20-10-2025, 07:15 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (চ)
জান্নাত চলে যাওয়ার পর জয়ের একটা সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হয় । কিন্তু ঘরে জ্বালানোর সাহস হয় না । আজকে বাড়িতে ওর আব্বু আছে , তা ছাড়া ওর আম্মুও বেশ ইমোশনাল হয়ে পড়ছে এই নিয়ে । তাই জয় ভাবে বারান্দায় যাবে , কিন্তু সিধান্ত চেঞ্জ করে , ভাবে ছাদে যাবে । খোলা হাওয়ায় যায় না আজকে চারদিন হলো । বারান্দায় গিয়েছে , কিন্তু বারান্দা ওর কাছে খোলা মনে হয় না , কারন মাথার উপর ছাদ থাকে । যেই ভাবা সেই কাজ , জয় টি সার্টের উপর জ্যাকেট চাপিয়ে নেয় ।
জয় ছাদে এসে দাড়ায় , জ্যাকেট পরে থাকায় বেশ ওম লাগছে , তবে পায়ে ঠাণ্ডা হাওয়া কাঁটার মত লাগছে , কারন ও শর্টস পরে আছে । হাটু পর্যন্ত ঢাকা আছে , কিন্তু হাঁটুর নিচ থেকে খালি । কিন্তু জয় সেটা পাত্তা দেয় না । সিগারেট ধরায় , জ্বর মুখে সিগারেটের স্বাদ ও বিস্বাদ লাগে । কিন্তু জয়ে টেনে যায় , ফেলে দেয় না । দুবার খুক খুক করে কাশে ।
জয় সিগারেট টানতে টানতে পাশের ছাদের দিকে তাকায় । সেখানটা খালি , আজকে সেখানে কাপড় ও রোদে দেয়া নেই । পুরোটা ফাঁকা । জয় হাটতে হাটতে রেলিঙে এর কাছে যায় , যেখানটায় দুই বিল্ডিং কাছা কাছি চলে এসেছে । জয়ের নজরে ওর রাখা কাঠের তক্তা নজরে আসে ।
কয়েক মুহূর্ত ভাবে জয় , ও জানে জ্বরের কারনে নিজের পারফেক্ট ফিজিক্যাল ফর্মে নেই । তারপর ও রেলিং এর উপর দিয়ে একটা পা উঠিয়ে দেয় , নামে কার্নিশে । নিচের দিকে তাকায় , মাথাটা হালকা লাগে চোখের দৃষ্টি ঘোলা মনে হয় । কিন্তু সেটা জয় কে থামাতে পারে না । আগের মত স্মুথ ভাবে পার হতে পারে না যদিও, একবার তাল হারিয়ে ফেলে । রানীদের ছাদে আসতে একটু হাপিয়ে ওঠে ।
জয় ঠিক সেই জায়গায় এসে দাড়ায় , যেদিন ও রানীর জন্য প্রথম এই ছাদ পেরিয়ে এসেছিলো , যেখানে দাড়িয়ে রানীর চোখে চোখ রেখছিলো , পড়তে পেরেছিলো রানীর চোখের ভাষা । ওই দিন রানীর চোখের ভাষায় ছিলো আহ্বান , যে আহ্বান জয় কে নিজের মনের উপর পরিয়ে রাখা শেকলে শেষ আঘাত করতে বাধ্য করেছিলো । সেদিনো এমন সন্ধ্যা ছিলো , সন্ধার আলো আধারিতে , সেদিন জয় রানীর চোখের গভিরতায় ডুব দিয়ে আজ পর্যন্ত উঠে আসতে পারেনি ।
জয় ভাবে - হয়তো ও সেদিন ভুল দেখছিলো , রানীর চোখে ওই দিন ও নিজের তৃষ্ণার প্রতিফলন ই সুধু দেখছিলো । রানীর পক্ষ থেকে কোন আহ্বান ছিলোই না । সব ছিলো ওর বোঝার ভুল সুধু ।
যদি বোঝার ভুল হয় , তাহলে সেদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর রানীর চোখে যা দেখেছিলো সেটা কি ছিলো ? সেদিন তো ও রানীর চোখে স্পষ্ট আশকারা দেখেছিলো । জয় ভাবে- ও যখন রানীর শরীর চেক অউট করার পর ধরা পরে গিয়েছিলো , তখন তো রানীর চোখে কোন ডিসগাস্ট বা ওই ধরনের লজ্জা দেখতে পায় নি । যে ধরনের বিরক্তি বা লজ্জা রানীর মাঝে দেখা গিয়েছিলো যখন অন্য লোকজন ওর দিকে তাকিয়েছিলো। নাকি এটাও ছিলো বুঝার ভুল ।
যদি বুঝার ভুল না হবে , তাহলে রানী হসপিটালে কেন সেদিন ওই রকম আচরণ করলো ? এই প্রশ্নের উত্তর জয় খুজে পায় না । কারন জানে , ও বুঝতে ভুল করেনি , এতবার ভুল করা ওর পক্ষে সম্ভব নয় । সেই কিশোর বয়স থেকে নারী মন নিয়ে ওর নাড়াচাড়া , নারী মন নিয়ে খেলার সব সুত্র ওর মুখস্ত । এতো বার ভুল অন্য কেউ করতে পারে , কিন্তু ওর পক্ষে সম্ভব নয় ।
হঠাত ওর মনে একটা প্রশ্ন জাগে , এসব ওর সাথে যা হচ্ছে তা কর্ম ফল নয় তো । যা রানীর রুপ নিয়ে ওর সামনে এসেছে । না হলে এই একটি মেয়েকে মন থেকে ভালোবেসে এমন আঘাত কেন পাবে । রানী ওকে নিয়ে খেলেনি তো? যেমন ও খেলেছে অন্যদের নিয়ে ।
জয় আবার ভাবে - এসব হয়তো রানীর কাছে খেলা , রানী খেলতে চেয়েছে , মেপে দেখতে চেয়েছে পানি কতটা গভির । তারপর যখন বেটার অপশন পেয়েছে তখন কেটে পরেছে । মিডল ক্লাস মানসিকতার সাথে ওই আবরার ছেলেটাই রানীর কাছে বেশি আকর্ষণীয় । আবরার ভালো স্টুডেন্ট , কোন খারাপ নেশা নেই ,ভদ্র শান্ত । রানী হয়তো ভেবেছে ওর জন্য আবরার ই ভালো হবে। তাই জয় কে ভুলে আবরার কে বেছে নিয়েছে ।
আবার এমন ও হতে পারে……… জয়ের মনে নতুন ভাবনার উদয় হয় । জয় ভাবে , রানী নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানে , ও জানে ওর এক ইশারায় ছেলের অভাব হবে না । আর ও নিজের এই ক্ষমতা ব্যাবহার করে , ছেলেদের পাগল বানিয়ে তারপর ছেড়ে দিয়ে নতুন প্রজেক্টে হাত দেয় । এটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় , এমন অনেক ই আছে আজকাল ।
জয়ের কাছে শেষের আইডিয়া টাই বেশি মানানসই মনে হয় । কারন এমন যদি না হতো , ওর অসুস্থতার কথা শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারতো না , ছটফট করতো ওর কাছে যাওয়ার জন্য । যেমনটা ও করেছিলো সেদিন রাতে ।
এই ভাবনার পর জয়ের আর ইচ্ছে হয় না এই ছাদে দাড়াতে , জয় পিছনে ফেরে ফিরে যাওয়ার জন্য , আর ঠিক তখনি দরজা খুলে যায় । দরজা খোলার শব্দে জয় পেছনে ফিরে তাকায় । জয় দেখে একটা মেয়েলি পা খোলা দরজা দিয়ে প্রথমে ছাদের উপর পরে।
মুহূর্তেই জয়ের চোখ দুটো জ্বলে ওঠে , সমস্ত শরীর রাগে কাঁপতে থাকে । একটু আগের নিজের ভাবনা আবার ওর মাথায় আসে , রানী ওকে নিয়ে খেলেছে , জয়ের ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠে , সেই হাসিটি এতোটাই তিক্ত যে জয় যদি আয়নায় দেখতো তবে নিজেই ভয় পেয়ে যেতো । জয় এগিয়ে যায় দরজা লক্ষ্য করে , ততক্ষণে রানী পুরোপুরি দরজা গলে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে ।
জয় দেখে রানী ওকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠেছে , চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে গেছে । চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে , জয় রানীর চোখে ভয় স্পষ্ট দেখতে পায় । আর এই ভয় ওকে নিজের সিধান্তে আরো অটল করে । জয় ভাবে রানী যদি কোন দোষ না করতো তাহলে ভয় কেন পাচ্ছে ।
জয় এক পা আগায় রানী এক পা পেছায় । এতে জয়ের রাগ আরো বাড়ে । রানীর ভয়ার্ত দৃষ্টি ওর রাগের জন্য ফুয়েল হিসেবে কাজ করে । জয় হেসে বলে “ প্রতিবেশীর অসুস্থতার খবর শুনেও দেখতে গেলি না? তোর বাপ ভাই তোকে এই শিক্ষা দিয়েছে?” যদিও জয়ের ঠোঁটে হাসি ছিলো , কিন্তু কথা গুলো বলেছে চিবিয়ে চিবিয়ে ।
জয় দেখে রানী কিছু একটা বলার চেষ্টা করে , কিন্তু বলতে পারে না । জয় আরো এক পা এগিয়ে যায় । বলে “ তোকে বলেছিলাম আমার কাছ থেকে বেঁচে থাকিস, কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না , তুই আমাকে কি ভেবছিস? আমি ফাঁকা বুলি ছারি”
রানীর চোখে আতঙ্ক ফুটে ওঠে , সেটা দেখে জয় আনন্দ পায় যেন । এতদিন ওকে যে মনকষ্টের মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে তার কিছুটা শোধ হচ্ছে বলে মনে হয় ওর কাছে । জয় আরো এক পা আগায় , এগিয়েই লক্ষ্য করে রানী দৌর দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করে , সেটা দেখে জয় নিজেও পিছু নেয় , জয়ের শরীরে যেন অসুরের শক্তি এসে পরেছে , সুধু শরীরেই নয় , মনেও ভর করেছে অসুর । মাঝ সিঁড়িতে রানীকে পাকরাও করে জয় । নিজের হাতে রানীকে পালকের মত পাতলা মনে হয় । দেয়ালের সাথে ঠেশে ধরে । বলে “ আমাকে রেপিস্ট বলেছিলি না , দেখ রেপিস্ট কাকে বলে , তোকে আমি উদাহরন সহ বুঝিয়ে দেবো”
রানী নরম হাতে নিজের সব শক্তি দিয়ে জয় কে আঘাত করে , কিন্তু সেসব জয়ের কাছে কিছুই মনে হয় না । জয় অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রানীর চোখ বোজা ব্যাথায় বিকৃত মুখের দিকে । “ তুই কি ভেবেছিস আমার সাথে খেলে , তুই খুব সহজে আমাকে ছেড়ে দিতে পারবি , হা হা তুই ভুল মানুষের সাথে পাঙ্গা নিয়ে ফেলেছিস , আর এখন বুঝবি ভুল মানুষকে উস্কে দিলে পরিণতি কি হয় “
“ তুই কি ভেবেছিস ? আমাকে তুই এভাবে ছেড়ে দিবি আর আমি চুপ চাপ বসে দেখবো ? তোর শোকে পাথর হয়ে যাবো, এতো সহজ ?” এই বলে জয় আবার রানীর দিকে তাকায় , রানী এখনো চোখ বুজে আছে , যদিও ওর হাতের আঘাত আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে এসেছে ।
“ তুই বাড়িতে অন্য ছেলে এনে ফুর্তি করবি আর তা দূর থেকে দেখবো? না আমি এসব দেখে চুপ থাকবো না , আমি তোকে শেষ করে দেবো , দেখ , তাকা আমার দিকে , দেখ আমি কিভাবে তোকে শেষ করি , তাকা বলছি” জয় শেষ বার তাকা বলার সময় চেঁচিয়ে ওঠে , বদ্ধ সিঁড়ি ঘরে সেটা গম গম করে ওঠে । জয় দেখে রানীর সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠে সেই শব্দে ।
“ চেঁচিয়ে সাহায্য চা , বল জয় তোকে রেপ করছে , চেঁচা , ডাক চেঁচিয়ে , দেখি কে বাচায় তোকে আমার হাত থেকে “ বলার সময় জয় নিজের হাতের তালু দিয়ে দেয়ালে আঘাত করে ,
“চোখ খোল রানী , আমি চাই তুই তোর সর্বনাশ নিজের চোখে দেখ , চোখ খোল” চিৎকার করে ওঠে জয় ।
রানী ধিরে ধিরে চোখ খোলে , সেটা দেখে জয় হাসে , এরকম শরীর হিম করা হাসি রানী আজো পর্যন্ত দেখেনি , ওর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে , । জয় বলে “ দেখ আমার চেয়ে ভাল ফুর্তি তোকে নিয়ে কেউ করতে পারে কিনা?” বলে আবার সেই ঠাণ্ডা হাসি হাসে ,
রানী একেবারে শান্ত হয়ে গেছে , দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর মাঝে আর কোন ফাইট অবশিষ্ট নেই । পরাজয় মেনে নিয়েছে , রানী পরাজয় মেনে নিয়ে জয়ের দিকে শেষ বারের মত দৃষ্টি ফেলে । ওই দৃষ্টিতে এতো বিষাদ ছিলো যা হয়তো এক সাগর কষ্টের চেও বেশি । রানী ধিরে ধিরে চোখ বন্ধ করতে যায় আবার , কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে না , শেষ বারের জন্য জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে রানীর চোখ সেখানে আটকে যায় ।
****
রানী দৌর দিয়েছিলো নিজেকে বাঁচাতে নয় , রানীর ওই দৌর ছিলো জয়কে বাঁচানোর জন্য । রানী যখন ছাদে দারিয়েই জয়ের মুখোমুখি দাড়ায় , তখন স্বাভাবিক ভাবেই চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে গিয়েছিলো । এতে জয়ের কোন হাত ছিলো না । কিন্তু রানী যখন জয়ের দিকে তাকায় ভালো করে তখন ওর চোখে প্রচণ্ড ঘৃণা দেখতে পায় । প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় রানী এই ঘৃণা দেখে ।
এর পর জয় যখন চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলতে শুরু করে , তখন রানী আতঙ্কিত হয়ে পরে। মনে পরে যায় হসপিটালে জয়ের শেষ কথা , সেদিন রানী জয় কে যে অপবাদ দিয়েছিলো , জয় বলেছিলো যদি কোনদিন সামনে পরে তাহলে জয় সেটা সত্যিতে পরিনত করবে। রানী জানে জয় স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো ওই ধরনের কাজ করবে না , কিন্তু জয় এখন প্রচণ্ড রেগে আছে , তার উপর অসুস্থ । রানী ভাবে জয় এখন প্রচণ্ড রেগে আছে । রাগের মাথায় হয়তো এমন কিছু করে ফেলবে , যা হয়তো জয় নিজেই পরে রিগ্রেট করবে । রানী একবার চেষ্টা করে জয় কে কিছু বলতে । কিন্ত ওর মুখ থেকে কোন শব্দ বের হয় না । মনে মনে বার বার বলতে থাকে , ‘ জয় প্লিজ এমন কিছু করো না যেন আমি এর পর আর তোমার সামনে দাড়াতে না পারি’ কারন জয় যদি ওর সাথে এখন উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে , তাহলে রানী নিজেকে কোনদিন মাফ করতে পারবে না , কারন রানী জানে এর জন্য ও ই দায়ি থাকবে , জয় নয়। কারন জয় কে এ পর্যন্ত আসতে ও নিজেই পুশ করেছে । প্রথমে জয় কে মোলেস্টারের অপবাদ দিয়েছে , তারপর নিজেকে স্বাধীন প্রমান করতে খালি বাড়িতে একটা অল্প পরিচিত ছেলেকে নিয়ে এসেছে ।
কিন্তু জয় যখন থামছিলোই না , বরং সময়ের সাথে সাথে ওর রাগ বারছিলো , তখন রানী আর কোন উপায় না দেখে দৌর দেয়, যেন জয় কে রিগ্রেট ফুল কোন কাজ করা থেকে বাচানো যায় । কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না । জয় ওকে ধরে ফেলে , চেপে ধরে সিঁড়ি ঘরের দেয়ালের সাথে , প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা করে রানী , তখনো ওর মনে সুধু এই প্রার্থনা , জয় যেন এমন কোন কাজ না করে যা ওদের সম্পর্ক শেষ করে দিবে । তেমন হলে রানী নিজেক ক্ষমা করতে পারবে না ।
কিন্তু এসব কিছুই জয়ের উপর কোন প্রভাব ফেলছিলো না , একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছিলো , আর একেকটা অভিযোগ রানীকে যেন হাইড্রলিক প্রেস দিয়ে চাপা দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলছিলো । জয় ওকে বার বার চোখ খুলতে বলছিলো , শেষে রানী চোখ খুলতে বাধ্য হয় , জয়ের চেহারা ঘৃণায় বিকৃত হয়ে থাকতে দেখে , রানীর শরীরের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায় । নিজেকে ভাগ্যর উপর ছেড়ে দেয় , মনে মনে বলে ‘ এর জন্য আমি আর আমার ছেলেমানুষি দায়ি’
রানী আবার চোখ বন্ধ করে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয় , জয়কে এই ধরনের কাজ করতে ও কিছুতেই দেখতে পারবে না । কিন্তু মাঝ পথেই আটকে যায় রানী , আবার নতুন করে তাকায় জয়ের দিকে , এবার রানী তাকায় জয়ের চোখের দিকে , আর কিছুই ওর নজরে আসে না , সুধুই জয়ের লালচে চোখ জোড়া । কিন্তু রানী সেখানে কোন ঘৃণা দেখতে পায় না । রানী সেখানে দেখে সুধু অসহায় চিৎকার আর প্রচণ্ড ব্যাথা । জয়ের চোখ থেকে পানি পড়ছে না , কিন্তু ওর চোখ দুটো চিৎকার করে কান্না করছে।
রানী স্থির হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , মুখে জয় অনেক কিছুই বলছে , কিন্তু তেমন কিছু করার কোন লক্ষন ই দেখা যাচ্ছে না । জয়ের চোখ দেখেই রানী বুঝে যাচ্ছে এসব কিছুই করার ক্ষমতা জয়ের নেই । মুখে যা বলছে তা সবি মনের অভিমান থেকে উৎপন্ন ফাঁকা বুলি ।
রানীর চোখে থেকে ভয় আতঙ্ক উধাও হয়ে যায় । সেখানে দেখা দেয় প্রচণ্ড অনুশোচনা , রানী ভেবে পায় না জয়ের এই অভিমান ও কিভাবে ভাঙবে ? জয়ের এই তীব্র অভিমান রানীকে ভেতর থেকে দুর্বল করে ফেলে । আজকে এই মুহূর্তে রানী বুঝতে পারছে কত বড় ভুল ও করেছে । আগে যদি জানতো জয় এতটা পাগল হয়ে আছে । তাহলে কোন ভয় ওকে আটকে রাখতে পারতো না। নিজেই হাজির হতো জয়ের সামনে । রানীর নিজের এমন মূর্খের মত কাজের জন্য লজ্জা হচ্ছে । কেন ও জয়ের উপর বিশ্বাস রাখতে পারলো না । কেন ভেবে নিলো জয় ওর সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করবে । আসলে ওর মাঝেই খাঁদ ছিলো , রানী মনে মনে ভাবে । আর তাই তো জয়ের সামনে যেতে ভয় পেয়েছে ।
জয় মুখে যা বলছে সত্যি সত্যি যদি তাই চাইতো , রানী এখন নিজে থেকেই তাই করতে দিতো । নিজেকে তুলে দিতো জয়ের হাতে । জয় নিজের ইচ্ছে মত ওর রাগ অভিমান মিটিয়ে নিতো । কিন্তু রানী জানে জয় এসবের কিছুই করতে চাইছে না ।
এতক্ষণ রানী জয়ের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছে , কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জয় মুখে যা বলছে সত্যি সত্যি যদি তাই চাইতো , রানী এখন নিজে থেকেই তাই করতে দিতো । নিজেকে তুলে দিতো জয়ের হাতে । জয় নিজের ইচ্ছে মত ওর রাগ অভিমান মিটিয়ে নিতো । কিন্তু রানী জানে জয় এসবের কিছুই করতে চাইছে না ।
রানী অসহায় বোধ করে । কারন রানী কোন উপায় পাচ্ছে না জয়ের এই অভিমান ভাঙ্গার। জয়কে এমন অবস্থায় দেখে ওর হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে। জয় কে এমন অসহায় অবস্থায় ও আর দেখতে পারছে না। রানী চেষ্টা করে কিছু বলতে , কিন্তু শব্দ জোগাড় করতে পারে না । সুধু অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে জয়ের চোখের দিকে । রানীর চোখ গড়িয়ে নোনতা জলের ধারা গাল বেয়ে নামতে থাকে । রানীর গাল বেয়ে নামা প্রতিটা জল বিন্দুতে লেখা ‘ আমাকে মাফ করো জয়’
****
জয় অবাক হয়ে লক্ষ্য করে রানীর চোখ থেকে আতংক দূর হয়ে গেছে । এক মুহূর্তের জন্য জয় আরো হিংস্র হয়ে ওঠে , ওর ইচ্ছা হয় আরো খারাপ কিছু বলতে করতে । কিন্তু আরো বেশি অবাক হয়ে লক্ষ্য করে ও মুখে বললেও রানীর শরীরে এখন পর্যন্ত হাত ই দিতে পারছে না । কোন অদৃশ্য কিছু ওকে বাধা দিচ্ছে । রানীর কোমল মুখটির দিকে তাকিয়ে ওর সাহস হচ্ছে না কিছু করার ।
নিজের উপর রেগে ওঠে জয় , কেন ও নিজেকে নিজে এমন অসহায় করে তুলছে । কেন রানীকে একটা শিক্ষা দিতে পারছে না । ধিরে ধিরে জয় লক্ষ্য করে ওর ভেতর থেকে রাগ নামক অনুভূতি বিদায় নিচ্ছে সেখানে রয়ে যাচ্ছে সুধুই অসহায় অভিমান । যে অভিমানের না আছে তীক্ষ্ণ দাঁত , না আছে ধারালো নখ । জয় ভেবে পায় না ও কি দিয়ে রানীকে আঘাত করবে ।
হঠাত জয় দেখে ওর হাত আপনা থেকেই যেন রানীকে আলগা করে দিচ্ছে । নিজের শরীরের এমন অসহায় ভাবে পরাজয় মেনে নেয়াকে জয় কিছুতেই মেনে নিতে পারে না । চেষ্টা করে আবার চেপে ধরতে রানীকে । প্রাণপণ চেষ্টা করে এমন কিছু বলতে যা রানীকে চরম ভাবে অপমান করবে , জয় চৌধুরীর মন নিয়ে খেলার সখ মিটিয়ে দেবে । ওকে বুঝিয়ে দিবে , এই জয়ের মন নিয়ে খেলার দুঃসাহস আজ পর্যন্ত কেউ করেনি , রানীও করে পার পেয়ে যাবে না। জয় চৌধুরী সবার প্রাপ্য সবাইকে বুঝিয়ে দেয় ।
কিন্তু জয় অসহায় ভাবে সুধু নিজেকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখে , রানীর অস্ত্রু সিক্ত চোখ ওকে নিস্তেজ করে ফেলে বার বার । বদচলন এই বিষধর মেয়ের মুখটা এতো নিষ্পাপ লাগছে , জয়ের শক্তি নেই এই মেয়ের উপর হাত তোলে , কলঙ্কিত করা তো , দুরের কথা । জয় বুঝে ফেলে ওর পরাজয় নিশ্চিত । সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির কোন ক্ষতি করা ওর সাধ্যের বাইরে । জীবনে এই প্রথম বারের মত এমন পরাজয়ের স্বাদ পায় আত্ম অভিমানী , জয় চৌধুরী ।
“ আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা” তিক্ত কণ্ঠে সুধু এটুকু বলতে পারে জয় । রানীকে মুক্ত করে দেয় । কিন্তু রানীকে নড়তে দেখে না । সেটা দেখে জয় গর্জন করে ওঠে , “ চলে যা আমার সামনে থেকে , না হলে আমি হয়তো সিধান্ত পরিবর্তন করে ফেলবো”
রানী এখনো নড়ে না , আর রানীর এমন নির্ভীক দাড়িয়ে থাকা জয়ের পরাজয়ে ডিগ্রেশনের নতুন মাত্রা যোগ করে । পরাজিত জয় অপমানে চোখ বুজে ফেলে । আর তখনি ও টের পায় একটা শীতল নরম হাত খুব যত্নের সাথে ওর তপ্ত গাল স্পর্শ করেছে। এই আরাম দায়ক শীতল স্পর্শ মুহূর্তের মাঝেই জয়ের সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরে । জয়ের কাছে মনে হয় হাজার বছর ধরে তৃষ্ণার্ত থাকার পর ওর শরীর মিষ্টি পানির ছোঁয়া পেয়েছে যেন । শত বছরের ক্লান্তি অবসন্নতা এক মুহূর্তে দূর হয়ে শরীর সজেত হয়ে উঠেছে । জয় মনে করতো নারীর প্রেমময় ছোঁয়া সম্পর্কে ওর ধারনা আছে , কিন্তু এই ছোঁয়া পাওয়ার পর ওর সেই ভুল ভেঙ্গে গেছে । এই অনুভূতি জয় এর আগে কোনদিন অনুভব করেনি । ওর মস্তিস্ক এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি প্রসেস করে উঠতে পারেনি। একেকটা মুহূর্ত কাটছে আর এই ছোঁয়ার অনুভূতি নিজেকে নতুন রুপে জয়ের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে যেন । প্রতিটি মুহূর্তের সাথে সাথে সেই অনুভুতি যেন আরো স্ট্রং হয়ে উঠছে ।
****
জান্নাত চলে যাওয়ার পর জয়ের একটা সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হয় । কিন্তু ঘরে জ্বালানোর সাহস হয় না । আজকে বাড়িতে ওর আব্বু আছে , তা ছাড়া ওর আম্মুও বেশ ইমোশনাল হয়ে পড়ছে এই নিয়ে । তাই জয় ভাবে বারান্দায় যাবে , কিন্তু সিধান্ত চেঞ্জ করে , ভাবে ছাদে যাবে । খোলা হাওয়ায় যায় না আজকে চারদিন হলো । বারান্দায় গিয়েছে , কিন্তু বারান্দা ওর কাছে খোলা মনে হয় না , কারন মাথার উপর ছাদ থাকে । যেই ভাবা সেই কাজ , জয় টি সার্টের উপর জ্যাকেট চাপিয়ে নেয় ।
জয় ছাদে এসে দাড়ায় , জ্যাকেট পরে থাকায় বেশ ওম লাগছে , তবে পায়ে ঠাণ্ডা হাওয়া কাঁটার মত লাগছে , কারন ও শর্টস পরে আছে । হাটু পর্যন্ত ঢাকা আছে , কিন্তু হাঁটুর নিচ থেকে খালি । কিন্তু জয় সেটা পাত্তা দেয় না । সিগারেট ধরায় , জ্বর মুখে সিগারেটের স্বাদ ও বিস্বাদ লাগে । কিন্তু জয়ে টেনে যায় , ফেলে দেয় না । দুবার খুক খুক করে কাশে ।
জয় সিগারেট টানতে টানতে পাশের ছাদের দিকে তাকায় । সেখানটা খালি , আজকে সেখানে কাপড় ও রোদে দেয়া নেই । পুরোটা ফাঁকা । জয় হাটতে হাটতে রেলিঙে এর কাছে যায় , যেখানটায় দুই বিল্ডিং কাছা কাছি চলে এসেছে । জয়ের নজরে ওর রাখা কাঠের তক্তা নজরে আসে ।
কয়েক মুহূর্ত ভাবে জয় , ও জানে জ্বরের কারনে নিজের পারফেক্ট ফিজিক্যাল ফর্মে নেই । তারপর ও রেলিং এর উপর দিয়ে একটা পা উঠিয়ে দেয় , নামে কার্নিশে । নিচের দিকে তাকায় , মাথাটা হালকা লাগে চোখের দৃষ্টি ঘোলা মনে হয় । কিন্তু সেটা জয় কে থামাতে পারে না । আগের মত স্মুথ ভাবে পার হতে পারে না যদিও, একবার তাল হারিয়ে ফেলে । রানীদের ছাদে আসতে একটু হাপিয়ে ওঠে ।
জয় ঠিক সেই জায়গায় এসে দাড়ায় , যেদিন ও রানীর জন্য প্রথম এই ছাদ পেরিয়ে এসেছিলো , যেখানে দাড়িয়ে রানীর চোখে চোখ রেখছিলো , পড়তে পেরেছিলো রানীর চোখের ভাষা । ওই দিন রানীর চোখের ভাষায় ছিলো আহ্বান , যে আহ্বান জয় কে নিজের মনের উপর পরিয়ে রাখা শেকলে শেষ আঘাত করতে বাধ্য করেছিলো । সেদিনো এমন সন্ধ্যা ছিলো , সন্ধার আলো আধারিতে , সেদিন জয় রানীর চোখের গভিরতায় ডুব দিয়ে আজ পর্যন্ত উঠে আসতে পারেনি ।
জয় ভাবে - হয়তো ও সেদিন ভুল দেখছিলো , রানীর চোখে ওই দিন ও নিজের তৃষ্ণার প্রতিফলন ই সুধু দেখছিলো । রানীর পক্ষ থেকে কোন আহ্বান ছিলোই না । সব ছিলো ওর বোঝার ভুল সুধু ।
যদি বোঝার ভুল হয় , তাহলে সেদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর রানীর চোখে যা দেখেছিলো সেটা কি ছিলো ? সেদিন তো ও রানীর চোখে স্পষ্ট আশকারা দেখেছিলো । জয় ভাবে- ও যখন রানীর শরীর চেক অউট করার পর ধরা পরে গিয়েছিলো , তখন তো রানীর চোখে কোন ডিসগাস্ট বা ওই ধরনের লজ্জা দেখতে পায় নি । যে ধরনের বিরক্তি বা লজ্জা রানীর মাঝে দেখা গিয়েছিলো যখন অন্য লোকজন ওর দিকে তাকিয়েছিলো। নাকি এটাও ছিলো বুঝার ভুল ।
যদি বুঝার ভুল না হবে , তাহলে রানী হসপিটালে কেন সেদিন ওই রকম আচরণ করলো ? এই প্রশ্নের উত্তর জয় খুজে পায় না । কারন জানে , ও বুঝতে ভুল করেনি , এতবার ভুল করা ওর পক্ষে সম্ভব নয় । সেই কিশোর বয়স থেকে নারী মন নিয়ে ওর নাড়াচাড়া , নারী মন নিয়ে খেলার সব সুত্র ওর মুখস্ত । এতো বার ভুল অন্য কেউ করতে পারে , কিন্তু ওর পক্ষে সম্ভব নয় ।
হঠাত ওর মনে একটা প্রশ্ন জাগে , এসব ওর সাথে যা হচ্ছে তা কর্ম ফল নয় তো । যা রানীর রুপ নিয়ে ওর সামনে এসেছে । না হলে এই একটি মেয়েকে মন থেকে ভালোবেসে এমন আঘাত কেন পাবে । রানী ওকে নিয়ে খেলেনি তো? যেমন ও খেলেছে অন্যদের নিয়ে ।
জয় আবার ভাবে - এসব হয়তো রানীর কাছে খেলা , রানী খেলতে চেয়েছে , মেপে দেখতে চেয়েছে পানি কতটা গভির । তারপর যখন বেটার অপশন পেয়েছে তখন কেটে পরেছে । মিডল ক্লাস মানসিকতার সাথে ওই আবরার ছেলেটাই রানীর কাছে বেশি আকর্ষণীয় । আবরার ভালো স্টুডেন্ট , কোন খারাপ নেশা নেই ,ভদ্র শান্ত । রানী হয়তো ভেবেছে ওর জন্য আবরার ই ভালো হবে। তাই জয় কে ভুলে আবরার কে বেছে নিয়েছে ।
আবার এমন ও হতে পারে……… জয়ের মনে নতুন ভাবনার উদয় হয় । জয় ভাবে , রানী নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানে , ও জানে ওর এক ইশারায় ছেলের অভাব হবে না । আর ও নিজের এই ক্ষমতা ব্যাবহার করে , ছেলেদের পাগল বানিয়ে তারপর ছেড়ে দিয়ে নতুন প্রজেক্টে হাত দেয় । এটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় , এমন অনেক ই আছে আজকাল ।
জয়ের কাছে শেষের আইডিয়া টাই বেশি মানানসই মনে হয় । কারন এমন যদি না হতো , ওর অসুস্থতার কথা শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারতো না , ছটফট করতো ওর কাছে যাওয়ার জন্য । যেমনটা ও করেছিলো সেদিন রাতে ।
এই ভাবনার পর জয়ের আর ইচ্ছে হয় না এই ছাদে দাড়াতে , জয় পিছনে ফেরে ফিরে যাওয়ার জন্য , আর ঠিক তখনি দরজা খুলে যায় । দরজা খোলার শব্দে জয় পেছনে ফিরে তাকায় । জয় দেখে একটা মেয়েলি পা খোলা দরজা দিয়ে প্রথমে ছাদের উপর পরে।
মুহূর্তেই জয়ের চোখ দুটো জ্বলে ওঠে , সমস্ত শরীর রাগে কাঁপতে থাকে । একটু আগের নিজের ভাবনা আবার ওর মাথায় আসে , রানী ওকে নিয়ে খেলেছে , জয়ের ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠে , সেই হাসিটি এতোটাই তিক্ত যে জয় যদি আয়নায় দেখতো তবে নিজেই ভয় পেয়ে যেতো । জয় এগিয়ে যায় দরজা লক্ষ্য করে , ততক্ষণে রানী পুরোপুরি দরজা গলে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে ।
জয় দেখে রানী ওকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠেছে , চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে গেছে । চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে , জয় রানীর চোখে ভয় স্পষ্ট দেখতে পায় । আর এই ভয় ওকে নিজের সিধান্তে আরো অটল করে । জয় ভাবে রানী যদি কোন দোষ না করতো তাহলে ভয় কেন পাচ্ছে ।
জয় এক পা আগায় রানী এক পা পেছায় । এতে জয়ের রাগ আরো বাড়ে । রানীর ভয়ার্ত দৃষ্টি ওর রাগের জন্য ফুয়েল হিসেবে কাজ করে । জয় হেসে বলে “ প্রতিবেশীর অসুস্থতার খবর শুনেও দেখতে গেলি না? তোর বাপ ভাই তোকে এই শিক্ষা দিয়েছে?” যদিও জয়ের ঠোঁটে হাসি ছিলো , কিন্তু কথা গুলো বলেছে চিবিয়ে চিবিয়ে ।
জয় দেখে রানী কিছু একটা বলার চেষ্টা করে , কিন্তু বলতে পারে না । জয় আরো এক পা এগিয়ে যায় । বলে “ তোকে বলেছিলাম আমার কাছ থেকে বেঁচে থাকিস, কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না , তুই আমাকে কি ভেবছিস? আমি ফাঁকা বুলি ছারি”
রানীর চোখে আতঙ্ক ফুটে ওঠে , সেটা দেখে জয় আনন্দ পায় যেন । এতদিন ওকে যে মনকষ্টের মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে তার কিছুটা শোধ হচ্ছে বলে মনে হয় ওর কাছে । জয় আরো এক পা আগায় , এগিয়েই লক্ষ্য করে রানী দৌর দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করে , সেটা দেখে জয় নিজেও পিছু নেয় , জয়ের শরীরে যেন অসুরের শক্তি এসে পরেছে , সুধু শরীরেই নয় , মনেও ভর করেছে অসুর । মাঝ সিঁড়িতে রানীকে পাকরাও করে জয় । নিজের হাতে রানীকে পালকের মত পাতলা মনে হয় । দেয়ালের সাথে ঠেশে ধরে । বলে “ আমাকে রেপিস্ট বলেছিলি না , দেখ রেপিস্ট কাকে বলে , তোকে আমি উদাহরন সহ বুঝিয়ে দেবো”
রানী নরম হাতে নিজের সব শক্তি দিয়ে জয় কে আঘাত করে , কিন্তু সেসব জয়ের কাছে কিছুই মনে হয় না । জয় অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রানীর চোখ বোজা ব্যাথায় বিকৃত মুখের দিকে । “ তুই কি ভেবেছিস আমার সাথে খেলে , তুই খুব সহজে আমাকে ছেড়ে দিতে পারবি , হা হা তুই ভুল মানুষের সাথে পাঙ্গা নিয়ে ফেলেছিস , আর এখন বুঝবি ভুল মানুষকে উস্কে দিলে পরিণতি কি হয় “
“ তুই কি ভেবেছিস ? আমাকে তুই এভাবে ছেড়ে দিবি আর আমি চুপ চাপ বসে দেখবো ? তোর শোকে পাথর হয়ে যাবো, এতো সহজ ?” এই বলে জয় আবার রানীর দিকে তাকায় , রানী এখনো চোখ বুজে আছে , যদিও ওর হাতের আঘাত আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে এসেছে ।
“ তুই বাড়িতে অন্য ছেলে এনে ফুর্তি করবি আর তা দূর থেকে দেখবো? না আমি এসব দেখে চুপ থাকবো না , আমি তোকে শেষ করে দেবো , দেখ , তাকা আমার দিকে , দেখ আমি কিভাবে তোকে শেষ করি , তাকা বলছি” জয় শেষ বার তাকা বলার সময় চেঁচিয়ে ওঠে , বদ্ধ সিঁড়ি ঘরে সেটা গম গম করে ওঠে । জয় দেখে রানীর সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠে সেই শব্দে ।
“ চেঁচিয়ে সাহায্য চা , বল জয় তোকে রেপ করছে , চেঁচা , ডাক চেঁচিয়ে , দেখি কে বাচায় তোকে আমার হাত থেকে “ বলার সময় জয় নিজের হাতের তালু দিয়ে দেয়ালে আঘাত করে ,
“চোখ খোল রানী , আমি চাই তুই তোর সর্বনাশ নিজের চোখে দেখ , চোখ খোল” চিৎকার করে ওঠে জয় ।
রানী ধিরে ধিরে চোখ খোলে , সেটা দেখে জয় হাসে , এরকম শরীর হিম করা হাসি রানী আজো পর্যন্ত দেখেনি , ওর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে , । জয় বলে “ দেখ আমার চেয়ে ভাল ফুর্তি তোকে নিয়ে কেউ করতে পারে কিনা?” বলে আবার সেই ঠাণ্ডা হাসি হাসে ,
রানী একেবারে শান্ত হয়ে গেছে , দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর মাঝে আর কোন ফাইট অবশিষ্ট নেই । পরাজয় মেনে নিয়েছে , রানী পরাজয় মেনে নিয়ে জয়ের দিকে শেষ বারের মত দৃষ্টি ফেলে । ওই দৃষ্টিতে এতো বিষাদ ছিলো যা হয়তো এক সাগর কষ্টের চেও বেশি । রানী ধিরে ধিরে চোখ বন্ধ করতে যায় আবার , কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে না , শেষ বারের জন্য জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে রানীর চোখ সেখানে আটকে যায় ।
****
রানী দৌর দিয়েছিলো নিজেকে বাঁচাতে নয় , রানীর ওই দৌর ছিলো জয়কে বাঁচানোর জন্য । রানী যখন ছাদে দারিয়েই জয়ের মুখোমুখি দাড়ায় , তখন স্বাভাবিক ভাবেই চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে গিয়েছিলো । এতে জয়ের কোন হাত ছিলো না । কিন্তু রানী যখন জয়ের দিকে তাকায় ভালো করে তখন ওর চোখে প্রচণ্ড ঘৃণা দেখতে পায় । প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় রানী এই ঘৃণা দেখে ।
এর পর জয় যখন চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলতে শুরু করে , তখন রানী আতঙ্কিত হয়ে পরে। মনে পরে যায় হসপিটালে জয়ের শেষ কথা , সেদিন রানী জয় কে যে অপবাদ দিয়েছিলো , জয় বলেছিলো যদি কোনদিন সামনে পরে তাহলে জয় সেটা সত্যিতে পরিনত করবে। রানী জানে জয় স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো ওই ধরনের কাজ করবে না , কিন্তু জয় এখন প্রচণ্ড রেগে আছে , তার উপর অসুস্থ । রানী ভাবে জয় এখন প্রচণ্ড রেগে আছে । রাগের মাথায় হয়তো এমন কিছু করে ফেলবে , যা হয়তো জয় নিজেই পরে রিগ্রেট করবে । রানী একবার চেষ্টা করে জয় কে কিছু বলতে । কিন্ত ওর মুখ থেকে কোন শব্দ বের হয় না । মনে মনে বার বার বলতে থাকে , ‘ জয় প্লিজ এমন কিছু করো না যেন আমি এর পর আর তোমার সামনে দাড়াতে না পারি’ কারন জয় যদি ওর সাথে এখন উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে , তাহলে রানী নিজেকে কোনদিন মাফ করতে পারবে না , কারন রানী জানে এর জন্য ও ই দায়ি থাকবে , জয় নয়। কারন জয় কে এ পর্যন্ত আসতে ও নিজেই পুশ করেছে । প্রথমে জয় কে মোলেস্টারের অপবাদ দিয়েছে , তারপর নিজেকে স্বাধীন প্রমান করতে খালি বাড়িতে একটা অল্প পরিচিত ছেলেকে নিয়ে এসেছে ।
কিন্তু জয় যখন থামছিলোই না , বরং সময়ের সাথে সাথে ওর রাগ বারছিলো , তখন রানী আর কোন উপায় না দেখে দৌর দেয়, যেন জয় কে রিগ্রেট ফুল কোন কাজ করা থেকে বাচানো যায় । কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না । জয় ওকে ধরে ফেলে , চেপে ধরে সিঁড়ি ঘরের দেয়ালের সাথে , প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা করে রানী , তখনো ওর মনে সুধু এই প্রার্থনা , জয় যেন এমন কোন কাজ না করে যা ওদের সম্পর্ক শেষ করে দিবে । তেমন হলে রানী নিজেক ক্ষমা করতে পারবে না ।
কিন্তু এসব কিছুই জয়ের উপর কোন প্রভাব ফেলছিলো না , একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছিলো , আর একেকটা অভিযোগ রানীকে যেন হাইড্রলিক প্রেস দিয়ে চাপা দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলছিলো । জয় ওকে বার বার চোখ খুলতে বলছিলো , শেষে রানী চোখ খুলতে বাধ্য হয় , জয়ের চেহারা ঘৃণায় বিকৃত হয়ে থাকতে দেখে , রানীর শরীরের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায় । নিজেকে ভাগ্যর উপর ছেড়ে দেয় , মনে মনে বলে ‘ এর জন্য আমি আর আমার ছেলেমানুষি দায়ি’
রানী আবার চোখ বন্ধ করে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয় , জয়কে এই ধরনের কাজ করতে ও কিছুতেই দেখতে পারবে না । কিন্তু মাঝ পথেই আটকে যায় রানী , আবার নতুন করে তাকায় জয়ের দিকে , এবার রানী তাকায় জয়ের চোখের দিকে , আর কিছুই ওর নজরে আসে না , সুধুই জয়ের লালচে চোখ জোড়া । কিন্তু রানী সেখানে কোন ঘৃণা দেখতে পায় না । রানী সেখানে দেখে সুধু অসহায় চিৎকার আর প্রচণ্ড ব্যাথা । জয়ের চোখ থেকে পানি পড়ছে না , কিন্তু ওর চোখ দুটো চিৎকার করে কান্না করছে।
রানী স্থির হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , মুখে জয় অনেক কিছুই বলছে , কিন্তু তেমন কিছু করার কোন লক্ষন ই দেখা যাচ্ছে না । জয়ের চোখ দেখেই রানী বুঝে যাচ্ছে এসব কিছুই করার ক্ষমতা জয়ের নেই । মুখে যা বলছে তা সবি মনের অভিমান থেকে উৎপন্ন ফাঁকা বুলি ।
রানীর চোখে থেকে ভয় আতঙ্ক উধাও হয়ে যায় । সেখানে দেখা দেয় প্রচণ্ড অনুশোচনা , রানী ভেবে পায় না জয়ের এই অভিমান ও কিভাবে ভাঙবে ? জয়ের এই তীব্র অভিমান রানীকে ভেতর থেকে দুর্বল করে ফেলে । আজকে এই মুহূর্তে রানী বুঝতে পারছে কত বড় ভুল ও করেছে । আগে যদি জানতো জয় এতটা পাগল হয়ে আছে । তাহলে কোন ভয় ওকে আটকে রাখতে পারতো না। নিজেই হাজির হতো জয়ের সামনে । রানীর নিজের এমন মূর্খের মত কাজের জন্য লজ্জা হচ্ছে । কেন ও জয়ের উপর বিশ্বাস রাখতে পারলো না । কেন ভেবে নিলো জয় ওর সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করবে । আসলে ওর মাঝেই খাঁদ ছিলো , রানী মনে মনে ভাবে । আর তাই তো জয়ের সামনে যেতে ভয় পেয়েছে ।
জয় মুখে যা বলছে সত্যি সত্যি যদি তাই চাইতো , রানী এখন নিজে থেকেই তাই করতে দিতো । নিজেকে তুলে দিতো জয়ের হাতে । জয় নিজের ইচ্ছে মত ওর রাগ অভিমান মিটিয়ে নিতো । কিন্তু রানী জানে জয় এসবের কিছুই করতে চাইছে না ।
এতক্ষণ রানী জয়ের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছে , কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জয় মুখে যা বলছে সত্যি সত্যি যদি তাই চাইতো , রানী এখন নিজে থেকেই তাই করতে দিতো । নিজেকে তুলে দিতো জয়ের হাতে । জয় নিজের ইচ্ছে মত ওর রাগ অভিমান মিটিয়ে নিতো । কিন্তু রানী জানে জয় এসবের কিছুই করতে চাইছে না ।
রানী অসহায় বোধ করে । কারন রানী কোন উপায় পাচ্ছে না জয়ের এই অভিমান ভাঙ্গার। জয়কে এমন অবস্থায় দেখে ওর হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে। জয় কে এমন অসহায় অবস্থায় ও আর দেখতে পারছে না। রানী চেষ্টা করে কিছু বলতে , কিন্তু শব্দ জোগাড় করতে পারে না । সুধু অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে জয়ের চোখের দিকে । রানীর চোখ গড়িয়ে নোনতা জলের ধারা গাল বেয়ে নামতে থাকে । রানীর গাল বেয়ে নামা প্রতিটা জল বিন্দুতে লেখা ‘ আমাকে মাফ করো জয়’
****
জয় অবাক হয়ে লক্ষ্য করে রানীর চোখ থেকে আতংক দূর হয়ে গেছে । এক মুহূর্তের জন্য জয় আরো হিংস্র হয়ে ওঠে , ওর ইচ্ছা হয় আরো খারাপ কিছু বলতে করতে । কিন্তু আরো বেশি অবাক হয়ে লক্ষ্য করে ও মুখে বললেও রানীর শরীরে এখন পর্যন্ত হাত ই দিতে পারছে না । কোন অদৃশ্য কিছু ওকে বাধা দিচ্ছে । রানীর কোমল মুখটির দিকে তাকিয়ে ওর সাহস হচ্ছে না কিছু করার ।
নিজের উপর রেগে ওঠে জয় , কেন ও নিজেকে নিজে এমন অসহায় করে তুলছে । কেন রানীকে একটা শিক্ষা দিতে পারছে না । ধিরে ধিরে জয় লক্ষ্য করে ওর ভেতর থেকে রাগ নামক অনুভূতি বিদায় নিচ্ছে সেখানে রয়ে যাচ্ছে সুধুই অসহায় অভিমান । যে অভিমানের না আছে তীক্ষ্ণ দাঁত , না আছে ধারালো নখ । জয় ভেবে পায় না ও কি দিয়ে রানীকে আঘাত করবে ।
হঠাত জয় দেখে ওর হাত আপনা থেকেই যেন রানীকে আলগা করে দিচ্ছে । নিজের শরীরের এমন অসহায় ভাবে পরাজয় মেনে নেয়াকে জয় কিছুতেই মেনে নিতে পারে না । চেষ্টা করে আবার চেপে ধরতে রানীকে । প্রাণপণ চেষ্টা করে এমন কিছু বলতে যা রানীকে চরম ভাবে অপমান করবে , জয় চৌধুরীর মন নিয়ে খেলার সখ মিটিয়ে দেবে । ওকে বুঝিয়ে দিবে , এই জয়ের মন নিয়ে খেলার দুঃসাহস আজ পর্যন্ত কেউ করেনি , রানীও করে পার পেয়ে যাবে না। জয় চৌধুরী সবার প্রাপ্য সবাইকে বুঝিয়ে দেয় ।
কিন্তু জয় অসহায় ভাবে সুধু নিজেকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখে , রানীর অস্ত্রু সিক্ত চোখ ওকে নিস্তেজ করে ফেলে বার বার । বদচলন এই বিষধর মেয়ের মুখটা এতো নিষ্পাপ লাগছে , জয়ের শক্তি নেই এই মেয়ের উপর হাত তোলে , কলঙ্কিত করা তো , দুরের কথা । জয় বুঝে ফেলে ওর পরাজয় নিশ্চিত । সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির কোন ক্ষতি করা ওর সাধ্যের বাইরে । জীবনে এই প্রথম বারের মত এমন পরাজয়ের স্বাদ পায় আত্ম অভিমানী , জয় চৌধুরী ।
“ আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা” তিক্ত কণ্ঠে সুধু এটুকু বলতে পারে জয় । রানীকে মুক্ত করে দেয় । কিন্তু রানীকে নড়তে দেখে না । সেটা দেখে জয় গর্জন করে ওঠে , “ চলে যা আমার সামনে থেকে , না হলে আমি হয়তো সিধান্ত পরিবর্তন করে ফেলবো”
রানী এখনো নড়ে না , আর রানীর এমন নির্ভীক দাড়িয়ে থাকা জয়ের পরাজয়ে ডিগ্রেশনের নতুন মাত্রা যোগ করে । পরাজিত জয় অপমানে চোখ বুজে ফেলে । আর তখনি ও টের পায় একটা শীতল নরম হাত খুব যত্নের সাথে ওর তপ্ত গাল স্পর্শ করেছে। এই আরাম দায়ক শীতল স্পর্শ মুহূর্তের মাঝেই জয়ের সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরে । জয়ের কাছে মনে হয় হাজার বছর ধরে তৃষ্ণার্ত থাকার পর ওর শরীর মিষ্টি পানির ছোঁয়া পেয়েছে যেন । শত বছরের ক্লান্তি অবসন্নতা এক মুহূর্তে দূর হয়ে শরীর সজেত হয়ে উঠেছে । জয় মনে করতো নারীর প্রেমময় ছোঁয়া সম্পর্কে ওর ধারনা আছে , কিন্তু এই ছোঁয়া পাওয়ার পর ওর সেই ভুল ভেঙ্গে গেছে । এই অনুভূতি জয় এর আগে কোনদিন অনুভব করেনি । ওর মস্তিস্ক এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি প্রসেস করে উঠতে পারেনি। একেকটা মুহূর্ত কাটছে আর এই ছোঁয়ার অনুভূতি নিজেকে নতুন রুপে জয়ের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে যেন । প্রতিটি মুহূর্তের সাথে সাথে সেই অনুভুতি যেন আরো স্ট্রং হয়ে উঠছে ।
****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)