Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 2.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance আমার দুনিয়া (দিনদিন প্রতিদিন) ।
#20
“যে নাম্বার থেকে তুমি ফোন করেছিলে সেই নাম্বার থেকে একটা ফোন এসেছিলো। বললো ওখানে নাকি একটা ব্যাগ ছিলো।” 
রুমে ঢুকেই মিম বললো।


“সর্বনাশ!!! আমার ব্যাগ! আমি তো ভুলেই গেছিলাম। ব্যাগে আমার ল্যাপটপ, আম্মার ফোন, আরো কতকি যে আছে! দেখি তোমার ফোনটা দাও জলদি।”
 মনের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো। ল্যাপটপ হারালে সব শেষ। অনেক ডকুমেন্ট হারাই যাবে—যা এখনো ড্রাইভে নাই।


মিমের থেকে ফোনটা নিয়ে উক্ত নাম্বারে আবার কল করলাম। দেখলাম সালাম চাচার কণ্ঠ।
“চাচা ব্যাগটা কি ঠিকঠাক আছে?”
“হ্যাঁ বাপজান। পাশের যে দোকানে তোমার হুন্ডা(বাইক) রেখেছো সে দোকানদার রাস্তা থেকে তুলে রেখেছিলো। আমি আইতাসি বাপজান তোমার ব্যাগ লইয়া।” 


উফফফ, যাক বাঁচলাম। চাচা আপনে মানুষ নন। ফেরেস্তা। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলাম।
বউ বললো, “নাও ব্যাগের চিন্তা বাদ দাও। আগে খেয়ে নাও।”


মিম বেদানার ফল গুলি দুইটা দুইটা করে আমার মুখে দিচ্ছে। আমি খাচ্ছি। মাঝে মধ্যে একবার গালে হাত দিচ্ছে। চুলে হাত দিচ্ছে। কপালে একটা ছোট্র ব্যান্ডেজ আছে—সেটাতে আসতে করে হাত দিচ্ছে। কত কি যে করছে। সাথে বিরবির করছে—-ইশশ কত লেগেছে আমার বরটাকে। কত করে বললাম বাইরে যেওনা। শুনলোনা আমার কথা। এখন এত যে কষ্ট পেলে, এই কষ্টটা কে ভোগ করছে? আমার লজ্জাবতী স্বামিটা………।


বউ আমার নিজ মনে বিরবির করেই যাচ্ছে। বউ এর কথাই ঠিক। বাইরে না গেলে আজ আমার জীবনটা এমন হয়ে যেতনা। এক্সিডেন্টের আঘাতের কাছে আমার মনের আঘাত আজ মাথা তুলে দাড়াতোন। 
আমার সাজানো স্বপ্নগুলি এলোমেলো হতোনা। যে মানুষটাকে কলিজার মধ্যে বসিয়ে রাখছিলাম,সে মানুষটাকে আজ সেই কলিজাই কল্পনা করতে কলিজাতে ব্যাথা অনুভব করতাম না। বউ আমার ঠিক ই বলেছে—-বাইরে না গেলে এত কষ্ট আমার জীবনে আসতোনা।


আজ থেকে ঠিক এক বছর আগেই এই নিষ্পাপ মেয়েটি অন্য এক ছেলের বাহুডোরে সুয়ে ছিলো। উলঙ্গ হয়ে। কতটা বিশ্বাস অর্জন হলে একজন মেয়ে তার ১৮ বছরের যৌবন নি:সঙ্কচে, নির্ভয়ে অন্য এক পুরুষের হাতে–---তাও আবার বিয়ে বহির্ভুত–---তুলে দিতে পারে!
ছবিতে বাকগ্রাউন দেখে মনে হইছিলো তারা কোনো এক  হোটেলে উঠেছিলো সময় কাটানোর জন্য। না না, নস্টামির জন্য। ছবিগুলো একদম জীবন্ত ছিলো। দুজনের মুখে ছিলো বিশ্ব জয়ের ছাপ। দুধ গুলো যেমন দেখলাম ছবিতে,,বাসর রাতে তেমনি ছিলো দুধের সেপ। ৫মাস সম্পর্কের পর আজ দুই মাস চলছে আমাদের সংসার। তবুও একটি বারের জন্যেও টের পাইনি যে মিম তার এক্সের সাথে এতো কিছু করেছে–---না শরিরে, না মনে।
এতোটা নিয়ন্ত্রণে কিভাবে থাকতে পারে একটা মেয়ে!


শুনেছি, মেয়েরা যাকে প্রথমবার মন দিয়ে ফেলে তাকে কোনোদিন ও ভুলেনা। সেখানে শরীর পর্যন্ত বিলিয়ে দিয়েছে। হ্যা এটাকে শরীর দেওয়াই বলে। সেক্স মানে শুধু ভাজাইনাল ওয়ালে লিঙ্গ সঞ্চালন-ই না। সেক্স মানে এর বাইরেও আরো অনেক কিছু। এতো কিছু হবার পরেও এই ৭ মাসে তার মুখ থেকে কখনোই তাদের অতীত ভালোবাসার কোনো কথা শুনিনি। অনেকবার ই তার সাথে তার এক্স নিয়ে মজা করেছি। কই কখনো তো তাকে সে ব্যাপারে চুপ ই থাকতে দেখেছি।


কি ভাবছি উলটা পালটা সব। মেয়ে তার এমন জঘন্য অতীত কিভাবে স্বমির সাথে বলবে? কোনোদিন ই তারা তা করবেনা। বলা উচিত ও না। কিন্তু আজ আমার সাথে যেটা ঘটে গেলো–---তা? এটাকে আমি কিভাবে সামলাবো? এতকিছু দেখার পরেও মিমকে আবার আগের নজরে দেখবো কিভাবে? 


ঢাবিতে পড়াশোনা করেও---যেখানে আধুনিকতার জোয়ার বইছে---সেখানে ৪টি বছর থেকেও একটা প্রেম করিনি। প্রেম করে বিয়ে হচ্ছে এমনটা নজির খুব কম আমাদের সমাজে।
তাহলে যাকে বিয়েই করতে পারবোনা তাকে প্রেম করবো কেন??? মন কি এতই সস্তা? এক মন কজন মানুষকে দেওয়া যাই??? এমন উল্টাপাল্টা ম্যালা যুক্তি মাথায় ঘুরতো গত চারবছর। মিমের সাথে সম্পর্ক হবার পেছনে তার বিয়ের প্রোপোজাল। সাথে বাচ্চাসুলভ ফেস। এছারাও তার অতীতের কাহিনি শুনতে শুনতে একটা সময় তার প্রতি এক ধরনের সিমপ্যাথি তৈরি হয়ে গেছিলো। 


শুনে বুঝে মনে হলো–-কনজার্ভেটিভ পরিবারের মেয়ে, লুকিয়ে হয়তো প্রেমটেম করেছে---কি আর করেছে---মাকে লুকিয়ে মায়ের ফোন থেকেই দুচারটা কথা বলেছে। মিমের গল্প শুনে আমার এমনটাই মনে হয়েছিলো। কিন্তু তলে তলে যে এত কিছু---কে জানতো!
নিজের মনকে যতুই এদিক সেদিক ঘোরানোর চেস্টা করিনা কেন, বারবার একটা চিন্তাই মাথাই ঘুরছে----আচ্ছা, মিমের অতীত নিজ চোখে দেখার পর আর আগের মত তাকে গ্রহন করতে পারবো তো?
পারবো তো তার শরির ছুতে? শরির ছুয়ে ফিল নিতে? এই দুইটা মাসে যে শরিরটা ছিলো আমার সুখের জান্নাত। আজকের পর থেকে সেই জান্নাতকে আর জান্নাত ভাবতে পারবো তো! হাদিস কোরান নাকি বলে---তোমরা যেমন, তেমন সঙ্গী হবে তোমাদের। আজ এসবের পর ঐসব কথা আর বিশ্বাস হবে? নাকি বিশ্বাস করা উচিত?


আল্লাহ কোন পাপের শাস্তি আমাকে দিলো? ঢাকা শহরে এরা দুজন ছাড়া আমার আপন বলতে আর কেউ নাই। সারা জীবন এদের সামনেই থাকতে হবে। পারবো তো আগের মত তাদের সাথে মিশতে? গলাটা ভারি হয়ে আসছে খুব। মা পাশে থাকলে মাকে জরিয়ে ধরে কাদতাম খুউউউব। আমার কান্না দরকার। চিৎকার দিয়ে কান্না। হুমায়ুন আহমেদ বলেছে কাদলে নাকি মন হালকা হয়। বুকের মধ্যে এক পাহাড় সমাস ভাড়ি। এসব ভাবলে শ্বাস নিতেও গলা জরিয়ে আসে। চোখ ছল ছল করে উঠে।


“সোনা তুমি আবারো চোখের জল ফেলছো? তুমি আর একবার চোখের জল ফেললে দেখো আমি নিজেকে কিভাবে শেষ করি! তোমার কিছুই হয়নি সোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ই ভুল হয়েছে তোমাকে বাইরে আসতে দিয়ে। জোর করে আটকানো দরকার ছিলো। তুমি আর এক ফোটাও চোখের জল ফেলবেনা। আম্মা তোমাকে নিজের সন্তানের মত দেখে। তাই সকালের ঘটনার জন্য আম্মার কাছে লজ্জা পাবার কিছু নাই।” 


মিমের হাতের একটা বেদানা প্রাই শেষ। ওড়নার আচল দিয়ে আমার চোখ দুটো মুছে দিলো। কপালে একটা চুমো খেলো–---”আমার লক্ষ্মী সোনা। তোমার কিছুই হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু উঠে বসো তোমার জন্য ফেবারিট একটা খাবার এনেছি”। বলেই মিম মুচকি হাসলো।


“কি এনেছো?”
“গেস করো তো।”
“গেস করার মত মাথা হয়ে নাই।”
“ওয়েট।” মিম খাবারের ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করলো। কাচ্চির প্যাকেট। সত্যিই আমার পছন্দের একটা আইটেম। কাচ্চি দেখে জিবে জল এসে গেলো। শালার কি আছে জীবনে–----আগে পেটের শান্তি দরকার। সারাদিন কিছুই খাইনি।


উঠে বসতে যাবো,দেখি শাশুড়ি আমার পায়ের শেষপ্রান্তে গিয়ে বসে আছে। পায়ের আংগুল গুলি নেরেচেরে দিচ্ছেন।


“আম্মা আপনি পায়ের কাছে আবার চলে গেছেন। এদিকে আসেন তো। আপনি পায়ের কাছে থাকলে আমার পাপ হবে।”


“থাক বাবা, তুমি খেয়ে নাও। আমার সমস্যা নাই।”


আপনার সমস্যার কথা কে বললো??? আমাকেই অসস্থি লাগছে। তার বাচ্চামি দেখে  নিজেরি অসস্থি লাগছে।


“আম্মা আপনি এখানে এসে বসেন।” পাশে জায়গা করে দিলাম।


মিম প্যাকেটটা খুলে আমাকে খাওয়ে দিলো। এরি মাঝে সালাম চাচা হাজির।


“আপনের পরিবার চলে এসেছে দেখছি।” 
“আসেন চাচা ভেতরে। আম্মা, উনি হচ্ছেন সালাম চাচা। উনিই আমাকে ক্লিনিকে এনে ভর্তি করিয়েছেন। অনেক ভালো মানুষ উনি।” আম্মাকে বললাম।


আম্মা উঠে দাড়ালেন। সালাম চাচাকে সালাম দিলেন। বসতে বললেন।


সালাম চাচা ব্যাগটা আম্মার হাতে দিলেন।
“বাপজান, এহন শরিরটা কেমন আপনার?” সালাম চাচা জানতে চাইলেন।
“চাচা এখন আলহামদুলিল্লাহ। একটু পর চলে যাবো।”


এই ফাকে শাশুড়ি কথা শুরু করলেন—”আপবার প্রতি অনেক অনেক কৃতক্ষতা ভাইসাব। আপনি আমার জামাইকেই শুধু বাচাননি। আমাদের পরিবারকেই বাচিয়েছেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইসাব।


সালাম চাচার মত লোকেরা “ধন্যবাদ” শব্দটা বুঝেনা। তারা নগদে সাহায্য করতে ভালোবাসে। প্রতিদানে কিছুই চাইনা–---না পারিশ্রমিক, না ধন্যবাদ। খোদাতালা এই মানুষদের অন্যরকম কলিজা দিয়ে পাঠিয়েছে। সার্টিফিকেট ধারি বহুসংখ্যক ইতোরদের মাঝে এই পৃথিবীকে ব্যালেন্স করতে সালাম চাচাদের মত কিছু মানবতা সম্পন্ন কিছু মানুষ দিয়েছেন। এরা পৃথিবীতে আছেন বলেই পৃথিবী ব্যালেন্সে চলছে।
নয়তো পাপের ভরে দুনিয়ে উলটে যেত।


ধন্যবাদ শুনে সালাম চাচা কিছু বললেন না। তিনি চলে যেতে চাইলেন। বাইরেই রিক্সা রেখে এসেছে। শাশুড়ি আবারো উনাকে আটকালেন।


“ভাইসাব এখানে আপনার বাসা কোথায়? থাকেন কোথায়?”
“আপা আমার বাসা নাই। ঐ সামনের ফ্লাইওভাবের নিচে সুই।”


ইশশ, অথচ এই মানুষটার থাকার জায়গাটাও নেই????? কি নিদারুণ নিয়ম এই দুনিয়ায়। ইতোর প্রাণিদের থাকার জায়গায় অভাব নাই। অথচ এই লোকের ঘুমানোর জায়গাই নাই???


“আপনি কি করেন?” 
“আপা আমি রিক্সা চালাই। ভাড়াই। সন্ধ্যা হলে অফিসে জমা দিয়ে দিই।”


“আর আপনার দেশের বাসা?”


“ময়মনসিংহ।”


“আপনার পরিবারে কেউ নাই।”


“বিবি ছিলো,  ৭মাস হলো মারা গেছে।”


“আর আপনার ছেলে মেয়ে?”


“ওদের খোজ জানিনা আপা।”


“জানেন না মানে?”


“ওরা আমাদের সাথে থাকেনা। আলাদাই থাকে। দুই ছেলে। আলাদা খাই। আমরা দুই বুড়াবুড়ি বাসাই একাই থাকতাম। এলাকাই বুড়া লোককে কেউ কাজে নেইনা। তাই এক বছর হলো ঢাকাই আইসি। এখানে কাজের অভাব নাই।”


নিজের অজান্তেই বুক ভারি হয়ে আসলো আমার নিজেরি। চাচা কি শুনালো এসব! চাচার কেউ নাই? নিজ সন্তানেরাও খেতে দেইনা??? এই রকম একজন ফেরেস্তাকে নিজ সন্তান কিভাবে এমন অমানবিক কাজ করতে পারে? আমরা ৩টা মানুষ চাচার দিকে তাকিয়ে। শুনছি উনার জীবনের কথা। কি নির্মম এই দুনিয়া। নিজ জীবনের গল্প বলতে বলতে চাচার চোখে জল এসে গেছে।
দেখলাম শাশুড়ি শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছলেন। অনেক নরমমনা আমার শাশুড়ি।
“ভাইসাব, একটা অনুরোধ করবো, রাখবেন?”


শাশুড়ি আবার চাচাকে কি অনুরোধ করবে?


“জি আপা বলেন।”


“আগে কথা দিতে হবে, আপনি আমার অনুরোধটা রাখবেন।”


“আচ্ছা আপা বলেন।”


“ভাইসাব আপনি আজ থেকে আমার বাসাতেই খাবেন। ৩বেলা। সময় করে আসবেন, এসে খেয়ে যাবেন। আর রাত্রে ওইখানে শোয়ার দরকার নাই। আমার বাসাই অনেক রুম ফাকাই পরে থাকে। রাত করে আমাদের বাসাতেই থেকে যাবেন।এটা আমার অনুরোধ। প্লিজ না করবেন না।”


ভেতরটা যেন হালকা হয়ে গেলো শাশুড়ির কথা শুনে। মনে হলো দৌড়ে গিয়ে শাশুড়ির পায় ছুয়ে সালাম করে আসি। সত্যিই মনটা হালকা হয়ে গেছে শাশুড়ির এমন সিদ্ধান্ত শুনে। মিমের দিকে তাকিয়ে ঠোটের কোণে একটা হাসি দিলাম। ইশারাই বুঝাই দিলাম—শাশুড়ি চমৎকার এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


বউ আমার ইশারা বুঝতে পেরে নিজেও মায়ের সাথে যোগ দিলো—”হ্যা চাচা, প্লিজ না করবেন না। আজ থেকে আপনি আমাদের বাসাতেই খাবেন,থাকবেন। নিজের মানুষ ই ভাববেন আমাদের।”


সালাম চাচা আমার দিকে তাকালেন। আমি হ্যা সূচক মাথা ঝাকিয়ে ইশারা দিলাম। 


সালাম চাচা নিরুপাই হয়ে “আচ্ছা ঠিকাছে” বলে শাশুড়ির অনুরোধ মেনে নিলেন।

চলছে-চলবে যতদিন আমি আর এই ফোরাম বেঁচে আছি।
[+] 3 users Like Ra-bby's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার দুনিয়া - by Ra-bby - 28-10-2025, 01:19 PM
RE: আমার দুনিয়া - by Helow - 28-10-2025, 03:51 PM
RE: আমার দুনিয়া - by Ra-bby - 28-10-2025, 04:49 PM
RE: আমার দুনিয়া (দিনদিন প্রতিদিন) । - by Ra-bby - 29-10-2025, 07:13 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)