Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (খ) এর বাকি অংশ......... 



জান্নাত কিছুক্ষন রানীদের লিভিং রুমে দাড়িয়ে থাকে । আবরারের কথা গুলো ওর কানে বাজতে থাকে । জান্নাত মনে মনে কিছুক্ষন আবরারের কথা গুলো ভেবে দেখে । তারপর রানীর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো একে একে বেশ সময় নিয়ে ভাবে । যত ভাবে জান্নাত ততই ভয়ে জড়সড় হয়ে পরে । এক পর্যায়ে এসে ভাবনা গুলো মনের সিন্দুকে তালা লাগিয়ে রেখে দেয় । ভয় হয় জান্নাতের , কারন ভাবনা গুলো যতই ডাল পালা মেলতে থাকে ততই নিজেকে এমন একটা পজিশনে আবিস্কার করে , যা জান্নাত কল্পনাতেও ভাবেনি কোনদিন ।

 
জান্নাত দ্রুত রানীদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় । নিজেদের বাড়ি দরজার সামনে যখন চলে আসে তখন জয় গ্যারেজের দরজা থেকে বেড়িয়ে আসে । জয়ের দিকে তাকাতেই জান্নাতের কলিজা শুকিয়ে যায় । জয়ের মুখ থমথমে , চোখ দুটো লাল বর্ণের । তবে জান্নাত আজকে কোন ফানি স্মেল পায় না । এর মানে জয়  আজকে স্বাভাবিক আছে , আর স্বাভাবিক অবস্থায় ওর রাগ আরো বেশি খারাপ ।
 
কোথায় গিয়েছিলি?” জয় জিজ্ঞাস করে , ওর কণ্ঠের কম্পন দেখেই জান্নাত যা বুঝার বুঝে যায় ।
 
রানীর কাছেকথাটা বলেই জান্নাত নিজেকে তৈরি করে নেয় ।  দেখতে পায় জয় ওর আরো কাছে এগিয়ে এসেছে । প্রায় মুখোমুখি , জয়ের ঠোঁট দুটো রাগে কাঁপছে , চোখ সরু হয়ে এসেছে ,
 
তুই তাহলে সব আগে থেকেই জানিস?” ক্রুদ্ধ জয় চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞাস করে
 
কি জানি আমি আগে থেকে? কি বলছিস তুই ? তোর কি শরীর খারাপ , এমন দেখাচ্ছে কেন? ” জান্নাত জয় কে শান্ত করার জন্য কথা ঘোরানর  চেষ্টা করে
 
তোর কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি , তুই আমার কথা সব জেনেও এভাবে চুপ থাকলিজয় মুখ ঘুরিয়ে নেয় ,
 
আমাকে খুলে বল কি হয়েছে?” জান্নাত না বোঝার ভান করে , ওর ইচ্ছা জয় শান্ত হলে ওকে বুঝিয়ে বলবে ওই ছেলের সাথে রানীর বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছুই নেই । জান্নাত বুঝতে পারছে যে জয় কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে যে আবরার রানীদের বাড়ি এসেছিলো ।
 
গো টু হেল , আর তোর ান্ধবিকে বলিস , আমার কাছ থেকে দূরে দূরে  থাকতে , আমার সামনে পরলে আমি কি করবো নিজেও জানি না , সে ছেলে নিয়ে ঘুরবে , না বাড়িতে নিয়ে আসবে সেটা তার ব্যাপার , কিন্তু আমার সামনে যেন না পরে , আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সে নিজে আমার চোখের সামনে ফুর্তি করে বেড়াবে এটা আমি সহ্য করবো নাএই বলে জয় আর দাড়ায় না , ঘরের ভেতর চলে যায় ।   
 
জান্নাত ও পেছন পেছন যায় , জয় কি করতে পারে জান্নাত জানে । একবার ওকে আর রানীকে কলেজ যাওয়ার পথে কিছু ছেলে ডিস্টার্ব করেছিলো বলে জয় সেই ছেলেদের এমন মার দিয়েছিলো , যা নিয়ে পুলিস কেস পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিলো । জয়নাল সেবার জয় কে বাড়ি থেকে প্রায় বের করে দিয়েছিলো । কিন্তু জয় একবারের জন্যও বলেনি ও যা করেছে ভুল করেছে ।  আবরারের জন্য ভয় হয় জান্নাতের ।
 
জয় দাড়া , শোন আমার কথা , আমি বলছি সবজান্নাত পেছন পেছন যায় , এমন ভাবে কথা গুলো বলে যেন অন্য কেউ শুনতে না পারে । কিন্তু জয় আজকে মাতাল নয় , ধরাম করে জান্নাতের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয় । জান্নাত কিছুক্ষন দরজা ধাক্কায় । কিন্তু জান্নাত জানে জয় খুলবে না । তাই কিছুক্ষন পর নিজের ঘরে চলে আসে জান্নাত ।
 
জান্নাত ধপ করে বিছানায় বসে পরে , মনে মনে ভাবে এ ও কি করেছে ? দুই পরিবারের ভালো সম্পর্কের কথা চিন্তা করে একটা ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছে । জান্নাত আবার প্রথম থেকে ভাবে , ধিরে ধিরে ওর ভুল গুলো নজরে আসতে শুরু করে ।
 
প্রথম ভুলঃ যখন ও জানতে পেরেছিলো রানী আর জয়ের কথা , তখন ভয়ে রাজীবের কাছে লুকিয়ে গেছে । তা না করে যদি রাজিব কে একটা ভাসা ভাসা আইডিয়া দিয়ে রাখতো , যদি বলতো ওই ছেলেকে ও চেনে , আর এই বলে আশ্বস্ত করতো যে ও নিজে এই ব্যাপারটা দেখবে ।  
 
দ্বিতীয় ভুলঃ জান্নাত যখন রানীকে হাত কাটতে দেখছিলো , আর জানতে পেরেছিলো রানীর আর জয়ের একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তখন যদি রাজিব কে বুঝিয়ে বলতো , তাহলে হয়তো রাজিব রানীকে এতো চাপে রাখতো না । এতে করে রাজীবের সাথে রানীর সম্পর্কের অবনতিও হতো না । এমনকি হয়তো বা , রাজিব ও ওর কাছ থেকে দূরে চলে যেতো না ।  
 
তৃতীয় ভুলঃ রানীকে না বোঝা , জান্নাত রানীকে বুঝতেই চেষ্টা করেনি । রাজীবের সাথে খারাপ আচরণ করার কারন খুজতে যায়নি । সোজা রানীকে ব্লেইম করেছে । এতে করে ওর সাথেও রানীর সম্পর্ক খারাপ হয়েছে । যখন ওর উচিৎ চিলো রানীকে বেশি সময় দেয়ার , তখন ও রানীকে একা ছেড়ে দিয়েছে । ওর বোঝা উচিৎ ছিলো সবাই এক রকম ভাবে চাপ সামলাতে পারে না । রানীর মানসিক চাপ ও এখন বুঝতে পারছে । চাপে ছিলো বলেই , উল্টো পাল্টা কাজ করেছে । আর ও নিজে হেল্প করার বদলে বিরক্ত হয়েছে।  
 
চতুর্থ ভুলঃ সবচেয়ে বড় ভুল , ও চাইলেই জয় আর রানীর ভুল বুঝাবুঝি দূর করে দিতে পারতো । কিন্তু ও নিজের দুঃখে এতো ডুবে ছিলো যে আশে পাশে ওর আপন আরো কেউ যে সমান দুঃখে দুঃখী , সেটা ওর খেয়াল ছিলো না । সবচেয়ে বড় রিগ্রেট হচ্ছে ও চাইলেই ওদের দুঃখ কমাতে পারতো । এতো বড় সেলফিস ও কবে থেকে হলো সেটাই ভেবে পায় না জান্নাত ।
 
অনুশোচনার আগুনে জান্নাতের ভেতরটা জলতে থাকে , নিজের ভুলের জন্য আরো কয়েকজন দুঃখ পাচ্ছে । জান্নাত সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক ও নিজের ভুল গুলো শুধরে নেবে । জান্নাত নিজের ফোন হাতে নেয় , জয় কে টেক্সট করে  
 
জয় , আমার কথা শোন ভাই , দরজা খোল , আমি সব খুলে বলছি , এই সব আমার দোষে হয়েছে , তুই ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে করিস না , দরজা খোল
 
দু মিনিট অপেক্ষা করে জান্নাত , কিন্তু জয় টেক্সট সিন করে না ।
 
আবার টেক্সট করে জান্নাত ওই ছেলে রানীর বন্ধু , ওরা এসাইন্মেন্টের কাজ করেছে , আমি ছিলাম ওদের সাথেজান্নাত মিথ্যা করে বলে ।
 
কিন্তু জয় এবারো সিন করে না । জান্নাত আবার টেক্সট করে আমি নিজে রানীর সাথে তোর ব্যাপারে কথা বলবো , কালকেই বলবো , বিশ্বাস কর , আমি তো জানি তুই এমন কাজ করতে পারিস না , রানী অসুস্থ ছিলো , তাই তোকে ভুল বুঝেছে
 
জয় এবারো সিন করে না , জান্নাত ফ্রেস্টেসনে এসে মোবাইল ছুড়ে ফেলে । জান্নাত জানে টেক্সট করে কাজ হবে না , ওরা হচ্ছে এক গুয়ের বংশ । আর জয় এই বংশের সবচেয়ে বড় একগুয়ে ।
 
****  
 
জয় ধরাম করে দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে পরে । কিন্তু বসে থাকতে পারে না বেশিক্ষণ । ওর সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলছে । ওর ইগোতে আজ পর্যন্ত এতো বড় আঘাত কেউ করতে পারেনি । যতটা রানী করেছে । জয় উঠে দাড়ায় , নিজের চুল নিজে খামছে ধরে কিছুক্ষন এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে ।
 
রানী তুই আমাকে চিনিস না , আমি কে তোকে আমি বুঝিয়ে দেবো , আমাকে রেপিস্ট অপবাদ দিয়ে তুই অন্য কারো সাথে ঘুরে বেড়াবি , আর আমি সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো , তুই আমাকে কি ভেবেছিস? A bitch? না না , তুই আমাকে এখনো চিনতেই পানিরস নি ,  তোকে আমি আমার আসল চেহারা দেখাবো , এটা আমার আত্মসম্মানের ব্যাপার”  কথা গুলো বলে জয় আপন মনে হাসে ।
 
আর কিছুক্ষন ঘরময় পায়চারি করে , রাগের মাথায় টেবিল থেকে বই খাতা ছুড়ে ফেলে দেয় । আজ পর্যন্ত যা না করেছে সেটা  করে , ঘরের ভেতর সিগারেট জ্বালায় ।
 
তোর সাথে আমি বেশি ভালো ব্যাবহার করে ফেলেছি , এতদিন ক্যাম্পাসে এই ছেলের সাথে হা হা হি হি করতে দেখেও কিছু বলনি , সেটাকে যদি তুই আমার দুর্বলতা ভেবে নিস তাহলে তুই ভুল করেছিস , তুই আমাকে চিনিস না , এবার চিনবি , আমি তোর এমন হাল করবো ………”
 
তুই কি ভেবেছিস ? আমার জন্য মেয়ের অভাব পরেছে ? চাইলে মেয়ের অভাব হবে না , কিন্তু আমি তোকে চেয়েছি , আর তুই আমার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিস , আমি যে জিনিস চাই সেটা  আমার চোখের সামনে দিয়ে কেউ নিয়ে যাবে , আমি বসে বসে দেখবো , কক্ষনো না , আমি আর যাই হই স্পাইনলেস নই”
 
জয়ের ইচ্ছে হয় ঘরের সব কিছু ভেঙ্গে চুরে ফেলতে । এমন সময় জয়ের মোবাইল বেজে ওঠে , টেক্সট এর টোন বেজে ওঠে। একবার , দুবার , তিনবারের বার জয় জয় মোবাইল দেয়ালে ছুড়ে মারে । দেড় লক্ষাধিক টাকার মোবাইল ভেঙ্গে চাকনাচুর হয়ে ঘরময় ছড়িয়ে পরে । মোবাইলের আঘাতে সিরামিকের পানি খাওয়ার মগ ভেঙ্গে একটা টুকরা এসে জয়ের ঠিক ভুরুর উপরে এসে লাগে । মুহূর্তের মাঝেই রক্ত এসে জয়ের ডান চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় । কিন্তু সেদিকে জয়ের কোন লক্ষ্য নেই ।   
 
তুই আমাকে মেরে ফেলে নিজে সুখে থাকবি ভেবেছিস ? কক্ষনো না , আমিও তোকে বাচতে দেবো না । তুই আমাকে যে অপবাদ দিয়েছিস , এর পর থেকে আমি আর জীবিত নেই , আমার ভেতরটা মরে গেছে , আমি জম্বি হয়ে গেছি , আমিও তোকে জম্বি বানিয়ে ফেলবো , না না আমি তোকে মারবো না , আমি তাকে মারবো যে তোর কাছে আসার চেষ্টা করবে , হয় তুই আমার হবি , নইলে কারো নয়, আমি চাইলেও তোকে ছাড়তে পারবো না , তুই আমার , যদি আমাদের ভাগ্য ও আমাদের সামনে আসে আমি সেই ভাগ্যকে ছুড়ে ফেলে দেবো”   
 
তুই এটা আমার পাগলামি বলবি , বল , আমি পাগল হতে রাজি আছি , তুই আমাকে দূরে রাখবি রাখ না যতদিন ইচ্ছা হয় রাখ, কিন্তু আমাকে রেখে তুই আর কারো হতে পারবি না , আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি , তুই সুধুই আমার হবি , আমাকে ইশারা দিয়ে আমি তোকে পালিয়ে যেতে দেবো না ”   
 
“তুই কি ভেবেছিস , তোকে আমি আজকে থেকে চাইছি ? না , তোর মাঝে যেদিন নারী স্বত্বার প্রথম পরিস্ফুটন দেখছি , সেদিন থেকেই তোকে পাওয়ার তৃষ্ণা আমি অনুভব করেছি ,  কিন্তু নিজেকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখছিলাম , সুধু পারিপার্শ্বিক ব্যাপার চিন্তা করে , সেই শৃঙ্খল তুই নিজে ভেঙেছিস , তোর কি মনে হয় ? আমার দিকে  তোর  সবার চোখ আড়াল করা দৃষ্টি আমাকেও ফাকি দিতে পেড়েছে ? না পারেনি । তোর সেই ইংগিত পূর্ণ হাসি গুলো কি আমি দেখনি ? আমি চাইলে তোকে অনেক আগেই এক্সপ্লয়েট করতে পারতাম , আমি করিনি । আর এসবের জন্য তুই এখন আমার সাথে  এই আচরন করছিস ? একবার জখন আমি সেকল ভেঙ্গেছি , সেই সেকল আমি আর পরতে পারবো না , কিছুতেই সম্ভব নয় , যে ভাবেই হোক আমার  তোকে চাই, আমি আসছি তুই নিজেকে তৈরি করে রাখ”  
 
এতক্ষনে জয়ের রক্ত চেহারা গড়িয়ে পরনের কাপরে এসে লেগছে । এই অবস্থায় জয়কে দেখতে ভয়ংকর লাগছে । অবশ্য সুধু দেখতেই ভয়ংকর লাগছে না । জয় এখন নিজের ভেতর ভয়ংকর সব চিন্তাভাবনা নিয়ে খেলা করছে । কিভাবে ওর আহত ইগো  রিস্টোর করা যায় , সেই নিয়ে নানা রকম পরিকল্পনা করছে । কতটা কঠিন ভাবে রানী কে আঘাত করা যায় সেই নিয়ে ভয়ংকর সব চিন্তা আসছে ওর মনে ।
 
রাতে খাওয়ার সময় জান্নাত ডাকতে এলেও কোন উত্তর দেয় না , জয় । জান্নাত বাবা মায়ের কাছে মিথ্যা করে বনিয়ে বলে জয় খেয়ে এসেছে তাই খাবে না ।
 
****  
 
জান্নাতের ঘুম আসছে না কিছুতেই । কি ভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । কারো সাথে যে এই নিয়ে আলাপ করবে তার কোন উপায় নেই । জান্নাত মোবাইল হাতে নেয় । রাত এখন সোয়া বারোটা , করবে না করবে না করেও রাজিব কে টেক্সট করে ,
 
কাজ করছিস?”
 
ত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় রিপ্লে আসে হ্যা তুই চিন্তা করিস না , সময় মত হয়ে যাবে
 
জান্নাত হাসে , রাজিব ভাবছে ওর ভিডিওর চিন্তায় ঘুম আসছে না । আসলে আজকে এই মুহূর্তে ভিডিও ওর কাছে এক পয়সার গুরুত্বও রাখে না ।
 
ঘুম আসছে নাজান্নাত জানে এই টেক্সট এর হয়তো কোন মূল্য নেই রাজীবের কাছে , তবুও পাঠায় । কারো না কারো কাছে তো বলতে হবে । না বলতে পারলে যে দম বন্ধ হয়ে আসবে ।
 
কেন? শরীর খারাপ নাকি?” রাজিব দ্রুত রিল্পে করে  
 
শরীর খারাপ আমার তেমন হয় না
 
তাহলে?”
 
জান্নাতের কান্না পায় , মোবাইল রেখে দেয় , তারপর আবার কি ভেবে যেন মোবাইল নেয় । লিখে পাঠায় রাজিব আমার একটা উপকা করতে পারবি ?”
 
কি উপকার ? অবশ্যই , বল কি লাগবে
 
“ তোর কিছু সময় আমাকে দিতে পারবি?”  
 
জান্নাত, দ্রুত এডিট না করতে পারলে সময় মত ভিডিও দিতে পারবি না”  
 
জান্নাতের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে । মোবাইল রেখে দেয় , পাশ ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে । মনে মনে বলে ‘রাজীব তুই এমন কেনো? এমন ভিখেরির মত কিছু সময় চাইলাম , তাও না করে দিলি’
 
প্রায় দু মিনিট পরে ওর মোবাইল বেজে ওঠে , রাজিব টেক্সট করেছে , জান্নাত ভাবে দেখবে না । দেখে কি লাভ । কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখে , রাজিব লিখেছে
 
সরি , আসলে নিয়ম মেনে , ঘড়ি ধরে চলতে চলতে আমি অনেকটা মেশিন হয়ে গেছি , সব সময় মানবিক ব্যাপার গুলো বুঝে আসে না
 
জান্নাত কোন উত্তর দেয় না । একটু পর রাজিব আবার টেক্সট করে , “ আমি হয়তো খুব হেল্প করতে পারবো না , তবে চেষ্টা করবো কথা দিলাম , বল কি বলবি
 
জান্নাত রাজীবের পাঠানো লেখাগুলোর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে । রাজীবের এই ছোট্ট প্রচেষ্টা ওকে অনেকটা মানসিক শক্ত যুগিয়েছে
 
“ রাজীব আমি জানি তোর মানুষর মন কে শান্ত করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে , আজকে সেটা তুই আমার উপর প্রয়োগ কর , আমার মন আজকে বড় অশান্ত , কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না ” জান্নাত লিখে পাঠায় ।
 
“ আমার আবার কবে থেকে এই ক্ষমতা এলো? আমার ক্ষমতা নেই রে আমি বড় সাধারন মানুষ”  
 
“ তুই হয়তো জানিস না তোর ক্ষমতার কথা , কিন্তু আমি দেখছি , তোর মনে আছে , তুই যেদিন রেজাল্ট নিয়ে এসেছিলি , রানী ছোট আম্মুর কবরের পাশে দাড়িয়ে কিভাবে কাদছিলো?”
 
“হু , মনে আছে”
 
“ আমি সেদিন দেখছি , তুই কিভাবে রানীকে হ্যান্ডেল করেছিলি , সেদিন আমার মনে হয়েছিলো রানী কত লাকি। আচ্ছা রাজীব তোর ওই ক্ষমতা কি সুধু তোর আপনজনের জন্যই কাজ করে ? আমাকে কি তুই একটু সময়ের জন্যও আপন ভাবতে পারিস না?”  জান্নাত একটু রাগ , একটু অভিমান মিশিয়ে লেখে ।
 
যা দেখছিস ভুল দেখছিস জান্নাত , আমার অমন কোন ক্ষমতা নেই , আমাকে ওই ভাবে ট্রেইন করা হয়েছে , আমি সুধু মুখস্ত বলে গিয়েছিলাম , আজকাল অবশ্য ওই টেকনিক আর কাজে আসে না , তোর ক্ষেত্রে কি কাজে আসবে ?”
 
একবার ট্রাই করে তো দেখ, ট্রাই না করেই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছিস
 
রাজীব আর টেক্সট করে না , সরাসরি কল করে
 
রাজীবের কণ্ঠ শুনে জান্নাতের মনে চলতে থাকা ঝড় কিছুটা শান্ত হয় । যদিও রাজীবের বলার মত তেমন কিছুই নেই , তবুও চেষ্টা করে নিজের জীবনের ভালো ভালো কিছু সৃতি জান্নাতের সাথে শেয়ার করতে । জান্নাত মন দিয়ে সুধু শোনে । রাত যখন প্রায় আড়াইটা বাজে তখন রাজীব বুঝতে পারে , জান্নাত ঘুমিয়ে পরেছে । রাজীবের কাছে মনে হয় ও বিশ্বজয় করে ফেলেছে । মনে হয় , এই প্রথম জীবনে কোন কাজ করলো যার অর্থ আছে , ইম্পেক্ট আছে ।  
 
*****  
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 15-10-2025, 03:59 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)