14-10-2025, 04:28 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ক) এর বাকি অংশ......
জান্নাত আজকাল হাওয়ায় উড়ছে । যদি পারতো তাহলে প্রতিদিন একটা করে ভিডিও পোস্ট করতো । লোকজন খুব ভালো রেসপন্স করছে । বেশ কয়েকজনের কমেন্ট দেখে জান্নাত যা বুঝতে পেরেছে তা ওর সহজ আর যুগের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ আলোচনা ওর সমবয়সী ছেলে মেয়েদের আকৃষ্ট করেছে বেশি । আর জন্নাত শুরু ও করেছে নিজের পরিচিত গণ্ডি থেকে। ওর আলোচনার বিষয় গুলো বেশিরভাগ তরুন পরজন্মের জন্য । তা ছাড়া রাজীব এতো সুন্দর করে এডিট করেছে , সেই সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাবহার করে , কন্টেন্ট অনুযায়ী এতো ভালো ভালো কিছু ছবি এড করেছে যে মানুষ সেগুলো খুব পছন্দ করছে । ওর বয়সি ছেলে মেয়েদের আরো বেশি করে আকৃষ্ট করেছে । তা ছাড়া জান্নাত স্ক্রিপ্ট ও এমন ভাবে তৈরি করে যেন তরুন রা বেশি পছন্দ করে ।
আরো একটা ব্যাপার জান্নাতের খুশির কারন , সেটা হচ্ছে রাজীবের সাথে সময় কাটানো । জান্নাত খেয়াল করেছে যখন রাজীব কাজের মাঝে থাকে তখন একেবারে অন্য রকম হয়ে যায় । ওর আমাঝে দ্বিধা সংকোচ কিছুই থাকে না । বেশ সবল ভাবে নিজের পয়েন্ট তুলে ধরে , এমনকি কিছু পছন্দ না হলে অকপটে বলে ফেলে । জান্নাত রাজীবের এই দিকটার সাথে আগে পরিচিত ছিলো না । তাই প্রথম অবাক হলেও এখন বেশ এঞ্জয় করে , রাজীবের ইনপুট গুলো । এমন কি স্ক্রিপ্টেও হেল্প করে রাজীব । একজন মনের মত পার্টনার পেয়ে জান্নাত তাই ভীষণ খুশি হয়েছে ।
তবে সবচেয়ে বেশি খুশির কারন হচ্ছে , রাজীবের সাথে প্রচুর সময় কাটাতে পারছে । মাঝে মাঝে জান্নাত দরকার না হলেও রাজীবের হেল্প চায় । রাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত চ্যাট করে । মাঝে মাঝে জান্নাত ইচ্ছে করেই কাজের কথা থেকে দূরে সরে যায়। প্রথম প্রথম রাজীব অবশ্য আবার দ্রুত কাজের কথায় ফিরে আসতো । কিন্তু ধিরে ধিরে রাজীব ও আজকাল সহসাই কাজের কথায় ফিরে যায় না । তবে জান্নাত খুব একটা প্রেস করে না , রাজীবের মাঝে আবার সংকোচ ফিরিয়ে আনতে চায় না ও ।
আজকে বিকেলে রাজীব চলে যাওয়ার পর জান্নাত বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে । কিছুক্ষন আগ পর্যন্ত ও যে রাজীব এই ঘরে ছিলো তার এসেন্স অনুভব করে । জান্নাত জানে ওর হাতে বেশি সময় নেই । তবুও এই এল্প কেতু সময় ও নিজের জন্য আলাদা করে রাখে । এই সময়টা ও মনে মনে রাজীবের সাথে মন গড়া কথোপকথন করে । খুব যে রোম্যান্টিক কিছু এমন নয় , জান্নাত নিজের কল্পনায়ও রাজীব কে রোম্যান্টিক বানাতে পারে না ।
তবে কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাজীব দুই একবার যে ওর দিকে একটু অন্য রকম ভাবে তাকায় । সেই মুহূর্ত গুলো কে শব্দ দাণ করে জান্নাত । এই যে যেমন আজকে রাজীবের একটা কথা শুনে হঠাত জান্নাত হেসে উঠেছিলো । হাসি শেষে রাজীবের দিকে তাকাতেই , জান্নাত ধরে ফেলেছিলো যে রাজীব ওর দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে আছে । রাজীবের চোখ দুটো যেন কিছু বলতে চাইছে । কিন্তু রাজীব তাতে প্রাণপণে বাধা দিচ্ছে । জান্নাত তাকাতেই রাজীব দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিলো ।
জান্নাত সেই মূক মুহূর্তকে শব্দ দাণ করে ,
জান্নাতঃ কি দেখছিস ?
রাজিবঃ তোকে
জান্নাতঃ আমাকে দেখার কি আছে ? রোজ ই তো দেখছিস ।
রাজিবঃ হ্যা দেখছি , কিন্তু যত দেখি ততই দেখার তৃষ্ণা আরো যেন বেড়ে যায় ।
জান্নাতঃ তাহলে লুকিয়ে দেখিস কেন?
রাজীবঃ লুকিয়ে দেখার মজাই আলাদা , সে তুই বুঝবি না ।
জান্নাতঃ তুই বুঝিয়ে দে …
রাজীবঃ এতো বুঝতে হবে না এখন কাজে মন দে……
জান্নাত হাসে , কাল্পনিক কথোপকথন এর এখানেই সমাপ্তিও হয়। বিড়বিড় করে বলে , আমার বোরিং রাজকুমার , কল্পনাতেও তুই আমাকে কাজের জন্য ধমকাস , দাড়া তোকে বাগে পেয়ে নেই একবার , এমন হাল করবো যে কাজের কথা আর কোনদিন মাথায় আসবে না । সারাদিন আমার পেছন পেছন ঘুরবি সুধু । তারপর হাসতে হাসতেই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে । বিকেলের এই সময়টা জান্নাত মায়ের সাথে কাটায় । মায়ের সাথে সময় কাটাতে জান্নাতের আজকাল বেশ ভালো লাগে । ওর আম্মু এখন আর আগের মত চিৎকার চেঁচামেচি করে না। উল্টো ান্ধবীর মত আচরণ করে । মাঝে মাঝেই সেই ছেলের কথা জিজ্ঞাস করে । যার নাম জান্নাত এখন পর্যন্ত মায়ের কাছে গোপন রেখছে ।
জান্নাতের কাছে মনে হয় ওর আম্মুর ওই নাম না জানা অপরিচিত ছেলের জন্য কিছুটা মায়া জন্মেছে । কারন যখন ওই ছেলের কথা জিজ্ঞাস করে তখন ওর আম্মুর চোখে মুখে মমতা ভেসে ওঠে । জান্নাত ভেবে পায় না কি করে একটা অচেনা মানুষের প্রতি একজন মানুষের মনে মমতা জন্ম নেয় । জান্নাত ভাবে , হয়তো এই ধরনের কাজ সুধু মায়েরাই করতে পারে । মাঝে মাঝে তো জান্নাত করে বলে , ওই ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যেতে । যেদিন জান্নাত জানিয়েছে ওই ছেলের মা নেই , সেদিন থেকেই এই কথা বলে ওর আম্মু ।
জান্নাত মনে মনে ভাবে যদি ওর আম্মু জানতো যে ওই ছেলে প্রায় ই ওনার হাতের রান্না চেটে পুটে খেয়ে যায় । তাহলে কেমন হবে। নিশ্চয়ই ওর আম্মু ধরে ফেলবে ছেলেটি কে । তাই জান্নাত আর কোন হিন্টস দিতে চায় না ।
“ কি ব্যাপার আমার মায়ের দেখি মুখ থেকে হাসি সরতেই চাচ্ছে না, তোর ওই চ্যানেল না কি যেন , খুব ভালো চলছে বুঝি?” আয়শা বিছানায় শুয়ে ছিলো জান্নাত কে দেখে উঠে বসে , আসলে ও জান্নাতের জন্যই অপেক্ষা করছিলো । মেয়েটা আজকাল বিকেলে বাড়িতে থাকলে ওর সাথে সময় কাটায় । আয়শার ভালো লাগে , একাকীত্ব কিছুটা দূর হয় । আগে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ফেলনা মনে হতো , মনে হতো ওর প্রয়োজনীয়তা ধিরে ধিরে সুধু রান্না বান্না আর ঘরকান্নায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । ও নিজে যে একজন মানুষ , ওর যে মানবিক কিছু চাহিদা আছে সেটা ধিরে ধিরে সবাই ভুলে যাচ্ছে । এমন কি ওর স্বামী পর্যন্ত আজকাল আর মনোযোগ দেয় না ঠিক মত । সুধুই দায়িত্ব পালন করে ।
“ খুব ভালো চলছে আম্মু” জান্নাত মায়ের পাশে বসতে বসতে বলে ।
“ এই ভিডিও করে কি লাভ হয় রে ? আমি তো কিছুই বুঝি না , তোর আব্বু বলে তুই নাকি কি বাম পন্থি হয়ে যাচ্ছিস , তোর আব্বু কিন্তু খুব চিন্তা করে তোকে নিয়ে”
জান্নাতের একটু রাগ হয় , বলে “ আমি বাম ডান কোন পন্থিই না , আব্বু নিজে তো বুর্জোয়া পুরুষ তন্ত্রের একজন ভক্ত , তাই তার কাছে এমন মনে হচ্ছে”
আয়শা অন্য কিছু বুঝতে না পারলেও বাপের উপর মেয়ের রাগ টের পায় , মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে “ তুই তোর আব্বুর উপর এতো রেগে আছিস কেনো রে? তোর আব্বু কিন্তু তোকে অনেক আদর করে , জানিস তুই যেদিন হলি , সেদিন তোকে কোলে নিয়ে তোর আব্বু কেঁদে ফেলেছিলো , তার একটা মেয়ের খুব সখ ছিলো , মেয়েরা নাকি বাপের নেওটা হয়”
জান্নাত একটু নরম হয়ে আসে , ওর আম্মু কথা মিথ্যা বলেনি , ওর আব্বু কোনদিন ওকে কড়া ভাষায় কিছু বলেনি । কিন্তু ওর আব্বু এও চায় না যে জান্নাত এসব করুক , জয়নালের ইচ্ছা জান্নাত অন্য মেয়েদের মত হোক , সারাদিন সাজুগুজু করে ঘর ময় নেচে বেড়াক । ওর আব্বুর মতে সেটাই হচ্ছে আদর্শ মেয়ের কাজ । ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা । তবে এও সত্য জান্নাত যা করতে চায় তাতে জয়নাল বাধাও দেয় না , আবার খুশি ও হয় না। সরাসরি কোনদিন কিছু বলে না । তবে মাঝে মাঝে দু একটা কাজে বাধা দেয় , যেমন জান্নাত একটা বাইক চেয়েছিলো সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে পরিস্কার ভাষায় ।
“ আদর করে না কচু করে , একটা বাইক কিনে দিলো না , ছেলেকে তো খুব বাইক দিলো, আর আমার রাজনৈতিক চিন্তাধারা নিয়ে এতো চিন্তিত হচ্ছে , কই ছেলে যখন রাজনীতিতে নাম লেখালো , তখন তো সামনে সামনে একটু হম্বিতম্বি করে , যেই ছেলে সামনে থেকে গেলো অমনি গর্ব করা শুরু করলো , এই বলে যে সে নিজেও চাত্র জীবনে রাজনীতি করেছে , তাই তার রক্ত তার বংশের চেরাগ সোনার টুকরা ছেলেও করছে , রক্ত বলে কথা” জান্নাত একটু ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করে বলে ।
আয়শা হাসে , বলে “ আমার কাছে যেমন বলছিস , এমন করে একদিন বাপের কাছে গিয়ে বল না দেখবি সুরসুর করে দিয়ে দেবে”
“ উহু , তুমি কি ভাবো আমি চেষ্টা করিনি , গাল ফুলানো , ঠোঁট ফুলানো , চোখের পানি নাকের পানি সব ট্রাই করেছি , কাজ হয়নি” জান্নাত ও হাসে । তারপর বলে “ এখন আমি নিজের টাকায় কিনবো বাইক দেখে নিও”
“ তুই টাকা পাবি কোথায়?” আয়শা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
তখন জান্নাত নিজের ভবিষ্যৎ প্ল্যান নিয়ে কথা বলে , কিভাবে এই ভিডিও পোস্ট করে টাকা ইনকাম হয় সেই কথা বলে । এবং সাথে এও জানিয়ে দেয়ে এই কাজ সুধু মাত্র টাকার জন্য ও করছে না ।
আয়শা মেয়ের কথা শুনে অবাক হয় , মেয়ের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায় । সেই দৃষ্টিতে একি সাথে গর্ব আর বিস্বাদ মিশে থাকে । মনে মনে ভাবে ওর ছেলেটা যদি মেয়ের এই গুন পেতো তাহলে ওর আর কোন চিন্তাই থাকতো না । কিন্তু ছেলের সেই দিকে কোন খেয়াল ই নেই । আয়শা বলে না এখনি কিছু করতে হবে , কিন্তু ভবিষ্যতের একটা চিন্তা তো মাথায় থাকতে হবে মাথায়। কি রাজনীতি নিয়ে পরেছে , সারাদিন দেখাই যায় না ।
“ সত্যি বলছিস?” আয়শা এখনো বিশ্বাস করতে পারে না ।
“ তুমি দেখোনা , যেভাবে চলছে , সেভাবে চলতে থাকলে , আমি এক বছরের মাথায় বাইক কিনে আব্বুকে দেখিয়ে দেবো” জান্নাত এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি মেরে বলে ।
“ আমি দোয়া করি তুই অনেক বড় হ , কিন্তু মা কখনো নিজের পিতার সামনে নিজেকে বড় বলে জাহির করিস না , এটা একজন পিতার জন্য সবচেয়ে অপমান জনক, তুই নিজের তাকায় বাইক কিনলে তোর আব্বুর চেয়ে খুশি কেউ হবে না, কিন্তু তুই যদি দেখিয়ে দেয়ার চিন্তা করিস , সেটা কিন্তু তোর জন্যও ভালো কিছু হবে না” আয়শা খুব নরম সরে জান্নাত কে বুঝিয়ে বলে ।
জান্নাত চুপ করে থাকে , মনে মনে ভাবে ওর মা , কথাটা খারাপ বলেনি , দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা জান্নাত নিজের মনের নোট বুক থেকে কেটে দেয় । তবে বাইক ও কিনবেই , এতে হেরফের হবে না ।
“ আচ্ছা মা ওই ছেলের খবর কি? ওর মাথায় কি একটু বুদ্ধি শুদ্ধি এসেছে , নাকি এখনো বোকাই রয়ে গেছে?”
জান্নাত মায়ের কথায় হাসে , তারপর বলে “ একটু বুদ্ধি হয়েছে” বলেই জান্নাত একটু লজ্জা পায় ।
“ একদিন আমার কাছে নিয়ে আয় না , আমি কান ধরে দেখিয়ে দেই , আমার মেয়ের যেমন রুপ তেমন ই গুন” আয়শা হাসতে হাসতে বলে ।
জান্নাত মায়ের কথা শুনে বেশ মজা পায় , মনে মনে কল্পনা করে ওর আম্মু রাজীবের কাজ ধরে বসে আছে । কল্পনার দৃশ্যটা জন্নাতের হাসি আরো বাড়িয়ে দেয় , হাসতে হাসতেই জান্নাত বলে “ সময় হলে নিয়ে আসবো , তখন এক কান তুমি ধরবে , আরেক কান আমি ধরবো”
“ উহু , সেটা আমি হতে দেবো না , কান সুধু আমিই ধরবো , তোকে ধরতে দেবো না , আমি মা আমি ধরতে পারি , তাই বলে তুই ও ধরবি”
“ উরি বাবা , তলে তলে এতো, যাকে দেখলে না জানলে না তার প্রতি এতো মায়া “ জান্নাত কপট রাগ দেখায় ।
“ হবে না কেনো, যেই ছেলে আমার মেয়ের মনে এতো মায়া জন্মাতে পেরেছে , সে নিশ্চয়ই যেন তেন ছেলে না” আয়শা ও হাসতে হাসতে বলে ।
জান্নাত একটু চুপ হয়ে যায় , তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম করে বলে “ আম্মু তুমি জানো না , এমন কেয়ারিং ছেলে আমি আর দেখিনি , ওকে দেখলে মনেই হয় না ও আমাদের বয়সি, সুধু নিজের কেয়ারটা ই করতে জানে না ” জান্নাত বুঝতে পারে ওর চোখে পানি চলে এসেছে , তাই দ্রুত হাসতে হাসতে আয়শা কে জড়িয়ে ধরে , বলে “ তার আগে তুমি বল , তুমি এমন কুল মা কেমন করে হলে , অন্য মায়েরা ত মেয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলছে শুনলেই রেগে আগুন হয়ে যায়”
আয়শা হাসে , বলে “ তুই ই আমাকে এমন হতে বাধ্য করেছিস , তোকে লালন পালন করতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি , যতটা জয়ের ব্যাপারে করতে হয়েছে , আর এখন দেখ তুই কেমন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছিস এই বয়সেই, তুই কোন ভুল করবি সেটা আমি বিশ্বাস করি না”
মায়ের কথা শুনে জান্নাতের মনটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে । নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হয় এমন মায়ের পেটে জন্ম নিয়ে।
আরো অনেকক্ষণ বসে মায়ের সাথে আলাপ করে জান্নাত । তারপর নিজের ঘরের দিকে যায় । নেক্সট ভিডিওর জন্য কিছু লেখাপড়া করতে হবে । তা ছাড়া ক্লাসের পড়াও কিছু বাকি আছে ।
জান্নাত নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমে মোবাইল চেক করে , এবং সেখানে রাজীবের দুটো মিসড কল , আর দুটো টেক্সট । জান্নাত প্রথমে টেক্সট টা ওপেন করে ।
“ জান্নাত আমাকে একটু যেতেই হচ্ছে , না হলে তোকে কষ্ট দিতাম না , আমাদের বাসায় একটু যাবি? রানীর সাথে একটা ছেলে এসেছে আবরার নামের , ওরা একটা এসাইন্মেন্টের কাজ করছে , বাসায় কেউ নেই , আশেপাশের লোকজন কি ভাববে , প্লিজ আমি তোকে বলেছি বুঝতে দিস না”
“ প্লিজ কিছু মনে করিস না , আমি জানি তোর অনেক কাজ”
জান্নাত মনে মনে ভাবে , এতো প্লিজ প্লিজ বলার কি আছে , এমন কি কোনদিন হয়েছে রাজিব বলেছে , সেই কাজ ও করেনি । তারপর আবরার নামটা কোনদিন শুনেছে কিনা সেটা ভাবতে থাকে । কিছুহক্ষন ভেবে সৃতিতে পায় না । এই ভেবেও অবাক হয় রানী বাসায় ছেলে নিয়ে এসেছে !! রানীর কেরেক্টারের সাথে ব্যাপারটা যায় না। কলেজে কোন ছেলে রানীকে এপ্রচ করলে রানী এমন ভাব করতো কোন ছেলে নয় সামনে একটা জোঁক দেখছে । ছেলেটিকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছে , একবার জয়ের কথাও মনে এলো । সেদিন রাতে জয়ের যে অবস্থা দেখছে , তাতে জান্নাতের ভয় হয় । জয় যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ?
কিন্তু যাবে কিনা কয়েকবার ভাবে । আজকাল রানী ওর সাথে তেমন একটা ভালো আচরণ করছে না । কি কারনে রানী এমন করেছে , সেটা ও বুঝতে পারে না । হ্যা একদিন রানীকে কিছু কঠিন কথা বলেছিলো । কিন্তু মিথ্যা তো বলেনি কিছু । যা সত্য তাই বলেছে । একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে রানীকে ওর ভুল ধরিয়ে দেয়া ওর কর্তব্য ।
জান্নাত শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় ও যাবে , রাজীবের রিকোয়েস্ট ও ফেলতে পারবে না । যদিও একটু দেরি হয়ে গেছে , রাজিব টেক্সট পাঠিয়েছে প্রায় ঘন্টা খানেক আগে ।
জান্নাত আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একটু দেখে নেয় , পোশাক ঠিক আছে কিনা । তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
*****
জান্নাত আজকাল হাওয়ায় উড়ছে । যদি পারতো তাহলে প্রতিদিন একটা করে ভিডিও পোস্ট করতো । লোকজন খুব ভালো রেসপন্স করছে । বেশ কয়েকজনের কমেন্ট দেখে জান্নাত যা বুঝতে পেরেছে তা ওর সহজ আর যুগের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ আলোচনা ওর সমবয়সী ছেলে মেয়েদের আকৃষ্ট করেছে বেশি । আর জন্নাত শুরু ও করেছে নিজের পরিচিত গণ্ডি থেকে। ওর আলোচনার বিষয় গুলো বেশিরভাগ তরুন পরজন্মের জন্য । তা ছাড়া রাজীব এতো সুন্দর করে এডিট করেছে , সেই সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাবহার করে , কন্টেন্ট অনুযায়ী এতো ভালো ভালো কিছু ছবি এড করেছে যে মানুষ সেগুলো খুব পছন্দ করছে । ওর বয়সি ছেলে মেয়েদের আরো বেশি করে আকৃষ্ট করেছে । তা ছাড়া জান্নাত স্ক্রিপ্ট ও এমন ভাবে তৈরি করে যেন তরুন রা বেশি পছন্দ করে ।
আরো একটা ব্যাপার জান্নাতের খুশির কারন , সেটা হচ্ছে রাজীবের সাথে সময় কাটানো । জান্নাত খেয়াল করেছে যখন রাজীব কাজের মাঝে থাকে তখন একেবারে অন্য রকম হয়ে যায় । ওর আমাঝে দ্বিধা সংকোচ কিছুই থাকে না । বেশ সবল ভাবে নিজের পয়েন্ট তুলে ধরে , এমনকি কিছু পছন্দ না হলে অকপটে বলে ফেলে । জান্নাত রাজীবের এই দিকটার সাথে আগে পরিচিত ছিলো না । তাই প্রথম অবাক হলেও এখন বেশ এঞ্জয় করে , রাজীবের ইনপুট গুলো । এমন কি স্ক্রিপ্টেও হেল্প করে রাজীব । একজন মনের মত পার্টনার পেয়ে জান্নাত তাই ভীষণ খুশি হয়েছে ।
তবে সবচেয়ে বেশি খুশির কারন হচ্ছে , রাজীবের সাথে প্রচুর সময় কাটাতে পারছে । মাঝে মাঝে জান্নাত দরকার না হলেও রাজীবের হেল্প চায় । রাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত চ্যাট করে । মাঝে মাঝে জান্নাত ইচ্ছে করেই কাজের কথা থেকে দূরে সরে যায়। প্রথম প্রথম রাজীব অবশ্য আবার দ্রুত কাজের কথায় ফিরে আসতো । কিন্তু ধিরে ধিরে রাজীব ও আজকাল সহসাই কাজের কথায় ফিরে যায় না । তবে জান্নাত খুব একটা প্রেস করে না , রাজীবের মাঝে আবার সংকোচ ফিরিয়ে আনতে চায় না ও ।
আজকে বিকেলে রাজীব চলে যাওয়ার পর জান্নাত বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে । কিছুক্ষন আগ পর্যন্ত ও যে রাজীব এই ঘরে ছিলো তার এসেন্স অনুভব করে । জান্নাত জানে ওর হাতে বেশি সময় নেই । তবুও এই এল্প কেতু সময় ও নিজের জন্য আলাদা করে রাখে । এই সময়টা ও মনে মনে রাজীবের সাথে মন গড়া কথোপকথন করে । খুব যে রোম্যান্টিক কিছু এমন নয় , জান্নাত নিজের কল্পনায়ও রাজীব কে রোম্যান্টিক বানাতে পারে না ।
তবে কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাজীব দুই একবার যে ওর দিকে একটু অন্য রকম ভাবে তাকায় । সেই মুহূর্ত গুলো কে শব্দ দাণ করে জান্নাত । এই যে যেমন আজকে রাজীবের একটা কথা শুনে হঠাত জান্নাত হেসে উঠেছিলো । হাসি শেষে রাজীবের দিকে তাকাতেই , জান্নাত ধরে ফেলেছিলো যে রাজীব ওর দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে আছে । রাজীবের চোখ দুটো যেন কিছু বলতে চাইছে । কিন্তু রাজীব তাতে প্রাণপণে বাধা দিচ্ছে । জান্নাত তাকাতেই রাজীব দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিলো ।
জান্নাত সেই মূক মুহূর্তকে শব্দ দাণ করে ,
জান্নাতঃ কি দেখছিস ?
রাজিবঃ তোকে
জান্নাতঃ আমাকে দেখার কি আছে ? রোজ ই তো দেখছিস ।
রাজিবঃ হ্যা দেখছি , কিন্তু যত দেখি ততই দেখার তৃষ্ণা আরো যেন বেড়ে যায় ।
জান্নাতঃ তাহলে লুকিয়ে দেখিস কেন?
রাজীবঃ লুকিয়ে দেখার মজাই আলাদা , সে তুই বুঝবি না ।
জান্নাতঃ তুই বুঝিয়ে দে …
রাজীবঃ এতো বুঝতে হবে না এখন কাজে মন দে……
জান্নাত হাসে , কাল্পনিক কথোপকথন এর এখানেই সমাপ্তিও হয়। বিড়বিড় করে বলে , আমার বোরিং রাজকুমার , কল্পনাতেও তুই আমাকে কাজের জন্য ধমকাস , দাড়া তোকে বাগে পেয়ে নেই একবার , এমন হাল করবো যে কাজের কথা আর কোনদিন মাথায় আসবে না । সারাদিন আমার পেছন পেছন ঘুরবি সুধু । তারপর হাসতে হাসতেই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে । বিকেলের এই সময়টা জান্নাত মায়ের সাথে কাটায় । মায়ের সাথে সময় কাটাতে জান্নাতের আজকাল বেশ ভালো লাগে । ওর আম্মু এখন আর আগের মত চিৎকার চেঁচামেচি করে না। উল্টো ান্ধবীর মত আচরণ করে । মাঝে মাঝেই সেই ছেলের কথা জিজ্ঞাস করে । যার নাম জান্নাত এখন পর্যন্ত মায়ের কাছে গোপন রেখছে ।
জান্নাতের কাছে মনে হয় ওর আম্মুর ওই নাম না জানা অপরিচিত ছেলের জন্য কিছুটা মায়া জন্মেছে । কারন যখন ওই ছেলের কথা জিজ্ঞাস করে তখন ওর আম্মুর চোখে মুখে মমতা ভেসে ওঠে । জান্নাত ভেবে পায় না কি করে একটা অচেনা মানুষের প্রতি একজন মানুষের মনে মমতা জন্ম নেয় । জান্নাত ভাবে , হয়তো এই ধরনের কাজ সুধু মায়েরাই করতে পারে । মাঝে মাঝে তো জান্নাত করে বলে , ওই ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যেতে । যেদিন জান্নাত জানিয়েছে ওই ছেলের মা নেই , সেদিন থেকেই এই কথা বলে ওর আম্মু ।
জান্নাত মনে মনে ভাবে যদি ওর আম্মু জানতো যে ওই ছেলে প্রায় ই ওনার হাতের রান্না চেটে পুটে খেয়ে যায় । তাহলে কেমন হবে। নিশ্চয়ই ওর আম্মু ধরে ফেলবে ছেলেটি কে । তাই জান্নাত আর কোন হিন্টস দিতে চায় না ।
“ কি ব্যাপার আমার মায়ের দেখি মুখ থেকে হাসি সরতেই চাচ্ছে না, তোর ওই চ্যানেল না কি যেন , খুব ভালো চলছে বুঝি?” আয়শা বিছানায় শুয়ে ছিলো জান্নাত কে দেখে উঠে বসে , আসলে ও জান্নাতের জন্যই অপেক্ষা করছিলো । মেয়েটা আজকাল বিকেলে বাড়িতে থাকলে ওর সাথে সময় কাটায় । আয়শার ভালো লাগে , একাকীত্ব কিছুটা দূর হয় । আগে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ফেলনা মনে হতো , মনে হতো ওর প্রয়োজনীয়তা ধিরে ধিরে সুধু রান্না বান্না আর ঘরকান্নায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । ও নিজে যে একজন মানুষ , ওর যে মানবিক কিছু চাহিদা আছে সেটা ধিরে ধিরে সবাই ভুলে যাচ্ছে । এমন কি ওর স্বামী পর্যন্ত আজকাল আর মনোযোগ দেয় না ঠিক মত । সুধুই দায়িত্ব পালন করে ।
“ খুব ভালো চলছে আম্মু” জান্নাত মায়ের পাশে বসতে বসতে বলে ।
“ এই ভিডিও করে কি লাভ হয় রে ? আমি তো কিছুই বুঝি না , তোর আব্বু বলে তুই নাকি কি বাম পন্থি হয়ে যাচ্ছিস , তোর আব্বু কিন্তু খুব চিন্তা করে তোকে নিয়ে”
জান্নাতের একটু রাগ হয় , বলে “ আমি বাম ডান কোন পন্থিই না , আব্বু নিজে তো বুর্জোয়া পুরুষ তন্ত্রের একজন ভক্ত , তাই তার কাছে এমন মনে হচ্ছে”
আয়শা অন্য কিছু বুঝতে না পারলেও বাপের উপর মেয়ের রাগ টের পায় , মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে “ তুই তোর আব্বুর উপর এতো রেগে আছিস কেনো রে? তোর আব্বু কিন্তু তোকে অনেক আদর করে , জানিস তুই যেদিন হলি , সেদিন তোকে কোলে নিয়ে তোর আব্বু কেঁদে ফেলেছিলো , তার একটা মেয়ের খুব সখ ছিলো , মেয়েরা নাকি বাপের নেওটা হয়”
জান্নাত একটু নরম হয়ে আসে , ওর আম্মু কথা মিথ্যা বলেনি , ওর আব্বু কোনদিন ওকে কড়া ভাষায় কিছু বলেনি । কিন্তু ওর আব্বু এও চায় না যে জান্নাত এসব করুক , জয়নালের ইচ্ছা জান্নাত অন্য মেয়েদের মত হোক , সারাদিন সাজুগুজু করে ঘর ময় নেচে বেড়াক । ওর আব্বুর মতে সেটাই হচ্ছে আদর্শ মেয়ের কাজ । ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা । তবে এও সত্য জান্নাত যা করতে চায় তাতে জয়নাল বাধাও দেয় না , আবার খুশি ও হয় না। সরাসরি কোনদিন কিছু বলে না । তবে মাঝে মাঝে দু একটা কাজে বাধা দেয় , যেমন জান্নাত একটা বাইক চেয়েছিলো সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে পরিস্কার ভাষায় ।
“ আদর করে না কচু করে , একটা বাইক কিনে দিলো না , ছেলেকে তো খুব বাইক দিলো, আর আমার রাজনৈতিক চিন্তাধারা নিয়ে এতো চিন্তিত হচ্ছে , কই ছেলে যখন রাজনীতিতে নাম লেখালো , তখন তো সামনে সামনে একটু হম্বিতম্বি করে , যেই ছেলে সামনে থেকে গেলো অমনি গর্ব করা শুরু করলো , এই বলে যে সে নিজেও চাত্র জীবনে রাজনীতি করেছে , তাই তার রক্ত তার বংশের চেরাগ সোনার টুকরা ছেলেও করছে , রক্ত বলে কথা” জান্নাত একটু ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করে বলে ।
আয়শা হাসে , বলে “ আমার কাছে যেমন বলছিস , এমন করে একদিন বাপের কাছে গিয়ে বল না দেখবি সুরসুর করে দিয়ে দেবে”
“ উহু , তুমি কি ভাবো আমি চেষ্টা করিনি , গাল ফুলানো , ঠোঁট ফুলানো , চোখের পানি নাকের পানি সব ট্রাই করেছি , কাজ হয়নি” জান্নাত ও হাসে । তারপর বলে “ এখন আমি নিজের টাকায় কিনবো বাইক দেখে নিও”
“ তুই টাকা পাবি কোথায়?” আয়শা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
তখন জান্নাত নিজের ভবিষ্যৎ প্ল্যান নিয়ে কথা বলে , কিভাবে এই ভিডিও পোস্ট করে টাকা ইনকাম হয় সেই কথা বলে । এবং সাথে এও জানিয়ে দেয়ে এই কাজ সুধু মাত্র টাকার জন্য ও করছে না ।
আয়শা মেয়ের কথা শুনে অবাক হয় , মেয়ের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায় । সেই দৃষ্টিতে একি সাথে গর্ব আর বিস্বাদ মিশে থাকে । মনে মনে ভাবে ওর ছেলেটা যদি মেয়ের এই গুন পেতো তাহলে ওর আর কোন চিন্তাই থাকতো না । কিন্তু ছেলের সেই দিকে কোন খেয়াল ই নেই । আয়শা বলে না এখনি কিছু করতে হবে , কিন্তু ভবিষ্যতের একটা চিন্তা তো মাথায় থাকতে হবে মাথায়। কি রাজনীতি নিয়ে পরেছে , সারাদিন দেখাই যায় না ।
“ সত্যি বলছিস?” আয়শা এখনো বিশ্বাস করতে পারে না ।
“ তুমি দেখোনা , যেভাবে চলছে , সেভাবে চলতে থাকলে , আমি এক বছরের মাথায় বাইক কিনে আব্বুকে দেখিয়ে দেবো” জান্নাত এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি মেরে বলে ।
“ আমি দোয়া করি তুই অনেক বড় হ , কিন্তু মা কখনো নিজের পিতার সামনে নিজেকে বড় বলে জাহির করিস না , এটা একজন পিতার জন্য সবচেয়ে অপমান জনক, তুই নিজের তাকায় বাইক কিনলে তোর আব্বুর চেয়ে খুশি কেউ হবে না, কিন্তু তুই যদি দেখিয়ে দেয়ার চিন্তা করিস , সেটা কিন্তু তোর জন্যও ভালো কিছু হবে না” আয়শা খুব নরম সরে জান্নাত কে বুঝিয়ে বলে ।
জান্নাত চুপ করে থাকে , মনে মনে ভাবে ওর মা , কথাটা খারাপ বলেনি , দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা জান্নাত নিজের মনের নোট বুক থেকে কেটে দেয় । তবে বাইক ও কিনবেই , এতে হেরফের হবে না ।
“ আচ্ছা মা ওই ছেলের খবর কি? ওর মাথায় কি একটু বুদ্ধি শুদ্ধি এসেছে , নাকি এখনো বোকাই রয়ে গেছে?”
জান্নাত মায়ের কথায় হাসে , তারপর বলে “ একটু বুদ্ধি হয়েছে” বলেই জান্নাত একটু লজ্জা পায় ।
“ একদিন আমার কাছে নিয়ে আয় না , আমি কান ধরে দেখিয়ে দেই , আমার মেয়ের যেমন রুপ তেমন ই গুন” আয়শা হাসতে হাসতে বলে ।
জান্নাত মায়ের কথা শুনে বেশ মজা পায় , মনে মনে কল্পনা করে ওর আম্মু রাজীবের কাজ ধরে বসে আছে । কল্পনার দৃশ্যটা জন্নাতের হাসি আরো বাড়িয়ে দেয় , হাসতে হাসতেই জান্নাত বলে “ সময় হলে নিয়ে আসবো , তখন এক কান তুমি ধরবে , আরেক কান আমি ধরবো”
“ উহু , সেটা আমি হতে দেবো না , কান সুধু আমিই ধরবো , তোকে ধরতে দেবো না , আমি মা আমি ধরতে পারি , তাই বলে তুই ও ধরবি”
“ উরি বাবা , তলে তলে এতো, যাকে দেখলে না জানলে না তার প্রতি এতো মায়া “ জান্নাত কপট রাগ দেখায় ।
“ হবে না কেনো, যেই ছেলে আমার মেয়ের মনে এতো মায়া জন্মাতে পেরেছে , সে নিশ্চয়ই যেন তেন ছেলে না” আয়শা ও হাসতে হাসতে বলে ।
জান্নাত একটু চুপ হয়ে যায় , তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম করে বলে “ আম্মু তুমি জানো না , এমন কেয়ারিং ছেলে আমি আর দেখিনি , ওকে দেখলে মনেই হয় না ও আমাদের বয়সি, সুধু নিজের কেয়ারটা ই করতে জানে না ” জান্নাত বুঝতে পারে ওর চোখে পানি চলে এসেছে , তাই দ্রুত হাসতে হাসতে আয়শা কে জড়িয়ে ধরে , বলে “ তার আগে তুমি বল , তুমি এমন কুল মা কেমন করে হলে , অন্য মায়েরা ত মেয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলছে শুনলেই রেগে আগুন হয়ে যায়”
আয়শা হাসে , বলে “ তুই ই আমাকে এমন হতে বাধ্য করেছিস , তোকে লালন পালন করতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি , যতটা জয়ের ব্যাপারে করতে হয়েছে , আর এখন দেখ তুই কেমন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছিস এই বয়সেই, তুই কোন ভুল করবি সেটা আমি বিশ্বাস করি না”
মায়ের কথা শুনে জান্নাতের মনটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে । নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হয় এমন মায়ের পেটে জন্ম নিয়ে।
আরো অনেকক্ষণ বসে মায়ের সাথে আলাপ করে জান্নাত । তারপর নিজের ঘরের দিকে যায় । নেক্সট ভিডিওর জন্য কিছু লেখাপড়া করতে হবে । তা ছাড়া ক্লাসের পড়াও কিছু বাকি আছে ।
জান্নাত নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমে মোবাইল চেক করে , এবং সেখানে রাজীবের দুটো মিসড কল , আর দুটো টেক্সট । জান্নাত প্রথমে টেক্সট টা ওপেন করে ।
“ জান্নাত আমাকে একটু যেতেই হচ্ছে , না হলে তোকে কষ্ট দিতাম না , আমাদের বাসায় একটু যাবি? রানীর সাথে একটা ছেলে এসেছে আবরার নামের , ওরা একটা এসাইন্মেন্টের কাজ করছে , বাসায় কেউ নেই , আশেপাশের লোকজন কি ভাববে , প্লিজ আমি তোকে বলেছি বুঝতে দিস না”
“ প্লিজ কিছু মনে করিস না , আমি জানি তোর অনেক কাজ”
জান্নাত মনে মনে ভাবে , এতো প্লিজ প্লিজ বলার কি আছে , এমন কি কোনদিন হয়েছে রাজিব বলেছে , সেই কাজ ও করেনি । তারপর আবরার নামটা কোনদিন শুনেছে কিনা সেটা ভাবতে থাকে । কিছুহক্ষন ভেবে সৃতিতে পায় না । এই ভেবেও অবাক হয় রানী বাসায় ছেলে নিয়ে এসেছে !! রানীর কেরেক্টারের সাথে ব্যাপারটা যায় না। কলেজে কোন ছেলে রানীকে এপ্রচ করলে রানী এমন ভাব করতো কোন ছেলে নয় সামনে একটা জোঁক দেখছে । ছেলেটিকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছে , একবার জয়ের কথাও মনে এলো । সেদিন রাতে জয়ের যে অবস্থা দেখছে , তাতে জান্নাতের ভয় হয় । জয় যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ?
কিন্তু যাবে কিনা কয়েকবার ভাবে । আজকাল রানী ওর সাথে তেমন একটা ভালো আচরণ করছে না । কি কারনে রানী এমন করেছে , সেটা ও বুঝতে পারে না । হ্যা একদিন রানীকে কিছু কঠিন কথা বলেছিলো । কিন্তু মিথ্যা তো বলেনি কিছু । যা সত্য তাই বলেছে । একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে রানীকে ওর ভুল ধরিয়ে দেয়া ওর কর্তব্য ।
জান্নাত শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় ও যাবে , রাজীবের রিকোয়েস্ট ও ফেলতে পারবে না । যদিও একটু দেরি হয়ে গেছে , রাজিব টেক্সট পাঠিয়েছে প্রায় ঘন্টা খানেক আগে ।
জান্নাত আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একটু দেখে নেয় , পোশাক ঠিক আছে কিনা । তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)