নতুন জীবনের সূচনাঃ একটা প্রাইভেট ক্লিনিকের বেডে সুয়ে আছি। পাশে সালাম চাচা বসে। উনি পেশায় রিক্সাচালক---কিন্তু মানবতার দিক দিয়ে অনেক উচু মানের একজন মানুষ। এক্সিডেন্টের সময় আশাপাশের সবাই দৌড়ে আসলেও ক্লিনিক অবধি পৌছানোর দায়িত্বটা সালাম চাচাই কাধে নিয়েছেন। এক মুদির দোকানের হাতে নিজের রিক্সার চাবিটা দিয়ে সিএনজি ভাড়া করে উনি আমাকে ক্লিনিকে নিয়ে আনেন।
শুকরিয়া যে জ্ঞান হারাইনি। মাথায় আঘাতের চেয়ে পায়ের হাটুতেই আঘাতটা বেশি। হাটুর উপরের দুই থালা যেন নাই।
“বাপজান তোমার বাসাই কে কে আছে?” সালামা চাচা এ প্রথম আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো। নয়তো এতক্ষণ শুধুই ডাক্তার আর আমার আদেশ ই পালন করে গেছে। এটা আনা—সেটা আনা ইত্যাদি।
“চাচা, আমার বউ আর শাশুড়ি।“ মুচকি হেসে উত্তর দিলাম।
“আর বাবা মা?”
“উনারা দেশের বাসাই থাকে চাচা। আমি এখানেই থাকি। এখানেই শ্বশুর বাড়ি। এখনো পড়াশোনাই করছি।“
“তোমার ফোন, মানিব্যাগ সবকিছুই, বাবা ঐযে পাশের টেবিলে আছে।“ উনি আংগুল দিয়ে পাশের টেবিল ইশারা করলেন।
“চাচা আমাকে ফোনটা একটু এনে দিবেন?”
চাচা ফোন আনলে ফোন চেক করি। দেখি ফোন বন্ধ। স্কিন ফেটে চৌচির। চাচাকে বললাম, চাচা আপনার ফোন আছে?
চাচা পকেট থেকে একটা বাটান ফোন এগিয়ে দিলেন। মিমকে ফোন দিতে হবে। ওরা নিশ্চিত এতক্ষণে টেনশনে শেষ।
বউ এর নাম্বারে কল দিলাম। ফোন রিসিভের পর হ্যালোর পরিবর্তে কান্নাও আওয়াজ পাচ্ছি। বউ কান্না করছে। কোনো মতে বললো,” কে?”
“বউ, আমি রাব্বী।“
“তুমি কোথায়? কি হয়েছে তোমার? ফোন বন্ধ কেন পাচ্ছি তোমার? তোমার কিছু হয়নি তো?” এক দমে বলে গেলো। পাশ থেকে শাশুড়ি কি যেন বলতে শুনলাম। বুঝলাম না। উনি ফোনটা নিয়েই---“বাবা আমি দুঃখিত। আমার জন্যই আজ তুমি নিজেকে ছোট্র করছো। ভুলটা তো আমার ই। তুমি কেন নিজেকে ছোট করছো বলো তো বাবা? আমি তোমার মায়ের মত। মা-ই তো। জানো তুমি চলে যাবার পর থেকে বাসাই মরাকান্না চলছে। তারপর তুমি ফোন বন্ধ করে দিলা। মিম আমাকে সবিই বলেছে।তুমি নিজেকে ছোট ভাবছো। তাইনা বাবা?”
আমার শ্বাশুড়ি গড়গড় করে অনেক কিছুই বললেন। খুব মায়া লাগলো উনার কথা শুনে। বেচারা। এ যেন একজন মায়ের আকুতি। আমি শেষ-মেস উনাকে থামালাম।
“আম্মা আমি ক্লিনিকে ভর্তি আছি। বাইক এক্সিডেন্ট করেছি। আপনারা খামোখা উল্টাপাল্টা ভাবছেন। আমার ফোন ভেঙ্গে গেছে।“
ভাবলাম শাশুড়িকে সত্যটা বলে থামালাম। কিন্তু একি! তিনি এবার আহাজারি শুরু করে দিলেন। এ-কান্না কি সে-কান্না। ---"রাব্বী বেটা তুমি কোন ক্লিনিকে আছো? তুমি ঠিক আছো তো বাবা? তোমার কিছু হয়নি তো বাবা?” মা মেয়ের আবারো কান্নার রোল পরে গেলো।
কোনো মতে ক্লিনিক, সাথে রুম নাম্বার বলে ফোনটা রেখে দিলাম। পাশ থেকে সালাম চাচা হা করে সব শুনছেন। উনার চোখও ছল ছল করছে।
“চাচা কত টাকা খরচ করলেন ওষুধে?”
“না বাবা থাক। আপনেরে টেকা দেওয়ান লাগতো না। আপনে ঠিক আছেন আল্লাহর কাছে এইটাই হাজার শুকুর।“
সালাম চাচা আজ সারাদিন আমার ভাঙা মনটা বারবার জয় করেই যাচ্ছেন। চাচা আপনে এত ভালো কেমনে? কোন শিক্ষক আপনেরে এই শিক্ষা দিলো চাচা?
“চাচা আপনি আমার জন্য যা করেছেন সেটা অমুল্য। কিন্তু চাচা খরচের বেপারটা প্লিজ আমাকে দিতে দিন। চাচা আমি নিজেও ইনকাম করি। সমস্যা নাই।“
“এনকামের জইন্যে বলছিনা বাপজান। খুব বেশি খরচ হয়নি। আপনেরে দেওয়ান লাগতো না। আপনার বাড়িল লোকজনে এহন আসতেসে, আপনি রেস্ট নেন। আমি জায়গা। ঐহানেই আমার রিক্সা পড়ে আছে।“
চাচা উঠে দাড়ালেন। এক কথার মানুষ উনি। কথার মাঝে প্যাচ নাই। সাদামনের।
“চাচা একটু আমার পাশে বসবেন?”
“কিছু বলবেন বাপজান?”
“একটু আসেন। বসেন।“
চাচা বসলেন। উনার হাত টা নিজের হাতের মুঠোই নিলাম। নিজের গালে ঠেকালাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। আমার আব্বা থাকলে এমনটাই করতেন নিজ সন্তানের জন্য---নিঃশ্বার্থ ভালোবাসা। আজ আমার এই বিপদে আব্বাকে পাশে না পেলেও উপরওয়ালা আমাকে আরেকজন আব্বারে পাশে দিসেন। আল্লাহ তুমি মহান।
“বাপজান আপনে কাদেন?”
“না চাচা। এমনিই। আপনাকে দেখে নিজের আব্বার কথা মনে পরলো।“ চোখ দুইটা মুছলাম।
“বাপজনা, কাইদেন না। আল্লাহই বিপদ দিসে। আল্লাহই রহম দিবেন। আল্লহর উপর ভরসা রাইখেন।“
“চাচা আপনার এই ছেলে যদি একটা অনুরোধ করে রাখবেন?”
“কি বাপজান?”
মানি ব্যাগে কিছু টাকা ছিলো। গুনলাম না। পুরো টাকাটাই উনার হাতে ধরিয়ে বললাম, “ চাচা মনে করেন এই ছোট্র উপহারটুকু সন্তান তার বাবাকে দিচ্ছে।সন্তানের উপহার না করে দিবেন?”
সরল মনের চাচা। বুঝলাম কথার ফান্দে পরে গেছে।
“বাপজান আপনে অনেক ভালা মানুশ।“
তিনি আর কিছুই বললেন না। টাকাটা নিয়ে পকেটে রেখে দিলেন। আমার দুই গালে হাত দিয়ে, কপালটাকে সামনে এনে মিসমিল্লাহ সহিত কয়েকবার ফু দিলেন। বললেন, আল্লাহ দুরুতই আপনেরে ভালো করে দিবেন।
চাচার প্রস্থান লক্ষ করছি। ছোট এই দুনিয়ায়, কত রকমের মানুষের বাস। দিনে আনে দিন খাই মানুষটার মানবতা আজ আমার কাছে মহামূল্যবান ছিলো। মাঝে মাঝে পরিবারের বাইরের কেউ এসে আমাদের জীবনে পরিবারের চাইতেও আপন হয়ে যাই। দিয়ে যাই অফুরান্ত ভালোবাসা। রেখে যাই বুকভরা কিছু স্মৃতি—যা নিয়েই হয়তো সারা জীবন বেঁচে থাকা যাবে।
যাক, এতো চিন্তা করা যাবেনা। মাথার পেছন সাইড ব্যাথা করছে প্রচুর। ডাক্তার ব্যাথানাশক ইনিজেকশন দিয়ে গেছেন। ২০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবুও ব্যাথা কমছেনা। শুধুই এক্সিডেন্টের আঘাতের ব্যাথা হলে বোধায় এতক্ষণ কমে যেত!
শুকরিয়া যে জ্ঞান হারাইনি। মাথায় আঘাতের চেয়ে পায়ের হাটুতেই আঘাতটা বেশি। হাটুর উপরের দুই থালা যেন নাই।
“বাপজান তোমার বাসাই কে কে আছে?” সালামা চাচা এ প্রথম আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো। নয়তো এতক্ষণ শুধুই ডাক্তার আর আমার আদেশ ই পালন করে গেছে। এটা আনা—সেটা আনা ইত্যাদি।
“চাচা, আমার বউ আর শাশুড়ি।“ মুচকি হেসে উত্তর দিলাম।
“আর বাবা মা?”
“উনারা দেশের বাসাই থাকে চাচা। আমি এখানেই থাকি। এখানেই শ্বশুর বাড়ি। এখনো পড়াশোনাই করছি।“
“তোমার ফোন, মানিব্যাগ সবকিছুই, বাবা ঐযে পাশের টেবিলে আছে।“ উনি আংগুল দিয়ে পাশের টেবিল ইশারা করলেন।
“চাচা আমাকে ফোনটা একটু এনে দিবেন?”
চাচা ফোন আনলে ফোন চেক করি। দেখি ফোন বন্ধ। স্কিন ফেটে চৌচির। চাচাকে বললাম, চাচা আপনার ফোন আছে?
চাচা পকেট থেকে একটা বাটান ফোন এগিয়ে দিলেন। মিমকে ফোন দিতে হবে। ওরা নিশ্চিত এতক্ষণে টেনশনে শেষ।
বউ এর নাম্বারে কল দিলাম। ফোন রিসিভের পর হ্যালোর পরিবর্তে কান্নাও আওয়াজ পাচ্ছি। বউ কান্না করছে। কোনো মতে বললো,” কে?”
“বউ, আমি রাব্বী।“
“তুমি কোথায়? কি হয়েছে তোমার? ফোন বন্ধ কেন পাচ্ছি তোমার? তোমার কিছু হয়নি তো?” এক দমে বলে গেলো। পাশ থেকে শাশুড়ি কি যেন বলতে শুনলাম। বুঝলাম না। উনি ফোনটা নিয়েই---“বাবা আমি দুঃখিত। আমার জন্যই আজ তুমি নিজেকে ছোট্র করছো। ভুলটা তো আমার ই। তুমি কেন নিজেকে ছোট করছো বলো তো বাবা? আমি তোমার মায়ের মত। মা-ই তো। জানো তুমি চলে যাবার পর থেকে বাসাই মরাকান্না চলছে। তারপর তুমি ফোন বন্ধ করে দিলা। মিম আমাকে সবিই বলেছে।তুমি নিজেকে ছোট ভাবছো। তাইনা বাবা?”
আমার শ্বাশুড়ি গড়গড় করে অনেক কিছুই বললেন। খুব মায়া লাগলো উনার কথা শুনে। বেচারা। এ যেন একজন মায়ের আকুতি। আমি শেষ-মেস উনাকে থামালাম।
“আম্মা আমি ক্লিনিকে ভর্তি আছি। বাইক এক্সিডেন্ট করেছি। আপনারা খামোখা উল্টাপাল্টা ভাবছেন। আমার ফোন ভেঙ্গে গেছে।“
ভাবলাম শাশুড়িকে সত্যটা বলে থামালাম। কিন্তু একি! তিনি এবার আহাজারি শুরু করে দিলেন। এ-কান্না কি সে-কান্না। ---"রাব্বী বেটা তুমি কোন ক্লিনিকে আছো? তুমি ঠিক আছো তো বাবা? তোমার কিছু হয়নি তো বাবা?” মা মেয়ের আবারো কান্নার রোল পরে গেলো।
কোনো মতে ক্লিনিক, সাথে রুম নাম্বার বলে ফোনটা রেখে দিলাম। পাশ থেকে সালাম চাচা হা করে সব শুনছেন। উনার চোখও ছল ছল করছে।
“চাচা কত টাকা খরচ করলেন ওষুধে?”
“না বাবা থাক। আপনেরে টেকা দেওয়ান লাগতো না। আপনে ঠিক আছেন আল্লাহর কাছে এইটাই হাজার শুকুর।“
সালাম চাচা আজ সারাদিন আমার ভাঙা মনটা বারবার জয় করেই যাচ্ছেন। চাচা আপনে এত ভালো কেমনে? কোন শিক্ষক আপনেরে এই শিক্ষা দিলো চাচা?
“চাচা আপনি আমার জন্য যা করেছেন সেটা অমুল্য। কিন্তু চাচা খরচের বেপারটা প্লিজ আমাকে দিতে দিন। চাচা আমি নিজেও ইনকাম করি। সমস্যা নাই।“
“এনকামের জইন্যে বলছিনা বাপজান। খুব বেশি খরচ হয়নি। আপনেরে দেওয়ান লাগতো না। আপনার বাড়িল লোকজনে এহন আসতেসে, আপনি রেস্ট নেন। আমি জায়গা। ঐহানেই আমার রিক্সা পড়ে আছে।“
চাচা উঠে দাড়ালেন। এক কথার মানুষ উনি। কথার মাঝে প্যাচ নাই। সাদামনের।
“চাচা একটু আমার পাশে বসবেন?”
“কিছু বলবেন বাপজান?”
“একটু আসেন। বসেন।“
চাচা বসলেন। উনার হাত টা নিজের হাতের মুঠোই নিলাম। নিজের গালে ঠেকালাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। আমার আব্বা থাকলে এমনটাই করতেন নিজ সন্তানের জন্য---নিঃশ্বার্থ ভালোবাসা। আজ আমার এই বিপদে আব্বাকে পাশে না পেলেও উপরওয়ালা আমাকে আরেকজন আব্বারে পাশে দিসেন। আল্লাহ তুমি মহান।
“বাপজান আপনে কাদেন?”
“না চাচা। এমনিই। আপনাকে দেখে নিজের আব্বার কথা মনে পরলো।“ চোখ দুইটা মুছলাম।
“বাপজনা, কাইদেন না। আল্লাহই বিপদ দিসে। আল্লাহই রহম দিবেন। আল্লহর উপর ভরসা রাইখেন।“
“চাচা আপনার এই ছেলে যদি একটা অনুরোধ করে রাখবেন?”
“কি বাপজান?”
মানি ব্যাগে কিছু টাকা ছিলো। গুনলাম না। পুরো টাকাটাই উনার হাতে ধরিয়ে বললাম, “ চাচা মনে করেন এই ছোট্র উপহারটুকু সন্তান তার বাবাকে দিচ্ছে।সন্তানের উপহার না করে দিবেন?”
সরল মনের চাচা। বুঝলাম কথার ফান্দে পরে গেছে।
“বাপজান আপনে অনেক ভালা মানুশ।“
তিনি আর কিছুই বললেন না। টাকাটা নিয়ে পকেটে রেখে দিলেন। আমার দুই গালে হাত দিয়ে, কপালটাকে সামনে এনে মিসমিল্লাহ সহিত কয়েকবার ফু দিলেন। বললেন, আল্লাহ দুরুতই আপনেরে ভালো করে দিবেন।
চাচার প্রস্থান লক্ষ করছি। ছোট এই দুনিয়ায়, কত রকমের মানুষের বাস। দিনে আনে দিন খাই মানুষটার মানবতা আজ আমার কাছে মহামূল্যবান ছিলো। মাঝে মাঝে পরিবারের বাইরের কেউ এসে আমাদের জীবনে পরিবারের চাইতেও আপন হয়ে যাই। দিয়ে যাই অফুরান্ত ভালোবাসা। রেখে যাই বুকভরা কিছু স্মৃতি—যা নিয়েই হয়তো সারা জীবন বেঁচে থাকা যাবে।
যাক, এতো চিন্তা করা যাবেনা। মাথার পেছন সাইড ব্যাথা করছে প্রচুর। ডাক্তার ব্যাথানাশক ইনিজেকশন দিয়ে গেছেন। ২০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবুও ব্যাথা কমছেনা। শুধুই এক্সিডেন্টের আঘাতের ব্যাথা হলে বোধায় এতক্ষণ কমে যেত!
চলছে-চলবে যতদিন আমি আর এই ফোরাম বেঁচে আছি।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)