14-10-2025, 04:27 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ক)
রাজীব আর জান্নাত ক্যাম্পাস থেকে এক সাথে বাসায় ফিরেছে । রাজীবের বাইকে করেই দুজনে এসেছে । আর দুজনেই এক সাথে ঢুকেছে জান্নাতের ঘরে । প্রায় তিন ঘন্টার মত দুজন নেক্সট ভিডিও নিয়ে আলোচনা করেছে । জান্নাত ভিদিওর কোন অংশে কি ধরের ভিজুয়াল চাচ্ছে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে রাজীব কে । আর রাজীব সেগুলো নোট করে নিয়েছে । আগামি তিনদিনের মাঝে রাজীব কে এডিটের কাজ শেষ করতে হবে ।
জান্নাত আর রাজীবের ভিডিও বেশ ভালো রেস্পস্নস পেয়েছে । চারটা ভিডিও এ পর্যন্ত দিয়েছে ওরা । দুটো প্লাটফর্মে ছেরেছে । দুটুতেই আশাতিত সাফল্য পেয়েছে । প্রথম ভিডিওতেই প্রায় চার হাজার ভিউ । দুটো প্লাটফর্মেই ফোলয়ার আর সাবক্রাবারস হাজারের উপরে ছাড়িয়ে গেছে । তাই দুজনেই খুব খুশি হয়েছে । তাই ওদের কাজের উদ্দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে । ভিউয়ারস দের চাহিদা মেটাতে ওরা বদ্ধ পরিকপ ।
রাজীব যখন চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয় তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেছে । দুপুরের খাবার জান্নাতের সাথেই করেছে । রাজীব যখন নিজদের বাড়ির দরজার সামনে এসে দাড়ায় , চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই চার জোড়া চোখের সামনা সামনি পরে যায় । ওর দরজা খোলার শব্দ শুনে রানী আর ওর সাথের একটা ছেলে দুজনেই ওর দিকে তাকিয়েছে । রানীর চোখে কোন অভিব্যাক্তি নেই , তবে ছেলেটার চোখে কিছুটা অনিশ্চয়তা ।
রাজীব দরজা ধরেই দাড়িয়ে পরে , সামনের দৃশ্যটার ব্যাপারে কিভাবে রিয়েক্ট করবে সেটা বুঝতে পারছে না । এই ধরনের পরিস্থিতির সামনে কোনদিন পরতে হয়নি । রাজীব কয়েক সেকেন্ডে সামনের দৃশ্যটা বিশ্লেষণ করে । রানী বসে আছে সিঙ্গেল সোফায় , আর ছেলেটা ওর পাশের সোফায় বসে আছে , দুজনের সামনেই বই খাতা খোল । ছেলেটির হাতে কলম ধরা । সামনে একটা ল্যাপ্টপ খোলা । নিশ্চয়ই ছেলেটির হবে ।
রাজীব এই দৃশে চিন্তিত হওয়ার কোন কিছুই পায় না , তবুও ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না , রানী একা বাড়িতে একটা অপরিচিত একটা ছেলেকে নিয়ে এসছে । কি বলবে রাজীব ঠিক বুঝে উঠতে পারে না । মনে মনে ভাবে এখন ওর কি বলা উচিৎ ।
“ ভাইয়া ও হচ্ছে আমার বন্ধু আবরার” রাজীব কে বাঁচিয়ে দিয়ে রানী ই প্রথম কথা বলে ওঠে ।
রাজীব নিজের চেহারা নির্লিপ্ত রাখে , আবরার উঠে দাঁড়িয়েছে । রাজীব ভাবে ও কি হ্যান্ডশেক করবে ? তারপর অবশ্য এই চিন্তা বাদ দেয় , নিজের জুতা খুলতে খুলতে সুধু হাই বলে । ছেলেটিও হ্যালো বলে । কিন্তু কিছু তো বলতে হবে , রাজীব ভাবে । তারপর ওর মনে হয় , আরে আজকে তো রান্না হয়নি । রাজীব কথা বলার রাস্তা খুজে পায় , বলে “ তোরা খেয়েছিস কি? আজকে তো রান্না হয়নি” যদিও রাজীব একটু লজ্জিত বোধ করে , রান্না হয়নি বলে ।
“ আমরা বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি” উত্তরা রানী ই দেয় ।
“ আচ্ছা ঠিক আছে , তোমরা কাজ করো , আমি উপরে যাচ্ছি” এই বলে রাজীব চলে আসে ।
নিজের ঘরে এসে রাজীব দ্বিধায় পরে যায় , এখন ও কি করবে ? ওর তো এখন যেতে হবে । কিন্তু যাওয়া কি উচিৎ হবে ? রাজীব সিদ্ধান্ত নিতে পারে না । ঘরে বোনের সাথে একা একটা ছেলেকে রেখে যাওয়া কি স্বাভাবিক কাজ? রাজীব মনে মনে ভাবে । আবার এও ভাবে , ওরা কতক্ষন একা একা ছিলো সেটাও তো ও জানে না । এখন একা রেখে যাওয়া আর না যাওয়ার মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে । তা ছাড়া ওরা লিভিং রুমে বসে পড়াশুনা করছে , এতে খারাপ কি আছে । কিন্তু আশে পাশের মানুষ কি ভাবাবে?
বেশ কিছুক্ষন দোমনায় ভুগে রাজীব শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় , ও কাজে যাবে । যেহেতু ও রানীকে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে । এখন ওর উচিৎ রানীর সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানানো । রানী যেহেতু এই ছেলেকে বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছে , নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তে নিয়েছে । এখন রাজীবের উচিৎ হবে না এই সিদ্ধান্ত কে প্রস্নবিদ্ধ করা । তাই রাজীব তৈরি হয়ে নেয় । তারপর বেড়িয়ে যাওয়ার সময় , রানী আর আবরারের কাছে এসে অন্য একটি সিঙ্গেল সোফায় বসে ।
রাজীব কে বসতে দেখে রানী ভ্রু কুঁচকে তাকায় একবার । রাজীব রানীর তাকানোর অর্থ বুঝতে পারে , রানী ভাবছে রাজীব হয়তো ওদের সাথে বসে থাকবে । আবরার ছেলেটাও একটু আড়ষ্ট হয়ে গেছে , একটু আগে যেমন করে রানী কে একটা ব্যাপার বোঝাচ্ছিলো এখন গলায় সেই কনফিডেন্স নেই ।
“ তোমরা দুজন একি ক্লাসেই?” যদিও প্রশ্নটা অমুলক , যেহেতু একি বিষয় পড়ছে , সেহেতু একি ক্লাসে হওয়াই স্বাভাবিক । তবে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র হওয়াও অসাভাবিক নয় । তাই রাজীব প্রশ্নটা করেছে ।
“ জি আমারা ক্লাসমেট” আবারার পোলাইটলি উত্তর দেয় ,
“ ওওও , তোমার বাসা কোথায় ?
“ জি আমি হলে থাকি , আমার গ্রামের বাড়ি…” আবরার নিজের বাড়ির নাম বলে ।
এদিকে রানী বার বার রাজীবের দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকাচ্ছে , কিন্তু রাজীব সেদিকে পাত্তা দেয় না , বলে “ তুমি কতক্ষন আছো ?”
“ সেটা ডিপেন্ড করে আমরা কাজ কত দ্রুত শেষ করতে পারবো” উত্তরটা এবার রানী দেয় , ওর কণ্ঠস্বর শুনে রাজীব বুঝতে পারে রানী বোঝাতে চেয়েছে ও ওদের ডিস্টার্ব করছে ।
“ আমি এখন বাইরে যাচ্ছি , ফিরতে ফিরতে চার পাঁচ ঘণ্টা লাগবে , তোদের যদি কাজ শেষ হতে দেরি হয় , তাহলে ওকে রেখে দিস আমাদের সাথে খেয়ে যাবে , আমি আসার সময় খাবার নিয়ে আসবো” তারপর আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে “ আমাদের সাথে খেয়ে যেও” এবার রাজীব রানীর উদ্দেশ্যে বলে । রানী অবাক চোখে রাজীবের দিকে তাকায় , ও এতোটা আশা করেনি ।
“ না না তার দরকার হবে না” আবরার ভদ্রতা করে বলে , আবরার নিজেও একটু অবাক হয়েছে ।
“ আরে সমস্যা নেই , তোমারা কাজ করো আমি গেলাম” এই বলে রাজীব বেড়িয়ে আসে ।
বাইরে এসে বাইকে উঠতে গিয়ে মনে হয় , কুল হতে গিয়ে কি একটু বেশি বেশি করে ফেললো নাকি ? আসলে ইদানিং রানী ওর সাথে প্রায় কথা বলে না বললেই চলে । তাই রাজীব ভেবেছে , আজকে একটু কুল আচরন করে রানীর মনে ওর প্রতি কোন অভিমান থাকলে সেটা ভাঙ্গানোর চেষ্টা করার । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশি ই হয়ে গেছে । এতটা না করলেও হতো। ছেলেটি আবার না আশকারা পেয়ে বসে ।
একবার ভাবে আজকে ফোন করে বলে দেয় যে আজ আসতে পারবে না , কিন্তু প্রচুর কাজ জমে আছে , না গেলেই নয় । শেষ পর্যন্ত রাজীব বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায় । কিন্তু চিন্তাটা মাথা থেকে দূর করতে পারে না । শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় , এই ছেলের সম্পর্কে আরো ভালো করে জানতে হবে , কিন্তু কিভাবে জানবে সেটা বুঝতে পারে না । ওর নিজের তো তেমন সময় নেই। কিন্তু হাত গুঁটিয়ে তো বসে থাকা যায় না ।
****
রাজীব বেড়িয়ে যেতেই আবরার বলে “ তোর ভাই তো বেশ কুল, আমাকে দেখেও কিছু বলল না , তারপর আবার বেড়িয়ে গেলো , কিছুই মনে করেনি , আবার রাতে খেয়ে যেতে বলল!!!”
আসলে রানী নিজেও একটু অবাক হয়ে গেছে , রাজীব কোন রিএক্ট ই করবে না । এতটা ও ভাবেনি , মনে মনে নিজেক তৈরি করে রেখছিলো রাজীবের সাথে একটা ফাইটের । এছাড়া একটা ভালো সুযোগ হতো রাজীব আর জান্নাতের ব্যাপারে কথা বলার। সেই সুযোগটা হাত ছাড়া হওয়াতে একটু মন খারাপ ই হয়েছে রানী । ওরা দুজন যে ওকে কিছু না বলেই একটা কাজ শুরু করেছে, সেটা রানী জানে , এই নিয়ে রানীর মনে কিছুটা কষ্ট ও আছে । কিন্তু সুযোগ না পেয়ে তেমন কিছু বলতে পারেনি । আজকে হয়তো সুযোগ হতো । কিন্তু রাজীব সেই সুযোগ কেড়ে নিয়েছে ।
“ কুল না ছাই , ও আমাকে সেই ছোট বেলা থেকে কন্ট্রোল করে এসেছে” রানী একটু ঝাঁজের সাথে বলে ।
“ বলিস কি ? আমার কিন্তু তেমন মনে হলো না , তা ছাড়া তোর ভাই কি রান্না করে নাকি?”
“ হ্যা , আমিও করি মাঝে মাঝে , এখন আমার ভাইয়ের বন্দনা ছেড়ে কাজে মন দে “
“ ওরে বাবা তুই রান্নাও জানিস !!! তুই তো একদম পারফেক্ট ওয়াইফ মেটেরিয়াল , তোর ওই লাভার কিন্তু খুব লাকি হবে” আবরার হাসতে হাসতে বলে ,
জয়ের কথা উঠতেই রানী একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে , চুপ করে থাকে কিছুক্ষন , মনে মনে ভাবে , যে বোঝার সে না বুঝলে কি লাভ ।
“ তুই ও কিন্তু কম লাকি নস” আবরার আবার বলে ওঠে ,
“ মানে?” রানী আবরারের কথার মানে বুঝতে পারে না , ও কি করে লাকি হয় !! লাকি হলে কি জয় ওর কাছ থেকে দূরে থাকতো । ওর ান্ধবি ওকে ছেড়ে ওর ভাইয়ের সাথে সারদিন ঘুরে বেড়াতো ?
“ মানে এমন পরিবারে জন্ম নিয়েছিস , তোকে এতো স্বাধীনতা দিচ্ছে!! ভাবতেই অবাক লাগে”
“ আবার শুরু করলি , তুই ও কি পায়েল ঋতু আর নিসার মত আমার ভাইয়ের প্রেমে পরে গেলি?” রানী হাসতে হাসতে বলে
কিন্তু আবরার রানীর কথা গায়ে মাখে না , বলে “ সত্যি বলছি”
“ কিসের লাকি ? তুই বুঝবি না , তুই তো আর আমাদের সম্পর্কে পুরোপুরি জানিস না উপরে উপরে সব ভালো মনে হয়, আমার ভাইয়ের মত কন্ত্রলিং ফ্রিক আর নেই” রানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
“ তুই জানিস , আমার তিন বোন আছে , একদিন আমার চাচা আমার বড় বোন কে এক ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে ফেলে , তারপর বাড়িতে এসে তুলকালাম কাণ্ড , আমার বোন আমার বাবার পায়ে ধরে কেঁদেছে , বার বার বলেছে ওই ছেলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই , সুধু কথা বলেছে , কিন্তু আমার বাবার মন টলেনি , নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য , আমার বড় বোন কে তো বিয়ে দিয়েছেই বাকি দুজন কেও বিয়ে দিয়ে দিয়েছে , সব চেয়ে ছোট জনের বয়স কত ছিলো জানিস ?”
রানী জিজ্ঞাস করে “কত?”
“ পনেরো,”
রানীর চোখ বিস্ফোরিত হওয়ার অবস্থা হয় বয়স শুনে । নিজের পনেরো বছর বয়সের কথা মনে পরে যায় । সেই বয়সে কোন মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে থাকতে হচ্ছে !! ভাবতেই ওর শরীরের লোম দাড়িয়ে যায় ।
“ থাকিস তো শহরে , এসব দেখিস না ? অথচ দেখ তোর ভাই একদম স্বাভাবিক ভাবে নিলো, আর তুই বলছিস তোকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে !!! আমার একটু অবাক ই লাগছে , একদিন খুলে বলিস তো”
আবরারের কথা শুনে রানী গম্ভির ভাবে বলল “ আমার কি মনে হয় জানিস , আমি তোর কাছে একটা গিনিপিগ তুই আমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিস , আমার ব্যাপারে কিছু শুনলেই তোর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে , তুই গবেষণা করতে চাস , এই যেমন আমার ভাইয়ের সম্পর্কে জানতে চাস” বলে হেসে ওঠে রানী , তারপর বলে “ অনেক হয়েছে এখন কাজে মন দে”
আবরার কাঁধ ঝাঁকিয়ে কাজে মন দেয়
****
রাজীব আর জান্নাত ক্যাম্পাস থেকে এক সাথে বাসায় ফিরেছে । রাজীবের বাইকে করেই দুজনে এসেছে । আর দুজনেই এক সাথে ঢুকেছে জান্নাতের ঘরে । প্রায় তিন ঘন্টার মত দুজন নেক্সট ভিডিও নিয়ে আলোচনা করেছে । জান্নাত ভিদিওর কোন অংশে কি ধরের ভিজুয়াল চাচ্ছে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে রাজীব কে । আর রাজীব সেগুলো নোট করে নিয়েছে । আগামি তিনদিনের মাঝে রাজীব কে এডিটের কাজ শেষ করতে হবে ।
জান্নাত আর রাজীবের ভিডিও বেশ ভালো রেস্পস্নস পেয়েছে । চারটা ভিডিও এ পর্যন্ত দিয়েছে ওরা । দুটো প্লাটফর্মে ছেরেছে । দুটুতেই আশাতিত সাফল্য পেয়েছে । প্রথম ভিডিওতেই প্রায় চার হাজার ভিউ । দুটো প্লাটফর্মেই ফোলয়ার আর সাবক্রাবারস হাজারের উপরে ছাড়িয়ে গেছে । তাই দুজনেই খুব খুশি হয়েছে । তাই ওদের কাজের উদ্দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে । ভিউয়ারস দের চাহিদা মেটাতে ওরা বদ্ধ পরিকপ ।
রাজীব যখন চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয় তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেছে । দুপুরের খাবার জান্নাতের সাথেই করেছে । রাজীব যখন নিজদের বাড়ির দরজার সামনে এসে দাড়ায় , চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই চার জোড়া চোখের সামনা সামনি পরে যায় । ওর দরজা খোলার শব্দ শুনে রানী আর ওর সাথের একটা ছেলে দুজনেই ওর দিকে তাকিয়েছে । রানীর চোখে কোন অভিব্যাক্তি নেই , তবে ছেলেটার চোখে কিছুটা অনিশ্চয়তা ।
রাজীব দরজা ধরেই দাড়িয়ে পরে , সামনের দৃশ্যটার ব্যাপারে কিভাবে রিয়েক্ট করবে সেটা বুঝতে পারছে না । এই ধরনের পরিস্থিতির সামনে কোনদিন পরতে হয়নি । রাজীব কয়েক সেকেন্ডে সামনের দৃশ্যটা বিশ্লেষণ করে । রানী বসে আছে সিঙ্গেল সোফায় , আর ছেলেটা ওর পাশের সোফায় বসে আছে , দুজনের সামনেই বই খাতা খোল । ছেলেটির হাতে কলম ধরা । সামনে একটা ল্যাপ্টপ খোলা । নিশ্চয়ই ছেলেটির হবে ।
রাজীব এই দৃশে চিন্তিত হওয়ার কোন কিছুই পায় না , তবুও ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না , রানী একা বাড়িতে একটা অপরিচিত একটা ছেলেকে নিয়ে এসছে । কি বলবে রাজীব ঠিক বুঝে উঠতে পারে না । মনে মনে ভাবে এখন ওর কি বলা উচিৎ ।
“ ভাইয়া ও হচ্ছে আমার বন্ধু আবরার” রাজীব কে বাঁচিয়ে দিয়ে রানী ই প্রথম কথা বলে ওঠে ।
রাজীব নিজের চেহারা নির্লিপ্ত রাখে , আবরার উঠে দাঁড়িয়েছে । রাজীব ভাবে ও কি হ্যান্ডশেক করবে ? তারপর অবশ্য এই চিন্তা বাদ দেয় , নিজের জুতা খুলতে খুলতে সুধু হাই বলে । ছেলেটিও হ্যালো বলে । কিন্তু কিছু তো বলতে হবে , রাজীব ভাবে । তারপর ওর মনে হয় , আরে আজকে তো রান্না হয়নি । রাজীব কথা বলার রাস্তা খুজে পায় , বলে “ তোরা খেয়েছিস কি? আজকে তো রান্না হয়নি” যদিও রাজীব একটু লজ্জিত বোধ করে , রান্না হয়নি বলে ।
“ আমরা বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি” উত্তরা রানী ই দেয় ।
“ আচ্ছা ঠিক আছে , তোমরা কাজ করো , আমি উপরে যাচ্ছি” এই বলে রাজীব চলে আসে ।
নিজের ঘরে এসে রাজীব দ্বিধায় পরে যায় , এখন ও কি করবে ? ওর তো এখন যেতে হবে । কিন্তু যাওয়া কি উচিৎ হবে ? রাজীব সিদ্ধান্ত নিতে পারে না । ঘরে বোনের সাথে একা একটা ছেলেকে রেখে যাওয়া কি স্বাভাবিক কাজ? রাজীব মনে মনে ভাবে । আবার এও ভাবে , ওরা কতক্ষন একা একা ছিলো সেটাও তো ও জানে না । এখন একা রেখে যাওয়া আর না যাওয়ার মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে । তা ছাড়া ওরা লিভিং রুমে বসে পড়াশুনা করছে , এতে খারাপ কি আছে । কিন্তু আশে পাশের মানুষ কি ভাবাবে?
বেশ কিছুক্ষন দোমনায় ভুগে রাজীব শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় , ও কাজে যাবে । যেহেতু ও রানীকে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে । এখন ওর উচিৎ রানীর সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানানো । রানী যেহেতু এই ছেলেকে বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছে , নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তে নিয়েছে । এখন রাজীবের উচিৎ হবে না এই সিদ্ধান্ত কে প্রস্নবিদ্ধ করা । তাই রাজীব তৈরি হয়ে নেয় । তারপর বেড়িয়ে যাওয়ার সময় , রানী আর আবরারের কাছে এসে অন্য একটি সিঙ্গেল সোফায় বসে ।
রাজীব কে বসতে দেখে রানী ভ্রু কুঁচকে তাকায় একবার । রাজীব রানীর তাকানোর অর্থ বুঝতে পারে , রানী ভাবছে রাজীব হয়তো ওদের সাথে বসে থাকবে । আবরার ছেলেটাও একটু আড়ষ্ট হয়ে গেছে , একটু আগে যেমন করে রানী কে একটা ব্যাপার বোঝাচ্ছিলো এখন গলায় সেই কনফিডেন্স নেই ।
“ তোমরা দুজন একি ক্লাসেই?” যদিও প্রশ্নটা অমুলক , যেহেতু একি বিষয় পড়ছে , সেহেতু একি ক্লাসে হওয়াই স্বাভাবিক । তবে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র হওয়াও অসাভাবিক নয় । তাই রাজীব প্রশ্নটা করেছে ।
“ জি আমারা ক্লাসমেট” আবারার পোলাইটলি উত্তর দেয় ,
“ ওওও , তোমার বাসা কোথায় ?
“ জি আমি হলে থাকি , আমার গ্রামের বাড়ি…” আবরার নিজের বাড়ির নাম বলে ।
এদিকে রানী বার বার রাজীবের দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকাচ্ছে , কিন্তু রাজীব সেদিকে পাত্তা দেয় না , বলে “ তুমি কতক্ষন আছো ?”
“ সেটা ডিপেন্ড করে আমরা কাজ কত দ্রুত শেষ করতে পারবো” উত্তরটা এবার রানী দেয় , ওর কণ্ঠস্বর শুনে রাজীব বুঝতে পারে রানী বোঝাতে চেয়েছে ও ওদের ডিস্টার্ব করছে ।
“ আমি এখন বাইরে যাচ্ছি , ফিরতে ফিরতে চার পাঁচ ঘণ্টা লাগবে , তোদের যদি কাজ শেষ হতে দেরি হয় , তাহলে ওকে রেখে দিস আমাদের সাথে খেয়ে যাবে , আমি আসার সময় খাবার নিয়ে আসবো” তারপর আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে “ আমাদের সাথে খেয়ে যেও” এবার রাজীব রানীর উদ্দেশ্যে বলে । রানী অবাক চোখে রাজীবের দিকে তাকায় , ও এতোটা আশা করেনি ।
“ না না তার দরকার হবে না” আবরার ভদ্রতা করে বলে , আবরার নিজেও একটু অবাক হয়েছে ।
“ আরে সমস্যা নেই , তোমারা কাজ করো আমি গেলাম” এই বলে রাজীব বেড়িয়ে আসে ।
বাইরে এসে বাইকে উঠতে গিয়ে মনে হয় , কুল হতে গিয়ে কি একটু বেশি বেশি করে ফেললো নাকি ? আসলে ইদানিং রানী ওর সাথে প্রায় কথা বলে না বললেই চলে । তাই রাজীব ভেবেছে , আজকে একটু কুল আচরন করে রানীর মনে ওর প্রতি কোন অভিমান থাকলে সেটা ভাঙ্গানোর চেষ্টা করার । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশি ই হয়ে গেছে । এতটা না করলেও হতো। ছেলেটি আবার না আশকারা পেয়ে বসে ।
একবার ভাবে আজকে ফোন করে বলে দেয় যে আজ আসতে পারবে না , কিন্তু প্রচুর কাজ জমে আছে , না গেলেই নয় । শেষ পর্যন্ত রাজীব বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায় । কিন্তু চিন্তাটা মাথা থেকে দূর করতে পারে না । শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় , এই ছেলের সম্পর্কে আরো ভালো করে জানতে হবে , কিন্তু কিভাবে জানবে সেটা বুঝতে পারে না । ওর নিজের তো তেমন সময় নেই। কিন্তু হাত গুঁটিয়ে তো বসে থাকা যায় না ।
****
রাজীব বেড়িয়ে যেতেই আবরার বলে “ তোর ভাই তো বেশ কুল, আমাকে দেখেও কিছু বলল না , তারপর আবার বেড়িয়ে গেলো , কিছুই মনে করেনি , আবার রাতে খেয়ে যেতে বলল!!!”
আসলে রানী নিজেও একটু অবাক হয়ে গেছে , রাজীব কোন রিএক্ট ই করবে না । এতটা ও ভাবেনি , মনে মনে নিজেক তৈরি করে রেখছিলো রাজীবের সাথে একটা ফাইটের । এছাড়া একটা ভালো সুযোগ হতো রাজীব আর জান্নাতের ব্যাপারে কথা বলার। সেই সুযোগটা হাত ছাড়া হওয়াতে একটু মন খারাপ ই হয়েছে রানী । ওরা দুজন যে ওকে কিছু না বলেই একটা কাজ শুরু করেছে, সেটা রানী জানে , এই নিয়ে রানীর মনে কিছুটা কষ্ট ও আছে । কিন্তু সুযোগ না পেয়ে তেমন কিছু বলতে পারেনি । আজকে হয়তো সুযোগ হতো । কিন্তু রাজীব সেই সুযোগ কেড়ে নিয়েছে ।
“ কুল না ছাই , ও আমাকে সেই ছোট বেলা থেকে কন্ট্রোল করে এসেছে” রানী একটু ঝাঁজের সাথে বলে ।
“ বলিস কি ? আমার কিন্তু তেমন মনে হলো না , তা ছাড়া তোর ভাই কি রান্না করে নাকি?”
“ হ্যা , আমিও করি মাঝে মাঝে , এখন আমার ভাইয়ের বন্দনা ছেড়ে কাজে মন দে “
“ ওরে বাবা তুই রান্নাও জানিস !!! তুই তো একদম পারফেক্ট ওয়াইফ মেটেরিয়াল , তোর ওই লাভার কিন্তু খুব লাকি হবে” আবরার হাসতে হাসতে বলে ,
জয়ের কথা উঠতেই রানী একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে , চুপ করে থাকে কিছুক্ষন , মনে মনে ভাবে , যে বোঝার সে না বুঝলে কি লাভ ।
“ তুই ও কিন্তু কম লাকি নস” আবরার আবার বলে ওঠে ,
“ মানে?” রানী আবরারের কথার মানে বুঝতে পারে না , ও কি করে লাকি হয় !! লাকি হলে কি জয় ওর কাছ থেকে দূরে থাকতো । ওর ান্ধবি ওকে ছেড়ে ওর ভাইয়ের সাথে সারদিন ঘুরে বেড়াতো ?
“ মানে এমন পরিবারে জন্ম নিয়েছিস , তোকে এতো স্বাধীনতা দিচ্ছে!! ভাবতেই অবাক লাগে”
“ আবার শুরু করলি , তুই ও কি পায়েল ঋতু আর নিসার মত আমার ভাইয়ের প্রেমে পরে গেলি?” রানী হাসতে হাসতে বলে
কিন্তু আবরার রানীর কথা গায়ে মাখে না , বলে “ সত্যি বলছি”
“ কিসের লাকি ? তুই বুঝবি না , তুই তো আর আমাদের সম্পর্কে পুরোপুরি জানিস না উপরে উপরে সব ভালো মনে হয়, আমার ভাইয়ের মত কন্ত্রলিং ফ্রিক আর নেই” রানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
“ তুই জানিস , আমার তিন বোন আছে , একদিন আমার চাচা আমার বড় বোন কে এক ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে ফেলে , তারপর বাড়িতে এসে তুলকালাম কাণ্ড , আমার বোন আমার বাবার পায়ে ধরে কেঁদেছে , বার বার বলেছে ওই ছেলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই , সুধু কথা বলেছে , কিন্তু আমার বাবার মন টলেনি , নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য , আমার বড় বোন কে তো বিয়ে দিয়েছেই বাকি দুজন কেও বিয়ে দিয়ে দিয়েছে , সব চেয়ে ছোট জনের বয়স কত ছিলো জানিস ?”
রানী জিজ্ঞাস করে “কত?”
“ পনেরো,”
রানীর চোখ বিস্ফোরিত হওয়ার অবস্থা হয় বয়স শুনে । নিজের পনেরো বছর বয়সের কথা মনে পরে যায় । সেই বয়সে কোন মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে থাকতে হচ্ছে !! ভাবতেই ওর শরীরের লোম দাড়িয়ে যায় ।
“ থাকিস তো শহরে , এসব দেখিস না ? অথচ দেখ তোর ভাই একদম স্বাভাবিক ভাবে নিলো, আর তুই বলছিস তোকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে !!! আমার একটু অবাক ই লাগছে , একদিন খুলে বলিস তো”
আবরারের কথা শুনে রানী গম্ভির ভাবে বলল “ আমার কি মনে হয় জানিস , আমি তোর কাছে একটা গিনিপিগ তুই আমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিস , আমার ব্যাপারে কিছু শুনলেই তোর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে , তুই গবেষণা করতে চাস , এই যেমন আমার ভাইয়ের সম্পর্কে জানতে চাস” বলে হেসে ওঠে রানী , তারপর বলে “ অনেক হয়েছে এখন কাজে মন দে”
আবরার কাঁধ ঝাঁকিয়ে কাজে মন দেয়
****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)