02-11-2025, 12:22 AM
নিয়োগ পর্ব ২০
ঘড়ি ঢং ঢং শব্দ দু' বার বাজিয়ে জানান দিল দুপুর দুটো বেজে গ্যাছে। মাধবী আস্তে আস্তে নিজের শরীরটা বিছানা থেকে তুললো। পাশে সমরেশ অকাতরে ঘুমোচ্ছে।
নগ্ন শরীর নিয়ে খাট থেকে নামলো। এগিয়ে গেল আলমারির দিকে। সামনেই পড়েছিল বাছাই করা নিরুপমার কালো শাড়িটা, যেটা সমরেশ পড়তে না দিয়েই ফেলেছিল তাকে বিছানায়।.. সেই শাড়িটা তুলে সায়া ব্লাউজ সমেত পড়ে নিল। দোরগোড়ায় পড়ে থাকা পাজামাটাকে পাশ কাটিয়ে দরজা হতে বাইরে পা বাড়িয়ে সিঁড়ি ধরলো। নিচে নেমে এসে ভালো করে চারদিকটা দেখে নিল আগে। এই বাড়ি তার কাছে এক বিভীষিকায় পরিণত হয়েছিল। ভয় লাগছিল কখন আবার কে চলে আসে আগুন্তুক হয়ে!..
কলতলার দিকে হাঁটা দিল মাধবী। সেখানে গিয়ে কলপাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা নিজের বস্ত্র গুলো জড়ো করে বালতিতে ভরলো। অন্যমনস্ক লাগছিল তাকে। কি যেন একটা ভেবে চলেছে। বালতিতে জল ভরে প্রথমে জলকাচা করে নিল। দেখলো তাতে নোংরা দূর হওয়ার নয়। তাই বাড়িতে ঢুকে খুঁজতে লাগলো কাপড় কাঁচার সাবান। বেশি খুঁজতে হলনা। নিচের তলার বাথরুমেই ছিল সেটা। নিয়ে এল সেখান থেকে। কলপাড়ে বসে ভালো করে কাপড়গুলো কাচতে লাগলো। কেচে নিয়ে শুকোতে দিতে গেল ছাদে।
ছাদে উঠে দেখে উত্তর দিকে পাশের বাড়ির ছাদে কচি কচি দুটো ছেলে মেয়ের সাথে এক বধূ কিত্ কিত্ খেলা খেলছিল। মাধবীকে দেখতেই সে খানিক অবাক হল, কিন্তু সৌজন্যমূলক হাসি দিল। মাধবী কি করবে তা বুঝে পেলো না। চোখ নামিয়ে নিল। পাশের বাড়ির বধূ কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসলো, "তুমি কে গো?"
মাধবীর পক্ষে আর এড়ানো সম্ভব হলোনা। আমতা আমতা করে বললো, "আঃ আমি... মানে.... আমি নিরুপমা দিদির বোন।"
"ওহঃ.... তাই?? কোথায় থাকো? কবে এলে? এ বাড়িতে তো সমুদা-কে ছাড়া সচরাচর কাউকে থাকতে দেখিনা। নিরুদি যাওয়ার পর মানুষটা আর বিয়ে থাওয়াও করেনি। একাই থাকে.. তবে বড্ড ভালো মানুষ গো। আমাকে খুব ভালোবাসে.. মানে বড্ড স্নেহ করে....", একনাগাড়ে বলে গেল করবী।
কথা বার্তা শুনে বোঝা যাচ্ছিল তার সমরেশকে খুব মনে ধরে। তাই মাধবীর আকস্মিক উপস্থিতি তাকে খানিক বিচলিত করেছে। সমরেশ মানুষটাই সেরকম। তার উপর সবাই অধিকার ফলাতে চায়, জেনে বা না জেনে।
মাধবী বুঝতে পারলো পাশের বাড়ির বউও নীরবে সমরেশের মোহে হাবুডুবু খায়। সে মেয়েটির ঈর্ষা ত্বরান্বিত করে তুলতে বললো, "আমি সমুদা-র নিজের শালী নই। নিরুপমা দি আমার পাতানো দিদি। তাই আপনার সমুদা-র চোখে আমি তার পরম বন্ধু, বোন সমান শালী নই।"
"ওহঃ, তাই?? তা তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি?"
"দেখবেন কি করে, এই বাড়িতে আমার অত ঘন ঘন আসা যাওয়া তো নেই। আমি থাকি সুদূর বক্সারে। কয়েকদিনের জন্য কলকাতায় এসে উঠেছি, তাই ভাবলাম সমুদা-র সাথে দেখা করে যাই।"
"বক্সার, মানে বিহার? সেখানে তো শুনেছি অনেক হিংসে হানাহানি হয়! রোজ আনন্দবাজারে পড়ি।"
"হ্যাঁ তো, নক্সালদের আখড়া সেটা। তাছাড়া জাতিগত বিদ্বেষ তো রয়েইছে।...."
"তা বাপু কিভাবে থাকো সেথা? ভয় করেনা?"
"মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছি তখন অত ভয় করলে চলে? আমাদের জন্য তো নিজের ঘরটাও কখনো কখনো নিরাপদ হয়ে ওঠেনা।"
"তা ঠিক বলেছো?.. আচ্ছা, কতদিন থাকবে এখানে?"
"আমি তো এখানে থাকতে আসিনি। আমি তো ওই প্রোমোটার মানিক মিত্তিরের আস্তানায় উঠেছি। ওনার সাথে সমুদার বাড়ি নিয়ে ঝঞ্ঝাট চলছে, তাই মধ্যস্থতা করতে এসেছি।"
"তুমি মানিক মিত্তিরের লোক?"
"লোক নই গো, সখি। একেবারে নিকটতম সখি।"
রায় বাড়ির ছোট বউটা অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে তাকাচ্ছিল মাধবীর দিকে, যখন সে শুনলো মাধবী নাকি মানিকের খাস পাত্রী।.. কিন্তু মাধবী নিজের এরকম উদ্ভট পরিচয় দিল কেন? পরিচয় গোপন করা যদি জরুরি ছিল তখন নিরুপমার বোন বলেই ক্ষান্ত দিতে পারতো, মানিকের সাথে মিছিমিছি পাতানো সম্পর্ক দেখাতে গেল কেন সে??
"যাই বলো বাপু, আমার কিন্তু মনে হয়না সমুদা এই বাড়িটা ওই মানিক বাবুকে দেবে? সেই কবে বিয়ে হয়ে এই পাড়ায় এসছি। না না করেও প্রায় ছয় বছর হয়েগেল। নিজের চোখে দেখেছি কত লোকের কত প্রলোভন এই বাড়িটা নিয়ে। কিন্তু আমার সমুদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রাণ যাবে কিন্তু বাড়ি যেতে দেবে না। কত পুরোনো এই বাড়ি, কত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, খামোখা ফ্ল্যাটবাড়ি করতে যাবেই বা কেন? আমি হলেও নাই করতাম।"
"হুমঃ! সমরেশের তো সেরকমই ভাবনা। কিছুতেই বাড়ি দেবে না। এবার আমি পড়েছি ফাঁপড়ে। আমি তো দুজনেরই খুব কাছের। একজনের বন্ধু তো অপরজনের সখী। কার কথা কার কাছে রাখবো সেটাই বুঝতে পারছি না!"
-- সমুদা থেকে একেবারে সমরেশ? যা আমি এত বছরে নিজেকে সেই জায়গায় তুলতে পারলাম না সেখানে কিনা এই মেয়েছেলেটা কয়েক বাক্যের বিনিময়েই এই দুঃসাহস দেখালো? তাও আবার আমার সামনে!!.... -- মনে মনে তেঁতে উঠলো করবী। তবু নিজের রাগ মনের জোরপূর্বক দমন করে মাধবীকে জিজ্ঞেস করলো, "তা তুমি এয়ো নাকি আইবুড়ো?"
কলের জলে মাথার সিঁধুর মুছে গেছিল। আর হাতের চিহ্ন গুলো শাড়ির আঁচলে ঢাকা পড়েছিল। তাই নিজেকে আইবুড়ো দেখাতে কোনো বাধা নেই মাধবীর। নাহলে যে আরো প্রশ্ন ধেয়ে আসবে তার দিকে তাকে অপ্রস্তুত করতে।
"না না, আমার আবার বিয়ে? আমার কি সেভাবে কোনো ঠিক ঠিকানা আছে? যখন যার দরকার পড়ে, তার আশ মেটাতে চলে আসি.."
"মানে? কি করো তুমি?"
"ওই যে বললাম, ব্রোকারির কাজ করি, কাঁচা বাংলায় যাকে বলে দালাল।"
"মেয়েছেলে দালাল??"
খিলখিলিয়ে হেসে উঠে মাধবী বললো, "কেন হতে পারেনা? আজ কাল মেয়েরা কি না পারে? আমাদের রাজ্যেই তো একটা মেয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার তোড়জোড় চালাচ্ছে। মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার জন্যও এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়ে তৈরি হচ্ছে নাসাতে। তাহলে দালালির প্রফেশনটাও বা বাদ যায় কেন? সেখানে নাহয় আমি ছাপ ফেলে যাই...."
"কি জানি বাবাঃ! বিংশ শতাব্দী এখন শেষ লগ্নে এসে পৌঁছেছে। একবিংশ শতাব্দী কি যুগ নিয়ে আসতে চলেছে কে জানে? আমি বরং যাই, মেলা কাজ পড়ে রয়েছে।.. এই সিধু, পাপড়ি.... চল আমার সাথে।.."
"ওরা কে? সেটা তো বললে না...."
"এরা আমার বড় জা এর দুই ছেলে মেয়ে।"
"আর তোমার?"
মাধবীর প্রশ্ন শুনেই করবীর মুখের হাসিটা যেন মিলিয়ে গেল। মাথা নিচু করে বললো, "এখনো হয়নি।...."
"তুমি তো এক্ষুনি বললে প্রায় ছয় বছর হয়েছে তোমার বিয়ে করে আসার, তাহলে?"
"তাহলে কি? কপালে না থাকলে কি আর জোর করে হয়? শাশুড়ি মা তো বলেই খালাস, নাতি চাই নাতি চাই। আসবে কোত্থ থেকে? গাছ থেকে? নাতি আনতে হলে বউয়ের সাথে সাথে ছেলেকেও সমান তাগাদা দেওয়া দরকার। কিন্তু কে তা বলবে? মানুষটা তো আমার কাছেই আসতে চায়না। মন দিয়েছে নিষিদ্ধ পাড়ায়। সবকটা পুরুষ এক একজন শিশুপাল, শত পাপ তাদের মাফ! যাই হোক, আমি এখন যাই.... সমুদা কে বলো বাড়িটা যেন বিক্রি না করে, নাহলে যে চোখের দেখাটাও আর জুটবে না...."
মুখ ফস্কে অনেক কথাই বললো, শেষে মনের কথাটাও বেরিয়ে এল করবীর ঠোঁট থেকে। অপর দিকে মাধবী যেন নিজেরই এক প্রতিবিম্বকে সামনে থেকে চাক্ষুস করছিল। করবী আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বাচ্চা দুটোকে নিয়ে চলে গেল। মাধবী তারপর নিজের কাপড়চোপড় ছাদে মেলতে লাগলো। মেলে সেও নিচে নেমে আসলো। সমরেশ তখনো ঘুমোচ্ছে। ভাবলো এই সঠিক সময় বিডন স্ট্রিটে যাওয়ার। সেখানে একজন নিশ্চই তার জন্য হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছে অপেক্ষারত হয়ে।
পা টিপে টিপে মাধবী সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো, যাতে সমরেশের নিদ্রাভঙ্গ না হয়। দেখলো সোফার উপর পড়ে রয়েছে বাড়ির দলিলটা। সমরেশ সেটা ফেলেই মাধবীর পিছনে ছুটেছিল উপরে। মাধবী সেটা তুলে একবার চোখ বোলালো। নিচের উত্তর-পূর্বের সেই শোয়ার ঘরে গিয়ে সাবধানে নিরাপদ এক স্থানে সেটা গুছিয়ে রেখে দিল। ফিরে এসে ডাইনিং টেবিল থেকে নিজের হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে আস্তে করে সদর দরজাটা খুলে বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। ঠিক তখুনি সমরেশের ঘুমটা ভাঙলো।
ঘোরের মধ্যে পাশে হাত ঘুরিয়ে তার প্রেয়সীকে খোঁজার চেষ্টা করলো। দেখলো বিছানা খালি। সে ব্যতীত অন্য কেউ নেই। ভালো করে চোখ খুলে উঠে বসলো। প্রথমে এদিক ওদিক তাকালো। ছটফটানিতে পায়ের ধাক্কায় সেই উত্তর-পূর্বের ঘরের বিছানার চাদর যা মাধবী নিজের গায়ে জড়িয়ে ছিল, তা বিছানা থেকে পড়ে গেল। সেটা খেয়াল করতে মেঝেতে তাকাতেই দেখলো, নিরুপমার সেই কালো শাড়িটা মেঝেতে পড়ে নেই। তার মানে মাধবী সেটা গায়ে দিয়েছে। কিন্তু সে কোথায়??


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)