12-10-2025, 07:00 PM
(This post was last modified: 12-10-2025, 07:16 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৮ এর বাকি অংশ......
আজকাল আবরার আর রানীর মাঝে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে । আবরারের সঙ্গ রানীকে একাকীত্ব থেকে কিছুটা হলেও দূরে রাখে । প্রথম কথা হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন আবরারের সাথে রানী কথা হয়নি । এর পর একদিন ক্যাম্পাসে দুজন মুখোমুখি হয়ে যায় । আবরার হাসি মুখে সামনে এসে দাড়ায় , বলে “ একেবারে সামনে পরে গেলেও কি কথা বলা যাবে না ? জাস্ট হাই বলেই না হয় দুজন দুদিকে চলে গেলাম”
আবরারের বলার ধরন দেখে রানী না হেসে পারেনি , তারপর রানীই অফার করেছিলো এক সাথে চা খেতে যাওয়ার । সেই থেকেই রানী আর আবরার ভালো বন্ধু হয়ে গেছে । তবে রানী পরিস্কার করে দিয়েছে ওর পক্ষে বন্ধুত্বের বেশি আর কিছু ভাবা সম্ভব নয় । এর কারন ও বলেছে , তবে জয়ের নাম বলেনি । আবরার যদিও কোনদিন ওর চাওয়া খুলে বলেনি , তবে ওর রানীর সাথে একান্তে কথা বলার চেষ্টা থেকেই রানী বুঝে নিয়ে ছে আবরারের ইচ্ছা ।
তবে আবরার বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো । আর এই কারনেই রানীর আবরার কে ভালো লাগে । ওর কোন এক্সপেকটেশন নেই । তবে প্রয়োজনের সময় ডাকলেই পাওয়া যায় । এই যেমন আজকে রানী আবরার কে নিয়ে কিছু কাজের জন্য যাচ্ছে । দুজনে এক রিকশায় পাশাপাশি বসেছে । আবরারের আরো একটা জিনিস রানীর ভালো লাগে সেটা হচ্ছে নিজের সীমা বোঝে। এমন ভাবে আবরার রিকশায় বসেছে যেন খুব বেশি টাচ না হয় । আর এই ছোট ছোট ব্যাপার গুলোই রানীর বিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে । রানী নিজের কিছু কিছু কথা আবরারের সাথে শেয়ার করেছে ।
আবরার খুব ভালো শ্রোতা , সব কথা মন দিয়ে শোনে । তারপর যদি কিছু বলার হয় বলে , নইলে সুধু শুনেই যায় । তবে সাজেশন দিতে আসে না । সাজেশন দিতে হলেও এমন ভাবে দেয় যেন সেটা সাজেশন না হয় ।
তা ছাড়া আবরার খুব ভালো স্টুডেন্ট ওর সাথে থাকতে থাকতে রানীর নিজের লেখাপড়ার উন্নতি ও চোখে পরার মত । গত ক্লাস টেস্টে রানী অসাধারন নাম্বার পেয়েছে । সামনে একটা ক্লাস এসাইনমেন্ট এর কাজ ও আবরার আর রানী এক সাথে করছে । আর সেই এসাইনমেন্টের জন্য প্রায়জনিয় কিছু জিনিস কিনতেই ওরা যাচ্ছে । সেখান থেকে রানীদের বাসায় যাবে । এসাইনমেন্টের কাজ করতে অনেক সময় লাগবে । লাইব্রেরীতে বসে করা যায় , কিন্তু রানীর কাছে এতো লম্বা সময় লাইব্রেরীতে বসতে ইচ্ছে হয় না । আর আরবরার থাকে হলে , তাই ঠিক হয়েছে ওরা রানীদের বাসায় ই বসেব ।
প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে ফেরার পর ওরা রানীদের বাড়ির পথ ধরে । এখন সময় দুপুর দুটো , রানী রানীর মনে শঙ্কা দেখা দেয় । রানী ভাবে , যদি বাড়ি খালি থাকে, তাহলে কি হবে ? রাজীব কি বাড়ি ফিরেছে ? যদি না ফিরে থাকে , আর বাড়ি ফিরে যদি আবরার আর ওকে দেখে তাহলে কি ভাববে?
“ কিছু ভাবছিস?” আবরার জিজ্ঞাস করে , বেশ কিছুক্ষন যাবত আবরার দেখছে রানী কি যেন ভাবছে ।
“ হুম, না না কিছু না” রানী হেসে বলে ।
আবরার আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ায় না , এসাইনমেন্ট নিয়ে আলোচনা করতে থাকে । কিন্তু রানী ওর কথা অর্ধেক বুঝতে পারে বাকি অর্ধেক বুঝতে পারে না । কারন ওর মাথায় এখনো ঘুরছে আবরার কে বাসায় ডাকা ঠিক হলো কিনা । আসলে জীবনে এই প্রথম কোন ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে , যদিও আবরার ওর বন্ধু । আর বন্ধুত্বে নারী পুরুষ ভেদাভেদ হয় না ।
এক পর্যায়ে এসে রানী মনে মনে ভাবে - অনেক হয়েছে , এতো ভেবে চিন্তে আর চলতে পারবে না । ও কোন অন্যায় করছে না , পড়াশুনার জন্য নিয়ে যাচ্ছে আবরার কে । আর এতো ভেবেই কি হবে , যার যা ভাবার সে ভেবে নিক , এতবছর সামলে চলে কি লাভ হয়েছে ? সবাই তো ধরেই নিয়েছে ও খারাপ হয়ে গেছে । এমনকি নেশা করে বলেও কেউ কেউ ভেবেছে।
বাসায় পৌঁছে রানী ব্যাগ থেকে চাবি বের করে , চাবি দিয়ে দরজা খুলতে দেখে আবরার জিজ্ঞাস করে “ বাসায় কেউ নেই?”
“ মনে হয় না , আব্বু সকালে যায় রাত আটটা নয়টার আগে বাসায় ফেরে না , ভাইয়া থাকতে পারে , আবার নাও থাকতে পারে” রানী দরজা খুলতে খুলতে বলে ।
“ আর মা ?” আবরার আবার প্রশ্ন করে ।
রানী ততক্ষণে দরজা খুলে ফেলেছে । দরজা ঠেলে আবরার কে ভেতরে যাওয়ার ইশারা করে , বলে “ আম্মু কখনোই বাসায় থাকে না” কথাটা বলে রানী একটু হাসে ।
আবরার একটু অস্বস্তিতে পরে , ভেতরে ঢুকতে ইতস্তত করে । সেটা দেখে রানী হাসে , বলে “ কিরে ভয় পেয়ে গেলি, আরে আয় , আমরা তো আর প্রেম করতে বাসায় ঢুকছি না। আমরা পড়াশুনা করার জন্য জাচ্ছি , এতে ভয় কিসের?”
আবরার একটু আশ্বস্ত হয় , ভাবে হয়তো রানীর ঘরের মানুষরা একটু প্রগ্রেসিভ টাইপের এসব কিছু মনে করে না । তারপর হেসে বলে “ আরে না ভয় না , ভবালাম তোর বাবা অথবা ভাই কিছু মনে করে কিনা? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো এমন দেখা যায়না”
আবরার আর রানী ওদের লিভিং রুমে এসে দাঁড়িয়েছে , রানী ঠিক করে লিভিং রুমে বসেই কাজ করবে। বেড রুমে গিয়ে কাজ করাটা একটু বেশি বেশি হয়ে যায় ।
“ কিচ্ছু মনে করবে না , আমার আব্বুর এসব দিকে কোন নজর নেই , আর ভাই কেন কিছু মনে করবে ? আমি কি ও কি করে বেড়াচ্ছে সেসব খবর রাখি , ও কেন আমার ব্যাপারে নাক গলাবে” রানী আবরার কে আশ্বস্ত করার জন্য বলে । তারপর আবরার কে বসতে বলে , ও নিজের ঘরে যায় ইচ্ছা একটু ফ্রেশ হয়ে আসবে ।
আবরার সোফায় বসে , রানীর সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়া দেখে । তারপর চারপাশে তাকিয়ে একবার দেখে । বাড়িটা খুব পুরনো , দেয়াল গুলো বেশ মোটা মোটা , আজকালের বাড়ির দেয়াল এতো মোটা হয় না । মেঝেতে টাইলস করা নেই , সিমেন্টের মেঝে। আবরার ভাবে রানীরা অনেক আগে থেকেই শহরের বাসিন্দা , আবরার এসেছে মফস্বল থেকে । আবরার একবার ভাবে রানীরা ভীষণ ধনী , কিন্তু পরক্ষনেই সেই ধারনা বাদ দেয় , কারন ঘরের আসবাব গুলো নতুন আর পুরাতন মিলিয়ে , নতুন আসবাব গুলো খুব দামি কিছু নয় , তবে রুচিশীল । আবরার ভাবে রানীদের পূর্বপুরুষ এক সময় ধনী ছিলো কিন্তু এখন আর সেই ধন ভাণ্ডার নেই । বসার ঘড়াটা বেশ ছিমছাম করে সাজানো । খুব বেশি মানুষ এ বাড়িতে থেকে না , আর থাকলেও বেশি সময় ঘরে থাকে না । সেটা ঘরের গছানো অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আবরার রানীর বলা নিজের মা সম্পর্কে লাইনটা ভাবে । আবরার বুঝতে পারে রানীর মা নেই ।
আবরার রানীর একাকীত্বের কারন কিছুটা অনুধাবন করতে পারে । এই বয়সি মেয়েদের মায়ের খুব প্রয়োজন হয় । তা ছাড়া ওর বাবার সাথেও খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা নেই বলে ধরে নেয় আবরার । রানীর জন্য গভির সহানুভুতি জন্ম নেয় । তাছাড়া আবরার যতদিন যাবত রানী কে লক্ষ্য করেছে , ওর তেমন কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও দখেনি , পায়েল নিসাদের সাথে বন্ধুত্ব আছে , কিন্তু তেমন গভির নয়। আবরার ভেবে পায় না এমন একটা মেয়ের কোন বন্ধু কেন নেই ।
আর এসব কারনেই আবরারের রানীর প্রতি দুর্বলতা । আর কিছু না হোক , অন্তত বন্ধু হয়ে থাকতে পারলেও ওর ভালো লাগবে । যদিও আবরার এখনো আশা ছেড়ে দেয়নি । আবরার রানীর কাছে জনাতে পেরেছে ও একজন কে পছন্দ করে , সেই কিশোরী বয়স থেকেই সেই ছেলেকে ওর ভালো লাগে, সুধু ভালো লাগাই নয় , মনে মনে ওই ছেলেকে নিয়ে অনেক দূর ভেবে রেখেছে । তবে কোনদিন ওই ছেলের কাছে নিজের মনের কথা বলেনি বা কোনদিন বলার সাহস পায়নি । রানী যখন আবরারের কাছে এই কথা বলেছিলো তখন আবরার খুব কষ্ট করে উচ্চস্বরে হেসে ওঠা থেকে নিজেকে বিরত রেখছিলো ।
আবরারের এই হেসে ওঠার কারন হলো , রানী এমন একটা মেয়ে । যার জন্য ওদের ক্লাসের , না সুধু ক্লাসের নয় পুরো ডিপার্টমেন্টের অর্ধেক ছেলে পাগল । তবে কেউই সাহস করে না ওকে এপ্রচ করতে । আর দুই একজন এপ্রচ করলেও রানীর নিরাসক্তি দেখে আর ট্রাই না করেই ভেগে যায়। সবাই ভাবে রানীর মত সুন্দরী মেয়ে নিশ্চয়ই দেমাগি হবে । তাই এপ্রোচ করতে ভয় পায় । কিন্তু আবরার রানীর সাথে মিশে দেখছে । ওর মাঝে রুপের কোন দেমাগ নেই । হ্যা রানীর নিজের সৌন্দর্য নিয়ে কিছুটা ধারনা আছে , কিন্তু ওর সৌন্দর্য কোন লেভেলের , কত শত ছেলে নিজের সব কিছু দিয়ে দিতে রাজি, রানী যদি একবার ইশারা করে । সেই ব্যাপারে রানীর কোন ধারনা নেই । আবরারের বিশ্বাস রানী কোনদিন এসব ভেবেও দেখেনি ।
আর সেই রানীই যখন বলে , কোন ছেলেকে নিজের মনের কথা বলতে সাহস হয় না । তখন আবরার না অন্য যত ছেলে রানীর জন্য পাগল হয়ে আছে , সবাই স্ট্রোক করে মারা যাবে । আবরারের তো সুধু হাসি এসেছিলো । আবরারের খুব বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো , ‘ রানী তোর মত মেয়ে সুধু চোখের ইশারায় শত শত ছেলে কে নাচাতে পারে, আর তুই কিনা বলছিস কোন ছেলেকে বলতে ভয় পাস তুই তাকে ভালোবাসিস!!! একবার সুধু অন্য কাউকে বলে দেখে , তোর জন্য জীবন দিয়ে দেয়ার মত মানুষের অভাব হবে না’
কিন্তু আবরার বলেনি , কারন আবরার রানীর মনের এই ভয় থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছে ওই ছেলের প্রতি রানীর ভালোবাসা কতটা গভির। তা ছাড়া রানীর মন কতটা নিষ্পাপ তার প্রমান ও বহন করে । আবরারের হিংসা হয়েছে সেই ছেলের প্রতি কিন্তু , আবরারের ইচ্ছা হয়নি , রানীর মনে এই ধারনা ঢুকাতে যে রানীর সৌন্দর্যের পাওয়ার কতখানি । হয়তো ওই ছেলের প্রতি রানীর যে টান আছে সেটা কিছুটা হলেও কমে যাবে , যখন রানী নিজের পূর্ণ পটেনশিয়াল সম্পর্কে জানতে পারবে ।
আবরার এও জানে , রানী আর ওই ছেলে , দুজনের কেউই এখনো মুখ ফুটে বলেনি একে অপর কে ওরা ভালোবাসে। তবে রানীর কাছে মনে হয়েছে ওই ছেলেও ওকে ভালোবাসে , কিন্তু মাঝে মাঝে আবার মনে হয় , ঠিক ততটা ভালোবাসে না যতটা রানী বাসে । তাই রানী ওই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকতো , রানীর ভয় হতো যদি কোনদিন ওই ছেলে রানীকে অবহেলা করে , তাহলে রানী সেটা সহ্য করতে পারবে না । কিন্তু ওই ছেলে যখনি রানীর সামনে এসে দাড়ায় , কাছে ডাকে তখনি রানীর সব সংকোচ দূর হয়ে যায় ।
আবরারের মনে প্রচণ্ড হিংসা জন্ম নিয়েছে ওই ছেলের প্রতি । বেশ কয়েকবার রানীর কাছে ওই ছেলেকে দেখতে চেয়েছে । কিন্তু রানী নাম বলতেও রাজি নয় ।
আবরার জিজ্ঞাস করেছিলো , রানী কেনো সরাসরি ওই ছেলের সাথে কথা বলে না? উত্তরে রানী জানিয়েছিলো ওদের মাঝে ভুল বঝাবুঝি হয়েছে । শুনে আবরার আর হাসি থামাতে পারেনি , হাসতে হাসতে বলেছিলো “ তোরা ত একে অন্য কে কোনদিন বলিস ই নি , তাহলে এই ভুল বোঝাবুঝি এলো কোথা থেকে?”
রানী এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি , তখন আবরার জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই শিওর ওই ছেলে তোকে ভালোবাসে ?”
“ভালোবাসে কিনা জানি না , তবে আমার প্রতি ওর কিছু একটা আছে “ উত্তরে রানী অনেক ভেবে বলেছিলো
“ সেটা কিভাবে বুঝতে পেরেছিস?” আবরার একটু বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞাস করেছিলো ।
“ ওর চোখ দেখে” রানী লজ্জা মেশানো কণ্ঠে মিন মিন করে বলেছিলো ।
শুনে আবরার হা হা করে হেসে উঠেছিলো , সেই হাসি দেখে রানী আরো লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো , আর সেই লজ্জা ঢাকতে রাগে গিয়েছিলো , উঠে আসতে চেয়ে ছিলো , আবরার জোড় করে ওকে বসিয়েছিলো । তারপর বলেছিলো “ তুই কি এই যুগের মেয়ে নাকি ভুল করে মধ্যযুগ থেকে এই যুগে এসে পড়েছিস ? এই চোখে চোখে ভালোবাসা আজকাল আর হয় না রে , আজকাল ঠোঁটে ঠোঁটে , শরীরে শরীরে ভালোবাসা হয় , ওই ছেলের চোখে যে তুই তোর প্রতি লালসা দেখিস নি তার গ্যারান্টি কি?”
উত্তরে রানী সেদিন কিছু বলেনি , তবে আবরারের কথা যে বিশ্বাস ও করেনি , সেটা আবরার বুঝতে পেরেছিলো । উল্টো আবরারের উপর অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো । আর আবরার বুঝে গিয়েছিলো , রানীকে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই । কারন ওই ছেলেকে যে খারাপ বলবে সে রানীর কাছে সন্দেহের পাত্র হয়ে যাবে । আবরার জানে হয় রানী কঠিন একটা ধাক্কা খাবে নয়তো ওর মত সুখী মেয়ে আর দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি থাকবে না । তবে কষ্ট হলেও আবরার চায় রানী যেন সুখি হয় , ওই ছেলে যেন রানীকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে । আর যদি ধাক্কা খায় আবরার অবশ্যই রানী পাশে থাকবে ।
“ কি রে কি ভাবছিস?” রানী ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে আবরার আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে ।
“ নাহ কিছু না তো , তোদের বাসা দেখছি , অনেক পুরনো” আবরার হেসে বলে
“ হুম , আমার দাদার বাপ বানিয়েছিলো , আচ্ছা তুই কি এখনো অস্বস্তি তে আছিস , থাকলে বল , আমরা না হয় অন্য দিন লাইব্রেরীতে বসে কাজ করবো” আসলে রানী নিজেই একটু অস্বস্তিতে আছে এখন , বাথরুমে যখন ফ্রেশ হচ্ছিলো তখন জয়ের চিন্তা ওর মাথায় আসে , জয় যদি কোন ভাবে জানে , তখন কি হবে ?
“ আরে না , বস আমরা কাজ শুরু করি” আবরার কনফিডেন্সের সাথে বলে
“ দেখিস , আমকে খুশি করার জন্য বলিস না” রানী আবার বলে । কিন্তু আবরার পাত্তা দেয় না । অলরেডি বই খুলে ফেলে । রানী আর এর পর কিছু বলতে পারে না । সুধু মনে মনে বলতে থাকে জয় যেন না জানতে পারে ।
*****
কিছু সম্পর্কঃ ৮ এর প্রথম অংশ পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় ।
আজকাল আবরার আর রানীর মাঝে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে । আবরারের সঙ্গ রানীকে একাকীত্ব থেকে কিছুটা হলেও দূরে রাখে । প্রথম কথা হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন আবরারের সাথে রানী কথা হয়নি । এর পর একদিন ক্যাম্পাসে দুজন মুখোমুখি হয়ে যায় । আবরার হাসি মুখে সামনে এসে দাড়ায় , বলে “ একেবারে সামনে পরে গেলেও কি কথা বলা যাবে না ? জাস্ট হাই বলেই না হয় দুজন দুদিকে চলে গেলাম”
আবরারের বলার ধরন দেখে রানী না হেসে পারেনি , তারপর রানীই অফার করেছিলো এক সাথে চা খেতে যাওয়ার । সেই থেকেই রানী আর আবরার ভালো বন্ধু হয়ে গেছে । তবে রানী পরিস্কার করে দিয়েছে ওর পক্ষে বন্ধুত্বের বেশি আর কিছু ভাবা সম্ভব নয় । এর কারন ও বলেছে , তবে জয়ের নাম বলেনি । আবরার যদিও কোনদিন ওর চাওয়া খুলে বলেনি , তবে ওর রানীর সাথে একান্তে কথা বলার চেষ্টা থেকেই রানী বুঝে নিয়ে ছে আবরারের ইচ্ছা ।
তবে আবরার বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো । আর এই কারনেই রানীর আবরার কে ভালো লাগে । ওর কোন এক্সপেকটেশন নেই । তবে প্রয়োজনের সময় ডাকলেই পাওয়া যায় । এই যেমন আজকে রানী আবরার কে নিয়ে কিছু কাজের জন্য যাচ্ছে । দুজনে এক রিকশায় পাশাপাশি বসেছে । আবরারের আরো একটা জিনিস রানীর ভালো লাগে সেটা হচ্ছে নিজের সীমা বোঝে। এমন ভাবে আবরার রিকশায় বসেছে যেন খুব বেশি টাচ না হয় । আর এই ছোট ছোট ব্যাপার গুলোই রানীর বিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে । রানী নিজের কিছু কিছু কথা আবরারের সাথে শেয়ার করেছে ।
আবরার খুব ভালো শ্রোতা , সব কথা মন দিয়ে শোনে । তারপর যদি কিছু বলার হয় বলে , নইলে সুধু শুনেই যায় । তবে সাজেশন দিতে আসে না । সাজেশন দিতে হলেও এমন ভাবে দেয় যেন সেটা সাজেশন না হয় ।
তা ছাড়া আবরার খুব ভালো স্টুডেন্ট ওর সাথে থাকতে থাকতে রানীর নিজের লেখাপড়ার উন্নতি ও চোখে পরার মত । গত ক্লাস টেস্টে রানী অসাধারন নাম্বার পেয়েছে । সামনে একটা ক্লাস এসাইনমেন্ট এর কাজ ও আবরার আর রানী এক সাথে করছে । আর সেই এসাইনমেন্টের জন্য প্রায়জনিয় কিছু জিনিস কিনতেই ওরা যাচ্ছে । সেখান থেকে রানীদের বাসায় যাবে । এসাইনমেন্টের কাজ করতে অনেক সময় লাগবে । লাইব্রেরীতে বসে করা যায় , কিন্তু রানীর কাছে এতো লম্বা সময় লাইব্রেরীতে বসতে ইচ্ছে হয় না । আর আরবরার থাকে হলে , তাই ঠিক হয়েছে ওরা রানীদের বাসায় ই বসেব ।
প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে ফেরার পর ওরা রানীদের বাড়ির পথ ধরে । এখন সময় দুপুর দুটো , রানী রানীর মনে শঙ্কা দেখা দেয় । রানী ভাবে , যদি বাড়ি খালি থাকে, তাহলে কি হবে ? রাজীব কি বাড়ি ফিরেছে ? যদি না ফিরে থাকে , আর বাড়ি ফিরে যদি আবরার আর ওকে দেখে তাহলে কি ভাববে?
“ কিছু ভাবছিস?” আবরার জিজ্ঞাস করে , বেশ কিছুক্ষন যাবত আবরার দেখছে রানী কি যেন ভাবছে ।
“ হুম, না না কিছু না” রানী হেসে বলে ।
আবরার আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ায় না , এসাইনমেন্ট নিয়ে আলোচনা করতে থাকে । কিন্তু রানী ওর কথা অর্ধেক বুঝতে পারে বাকি অর্ধেক বুঝতে পারে না । কারন ওর মাথায় এখনো ঘুরছে আবরার কে বাসায় ডাকা ঠিক হলো কিনা । আসলে জীবনে এই প্রথম কোন ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে , যদিও আবরার ওর বন্ধু । আর বন্ধুত্বে নারী পুরুষ ভেদাভেদ হয় না ।
এক পর্যায়ে এসে রানী মনে মনে ভাবে - অনেক হয়েছে , এতো ভেবে চিন্তে আর চলতে পারবে না । ও কোন অন্যায় করছে না , পড়াশুনার জন্য নিয়ে যাচ্ছে আবরার কে । আর এতো ভেবেই কি হবে , যার যা ভাবার সে ভেবে নিক , এতবছর সামলে চলে কি লাভ হয়েছে ? সবাই তো ধরেই নিয়েছে ও খারাপ হয়ে গেছে । এমনকি নেশা করে বলেও কেউ কেউ ভেবেছে।
বাসায় পৌঁছে রানী ব্যাগ থেকে চাবি বের করে , চাবি দিয়ে দরজা খুলতে দেখে আবরার জিজ্ঞাস করে “ বাসায় কেউ নেই?”
“ মনে হয় না , আব্বু সকালে যায় রাত আটটা নয়টার আগে বাসায় ফেরে না , ভাইয়া থাকতে পারে , আবার নাও থাকতে পারে” রানী দরজা খুলতে খুলতে বলে ।
“ আর মা ?” আবরার আবার প্রশ্ন করে ।
রানী ততক্ষণে দরজা খুলে ফেলেছে । দরজা ঠেলে আবরার কে ভেতরে যাওয়ার ইশারা করে , বলে “ আম্মু কখনোই বাসায় থাকে না” কথাটা বলে রানী একটু হাসে ।
আবরার একটু অস্বস্তিতে পরে , ভেতরে ঢুকতে ইতস্তত করে । সেটা দেখে রানী হাসে , বলে “ কিরে ভয় পেয়ে গেলি, আরে আয় , আমরা তো আর প্রেম করতে বাসায় ঢুকছি না। আমরা পড়াশুনা করার জন্য জাচ্ছি , এতে ভয় কিসের?”
আবরার একটু আশ্বস্ত হয় , ভাবে হয়তো রানীর ঘরের মানুষরা একটু প্রগ্রেসিভ টাইপের এসব কিছু মনে করে না । তারপর হেসে বলে “ আরে না ভয় না , ভবালাম তোর বাবা অথবা ভাই কিছু মনে করে কিনা? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো এমন দেখা যায়না”
আবরার আর রানী ওদের লিভিং রুমে এসে দাঁড়িয়েছে , রানী ঠিক করে লিভিং রুমে বসেই কাজ করবে। বেড রুমে গিয়ে কাজ করাটা একটু বেশি বেশি হয়ে যায় ।
“ কিচ্ছু মনে করবে না , আমার আব্বুর এসব দিকে কোন নজর নেই , আর ভাই কেন কিছু মনে করবে ? আমি কি ও কি করে বেড়াচ্ছে সেসব খবর রাখি , ও কেন আমার ব্যাপারে নাক গলাবে” রানী আবরার কে আশ্বস্ত করার জন্য বলে । তারপর আবরার কে বসতে বলে , ও নিজের ঘরে যায় ইচ্ছা একটু ফ্রেশ হয়ে আসবে ।
আবরার সোফায় বসে , রানীর সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়া দেখে । তারপর চারপাশে তাকিয়ে একবার দেখে । বাড়িটা খুব পুরনো , দেয়াল গুলো বেশ মোটা মোটা , আজকালের বাড়ির দেয়াল এতো মোটা হয় না । মেঝেতে টাইলস করা নেই , সিমেন্টের মেঝে। আবরার ভাবে রানীরা অনেক আগে থেকেই শহরের বাসিন্দা , আবরার এসেছে মফস্বল থেকে । আবরার একবার ভাবে রানীরা ভীষণ ধনী , কিন্তু পরক্ষনেই সেই ধারনা বাদ দেয় , কারন ঘরের আসবাব গুলো নতুন আর পুরাতন মিলিয়ে , নতুন আসবাব গুলো খুব দামি কিছু নয় , তবে রুচিশীল । আবরার ভাবে রানীদের পূর্বপুরুষ এক সময় ধনী ছিলো কিন্তু এখন আর সেই ধন ভাণ্ডার নেই । বসার ঘড়াটা বেশ ছিমছাম করে সাজানো । খুব বেশি মানুষ এ বাড়িতে থেকে না , আর থাকলেও বেশি সময় ঘরে থাকে না । সেটা ঘরের গছানো অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আবরার রানীর বলা নিজের মা সম্পর্কে লাইনটা ভাবে । আবরার বুঝতে পারে রানীর মা নেই ।
আবরার রানীর একাকীত্বের কারন কিছুটা অনুধাবন করতে পারে । এই বয়সি মেয়েদের মায়ের খুব প্রয়োজন হয় । তা ছাড়া ওর বাবার সাথেও খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা নেই বলে ধরে নেয় আবরার । রানীর জন্য গভির সহানুভুতি জন্ম নেয় । তাছাড়া আবরার যতদিন যাবত রানী কে লক্ষ্য করেছে , ওর তেমন কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও দখেনি , পায়েল নিসাদের সাথে বন্ধুত্ব আছে , কিন্তু তেমন গভির নয়। আবরার ভেবে পায় না এমন একটা মেয়ের কোন বন্ধু কেন নেই ।
আর এসব কারনেই আবরারের রানীর প্রতি দুর্বলতা । আর কিছু না হোক , অন্তত বন্ধু হয়ে থাকতে পারলেও ওর ভালো লাগবে । যদিও আবরার এখনো আশা ছেড়ে দেয়নি । আবরার রানীর কাছে জনাতে পেরেছে ও একজন কে পছন্দ করে , সেই কিশোরী বয়স থেকেই সেই ছেলেকে ওর ভালো লাগে, সুধু ভালো লাগাই নয় , মনে মনে ওই ছেলেকে নিয়ে অনেক দূর ভেবে রেখেছে । তবে কোনদিন ওই ছেলের কাছে নিজের মনের কথা বলেনি বা কোনদিন বলার সাহস পায়নি । রানী যখন আবরারের কাছে এই কথা বলেছিলো তখন আবরার খুব কষ্ট করে উচ্চস্বরে হেসে ওঠা থেকে নিজেকে বিরত রেখছিলো ।
আবরারের এই হেসে ওঠার কারন হলো , রানী এমন একটা মেয়ে । যার জন্য ওদের ক্লাসের , না সুধু ক্লাসের নয় পুরো ডিপার্টমেন্টের অর্ধেক ছেলে পাগল । তবে কেউই সাহস করে না ওকে এপ্রচ করতে । আর দুই একজন এপ্রচ করলেও রানীর নিরাসক্তি দেখে আর ট্রাই না করেই ভেগে যায়। সবাই ভাবে রানীর মত সুন্দরী মেয়ে নিশ্চয়ই দেমাগি হবে । তাই এপ্রোচ করতে ভয় পায় । কিন্তু আবরার রানীর সাথে মিশে দেখছে । ওর মাঝে রুপের কোন দেমাগ নেই । হ্যা রানীর নিজের সৌন্দর্য নিয়ে কিছুটা ধারনা আছে , কিন্তু ওর সৌন্দর্য কোন লেভেলের , কত শত ছেলে নিজের সব কিছু দিয়ে দিতে রাজি, রানী যদি একবার ইশারা করে । সেই ব্যাপারে রানীর কোন ধারনা নেই । আবরারের বিশ্বাস রানী কোনদিন এসব ভেবেও দেখেনি ।
আর সেই রানীই যখন বলে , কোন ছেলেকে নিজের মনের কথা বলতে সাহস হয় না । তখন আবরার না অন্য যত ছেলে রানীর জন্য পাগল হয়ে আছে , সবাই স্ট্রোক করে মারা যাবে । আবরারের তো সুধু হাসি এসেছিলো । আবরারের খুব বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো , ‘ রানী তোর মত মেয়ে সুধু চোখের ইশারায় শত শত ছেলে কে নাচাতে পারে, আর তুই কিনা বলছিস কোন ছেলেকে বলতে ভয় পাস তুই তাকে ভালোবাসিস!!! একবার সুধু অন্য কাউকে বলে দেখে , তোর জন্য জীবন দিয়ে দেয়ার মত মানুষের অভাব হবে না’
কিন্তু আবরার বলেনি , কারন আবরার রানীর মনের এই ভয় থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছে ওই ছেলের প্রতি রানীর ভালোবাসা কতটা গভির। তা ছাড়া রানীর মন কতটা নিষ্পাপ তার প্রমান ও বহন করে । আবরারের হিংসা হয়েছে সেই ছেলের প্রতি কিন্তু , আবরারের ইচ্ছা হয়নি , রানীর মনে এই ধারনা ঢুকাতে যে রানীর সৌন্দর্যের পাওয়ার কতখানি । হয়তো ওই ছেলের প্রতি রানীর যে টান আছে সেটা কিছুটা হলেও কমে যাবে , যখন রানী নিজের পূর্ণ পটেনশিয়াল সম্পর্কে জানতে পারবে ।
আবরার এও জানে , রানী আর ওই ছেলে , দুজনের কেউই এখনো মুখ ফুটে বলেনি একে অপর কে ওরা ভালোবাসে। তবে রানীর কাছে মনে হয়েছে ওই ছেলেও ওকে ভালোবাসে , কিন্তু মাঝে মাঝে আবার মনে হয় , ঠিক ততটা ভালোবাসে না যতটা রানী বাসে । তাই রানী ওই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকতো , রানীর ভয় হতো যদি কোনদিন ওই ছেলে রানীকে অবহেলা করে , তাহলে রানী সেটা সহ্য করতে পারবে না । কিন্তু ওই ছেলে যখনি রানীর সামনে এসে দাড়ায় , কাছে ডাকে তখনি রানীর সব সংকোচ দূর হয়ে যায় ।
আবরারের মনে প্রচণ্ড হিংসা জন্ম নিয়েছে ওই ছেলের প্রতি । বেশ কয়েকবার রানীর কাছে ওই ছেলেকে দেখতে চেয়েছে । কিন্তু রানী নাম বলতেও রাজি নয় ।
আবরার জিজ্ঞাস করেছিলো , রানী কেনো সরাসরি ওই ছেলের সাথে কথা বলে না? উত্তরে রানী জানিয়েছিলো ওদের মাঝে ভুল বঝাবুঝি হয়েছে । শুনে আবরার আর হাসি থামাতে পারেনি , হাসতে হাসতে বলেছিলো “ তোরা ত একে অন্য কে কোনদিন বলিস ই নি , তাহলে এই ভুল বোঝাবুঝি এলো কোথা থেকে?”
রানী এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি , তখন আবরার জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই শিওর ওই ছেলে তোকে ভালোবাসে ?”
“ভালোবাসে কিনা জানি না , তবে আমার প্রতি ওর কিছু একটা আছে “ উত্তরে রানী অনেক ভেবে বলেছিলো
“ সেটা কিভাবে বুঝতে পেরেছিস?” আবরার একটু বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞাস করেছিলো ।
“ ওর চোখ দেখে” রানী লজ্জা মেশানো কণ্ঠে মিন মিন করে বলেছিলো ।
শুনে আবরার হা হা করে হেসে উঠেছিলো , সেই হাসি দেখে রানী আরো লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো , আর সেই লজ্জা ঢাকতে রাগে গিয়েছিলো , উঠে আসতে চেয়ে ছিলো , আবরার জোড় করে ওকে বসিয়েছিলো । তারপর বলেছিলো “ তুই কি এই যুগের মেয়ে নাকি ভুল করে মধ্যযুগ থেকে এই যুগে এসে পড়েছিস ? এই চোখে চোখে ভালোবাসা আজকাল আর হয় না রে , আজকাল ঠোঁটে ঠোঁটে , শরীরে শরীরে ভালোবাসা হয় , ওই ছেলের চোখে যে তুই তোর প্রতি লালসা দেখিস নি তার গ্যারান্টি কি?”
উত্তরে রানী সেদিন কিছু বলেনি , তবে আবরারের কথা যে বিশ্বাস ও করেনি , সেটা আবরার বুঝতে পেরেছিলো । উল্টো আবরারের উপর অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো । আর আবরার বুঝে গিয়েছিলো , রানীকে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই । কারন ওই ছেলেকে যে খারাপ বলবে সে রানীর কাছে সন্দেহের পাত্র হয়ে যাবে । আবরার জানে হয় রানী কঠিন একটা ধাক্কা খাবে নয়তো ওর মত সুখী মেয়ে আর দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি থাকবে না । তবে কষ্ট হলেও আবরার চায় রানী যেন সুখি হয় , ওই ছেলে যেন রানীকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে । আর যদি ধাক্কা খায় আবরার অবশ্যই রানী পাশে থাকবে ।
“ কি রে কি ভাবছিস?” রানী ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে আবরার আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে ।
“ নাহ কিছু না তো , তোদের বাসা দেখছি , অনেক পুরনো” আবরার হেসে বলে
“ হুম , আমার দাদার বাপ বানিয়েছিলো , আচ্ছা তুই কি এখনো অস্বস্তি তে আছিস , থাকলে বল , আমরা না হয় অন্য দিন লাইব্রেরীতে বসে কাজ করবো” আসলে রানী নিজেই একটু অস্বস্তিতে আছে এখন , বাথরুমে যখন ফ্রেশ হচ্ছিলো তখন জয়ের চিন্তা ওর মাথায় আসে , জয় যদি কোন ভাবে জানে , তখন কি হবে ?
“ আরে না , বস আমরা কাজ শুরু করি” আবরার কনফিডেন্সের সাথে বলে
“ দেখিস , আমকে খুশি করার জন্য বলিস না” রানী আবার বলে । কিন্তু আবরার পাত্তা দেয় না । অলরেডি বই খুলে ফেলে । রানী আর এর পর কিছু বলতে পারে না । সুধু মনে মনে বলতে থাকে জয় যেন না জানতে পারে ।
*****
কিছু সম্পর্কঃ ৮ এর প্রথম অংশ পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় ।
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)