Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ছায়ার আড়ালে আগুন -Crime Thriller [Part-2: দ্য গ্যাংওয়ার]
#27
গল্প: "ছায়ার আড়ালে আগুন" (পার্ট-২: গ্যাংওয়ার)

একবিংশ পরিচ্ছেদ: পায়ের ছাপে রক্তের ছায়া

সকাল ছ'টা বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে, কলকাতার ফাইভ স্টার হোটেলের বেসমেন্ট পার্কিংয়ের অন্ধকার কোণায় একটা অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা ভেঙে পড়ল। হোটেলের সিকিউরিটি চিফ রণজিৎ সিং, তার ৫০ বছরের শক্ত শরীরে ঝকঝকে নীল ইউনিফর্ম, একটা হ্যান্ডহেল্ড টর্চের তীক্ষ্ণ আলোয় এগোচ্ছিল। তার পেছনে দুজন তরুণ সিকিউরিটি গার্ড—অমিত আর রাহুল—তাদের হাতে ওয়াকি-টকি কাঁপছিল, তাদের মুখে ঘামের ফোঁটা। বাতাসে একটা তীব্র, ধাতব, লৌহ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল—তাজা রক্তের গন্ধ, যা রণজিতের নাককে চিনচিন করে তুলল। "কী গন্ধ এটা?" অমিত ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে ভয়ের ছোঁয়া। রণজিৎ হাত তুলে চুপ করাল, তার চোখ সরু হয়ে গেল। তারা একটা লাল মার্সিডিজের পেছনে পৌঁছতেই দৃশ্যটা দেখে থমকে গেল। মুম্বাইয়ের কুখ্যাত ড্রাগ লর্ড ভিক্টর মেহতা, তার দামি ইতালিয়ান স্যুটে রক্তের গাঢ় দাগ ছড়িয়ে, মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। তার গলায় একটা গভীর, পরিষ্কার ছুরির কাট—যেন একটা পেশাদার হাতের কাজ—রক্ত এখনও মৃদু বুদবুদ করছে। তার চোখ দুটো খোলা, কালো পিউপিলে মৃত্যুর আগ মুহূর্তের আতঙ্ক জমে আছে, যেন সে কোনো বিশ্বাসঘাতকের মুখ দেখে ফেলেছে। তার ডান হাতের কাছে একটা ছোট কালো ডায়েরি পড়ে আছে, পাতা খোলা—"চম্পা বেইমান। ডিল ভেঙেছে।" লেখা, ভিক্টরের কাঁপা হাতের অক্ষরে।

রণজিৎ হাঁটু গেড়ে বসল, তার গ্লাভস পরা হাত মৃদু কাঁপছিল। সে মৃতদেহের পাশে মেঝে স্পর্শ করল—সেখানে একটা স্পষ্ট, তাজা পায়ের ছাপ। মজবুত গঠন, অথচ চকচকে সুন্দর, দীর্ঘ সুগঠিত পায়ের আঙুলগুলো পরিষ্কার, মসৃণ, যেন একটা মার্বেল মূর্তির অংশ। ছাপটা রক্তে হালকা লালচে, কিন্তু আকৃতি অটুট। রণজিতের মনে একটা ঝলক—পার্টির সময় সে চম্পাকে দেখেছে, তার কালো ত্বকের নিচে সেই দীর্ঘ পায়ের আঙুল, নুপুরের ছনছন শব্দ, তার হাঁটার মধ্যে একটা রাজকীয় আভা। "এটা... চম্পার পা," রণজিৎ ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে একটা শীতল নিশ্চিততা। সে ছাপের চারপাশে আলতো ছুঁয়ে দেখল—না, এটা জুতোর নয়, খালি পায়ের। অমিত তার ফোন বের করে ছবি তুলল, রাহুল ওয়াকি-টকিতে ফিসফিস করল, "চিফ, এটা খুন। ড্রাগ লর্ড ভিক্টর।" রণজিতের মাথায় ঝড়—চম্পা কেন? ভিক্টর তার সঙ্গে ডিল করছিল, কিন্তু বেইমানি? সে উঠে দাঁড়াল, তার চোখে একটা জ্বলন্ত সন্দেহ। "কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই, কিন্তু এই ছাপ... এটা তার স্বাক্ষর। ক্যামেরা চেক করো—এখনই!"

তারা তিনজনে সিকিউরিটি রুমে ছুটল, দরজা বন্ধ করে মনিটরের সামনে ভিড় করল। রণজিৎ কীবোর্ডে আঙুল চালাল, বেসমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজ রিওয়াইন্ড করল। সময়: রাত ৪:৪৫। দৃশ্যটা শুরু হল—কিন্তু সুক্ষ্মভাবে আড়াল করা। একটা কালো ছায়া ক্যামেরার লেন্সের সামনে দিয়ে যাচ্ছে, যেন কেউ ইচ্ছে করে একটা কালো কাপড় বা প্লাস্টিকের শীট ঝুলিয়ে রেখেছে, লেন্সের অর্ধেকটা ঢেকে। খুনের মুহূর্তটা অস্পষ্ট—শুধু একটা দ্রুত ছুরির ঝিলিক, রক্তের ছিটে মেঝেতে, আর একটা মৃদু চিৎকারের প্রতিধ্বনি। কোনো মুখ দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু পায়ের ছাপ রাখার মুহূর্তটা স্পষ্ট—একটা খালি পা মেঝে স্পর্শ করছে, রক্তে ডুবিয়ে। "কে করেছে এটা? ক্যামেরা আড়াল করা মানে প্ল্যানড," রাহুল বলল, তার মুখ ফ্যাকাশে। রণজিৎ ফুটেজ ফাস্ট ফরওয়ার্ড করল—রাত ৫:১৫। বেসমেন্টের গেট দিয়ে একটা কালো রেঞ্জ রোভার বেরিয়ে যাচ্ছে, তার টায়ারে রক্তের দাগ। গাড়ির ভিতরে চারটা ছায়া স্পষ্ট: চম্পা সামনে, তার কালো ত্বক আর নুপুরের ঝিলিক; শিবু ড্রাইভার সিটে, তার পেশীবহুল কাঁধ; নাসির পিছনে, তার ফর্সা মুখ উত্তেজিত; পাওলিনা তার পাশে, তার সোনালি চুল উড়ছে। গাড়ি গেট ভেঙে বেরিয়ে যায়। রণজিতের দাঁত কিড়মিড় করল। "এরা... এরাই। চম্পা, তার ছেলে, নাসির, আর সেই বেলারুশীয় মেয়ে। পায়ের ছাপ ফরেনসিকে পাঠাও—ডিএনএ, প্রিন্ট, সব। আর পুলিশকে খবর দাও। হোটেল লকডাউন করো—কেউ বেরোবে না!" তার মনে একটা ঝড়—চম্পা ভিক্টরকে খুন করেছে বেইমানির জন্য, কিন্তু পায়ের ছাপ রেখে সবাইকে ফাঁসাতে চেয়েছে। রুবিনা এখন ভাববে তার অ্যালাই মারা গেছে, পুলিশ চম্পাকে খুঁজবে। কিন্তু চম্পা জানত না—এই ফাঁদ তার নিজের জন্যও হতে পারে।

অন্যদিকে, কালো রেঞ্জ রোভারটা কলকাতার সকালের কুয়াশাময় রাস্তায় ছুটছিল, তার ইঞ্জিনের গর্জন শহরের ঘুম ভাঙাচ্ছিল। চম্পা সামনের সিটে বসে, তার কুচকুচে কালো ত্বক সকালের ম্লান আলোয় একটা গভীর, রহস্যময় আভা ছড়াচ্ছিল। তার ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মিডিয়াম চেহারা একটা কালো হাউসকোটে ঢাকা, যা তার শরীরের বাঁকে আলতো লেপ্টে ছিল। তার চোখে গাঢ় কাজল, তার ঠোঁটে রক্তলাল লিপস্টিকের অবশেষ, তার হাতে পান্নার আংটি আর সোনায় বাঁধানো শাঁখা-পলা ঝিলিক দিচ্ছিল। তার দীর্ঘ, সুগঠিত পায়ের আঙুল গাড়ির ফ্লোরে টোকা দিচ্ছিল, তার গোড়ালির রুপোলি নুপুর মৃদু ছনছন শব্দ তুলছিল, যেন একটা বিজয়ের সুর। শিবু ড্রাইভ করছিল, তার ১৯ বছরের কুচকুচে কালো ত্বক আর দীর্ঘদেহী, পেশীবহুল শরীর টেনশনে শক্ত হয়ে আছে, তার চোখ রাস্তায় স্থির, কিন্তু মনে একটা কাঁপুনি। "মা, ভিক্টরকে শেষ করলেন কেন? এটা তো ঝুঁকি," শিবু জিজ্ঞাসা করল, তার কণ্ঠে ছেলেমানুষি উদ্বেগ। চম্পা হাসল, তার হাসিতে একটা ধূর্ত, বিষাক্ত মাধুর্য। "বেইমানি করেছিল, ছেলে। আমার অর্ডারের অর্ধেক টাকা রুবিনার গ্যাংকে দিয়ে দিয়েছিল। আমি শুধু আমার অধিকার নিয়েছি—আর একটা ফাঁদ পেতেছি। পায়ের ছাপ রেখেছি, যাতে সবাই আমাদের দিকে তাকায়। রুবিনা এখন ভাববে তার লোক মারা গেছে, পুলিশ আমাদের খুঁজবে। কিন্তু আমরা ততক্ষণে পরের পদক্ষেপ নেব।"

পিছনে নাসির বসে, তার ২৯ বছরের ফর্সা, সুদর্শন মুখে একটা উত্তেজিত হাসি, তার দীর্ঘ, মজবুত শরীরে একটা গ্লক পিস্তল হাতে। তার চোখে চম্পার প্রতি একটা অন্ধ ভালোবাসা। পাওলিনা তার পাশে, তার ২১ বছরের ফর্সা, স্লিম শরীরে একটা টাইট জিন্স, তার সোনালি চুল খোলা, তার নীল চোখে একটা দুষ্টু, মুগ্ধ ঝিলিক। "চম্পা, তুমি জিনিয়াস," পাওলিনা বলল, তার বেলারুশীয় অ্যাকসেন্টে একটা মিষ্টি সুর। হঠাৎ সামনে একটা ব্লকেড—দুটো কালো এসইউভি, রাস্তা আটকে। চারজন গুণ্ডা বেরিয়ে এল, তাদের হাতে AK-47, মুখে কালো মাস্ক। "থামো, চম্পা!" একজন চিৎকার করল, তার কণ্ঠে রুবিনার আদেশের ছোঁয়া। শিবু ব্রেক কষল, গাড়ি স্কিড করে থামল, টায়ারের ধোঁয়া উঠল। চম্পা তার চোখ সরু করল। "রুবিনার লোক—ভিক্টরের সঙ্গে তার চুক্তি ছিল। এরা প্রতিশোধ নিতে এসেছে।"গুণ্ডারা গুলি ছুঁড়ল—বুলেট গাড়ির উইন্ডশিল্ডে লাগল, কাচের টুকরো ছড়িয়ে পড়ল। শিবু দরজা খুলে ঝাঁপ দিল, তার পেশীবহুল শরীর একটা ছায়ার মতো ছুটল। সে প্রথম গুণ্ডার কাছে পৌঁছে তার গলা ধরে ছুরি চালাল—গভীর কাট, রক্তের ফোয়ারা বেরিয়ে এল, গুণ্ডা গোঙাতে গোঙাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, তার AK মেঝেতে পড়ে শব্দ তুলল। নাসির গাড়ি থেকে বেরিয়ে পিস্তল তাক করল—দুটো গুলি, একটা গুণ্ডার বুকে, অন্যটা মাথায়; তারা চিৎকার করে পড়ল, রক্ত মেঝেতে ছড়িয়ে পুল তৈরি করল। চতুর্থজন পালাতে গেল, তার পা কাঁপছিল, কিন্তু শিবু তার পিছনে ছুটল, তার ছুরি তার পিঠে বিঁধল—গভীর, মোচড়ানো কাট, গুণ্ডা মুখ থুবড়ে পড়ল, তার শেষ শ্বাস একটা গোঙানিতে মিলিয়ে গেল। রক্তের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল, শিবুর কুচকুচে কালো ত্বকে লাল দাগ লেগে গেল, তার চোখে একটা নতুন আগুন। পাওলিনা গাড়ি থেকে নেমে হাততালি দিল, তার নীল চোখে মুগ্ধতা আর উত্তেজনা। "ব্রাভো, শিবু!" চম্পা গাড়ি থেকে নেমে হাসল, তার পান্নার আংটি রক্তের আলোয় ঝিলিক দিল, তার নুপুর ছনছন শব্দ তুলে। "ভালো করেছিস, ছেলে। এখন চল, ফাঁদটা পুরোপুরি কাজ করবে। রুবিনা এখন যুদ্ধ ঘোষণা করবে, আর পুলিশ আমাদের পিছনে লাগবে। কিন্তু আমরা জিতব।"

গাড়ি আবার ছুটল, পেছনে রক্তাক্ত দেহগুলো পড়ে রইল, সকালের কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে। চম্পার মনে একটা ধূর্ত পরিকল্পনা—সে ভিক্টরকে খুন করেছে বেইমানির জন্য, তার ড্রাগ ডিলের অংশ কেড়ে নিয়ে, কিন্তু পায়ের ছাপ রেখে সবাইকে তার দিকে টেনেছে। এটা তার খেলার শুরু—একটা ছায়ার আড়ালে আগুন।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছায়ার আড়ালে আগুন -Crime Thriller [Part-2: দ্য গ্যাংওয়ার] - by indonetguru - 01-11-2025, 03:06 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)