8 hours ago
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ঝ)
জয় যখন ছাদ থেকে নেমে আসছিলো , তখন ওর সাথে জান্নাতের দেখা হয়ে যায় । জন্নাত ও চিৎকার শুনে বেড়িয়েছে । চিৎকার টা এমন ছিলো যা সুধু সেই সময় নির্ঘুম মানুষ ই শুনতে পাবে । তাই হয়তো ওর বাবা মা এখনো ঘুমাচ্ছে । নিজেদের বাড়ির এতো কাছে এমন চিৎকার শুনে জান্নাত ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে । আর তখনি জয়ের সাথে ওর মুখোমুখি । জয় কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও বিছানা থেকে ওঠেনি ,
“ ছাঁদ থেকে এলি”
জয় ও জান্নাত কে দেখে থমকে গেছে , হেসে বলল “ হ্যা”
“ বিড়ি খেতে?” জান্নাত প্রশ্ন করলো
“ হু”
“ যাক এতোদিনে তোর শুভবুদ্ধি হয়েছে , আচ্ছা একটা চিৎকারের শব্দ পেলাম মনে হলো , তু শুনেছিস ? আমাদের ছাঁদ থেকেই এলো মনে হচ্ছে?”
জান্নাতের কৌতূহল অবশ্য জয় উড়িয়ে দেয় , বলে “ কই আমি তো শুনলাম না , কি না কি শুনেছিস , কান ভালো মত পরিস্কার কর” কথা গুলো বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় ,
জয়ের বলার ভঙ্গি দেখেই জান্নাতের বুঝতে আর কিছু বাকি থাকে না , মনে মনে হাসে আর ভাবে ‘ এই দুজনের সাগা আর শেষ হবে না’ মনে মনে এই ভাবতে ভাবতে জান্নাত আবার নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় , তখনি জয় ওকে পেছন থেকে ডাক দেয় “ জান্নাত শোন”
জান্নাত ঘুরে দাড়ায় , দেখে জয় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায় । জান্নাত ভ্রু নাচিয়ে ইঙ্গিতে জানতে চাইলো , কি ব্যাপার।
এক মুহূর্ত ভাবল জয় , তারপর মুচকি হেসে বলল “ থ্যাংকস”
জয়ের মুখে ধন্যবাদ নামক শব্দ শুনে বেশ আশ্চর্য হলো জান্নাত , জান্নাত জানে এই শব্দটা বলতে জয়ের কত কষ্ট হয়েছে, বিশেষ করে যখন ধন্যবাদ টা ওকে দিচ্ছে , এমন ই সম্পর্ক ওদের দুজনের । এতো এতো ঝগড়া এতো এতো দ্বিমত যে খুব সাধারন ধন্যবাদ বলেতেও বাধে। জান্নাত হাসতে হাসতে বলল “ কিরে তোর আবার জ্বর বারলো না তো?”
জয় ও হাসে , তারপর বলে “ নারে , তুই আজকে আমাদের জন্য অনেক করেছিস”
“ ওমা… এখনি আমাদের হয়ে গেছে!!!! তোরা তো কিছুদিন পর (মি এন্ড মিসেস জয় চৌধুরী নামের টিশার্ট পড়ে ঘুরবি রে”
জয় সুধু হাসে কিছু বলে না , তারপর একটু পর বলে ।” তোর সাথে আজকে কাজটা আমার ঠিক হয়নি , আমি আম্মুকে বুঝিয়ে বলবো”
জয়ের মুখে এই কথা শুনে , জান্নাত আরো বেশি অবাক হয় , বলে “ এক মিনিট , এক মিনিট , আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ? জয় নিজের কোন কাজকে ভুল বলছে!!! কেউ আমাকে ধর, আমি আর নিতে পারছি না” এই বলে জান্নাত মিথ্যা মাথা ঘোরানর ভাব করে । তারপর আবার বলে “ এতে তোর ই ভালো হবে অবশ্য , আমি এতক্ষণ জেগে জেগে রিভেঞ্জ প্ল্যান করছিলাম”
জান্নাতের কথা শেষ হতেই জয় আবার মুখ খোলে ।
“ তবে আমার কথা ভেবে দেখিস , আমি তো তোকে চিনি , তাই তুই কোন দিকে যেতে চাচ্ছিস সেটা আমি বুঝতে পারছি। আর যেভাবে তুই এগিয়ে যাচ্ছিস তাতে কিছুদিনের মাঝে মানুষের নজরে পরে যাবি , আমি যতটুকু পারবো তোকে বাঁচাতে চেষ্টা করবো” জয় এবার সিরিয়াস হয়ে বলে , ওর কণ্ঠ শুনেই বোঝা যায় ও বেশ চিন্তিত ।
“ আরে ধুর আমার ভিডিও কয়জনি বা দেখে” জান্নাত নিজের কাজ কে ডাউনগ্রেড করে , যেন জয়ের শঙ্কা কিছুটা দূর হয় ।
“ নারে , দেখে , আরো দেখবে , তুই একেবারে ন্যাচারাল এই ক্ষেত্রে , তোর প্রেজেন্টেশন বেশ ভালো , টপিক গুলো ও মানুষ কে আকৃষ্ট করে”
জান্নাত জয়ের বলা কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারে না , একদিনে জয় ওর এতো প্রশংসা করছে যা , কল্পনার ও অতীত , সারাজীবন সুধু ওর কাজ কে খাটো করার চেষ্টা করেছে , হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে ওর সব প্রচেষ্টা । জান্নাত সন্দেহের দৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকায় , বলে “ আমাকে তেল মারছিস না তো?”
“ তোকে তেল মারতে যাবো কোন দুঃখে , আমার কি তেলের খনি আছে নাকি?” জয় আবার নিজের স্বাভাবিক টোনে কথা বলতে শুরু করে ,
“ তুই আমার ভিডিও দেখছিস?” এই বলে জান্নাত , জয়ের এক্সপ্রেশন খেয়াল করে , এবং নিজের উত্তর পেয়ে যায় , হাসতে হাসতে বলে “ হ্যা দেখেছিস, লুকিয়ে লাভ নেই , দেখেছিস সেটা বোঝাই যাচ্ছে, আচ্ছা আগে বল , লাইক করেছিস কিনা?”
জান্নাতের বেশ ভালো লাগে জয় ওর ভিডিও দেখছে শুনে , জান্নাত বুঝতে পারেনি , জয়ের কমপ্লিমেন্ট ওর কাছে এতোটা ইম্পরট্যান্ট হবে । সত্যি বলতে জান্নাত কোনদিন ভাবেনি জয় ওর ভিডিও দেখবে , তাই জান্নাত ওকে তেমন ভাবে বলেও নি কোনদিন , কত মানুষ কে দিয়ে সাবস্ক্রিবশন করিয়েছে , জোড় করে ভিডিও দেখিয়েছে । কিন্তু জয় কে কোনদিন বলেনি। এর জন্য জান্নাত মনে মনে কিছুটা লজ্জিত হলো । তবে ওর মনটা ভালো হয়ে গেলো , সেই সাথে জয় কে আজকে রানীদের বাসা থেকে ফেরার পর যা বলেছিলো তা নিয়েও কিছুটা গিল্টি ফিল হতে লাগলো , জান্নাত বলেছিলো , জয়ের মত ছেলেকে ও রানীর যোগ্য মনে করে না ।
“ তুই যে আমার ভিডিও দেখিস , শুনে ভালো লাগলো, তবে আরো ভালো লাগবে যদি তুই আমার উপর কিছুটা বিশ্বাস রাখিস , আমি যা করছি বুঝে শুনেই করছি ” জান্নাত দুষ্টুমি ছেড়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে ,
“ ওকে , তুই আমার উপর বিশ্বাস না রাখতে পারলেও আমি রাখবো” জয় হেসে হেসে বলে
“ সন্ধার জন্য খোঁটা দিলি?” জান্নাতও হাসে ,
“ নাহ , খোঁটা না , তুই মিথ্যা বলিস নি , আমি হলেও তাই করতাম , তবে তোকে আমি এনশিওর করতে চাই , এখন থেকে বিশ্বাস রাখতে পারিস” জয় মুখে হাসে টেনে রেখেই কথা গুলো বলে , তবে বেশ দৃঢ় ভাবে বলে ।
“ ওকে ব্রো , এখন গেলাম ঘুম পাচ্ছে , আমি তো তোর মত নতুন প্রেম শুরু করিনি , আমার ভাই ঘুম আছে” জান্নাত পরিবেশ হালকা করার জন্য বলে । জান্নাতের বলার ধরন দেখে জয় ও হাসে ,
“ আর একটা কথা” এই বলে জয় একটু ইতস্তত করে ,
“ কি বলবি…… বল আজকে তোর একশো খুন মাফ”
জয় হাসে , কিন্তু ওর মুখে একটা দ্বিধা , যেন ভাবছে কথাটা বলবে কিনা ? কিন্তু সেই দ্বিধা কাটিয়ে বলে “রাজীব কে বাদ দিয়ে কি কাজটা করা যায় না , ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি , ওকে দেখে মনে হবে একজন সাধু পুরুষ কিন্তু ভেতরটা একদম ফাঁকা”
জান্নাত উত্তর দিতে গিয়েও থেমে যায় , নিজের চরকায় তেল দেয়া টাইপ একটা কঠিন কথা বেড়িয়ে আসতে চেয়েছিলো , কিন্তু এই সময় সেটা ও বলতে চাইলো না , একটু ভেবে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল “ আজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তুই রানীকেও তো হাড়ে হাড়ে চিনতি? কিন্তু তোর চেনা কি সঠিক হয়েছে?”
জয় এক মুহূর্তের জন্য থেমে যায় , ভাবে এর উত্তর কি দেবে , তারপর একটু ভেবে নিয়ে বলে “ রানীর কথা আলাদা ওকে আমি ভালো করে চিনি হয়তো দু বছর হবে, তাই হয়ত আমার ভুল হয়েছে , কিন্তু রাজীব কে আমি সেই ছোট বেলা থেকেই চিনি , ওর অভ্যাস বিপদ দেখলে কেটে পরা , দায়িত্ব নিতে ভয় পায় , ও একটা………”
জান্নাত হাত তুলে , জয় কে থামিয়ে দেয় , বলে “ জয় তুই ধরেই নিয়েছিস আমার বিপদ হবে , আর যেহেতু আমি একটা মেয়ে , তাই আমাকে রক্ষা করার জন্য একজন ছেলে দরকার , আর রাজীব সেই ছেলে , ব্যাপারটা এমন নয় “ এই বলে জান্নাত কঠিন চোখে জয়ের দিকে তাকায় , কিন্তু জয়ের মাঝে তর্ক করার কোন লক্ষন দেখা যায় না । তাই জান্নাত ও একটু সিথিল হয়ে আসে , তারপর আবার বলে ,
“ রাজীব আর আমি এ জন্য এক সাথে কাজ করছি না , যে ও একটা ছেলে আর আমার সুরক্ষা করতে পারবে , তখন আমার একজন ভালো এডিটর দরকার ছিলো , আর রাজীব এভেইলেবল ছিলো , এর বেশি কিছুই না “ এটুকু বলে জান্নাত আবার একটু বিরতি নেয় , একটু ভেবে নিয়ে বলে ,
“ তা ছাড়া একেক জন মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি একেক রকম , তুই রাজীব কে যেভাবে দেখছিস , আমি হয়তো অন্য ভাবে ওকে জেনেছি , তোর ব্যাপার আর আমার ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন, এক্সপেকটেশন ও ভিন্ন , তাই ফলাফল ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি , এন্ড ওফ ডিসকাশন , আমি আর এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না , আশা করি তুই আমার দিকটা বুঝবি”
জয় কাঁধ ঝাঁকায় , তবে আর কোন তর্ক করে না । এই মুহূর্তে তর্ক করার মত মন মানসিকতা ওর নেই । সত্যি বলতে জান্নাতের এমন রাজীবের সাথে ওঠাবসা ওর তেমন একটা ভালো লাগে না । কি যেন একটা মনের ভেতর খচ খচ করে ওদের এক সাথে দেখলে । জয়ের মনে হয় রাজীবের মত একটা স্বার্থপর ছেলের এ বাড়ির কারো সাথেই ঘনিষ্ঠতা থাকা উচিৎ নয় । ওর মতে রাজীব এমন একটা ছেলে যে যেখানেই যাবে , কাউকে না কাউকে হতাশ করবে । নিজেরটা ছাড়া আর কারো ইমোশান বোঝার ক্ষমতা রাজীবের নেই ।
জান্নাত আর দাড়ায় না নিজের রুমে চলে আসে । জয় কে এই মুহূর্তে যা বলে এসেছে , তা যে সম্পূর্ণ সত্যি নয় সেটা জান্নাত জানে । তবে নিজের মনের সেই কথা রাজীবকেও বলেনি । রাজীব ও জানে ওদের এই পার্টনারশিপ সুধুই প্রফেশনাল , এর বেশি কিছু নয় । কিন্তু জান্নাত তো জানে , রাজীব কে অফার করার আগে , ওর মনে কি ছিলো ।
জান্নাত বিছানায় শুয়ে পরে , একটু আগেও জান্নাত রাজীব কে নিয়েই ভাবছিলো ।
জান্নাত ভাবছিলো ,
কি করে , রাজীবের আজকের আচরণ জান্নাত বেশ অবাক করেছে । এবং তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছে নিজের আচরণে । তখন ওর তো রাগ বা লজ্জা হয় ই নি , উল্টো এই নিয়ে রানীর সাথে দুস্টুমিও করে এসেছে । বলতে গেলে , রাজীবের আচরণের চেয়ে নিজের আচরণে বেশি অবাক হয়েছে জান্নাত । রাজীব একটা ছেলে , ও হয়তো অসাবধানতা বসত তাকিয়েই ফেলেছে , এবং তাকানোর পর এক মুহূর্তের জন্য চোখ সরাতে পারেনি । এরকম তো শত শত ঘটনা ওর সাথে ঘটে , রিকশা ওয়ালা , দোকানদার , পথচারি , সহপাঠী , এমন কি বুড়ো প্রফেসর পর্যন্ত বাদ যায় না । তাদের দৃষ্টি তো আরো জঘন্য থাকে । এক সময় ছিলো যখন জান্নাত এসব দেখতো , রিয়েক্ট করতো এখন আর করে না । বয়স হওয়ার সাথে সাথে জান্নাতের চিন্তা ভাবনাও পরিনত হয়েছে । এসব দৃষ্টি লেহন ওকে আর ভাবায় না , বরং জান্নাত পাত্তাই দেয় না ।
কিন্তু রাজীবের দৃষ্টি ওকে ভাবিয়েছে , সুধু ভাবায় নি , শরীর মন দুটোতেই প্রভাব ফেলেছে । এ পর্যন্ত দুবার এমন হলো , একবার যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষা দেয়ার জন্য রাজীব রানী আর ও এক বাইকে করে যাচ্ছিলো । সেদিন অবশ্য জান্নাত লজ্জা পেয়েছিলো । সেদিন বাইকে বসে রাজীবের সাথে নিজের শরীরের কন্টাক্ট হওয়া নিয়ে বেশ সচেতন ছিলো জান্নাত । তখনো যে রাজীবের প্রতি ওর ভালো লাগা ছিলোনা তেমন নয় । বেশ ভালো রকম ই ছিলো ।
জান্নাত অবাক হয়ে ভাবছিলো , এই কয়েক মাসে নিজের মাঝে কি বিশাল পরিবর্তন এসেছে । সভাবিক ভাবে দেখতে গেলে রাজীবের কাজটা খারাপ বলেই গণ্য হবে , কিন্তু জান্নাত কিছুতেই রাজীবের ওর দিকে ও ভাবে তাকানো কে খারাপ বলতে পারছিলো না। মেলাতে পারছিলো না রাস্তা ঘাটে ঐ অপরিচিত মানুষ গুলোর সাথে । জান্নাতের কাছে রাজীবের ঐ ক্ষণিকের দৃষ্টি আনন্দময় বেশ ইমোশনাল লেগেছিলো । শরীরে একটা ভালোলাগার অনুভূতি এই ভেবে ছড়িয়ে পড়েছিলো , রাজীব ওকে আকর্ষণীয় ভাবে । জান্নাতের কাছে মনে হচ্ছিলো , ও যেন মনে মনে চাইছিলো রাজীব এমন কিছু একটা করুক ।
অন্য কেউ তাকালে যেখানে বিরক্তি আর ইরিটেশন লাগে , সেখানে রাজীব তাকানোতে ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছিলো , ভেতরে একটা উষ্ণতা অনুভব করেছিলো , সেই উষ্ণতার রেশ রয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত । জান্নাত রাজীবের ওভাবে তাকানোতে নিজের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস খুজে পেয়েছে , ওর কাছে মনে হয়েছিলো , রাজীবের কাছে ও বিশেষ কেউ ।
এসব নিয়ে যখন ভাবছিলো তখনি জান্নাত চিৎকারের শব্দ শুনতে পায়। এবং চিৎকার শুনে জান্নাত ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিলো।
****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)