Thread Rating:
  • 44 Vote(s) - 3.68 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy প্রাপ্তবয়ষ্ক রূপকথার গল্প/ নতুন আপডেট
চন্দ্রপুরে রূপেন্দ্র 



রতিস্নানের পর পোষাক পরে রূপেন্দ্র তার শয়নকক্ষে এসে উপস্থিত হয়।  সাজানো শয়নকক্ষের একপাশে  বিশাল দর্পনে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বিস্মিত হয়ে যায়।  কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে, এটা যে ওর নিজের ছায়া সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এ যাবৎ দর্পণে এক খর্ব কদাকার পুরুষকে দেখেই অভ্যস্ত সে,  আজ অতি সুপুরুষ দীর্ঘাকার বলিষ্ঠ এক পুরুষের প্রতিচ্ছবি যে সে এটার কারণ কোনভাবেই বোধগম্য হয় না।  আংটির প্রভাবে হলে সেটা ভোর হওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যেতো..... কিন্তু সে এখনো দিব্যি এই সুন্দর চেহারাকে দিব্যি ধারণ করে আছে।  কিছ তো কারণ আছেই এর পিছনে।

এখানে চাকর বাকরের অভাব নেই।  অসংখ্য দাস দাসী এখানে নিয়োজিত ওর সেবায়।  এরা সকলেই রুদ্রনাথের সেবাতে এতোদিন নিযুক্ত ছিলো।  এখন থেকে এরা রূপেন্দ্রর অধীনে নিয়োজিত।

সুগন্ধা ও পুস্পা এদের কে নিয়ন্ত্রন করার সাথে সাথে ওর একেবারে ঘনিষ্ঠ দাসী হিসাবে কাজ করে।  রূপেন্দ্রকে কিছু নিয়ে ভাবতেই হয় না।  সব কার্যের দিকে এদের দুজনার নজর,  সেই সাথে তারা রূপেন্দ্রর যৌনসঙ্গী হিসাবেও কাজ করবে।

সুগন্ধা ওর কক্ষে প্রবেশ করে ওকে অভিবাদন জানিয়ে দাঁড়ায়।  ওর চালচলনে একটা অভিজাত ভাব আছে। ও বিনীত ভাবে প্রশ্ন করে,  " প্রভু,  আপনার অধীনে পাঁচজন দাসী আর পাঁচজন দাস আছেন,  দাসীরা অন্দরমহলের কাজ আর দাসেরা বাইরের কাজ দেখাশোনা করে,  এর ব্যাতীত দুজন প্রহরী আর আমি ও পুস্পা আপনার সেবাতে নিয়োজিত। "

রূপেন্দ্র বলে,  " এতো লোক দিয়ে আমি কি করবো?  কি কাজে লাগবে?  " আসলে কোনদিন এতো লোলের সেবা পাওয়ার সৌভাগ্য না হওয়ায় ব্যাপারটা রূপেন্দ্রর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিলো। 

সুগন্ধা হাসে,  " এখানে অনেক কাজ থাকে,  রুদ্রনাথের সময় থেকেই এরা এখানে কাজে নিয়োজিত,  আপনি এদের বিতাড়িত করলে এরা কোথায় যাবে?  "

রূপেন্দ্র ভাবিত হয়,  " তাই তো.... আচ্ছা,  এরা সকলেই এখানে থাক..... "

সুগন্ধা মাথা নীচু করে সম্মতি জানিয়ে হাততালি দেয়,  সাথে সাথে রুপেন্দ্রকে অবাক করে চারটি যুবতী মেয়ে হাতে বিরাট বিরাট রেশমি কাপড়ে ঢাকা থালা নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে,  এদের প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ৩০ এর মধ্যে।  আর প্রত্যেকেই হাতে গলায় কোমরে নানা অলঙ্কারে সাজলেও কারো শরীরে বিন্দুমাত্র পোষাক নেই।  প্রত্যেকের যৌনাঙ্গ নির্লোম আর পেটের কাছে উল্কি করে একটা সুন্দর নক্সা আঁকা।

মেয়েগুলি  সেখানে থালাগুলি রেখে তার ঢাকনা সরায়।  প্রতিটি থালায় সব ভালোমন্দ খাবারে পূর্ণ।  সব থালা বাটি রুপোর তৈরী। ওরা সব খাবার সাজিয়ে রেখে দুজন ওকে অভিবাদন জানিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় আর বাকী দুজন আসনের দুই পাশে বিশাল পাখা হাতে দাঁড়ায়।

রুপেন্দ্র বিস্ময়ের সাথে সুগন্ধাকে বলে,  " একি?  এরা এমন ভাবে এখানে কেনো?  "

" এখানকার ধনীরা ভোজন,  বিলাস,  নিদ্রা আর আমোদের সময় এমন সজ্জাতেই তাদের চারিপাশে রাখে দাসীদের।  এটাই এখানকার নিয়ম হয়ে গেছে। "

" কিন্তু এভাবে বিবস্ত্র হয়ে থাকার কি প্রয়োজন?  "

" অভিজাত ব্যাক্তিদের চক্ষুর সাথে সাথে শারীরিক তৃপ্তি ঘটে এতে..... এখানে অভিজাতদের মধ্যে কামবাসনা প্রবল, তারা যৌনতা নিয়েই বেশী মেতে থাকে তাই এই ব্যাবস্থা। "

"রুদ্রনাথও কি এভাবেই রাখতো এদের?  তিনি তো নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন?  "

" সত্য কথা..... রুদ্রনাথ অনেক পূর্বে এসব বিলাসিতায় মেতে থাকলেও শেষ কিছু বৎসর এসব থেকে বিরত থাকতেন,  তার সময়ে নারীদের নগ্নতা এই মহলে নিষিদ্ধ ছিলো। " সুগন্ধা বলে ওঠে।

রূপেন্দ্রর খারাপ লাগে।  কিছুক্ষণ আগেই সে পুস্পাকে যৌনতৃপ্তি দিতে বাধ্য করেছে।  হয়তো সে শুধুই কর্তব্যের খাতিরে এই কাজ করেছে। এমন কাজ রূপেন্দ্র এর আগে করে নি। প্রতিবারই নিজের সঙ্গীর সম্মতিতেই তার সাথে মিলিত হয়েছে।  কাউকে জোর করাটা শোভনীয় না।  কাম দুপক্ষের শারীরিক আনন্দেই পূর্ণতা লাভ করে।  সেটা ব্যাতীত নয়।  ওর লজ্জা লাগে। 

রূপেন্দ্র জোরের সাথে বলে, " না না ওসব দরকার নেই.......এদের যেতে বলো আর আমি না চাইলে এরা স্বাভাবিক পোষাকেই থাকবে। আমার বিলাসিতার কারণে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে আমি নগ্নতা আর যৌনতায় বাধ্য করতে পারি না। "

সুগন্ধা ওদের ঈশারা করে বেরিয়ে যেতে,  ওরা চলে যেতেই সে বলে,  " আপনিও প্রভু রুদ্রনাথের মতই আচরন করছেন..... তিনিও এসব পছন্দ না করায় ধনীরা তার উপর ক্ষুব্ধ হয়.....।"

" অভিজাতদের সবাই কি এভাবেই জীবন কাটায়?  "

" না সবাই নয়..... রুদ্রনাথ অনেককেই প্রভাবিত ক্ল্রতে পেরেছিলেন,  অনেকেই এখন এইসব বিলাসিতা ত্যাগ করেছেন তবে বর্তমান নগরপালক ঘোর বিলাস বহুল জীবন কাটান,  তার অধীনে দাসীদের সংখ্যা অসংখ্য। শুধু তাই নয় বহু মানুষকে তিনি ক্রীতদাসে পরিনত করে রেখেছেন......। "

চমকে ওঠে রূপেন্দ্র, " আর কি কি জানো তুমি?  "

সুগন্ধা মাথা নামায়, " ক্ষমা করবেন প্রভু,  এর বেশী কিছু আমি আর বলতে পারবো না। আপনি এখানে বসবাস করতে করতে সব জানতে পারবেন। "

রূপেন্দ্র আর জোর করে না। তাকে খুব তাড়াতাড়ি রুদ্রনাথের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে ফিরে যেতে হবে নিজের রাজ্যে।  আর সেই জন্য রাহু আর  কেতুকে খুঁজে পাওয়া জরুরী। 


চন্দ্রালোকিত রাতে রূপেন্দ্র তার সাজানো উদ্যানের মাঝে একটা বাঁধানো কৃত্তিম জলাশয়ের পাশে বসে ছিল,   আরিপাশে কেউ নেই এখন।  জলাশয়ের জলে পদ্ম ফুটে আছে,  চাঁদের প্রতিবম্ব  জলাশয়ের জলে পড়ে অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য তৈরী করেছে।  একটা পাথরের বাঁধানো আসনে বসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো সে।  বহুদিন সে গৃহছাড়া,  কথা দিয়েও আজও সে মেঘনার জন্য ঔষধ নিয়ে ফিরতে পারে নি,  মা রম্ভা কেমন আছে জানে না...... বিচিত্রপুর ওর জীবন থেকে বহুদূরে চলে গেছে,  যেনো কোন এক বিগত জন্মের কথা..... ওর এই পরিবর্তিত রূপ দেখে তারা কেউ ওকে চিনতে পারবে কিনা তাও জানে না......।

সুগন্ধা ওর কাছে আসে। সাদা পোষাকে সেজেছে সুগন্ধা,  মাথায় সাদা ফুলের মালা,  হাতেও ফুলের মালা জড়ানো,  সুন্দর মিস্টি গন্ধে চারিদিক ভরে ওঠে।  মায়াবী জোৎস্না সুগন্ধার শরীর ধুয়ে দিচ্ছে,  তার সোনালি রঙের শরীর যেনো কোন অপ্সরীর। 

রূপেন্দ্রর কাছে এসে তার গায়ে হাত রাখে ও।  রূপেন্দ্রর শরীর সাড়া দেয় না।  ও জানে এটা সুগন্ধার কর্তব্য।  রূপেন্দ্রর যৌনসঙ্গী হিসাবে কাজ করা।  ও সুগন্ধার হাত নিজে হাতের মধ্যে রেখে বলে,  " আমি চাই না তুমি এভাবে আমার কাছে আসো..... "

" কেনো প্রভু?  আমার অপরাধ?  " চমকে যায় সুগন্ধা। 

" না.... অপরাধ নয়,  এভাবে নিজের শরীরকে কষ্ট দিয়ে আমাকে আনন্দ দিতে হবে না,  আমি তোমার উপরে একটুও ক্ষুব্ধ হবো না। "

হেসে ওঠে সুগন্ধা, " আপনি ভুল ভাবছেন প্রভু,  আমার কোন কষ্ট নেই এতে,  আমি জেনেশুনেই এই জীবন বেছে নিয়েছি..... এই দেশে যৌনতা কোন অপরাধ নয়,  মানুষ ইচ্ছা করলেই একে নিজের পেশা বানাতে পারে.......আমি কঠোর ভাবে যৌন শিক্ষা লাভ করেই একে পেশা হিসাবে গ্রহন করেছি। "

" তবুও তুমি আমাকে আনন্দ দিতেই শুধু যৌনতায় লিপ্ত হতে চাইছো,  সেটা আমার পছন্দ না। "

সুগন্ধা রূপেন্দ্রর কানের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে ওর সুঠাম বুকে হাত রেখে খুব আসতে আসতে বলে, " আপনার মত সুপুরুষ যুবক তো প্রতিটি নারীর কাম্য.... আমি কিভাবে ব্যাতিক্রম হবো?  আপনাকে দর্শন্মাত্রই আমার কামনা জেগে উঠেছিলো...... আজ এই উন্মুক্ত চন্দ্রালোকে আপনার সাথে সাথে আমিও পূর্ণ তৃপ্তি পেতে চাই.....আমায় গ্রহণ করুন অনুগ্রহ করে। "

সুগন্ধার শরীর রূপেন্দ্রর শরীরে স্পর্শ করছে,  ওর হাত বুক থেকে সন্তর্পনে রূপেন্দ্রর উরুসন্ধিস্থলের উত্তেজনা খুঁজতে নেমে আসছে,  একটা সুন্দর সুঘ্রাণ রূপেন্দ্রর নাকের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে তুলছে।

সুগন্ধা কামবিষয়ে অতি দক্ষ।  নিপুনতার সাথে সে শৃঙ্গারের মাধ্যমে খুব স্বল্প সময়েই রূপেন্দ্রর কামইচ্ছা চরমে পৌছে দেয়।  নিরাবরন রূপেন্দ্রর সুঠাম শরীরের প্রতিটি অংশে তার সিক্ত জিহ্বার সুদক্ষ চালনার ক্রমশ উত্তেজনার শীর্ষে আরোহন করে। রূপেন্দ্র সুগন্ধার  কামশাস্ত্রজ্ঞানে অবিভূত।  শরীরের প্রতিটি অংশই যে কামচেতনা জাগ্রত করতে পারে সেটা ওর  ভাবনার বাইরে ছিলো।  যেনো কোন সাপিনীর মত সুগন্ধা কামদংশনে রূনেদ্রর শরীরে কামরূপী বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে।  সারাদিনের চেনা সুগন্ধা এখন নাগীনির মত ফোঁস ফোঁস করছে,  রূপেন্দ্রর ঘাড়,  বক্ষ,  উদর সুগন্ধার দংশনে উত্তেজিত.....।

রূপেন্দ্রর পেশীবহুল বক্ষের সাথে নিজের কোমল উদ্ধত বক্ষকে পিষ্ট করে সুগন্ধা ওকে চুম্বন করে,  আজ যেনো রূপেন্দ্রর কিছুই করার নেই,  সে শুধু উপভোগ করছে.... পা ঝুলিয়ে হেলান দিয়ে বসেছিলো রূপেন্দ্র..... ওর লিঙ্গ সরল্রেখার মত আকাশের দিকে উত্থিত,  সুগন্ধা রূপেন্দ্রর দুইপার্শ্বে পা রেখে সেই দন্ডের উপরে নিজেকে স্থাপন করে,  ওর ঠোঁট তখনো রূপেন্দ্রর ঠোঁটে,  দুটি হাত রূপেন্দ্রর পিঠে..... সুগন্ধার কোমল সিক্ত যোনিকে ভেদ করে রূপেন্দ্রর লিঙ্গ প্রবেশ করে গভীরে,  সুগন্ধার কামরস ওর লিঙ্গ বেয়ে নীচে অন্ডকোষের দিকে ধাবিত হয়।  রূপেন্দ্রর কোলের উপর সুগন্ধা উলম্ব ছন্দে লাফাতে থাকে,  কামের এতো কৌশল রূপেন্দ্রর জানা ছিলো না...... সুগন্ধার দক্ষতা ওকে দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে সাহায্য করছে।

রূপেন্দ্র নিজের হাতে সুগন্ধার নরম মাংসল নিতম্ব খামচে ধরে তাকে সাহায্য করে...... ওর উচ্চ শীৎকার ধ্বনিতে চারিপাশের নিস্তব্ধতা খান খান হয়ে যায়.... সজোরে সুগন্ধার কোমল শরীরকে নিজের বুকে চেপে ধরে রূপেন্দ্র,  উন্মাদের মত ওর ঠোঁট,  ঘাড়,  পিঠে দাঁত দিয়ে দংশন করে...... হালকা ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে সুগন্ধা,  দুটি নগ্ন যৌবন চন্দ্রালোকের মায়াবী উদ্যানে আদিম খেলায় ব্যাস্ত...... আজ আর রূপেন্দ্রর নিজেকে শেষ ক্ল্রতে ইচ্ছা করছে না..... মনে হচ্ছে অন্তন্ত কাল চলুক এই মৈথুন,  রতিক্রিয়া....

সমাপ্তির পর সুগন্ধা আর রূপেন্দ্র জলাশয়ের জলে নেমে জলকেলী করে স্নান করে...... তৃপ্ততা উভয়েরই চোখে ধরা পড়ছে..... দীর্ঘদিন পর নিজেকে নিশ্বেষ করে  আজ সুগন্ধার হৃদয় পরিপূর্ণ। 





ভোররাতে নিজের কক্ষে কিছু নড়াচড়ার শব্দে নিদ্রাভঙ্গ হয় রূপেন্দ্রর।  হালকা আলোয় দুটি ছায়ামূর্তিকে দেখে ও নিজের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।  পাশে রাখা তরবারির হাতল শক্ত করে চেপে ধরে ও গম্ভীর গলায় বলে,  " কে রে ওখানে?  "

ছায়ামূর্তি দুটো ভয় পায় না।  সেভাবেই সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বলে,  " আজ্ঞে.... আমরা রাহু আর কেতু..... আপনার দর্শনপ্রার্থী!  "

চাবুকের মত লাফিয়ে উঠে একটা আলো জ্বালায় রূপেন্দ্র।  আলোয় দেখে দুটি কালো আর কিম্ভূত দেখতে লোক পালঙ্কের পায়ের দিয়ে দাঁড়িয়ে।  দুজনেরী পরনে মলিন বস্ত্র,  মাথায় মলিন পাগরী, একজন শুকনো রোগা চেহারা আর একজন মোটা গলগাল। ওর দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে আছে।

" কিন্তু তোমরা এভাবে রাতের অন্ধকারে কেনো?"

" না মানে দিনের বেলায় আমরা সকলের সামনে এখানে আসলে আপনার বিপদ হবে তাই...। রোগা লোকটা বলে।

" বিপদ?  আমার?  কেনো?  " রূপেন্দ্র বিস্মিত হয়।

" আসলে আমরা নগরপালকে কু নজরে আছি.... তিনি আমাদের হত্যা করতে চান কারণ আমরা রুদ্রনাথের সহায়ক ছিলাম।"

" কিন্তু আমার কথা তোমাদের কে বললো?  "

মোটা লোকটা ফিকফিক করে হেসে বলে, " আমরা সব জানি..... এটাই আমাদের কাজ,  আপনি যে রুদ্রনাথকে বাঁচানোর পর তিনি তার সব সম্পদ আপনাকে দিয়ে দিয়েছেন সেটাও জানি আমরা। "

" তোমরা নিশ্চই যাদুবিদ্যা জানো?  "

রোগা লোকটি এবার বলে, " না ঠিক যাদু না..... আসলে আময়াদের একটা বিশেষ ক্ষমতা বলে আমরা যে কোন পাখির রূপ নিতে পারি, রুদ্রনাথকে বিতাড়িত করার দিন আমরা পাখির রূপ ধরে তার পিছু নিই..... "

" রুদ্রনাথ তোমাদের এই ক্ষমতার কথা জানতেন?  "

" হ্যাঁ.....তিনিই আমাদের বলেন আপনাকে সাহায্য করতে.।"

" এবার বলো কে রাহু আর কে কেতু?  আর এমন নাম কেনো তোমাদের?  "

মোটা লোকটা বলে, " আমি রাহু আর ও কেতু.... আসলে এই রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষই সুন্দর, কারন তারা সৌন্দর্য্য বৃক্ষের ফল খেয়েছে..... যেখানে আপনার আর রুদ্রনেথের সাক্ষাৎ হয় তার পিছনের পাহাড়ের গভীরে একটা গাছ আছে যার নাম 'সৌন্দর্য্যবৃক্ষ।  সেই গাছের ফল খেলে কোন কুরুপ ব্যাক্তিও অপার সৌন্দর্য্য লাভ করে,  তবে সেই স্থান খুবই বিপদসঙ্কুল হওয়ায় অনেকেই পৌছাতে পারে না,  যারা পারে তারা সুন্দর হয়ে ফেরে, তাছাড়া বছরে মাত্র ১ মাস সেই গাছে ফল থাকে তারপর সব ঝরে যায়,  আমি আর কেতু ছোট থেকে অতি সাধারণ ছিলাম, তাই খুব সুন্দর চেহারার  লোভে সেই গাছের কাছে যাই.... কিন্তু তখন সব ফল ঝরে গেছিলো,  তবে নীচে অনেক ফল পড়ে ছিলো, আমরা বুঝতে না পেরে পচা ফল খেয়ে নিই..... আর সাথে সাথে আমরা সুন্দর হওয়ার পরিবর্তে আরো কুরূপ হয়ে যাই, আমাদের চেহারা কালো আর কদাকার হয়ে যায়।   জানতাম না যে শুধু গাছ থেকে পেড়ে তাজা ফল খেলেই সুন্দর হওয়া যাবে। আগে তাও আমরা ভালো ছিলাম কিন্তু এখন এই বিদুঘুটে রূপের কারণে মানুষ আমাদের ঘৃণা করা শুরু করে,  তারা আমাদের রাহু আর কেতু নাম দিয়েছে, যেনো রাক্ষস আমরা  " রাহু ডুকরে কেঁদে ওঠে।

রূপেন্দ্র এতোক্ষণে নিজের সুন্দর চেহারার রহস্য বুঝতে পারে।  সেদিন ক্ষিধের চোটে সেই পাহাড়ে তাহলে ও সৌন্দর্য্যবৃক্ষের ফলই খেয়েছিলো? 

" আহা কেঁদো না..... আবার তো খেতে পারো তোমরা তাজা ফল।"

" না..... ওই ফল মাত্র একবারই শরীরে কাজ করবে.... দ্বীতিয়বার খেলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হবে......আমরা এতো কুরুপ হয়ে যাই যে মানুষ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,  কেউ কোন কাজ দেয় না, না খেতে পেয়ে মানুষের থেকে বিতাড়িত হয়ে তখন আমরা ঠিক করি আত্মহত্যা করার,  সেই মত পাহাড়ের উপরে উঠি ঝাঁপ দিয়ে মরবো বলে, কিন্তু এক সহৃদয় সাধু সেখানে ছিলেন,  তিনি আমাদের বাধা দেন..... বলেন,  আমি তোদের কষ্ট লাঘব করে দিচ্ছি,  আজ থেকে তোরা চাইলেই পক্ষীরূপ ধারণ করে যেখানে ইচ্ছা উড়ে বেড়াতে পারবি..... দেশ বিদেশ দেখে বেড়াতে পারবি,  দেখে আয় কত মানুষ কত কষ্ট করে বেঁচে আছে,  তাহলে মরার ইচ্ছা দূর হবে....সত্যি তাই,  পাখি হয়ে আমরা অনেক দেশ ঘুরে দেখলাম আমাদের থেকেও বহু কষ্টে আছে মানুষ,  সেই থেকে আমরা আর মরার কথা ভাবি না। "

রূপেন্দ্র মনোযোগ দিয়ে ওদের কথা শোনে,  তারপর বলে,  " সত্যি কথা...... এখানে আসার আগে আমিও অত্যন্ত কুরুপ ছিলাম, অজান্তেই ওই বৃক্ষের ফল খেয়ে এই সুন্দর চেহারা লাভ করেছি.... তবে আমি কখনো নিজের চেহারার জন্য মরার কথা ভাবি নি,  বহু ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ সয়েও আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। "

রাহু আর কেতু এগিয়ে এসে ওর পায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,  " আমাদের জন্য আদেশ করুন প্রভু। "

রূপেন্দ্র পিছিয়ে এসে বলে,  " শোন আমি তোমাদের প্রভু নই,  আমি তোমাদের বন্ধু আজ থেকে......আমাকে প্রভু বলবে না। "

" সেটা সম্ভব নয়..... রুদ্রনাথের আদেশ মত আপনি আমাদের প্রভু। এবার বলুন আমরা কিভাবে আপনাকে সাহায্য ক্ল্রতে পারি। "

" তার আগে তোমরা আমাকে এই রাজ্য সম্পর্কে সব কিছু জানাও.... এখানকার পরিস্থিতি কেমন, কিভাবে এর পরিবর্তন আসবে।

কেতু মুখ খোলে,  " আপনি এর মধ্যেই জেনে গেছেন এখানে কোন রাজা নেই,  অভিজাত ব্যাক্তিরাই দেশ চালান......... মাত্র গুটিকয়েক অভিজাত পরিবার বিপুল সম্পদের ভান্ডার নিয়ে বসে আছে,  আর বাকী লোকেদের কাছে সামান্য দিন যাপন করার জন্যেও কিছু নেই,  যারা অভিজাত পরিবারে কাজ করে তারা তাও ভালোভাবে বেঁচে আছে কিন্তু বাকিদের অবস্থা খুবই শোচনীয়,  খাবারের অভাবে তারা একসময় নিজেদের বিক্রি করে দিয়ে ক্রীতদাসে পরিনত হয়..। "

" দাঁড়াও,  এখানে আসার সময় আমি কিছু যুবতীকে খোলা বাজারে বিক্রয় হতে দেখি..... এটা কি সত্য?  "

মাথা নাড়ায় কেতু,  " কোন ধনী যদি মনে করে  তার কাছে ক্রীতদাস বেশী হয়ে গেছে তাহলে তারা কিছু ক্রীতদাস স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে বিক্রয় করে দেয়,  বেশীরভাগ যুবতী নারীদেরকেই ক্রয় বিক্রয় করা হয়......"

" কিন্তু মানুষ নিজেকে বিক্রয় না করে কাজ করে তো অর্থ উপার্জন করতে পারে। " রূপেন্দ্র বলে।

" যারা কোন কাজ পায় না তারাই সামান্য খাবার আর আশ্রয়ের জন্য ক্রীতদাস হয়ে যায়,  সবাই ক্রীতদাস পুষতে বেশী আগ্রহী হয় কারণ তাদের মাসোহারা দিতে হয় না...... শুধু খাদ্য বস্ত্রের বিনিময়ে সব কাজ করানো যায়। "

এবার রাহু বলে,  " প্রভু রুদ্রনাথ চেয়েছিলেন দরিদ্র মানুষদের প্রচুর সম্পদ দিয়ে তাদেরকে এই জীবন থেকে মুক্তি দিতে।  "

" কিন্তু এতো সম্পদ কোথায় পাওয়া যাবে?  দরিদ্রের সং্খ্যা তো কম নয়?  "

কেতু এবার চারিদিকে তাকিয়ে খুব ধীরে বলে,  " আজ থেকে ১০০ বছর আগে এই রাজ্যেও রাজা ছিলো, নাম মহারাজ বজ্রকেতু।  তখন সবাই সুখে থাকতো,  ধনীদের এতো বাড়বাড়ন্ত ছিলো না,  কিন্ত এখানে মূল্যবান পাথরের খনি পাওয়া গেলে ধনীরা এতো ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে যে  চক্রান্ত করে রাজপরিবারের সবাইকে হত্যা করে রাজশাশন বিলুপ্ত করে। নিজেদের মধ্যে যাতে অশান্তি না হয় তাই কিছুদিনের জন্য একজন করে নগরপালক পদে নিযুক্ত হয়..... রাজার সব কোষাগার এরা লুঠ করে নিজেরা ভাগ ক্ল্রে নেয়, কিন্তু এরা জানতো না যে মহারাজ আগে থেকেই বিপুল সম্পদ প্রাসাদের নীচে কোথাও গুপ্তঘরে লুকিয়ে ফেলেন, কেউ এখনো সেটা খুঁজে পায় নি,  রুদ্রনাথ অনেক চেষ্টা করে  সেই সম্পদের হদিস পেলেও সেটা দখল করতে পারেন নি  "

" কেনো?  " রুপেন্দ্র প্রশ্ন করে।

" আসলে রাজার প্রাসাদ এই নগরের উত্তরে ঘন জঙ্গলে ঢাকা পড়ে আছে।  সেখানে থাকে এক নরপিশাচ। তার আসল চেহারা খুবই ভয়ঙ্কর, বিরাট শক্তিশালী আর কালো গায়ের রঙ,  গায়ে ঘন লোম, দাঁতগুলো পশুর মত,   তাকে রাক্ষস বল্লেও অত্যক্তি হবে না, তবে সে প্রয়জনে যে কোন রূপ নিতে পারে,   সে থাকতে কারো সাধ্য নেই সেখান থেকে লুকানো ধন উদ্ধার করে। রুদ্রনাথ ছাড়া কেবলমাত্র বর্তমান নগরপালক এই সম্পদের কথা জানে।  সে এটাও জানে যে নরপিশাচকে বশে আনতে গেলে প্রতিদিন একজন করে যুবতী নারীকে তার কাছে সঁপে দিতে হবে।  নরপিশাচ সেই নারীকে বীভৎস ভাবে ভোগ করে তারপর তার ঘাড় ভেঙে রক্ত পান করে। এই ভাবে তিন বৎসর পূর্ণ হলে নরপিশাচের কাছে যা চাওয়া হবে সে তাই দেবে। এই কারনেই রুদ্রনাথ তার অধীনে থাকা সব ক্রীতদাস যুবতী নারীকে একে একে পাঠাচ্ছে মৃত্যুবরণ করতে ওই পিশাচের কাছে....... কিন্তু এখনো তার বহু যুবতী নারীকে দরকার।  কারণ দীর্ঘদিন অসংখ্য ক্রীতদাসীর বলি দিতে দিতে তার কাছে আর ক্রীতদাসী অবশিষ্ট নেই। সে নগ্রপালক হওয়ার পর অনেক যুবতী নারী হঠাৎ করে উধাউ হয়ে যাচ্ছে,  সবই দরিদ্র পরিবারের,  আমাদের সন্দেহ যে রুদ্রনাথই তাদের চুরি করে নরপিশাচের কাছে আহুতি  দিচ্ছে।   গরীব মানুষের জীবনের কোন দাম নেই তার কাছে...... আমরা চাই আমাদের রাজ্য আবার ১০০ বছর আগের জীবনে ফিরে যাক। "


রূপেন্দ্রর শরীরের পেশী ফুলে উঠলো।  সে দৃঢ় কন্ঠে বলে, " চিন্তা করো না রাহু কেতু,  এর অবসান ঘটিয়েই আমি মনে এই স্থান ত্যাগ করবো তার আগে নয়....তোমরা শুধু আমার নির্দেশ মত কাজ করবে। "

রাহু কেতু ওকে প্রনাম করে সেখান থেকে বিদায় নেয়। 

রুপেন্দ্র একা একা ভাবতে বসে কিভাবে নগরপালককে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার সাথে সাথে সব সম্পদ উদ্ধার করে দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বিতরন করা যায়। 



পরের দিন প্রভাতে রূপেন্দ্র একাই নগর ভ্রমণে বের হয়।  এখানকার ধনী ব্যাক্তিরা বাইরে বের হয় ঘোড়ার গাড়ী চড়ে,  সেই সাথে দাস দাসীরা থাকে। কিন্তু রূপেন্দ্র অত্যন্ত সাদামাটা পোষাকে একাই বের হয়।  এখনো এখানে কেউ ওকে সেভাবে চেনে না।  ওর পোষাকের কারণে ওকে এক নিম্নশ্রেণীর মানুষ বলেই মনে হচ্ছে।  অত্যন্ত সুসজ্জিত নগর চন্দ্রপুর।  পথের দুই পাশে সুদৃশ্য অট্টালিকা,  মাঝে মাঝে সাজানো উদ্যান চোখে পড়ছে,  প্রতিটি অট্টালীকার দ্বার আগলে রেখেছে সসস্ত্র প্রহরী। কিন্তু রূপেন্দ্রর উদ্দেশ্য নগরের শোভা দেখে বেড়ানো না। ও সাজানো নগর ছাড়িয়ে পৌছে যায় প্রান্তে নিম্নশ্রেণীর মানুষের বসতিতে।  সেখানে প্রবেশ করতেই ও বুঝতে পারে কি মারাত্বক বৈষম্যের শিকার এরা। ছোট ছোট পাথরের ভাঙাচোরা ঘরের সারি,  সেখানেই গাদাগাদি করে বাস করছে অসংখ্য মানুষ।  শীর্ণকায় বৃদ্ধ, রুগ্ন শিশু যত্র তত্র ঘুড়ে বেড়াচ্ছে,  এখানে মামুষের পোষাক মলিন,  চোখ মুখে কোন উজ্জ্বলতা নেই।  সংকীর্ণ পথ ধরে এগোতে থাকে সে।  এতো মানুষ চারিদিকে যে ওকে আলাদা ক্ক্রে কেউ খেয়াল করছে না। কোথাও পথের উপরেই ছেঁড়া পোষাক পরে মানুষ শুয়ে আছে।  কোথাও অসুস্থ মানুষের কান্নার আওয়াজ তো কোথাও অভুক্ত শিশুর...... মন খারাপ হয়ে যায় ওর।  নিজের প্রাসাদের বিপুল জাঁকজমকের কথা মনে পড়ে।  নিজেকে খুব ছোট মনে  হয়। 

একটু এগিয়ে সংকীর্ণ পথ চওওড়া হয়।  এখানে বাড়িঘর গুলো আগের মত ওতো ভগ্ন না।  একটু ভালো আর বেশ দূরে দূরে।  চারিপাশের পরিবেশও খারাপ না,  তবে মানুষজন এখানেও খুব বেশী উন্নত না,  রূপেন্দ্র বুঝতে পারে যে এটা তুলনামূলক স্বচ্ছল মানুষদের আবাসস্থল।  হাঁটতে হাঁটিতে ও একটা  কাঠের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বিরাট স্থানে অনেক ঘোড়া দেখতে পায়।  দূরে একটা ঘর। দেখে একটা মেয়ে ঘোড়াদের পরিচর্যা করছে। রূপেন্দ্রর মেয়েটাকে খুব চেনা লাগে। মেয়েটা বোধহয় ঘোড়াদের খুব ভালোবাসে। সে নিজে হাতে করে ঘোড়াদের খাওয়াচ্ছে।  পরণের পোষাক বলে দিচ্ছে যে মেয়টা অভিজাত পরিবারের না। 

রূপেন্দ্র কৌতুহলে কাঠের বেড়া পার করে ভিতরে প্রবেশ করে।  মেয়েটার এদিকে খেয়াল নেই,  সে ঘোড়াদের নিয়েই ব্যাস্ত।  ঘোড়াগুলিও ওর কাছে খুব স্বচ্ছন্দ।  রূপেন্দ্র আরো এগোতেই হঠাৎ মেয়েটা ঘুরে দাঁড়ায় আর ও বিস্ময়ের সাথে দেখে মেয়েটা আর কেউ নয় কেতকী।  কেতকী ওকে দেখে অবাক হয়ে জড়সড়ো হয়ে দাঁড়ায়।  মাথা নীচু ওর।  রূপেন্দ্রকে ও অভিযাত বলেই জানে।  তাই সম্মান দেওয়া কর্তব্য। 

রূপেন্দ্র একটু হেসে ওকে বলে,  " আমার সামনে তুমি স্বাভাবিক থাকতে পারো..... কোন ভয় নেই। "

কেতকী একটু অবিশ্বাএর সাথে ওর দিকে তাকায়।  চেহারা মলিন হলেও কেতকীর টানা টানা বড় চোখ অসাধারন সুন্দর,  চেহারা একটু শীর্ণ হলেও যৌবন তাতে বাধা পায় নি,  রোগা চেহারার মাঝেও ওর স্তন আর নিতম্বের আকার বেশ সুন্দর।  গায়ের রঙ রোদে পোড়া।  রূপেন্দ্র হঠাৎ একটা ভালো লাগা জন্মে যায় কেতকীর প্রতি।  ও বলে,  " তুমি কি ঘোড়াদের দেখাশোনা করো?  "

কেতকী মাথা নাড়ায়।

" কার ঘোড়া এগুলো?  "
এবার কথা বলে ও।  খুব মিস্টি গলায় বলে,  " এগুলো প্রহরীদের ঘোড়া,  আমি এদের দেখাশোনা করি,  ওরা কোথাও গেলে নিজের ঘোড়া নিয়ে যায়। "

" আচ্ছা...... সেই কারণে সেদিন তোমার কথাতেই ঘোড়াটা থেমে গেছিলো, না হলে তো আমি আহত হতাম..... আমি ঋণী তোমার কাছে, । "

কেতকী বোধহয় এমন কথা কখনো শোনে নি,  সে অবাক চোখে তাকায় কিছু বলে না।  ধনীদের সাহায্যের প্রতিদানে তারা কখনোই কৃতজ্ঞতা জানায় না,  তাই এই ব্যাক্তিকে ওর একটু আলাদাই মনে হয়।

" তোমার পরিবারে কে আছে কেতকী?  "

কেতকী মাথা নাড়ায়,  কেউ নেই ওর।  রূপেন্দ্র আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। 

" আমায় একটু জলপান করাবে?  "

কেতকী মাথা নেড়ে দৌড়ে দূরে নিজের গৃহে চলে যায়,  তারপর একটু বাদে একটা মাটির পাত্রে জল নিয়ে বেরিয়ে আসে।  ঠিক তখনী ঘোরাগুলো চিঁহিহি ক্ল্রে ডেকে ওঠে,  চারিদিকে যেনো ধুলোর ঝড় উঠে ধুলোয় ঢেকে যায় কেতকী,  রূপেন্দ্র কিছুই দেখতে পারে না,  তার মধ্যেই কিছু ঘোড়া সওয়ার কেতকীকে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে দ্রুতো বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। 

এতো দ্রুতো সবকিছু ঘটে যায় যে রূপেন্দ্র ভাবার সময়টুকুও পায় না।  কেউ যে কেতকীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সেটা বুঝতে পারে।  ধুলোর আবরন বাতাসে মিলিয়ে গেলে দেখে চারিদিক ফাঁকা।  কেউ কোথাও নেই।  রূপেন্দ্রর মনে হয় এই কাজ মৃগদেব ছাড়া আর কারো না।  নিশ্চই কেতকীকে নরপিশাচের কাছে বলি দিতেই অপহরণ করেছে।  ও দ্রুতো পা চালিয়ে নিজের প্রাসাদের দিকে রিওওনা দেয়। 





মেঘেঢাকা অন্ধকার রাতে রূপেন্দ্র আর রাহুকেতু নগরপালক মৃগদেবের অট্টালীকার প্রাচীর টপকে ভিতরে প্রবেশ করে।  ওদের তিনজনেরই শরীর আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা।  শুধু চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।  রাহু কেতু ওকে নিয়ে বিড়ালের মত সন্তর্পনে অট্টালিকায় প্রবেশ করে।  ওদের সব নাড়ি নক্ষত্র জানা,  সেইদিক থেকে রুপেন্দ্র নিশ্চিন্ত।  বিশাল অট্টালিকায় অসং্খ্য দাস দাসী সহ সবাই গভীর নিদ্রায় মগ্ন।  শুধু কয়েকজন প্রহরী বিভিন্ন স্থানে পাহারা দিচ্ছে।  অট্টালিকাত চারিদিকে নিশ্ছিদ্র প্রহরা,  কোথা দিয়েও ভিতরে প্রবেশের বিন্দুমাত্র উপায় নেই।

রূপেন্দ্র রাহুকে বলে, " এই নিরাপত্তা এড়িয়ে যাবো কিভাবে আমরা?  "

রাহু হাসে,  " আমি আছি কেন? মৃগদেব নিজেও যতটা না জানে এই অট্টালিকা সম্পর্কে তার থেকে বেশী আমি জানি..... আপনি শুধু আমাকে অনুসরন করুন। "

ওরা অট্টালিকায় প্রবেশ না করে পিছনের সাজানো উদ্যানের দিকে চলে যায়।  বিশাল বড়ো উদ্যানের মাঝে একটা গোল জলাশয়।  তাতে জল ভর্তি।  সেটার পাশে দাঁড়িয়ে রাহু বলে,  " এই জলাশয়ে ডুব দিয়ে কুড়ি হাত নীচে গেলে পাশে একটা সুড়ঙ্গ পাবেন,  সেই সুড়ঙ্গ ধরে কিছুদূর সাঁতার কেটে গেলে একটা জলাশয়ে পড়বেন,  সেটা এই অট্টালিকার ভিতরের স্নানাগার।  তাতে ভেসে উঠলে সোজা ভিতরে প্রবেশ ক্ল্রতে পারবো আমরা। "

রূপেন্দ্র মাথা নাড়ে  রাহুর কথায়।  রাহু এবার কেতুকে বলে, " তুই এখানে গা ঢাকা দিয়ে থাক, আমরা ভিতরে যাচ্ছি। "

কেতু গাছের আড়ালে গা ঢাকা দিলে রূপেন্দ্র প্রথমে সেই জলাশয়ে ডুব দেয়।  কুড়ি হাত নীচে গিয়ে বাঁ দিকে হাতড়ে এক্কটা সুড়ঙ্গের খোলা মুখ পায়,  সেখান দিয়ে সাঁতার দিয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে আবার উপরের দিকে ভেসে ওঠে,  ওর পর পরই রাহু ভেসে ওঠে।

জলের উপরে মাথা তুলে আগে চারিদিক দেখে ওরা।  বিশাল বড়ো একটা কক্ষের মাঝখানে এই জলাশয়।  চারিদিকে বেশ সাজানো গোছানো,  কিছুদুরে একটা মশালের আলোয় চারিদিকে সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এই জলাশয় স্নানের সাথে সাথে পালানোর গুপ্ত পথ হিসাবেও ব্যাবহার করা হয়।  ওরা জল থেকে উঠেই একটা ড়ো স্তম্ভের আড়ালে চলে যায়।  তারপর চারিদিকে সন্তর্পণে নজর দিয়ে দেখে কোথাও কেউ আছে কিনা।  কেউ নেই এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সেখান থেকে মহলের ভিতরে প্রবেশ করে। 

ভিতরে প্রবেশ করে মাথা ঘুরে যায় রূপেন্দ্রর। এখান থেকে তিনদিকে পথ চলে গেছে আর প্রতিটা পথই একি রকম লাগছে,  ও রাহুর দিকে তাকায়,  রাহু নিজেও বুঝিতে পারছে না কোন দিকে যাবে।  অনেক ভেবে ও বলে,  " প্রভু,  আপনি ডানদিকের পথ ধরে এগোন, আর আমি বাঁ দিকের..... যে আগে কেতকীর সন্ধান পাবে সে তাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে।  "

রূপেন্দ্র মাথা নেড়ে ডানদিকের পথ ধরে এগোয়।  দুই পাশের পাথরের দেওয়ালে মাঝে মাঝে মশাল জ্বলছে।  এখানে লোকানোর জায়গা নেই।  তবে কোন প্রহরীও নেই এদিকে।  একটু এগিয়েই দেখে সামনে দুই পাশে দুটি মহলের দ্বার,  আর দুই দ্বারেই প্রহরী আছে।  যদিও তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমে ঢুলছে,  দ্বারে পর্দা দিয়ে আড়াল করা।  তাই ভিতরে কি আছে সেটা বোঝা সম্ভব না।  রূপেন্দ্র তরবারি শক্ত ক্ক্রে ধরে এবেবারে নিশ্চুপে ঘুমন্ত প্রহরীর পাশ দিয়ে একটা কক্ষে প্রবেশ করে। 

ভিতরে ঢুকেই দেখে এটা কোন কক্ষ না,  একটা মাঝারী কক্ষের মাঝখান থেকে পাথরে বাঁধানো সিঁড়ি উঠে গেছে, সিঁড়ি অনেক চওড়া,  ও কিছু বুঝিতে না পেরে একবারে আন্দাজে সেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসে,  সিঁড়ি শেষ হয়েছে একটা দ্বারের সামনে,,,,,এখানে কোন প্রহরী নেই।  দ্বারের সামকনে দামী কাপড়ের পর্দা ঝুলছে, রূপেন্দ্র প্ররদা সরিয়ে ভিতরে উঁকি মারে,  এটা একটা শয়ন কক্ষ, ভিতরে হাতির দাঁতের পালঙ্ক,  এছাড়া সোনা আর রূপার তৈরী নানা আসবাবে সাজানো,  একপাশে একটা বিরাট আয়না দেখা যাচ্ছে.... কিন্তু কক্ষে কেউ নেই।

রূপেন্দ্র সেই কক্ষে প্রবেশ করতে যাবে তখনি মাথার পিছনে কিছুর আঘাত পায়,  চোখ অন্ধকার হয়ে আসে ওর,  জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। 
Deep's story
[+] 7 users Like sarkardibyendu's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রাপ্তবয়ষ্ক রূপকথার গল্প/ নতুন আপডেট - by sarkardibyendu - 31-10-2025, 05:58 PM



Users browsing this thread: