Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.75 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৯ ()

 
হাইওয়ের দুই পাশে শুকনো ঘাসে শেষ শীতের ঝলমলে আলোতে সোনালি বর্ণ ধারন করেছে রাস্তার দুপাশে গাছের সারি, বাতাসে হালকা ধুলোর গন্ধ দুপুরের সূর্যটা মাথার একটু ওপরে, আলোটাও বেশ নরম গায়ে লাগলে গরম না, বরং একরকম আলসেমি ছড়িয়ে দেয়  
জয়ের বাইকের গর্জনটা যেন এই নিস্তব্ধ দুপুরের একমাত্র শব্দফিরতি পথে জয় বাইক চালাচ্ছে মাঝারি গতিতে, সানগ্লাসে ওর মুখের অর্ধেক ঢাকা থাকায় ওর চোখের দৃষ্টি কেমন তা বোঝা যাচ্ছে না তবে ঠোঁটে একটা তৃপ্তির হাসি, পেছনে রানী বসে আছে চুল বাতাসে উড়ছে, হাত রাখা জয়ের কোমরে  আপাত দৃষ্টিতে রানীর চেহারা নির্লিপ্ত মনে হলেও ভেতর একটা দ্বন্দ্ব চলছে , তার আভাষ হঠাত হঠাত ই ভেসে উঠছে ।
 
একটু পর জয় বলে ওঠে রানী, তোর কাছে কেমন লেগেছে, সত্যি করে বল 
 
রানী কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু স্বরে বলে, ভালো না  যদিও রানীর মন বলছে ওর ভালো লেগেছে , সুধু ভালই লাগেনি , এমন অভিজ্ঞতা আজ  পর্যন্ত  ওর জীবনে আসেনি  ।  রানী যদি বলতো ওর ভালো লেগেছে , তবুও ওর মনের কথা পুরো পুরি প্রকাশ পেতো না । তবে রানীর মন জুড়ে সুধুই এই ভালোলাগার অনুভূতিটার একক আধিপত্য নেই , সেখানে কিছুটা ভয় ও বসবাস করছে । আধিপত্যর জন্য লড়াই করছে , নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে ।  
 
জয় মৃদু আত্মবিশ্বাসী হাসি হাসে , বলে তোকে বললাম সত্যি করে বল , আর তুই একদম ডাহা মিথ্যা বললি!!”
 
জয়ের অভিযোগ শুনে রানী হাসে।
 
রানী জানে জয়ের আর ওর এই সম্পর্ক কেউই স্বাভাবিক ভাবে নেবে না, অন্তত এই মুহূর্তে তো নয় ই । ওদের দুই পরিবারের সুধু একজন সদস্য ওদের এই ব্যাপারটা জানে । সে হচ্ছে জান্নাত , আর এই কয়দিনে জান্নাত রানীকে আড়ে ঠারে বেশ কয়েকবার বলার চেষ্টা করেছে , রানী যেন জয়ের পাল্লায় পরে নিজের পড়াশুনার ক্ষতি না করে ।  বার বার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে , রানীর উপর ওর আব্বু আর রাজীবের প্রত্যাশার কথা । এই নিয়ে রানী নিজেও বেশ কিছুটা চাপে আছে । রানী এও জানে ওর আব্বু হয়তো মুখ কিছু বলবে না , কিন্তু মনে মনে কিছুটা দুঃখ পাবে , আর রাজীব , রাজীব হয়তো খুব রিয়েক্ট করবে । আজকাল জয়ের প্রতি রাজীবের দৃষ্টিভঙ্গি আগের মত নেই ।  
 
কিরে? সত্যি করে বলনা , এই যে তোকে হাইজ্যাক করে নিয়ে এলাম , তোর কেমন লাগলো”  জয় আবার জিজ্ঞাস করে
 
  জয়, আমি চাই আমাদের দিকে কেউ যেন আঙুল তুলতে না পারেকেউ যেন বলতে না পারে জয় রানীর সম্পর্ক ওদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেআমি সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমরা একে অপরের জন্য ক্ষতিকর নাআমরা একে অপরের জন্য বাধা না হয়ে এগিয়ে যাওয়ার মোটিভেশন হতে চাই আমি আরো চাই আমরা ধৈর্যের সাথে সুন্দর একটা জীবন গঠন করবো  কথা গুলো রানী বেশ আবেগ মিশিয়ে বললেও ওর গলা কাঁপে না , তার বদলে একটা শান্ত দৃঢ় ভাব থাকে ।
 
রানীর কথা গুলো জয় খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে , বাধা দেয়না । জয়ের চোয়াল কিছুটা শক্ত হয় , নাহ,  রাগে বা বিরক্তিতে নয় । যেন মনে মনে দৃঢ় সংকল্প বাধছে  ।
 
  
জয় হালকা হেসে,  বলে,আমার কাছে জীবন মানে কী জানিস?” 
 
কি?” রানী মৃদু স্বরে বলে ।  
 
বাতাসে রানীর চুল উড়ে এসে জয়ের গালে লাগে 
 
 জীবন মানে অতীত নয়, জীবন মানে ভবিষ্যৎও নয়জীবন হচ্ছে আজ, এখন, এই মুহূর্তযদি জীবনটা সুন্দর করে বাঁচতে চাস, তাহলে এই মুহূর্তটা উপভোগ কর অতীতকে আঁকড়ে ধরে নয়, ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে নয়তবেই জীবন সার্থক হবে, সুন্দর মনে হবে , বাঁচতে ইচ্ছে হবে অনেকদিন  
 
রানী চুপ করে যায়ওর চোখে রোদের প্রতিফলন পড়ে  এক হাতে নিজের অবাধ্য চুল গুলোকে জায়গা মতন ফিরিয়ে নিয়ে আসে ।
 সারা জীবন ও শুনেছে ভবিষ্যতের জন্য বাঁচতে হয়, অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হয়, আজকে সঞ্চয় করতে হয় আগামী কালের জন্য 
 
কিন্তু জয়ের কথা যেন সেই সমস্ত শেখা ধারণাগুলোর ভিত কাঁপিয়ে দিলোওর মনে হয় সত্যিই তো, এই যে এত সুন্দর মুহূর্ত,
ও যেন ঠিকমতো অনুভবই করতে পারছে নামন ভরে আছে ভবিষ্যতের চিন্তায় পরীক্ষা, ক্লাস,  এসব চিন্তা ওর কাছ থেকে বর্তমানের সুখ চুরি করে  নিচ্ছে, ওর অজান্তেই 
 
 
রানী মৃদু স্বরে বলে , “ তবুও ভয় হয় , আমার ভবিষ্যতের জন্য তোমাকে কেউ দায়ি করুক আমি সেটা চাই না জয়”  
 
কে কি ভাবছে, তার কোনো মূল্যই আমার কাছে নেইতুই কি ভাবছিস, সেটাই আমার জন্য ইম্পরট্যান্টতোর কাছে কি মনে হয় আমি তোর ভবিষ্যতের জন্য হানিকারক?”   
 
জয়ের কণ্ঠে ছিলো দৃপ্ত প্রত্যয়, যা রানীকে দারুন প্রভাবিত করে ,  রানী হালকা শ্বাস ফেলে বলে,তুমি-ই আমার ভবিষ্যৎ জয় 
 
জয় হেসে মাথা নাড়ায়, বাতাসে ওর চুল উড়ে , রানীর বলা ঐ ছোট্ট বাক্যটা যেন শীতের অস্বস্তিকর শীতল বাতাসে আরামদায়ক উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে , এমন মনে হয় ওর কাছে । নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস উথলে ওঠা টের পায় , নিজেকে এই মুহূর্তে দুনিয়ার বাদশা মনে হয় ।  
 
আর তুই আমারআমরা নিজেরা ঠিক করবো আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবেআর কাউকে আমাদের মাঝে নাক গলাতে দেবো না, কোনোদিন না 
 
জয়ের এই আত্মবিশ্বাসের ছিটা যেন রানীর শরীরে এসেও পরে , রানী জয়ের জন্য আনন্দিত হয়ে , মনে মনে ভাবে , এই ছেলেটাকে সবাই হালকা ভাবে নেয় , কেউ একে ঠিক বুঝতে পারে না । রানী সিধান্ত নেয় আজ থেকে ও জয় কে বুঝতে চেষ্টা করবে , রানী একটু চুপ থেকে বলে,
 
জয়…”
 
হুঁ?”
 
তোমার সাথে থাকলে জীবনটা অনেক সহজ মনে হয়সত্যিই কি জীবন এমন সহজ?”
 
জয় একটু হেসে রাস্তায় চোখ রেখে বলে,
 
কিছুদিন পর তুই নিজেই বুঝে যাবিআর কটা দিন আমার সাথে থাক,তোকে এতদিন যা শেখানো হয়েছে,আমি সেগুলো একটা একটা করে উপড়ে ফেলবো তখন দেখবি জীবন আসলে অতটা কঠিন নয় যতটা আমরা ভাবি
 
রানীর গলায় একরকম প্রশান্তির কম্পন, সেই সাথে প্রবল আকুতি  আমিও তাই চাই জয়তোমার সাথে আমি জীবন উপভোগ করতে চাইআমার কাছে মনে হয়, আজ পর্যন্ত আমি জীবন কী সেটাই দেখিনি দেখেছি শুধু কিছু অতীতের দুঃখ, ভবিষ্যতের আশ্বাস,আর বর্তমানের সংগ্রাম তুমি আমাকে জীবন কি সেটা সেখাও , আমাকে বাঁচতে শেখাও  রানী জয়ের পিঠে পরম নির্ভরতায় মাথা রাখে , হাত দুটো দিয়ে জয়ের বুকের কাছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । রানীর বুক লেপ্টে থাকে জয়ের পিঠে ,একে অন্যের হার্ট বিট অনুভব করে  হৃদয় দিয়ে । রানীর মনে হয় জয়ের হার্টের প্রতিটা বিট ওকে বলছে আমি আছি তোর জন্য , আর কারো দরকার নেই
 
বাইকটা এগিয়ে চলে দূরে কিছু পাখি উড়ছে, বাতাসে হালকা ধুলো উড়ছে
দুজনের ছায়া লম্বা হয়ে মিশে যায় রাস্তায়চারপাশে শুধু রোদ, বাতাস, আর এক শান্ত দুপুর  জীবন যেন সত্যিই সহজ মনে হয়
 
****
 
রাজীব কেঁদেই চলেছেচোখের জল যেন থামতেই চায় নাজান্নাত চুপচাপ রাজীবের এক বাহু ধরে দাঁড়িয়ে আছেনিঃশব্দ সান্ত্বনার মতোচারপাশের মানুষজন কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে; কারো চোখে সহানুভূতির ছোঁয়া, কারো চোখে নিছক কৌতূহলকিন্তু এসব রাজীবের কাছে অর্থহীনওর কান্না শুধু আব্বুর অসুস্থতার জন্য নয়ওর মনে হচ্ছে, আব্বুর কিছু হয়ে গেলে পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়বে  নিজেইসেই নির্মম, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কাই যেন রাজীবের বুক ফুঁড়ে কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে 
 
রাজীবকে এভাবে কাঁদতে দেখে জান্নাতের বুকটাও কেমন করে উঠছেকী বলবে? কীভাবে সান্ত্বনা দেবে? ওর ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে[i][/i]তুই কাঁদিস না রাজীব, তুই কাঁদলে আমার জগৎটাই এলোমেলো হয়ে যায়আমি নিজেকে সামলাতে পারি না[i][/i]
কিন্তু ও বলতে পারে না , চুপ করে থাকেবলতে না পারার সেই যন্ত্রণা জান্নাতকে আরও বেশি অসহায় করে তুলছেআজ ওর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছেঅধিকারহীন ভালোবাসার চেয়ে অসহায় আর কিছু নেই এই পৃথিবীতে 
 
ওর মনে হয়, যদি পারত, তাহলে সেই কবির সামনে গিয়ে দাঁড়াতোসেই কবি, যিনি লিখেছিলেন [i][/i]ভালোবাসা মানে শুধু বলা ছোঁয়া বা অধিকার নয়, ভালোবাসা থাকে কাঁপা ঠোঁটে, চোখের আড়াল করা দৃষ্টিতে[i] [/i]জান্নাত আজ বলতে চায়[i][/i]দেখো, তোমার কাঁপা ঠোঁটের ভালোবাসার কী পরিণতি! এমন ভালোবাসা আমি চাই নাআমার চাই বুকে জড়িয়ে ধরার অধিকার, চাই দুঃখ ভাগ করে নেয়ার অধিকার 
 
জান্নাত রাজীবের চোখের দিকে তাকিয়ে ধীরে বলেরাজীব, নিজেকে শক্ত করতুই যদি এভাবে ভেঙে পড়িস, তাহলে রানী কী করবে?”  
 
কিছুটা কাজ হয় , জান্নাত জানতো কাজ হবে । রানীর কথা উঠলেই রাজীব এলারট হয়ে ওঠে , যেন কেউ কোন অদৃশ্য সুইচ টিপে দেয় । যদিও ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয় , তবুও জান্নাত রানীকে কিছুটা হিংসা না করে পারে না । নিজেকে রানীর জায়গায় রেখে রাজীবের এমন অখণ্ড মনোযোগ পাওয়ার লোভ হয়   । কিন্তু নিজের এই অনুভূতি সফল ভাবে লুকিয়ে রাখে জান্নাত ,
 
তুই যদি এভাবে কাঁদিস , তাহলে রানী কি করবে ? আর ডাক্তার তো বলে গেলো , এটা মাইল্ড , ছোট আব্বুর কিছুই হবে না , দু দিনে বাড়ি যেতে পারবে”  নিজের গলা যতটা সম্ভব শান্ত রেখে জান্নাত রাজীব কে খুব ধিরে ধিরে নিচু স্বরে কথা গুলো বুঝিয়ে বলে।
বেশ কিছুক্ষন পর , রাজীব কিছুটা ধাতস্ত হয় , নিজেকে সামলে নিতে থাকে , জান্নাত বুঝতে পারে রাজীবের ভেতর এখনো ঝড় চলছে , কিন্তু রাজীব নিজের ডিফেন্স মেকানিজম একটিভ করে দিয়েছে , যা এতক্ষণ ছিলো না । এখন ওকে দেখে মনে হচ্ছে , নিজেকে এভাবে সবার সামনে এক্সপোজ করে বেশ লজ্জিত ও ।
 
একটু পানি খাবি? আমি নিয়ে আসছিএই বলে জান্নাত রাজীবের সামনে থেকে চলে আসে । আসলে রাজীব কে একটু সময় দেয়ার জন্যই ও এই কাজ করেছে । নইলে জান্নাতের ওভার সাইজ সাইড ব্যাগে পানির বোতল একটা থাকে ।  
 
যদিও জান্নাতের মুল ইচ্ছা ছিলো রাজীব কে কিছুটা স্পেস দেয়া । কিন্তু রাজীবের কাছ থেকে একটু দূরে আসার পর মনে হলো । এই স্পেস টুকু ওর নিজের জন্যই দরকার ছিলো । জান্নাতের চোখ দুটো হলকা ভিজে ওঠে । রাজীবের অমন কান্নারত অবস্থা দেখে ও নিজেও খুব স্থিতিশীল অবস্থায় নেই । অনেক কষ্টে নিজেকে রাজীবের সামনে স্থির রেখেছিলো ।
 
মাঝে মাঝে জান্নাতের নিজের উপর বিরক্তি আসে , কেন এই ছেলেটার জন্য ওর মনে এতো মায়া হয় । আর সবার মত কেন ও রাজীব কে ইগ্নোর করে যেতে পারে না । ওর কিসের এতো ঠ্যাকা । কে হয় রাজীব ওর , কিছুই না , সুধুই প্রতিবেশী । বেশ কিছুক্ষন জান্নাত এভাবেই মনের ঝাল মেটায় । কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে লক্ষ্য করে , এতে রাজীবের প্রতি ওর মমতা কমার বদলে আরো বাড়ছে । নিঃসঙ্গ দায়িত্বের ভারে নুয়ে পরা এই বোকা ছেলেটার জন্য ওর হৃদয় নতুন নতুন মায়ার জন্ম দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ।  সেই মায়া তরলে রুপান্তর হয়ে চোখ বেয়ে বেড়িয়ে আসতে চায় । কিন্তু জান্নাত সেই সুযোগ দেয় না । বেশ কয়েকটি লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্থির করে । তারপর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে রাজীব যেখানে ছিলো , সেখনে ফিরে আসে ।
 
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 02-11-2025, 08:16 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)