19-10-2025, 05:53 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ঙ) এর বাকি অংশ.........
জান্নাত পরন্ত দুপুরে রানীদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে । রানীকে আজকাল খুজে পাওয়া যায় না , কল করলে ধরে না , ক্যাম্পাসেও পাওয়া যায় না । গতকাল রাতে আবরারের দেয়া প্ল্যান নিয়ে ভেবেছে , এমন কি রাতে আবরারের সাথে কথাও বলেছে। কিন্তু আবরারের সেই নাটকীয় কথাবার্তা , সব কিছুই ও বিশ্বাসের উপর ভর করে বলে । আর আবরার এও বলেছে রানী নাকি দুদিন ক্যাম্পাসে আসেনি , কারো ফোন ও রিসিভ করছে না । তাই জান্নাতের তাগিদ আরো বেরেছে , বিরক্তি থেকেই বেরেছে । জয় আর রানীর নাটক আর ভালো লাগছে না ওর কাছে । জান্নাত ভেবেই পায় না ওরা এই সময়ে কি করে জন্ম নিলো। ওদের তো ৫০ এর দশকে জন্ম নেয়া উচিৎ ছিলো । তখন এসব চলতো , এখন তো এসব অচল ব্যাপার । একজন দাগা দিলে , আর একজন রেডি থাকে এখন । এতো বিরহ বেদনার দিন তো আর নেই এখন ।
কিন্তু জান্নাতের আবরারের গট ফিলিং এর উপর বিশ্বাস করতে পারছে না । তাই সাহস পাচ্ছে না , শেষ চেষ্টা করার জন্য রানীর কাছে যাচ্ছে , আলাপের ফাঁকে রানী কে জানিয়ে আসবে জয় অসুস্থ । যদি রানী জয় কে দেখতে চায় , তাহলে নিয়ে আসবে , বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে জয় নিশ্চয়ই ওকে কিছু বলবে না , আর এক ফাক বুঝে জান্নাত ওদের ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবে । এবং আশেপাশেই থাকবে । যদি উল্টা পাল্টা দেখে তখন উপস্থিত হবে । এতে আবরারের প্লানের কিছুটা প্রয়োগ করা যাবে।
“ কিরে কি খবর তোর ?” জান্নাত রানীকে নিজের রুমেই পায় , চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে । প্রচণ্ড বিরক্তি এসে ভর করে জান্নাতের উপর । কিন্তু প্রকাশ করে না ।
“ ভালো” রানী স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয় , আসলে জান্নাত কে দেখে ওর বেশ ভালো অনুভব হচ্ছে । এই দুদিনের বন্দি জীবনে ও বেশ হাপিয়ে উঠেছে , তাই জান্নাতের সাথে সম্পর্ক ভালো না হলেও ওকে দেখে ভালো লাগছে ।
“ তোর অবস্থা এমন কেন? শরীর খারাপ নাকি? ক্যাম্পাসেও যাচ্ছিস না?” জান্নাত বিরক্ত হলেও রানীর অবস্থা দেখে একটু চিন্তা হয় ওর।
“ না না আমি ঠিক আছি , ক্যাম্পাসে যেতে ভালো লাগছে না তাই”
“ ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছিস তো? , ঔষধ খাচ্ছিস ঠিক মত?” এই বলে জান্নাত নিজেই রানীর ঔষধের ড্রয়ার খুলে দেখে । আয়রন ঔষধ গুলো ওকে দেয়া হয়েছে সেগুলো গুনে দেখে , দেখা যায় এক মাসের ঔষধ থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত ঠিক মেলে না , তিন চারদিনের ঔষধ বেশি আছে ।
রানী চুপ করেই থাকে , কিছু বলে না । জান্নাত ঘুরে দেখে রানী চুপ । ওর ইচ্ছা হয় দুটো কঠিন কথা বলতে । কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় । আবরারের কথা গুলো মনে পরে যায় । তা ছাড়া এও ভাবে , রানীর এসব খেয়াল রাখার মতো তেমন কেউ নেই। রাজীব এখন আর আগের মত পেরে ওঠে না , ভয় পায় যদি আমার ক্ষেপে ওঠে । নিয়মিত ঔষধ এনে দেয় , জিজ্ঞাস করে । কিন্তু চেক করে দেখতে সাহস করে না ।
জান্নাত রানীর পাশে এসে বসে , নরম স্বরে বলে “ এমন করলে হবে ? ঔষধ তো ঠিক মত খেতে হবে”
রানীর ইচ্ছা হয় কঠিন করে উত্তর দেবে , কিন্তু হয়ে ওঠে না , জান্নাত কে ও কম কিছু বলেনি , তারপর ও জান্নাত এসেছে , ওর খোঁজ নিচ্ছে । তাই রানী চুপ করেই থাকে ।
“ দুপুরে খেয়ছিস?” জান্নাত আবার জিজ্ঞাস করে , উত্তরে রানী সুধু মাথা ঝাঁকায় , তখন জান্নাতের চোখে পরে রানীর রুমে কিছু প্লেট বাটী , এর মানে রানী রুমেই খেয়েছে । “ ঔষধ খেয়েছিস?”
রানী না সুচক মাথা নাড়ায় । তখন জান্নাত উঠে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসে , সাথে পানি , রানী ওর হাত থেকে ঔষধ আর পানি নেয় । মুখে ঔষধ নিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে । জান্নাত দেখে রানীর গলার নিচের হাড্ডি কতটা দেখা যাচ্ছে । জিজ্ঞাস করে “ তোর ওজন এখন কত?”
“ জানি না” এবার রানী উত্তর দেয়
“ তোর আর জয়ের মাঝে কত মিল দেখছিস?” জান্নাত হেসে বলে
জয়ের নাম শুনেই রানী জান্নাতের দিকে ভালো করে তাকায় , চোখে জিজ্ঞাসা
জান্নাত হাসে , “ তুই ও অসুস্থ হয়ে আছিস , ঔষধ খাচ্ছিস না, ওদিকে জয় ও অসুস্থ হয়ে পরে আছে , ডাক্তার দেখায় না , তোরা দুজনেই একেবারে ছেলেমানুস আছিস”
জয়ের অসুখের কথা শুনেই রানী নড়েচড়ে বসে , কি অসুখ জিজ্ঞাস করতে গিয়েও থেমে যায় , ওর বলাতে যেন অতি উৎকণ্ঠা প্রকাশ না পায় , তারপর নিজেকে তৈরি করে নিয়ে জিজ্ঞাস করে “ কি হয়েছে?”
“ জ্বর , শরীর ব্যাথা, বিছানা থেকে প্রায় উঠতেই পারে না” জান্নাত একটু বাড়িয়েই বলে ।
“ বলিস কি , ডেঙ্গু নয় তো ?” এবার আর রানী নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ।
“ কি জানি , ডাক্তার কাছেই তো যায় না “ জান্নাত একদম নির্লিপ্ত ভাব দেখায় , যেন রানী আরো বেশি চিন্তিত হয় । কিন্তু জান্নাত নিজের পছন্দ সই রিয়েকশন পায় না , রানী নিজের ভেতরেই রেখে দেয় ।
বাধ্য হয়েই জান্নাত জিজ্ঞাস করে “ তুই যাবি দেখতে? তোকে দেখতে কিন্তু জয় একদিনে দুবার গিয়েছিলো।”
রানী এবারো নিরুত্তর , তাই জান্নাত বলে “ অবশ্য না যাওয়াই উচিৎ , যদি ডেঙ্গু না হয়ে ভাইরাল জ্বর হয় , তবে তোকেও ধরবে, এই দেখ না আমি চলে এসেছি , কখন যে আমাকে ধরে” জান্নাত রানীর মনে জয়ের জন্য মমতা উৎপাদনের চেষ্টা করে । ভাবে রানী যদি ভাবে জয়ের প্রতি সবাই উদাসীন তাহলে হয়তো রানী জয়ের প্রতি মমতা বোধ করবে ।
রানী কিছুই বলে না , তবে জান্নাত দেখে রানীর চোখ দুটো ছলছল করছে । মনে মনে জান্নাত রানী কে একটা থাপ্পড় মারতে চায় । আর কত স্যাড সিনেমার নাইকা ভাব নিবি , একটু স্বাভাবিক মানুষের মত আচরণ কর - মনে মনে বলে জান্নাত ।
জান্নাত ব্যারথ হয়ে ফিরে যায় । ফিরে গিয়ে জয়ের ঘরে যেতে নেবে , তখনি দেখে রাজীব আর ওর মা কথা বলছে ।
রাজীব বলছে “ বড় আম্মু কে তোমাকে এসব বলেছে , তোমার কি মনে হয় আমি জান্নাত কে এমন কাজ করতে দেবো?”
“ কি জানি , আমি কি করবো বুঝতে পারছি না , জয় বলল” আয়শা প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল ।
উত্তরে রাজীব বেশ কঠিন স্বরে বলল “ আমি জানি না জয় কেনো বলেছে , কিন্তু এমন কোন কাজ জান্নাত আর আমি করছি না”
জান্নাতের বুক ধক করে ওঠে , জয় কি বলেছে ? মনে মনে ভাবে ও । তারপর আবার ভাবে জয় কি জেনে গেছে কিছু ? আর আম্মু কি রাজীব কে এই নিয়ে জিজ্ঞাস করছে ? আবার ভাবে জয় যদি কিছু আঁচ করতে পারতো তাহলে এতো চুপচাপ থাকতো না , ও বাড়ি মাথায় তুলতো । খুব শক্ত ভাবে রিয়েক্ট করতো । নিজের আর রাজীবের মাঝের ঝামেলা টেনে নিয়ে আসতো ।
জান্নাত আবার বেড়িয়ে যায় , দরজার বাইরে অপেক্ষা করে , কিছুক্ষন অপেক্ষার পর ই রাজীব বেড়িয়ে আশে । চেহারা গম্ভির কিছুটা রাগান্বিত । কিন্তু জান্নাত ওকে বুঝতে দেয় না , যে ও কিছু জানে । স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞাস করে , “ তুই এখানে , আর আমি তোদের বাড়ি থেকে এলাম”
রাজীব ও স্বাভাবিক ভাবেই বলার চেষ্টা করে , কিন্তু ওর কণ্ঠের রাগ লুকাতে পারে না , “ তোর ভাই কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে এসেছিলাম , আব্বু পাঠিয়েছিলো , আমি জানতাম যাবে না , তবুও আব্বুর মন রাক্ষায় এসেছিলাম”
“ও তাই” জান্নাত আর কোন কথা খুজে না পেয়ে বলে , মনে মনে জান্নাত চাইছে রাজীব ওর মায়ের সাথে কি কথা হচ্ছিলো সেটা নিয়ে কিছু বলুক ।
কিন্তু জান্নাত কে হতাশ করে দিয়ে রাজীব বলে , “ তুই একটু নিয়ে যা না ডাক্তারের কাছে , আমার তো ওর শরীরের অবস্থা ভালো ঠেকছে না”
জান্নাত মনে মনে হাসে , ভাবে , সবার প্রতি নজর আছে , কিন্তু একজনের মনের অবস্থার প্রতি কোন নজর নেই । একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে , জান্নাত , বলে “ ও তো আর বাচ্চা না যে কোলে করে নিয়ে যাবো , যদি নিজে থেকে না যায় , তাহলে একেবারে যখন অসুস্থ হয়ে পরবে তখন এ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিয়ে যেতে হবে”
“ হুম ঠিক বলেছিস , ওর শরীর বড় হয়েছে কিন্তু ও বড় হতে পারেনি , এখনো ছোটই রয়ে গেছে” এই বলে রাজীব একটা নিঃশ্বাস ফেলে , তারপর বেশ রাগান্বিত হয়ে বলে “ এই দেখ না বড় আম্মুকে কেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছে”
এবার জান্নাতের প্রতিক্ষার শেষ হয় , দ্রুত জিজ্ঞাস করে “ কেন কি করেছে ?”
“ তোর ভাই কে গিয়েই জিজ্ঞাস কর , বড় আম্মু কেঁদে কেটে একদম অস্থির , আমাকে এমন করে ধরলো”
“ কেন? তোকে ধরলো কেনো?” জান্নাত আবার জিজ্ঞাস করলো
“ আমি নাকি তোকে সাহস দিচ্ছি , রাজনৈতিক উস্কানি মুলক ভিডিও বানাতে , তোর উপর নাকি ক্ষমতাবান লোকজন রেগে আছে, রাস্তায় পেলে তোকে মাইর দেবে”
জান্নাত আর সেখানে এক মুহূর্ত দাড়ায় না , চেঁচিয়ে “ জয়ের বাচ্চা জয় , তোকে আমি খেয়ে ফেলবো” বলতে বলতে বাড়ির ভেতর ঢোকে ,
রাজীব পেছনে থেকে ডাকে , কিন্তু জান্নাত পাত্তা দেয় না । সেটা দেখে রাজীব ও ওর পেছনে পেছন ঢোকে । কিন্তু জান্নাত অতক্ষনে জয়ের ঘরে ঢুকে গেছে , তাই আর রাজীব আগায় না ।
জান্নাত ধরাম করে জয়ের ঘরের দরজা খোলে , দরজার দুই পাল্লা দুই দিকে ধরাম করে লাগে ।
“ কিরে শি-হাল্ক এখানে কি করছিস?” জয় জান্নাতের অবস্থা দেখেই বুঝে ফেলে , ওর লাগানো কথার ইম্পেক্ট শুরু হয়ে গেছে।
“ তোর মাথা আমি ফাটিয়ে দিবো , তুই আম্মুকে কি বলেছিস?” জান্নাত রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে
“ যেটা সত্যি সেটাই বলেছি” জয় উঠে বসে , নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য প্রস্তুত
“ তোর সত্যি আমি তোর ……” জান্নাত লাইন শেষ করে না , ছোট বেলায় এই লাইন অনায়েসে বলে দিতো , এখন বড় হয়েছে তাই বলতে বাধলো ।
“ দেখ জান্নাত কথা সাবধানে বল , আমি তোর বড় ভাই “ জান্নাত লাইন শেষ না করলেও জয় জানে জান্নাত কি বলতে চেয়েছিলো। এই লাইন অনেক বলেছে আগে ।
“ বড় ভাই বলতে তোর লজ্জা হয় না , যে জিনসটা নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি সিরিয়াস সেখানেই তুই বাধা দিচ্ছিস?”
“ আমি বাধা দিলাম কই , আমি বরং তোর ভালো করলাম , মেয়ে মানুষ তুই এসবে না যাওয়াই ভালো , এমন কন্টেন্ট বানা যেটা মেয়েদের জন্য সেফ। আর সাথে এমন একজন কে নিয়েছিস যে কিনা বিপদ দেখলে তোকে ছেড়ে পালাবে । বলবে , আমার ক্যারিয়ার আছে , বাড়িতে আমার দুধের শিশু ছোট বোন আছে , আমার আব্বু অসুস্থ। আমার কিছু হলে ওদের কি হবে , আমার ছোট বোনকে কে দুদু খাওয়াবে ?” জয় রাজীবের কণ্ঠ নকল করে বলার চেষ্টা করে ।
জান্নাত কিছুক্ষন চোখ সরু করে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , আরপর বেশ শান্ত স্বরে বলে “ তোর জন্য আমার মায়া হয় , তুই কবে বড় হবি? নিজে যা বুঝিস সেটাই সঠিক ভেবে নিস , কবে তোর চোখ ফুটবে ? কবে তোর কান খুলবে , কবে তোর মস্তিস্ক ম্যাচিওর হবে? নাকি সারাজীবন এমন ম্যান চাইন্ড হয়ে থাকবি ?” এই বলে জান্নাত আর দাড়ায় না , ওর কাছে মনে হয় জয়ের সাথে কথা বলা মানে সময় নষ্ট করা ।
জান্নাত চলে গেলে জয় বিড়বিড় করে বলে “ আমার কথা তো বিশ্বাস করলি না , যখন তোর সাথে হবে তখন বুঝবি , এদের স্বভাব ই এমন , মাঝ পথে এসে এরা ছেড়ে যায় , ভাই বোন দুটই এক রকম, এদের কাছ থেকে যত দূর থাকবি তত ভালো থকবি। আমাকে তো দেখছিস , তাতেও তোর শিক্ষা হয় না ”
****
রানী নিজেদের লিভিং রুমে সোফায় হাটু ভাজ করে হাটুতে থুতনি রেখে বসে আছে । জান্নাত চলে যাওয়ার পর , ওর ইচ্ছা হয়েছিলো দূর থেকে একবার জয় কে দেখে আসবে । কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠেনি , দরজা খুলেও আবার বন্ধ করে দিয়েছে। আর তার পর থেকেই সোফায় এভাবে বসে আছে । বাসায় এখন কেউ নেই , রহিম আজকে ছুটির দিনেও কোচিং সেন্টারে গিয়েছে , বাচ্চাদের মক টেস্ট নিচ্ছে তার পেপার তৈরি করতে হবে ।
এমন সময় রাজীব ঢোকে , শব্দ করে দরজা আটকায় , আর সেই শব্দে রানী চমকে ওঠে । সেয়া দেখে রাজীব বলে “ ওহ তুই বসে আছিস ? দেখিনি তোকে, লাইট দিসনি কেন?”
রাজীব লাইট জ্বালায় , তারপর সোফায় বসে পরে , রাগে গজ গজ করতে থাকে ।
“ কি হয়েছে?” রানী দুর্বল স্বরে জিজ্ঞাস করে ,
“ আর বলিস না , আব্বুকে এতো করে বললাম ও আমার সাথে যাবে না , তবুও আমাকে জোর করে পাঠালো? আমার কোন আত্মসম্মান নেই যেন , সবার কাছে আমার সুধু অপমান ই হতে হবে” রাজীব রাগত স্বরে বলল
রাজীবের কথা গুলো , রানী নিজের গায়ে নিলো , মনে পরে গেলো রাজীব কে কি অপমানটাই না করেছিলো , একটু অনুতাপ হলো ওর । জিজ্ঞাস করলো , “আবার কে তোকে অপমান করলো ?”
“ কে আবার , মানুষ কে অপমান করার লাইসেন্স আর কার আছে? সে তো একজনের ই আছে”
রানী বুঝতে পারে রাজীব জয়ের কথা বলছে । রানীর মনে হঠাত করে একটা জিজ্ঞাসা আসে , রানী ভাবে - ওরা পারে কিভাবে? এইজে জান্নাত এসে একটু আগে ওর প্রতি যত্ন নিয়ে গেলো , অথচ এই জান্নাতের সাথে ও আজকাল শীতল আচরণ করে । আর এদিকে রাজীব , জয়কে ডাক্তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য গিয়েছিলো , এটা জানা সত্ত্বেও জয় ওর সাথে যাবে না।
“ওর শরীর এখন কেমন ?” রানী আরো দুর্বল স্বরে জিজ্ঞাস করে । রাজীব আর জন্নাতের মানসিক শক্তি দেখে নিজেকে আরো দুর্বল মনে হয় ওর ।
“ ভালো না , ডেঙ্গু না হলেও টাইফয়েড নিশ্চিত , চোখ লাল হয়ে আছে” এবার রাজীবের কণ্ঠে কিছুটা উৎকণ্ঠা প্রকাশ পায় ।
“ তুই আর একটু জোর করতে পারলি না?”
“ আমি আর এইসব এর মাঝে নেই , জোর করতে গিয়ে কি অপমান হবো নাকি?”
রানী আর কিছু বলে না , বলার মুখ ও নেই ওর , এই রাজীব কেই কিছুদিন আগে অনধিকার চর্চার জন্য কত কথা শুনিয়ে দিয়েছে। রানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
“ তোর অবস্থা এমন কেন ? চোখের নিচে কালি , শরীর ও তো মনে হয় ভালো না” রাজীব রানীর দীর্ঘশ্বাস শুনে তাকায় । তাকিয়ে রানী কে দেখে ওর মনে হয় রানী নিজেও সুস্থ নয় ।
“ না না আমার কিছুই হয়নি , দুদিন রাতে তেমন ঘুম হয়নি , তাই এমন হয়েছে” রানী দ্রুত নিজেকে সোজা করে বসে ।
“ কেন রাতে ঘুম হয়নি কেন?” রাজীব রানীর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে ,
“ পড়াশুনার চাপ আছে একটু” রানী মিথ্যা করে বলে ।
“ পড়াশুনা জরুরি , কিন্তু তার চেয়ও জরুরি তোর স্বাস্থ্য , এটা মনে রাখিস”
রানী সম্মতি সুচক মাথা নাড়ায় ।
রাজীব কিছুক্ষন কি যেন ভাবে , তারপর বলে “ তবুও আমি আগামিকালের সিরিয়াল দিয়ে রাখবো , একটা রুটিন চেকাপ তোর দরকার, আগামিকাল সন্ধার পর কোন কাজ রাখিস না”
রানী একবার ভাবে , না করবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে না । ওর কাছে মনে হয় কেউ ওর জন্য কেয়ার করছে করুক না । কেউ যখন কেয়ার করার জন্য না থাকে , কতটা শূন্যতা অনুভব হয় তা রানী এই কয় মাসে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে । আজকে যখন জান্নাত ওকে ঔষধ খাইয়ে গেলো তখন রানী অনুভব করেছে , এই ব্যাপার গুলো আসলেই মিস করেছে ও ।
“ আমি একটু ছাদে যাই ভাইয়া” রানী অনেকদিন পর রাজীবের কাছে নিজের কোন প্ল্যান জানায় ।
“ বেশিক্ষণ থাকিস না এই সময় রোগ বালাই বেশি হয় । আমিও একটু বাইরে যাচ্ছি , ঘণ্টা দুয়েকের মাঝে ফিরবো , রাতের খাবার তৈরি করবো আমি এসে , তুই রান্না ঘরে ঢুকিস না”
“ ওকে” রানী মাথা হেলায় ।
রানী সরাসরি ছাদে যায় না , প্রথমে নিজের ঘরে যায় , একটা সোয়েটার পরে । সিঁড়িতে পা রেখেই রাজীবের বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ পায় । অনেক দিন পর ছাদে যাচ্ছে । দরজা খুলতেই সন্ধার আগের শীতল বাতাস ওর মুখে লাগে । ফ্রেস বাতাস শরীরে লাগতেই নিজেকে কিছুটা উজ্জেবিত লাগে, যদিও বাতাস খুব ঠাণ্ডা । রানী দরজার চৌকাঠের বাইরে একটি পা বাড়ায় । খুবি সাধারন একটা ব্যাপার , রানী ভাবছে এই পদক্ষেপ ওকে ওদের ছাদে নিয়ে যাবে । কিন্তু মাঝে মাঝে অতি সাধারন কিছু থেকেও , অভাবনীয় কিছু ফলাফল আসে । যা মানুষ হাজার পরিকল্পনা করেও হাসিল করতে পারে না ।
*****
জান্নাত পরন্ত দুপুরে রানীদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে । রানীকে আজকাল খুজে পাওয়া যায় না , কল করলে ধরে না , ক্যাম্পাসেও পাওয়া যায় না । গতকাল রাতে আবরারের দেয়া প্ল্যান নিয়ে ভেবেছে , এমন কি রাতে আবরারের সাথে কথাও বলেছে। কিন্তু আবরারের সেই নাটকীয় কথাবার্তা , সব কিছুই ও বিশ্বাসের উপর ভর করে বলে । আর আবরার এও বলেছে রানী নাকি দুদিন ক্যাম্পাসে আসেনি , কারো ফোন ও রিসিভ করছে না । তাই জান্নাতের তাগিদ আরো বেরেছে , বিরক্তি থেকেই বেরেছে । জয় আর রানীর নাটক আর ভালো লাগছে না ওর কাছে । জান্নাত ভেবেই পায় না ওরা এই সময়ে কি করে জন্ম নিলো। ওদের তো ৫০ এর দশকে জন্ম নেয়া উচিৎ ছিলো । তখন এসব চলতো , এখন তো এসব অচল ব্যাপার । একজন দাগা দিলে , আর একজন রেডি থাকে এখন । এতো বিরহ বেদনার দিন তো আর নেই এখন ।
কিন্তু জান্নাতের আবরারের গট ফিলিং এর উপর বিশ্বাস করতে পারছে না । তাই সাহস পাচ্ছে না , শেষ চেষ্টা করার জন্য রানীর কাছে যাচ্ছে , আলাপের ফাঁকে রানী কে জানিয়ে আসবে জয় অসুস্থ । যদি রানী জয় কে দেখতে চায় , তাহলে নিয়ে আসবে , বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে জয় নিশ্চয়ই ওকে কিছু বলবে না , আর এক ফাক বুঝে জান্নাত ওদের ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবে । এবং আশেপাশেই থাকবে । যদি উল্টা পাল্টা দেখে তখন উপস্থিত হবে । এতে আবরারের প্লানের কিছুটা প্রয়োগ করা যাবে।
“ কিরে কি খবর তোর ?” জান্নাত রানীকে নিজের রুমেই পায় , চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে । প্রচণ্ড বিরক্তি এসে ভর করে জান্নাতের উপর । কিন্তু প্রকাশ করে না ।
“ ভালো” রানী স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয় , আসলে জান্নাত কে দেখে ওর বেশ ভালো অনুভব হচ্ছে । এই দুদিনের বন্দি জীবনে ও বেশ হাপিয়ে উঠেছে , তাই জান্নাতের সাথে সম্পর্ক ভালো না হলেও ওকে দেখে ভালো লাগছে ।
“ তোর অবস্থা এমন কেন? শরীর খারাপ নাকি? ক্যাম্পাসেও যাচ্ছিস না?” জান্নাত বিরক্ত হলেও রানীর অবস্থা দেখে একটু চিন্তা হয় ওর।
“ না না আমি ঠিক আছি , ক্যাম্পাসে যেতে ভালো লাগছে না তাই”
“ ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছিস তো? , ঔষধ খাচ্ছিস ঠিক মত?” এই বলে জান্নাত নিজেই রানীর ঔষধের ড্রয়ার খুলে দেখে । আয়রন ঔষধ গুলো ওকে দেয়া হয়েছে সেগুলো গুনে দেখে , দেখা যায় এক মাসের ঔষধ থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত ঠিক মেলে না , তিন চারদিনের ঔষধ বেশি আছে ।
রানী চুপ করেই থাকে , কিছু বলে না । জান্নাত ঘুরে দেখে রানী চুপ । ওর ইচ্ছা হয় দুটো কঠিন কথা বলতে । কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় । আবরারের কথা গুলো মনে পরে যায় । তা ছাড়া এও ভাবে , রানীর এসব খেয়াল রাখার মতো তেমন কেউ নেই। রাজীব এখন আর আগের মত পেরে ওঠে না , ভয় পায় যদি আমার ক্ষেপে ওঠে । নিয়মিত ঔষধ এনে দেয় , জিজ্ঞাস করে । কিন্তু চেক করে দেখতে সাহস করে না ।
জান্নাত রানীর পাশে এসে বসে , নরম স্বরে বলে “ এমন করলে হবে ? ঔষধ তো ঠিক মত খেতে হবে”
রানীর ইচ্ছা হয় কঠিন করে উত্তর দেবে , কিন্তু হয়ে ওঠে না , জান্নাত কে ও কম কিছু বলেনি , তারপর ও জান্নাত এসেছে , ওর খোঁজ নিচ্ছে । তাই রানী চুপ করেই থাকে ।
“ দুপুরে খেয়ছিস?” জান্নাত আবার জিজ্ঞাস করে , উত্তরে রানী সুধু মাথা ঝাঁকায় , তখন জান্নাতের চোখে পরে রানীর রুমে কিছু প্লেট বাটী , এর মানে রানী রুমেই খেয়েছে । “ ঔষধ খেয়েছিস?”
রানী না সুচক মাথা নাড়ায় । তখন জান্নাত উঠে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসে , সাথে পানি , রানী ওর হাত থেকে ঔষধ আর পানি নেয় । মুখে ঔষধ নিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে । জান্নাত দেখে রানীর গলার নিচের হাড্ডি কতটা দেখা যাচ্ছে । জিজ্ঞাস করে “ তোর ওজন এখন কত?”
“ জানি না” এবার রানী উত্তর দেয়
“ তোর আর জয়ের মাঝে কত মিল দেখছিস?” জান্নাত হেসে বলে
জয়ের নাম শুনেই রানী জান্নাতের দিকে ভালো করে তাকায় , চোখে জিজ্ঞাসা
জান্নাত হাসে , “ তুই ও অসুস্থ হয়ে আছিস , ঔষধ খাচ্ছিস না, ওদিকে জয় ও অসুস্থ হয়ে পরে আছে , ডাক্তার দেখায় না , তোরা দুজনেই একেবারে ছেলেমানুস আছিস”
জয়ের অসুখের কথা শুনেই রানী নড়েচড়ে বসে , কি অসুখ জিজ্ঞাস করতে গিয়েও থেমে যায় , ওর বলাতে যেন অতি উৎকণ্ঠা প্রকাশ না পায় , তারপর নিজেকে তৈরি করে নিয়ে জিজ্ঞাস করে “ কি হয়েছে?”
“ জ্বর , শরীর ব্যাথা, বিছানা থেকে প্রায় উঠতেই পারে না” জান্নাত একটু বাড়িয়েই বলে ।
“ বলিস কি , ডেঙ্গু নয় তো ?” এবার আর রানী নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ।
“ কি জানি , ডাক্তার কাছেই তো যায় না “ জান্নাত একদম নির্লিপ্ত ভাব দেখায় , যেন রানী আরো বেশি চিন্তিত হয় । কিন্তু জান্নাত নিজের পছন্দ সই রিয়েকশন পায় না , রানী নিজের ভেতরেই রেখে দেয় ।
বাধ্য হয়েই জান্নাত জিজ্ঞাস করে “ তুই যাবি দেখতে? তোকে দেখতে কিন্তু জয় একদিনে দুবার গিয়েছিলো।”
রানী এবারো নিরুত্তর , তাই জান্নাত বলে “ অবশ্য না যাওয়াই উচিৎ , যদি ডেঙ্গু না হয়ে ভাইরাল জ্বর হয় , তবে তোকেও ধরবে, এই দেখ না আমি চলে এসেছি , কখন যে আমাকে ধরে” জান্নাত রানীর মনে জয়ের জন্য মমতা উৎপাদনের চেষ্টা করে । ভাবে রানী যদি ভাবে জয়ের প্রতি সবাই উদাসীন তাহলে হয়তো রানী জয়ের প্রতি মমতা বোধ করবে ।
রানী কিছুই বলে না , তবে জান্নাত দেখে রানীর চোখ দুটো ছলছল করছে । মনে মনে জান্নাত রানী কে একটা থাপ্পড় মারতে চায় । আর কত স্যাড সিনেমার নাইকা ভাব নিবি , একটু স্বাভাবিক মানুষের মত আচরণ কর - মনে মনে বলে জান্নাত ।
জান্নাত ব্যারথ হয়ে ফিরে যায় । ফিরে গিয়ে জয়ের ঘরে যেতে নেবে , তখনি দেখে রাজীব আর ওর মা কথা বলছে ।
রাজীব বলছে “ বড় আম্মু কে তোমাকে এসব বলেছে , তোমার কি মনে হয় আমি জান্নাত কে এমন কাজ করতে দেবো?”
“ কি জানি , আমি কি করবো বুঝতে পারছি না , জয় বলল” আয়শা প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল ।
উত্তরে রাজীব বেশ কঠিন স্বরে বলল “ আমি জানি না জয় কেনো বলেছে , কিন্তু এমন কোন কাজ জান্নাত আর আমি করছি না”
জান্নাতের বুক ধক করে ওঠে , জয় কি বলেছে ? মনে মনে ভাবে ও । তারপর আবার ভাবে জয় কি জেনে গেছে কিছু ? আর আম্মু কি রাজীব কে এই নিয়ে জিজ্ঞাস করছে ? আবার ভাবে জয় যদি কিছু আঁচ করতে পারতো তাহলে এতো চুপচাপ থাকতো না , ও বাড়ি মাথায় তুলতো । খুব শক্ত ভাবে রিয়েক্ট করতো । নিজের আর রাজীবের মাঝের ঝামেলা টেনে নিয়ে আসতো ।
জান্নাত আবার বেড়িয়ে যায় , দরজার বাইরে অপেক্ষা করে , কিছুক্ষন অপেক্ষার পর ই রাজীব বেড়িয়ে আশে । চেহারা গম্ভির কিছুটা রাগান্বিত । কিন্তু জান্নাত ওকে বুঝতে দেয় না , যে ও কিছু জানে । স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞাস করে , “ তুই এখানে , আর আমি তোদের বাড়ি থেকে এলাম”
রাজীব ও স্বাভাবিক ভাবেই বলার চেষ্টা করে , কিন্তু ওর কণ্ঠের রাগ লুকাতে পারে না , “ তোর ভাই কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে এসেছিলাম , আব্বু পাঠিয়েছিলো , আমি জানতাম যাবে না , তবুও আব্বুর মন রাক্ষায় এসেছিলাম”
“ও তাই” জান্নাত আর কোন কথা খুজে না পেয়ে বলে , মনে মনে জান্নাত চাইছে রাজীব ওর মায়ের সাথে কি কথা হচ্ছিলো সেটা নিয়ে কিছু বলুক ।
কিন্তু জান্নাত কে হতাশ করে দিয়ে রাজীব বলে , “ তুই একটু নিয়ে যা না ডাক্তারের কাছে , আমার তো ওর শরীরের অবস্থা ভালো ঠেকছে না”
জান্নাত মনে মনে হাসে , ভাবে , সবার প্রতি নজর আছে , কিন্তু একজনের মনের অবস্থার প্রতি কোন নজর নেই । একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে , জান্নাত , বলে “ ও তো আর বাচ্চা না যে কোলে করে নিয়ে যাবো , যদি নিজে থেকে না যায় , তাহলে একেবারে যখন অসুস্থ হয়ে পরবে তখন এ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিয়ে যেতে হবে”
“ হুম ঠিক বলেছিস , ওর শরীর বড় হয়েছে কিন্তু ও বড় হতে পারেনি , এখনো ছোটই রয়ে গেছে” এই বলে রাজীব একটা নিঃশ্বাস ফেলে , তারপর বেশ রাগান্বিত হয়ে বলে “ এই দেখ না বড় আম্মুকে কেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছে”
এবার জান্নাতের প্রতিক্ষার শেষ হয় , দ্রুত জিজ্ঞাস করে “ কেন কি করেছে ?”
“ তোর ভাই কে গিয়েই জিজ্ঞাস কর , বড় আম্মু কেঁদে কেটে একদম অস্থির , আমাকে এমন করে ধরলো”
“ কেন? তোকে ধরলো কেনো?” জান্নাত আবার জিজ্ঞাস করলো
“ আমি নাকি তোকে সাহস দিচ্ছি , রাজনৈতিক উস্কানি মুলক ভিডিও বানাতে , তোর উপর নাকি ক্ষমতাবান লোকজন রেগে আছে, রাস্তায় পেলে তোকে মাইর দেবে”
জান্নাত আর সেখানে এক মুহূর্ত দাড়ায় না , চেঁচিয়ে “ জয়ের বাচ্চা জয় , তোকে আমি খেয়ে ফেলবো” বলতে বলতে বাড়ির ভেতর ঢোকে ,
রাজীব পেছনে থেকে ডাকে , কিন্তু জান্নাত পাত্তা দেয় না । সেটা দেখে রাজীব ও ওর পেছনে পেছন ঢোকে । কিন্তু জান্নাত অতক্ষনে জয়ের ঘরে ঢুকে গেছে , তাই আর রাজীব আগায় না ।
জান্নাত ধরাম করে জয়ের ঘরের দরজা খোলে , দরজার দুই পাল্লা দুই দিকে ধরাম করে লাগে ।
“ কিরে শি-হাল্ক এখানে কি করছিস?” জয় জান্নাতের অবস্থা দেখেই বুঝে ফেলে , ওর লাগানো কথার ইম্পেক্ট শুরু হয়ে গেছে।
“ তোর মাথা আমি ফাটিয়ে দিবো , তুই আম্মুকে কি বলেছিস?” জান্নাত রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে
“ যেটা সত্যি সেটাই বলেছি” জয় উঠে বসে , নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য প্রস্তুত
“ তোর সত্যি আমি তোর ……” জান্নাত লাইন শেষ করে না , ছোট বেলায় এই লাইন অনায়েসে বলে দিতো , এখন বড় হয়েছে তাই বলতে বাধলো ।
“ দেখ জান্নাত কথা সাবধানে বল , আমি তোর বড় ভাই “ জান্নাত লাইন শেষ না করলেও জয় জানে জান্নাত কি বলতে চেয়েছিলো। এই লাইন অনেক বলেছে আগে ।
“ বড় ভাই বলতে তোর লজ্জা হয় না , যে জিনসটা নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি সিরিয়াস সেখানেই তুই বাধা দিচ্ছিস?”
“ আমি বাধা দিলাম কই , আমি বরং তোর ভালো করলাম , মেয়ে মানুষ তুই এসবে না যাওয়াই ভালো , এমন কন্টেন্ট বানা যেটা মেয়েদের জন্য সেফ। আর সাথে এমন একজন কে নিয়েছিস যে কিনা বিপদ দেখলে তোকে ছেড়ে পালাবে । বলবে , আমার ক্যারিয়ার আছে , বাড়িতে আমার দুধের শিশু ছোট বোন আছে , আমার আব্বু অসুস্থ। আমার কিছু হলে ওদের কি হবে , আমার ছোট বোনকে কে দুদু খাওয়াবে ?” জয় রাজীবের কণ্ঠ নকল করে বলার চেষ্টা করে ।
জান্নাত কিছুক্ষন চোখ সরু করে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , আরপর বেশ শান্ত স্বরে বলে “ তোর জন্য আমার মায়া হয় , তুই কবে বড় হবি? নিজে যা বুঝিস সেটাই সঠিক ভেবে নিস , কবে তোর চোখ ফুটবে ? কবে তোর কান খুলবে , কবে তোর মস্তিস্ক ম্যাচিওর হবে? নাকি সারাজীবন এমন ম্যান চাইন্ড হয়ে থাকবি ?” এই বলে জান্নাত আর দাড়ায় না , ওর কাছে মনে হয় জয়ের সাথে কথা বলা মানে সময় নষ্ট করা ।
জান্নাত চলে গেলে জয় বিড়বিড় করে বলে “ আমার কথা তো বিশ্বাস করলি না , যখন তোর সাথে হবে তখন বুঝবি , এদের স্বভাব ই এমন , মাঝ পথে এসে এরা ছেড়ে যায় , ভাই বোন দুটই এক রকম, এদের কাছ থেকে যত দূর থাকবি তত ভালো থকবি। আমাকে তো দেখছিস , তাতেও তোর শিক্ষা হয় না ”
****
রানী নিজেদের লিভিং রুমে সোফায় হাটু ভাজ করে হাটুতে থুতনি রেখে বসে আছে । জান্নাত চলে যাওয়ার পর , ওর ইচ্ছা হয়েছিলো দূর থেকে একবার জয় কে দেখে আসবে । কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠেনি , দরজা খুলেও আবার বন্ধ করে দিয়েছে। আর তার পর থেকেই সোফায় এভাবে বসে আছে । বাসায় এখন কেউ নেই , রহিম আজকে ছুটির দিনেও কোচিং সেন্টারে গিয়েছে , বাচ্চাদের মক টেস্ট নিচ্ছে তার পেপার তৈরি করতে হবে ।
এমন সময় রাজীব ঢোকে , শব্দ করে দরজা আটকায় , আর সেই শব্দে রানী চমকে ওঠে । সেয়া দেখে রাজীব বলে “ ওহ তুই বসে আছিস ? দেখিনি তোকে, লাইট দিসনি কেন?”
রাজীব লাইট জ্বালায় , তারপর সোফায় বসে পরে , রাগে গজ গজ করতে থাকে ।
“ কি হয়েছে?” রানী দুর্বল স্বরে জিজ্ঞাস করে ,
“ আর বলিস না , আব্বুকে এতো করে বললাম ও আমার সাথে যাবে না , তবুও আমাকে জোর করে পাঠালো? আমার কোন আত্মসম্মান নেই যেন , সবার কাছে আমার সুধু অপমান ই হতে হবে” রাজীব রাগত স্বরে বলল
রাজীবের কথা গুলো , রানী নিজের গায়ে নিলো , মনে পরে গেলো রাজীব কে কি অপমানটাই না করেছিলো , একটু অনুতাপ হলো ওর । জিজ্ঞাস করলো , “আবার কে তোকে অপমান করলো ?”
“ কে আবার , মানুষ কে অপমান করার লাইসেন্স আর কার আছে? সে তো একজনের ই আছে”
রানী বুঝতে পারে রাজীব জয়ের কথা বলছে । রানীর মনে হঠাত করে একটা জিজ্ঞাসা আসে , রানী ভাবে - ওরা পারে কিভাবে? এইজে জান্নাত এসে একটু আগে ওর প্রতি যত্ন নিয়ে গেলো , অথচ এই জান্নাতের সাথে ও আজকাল শীতল আচরণ করে । আর এদিকে রাজীব , জয়কে ডাক্তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য গিয়েছিলো , এটা জানা সত্ত্বেও জয় ওর সাথে যাবে না।
“ওর শরীর এখন কেমন ?” রানী আরো দুর্বল স্বরে জিজ্ঞাস করে । রাজীব আর জন্নাতের মানসিক শক্তি দেখে নিজেকে আরো দুর্বল মনে হয় ওর ।
“ ভালো না , ডেঙ্গু না হলেও টাইফয়েড নিশ্চিত , চোখ লাল হয়ে আছে” এবার রাজীবের কণ্ঠে কিছুটা উৎকণ্ঠা প্রকাশ পায় ।
“ তুই আর একটু জোর করতে পারলি না?”
“ আমি আর এইসব এর মাঝে নেই , জোর করতে গিয়ে কি অপমান হবো নাকি?”
রানী আর কিছু বলে না , বলার মুখ ও নেই ওর , এই রাজীব কেই কিছুদিন আগে অনধিকার চর্চার জন্য কত কথা শুনিয়ে দিয়েছে। রানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
“ তোর অবস্থা এমন কেন ? চোখের নিচে কালি , শরীর ও তো মনে হয় ভালো না” রাজীব রানীর দীর্ঘশ্বাস শুনে তাকায় । তাকিয়ে রানী কে দেখে ওর মনে হয় রানী নিজেও সুস্থ নয় ।
“ না না আমার কিছুই হয়নি , দুদিন রাতে তেমন ঘুম হয়নি , তাই এমন হয়েছে” রানী দ্রুত নিজেকে সোজা করে বসে ।
“ কেন রাতে ঘুম হয়নি কেন?” রাজীব রানীর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে ,
“ পড়াশুনার চাপ আছে একটু” রানী মিথ্যা করে বলে ।
“ পড়াশুনা জরুরি , কিন্তু তার চেয়ও জরুরি তোর স্বাস্থ্য , এটা মনে রাখিস”
রানী সম্মতি সুচক মাথা নাড়ায় ।
রাজীব কিছুক্ষন কি যেন ভাবে , তারপর বলে “ তবুও আমি আগামিকালের সিরিয়াল দিয়ে রাখবো , একটা রুটিন চেকাপ তোর দরকার, আগামিকাল সন্ধার পর কোন কাজ রাখিস না”
রানী একবার ভাবে , না করবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে না । ওর কাছে মনে হয় কেউ ওর জন্য কেয়ার করছে করুক না । কেউ যখন কেয়ার করার জন্য না থাকে , কতটা শূন্যতা অনুভব হয় তা রানী এই কয় মাসে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে । আজকে যখন জান্নাত ওকে ঔষধ খাইয়ে গেলো তখন রানী অনুভব করেছে , এই ব্যাপার গুলো আসলেই মিস করেছে ও ।
“ আমি একটু ছাদে যাই ভাইয়া” রানী অনেকদিন পর রাজীবের কাছে নিজের কোন প্ল্যান জানায় ।
“ বেশিক্ষণ থাকিস না এই সময় রোগ বালাই বেশি হয় । আমিও একটু বাইরে যাচ্ছি , ঘণ্টা দুয়েকের মাঝে ফিরবো , রাতের খাবার তৈরি করবো আমি এসে , তুই রান্না ঘরে ঢুকিস না”
“ ওকে” রানী মাথা হেলায় ।
রানী সরাসরি ছাদে যায় না , প্রথমে নিজের ঘরে যায় , একটা সোয়েটার পরে । সিঁড়িতে পা রেখেই রাজীবের বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ পায় । অনেক দিন পর ছাদে যাচ্ছে । দরজা খুলতেই সন্ধার আগের শীতল বাতাস ওর মুখে লাগে । ফ্রেস বাতাস শরীরে লাগতেই নিজেকে কিছুটা উজ্জেবিত লাগে, যদিও বাতাস খুব ঠাণ্ডা । রানী দরজার চৌকাঠের বাইরে একটি পা বাড়ায় । খুবি সাধারন একটা ব্যাপার , রানী ভাবছে এই পদক্ষেপ ওকে ওদের ছাদে নিয়ে যাবে । কিন্তু মাঝে মাঝে অতি সাধারন কিছু থেকেও , অভাবনীয় কিছু ফলাফল আসে । যা মানুষ হাজার পরিকল্পনা করেও হাসিল করতে পারে না ।
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)