30-10-2025, 10:57 AM
(This post was last modified: 03-11-2025, 06:35 PM by মাইটি. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপডেট - ২
রঞ্জন যখন শিবের কাছে পৌঁছল, দেখল সে রাগে কাঠ কাটছে। ম্যানেজারের এমন অত্যাচার সহ্য করেই শিব বড় হয়েছে, তাই তার শরীরও সেইরকম গড়ে উঠেছে। রঞ্জন লক্ষ করল, শিব ঘামে ভিজে গেছে। তার শরীর খুব ভরাট নয়, তবু কঠোর পরিশ্রমের কারণে তার পেশি শক্ত ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। লম্বা গড়ন আর ফর্সা রঙের কারণে সে সবার থেকে আলাদা দেখায়। তার মুখে এমন নিষ্পাপ ভাব, যে কেউ তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। গোঁফের রেখা আর হালকা দাড়ি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তার মুখে রাগ স্পষ্ট। রঞ্জন একটা পুরোনো কুর্তা আর পাজামা পরেছিল। শিবকে দেখতে দেখতে সে তার কাছে গেল এবং আদরের সুরে বলল,
রঞ্জন: “কী হলো, শিব? এত রাগ কেন?”
শিব: (তাকে ধমকের সুরে তাকিয়ে) “তুই এখানে কেন এলি? যা এখান থেকে।”
রঞ্জন: “লতা দিদি বলল তোর সাহায্য করতে।”
শিব: “আমার কারো সাহায্য লাগবে না।”
রঞ্জন: (মন খারাপ করে) “অন্য কারোর রাগ আমার ওপর কেন ঝাড়ছিস? আমি তো শুধু দিদির কথায় এসেছি।”
এই বলে সে চুপচাপ কাটা কাঠগুলো তুলে এক জায়গায় জড়ো করতে লাগল। শিব একটু পরে তাকে দেখল, রঞ্জন মনমরা হয়ে কাজ করছে। তার মুখের বিষণ্ণতা দেখে শিবের খারাপ লাগল। সে দুঃখের সুরে বলল,
শিব: “দুঃখিত!”
রঞ্জন এটা শুনে তার দিকে তাকাল। দুজন কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে, তাই ঝগড়া-বিবাদ চলতেই থাকে, কিন্তু কাউকে কষ্টে দেখতে পারে না। রঞ্জন দুষ্টুমি করত, কিন্তু শিবের সঙ্গে অন্যায় হলে সে দুঃখ পেত। শিবের মুখের বিষণ্ণতা দেখে রঞ্জন হাসল।
রঞ্জন: “কোনো ব্যাপার নয়। তুই ওই নীচ লোকটার জন্য মন খারাপ করিস না। তুই তো ছোটবেলা থেকে ওকে চিনিস।”
এইভাবে কথা বলতে বলতে দুজন কাজে লেগে গেল। অনেক কাঠ কাটা হয়ে গেলে শিব কুঠার রেখে রঞ্জনের সঙ্গে কাঠ জড়ো করতে লাগল। এটা দেখে রঞ্জন আবার হাসল, শিবও হাসল।
রঞ্জন: “তুই এই ছোট ছোট ব্যাপার মনে কষ্ট নিস না। ওই নীচ লোকটার তো এমন অভ্যাস। আর আমরা তো বাধ্য।”
শিব: (রাগে) “একদিন আমি ওর মুখ ভেঙে দেব।”
রঞ্জন: “ছাড়, রাগ থামা। এই কাঠগুলো নিয়ে দিদির কাছে দিয়ে আসি।”
দুজনে কাঠ নিয়ে রান্নাঘরে রাখল। মুখ-হাত ধুয়ে শিব তার ঘরে চলে গেল, আর রঞ্জন রান্নাঘরে সাহায্য করতে লাগল। আশ্রমের মেয়েরা মিলে সব কাজ সামলাত। লতা, সরিতা আর আরও দুই-চারজন বড় মেয়ে ছিল। বাকিরা ছোট। বড় ছেলেরা বেশিরভাগই আশ্রম ছেড়ে চলে গেছে। বড় হয়ে কেউ অসভ্য হয়ে গেছে, কেউ টাকা রোজগার করতে শুরু করেছে, তাই আশ্রম ছেড়ে চলে গেছে। ম্যানেজার সবাইকে ভয় দেখাত, তাই বড় হয়ে সবাই চলে যেত। লতা আর সরিতা এখনো ছিল, তারাই বেশিরভাগ কাজ সামলাত, তাই ম্যানেজার তাদের সঙ্গে বেশি কঠোরতা করত না। আরেকটা কারণ, সে ছিল লম্পট। মেয়েদের ভয় দেখিয়ে বা ফুসলিয়ে শোষণ করত। অনেক মেয়ে তার জন্য আশ্রম ছেড়ে পালিয়েছে। সে লতার সঙ্গেও চেষ্টা করেছে, কিন্তু লতা কোনোমতে বেঁচে গেছে। লতার কাছে শিবই যেন সব, তাই সে তাকে ছেড়ে যেতে চায়নি। ম্যানেজারের অত্যাচার সহ্য করেই সে এখানে আছে।
ম্যানেজারের এই আচরণের জন্যই তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। সে এত কাজ করাত যে কলেজে সবসময় দেরি হয়ে যেত। শিবকেও বিরক্ত করত, যাতে সে পালিয়ে যায় আর সে লতার ওপর হাত দিতে পারে। কলেজের সময় কোনো না কোনো কাজ দিয়ে দিত, যাতে শিব যেতে না পারে। তবু লতা কোনোমতে তাকে সাহায্য করত। তবুও শিব দেরি করে কলেজে পৌঁছত। পুরো রাস্তা দৌড়ে যেতে হতো, আর দেরি হলে কলেজের মাঠে চক্কর দিতে হতো। এমন পরিস্থিতিতেও শিব ভালো নম্বরে পাশ করেছে। এখন সে বড় হয়েছে, তার মনেও ইচ্ছে হয় আশ্রম ছেড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু লতা তাকে বোঝায় যে আগে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করতে হবে। তাই মন মরিয়ে সে এখানে থেকে গেছে।
রান্নাঘরে মেয়েরা কাজ করছিল। রঞ্জন এলে লতা শিবের কথা জিজ্ঞাসা করল।
লতা: “সব হয়ে গেল? শিব কোথায় গেল?”
রঞ্জন: “হয়ে গেছে, দিদি। তোমার আদরের ছেলে ঘরে গেছে। তবে একটু রাগে ছিল। কাঠ এমন কাটছিল, যেন ম্যানেজারের মাথা কাটছে। আমার মনে হয়, একদিন সত্যিই ওর মাথা কাটবে।”
লতা: “চুপ কর, দুষ্টু! যা তা বলে যাচ্ছিস। শিব খুব সরল, ভালো ছেলে। মাঝে মাঝে রাগ করে, তবে খুব মিষ্টিও।”
সরিতা: “হ্যাঁ, আর খুব সুদর্শনও। একদম চকচকে।”
লতা: (চোখ পাকিয়ে) “তুই চুপ কর। ওর দিকে নজর লাগাস না।”
সরিতা: “আমি কেন নজর লাগাব? (মুচকি হেসে) আমি তো একদিন ওকে গিলে ফেলব।”
লতা: “মুখ ভেঙে দেব তোর মুখ, যদি ওর গায়ে হাত দিস।”
সরিতা: (অঙ্গভঙ্গি করে) “হায়, কী ফর্সা, কী লম্বা হয়ে গেছে। ওর সবকিছুই বোধহয় লম্বা।” (সব মেয়ে হিহি করে হাসতে লাগল।)
লতা: “চুপ কর, দুষ্টু! কী বকছিস?”
সরিতা: “হায়… সত্যি বলছি, ও যদি আমার সঙ্গে শুত, তাহলে এতদিনে… (হিহি করে হাসে)”
লতা: “এবার মার খাবি তুই। তোর এত আগুন জ্বলছে, যা ম্যানেজারের কাছে।”
সরিতা: (মুখে একটু বিষণ্ণতা ফুটে উঠল, তবে সামলে নিয়ে) “শিবের মতো কেউ হতে পারে? তুই বল, ওর মতো কেউ আছে?”
লতা: (সরিতার বিষণ্ণতা লক্ষ করে, নিজের কথায় আফসোস হলো। হেসে বলল) “সত্যি, ওর মতো ছেলে এখানে কোথায় পাবি? ও তো অন্যরকম।”
“চল, এখন কথা থামা। সবাই কাজে মন দে, বাচ্চারা ক্ষুধার্ত।”
সবাই তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করল। ছোট বাচ্চাদের আগে খাইয়ে তারপর বড়রা খেতে বসল।
লতা: “এই রঞ্জন, যা শিবকে ডেকে আন।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, দিদি।”
সে শিবকে ডাকতে তার ঘরে গেল। শিব চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। ঘামে ভেজা জামা খুলে ফেলেছিল। রঞ্জন তাকে দেখে থমকে গেল। তার শরীরের পেশি স্পষ্ট। কিছুক্ষণ সে তাকে দেখতে লাগল। তার হৃৎপিণ্ডে ঝড় উঠছিল। সে এখন যুবতী, তার মনে নতুন অনুভূতি জাগছে। শিবকে এভাবে দেখে তার মনে হচ্ছিল, গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। কোনোমতে নিজেকে সামলে সে কাসি দিল।
রঞ্জন: “উহু… উহু…”
শিব: (না তাকিয়ে, রুক্ষ গলায়) “কী হলো?”
রঞ্জন: “খেতে আয়।”
শিব: “খাব না।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, আমি দিদিকে পাঠাচ্ছি।”
শিব: (চোখ পাকিয়ে) “আসছি।”
রঞ্জন হেসে চলে গেল। রান্নাঘরে সবাই শিবের জন্য অপেক্ষা করছিল। শিব এসে খেতে বসল। খাওয়ার পর আবার ঘরে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পর লতা এল। শিব শুয়ে ছিল, তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল।
লতা: “কী হলো তোর?”
শিব: “দিদি, তুমি এমন করছ যেন কিছুই জানো না।”
লতা: “দেখ, আমি জানি। কিন্তু তুইও জানিস এসব তো রোজ হয়। এতে মনে কষ্ট নেওয়া উচিত নয়। তবে তুই তো খুব ভালো নম্বর নিয়া পাশ করেছিস।”
এই বলে লতা তাকে জড়িয়ে ধরল। শিবের মনও ঠিক হয়ে গেল। সে লতাকে জোরে বুকে জড়িয়ে ধরল।
লতা: “আহ! আস্তে, তোর মধ্যে কত শক্তি এসে গেছে, জানিস?”
শিব: “দুঃখিত, দিদি। আমি তো এখনো বাচ্চা। আমার মধ্যে শক্তি কোথায়?”
লতা: “বাচ্চা? কত লম্বা হয়ে গেছিস। এখন তো আমি তোর সামনে বাচ্চা লাগি। কারো নজর না লাগুক।” (এই বলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।) “এবার বড় কলেজে যাবি। কাল গিয়ে ভর্তি হয়ে নে।”
শিব: “আমার এক শিক্ষক কলেজে কথা বলে রেখেছেন। স্কলারশিপও পেয়েছি। ভর্তি হয়ে যাবে।”
লতা: “এমনই মন দিয়ে পড়। এই ছোটখাটো ব্যাপারে মন দিস না। আমাদের তো আর কিছু নেই। তুই ভালো পড়াশোনা করলে ভালো চাকরি পাবি, জীবন গড়ে তুলবি।”
শিব: “আমার নয়, দিদি, আমাদের। আমি তোমাকে সঙ্গে রাখব।”
লতা: (হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে) “পরের কথা পরে দেখা যাবে।”
শিব: “না, দিদি, তুমি আমার সঙ্গেই থাকবে। আমার কসম খাও।”
লতা: (হেসে) “ঠিক আছে, বাবা। এতে কসম কোথায় এল? চল, এখন বিশ্রাম কর। আমাকেও বিশ্রাম করতে হবে।”
দুজনে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল। সেদিন আর কিছু হলো না। দুপুরে সবাই মিলে কাপড় ধুলো। শিব ভারী বালতি তুলে শুকোতে দিচ্ছিল, রঞ্জন আর বীণা মিলে কাপড় শুকোচ্ছিল। পরদিন শিবের ভর্তির জন্য যেতে হবে। সকালে লতা তাকে ডেকে তুলল। চা-নাস্তা খাইয়ে বলল,
লতা: “চল, তাড়াতাড়ি। তোকে স্নান করিয়ে দিই।”
লতা অনেকবার শিবকে স্নান করিয়েছে। ছোটবেলায় তো রোজ একসঙ্গে স্নান করত। শুধু দুজন নয়, অনেক ছেলেমেয়ে একসঙ্গে স্নান করত। কিন্তু বড় হওয়ার পর সবাই আলাদা স্নান করতে শুরু করেছে। তবে মাঝেমধ্যে লতা শিবকে স্নান করিয়ে দিত। এটা নতুন কিছু নয়। আজও সে শিবকে ঘষে ঘষে স্নান করাচ্ছিল। কিন্তু এখন দুজনেই বড় হয়েছে। অজান্তেই তাদের মধ্যে কিছু অনুভূতি জাগছিল। তারা এখনো এটা বুঝতে পারেনি, কিন্তু শিবের লতার স্পর্শ, তার শরীরে হাত বোলানো ভালো লাগছিল। লতারও এটা করতে ভালো লাগছিল। স্নান শেষ হলে শিব তৈরি হয়ে ভর্তির জন্য বেরিয়ে গেল। তখন ম্যানেজার তাকে ডাকল।
ম্যানেজার: “কোথায় যাচ্ছিস?”
লতা: (শিবের বদলে উত্তর দিয়ে) “ও কলেজে ভর্তির জন্য যাচ্ছে।”
ম্যানেজার: “পড়ে কী করবে? ওকে বল কোনো কাজ-ধান্দা দেখে এখান থেকে চলে যাক।”
লতা: “ওর এখন পড়তে হবে।”
ম্যানেজার আর বেশি কথা বাড়াল না। শিব ভর্তির জন্য চলে গেল।
ম্যানেজার: “কতবার বলেছি, ওকে এত আঁকড়ে থাকা বন্ধ কর। তুই এখানে থাকতে চাস তো থাক, কেউ মানা করেনি।”
লতা: “ও এখনো ছোট। আগে ওকে পড়তে দাও, আমরা নিজেরাই চলে যাব।”
ম্যানেজার জানত, শিবকে বের করলে লতাও চলে যাবে। তার লতার যৌবন লুট করার ইচ্ছা ছিল, তাই আর কিছু বলল না। লতা কাজে লেগে গেল। শিব নতুন কলেজে পৌঁছল। এটা তার আগের কলেজের তুলনায় অনেক বড়। আশ্রমের একমাত্র ছেলে সে, যে এই কলেজে পৌঁছেছে। এটা ছিল আধা-সরকারি কলেজ, ফি কম ছিল। শিব স্কলারশিপ পেয়েছিল, তাই ফি দিতে হয়নি। অনেক ছেলেমেয়ে তাদের মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল। শিব যখন তাদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, কিছু ছেলে ঈর্ষার চোখে, আর মেয়েরা মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছিল। শিবের লম্বা গড়ন তাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছিল। সে অফিসে গিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করল। এক সপ্তাহ পর কলেজ শুরু হবে। তারপর সে আশ্রমে ফিরল।
ম্যানেজার কোথাও বাইরে গিয়েছিল। মেয়েরা কাজে ব্যস্ত ছিল। লতা তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল,
লতা: “সব ঠিকঠাক হয়ে গেল?”
শিব: “হ্যাঁ, দিদি।”
লতা: “ঠিক আছে, কাপড় বদলে নে। একটু পর খাবার তৈরি হবে।”
শিব ঘরে গিয়ে কাপড় বদলাল। তারপর ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে লাগল। রঞ্জন আর অন্য মেয়েরাও খেলছিল। শিবও তাদের সঙ্গে মিশে গেল। বাচ্চাদের সঙ্গে বাচ্চা হয়ে তাদের হাসাচ্ছিল। রঞ্জন হাসছিল।
রঞ্জন: “কলেজে সব হয়ে গেল?”
শিব: (স্বাভাবিকভাবে) “হ্যাঁ, হয়ে গেছে। একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?”
রঞ্জন: (প্রশ্নবিদ্ধ চোখে) “এতে জিজ্ঞাসার কী আছে? যা জিজ্ঞাসা করবি, কর।”
শিব: “তোরা দুজন কলেজে ভর্তি হবি না?”
রঞ্জন: “হতে তো চাই। কিন্তু তুই এখন আলাদা কলেজে যাবি, আমাদের কলেজ আলাদা হয়ে যাবে। ভয় করছে।”
শিব: “এতে ভয়ের কী আছে? তুই কি ভয় পাস? তুই তো এমন যে সবার হাওয়া টাইট করে দিস।”
রঞ্জন: (হেসে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে) “আমি কি এত খারাপ?”
শিব: “আমি বলতে চাইছি যে, তুই খুব সাহসী। আর আমি তো আছিই। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”
রঞ্জন: (দ্বিধায় তাকিয়ে, কিছু না বলে)
শিব: “আর কিছু বলবি?”
রঞ্জন: (আড়ষ্ট হয়ে) “না, আর কিছু না।”
বীণা: “তুই তো জানিস আমাদের সঙ্গে কী হয়। আমরা আশ্রম থেকে এসেছি শুনলে কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। এতদিন আমরা তিনজন ছিলাম। এখন শুধু আমরা দুই মেয়ে। তাই ভয় করে।”
শিব: “তাই তুই কলেজ ছাড়তে চাস? তোরা কি মনে করিস আমার সঙ্গে এসব হবে না? আমরা অনাথ, এতে আমাদের দোষ নেই। লোকে বলে তো বলুক। তাদের কথায় আমরা কি নিজেদের ক্ষতি করব? জীবনে এগোতে হলে, ভালো জীবন গড়তে হলে পড়াশোনা করতেই হবে। লোকে কী বলে, তা উপেক্ষা করতে হবে। তারাও বাচ্চা, তারা জানে না অনাথ হওয়া কী। তাদের পরিবার আছে, তাই তারা এসব বোঝে না। আমাদের কী? আমাদের তো ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। এমন লোকদের উপেক্ষা কর।”
রঞ্জন: “ওই ম্যানেজারও তো কত বিরক্ত করে।”
শিব: “আমি দিদির সঙ্গে কথা বলব। তবে তুই পড়ায় মন তৈরি কর।”
রঞ্জন: “ঠিক আছে, তুই যদি সাহায্য করিস, আমি কলেজে যাব।”
বীণা: “আমিও।”
এমন সময় সরিতা এসে সবাইকে খেতে ডাকল। সবাই ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খেতে গেল। বাচ্চাদের খাইয়ে বড়রা খেতে বসল।
শিব: “দিদি, তোমার সঙ্গে কথা ছিল।” (লতা তার দিকে তাকাল।) “দিদি, রঞ্জন আর বীণা পড়াশোনা ছাড়তে চেয়েছিল। আমি তাদের বোঝালাম। এখন তারা কলেজে যেতে রাজি।”
লতা: (দুজনের দিকে তাকিয়ে) “তাহলে যা। এতে জিজ্ঞাসার কী আছে?”
রঞ্জন: “কিন্তু ওই ম্যানেজার…” (কথা অসম্পূর্ণ রাখল।)
সরিতা: “ওর কী? আমি ওই নীচ লোকটাকে দেখে নেব। তোরা চিন্তা করিস না। পড়তে চাস তো পড়। বাকি আমরা দেখব। তাই না, লতা?”
লতা: “হ্যাঁ, তোরা চিন্তা করিস না।”
শিব: “দিদি, তুমিও তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছ। তুমিও ভর্তি হয়ে যাও।”
লতা: “এখানে আমরাই বড়। আমাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। তোরা পড়, বাকি আমরা দেখব।”
আর কোনো তর্ক হলো না। সবাই খেয়ে নিজের ঘরে শুতে গেল। কিছুক্ষণ পর লতা এল।
লতা: “বড় বুদ্ধিমান হয়ে গেছিস। নিজের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও চিন্তা করতে শুরু করেছিস।”
শিব: (হেসে) “তোমার কাছ থেকেই শিখেছি, দিদি। তুমি সবার এত চিন্তা করো, আমি তো শিখবই। তবে দিদি, তোমার পড়াও তো জরুরি।”
লতা: “জরুরি তো, কিন্তু কী করব? আর পড়াশোনার জন্য কলেজে যাওয়া জরুরি নয়। পড়াশোনা আমাদের বুদ্ধি বাড়ায়। এখন তুই আমাকে পড়াবি।”
শিব: “এটা ভালো। এতদিন তুমি আমাকে পড়িয়েছ, এখন আমি তোমাকে পড়াব।”
লতা: (হেসে) “ঠিক আছে। কাল ওদের ভর্তি করিয়ে আনিস। তোর কী হলো, সব ঠিকঠাক হয়েছে তো?”
শিব: “হ্যাঁ, দিদি। আমার এক শিক্ষক আগেই কথা বলে রেখেছিলেন। কোনো সমস্যা হয়নি। তবে দিদি, একটা কথা ভাবছিলাম।”
লতা: “কী?”
শিব: “দিদি, পড়াশোনার সঙ্গে যদি কোনো কাজ খুঁজি?”
লতা: “কেন, কী দরকার?”
শিব: “দিদি, পড়াশোনার জন্য বাড়তি বই, ইউনিফর্ম, ছোটখাটো খরচের জন্য তো টাকা লাগে। এখানে থাকা-খাওয়া পাওয়া যায়, তবে… তুমি তো বুঝছ।”
লতা: “তুই ঠিক বলছিস। কিন্তু তাতে তোর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।”
শিব: “না, দিদি, আমি সব ম্যানেজ করব।”
লতা: “ঠিক আছে। কিন্তু কী কাজ করবি?”
শিব: “এখনো ভাবিনি। কিছু একটা করব।”
লতা: “ঠিক আছে, যা ভালো মনে করিস।”
বি:দ্র:
নতুন গল্প সবার আগে পেতে টেলিগ্রামে @sStory69 সার্চ করুন। সাইটে আপডেট আসে ২ দিন পর।
গল্পের প্রথম আলো ছড়ায় সেখানেই, সরাসরি আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)