Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery কুন্ডলী ভাগ্য (নতুন আপডেট - ৫ম পর্ব) [Thriller, Romance & Action]
#3
আপডেট - ১ম পর্ব

প্রিয় বন্ধুরা,  

এই গল্প এক এমন ছেলের, যে সত্যিই একা হয়ে গিয়েছিল। একটি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। না ভাই-বোন, না মা-বাবা, না কোনো আত্মীয়। এই গল্পের চরিত্রগুলো গল্পের মাঝেই আসবে, তাদের কোনো আলাদা পরিচয় দেওয়া হবে না। আশা করি, আপনাদের পছন্দ হবে।  

এক তিন-চার বছরের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক মহিলা রাস্তায় ভিক্ষা করছিল। আগত-যাত্রীদের কাছে ছেলের খাবারের জন্য সাহায্য চাইছিল। এমন দৃশ্য সাধারণ হলেও এখানে একটা বিশেষ ব্যাপার ছিল। মহিলাটি ছিল মোটা, কালো, কিন্তু তার সাথের বাচ্চাটি ছিল ফর্সা, অসম্ভব সুন্দর। হ্যাঁ, একটু দুর্বল মনে হচ্ছিল। এক গাড়ির কাছে মহিলাটি ভিক্ষা চাইছিল, আর গাড়ির লোকটি বাচ্চাটির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।  

মহিলা: “বাবু, কিছু ভিক্ষা দিন, আমার ছেলে দুদিন ধরে খায়নি।”  
লোকটি: “এটা তোমার ছেলে?”  
মহিলা: “হ্যাঁ, এ আমারই ছেলে। কিছু দিন, ভগবান আপনার ভালো করবেন।”  

লোকটি পকেট থেকে একশত টাকার একটি নোট বের করে দিল। তখন সে কিছু বলল না, কিন্তু গাড়ি একপাশে রেখে পুলিশে ফোন করল এবং তাদের আসতে বলল। পুলিশ এসে মহিলাটিকে ধরে নিয়ে গেল এবং বাচ্চাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল।  

পুলিশ: “এটা তোমার বাচ্চা?”  
মহিলা: (পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গেল) “হ্যাঁ… হ্যাঁ… এ আমারই বাচ্চা।” (বারবার জিজ্ঞাসা করায় সে একই কথা বলতে লাগল। কিন্তু একজন মহিলা পুলিশ কঠোরভাবে জিজ্ঞাসা করায় সে ভয় পেয়ে গেল।)  
মহিলা: “মাফ করে দিন, সাহেব, এ আমার বাচ্চা নয়। এ আমি রাস্তায় একা পেয়েছিলাম। ওর কেউ ছিল না, তাই আমার কাছে রেখেছি।”  
পুলিশ: “কোথায় পেয়েছিলে? কবে?”  
মহিলা: “সাহেব, এ এক মাতালের কাছে ছিল। সে মদের নেশায় ওকে মারছিল। আমি ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। মাতালটা বলেছিল, এ তার বাচ্চা নয়, সে ওকে বিক্রি করতে চায়। সে নেশায় ছিল, তাই আমি ওকে নিয়ে পালিয়ে আসি।”  
পুলিশ: “কোথায় পেয়েছিলে এই বাচ্চা?”  
মহিলা: “কলকাতায়। আমি ওকে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।”  

মহিলাটিকে হেফাজতে নেওয়া হলো, আর বাচ্চাটিকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিল। পুলিশ বাচ্চাটির মা-বাবার খোঁজে অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই জানা গেল না। কলকাতায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলো, এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হলো, কিন্তু কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। অবশেষে বাচ্চাটিকে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠানো হলো। এই আশ্রমটি ছিল জানকীদাস নামের এক ব্যক্তির, যিনি বাচ্চাটিকে নিয়ে গিয়ে আশ্রমের ম্যানেজার দেবীলালের হাতে তুলে দিলেন।  

জানকীদাস অনেক দূরে থাকতেন। তিনি এই আশ্রমটি তৈরি করেছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি এখানে আসতেন, তবে বেশিরভাগ সময় দেবীলালই সবকিছু সামলাত। আশ্রমে অনেক বাচ্চা ছিল, বেশিরভাগই মেয়ে। সমাজের কী যেন শত্রুতা এই মেয়েদের সাথে, যারা তাদের ফেলে দেয়, যেন তারা কোনো আবর্জনা। বাচ্চাটি যখন আশ্রমে এল, তখন সে কাঁদছিল। লতা নামের একটি পাঁচ-ছয় বছরের মেয়ে তার কাছে গিয়ে তাকে শান্ত করতে লাগল। ছেলেটিরও লতাকে ভালো লাগল, আর সে চুপ হয়ে গেল।  

আশ্রমে আরও কিছু বড় ছেলেমেয়ে ছিল। বড় মেয়েরা বাচ্চাদের দেখাশোনা ও আশ্রমের কাজকর্ম করত। দেবীলাল সবাইকে দিয়ে কাজ করাত, ছোট হোক বা বড়। কাজ না করলে মারত, খাবার দিত না। দেবীলাল ছিল এক নিকৃষ্ট মানুষ। আশ্রমের নামে সে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলত, মেয়েদের শোষণ করত। যারা তার কথা না মানত, তাদের মারত। বড় হয়ে অনেক ছেলেমেয়ে আশ্রম থেকে পালিয়ে যেত। কেউ এই বাচ্চাদের কথা ভাবত না। কখনো কখনো কিছু ভালো মানুষ দান করতে আসতেন, খাবার, কাপড়, আর অন্যান্য জিনিস দিয়ে যেতেন।  

এভাবেই দিন কাটছিল। দিন মাসে পরিণত হলো, কিন্তু পুলিশ ছেলেটির সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না। বছর কেটে গেল, কোনো তথ্য না পেয়ে পুলিশ ফাইল বন্ধ করে দিল। লতা সারাদিন ছেলেটির সাথেই থাকত। সেই তার নাম রাখল শিব। শিবের সাথে খেলত, ঘুমোত, খাবার খাওয়াত। শিবও লতার সাথে এত মিশে গিয়েছিল যে তার সাথেই থাকত। লতাই তাকে স্নান করাত, খাওয়াত, নিজের সাথে শুইয়ে দিত। লতা নিজেও খুব বড় ছিল না, তবে মেয়েরা এসব বোধহয় ভালো শিখে যায়। তারা দুজন এতটাই কাছাকাছি হয়ে গিয়েছিল যে সবসময় একসাথে থাকত।  

যখন আশ্রমে কেউ বাচ্চা দত্তক নিতে আসত, তাদের প্রথম পছন্দ হতো শিব। কিন্তু শিব কখনোই লতাকে ছেড়ে যেতে রাজি হতো না। তারা যখন একটু বড় হলো, লতাই শিবের ভালো করে যত্ন নিত, তাকে কলেজে নিয়ে যেত, পড়াত। লতার সমবয়সী আরেকটি মেয়ে ছিল, সরিতা। আরও দুটি মেয়ে ছিল, রঞ্জন আর বীণা, যারা শিবের কাছাকাছি বয়সের। আশ্রমে আরও অনেক বাচ্চা ছিল। শিব, রঞ্জন আর বীণার সাথে খেলত। তারা তখনো বাচ্চা ছিল, তাই ম্যানেজারের মার সহ্য করত। খেলতে খেলতে দিন কাটত।  

কখনো খেলার মাঝে রঞ্জন আর বীণা শিবের সামনেই জামা তুলে প্রস্রাব করে বসত। শিব তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। আর শিব যখন প্রস্রাব করত, তারাও দেখত। বাচ্চা ছিল, তাই এটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তারা বুঝতে শুরু করেছিল তাদের শরীরে কী কী পার্থক্য আছে। সবাই একসাথে উলঙ্গ হয়ে স্নান করত। বছর যেতে যেতে মেয়েদের শরীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করল। কয়েক বছর এভাবে কাটল, কিন্তু তারা যখন আরও বড় হলো, তখন আলাদা আলাদা স্নান করতে শুরু করল। তবে লতা মাঝেমধ্যে শিবকে স্নান করিয়ে দিত।  

এভাবে বেশ কয়েক বছর কাটল। আজ ছিল দশম শ্রেণির ফলাফলের দিন। এত কষ্টের মাঝেও শিব খুব ভালো নম্বরে নিয়া পাশ করেছিল। লতা এখন এক যুবতী মেয়ে হয়ে উঠেছে, আর শিবও লম্বা, গঠনবদ্ধ যুবক। শিব, রঞ্জন আর বীণা তাদের ফলাফল নিয়ে আশ্রমে ফিরল। শিব দৌড়ে লতাকে খুঁজতে গেল। রান্নাঘরে লতাকে কাজ করতে দেখে সে পেছন থেকে তার কোমরে হাত দিয়ে তাকে হাওয়ায় তুলে ফেলল। হঠাৎ এই আক্রমণে লতা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু শিব কি থামার পাত্র? সে লতাকে হাওয়ায় তুলে ঘোরাতে লাগল। রান্নাঘরে কাজ করা অন্য মেয়েরা হেসে উঠল। লতা যখন বুঝল এ শিব, তখন সেও হাসতে লাগল।  

লতা: “কী করছিস? নামা আমাকে, পড়ে যাব!”  
শিব: (ঘোরাতে ঘোরাতে) “দিদি, আমি কি তোমাকে পড়তে দেব? তোমার কিছু হওয়ার আগে আমি নিজের জান দেব।” (এই বলে সে লতাকে নামিয়ে দিল।)  
লতা: (মিথ্যে রাগ দেখিয়ে তার গালে আলতো চড় মেরে) “মরুক তোর শত্রু! ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বলে বললাম। বল, ফলাফল কী হলো? তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাশ করেছিস।”  
শিব: “শুধু পাশ? দেখো আমার মার্কশিট, কত ভালো নম্বরে পাশ করেছি। এসব তোমারই পরিশ্রম। তুমি আমাকে এই যোগ্য করে তুলেছ।”  
লতা: (মার্কশিট দেখে খুশি হয়ে উঠল) “আরে বাহ! তুই তো আমার থেকেও ভালো নম্বরে পাশ করেছিস!”  
শিব: “দিদি, আমি কলেজে প্রথম হয়েছি। শিক্ষকরা, প্রিন্সিপাল সবাই আমার প্রশংসা করছিলেন।”  
লতা: “করবেনই তো! আর তোরা দুজন কী হলো? পেছনে লুকিয়ে আছিস কেন?”  
রঞ্জন: “আমরাও পাশ করেছি, দিদি। তবে আমাদের নম্বর এই বাঁদরের মতো নয়।”  
শিব: “এই, কাকে বাঁদর বললি, টিকটিকি?”  
রঞ্জন: “তোকে বললাম, খাম্বা!”  
শিব: “খাম্বা বললি?”  
রঞ্জন: “হ্যাঁ বললাম। ভুল কী বললাম? খাম্বার মতো লম্বা হয়ে গেছিস।”  
শিব: “দাড়া, এখন দেখাচ্ছি!” (এই বলে সে রঞ্জনের দিকে এগিয়ে গেল। রঞ্জন দৌড়ে পালাতে শুরু করল।)  
লতা: “তোরা থাম! বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস কেন? শিব, থাম!”  
শিব: “আজ ওকে ছাড়ব না, দিদি।”  
রঞ্জন: “বাঁদর, তুই শুধু ঘুরবি, আমাকে ধরা তোর সাধ্য নয়!”  

রঞ্জন এদিক-ওদিক দৌড়াতে লাগল, আর শিব তার পেছনে। কখনো খাম্বার পেছনে, কখনো লতার পেছনে লুকিয়ে পড়ত। তারা মজা করছিল, এমন সময় আশ্রমের ম্যানেজার দেবীলাল এসে গর্জে উঠল।  

দেবীলাল: “এটা কী হট্টগোল লাগিয়ে রেখেছিস?”  

তার কণ্ঠে সবাই থমকে গেল। সে ছিল এমনই এক খারাপ মানুষ। সবাইকে বিরক্ত করত। শিব আর লতাকেও সে বাদ দেয়নি। সরিতা সাহস করে বলল,  

সরিতা: (ভীত কণ্ঠে) “শিবের ফলাফল এসেছে। খুব ভালো নম্বরে পাশ করেছে, তাই…”  
দেবীলাল: (সরিতার দিকে তাকিয়ে) “তাতে এত হইচই করার কী দরকার? নিজের কাজে মন দে, নয়তো এখান থেকে বের করে দেব।” (শিবের দিকে তাকিয়ে) “তুইও যা, কাজে লেগে যা। পেছনে কাঠ পড়ে আছে, কেটে ফেল। নয়তো রান্না হবে না, আর কেউ খেতে পারবে না।” (এই বলে সে চলে গেল।)  
সরিতা: (আস্তে গলায়) “কী নীচ মানুষ!”  

ভয়ে সবাই নিজের নিজের কাজে লেগে গেল। শিব তার ঘরে গিয়ে মার্কশিট রাখল। সেখানেই লতার ঘরও ছিল। সে একটা পুরোনো টি-শার্ট আর লুঙ্গি পরে পেছনের ঘরের দিকে গেল। মনে মনে ম্যানেজারকে গালি দিচ্ছিল, কিন্তু কিছু করতে পারছিল না। এখানেই তাকে থাকতে হবে। নয়তো এই নীচ মানুষটা আরও বিরক্ত করবে। আশ্রমের অনেক ছেলেমেয়ে বড় হয়ে তার জন্যই পালিয়ে গেছে। কিন্তু শিব পালাতে পারবে না। গেলেও কোথায় যাবে? আর সে একা নয়, লতা দিদিও আছে। তাকে ছেড়ে সে যেতে পারবে না। এই আশ্রমই এখন তার বাড়ি।  

ইতিমধ্যে লতা, সরিতা, আর ছোট মেয়েরা, রঞ্জন আর বীণা সবাই কাজে লেগে গেল।  

সরিতা: “এমন নীচ মানুষকে এখানে ম্যানেজার বানিয়েছে। মনে হয় ওর রক্তই ঝরিয়ে ফেলি।”  
লতা: “ছাড় না। যখন উপরওয়ালা আমাদের ভাগ্য এমন লিখেছে, তখন কাউকে দোষ দেওয়ার কী আছে?”  
সরিতা: “সত্যি বলছিস লতা, এই উপরওয়ালাও জানি না কার সাথে ঝগড়া করে বসে আমাদের ভাগ্য লিখেছে। মা-বাবা আমাদের আবর্জনার মতো ফেলে দিয়েছে। পালতে না পারলে জন্ম দিল কেন? তাদের দশ মিনিটের আনন্দের জন্য আমাদের পুরো জীবন নরক বানিয়ে দিয়েছে।”  
লতা: “এসব কথা ছাড়। আমরা এতে কিছু করতে পারব না।”  
সরিতা: “সত্যি বলছি, যদি ওই নীচ লোকগুলো আমার সামনে আসে, তবে মেরে মেরে তাদের হাল খারাপ করে দেব।”  
লতা: “চুপ কর, ঠাকু মা। যখন দেখি তখন তুই আগুন হয়ে যাস। ম্যানেজারের সাথেও ঝগড়া করিস। যদি বের করে দেয়, তবে কোথায় যাবি?”  
সরিতা: “ওই নীচ লোকটা আমাকে বের করবে? বিনামূল্যে আমার সাথে মজা করতে পায় বলে। একবার বলে দেখুক, ওর সব কুকীর্তি ফাঁস করে দেব। নীচ মানুষটা এখানের টাকা, জিনিসপত্র, যা আমাদের জন্য দান আসে, সব নিজে গিলে ফেলে। তার ওপর মেয়েদের শোষণ করে। আমাদের ভাগ্যই খারাপ। আমাদের মতো মেয়েদের কেউ বিয়েও করে না। নয়তো আমি কবে পালিয়ে যেতাম। এখানে তো এই একটা আছে, আর বাইরে পা ফেললেই এমন জানোয়ারে ভরা। আর এই উপরওয়ালাও আমাদের পাঠিয়ে আমাদের কথা ভুলে গেছে।”  

লতা কোনো উত্তর দিল না। তার চোখেও জল চলে এল। সে নিজে জানে কীভাবে সে নিজেকে এই ম্যানেজারের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো ছুতোয় তাকে বিরক্ত করে, নোংরা কথা বলে। এত বিরক্ত করত যে তার দশম শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। কলেজের সময়েও তাকে কাজ দিয়ে দিত। প্রায়ই সবাইকে দুই কিলোমিটারের বেশি দৌড়ে কলেজে যেতে হতো। দেরি হলে কলেজেও শাস্তি পেত। মেয়েদের হালকা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো, কিন্তু শিবকে পাঁচ-দশ চক্কর মাঠে দৌড়াতে হতো। তাই শিবের জন্যই লতা কলেজ ছেড়ে দিয়েছিল, যাতে শিব সময়মতো কলেজে পৌঁছাতে পারে। তবুও ম্যানেজার শিবকেও বিরক্ত করত। কাঠ কাটা, শস্যের বস্তা রাখা, বড় বড় পাত্র পরিষ্কার করা, তুলে আনা-নেওয়া এমন নানা কাজ।  

আশ্রমে ছিল ছয়-সাতটি ছোট ঘর আর একটি বড় হল। বড় হলে ছোট বাচ্চাদের রাখা হতো, সাথে কোনো বড় কেউ থাকত। বেশিরভাগ সময় সরিতা দিদি তাদের সাথে থাকত, কখনো লতা দিদি। কখনো শিবও সেখানে ঘুমিয়ে পড়ত। তবে বেশিরভাগ সময় শিব আর লতা একই ঘরে ঘুমোত। এক ঘরে রঞ্জন আর বীণা ঘুমোত। তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল। এক ঘরে মাঝেমধ্যে সরিতা ঘুমোত। বাকি ঘরগুলোতে জিনিসপত্র রাখা হতো। একটি ঘর ছিল অফিসের জন্য, যেখানে অফিসের জিনিস ছিল। একটি ঘর ছিল ম্যানেজারের। আগে সে এখানেই থাকত, কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকে। আশ্রমের মালিক জানকীদাস এখন আর এখানে আসেন না। দেবীলাল যখন থাকত, তখন মেয়েদের শোষণ করার চেষ্টা করত। তবে এখন তারও বয়স হয়েছে। আগে সে অনেক মেয়েকে শোষণ করেছে, যার জন্য অনেকে পালিয়ে গেছে।  

রাতে শিব লতার সাথেই থাকত, যার জন্য ম্যানেজার কখনো লতার কাছে সফল হতে পারেনি। নয়তো অনেক মেয়ের মতো লতারও সম্ভ্রম লুট হতো। অনাথ হওয়ার কারণে তাদের কথা জিজ্ঞাসা করার কেউ ছিল না। এসব ভাবতে ভাবতে লতা চোখ মুছে রঞ্জনকে বলল,  

লতা: “রঞ্জন, যা তো, শিবের কাছে গিয়ে ওর একটু সাহায্য কর।”  

রঞ্জন: “ঠিক আছে, দিদি।” (সে পেছনের দিকে চলে গেল, যেখানে শিব রাগে কাঠ কাটছিল।)  

রঞ্জন আশ্রমে শিবের আগে থেকেই ছিল। সে দুই-তিন দিন বয়সে এখানে এসেছিল। তবে তার বয়স শিবের কাছাকাছি। গায়ের রং গমের মতো, কিন্তু পরিষ্কার, উজ্জ্বল। দেখতে সুন্দরী, বড় বড় চোখ, ধারালো নাকের নিচে পাতলা ঠোঁট, যা তাকে আকর্ষণীয় করে। এমন পরিবেশে বড় হয়েছে, তাই শরীর একটু রোগা। কিন্তু যৌবনের দোরগোড়ায় পা রেখেছে, শরীর কিছুটা ভরাট হতে শুরু করেছে। বুকের উঁচু ভাব এসেছে, কোমরের নিচের অংশও কিছুটা ছড়িয়েছে, যেমনটা মেয়েদের বড় হওয়ার সময় হয়।  

সে লাফিয়ে লাফিয়ে পেছনের দিকে পৌঁছল। দেখল শিব জোরে জোরে কাঠ কাটছে। কিছুক্ষণ সে তাকে দেখল। এখন সে যুবতী হয়েছে, তাই ছেলেদের দিকে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। এই সেই শিব, যার সাথে সে ছোটবেলা থেকে আছে। একসাথে খেলেছে, ঝগড়া করেছে, হেসেছে। ছোটবেলায় একসাথে স্নানও করেছে। কিন্তু সেসব ছিল শৈশব। এখন তারা দুজনেই বড় হয়েছে। শিব এখনো ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের ব্যাপারে অজ্ঞ, কিন্তু রঞ্জন আশ্রমে এসব খেলা দেখেছে, তাই এই বিষয়ে সে একটু বুঝতে শুরু করেছে।  

শিব কাঠ কাটতে কাটতে ঘামে ভিজে গিয়েছিল। তার পাতলা টি-শার্ট শরীরে লেপটে গিয়েছিল, তার বুকের পেশি, কাঁধের গঠন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। রঞ্জন একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল। শিবের প্রতি তার মনে একটা অদ্ভুত টান অনুভব হচ্ছিল। তার হৃৎপিণ্ড একটু দ্রুত স্পন্দন করছিল। শিবের প্রতিটি কুঠারের আঘাতের সাথে তার শরীরে একটা শিহরণ জাগছিল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল।  

রঞ্জন: “কী রে, এত রাগ কিসের? কাঠের ওপর ঝাল ঝাড়ছিস?”  

শিব: (কাঠ কাটা থামিয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে) “এই নীচ লোকটার জন্য। আমাদের জীবন নরক করে দিয়েছে।”  

রঞ্জন কাছে এসে তার পাশে বসল। শিবের ঘামে ভেজা কপাল, তার চোখে জমে থাকা রাগ দেখে রঞ্জনের মনে একটা অজানা অনুভূতি জাগল। সে হালকা হেসে বলল,  

রঞ্জন: “ছাড় না। এসব ভেবে কী হবে? তুই তো ভালো নম্বর নিয়া পাশ করেছিস। এবার কী করবি ভাব।”  

শিব তার দিকে তাকাল। রঞ্জনের শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে একটু সরে গিয়েছিল। তার যৌবনের ভরা রূপ শিবের চোখে পড়ল। সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিল। রঞ্জন তা লক্ষ করল, তার ঠোঁটে একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠল।  

রঞ্জন: “কী রে, আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”  

শিব: (মুখ লাল করে) “না, তা নয়। তুই এমন কথা বলিস কেন?”  

রঞ্জন হেসে উঠল। তার হাসির শব্দে শিবের মনের রাগ কিছুটা কমে গেল। রঞ্জনের কাছাকাছি বসে থাকতে তার শরীরে একটা অদ্ভুত উষ্ণতা অনুভব হচ্ছিল। রঞ্জনের শাড়ির গন্ধ, তার চুলের মৃদু স্পর্শ শিবের মনে একটা অজানা ঝড় তুলছিল। সে কাজে মন দিতে চেষ্টা করল, কিন্তু রঞ্জনের উপস্থিতি তাকে বারবার বিভ্রান্ত করছিল।  

রঞ্জন: “আমি তোকে সাহায্য করতে এসেছি। বল, কী করব?”  

শিব: “তুই যা, আমি একাই পারব।”  

রঞ্জন: “একা কেন? আমি তোর পাশে থাকব।”  

তার কথার মধ্যে একটা গভীর আবেগ ছিল। শিব তার দিকে তাকাল। রঞ্জনের চোখে একটা অদ্ভুত ঔজ্জ্বল্য ছিল, যেন সে শিবকে শুধু দেখছে না, অনুভব করছে। শিবের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। সে কাঠের দিকে তাকিয়ে কাজে মন দিতে চাইল, কিন্তু তার হাত কাঁপছিল। রঞ্জন হঠাৎ তার হাতের ওপর হাত রাখল।  

রঞ্জন: “শিব, তুই আমার সাথে এমন করিস কেন? আমরা তো ছোটবেলা থেকে একসাথে আছি।”  

শিবের গলা শুকিয়ে গেল। রঞ্জনের হাতের স্পর্শে তার শরীরে একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। সে কী বলবে বুঝতে পারছিল না। রঞ্জন কাছে এসে তার আরও কাছাকাছি বসল। তার শাড়ির আঁচল আবার সরে গেল, আর শিবের চোখ তার বুকের উঁচু ভাবের দিকে চলে গেল। রঞ্জন তা লক্ষ করে হাসল, কিন্তু কিছু বলল না।  

শিব: “রঞ্জন, তুই… তুই যা এখান থেকে। আমি কাজ করছি।”  

রঞ্জন: “আমি যাব না। তুই যতই রাগ দেখা, আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস।”  

শিবের মুখ লাল হয়ে গেল। সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। রঞ্জনের কথা, তার কাছাকাছি থাকা, তার শরীরের উষ্ণতা সব মিলিয়ে শিবের মনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। সে কাঠ কাটতে শুরু করল, কিন্তু তার মন ছিল অন্য কোথাও। রঞ্জন তার পাশে বসে তাকে দেখতে লাগল, তার চোখে একটা গভীর আকাঙ্ক্ষা জ্বলছিল।  

এই মুহূর্তে তাদের মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তাদের নীরবতায় একটা অদ্ভুত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছিল। রঞ্জনের শ্বাসের শব্দ, শিবের হাতের কুঠারের আঘাত, আর তাদের কাছাকাছি থাকার উষ্ণতা সব মিলিয়ে পরিবেশটা যেন ভারী হয়ে উঠল।  

##পরবর্তী অধ্যায়ে কী হবে? শিব আর রঞ্জনের এই সম্পর্ক কোন দিকে যাবে? লতার ভূমিকা কী হবে? জানতে কমেন্ট করুন।


টেলিগ্রামে সার্চবারে স্পেস ছাড়া @sStory69 লিখে সার্চ করুন। আর গল্প পড়ুন৷ ধন্যবাদ ❤️
[+] 3 users Like মাইটি's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কুন্ডলী ভাগ্য - by মাইটি - 28-10-2025, 12:18 AM



Users browsing this thread: