30-10-2025, 07:03 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৯ এর বাকি অংশ............
“ আচ্ছা, রাজীব ভাই কেমন আছেন?”
ছেলে গুলো বিদায় নেয় , আর তখন রাজীব কে আবার আতংক পেয়ে বসে । রাজীব আবিস্কার করে , ও নিজেকে যতটা আত্মবিশ্বাসী মনে করে, আসলে ততটা না , ওর আত্মবিশ্বাস এর উৎস হচ্ছে ওর আব্বু । যাকে ও প্রায়ই একিউজ করে কিছু না করার জন্য । রাজীবের ভীষণ কান্না পায় । দেয়ালের সাথে ঠেশ দিয়ে দাড়িয়ে পরে রাজীব । শরীর কাঁপিয়ে কান্না আসে ওর । পাশে দাড়িয়ে জান্নাত ওর একটা বাহ সুধু ধরে রাখে । নিজে মনের ভেতর খুজতে থাকে কিভাবে রাজীব কে সান্তনা দেয়া যায়।
“ আচ্ছা, রাজীব ভাই কেমন আছেন?”
আবরার আর জান্নাত রাস্তার ধারে বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলো , আসলে জান্নাত রাজীবের জন্য ওয়েট করছিলো , আজকেই আবরারের ব্যাপারটা রাজীব কে জানিয়ে দিতে চায় । রাজীব ও পার্টনার , তবুও নিজে নিজেই আবরারের ব্যাপারে ডিসিশন নিয়ে নেয়ায় , জন্নাত একটু চিন্তায় আছে , যদি রাজীব কিছু মনে করে , এই ভেবে । তাই হঠাত আবরারের মুখে রাজীবের কুশল জিজ্ঞাসা শুনে , আবরারের দিকে তাকায় , প্রথমে নর্মাল ভাবে , তারপর চোখ সরু করে , রাজীব যে এখানে আসছে সেটা জান্নাত বিশ পঁচিশ মিনিট আগেও বলেছে আবরার কে , আবরার চাইলে রাজীব এলে ওকে জিজ্ঞাস করতে পারতো , কিন্তু সেটা না করে ওকে জিজ্ঞাস করছে , এই জিজ্ঞাস করা যে অর্থ প্রনদিত সেটা জান্নাত বুঝতে পারে , অথচ এমন ভাব করছে , যেন এই প্রশ্ন জান্নাত কে করা খুব স্বাভাবিক । আবরার কেন যে থিয়েটারে চান্স পায়নি সেটা ভাবে জান্নাত ,
“ আচ্ছা থিয়েটারে কেন নেয় নি তোমাকে?” জান্নাত নির্লিপ্ত ভাবে জিজ্ঞাস করে , বাদাম কেনার আগে আবরার আর জান্নাত সমঝোতায় পৌঁছেছিলো ওরা যেহেতু সেইম ব্যাচের তাই একে অপর কে তুমি করে বলবে ।
“ মানে , হঠাত এই প্রশ্ন!!”
“ তুমি যদি আমাকে রাজীবের কুশল জিজ্ঞাস করতে পারো , তাহলে আমিও হঠাত এমন প্রশ্ন করতেই পারি কি বলো?” জান্নাত একটু কঠিন করেই বলে ,
“ আরে রাগ করছো কেন? তোমারা পাশা পাশি থাকো , তাই ভাবলাম………”
“ তোমাকে আমি বললাম না রাজীব আসছে , তুমি আর আধাঘণ্টা ওয়েট করতে পারলে না? এই প্রশ্ন রাজীব কে জিজ্ঞাস করার জন্য?”
উত্তরে আবরার হাসে ,
“ দেখ আবরার খোঁচাখুঁচির স্বভাব বাদ দাও , নইলে আমি রানীর কাছে তোমার প্রস্তাব পৌছুতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে বাধ্য হবো, এবং তোমাকে আরো কিছুদিনের জন্য ঘর ছাড়া করে রাখবো”
“ এই না না প্লিজ , ভুল হয়ে গেছে “
“ মনে যেন থাকে , আর এটাও মনে রাখবে আমি তোমার বস” জান্নাত হালকা ফানি টোনে বলে
“ ওকে বস , আমি আজ থেকে আপনার একনিষ্ঠ , আপনি চাইলে মুখ থেকে শব্দ বরুবে , না চাইলে আমি বোবা” এই বলে আবরার সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কিছু বলতে চায় ,
সেটা দেখে জান্নাত কপাল কুঁচকে বলে “ মুখে বলো”
“ ওকে বস , আমি কি বাদাম খেতে পারি”
দুজন এক সাথে হেসে ওঠে , আর ঠিক ঐ মুহূর্তে জান্নাতের ফোন বেজে ওঠে , জান্নাত ফোন বের করে , রাজীব কল করেছে । জান্নাত ভাবে রাজীবের কালস তো আরো আধ ঘন্টার মত চলার কথা ,
রিসিভ করতেই রাজীবের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শুনতে পায় জান্নাত
“ জান্নাত , আব্বু , হসপিটালে , আমি যাচ্ছি”
“ তুই আছিস কোথায়?” জান্নাত সাথে সাথে জিজ্ঞাস করে ,
“ ক্লাস থেকে বের হয়েছি, বাইকের কাছে যাচ্ছি”
“ আমাকে সাথে নিয়ে যা , আমি রাস্তায় দাঁড়াচ্ছি”
জান্নাতের গলায় উদ্বেগ শুনে আবরার বুঝতে পারে ম কোন সমস্যা হয়েছে , জান্নাত কল কাট করতেই আবরার জিজ্ঞাস করে ।
“ ছোট আব্বু , ওনাকে হস্পিটালাইজ করা হয়েছে , আমি আর রাজীব সেখানে যাচ্ছি , তোমার ব্যাপারে পরে কথা বলবো , আবরার , তবে তুমি চিন্তা করো না , আমি একটা ব্যাবস্থা করছি”
“ আরে না না , আমি কি আসবো , যদি কোন কাজে লাগে”
“ না থাক , এখন আমরা বাইকে যাবো , লাগলে তোমাকে ডাকবো” কথা বলতে বলতে আবরার আর জান্নাত রাজীবের যাওয়ার পথে এসে দাড়ায় । আর এর কিছুক্ষন পর ই রাজীব এসে বাইক থামায় । আবরারের সাথে কোন ধরনের কথা হয় না রাজীবের । জান্নাত ও প্রায় কোন ধরনের বিদায় না নিয়ে , বাইকে উঠে পরে , সাথে সাথেই বাইক চালায় রাজীব । বেশ দ্রুত চালচ্ছে ।
“ রানী কে পেলাম না , রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না” বাইক চালাতে চালাতে বলে রাজীব , আজকে ও আর হেলমেট এর ঝামেলায় যায়নি ।
“ আচ্ছা আমি ট্রাই করছি” এই বলে জান্নাত নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে , বেশ কয়েকবার ট্রাই করে রিং হয় কিন্তু ধরে না । জান্নাত এক হাতে রাজীবের কাঁধ ধরে অন্য হাতে টাইপ করে “ রানী কল করিস”
****
রহিম ক্লাস নেয়ার সময় ই একটু খারাপ বোধ করছিলো , তবুও ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলো । কিন্তু কিছুক্ষন পর বুকে চাপ বোধ করে , সেই সাথে বমি ভাব , এক পর্যায়ে শরীর ঘামতে থাকে , ব্যাথা তীব্র আকার নেয় । রহিম আর টিকতে না পেরে বসে পরে , মুহূর্তেই ওর শরীর ঘেমে পরনের সার্ট ভিজে যায় ।
ছাত্ররা অবাক হয় এই দৃশ্য দেখে , কলেজের স্টুডেন্ট দের পড়াচ্ছিল , কিছু কিছু ছাত্র মিলে রহিম কে পার্শ্ববর্তী হসপিটালে নিয়ে যায় । সেখান থেকেই এক ছাত্র রহিমের মোবাইল থেকে রাজীব কে কল করেছে ।
জান্নাত আর রাজীব প্রায় দৌরে হসপিটালের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছুলে ডিউটি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ওকে ।
রাজীব প্রচণ্ড শকে আছে , ওর মাথা কাজ করছে না । রানী যখন অসুস্থ হয়েছিলো , রাজীব তখন বেশ ঠাণ্ডা মাথায় সব কিছু করেছিলো । কিন্তু আব্বুর কথা শোনার পর থেকে , রাজীবের ব্রেইন যেন নাম্ব হয়ে গেছে । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রচণ্ড আতংক পেয়ে বসেছে ওকে । একটা সিনারিও বার বার ওর মাথার ভেতর চলছে , সেই সিনারিওতে ওর আব্বু নেই , আর রাজীব চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছে না , রাজীব যেন নিজের চোখে দেখতে পারছে , ওদের পরিবার ছন্নছাড়া হয়ে যেতে ।
এই মানুষটি যতই নির্লিপ্ত থাকুক , তার উপস্থিতিই ওদের জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ । ওদের পরাবার কে যদি একটা গাছের সাথে তুলনা করা হয় , তবে ঐ গাছের শেকড় আর কাণ্ড হচ্ছে ওদের আব্বু , যে ওদের জন্য খাবার সরবারাহর সাথে সাথে একটা শক্ত বেজ দিয়েছে দাঁড়ানোর জন্য ।
রাজীবের মনে পরে যায় , ইদানিং ওর আব্বুকে ও কত বিষয়ে কত ভাবেই না দুষেছে । কিন্তু আজ বুঝতে পারছে , এই মানুষটির আসল মূল্য । কোন কিছু না করেই কত কিছু করছে ওদের জন্য । যার সংখ্যা গুনে বের করা রাজীবের পক্ষে সবভব নয় । খবরটা সোনার পর থেকেই রাজীবের মন জপে যাচ্ছে ‘ প্লিজ এখন নয় , এভাবে নয় প্লিজ’
এখন ডাক্তারের সামনে দাড়িয়েও রাজীব সুধু এই জপে যাচ্ছে , কথা যা বলার জান্নাত বলছে ।
ডাক্তারঃ “ আমরা সন্দেহ করছি , মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক , মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন । চিন্তা করবেন না । আমরা খুব যত্নের সাথে প্রাথমিক ব্যাবস্থা নিয়েছি , এখন পরিক্ষা নিরিক্ষা করা হবে , এখন আমাদের জানা জরুরি , ওনার ম্যাডিকাল হিস্টোরি , ওনার কি ডায়বেটিস , উচ্চ রক্তচাপ , বা অন্য কোন আন্ডারলেইং ডিজিজ আছে?”
ডাক্তারের এই প্রস্নে জান্নাত রাজীবের দিকে তাকায় , দেখে রাজীবের দৃষ্টি ব্ল্যাংক । ও এখানে নেই , ওর মনে অন্য ভাবনা চলছে । জান্নাত খুব ধিরে রাজীবের কাঁধে হাত রাখে , আর রাজীব চমকে ওঠে । চমকে উঠে জান্নাতের দিকে তাকায় । রাজীবের এমন ভাবে তাকানো দেখে জান্নাতের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে । এমন অসহায় দৃষ্টি আর কোনদিন রাজীবের চোখে দেখছে কিনা ওর মনে পরে না । জান্নাতের মনে হয় রাজীবের মনে কেমন ঝড় চলছে সেটা আন্দাজ করাও ওর পক্ষে সম্ভব নয় ।
জান্নাত খুব নরম ভাবে রাজীব কে ডাক্তারের করা প্রশ্নটা পুনরায় করে ।
“ ওহ হ্যা , আব্বুর , ডায়বেটিস আছে , উচ্চ রক্তচাপ ও আছে , আর কোন জানা রোগ নেই” রাজীব দুর্বল ভাবে বলে ।
“ আপনি ওনার ছেলে হন?” এই বলে ইয়ং ডাক্তার রাজীবের কাঁধে হাত রাখে , “ চিন্তা করবেন না , ওনাকে সঠিক সময় নিয়ে আশা হয়েছে “ এই বলে ডাক্তার ওখানে দাড়িয়ে থাকা কিছু কলেজ ছাত্রের দিকে ইশারা করে । রাজীব ও ওদের দেখে , মাথা একটু নুইয়ে ওদের কাজ কে এপ্রিশিয়েট করে ।
ডাক্তার আবার বলে “ এখন আমরা কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করবো , তারপর স্যার এসে সিধান্ত নেবেন , তবে চিন্তার কিছু নেই” এই বলে ডাক্তার হাসি মুখে বিদায় নেয় ।
রাজীব ছেলে গুলোর কাছে যায় , “ তোমাদের কি বলে ধন্যবাদ দেবো” রাজীবের কণ্ঠ থেকে কৃতজ্ঞতা উপচে পরে ।
“ আরে না ভাইয়া , স্যার আমাদের খুব স্নেহ করেন , ওনার জন্য এটুকু করতে পারবো না?”
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)