Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.75 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (ক) এর বাকি অংশ.........



জান্নাত আসার আগেই ওর বাবা আর মা চলে এসেছে । রাজীব ওদের সাথেই কথা বলছে । রাজীব কে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না কিছুক্ষন আগেও ওর নিজের উপর কন্ট্রোল ছিলো না । জান্নাতের নিজের ডিসিশনের উপর ডাউট হতে থাকে । রাজীবের চোখ দুটোতে এখনো চাপা কান্না স্পষ্ট । অথচ কথা বলছে নির্লিপ্ত ভাবে ।
 
জান্নাত ভাবে সবাই রাজীবকে  দেখে খুব গোছানো, আত্মবিশ্বাসী ছেলে মনে করেতাই ওকে নিয়ে কেউ বিশেষ ভাবনাচিন্তা করে নাকেউ ভাবতেও পারবে না  কিছুক্ষণ আগে এই রাজীবের অবস্থা ছিল একেবারে ভেঙে পড়ার মতোজান্নাতের  মনে হয়,  ওর উচিৎ হয়নি রাজীবকে থামানো , উচিৎ ছিল রাজীব কে  কাঁদতে দেওয়া    
 
তাহলে সবাই  বুঝতে পারতো  রাজীবও একটা মানুষ , ওকে নিয়েও সবার কছুটা ভাবা দরকার । কিছুটা সান্তনা ওর ও পাওনা , কারো একজনের উচিৎ ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেয়া , বলা ,  চিন্তা করিস না , আমরা  তো আছি । কিন্তু এটা কেউ করবে না, সবাই ভাববে , রাজীব পারবে , ঠিকই সামলে নেবে একা সব । কারন রাজীব সবার লক্ষি ছেলে , কর্মঠ দায়িত্ববান । কিন্তু কারো সময় হয় না ওর ভেতরে উকি দিয়ে একবার দেখার , ভেতরটা যে পাথর হয়ে গেছে ওর , চাপ গুলো বয়ে বেড়াতে বেড়াতে ।
 
এই নে পানিজান্নাত রাজীব কে পানির বোতল এগিয়ে দেয় । জান্নাত কে দেখে জয়নাল জিজ্ঞাস করে রানী কই ওকে বলেছিস?”
 
আছে হয়তো কোথাও, ফোনে পাচ্ছি না”   জান্নাত নিজের অনুভূতি গোপন রাখতে সক্ষম হয় না , আসলে এই বিরক্তিটা রানীর উপড়ে নয় , বরং এটা ওর আব্বুর উপরে । রানীর বেপারে জিজ্ঞাস করার সময় জয়নালের চোখে মুখে যে উদ্ভেগ ফুটে উঠেছিলো সেটা রাজীবের সাথে কথা বলার সময় দেখতে পায় নি ও । সবাই রানী কে নিয়ে চিন্তিত , বাবার অসুস্থতার খবর শুনে রানী কেমন করবে এই ভেবে সবাই উৎকণ্ঠায় আছে । অথচ সামনে দারনো রাজীবের ব্যাপারে চিন্তা নেই কারো । জান্নাত ভেবে পায় না , এটা কি ওরা বোঝে না? রানীর তো রাজীব আছে  । কিন্তু রাজীবের কে আছে ?      
 
জয় আসেনি?” এবার আয়শা জিজ্ঞাস করলো
 
জয়ের কথা উঠে আসতেই জান্নাতের মনে হলো , আচ্ছা রানী তো জয়ের সাথেও থাকতে পারে , জয় কে কল করলেই হতো। মুখে বলে “ নাহ ওকে বলাই হয় নি”  
 
কেন?” আয়শা মেয়ের উপর একটু বিরক্ত হয় ,
 
জয় এসে কি করবে?   কি ডাক্তার? যা আগে করা জরুরি তাই করছি আমরা ”  
 
জান্নাত তোর ছোট আব্বু অসুস্থ আর তুই এমন করছিস কেন , তোর কি জ্ঞান বুদ্ধি কমছে ? কখন কেমন আচরণ করতে হবে , ভুলে যাচ্ছিস ?”   জয়নাল চাপা স্বরে বললেও ওর উত্তেজনা টের পাওয়া যায় । কিন্তু জান্নাত সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে চলে যায় । ওর মনে হয় এখন মুখ খুললে ভালো কিছু হওয়ার বদলে খারাপ ই হবে ।  
 
জান্নতের এমন চলে যাওয়া দেখে জয়নাল আরো ক্ষেপে ওঠে , এমনিতেই বন্ধুর অসুস্থতা ওকে বেশ কাতর করে ফেলেছে । তার উপর মেয়ের এমন আচরণ । স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে দেখেছো অবস্থা
 
আহা বড় আব্বু বাদ দাও তো? তুমি এখানে বস , শান্ত হও , আব্বুর তেমন কিছুই হয়নি , আজকে অবজারভেশনে রেখে , কাল ছেড়ে দেবেরাজীব জয়নাল কে বোঝানোর জন্য মিথ্যা করেই বলে । রাজীব বুঝতে পারে , ছোট বেলার বন্ধুর এমন হঠাত অসুস্থতা জয়নালের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে ।
 
তোর মত আর একটা ছেলে মেয়েও আমাদের হয়নি রে , আফসোসজয়নাল চিবিয়ে চিবিয়ে বলে , “একজন মানুষ এমন অসুস্থ আর কথার কি ছিরি দেখছসি ?”  এই বলে জয়নাল মেয়ে যেদিকে সেদিকে তাকায় ,
 
আহা বাদ দাও না বড় আব্বুরাজীব আবার বলে
 
আমার যদি কোনদিন এমন কিছু হয় , তুই ই আমাকে দেখিস বাবা, আর কারো প্রতি আমার বিশ্বাস নেই , ছেলে তো একটা লাফাঙ্গা হয়েছে , কোন কাজে তাকে পাওয়া যায় না , আর মেয়ে একটা বেয়াদপ”  শেষের দিকে জয়নালের কণ্ঠ একটু কাঁপে।
 
রাজীব শুষ্ক হাসে , ওর বড় আব্বু যে বিচলিত হলে রেগে যায় এটা সবাই জানে । নিজের বাবার প্রতি একটা মানুষের এমন অক্রিত্তিম ভালোবাসা দেখে রাজীবের ভালো লাগে । রাজীব পানির বোতল জয়নালের দিকে বাড়িয়ে দেয় । জয়নাল আনমনে পানি নেয় , বিড়বিড় করে বলতে থাকে কত আর বয়স হয়েছে ? আমার সমান ই তো
 
****
জয় রানীকে যে রেস্তোরাঁয় নিয়ে এসেছে, এরকম জায়গায় আগে কখনো আসা হয়নি ওরঅনেক ছোটবেলায় একবার এসেছিলোযখন বড় আব্বু, জয়নাল, এক বিশেষ উপলক্ষে সবাইকে নিয়ে এসেছিলেনরানীর মনে আছে, সেদিন জয় একটা প্লেট ভেঙে ফেলেছিলো একটা অতি নাটকিও কিছু করতে গিয়ে
তারপর আর কখনো এমন রেস্তোরাঁয় আসা হয়নি সাধারণত ওর আব্বু ওদের কোথাও নিয়ে গেলে সেটা হতো চিড়িয়াখানা, জাদুঘর বা বইমেলার মতো জায়গাআব্বু সবসময় বলত, “ঘুরতে গেলে এমন জায়গায় যেও, যেখান থেকে কিছু শেখা যায়
রানী ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হতো, কিন্তু মুখে কিছু বলতো নাকারণ, এমনিতেই আব্বু কোথাও খুব একটা নিয়ে যেত নাআর যদি মুখ খোলে, তবে হয়তো একেবারেই নিয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেবে, এই ভয় কাজ করত
আরও বড় হওয়ার পর, আব্বু নিয়ে যাওয়া বন্ধই করে দিয়েছিলো তখন রাজীব-ই মাঝে মাঝে নিয়ে যেত, চটপটি বা ফুচকা খাওয়াতেএর বেশি কিছু না কলেজে ওঠার পর   জান্নাতের সাথেও কয়েক জায়গায় গেছে, কিন্তু জান্নাতও খুব ফেন্সি জায়গায় যায় নাতাই এই পরিবেশ রানীর কাছে একেবারেই অচেনা
রেস্টুরেন্টে ঢোকার পর থেকেই ওর একটু সংকোচ বোধ হচ্ছেএখানে যারা এসেছে, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণসব যেন ওর থেকে আলাদা
এতো বড় রেস্টুরেন্টে আসার কি দরকার ছিল?” রানী হালকা সংকোচ নিয়ে জিজ্ঞেস করে
তুই কি বললি!” জয় অবাক হয়ে বলে, তারপর হেসে ওঠে, তোর কাছে হয়তো আজকের ব্যাপারটা হাইজ্যাকিং মনে হচ্ছে, কিন্তু আমার জন্য এটা আমাদের ফার্স্ট ডেট আর আমি আমার ফার্স্ট ডেট স্পেশাল করব না?”
 
ইস, তুলে এনে বলছো ডেট! আগে বললে কি ক্ষতি হতো? তোমার পাগলামি না করলে মনে হয় শান্তি হয় না,” রানী অভিযোগের স্বরে বলে
 
তুলে আনার মজাই আলাদা! তুই বুঝবি না,” জয় দুষ্টুমি ভরে বলেতারপর একটু থেমে যোগ করে, “সেদিন যদি এতো কিছু না করে তোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতামআহ!” বলে হা হা হা করে হেসে ওঠে
 
জয়ের এমন উচ্চস্বরে হাসি আশেপাশের গেস্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেঅনেকেই বিরক্ত চোখে তাকায়
 
এই চুপ! সবাই তাকাচ্ছে,” রানী চোরা চোখে চারপাশে দেখে ফিসফিস করে বলে
 
তাকালে আমার বা…”—‘বালশব্দটা মুখে আসতেই জয় থেমে যায় বলার ভঙ্গি বদলে নেয়,বলে  বয়েই গেছে!”

প্লিজ, একটু স্বাভাবিক আচরণ করোআমার ভীষণইয়ে হচ্ছেরানী এতোটাই অপ্রস্তুত হয়ে গেছে যে, কথাগুলোও গুলিয়ে ফেলছে
রানীর দিকে তাকিয়ে জয় বুঝতে পারে, সত্যিই ও লজ্জা পাচ্ছেতাই নিজেকে সংবরণ করে নেয়
 
সত্যি বলতে, জয় ভীষণ খুশি এখন থেকে রানীকে নিয়ে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেএমন এক বিশ্বাস ওর  ভেতরে জন্মেছে তার ওপর, ফেরার পথে রানীর বলা  কিছু কথা এখনো কানে বাজছেতাই হয়তো একটু বেশি পাগলামি চেপে বসেছে
 
যাহ! তোকে মাফ করে দিলামআর বিব্রত করব না,”  জয় হেসে বলে, তবে তুই কিন্তু আমার ঐ কথাটা ভেবে দেখতে পারিস
 
কোন ব্যাপারটা?” রানী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
 
ঐ যে বললামতুলে নিয়ে বিয়ে করাআমরা এখনো ঐ রোলপ্লে টা করতে পারি
 
তুমি থামবে?” রানী লজ্জায় মুখ লাল করে ফেলে  আমি তো জানতাম তুমি হিরো, এখন দেখছি তুমি ভিলেন!” রানী মুচকি হেসে বলে
 
আজকাল হিরোরা এমনইআচরণ ভিলেনের মতো, কিন্তু হিরোআর মেয়েরাও এমন ছেলেই পছন্দ করেআগের দিনের মেন্দা মারা হিরোদের দিন শেষ!”জয় জ্যাকেটের কলার তুলে সিনেমার হিরোদের স্টাইলে পোজ দেয়
 
রানী মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসেকে বলল সব মেয়ে এমন হিরো পছন্দ করে?”
 
সব মেয়ের কথা বাদ দে, তুই যে করিসসেটা আমি জানি 
 
কচু জানো তুমি,” রানী হাসতে হাসতে বলে তারপর উঠে দাঁড়িয়ে যোগ করে,তুমি অর্ডার করো, আমি একটু রেস্টরুমে যাচ্ছিচুল এলো-মেলো হয়ে গেছে, জামা কাপড়ের ছিরি নেই আর উনি আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে!”
 
তুই পাগলনি সেজে এলেও আমার রানীই থাকবি,” জয় বসেই কুর্নিশ করার ভঙ্গি করে
 
রানী কিছু বলে না, শুধু ভ্রুকুটি করে,কিন্তু ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে মিষ্টি এক হাসি
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 02-11-2025, 08:18 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)