Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 2.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance আমার দুনিয়া (দিনদিন প্রতিদিন) ।
#19
আধা ঘণ্টার মধ্যে আমার শ্বশুরাল পরিবার হাজির। বউ আর শাশুড়ি।

না আসাটাই ভালো ছিলো। এভাবে কেউ ঝাপটে ধরে? দম আটকে মরেই যাবো বাড়া!
হাইরে মরা কান্না!বাপমরা কান্না। বাপের মৃত্যুতেও এমন কেদেছে কিনা সন্দেহ। বউ এসেই বুকে লেপটে গেছে। মরার কান্না চলছে। শাশুড়ি পাশে দাঁড়িয়ে আমার বাম হাতখানা ধরে আঙ্গুল গুলি নারাচারা করছেন। বউএর মরা কান্নার চোদনে শাশুড়ির মৃদু কান্না চাপা পরে গেছে। কান্নার আওয়াজে কিছুক্ষণের মধ্যেই নার্স এসে হাজির---“আপনারা কি শুরু করেছেন বলেন তো! পুরো ক্লিনিক আপনাদের কান্নার আওয়াজে ভরে গেছে। দয়া করে চুপ করুন। উনি মারা যাননি। বরঞ্চ শুকরিয়া হন যে উনি তেমন ক্ষতির স্বীকার হননি।“
“আমার বরের জন্য আমি কাদবো, তাতে কার কি!” বউ মাথাটা তুলে বিরবির করে বলে আবারো কান্না শুরু করলো। কান্ডো দেখে হাসিও পেলো।
 
“আম্মা আপনি বসেন।“ এতক্ষণ উনার উপস্থিতি কেউ গুরুত্ব দিইনি। বউ এর কান্নার মাঝে উনার চুপিসরে কান্না তেমন প্রকাশ পাইনি কারো কাছে।
“না বাবা ঠিক আছে।“ উনি পায়ের হাটুর কাছে গিয়ে বসলেন। ব্যান্ডেজের উপর হাত রাখলেন। “বাবা খুব বেশিই কি ক্ষতি হয়েছে?”
“না আম্মা। ঐ একটু চামড়া উঠে গেছে। ডাক্তার বেধে দিয়েছেন। ঠিক হয়ে যাবে।“
“বাবা আমাকে মাফ করে দাও। আমার জন্যেই আজ তোমাকে এত কষ্ট পেতে হলো।“ উনি পায়ে এক হাত দিয়ে  মুখ নিচু করে কথাগুলি বললেন।“
“ছি ছি আম্মা আপনি এসব কি বলেন। পা থেকে হাত সরান প্লিজ আম্মা। নয়তো আমার পাপ হয়ে যাবে।“
হাটু থেকে একটু উপরে উনার চোখের দুফোটা পানি পড়লো। উনি নিচ দিকে মুখ করেই চোখের জল ফেলছেন।
“আম্মা আপনি আমাকে পাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন।“ আপনি নিজেকে কেন দোষারোপ করছেন বলেন তো?” আমার নিজের ই অসাব্ধানতার জন্য এক্সিডেন্ট করেছি।“
দুনিয়া বড়ই অদ্ভত। তার চেয়েও বড় অদ্ভত মানুষের মন। নিজের মন ছাড়া কার মনে কি চলে, শালা কেউ বলতে পারেনা। উনারা যদি আমার মনের বর্তমান ব্যথাটা বুঝতো তাহলে কি এসব প্রশ্ন করতো? করতো না।
“সোনা তুমি আম্মাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।“ বউ আমার মুখের কাছে মুখ এনে কাদতে কাদতে বললো।
“জানো, তুমি বাসা থেকে চলে আসার পর আমি আম্মাকে বলেছি যে তুমি লজ্জা পেয়ে চলে গেলে। আর তখন থেকেই আম্মা নিজেকে অপরাধি করে বসে আছে। প্লিজ সকালের ঘটনার জন্য মন খারাপ করোনা। আর লজ্জা পাবার কি দরকার? উনি কি আমাদের পর? উনি তো আমাদের আম্মা---যেই মা আমাদের নিজ হাতেই মানুষ করেছে। তাই প্লিজ সোনা আম্মার সকালের ঘটনার জন্য নিজেকে আর কষ্ট দিওনা। আম্মা তোমার জন্য কত কান্না করেছো জানো? তুমি ফোন ধরোনা, তারপর ফোন বন্ধ---আম্মা তো পারেনা যে কাদতে কাদতে বেহুস হয়ে যাই!”
আচ্ছা আমার আজকের এই পরিস্থিতির জন্য সকালের ঘটনা দায়ী? নাকি অন্য কিছু? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম। উত্তর জানা।
“আমার খুব খিদা পেয়েছে। আমার জন্য একটু খাবারের ব্যবস্থা করো।“ পরিস্থিতি হালকা করার দরকার। উপাই না পেয়ে দুজনকেই কাজে ব্যস্ত করে ফেললাম।
“আম্মু তুমি তোমার জামাই এর কাছে থাকো, আমি এখনি বাইরে থেকে কিছু খাবার কিনে আনছি।“ বউ আমার এক চুল দেরি না করে বাইরে চলে গেলো।
শাশুড়ি আমার এখনো পায়ের কাছেই বসে আছেন। মুখ তুলেন নি এখনো। ডাক দিলাম, “আম্মা।“
উনি মুখ তুললেন। চোখ লাল। জলে টলমল করছে। দেখেই বুকটা হুহু করে উঠলো। ইশ, নিস্পাপ চেহারা। আমার জন্যেই কেদে কেদে নিজেকে নিস্তেজ করে ফেলেছেন।
“আম্মা এদিকে আসেন।“ আমি একটু সরে গেলাম। বাম পাশে  জায়গা করে দিলাম।
“থাক বাবা। আমি এখানেই থাকি।“ উনি পাশে আসতে ইতস্তত বোধ করছেন। লজ্জাই নয়তো অপরাধবোধে।
“আপনি না আসলে আমি রাগ করবো কিন্তু।“ ইমোশনাল গুলি মারলাম।
তাতে কাজ হলো। উনি আমার পাশে আসলেন। বসলেন। আমি উনার ডান হাতটা নিলাম। বুকে সাথে চেপে ধরলাম। বললাম,”আম্মা এখানে আমার আপনারা ছাড়া কে আছে বলেন? আপনিই আমার মা। আপনিই আমার বাবা। আপনিই আমার সব। সকালের ঘটনাটা যদি আমার নিজ মায়ের সাথে ঘটতো তাহলে কি আমি আমার মার থেকে লজ্জাই পালিয়ে বেরাতাম? আপনি বলেন আম্মা?”
উনি ফিস করে উত্তর দিলেন,”না।“
“তাহলে এখানে আপনিও তো আমার একজন মা। নাকি আমাকে আপন সন্তান ভাবতে পারেন না?”
“না বাবা কি বলো তুমি? তুমি তো আমার নিজ ছেলের মতই।“ তিনি তরিঘরি উত্তর দিলেন।
“তাহলে আম্মা আপনিই বলেন, সকালের ঘটনার জন্য যদি সেখানে আমার নিজের মা থাকতো তাহলে তো আমি এমন করতাম না, সেখানে আপনাকেও তো আমি নিজের মা মনেই করি তাহলে কেন আপনার সেই ব্যাপারটার জন্য আমি এমনটা করতে যাবো?” দিলাম লম্বা যুক্তি মেরে।
উনি যুক্তির সাথে সহমত। তবুও , নারির মন তো!
“তবুও বাবা, আমার উচিৎ ছিলো নক করে রুমে ঢোকা।“
উনি দেখছি কথা তুলে ধরলেন। যাক, উনার কথার রেস ধরেই কথা এগোনো উচিৎ। তাতেও যদি উনার মেয়ের অতীত কার্যকলাপের স্মৃতি থেকে নিজেকে কিছুটা সময় দূরে রাখতে পারি।
এক্সিডেন্টের আঘাত আমার কাছে এখন তুচ্ছ–মিমের অতীত মেমোরীর যন্ত্রনার থেকে। ভাবা যাই! কেমনে পারে একজন ছেলে এতো সুন্দর একটা মেয়ের সাথে ভালোবাসার নামে নস্টামি করতে? আমি তাদের কথোপকথোনের যতটা পেয়েছি তাতে ছেলেটির মধ্যে ভালোবাসা নামের কিছুই পাইনি। তার প্রতি কথাতেই একটা যৌন নেশার আভাস ছিল। যেন সে সারাক্ষণ ই যৌনতার জগতে থাকতো। মিমের থেকে প্রতিটা ছবি নেবার পেছনে ছিলো ইমোশনাল ব্লাকমেইল। আর এদিকে গরুর বাচ্চা গরু তার প্রতিটা টোপে পা ফেলতো।
“কি হলো বাবা, আবার মন খারাপ করে নিলে?” শাশুড়ি আমার চিন্তায় ছেদ ফেললেন। বর্তমানে ফিরে আসলাম।
“আচ্ছা আম্মা একটা প্রশ্ন করতে পারি?”
“হ্যাঁ বাবা করো।“
বাইরে থেকে মিমের কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি। কার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে আসছে। আমি ফিস ফিস করে আমার শাশুড়িকে বললাম,”আম্মা এসব কথা আমরা আলদা কোনো এক সময় করবো। এখন না। আপনার মেয়ে আসছে। সে শুনলে লজ্জা পাবে। বুঝেন ই তো সেই মুহুর্তে সে কেমন অবস্থাই ছিলো। আসল সত্য কি জানেন---সকলের ঘটনাই সবচেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছে আপনার মেয়ে। কিন্তু সে আপনার সাথে অভিনয় করে চলছে যাতে আপনি বুঝতে না পারেন। আমি বাইরে চলে আসার মূল কারণ ই আপনার মেয়ে। সে এতটাই লজ্জার মধ্যে পরেছিলো যে তাকে কিছুক্ষণ আপনার সাথে একা রাখার জন্যেই বাইরে আসা। ভাবলাম আমি জামাই মানুষ, কিছুক্ষণ বাইরে থেকে ঘুরে আসি। আর দেখেন এসেই এক্সিডেন্ট করলাম। তাছারা আরো ম্যালা কথা আছে এখন বলা যাবেনা। আপনার মেয়ে শুনলে আরো লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে। আর শুনেন, আমি তার এসব গোপন কথা আপনাকে বলে দিয়েছি, মিমকে প্লিজ বইলেন না। বেচারি তাহলে লজ্জাই মরেই যাবে। সকালে আসলেই মিমের কোনোই দোষ ছিলোনা। প্রথমে এসে দেখলেন তো সে ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু আমিই দরজা খোলা রেখে বেহুশের মত তাকে…..” পাগলের মত কি বলছি নিজেও জানিনা। মানসিক ও শারিরীক দুই আঘাতে মাথা বোধায় গেছে!
“ঠিকাছে বাবা, এসব কথা বাড়িতে গিয়ে আলোচনা কইরো।”
“তখন আপনি আমাদের এই অবস্থায় দেখার পর আপনার মেয়ে কি বলছিলো জানেন?”
আমি আবারো তরিঘরি প্রশ্নটা ছুরে দিলাম। পাগলের প্রলাপ বকছি। তবে কি বকছি নিজেও বুঝছিনা।  এখনো মিম রুমে ঢুকেনি।
“কি বলছিলো?”
শাশুড়ির মনের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। সাথে লজ্জা। লজ্জামিশ্রিত প্রশ্নসুলভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কি বলেছিলো তার মেয়ে তা জানার জন্য।। আমি মনে মনে হাসলাম। শালার দুঃখের দিনেও হাসি পাচ্ছে। কি বলতে কি বলে ফেললাম। এখন কি উত্তর দিব তাই তো মনে আসছেন। উপাই না পেয়ে—
শাশুড়িকে হাতের ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বললাম। কারণ মিম দরজার সামনে।
শাশুড়ি চুপ। আমিও চুপ। দুজনের ঠোটের কোণে এক চিলকি হাসি। মেয়ে আসছে দেখে আমার হাতের মুঠো থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলেন। মনে হয় লজ্জা পেলেন। তবে মনে হলো উনার মন থেকে অপরাধবোধটা চলে গেছে। 

এই ভালো কাজটা করতে পেরে নিজের ও ভালো লাগছে। হোকনা তা মিত্থের আশ্রয় নিয়ে। আমার একটা মিত্থেতে যদি একজন মানুষের মনের ভেতর বিরাট এক মিত্থা অপরাধবোধ দূর হয়---তবে সেই মিত্থা আমি হাজারো বার বলতে রাজি।

চলছে-চলবে যতদিন আমি আর এই ফোরাম বেঁচে আছি।
[+] 1 user Likes Ra-bby's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার দুনিয়া - by Ra-bby - 28-10-2025, 01:19 PM
RE: আমার দুনিয়া - by Helow - 28-10-2025, 03:51 PM
RE: আমার দুনিয়া - by Ra-bby - 28-10-2025, 04:49 PM
RE: আমার দুনিয়া (দিনদিন প্রতিদিন) । - by Ra-bby - 29-10-2025, 07:10 PM



Users browsing this thread: