্যায় হচ্ছে ভেবেই আমি সব বলি....... তুমি আমায় ভালোবাসো এটা আমি তোমার চোখে পড়তে পারি..... "
চেঁচিয়ে ওঠে সুধাময়, " হ্যাঁ ভালোবাসি....... তাই তো আজ তোমাকে হাতের মধ্যে পেয়েও মারতে পারছি না......মাকে দেওয়া কথা রাখা হলো না আমার, ভালো থেকো বৈষ্ণবী...... " সুধার গলা ছেড়ে সেই ঘুর্ণি স্রোতে ঝাঁপ দেয় সুধাময়। মুহুর্তে তলিয়ে যায়.....
" সুধাময়......!!!! " সুধার চিৎকার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফেরে চারিদিকে। ফেরে না সুধাময়।
ভিক্ষার ঝোলাটা কাঁধে তুলে লেখাকে বলে সুধা, " আমি বেরোলাম,, তুই নুটুকে খাইয়ে কাজে পাঠাবি কেমন? "
লেখা মাথা নাড়ে, " সাবধানে যেও পিসি। "
সুধা এগোয়। এই বাড়ি এখন তিনজন বাসিন্দা। আর একজন খুব শীঘ্র আসছে..... লেখা পোয়াতি..... নুটু আর লেখার বিয়ে প্রায় বছর ঘুরতে চললো। সুখে আছে সুধা তবে একজন যে ওর জীবনে দাগ কেটে দিয়ে গেলো সেই দাগ আর মোছে কে?
দত্ত বাড়ির সামনে এসে বন্ধ দরজার সামনে দীর্ঘশ্বাস পড়ে সুধার। রতনের বাড়িতে ঢোকে, " হরে কৃষ্ণ, মা জননী আছেন নাকি? "
অনেক দূরে নদীর ওপারে আবার নিজের পুরোনো জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে রমা। মাঝে মাঝে নুটুর কথা খুব মনে পড়ে ওর। কিন্তু যায় না দেখা করতে..... পাছে আবার তাল কেটে যায়। ভালো থাকুক লেখা আর নুটুর ভালোবাসা।
নরেনের কেস মিটে যাওয়ার পরই ট্রান্সফার নিয়ে উত্তরবঙ্গে চলে গেছে গদাধর। কখনো কখনো ভগবান সব কিছু তো সবার জন্য রাখেন না। লেখার সাথে কাটানো কটা দিনের স্মৃতি বুকে নিয়েই ও কাটাতে চায় ওর অতৃপ্ত যৌবন।
।। সমাপ্ত।।
Deep's story


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)